কথিত “আদ-দাউলাতুল ইসলামিয়া (Islamic state)” বিষয়ে “জাবাহাতুন নুসরাহ” এর শরীয়াহ কমিটির সম্মানিত সদস্য ‘শাইখ আবু সুলাইমান আল মুহাজির’ এর ভিডিও সাক্ষাৎকারের পূর্ণ বিবরণ।
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রথম পর্ব:
“আল বাসীরাহ” ফাউন্ডেশনঃ– আমরা আজ শাইখ আবু সুলাইমান আল মুহাজির এর সাথে সাক্ষাতে ধন্য হলাম। শাইখের নিকট শামের মুজাহিদগণের পরিস্থিতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।
প্রশ্নঃ শাইখ আবু মুহাম্মদ জাউলানী (হাঃ) কর্তৃক জামাতুদ্দৌলাকে যে অনুরোধে সাড়া দেওয়ার ৫ দিনের মেয়াদ ঘোষণা করেছিলেন উহা কি?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ– সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তা’য়ালার জন্য। দরুদ ও সালাম নাযিল হোক সকল নাবী রসূলের সরদার আমাদের নাবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর, তার পরিবার ও সাহাবাগণের উপর।
সর্বপ্রথম আমি বলব এটা শুধু জাবহাতুন নুসরারই অনুরোধ নয় বরং আমরা মনে করি ইহা শামের অধিকাংশ মুসলমান, শামের আলেমগন ও বিশ্বের বহু বড় বড় উলামাগণেরও আহবান ছিল সেটা ।
যেই মেয়াদ ঘোষণা করেছিলেন শাইখ আবু মুহাম্মদ জুলানী (হাফি শাইখ আবু খালেদ আস-সূরী (রাহিঃ)এর মৃত্যুতে শোক পালন কালে। (আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর উপর রহম করেন ও শহীদ হিসাবে কবুল করে নিন।)
স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আমরা ‘জাবহাতুন নুসরা’ উলামায়ে রাসিখিন (বিজ্ঞ হাক্কানী আলেম) যারা ইসলামী জ্ঞানে জ্ঞানবান। যাদের শরীয়তের আহকাম বুঝার সঠিক যোগ্যতা রয়েছে ও সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য। যেমন- শাইখ আবু কাতাদা ফিলিস্তিনী (হাঃ), শাইখ আবু মুহাম্মদ আল মাকদিসী (হাঃ), শাইখ সুলায়মান আল উলওয়ান (হাঃ) (আল্লাহ তা’য়ালা তাদের সকলকে মুক্ত করে দিন) যখন উনাদের মধ্যে থেকে দুজন আমাদেরকে নসিহাহ করলেন- যাদের কথা শাইখ আবু মুহাম্মদ আল জাওলানী (হাঃ) উল্লেখ করেছিলেন কুরআন ও সুন্নাহর দলিলের মাধ্যমে। শাইখগণ ইহা ‘হিকমাহ’ মনে করেছেন যে, আমরা ‘জামাত আদ-দাউলার’ সাথে যেন পুনরায় যুদ্ধ ও সংঘর্ষে লিপ্ত না হই। তখন আমরা উনাদের নসিহাহ কবুল করে নিয়েছিলাম এবং এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমরা খুব প্রয়োজন না হলে তাদের প্রতিউত্তর দিব না। ইহা ঐ সকল অঞ্চলে যেখানে বিরোধ ও দ্বন্দ্ব স্পষ্ট। যেমন পূর্বাঞ্চল ও হালবের কিছু এলাকায়। যতক্ষন না ‘জামাত আদ-দাউলার’ প্রকৃত অর্থে হকের দিকে ফিরে আসে এবং পরিপূর্ণ শরয়ী আদালতকে মেনে নেয়, যেখানে একই সময়ে তারা বিচারপ্রার্থী ও বিচারক হয়ে বসবে না।
“আল বাসীরাহ” ফাউন্ডেশনঃ- আল কায়েদার সাথে ‘জামাত আদ-দাউলার’ বর্তমানে কি কোন মিল রয়েছে?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ – আমি নিশ্চয়তার সাথে এ কথা বলতে পারি যে, ‘আল কায়েদার’ সাথে বর্তমানে ‘জামাত আদ-দাউলার’ (isis) চিন্তা চেতনায় কিংবা বাস্তবতায় কোন মিল নেই।
যে ব্যক্তি আল কয়েদার ইলমী ও আমলী বিষয়াবলী সম্পর্কে অবগত রয়েছেন, তিনি স্পষ্ট ভাবেই আল কায়েদা ও ‘জামাত আদ-দাউলার’ মধ্যকার বড় ধরনের পার্থক্য দেখতে পাবেন। বড় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, যেমন- শাইখ উসামা বিন লাদেন (রহিঃ), শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরী (হাঃ), শাইখ আবু ইয়াহইয়া লিব্বী (রহিঃ), শাইখ আতিয়াতুল্লাহ লিব্বি, শাইখ আবু মুসআব যারকাওবী (রহিঃ) সহ অন্যন্যাদের দৃষ্টিভঙ্গি বা চিন্তাধারা আর ‘জামাত আদ-দাউলার’ চিন্তাধারার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। উল্লেখিত শাইখগন মানুষের সাথে আচার ব্যবহার ও কিভাবে উনারা এই উম্মাতের মধ্যে নিজেদের অবস্থানকে দেখতেন, অর্থাৎ এই উম্মাহর মধ্যে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা ও তাদের জিহাদের প্রাধান্য বিষয়ক চিন্তাচেতনা। এই ধরনের পার্থক্যগুলোর কারনে বাস্তব ময়দানে দুই পক্ষের চিন্তাধারাকে সমন্বয় করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ‘জামাত আদ-দাউলার’ সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা যায় যে, বাস্তবিক ক্ষেত্রে ‘জামাত আদ-দাউলার’ ‘আল কায়েদার’ অংশ হওয়ার যতগুলো গ্রহণযোগ্য ভিত্তি বা সীমা রয়েছে তার সবগুলো লংঘন করেছে ও সীমা অতিক্রম করেছে। আল কায়েদার সর্বোচ্চ নেতৃত্বের আদেশগুলো না জানার ভান ধরেছে। একথাও আমি বিশ্বাস রাখি যে, আল কায়েদার সার্বিক নেতৃত্ব হতে দেওয়া নির্দেশনা তাদের জন্য যথেষ্ট। ‘জামাত আদ-দাউলার’ ইসলামের নামে বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হওয়ায় আল কায়েদার সাথে ‘জামাত আদ-দাউলার’ ভিন্ন অবস্থানকে স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হল।
মুয়াছ্্ছাছা আল বাসিরাঃ- আল কায়েদার সাথে জামাতুদ্দৌলার কোন ধরনের সম্পর্ক বজায় ছিল?
শাইখ আবু সোলাইমান আল্্ মুহাজিরঃ উভয়ের মধ্যেকার যে সম্পর্ক ছিল তা কেহ অস্বীকার করবে না। তবে এ সম্পর্কটি ছিল দলের সাথে আমিরের যেমন সম্পর্ক থাকে তদ্রুপ।
আল কায়েদা কৌশলগত ছক একে ঐ অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বিভিন্ন অঞ্চলকে পৃথক নামে নামকরণ করে, যা ইকলিম বা প্রদেশ নামে অভিহিত। যেমন আল জাযিরাতুল আরাবিয়া অঞ্চলের আল কায়েদা প্রতিনিধি ও জিম্মাদার হচ্ছেন শাইখ আবু বাসির আল ওয়াহিশি, আল মাগরিব আল ইসলামী অঞ্চলের আল কায়েদার প্রতিনিধি ও জিম্মাদার হচ্ছেন শাইখ আবু মুসআব আব্দুল ওয়াদুদ। এভাবে প্রতিটি অঞ্চলেই জিম্মাদার রয়েছেন। ইরাক অঞ্চলের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন- শাইখ আবু বকর আল বাগদাদী। শায়খ ডাঃ আইমান আজ জাওয়াহিরি (হাঃ) এ সকল অঞ্চলের আমির। যখন ইরাকে ‘ইসলামী দাউলা’ প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এই দাউলা ও আল কায়েদার সাথে যে বায়আতের সম্পর্ক ছিল তা পরিপূর্ণ মেনে চলা কর্তব্য। আমি এখন ইরাকের দৌলা ঘোষণা সময়কালের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই না। আর এটা আলোচনার এখন বিষয়ও নয়। জেনে রাখা দরকার যে, প্রতিটি অঞ্চলের একজন জিম্মাদার রয়েছেন। তিনি আল কায়েদার কৌশলগত বিষয় ও যে স্থানে কার্যক্রম চালাবেন তা সমন্বয় করার দায়িত্বশীল হবেন। আর অবশ্যই উহা কাফেরদের কোনো মতবাদ বা ঐক্যমতের ভিত্তিতে পরিচালিত হতে পারবে না। যেমন “সাইক্স পিকট” এর সাথে মিল রাখা। বরং উহা সম্পূর্ণ ইসলামী মূলনীতির উপর ভিত্তি করে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
সাথে সাথে ইসলামী দিক নির্দেশনা অনুসরণ করে, ‘লাভ-ক্ষতির’ ভিত্তিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। ইহাই হচ্ছে আল কায়েদার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। কিন্তু এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, কেন বিভিন্ন অঞ্চলের দায়িত্বশীলগণকে শায়খ বাগদাদীর নিকট বায়আত নিতে দেখছি না? এর উত্তরে আমি বলব- প্রতিটি অঞ্চলের যিনি আমীর হিসেবে দায়িত্বরত আছেন তারা সকলে শাইখ আইমান যাওয়াহিরী (হাঃ) এর নিকট সরাসরী বাইআত নিয়েছেন। তাই বাগদাদীর নিকট বায়আত নেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ– কোন দ্বন্দ্বটি মূলত এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে মনে করেন?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ অধিকাংশ লোক এটা বিশ্বাস করে যে, জামাতুদ্দৌলা ও জাবহাতুন নুসরার মধ্যে তখনই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে যখন ইরাক-সিরিয়া জুড়ে ইসলামী দৌলার ঘোষণা দেয়। কিন্তু এটা সঠিক নয়। মূলতঃ বিরোধ ও দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছানোর ফল স্বরূপ এই ঘোষণা তারা দিয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে মত বিরোধ প্রচার করা হয়নি। যাতে আভ্যন্তরিন বিষয় আমাদের মধ্যেই গোপন থাকে, বাহিরের কেহ না জানে ও জিহাদের আমলে কোন ক্ষতি হয়ে না যায়।
ইহা সত্ত্বেও ‘জামাত আদ দাওলাহ’ প্রথম দিন থেকেই মতবিরোধগুলো প্রচার করে আসছে। তারা উন্মুক্ত সাক্ষাৎকারেও এ সকল মতবিরোধগুলো আলোচনা করতে দ্বিধাবোধ করছেনা। এমনকি কাফেরদের একান্ত মিডিয়াগুলোতেও। তারা তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে করতে মিথ্যা ও চরম প্রতারণার আশ্রয় নিত। যা অতি শিঘ্রই আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ । এই সকল অপকৌশলগুলোই বড় ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা উম্মাহ জিহাদী বিশ্বে প্রত্যেক্ষ করছে খিলাফতের পতন লগ্ন থেকেই। পরবর্তীতে এই দ্বন্দ্বগুলো মারাত্মক সমস্যাবলীকে ঘিরে ঘূর্নীপাক খাচ্ছে। যেমন ইরাকে ভূলের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
এখানে একটি কথা উল্লেখ করতে চাই এসকল দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে শাইখ আবু বকর বাগদাদী শাইখ আবু মুহাম্মদ জাওলানী (হাঃ)কে একথা বলেছিলেন যে, ইরাকের প্রকৃত পরিস্থিতি সিরিয়ায় প্রচার হওয়া আত্মহত্যার শামিল।
এখন ইরাক ও সিরিয়া জুড়ে ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ ঘোষণা আমাদের ও তাদের মধ্যেকার বিরোধের সর্বশেষ ফলাফল মাত্র।
আমরা সর্বোত্তম উপায়ে পরিষ্কার ভাবে সংঘর্ষ এড়িয়ে ‘আল কায়েদার সর্বোচ্চ নেতৃত্ব’ কে মেনে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেমনটি পূর্বেও উল্লেখ করেছি। বিষয়টি আমাদের ও তাদের আমির শাইখ ডাঃ আইমান আজ জাওয়াহিরী (হাঃ) এর নিকট বিস্তারিত ভাবে পেশ করা হয় । বিশেষ করে বিগত কয়েক মাসের বিরোধ নিয়ে। সমাধান সেটাই হলো যেটা আজ সকলের জানা।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ– ‘দাউলাহ’ প্রতিষ্ঠার বিপরীতে আপনাদের শরয়ী আপত্তিগুলো কি কি?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ– এ প্রশ্নটি পুনরায় ভিন্নরূপে করা প্রয়োজন। আমরা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী নই। মা-আযাল্লাহ (আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি) “তানযিম কায়েদাতুল জিহাদ” বিরতিহীনভাবে লড়াই করে যাচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র ফিরিয়ে আনতে। যা ইসলামী খিলাফতের বীজ রূপে প্রকাশ পাবে আল্লাহর হুকুমে। এমন দাবী করা মোটেও সঠিক নয় যে, খেলাফত প্রতিষ্ঠার মহান আমলটি ক্ষুদ্র কোন দলের বা ‘জামাত আদ-দাওলার’ মাধ্যে সীমাবদ্ধ। সংক্ষেপে এটাকে আমি মনে করি খিলাফত শব্দের দ্বারা তামাশা করার নামান্তর। যে কারণে অনেক মুখলিছ ভাইদেরকে ‘জামাত আদ-দাওলা’ তাদের পক্ষে ভীড়াতে সক্ষম হয়েছে। তাই তাদের দলের অনেকেই এটা বিশ্বাস করে যে, যিনি এই কার্যক্রম ও ‘জামাত আদ-দাওলার’ সাথে নেই, তিনি ইসলামেরও বিরুদ্ধে। আমরা মুসলিম হিসেবে জিহাদ করে যাচ্ছি যেন শরীয়াত কর্তৃক আমরা শাসিত হই। তাই বলে এটা জরুরী নয় যে, আমরাই শরীয়ত দ্বারা শাসন করব। আমরা উম্মাহর জিহাদে শরীক হয়েছি, এই উম্মাহকে শিক্ষা দিচ্ছি ও এই উম্মতের খেদমত করে যাচ্ছি।
আর এটা সকল মুসলিমের উপর ওয়াজিব। উহা সত্ত্বেও (দাউলাহ) ঘোষণার ব্যাপারে আমাদের আপত্তি হল যেটির অস্তিত্ব মুলত নেই কেন উহার ঘোষণা ?! সিরিয়াতেও ইসলামী রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই, তাহলে প্রথম দিকে এই ঘোষণা কেন দিতে হবে? এই প্রশ্নটি তাদের অনেক নেতৃবৃন্দের এমনকি শাইখ আবু বকর বাগদাদীর নিকটও করা হয়েছিল। প্রশ্নটি এমন ছিল, আপনারা নিজেদেরকে ইসলামী রাষ্ট্র বলে মনে করেন, নাকি ‘জামাত আদ-দাওলা’ ? তখন উত্তরটি এমন ছিল যে, আমরা একটি জামাত যার নাম হচ্ছে “ইসলামী রাষ্ট্র ইরাক ও শাম” (ISIS)।
বাস্তবে এটা স্পষ্ট যে, এই রাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ছোট একটি দলের পক্ষ থেকে। অন্যান্য মুসলিমদের সাথে কিংবা একই লক্ষ্য উদ্দেশ্যে জিহাদরত জামাতের সাথে পরামর্শ করা ব্যতিত। আশা করি এই বিষয়টির আর ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন নেই যে, কেন এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর নয়।
২য় পর্ব:
এবার আপনার প্রশ্নের দিকে ফিরছি ‘জামাত আদ-দাওলার’ ঘোষণার বিপরীতে আমাদের শরয়ী আপত্তি কয়েকটি কারণেঃ-
প্রথমতঃ– যদি মনে করা হয় ঘোষণা সকলের উপর অর্পিত হয়ে আছে তাই বড় জামাত ছোট জামাতের সাথে কিংবা একটি দল অন্যান্য দলের সাথে, এমনকি জামাত এর সরাসরি আমীরের সাথে পরামর্শ বা অনুমতির প্রয়োজন নেই। ভাই এটা মুসলিমের ইসলামী অধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন। অবশ্যই তাদেরকে পরামর্শ করতে হবে- আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেন, وَشَاوِرْهُمْ فِي الأَمْرِ
“হে নাবী! আপনি তাদের (সাহাবীগণের) সাথে পরামর্শ করুন। (আলে ইমরানঃ-১৫২)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেন, وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ بَيْنَهُم “তাদের কাজগুলো পারস্পরিক পরামর্শ ভিত্তিক হয়ে থাকে।”(শুরাঃ-৩৮)
এখানে স্পষ্ট করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নাবী কারিম (সঃ) যেন সাহাবীগণের সাথে পরামর্শ করেন।
সিরিয়াতে অধিক সংখ্যক মানুষ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদায় বিশ্বাসী ও জমীনে আল্লাহ তা’য়ালার শরীয়তের বাস্তবায়নে নবীগণ (আঃ)এর আদর্শের অনুসারী। তারা শরীয়ত বিরোধী যে কোন শাসন ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করে থাকে, যেমন গনতন্ত্র। কিন্তু ‘জামাত আদ দাউলা’ গোষ্ঠীর কেউ পরামর্শ করেনি বরং উপেক্ষা করল, ইহাই প্রথম আপত্তি।
দ্বিতীয়তঃ-অবশ্যই ঘোষণার কারণটি শরীয়ত পরিপন্থি। কারণ যখন তাদেরকে প্রশ্ন করা হল, এই সময়টি ঘোষণার জন্য উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন কি? তাদের আমীরের সরাসরি জবাব হলোঃ ‘না’। এই সময়টি উপযুক্ত সময় নয়। কিন্তু এটাই করতে হয়েছে এই জন্য, যেন জাবাহাতুন নুসরা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারে। কি সেই মন্দ(!) পরিকল্পনা ? যা আমরা আজপর্যন্ত জানতে পারলাম না।
ইসলামী তরিকায় এবং যুক্তিগতভাবে এই ঘোষণা সম্পূর্ণ বাতিল। কারণ দাউলার ঘোষণাটি নির্দিষ্ট কোন হুমকির প্রতিক্রিয়ায় সংঘটিত। যার অস্তিত্ব আপনি অনুভব করছেন, তাই এই ঘোষনা বাতিল।
অথচ দৌলার ঘোষণা প্রকৃত শর্তসমূহের বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্রের প্রকৃত ভিত্তি থাকা প্রয়োজন ছিল।
আমাদের আরেকটি আপত্তি হল, প্রতিটি অঞ্চলের একজন জিম্মাদার রয়েছেন যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যার নিকট সীমিত কর্তৃত্ব রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র ঘোষণা করা সেই কর্তৃত্বের মধ্যে পড়ে না, যার অধিকারী সেই জিম্মাদার।
এটা একদিকে আল কায়েদার সর্বোচ্চ নেতৃত্বের ভয়ানক বিরোধিতা হিসেবে গন্য। অপরদিকে শরীয়তের দৃষ্টিতে গোনাহ, আমীরের আনুগত্য না করার কারণে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আমাদের সোমালিয়ার ভাইগণ সেখানে কোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন নি। তাদের নিকটবর্তী ইয়মানী ভাইদেরকে নিয়ে কোন রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন নি। অথচ যদি তারা ঘোষণা করতেন বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতেন তাহলে তা করা শামের ‘জামাত আদ দাউলার’ চেয়ে সহজ হত। এটা না করার অন্যতম কারণ হচ্ছে যে, তারা তা করার কর্তৃত্ব রাখেন না। এর জন্য সর্বোচ্চ নেতৃত্ব হতে অনুমতি নেওয়া ওয়াজিব।
আমাদের আরেকটি আপত্তি হচ্ছে, আমরা বিশ্বাস করি, ঐ মুহুর্তে দাওলার ঘোষণাটি সিরিয়ার জিহাদে এমনকি সারা মুসলিম বিশ্বে ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াবে ।
শাইখ বাগদাদীর উক্ত সিদ্ধান্তে আমাদের (জাবাহাতুন নুসরার) আনুগত্য করা একটি গোনাহের শামিল। সৃষ্টিকর্তার নাফরমানী করে কোন মাখলুকের আনুগত্য করা জায়েয নেই। এটাই সেই কারণ যে কারণে শাইখ আবু মুহাম্মদ আল জাওলানী (হাঃ) শাইখ আবু বকর বাগদাদীকে আনুগত্য করেন নাই। বরং বিষয়টি অন্তরদৃষ্টি সম্পন্ন ও যোগ্য নেতৃত্বের কাছে সোপর্দ করেছেন।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ– উল্লেখিত বিরোধটি উভয় পক্ষের মতামত নিয়ে সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নিকট অভিযোগ করা হয়েছে, নাকি এটা শুধু জাবাহাতুন নুসরার পক্ষ থেকে দৌলার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ এই বিরোধটি সরাসরি ‘সর্বোচ্চ নেতৃত্ব’ শাইখ আইমান যাওয়াহিরী (হাঃ) এর নিকট পেশ করা হয়েছে।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- শাইখ আইমান জাওয়াহিরী (হাঃ) কি প্রকৃত অর্থে সর্বোচ্চ আমির?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ- খুব আশ্চর্য্য লাগে এ সকল তাল-গোল পাকানো কথা এখন কেন বলা হচ্ছে ! দাওলার দায়িত্বশীলগণ খুব ভালভাবে জানে যে, আল কায়েদায় শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী (হাঃ) এর মর্তবা বা পজিশন সম্পর্কে। এরপরও এমন প্রশ্ন যখন শুরু হলো তখন অবাক করা আরেকটি বিষয় মনে পড়ল, কেননা আমরা ( জাবহাতুন নুসরা ও ‘জামাত আদ দাউলা’) যখন এক জামাত ছিলাম, তখন এই ধরনের কোন কথা উঠে নি।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ– সেই বিষয়টি কেমন ?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ যেমন, ‘দাওলাহ’ ঘোষণার কয়েক সাপ্তাহ পূর্বে আমার স্মরণে আছে যে, যখন আমি “হালবের প্রধান দফতরে জামাত আদ দাওলার কিছু শরয়ী ভাইদের সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তখন সকল দায়ী ও শিক্ষা এবং ইসলামী দাওয়াতের কর্মীদের নিয়ে একটি সম্মেলন করলাম। সেখানে কয়েকটি বিষয় আলোচনার জন্য উত্থাপন করা হয়। বিষয়গুলোর মধ্যে বায়আতের বিষয়ও ছিল। বায়আত বিষয়ে এই সকল ভাইদের মতামতগুলো ছিল যেমন সাংঘর্ষিক,তেমনি নিন্মমানের। কিছু ইসলামী কর্মী ভাই মনে করলেন বায়আতটি খিলাফতের বায়আত হবে, কেউ মনে করেছেন বায়আত নিবেন শাইখ আইমান জাওয়াহিরী (হাঃ) এর কাছে। কেউ মনে করেছেন শাইখ আবু বকর বাগদাদীর কাছে। কিন্তু অনেকেই এই পার্থক্য বুঝেন না যে, একটি হচ্ছে মোল্লা মুহাম্মদ উমর (হাঃ) এর নিকট “তানযিম কায়েদাতুল জিহাদ” এর বায়আত। আরেকটি হচ্ছে, “তানযিম কায়েদাতুল জিহাদ”এর আভ্যন্তরিন বায়আত। জামাত আদ দাওলার অনেক প্রধান প্রধান শরয়ী ভাইগণ সেই সময়ে মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ (হাঃ) এর বায়আত নিচ্ছিলেন।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- বিরোধটি নিয়ে উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শাইখ আইমান জাওয়াহিরী (হাঃ) এর নিকট পেশ করা হয়েছিল?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ হ্যা, উভয় পক্ষই শাইখ আয়মান আয যাওয়াহিরী (হাঃ) এর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার উপর একমতও হয়। উভয় পক্ষই উহার জওয়াবের প্রতিক্ষায় উদগ্রীব হয়েছিল। সিরিয়ার প্রতিটি ব্যক্তি সেই দিনগুলোকে স্মরণ করত, যেন দিনগুলো অনেক। সকল মুজাহিদের মানুষিক অবস্থার অবনতি ঘটেছিল। সকল মানুষই শাইখ আইমান জাওয়াহিরী (হাঃ) এর জওয়াবের অপেক্ষায় ছিল। তখন শাইখ আবু বকর বাগদাদী ও তার উপ-প্রধান গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন যে, তারা শায়খ আইমান জাওয়াহিরী (হাঃ) কে মেনে নিবেন, যদিও সিরিয়ার বিষয়গুলো জাবাহাতুন নুসরার কোন একজনের কাছেও হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন। আর তিনি এতে হস্তক্ষেপ করবেন না। যদিও তা সিরিয়ার মুজাহিদগণের পক্ষে যায়। সেটাকে ইসলামী ন্যায্যতা হিসেবে নামও দিয়েছিলেন। যেটা পরবর্তীতে জওয়াবের পর প্রকাশিত হতে থাকে। কিন্তু আমরা মর্মাহত হলাম যখন শাইখ আইমান আইমান আজ জাওয়াহিরী (হাঃ) একটি সমাধান দিলেন। এটা কি শরীয়ত বিরোধী নির্দেশ দিলেন ! শাইখের জওয়াবের পর যেমন তারা বিশ্বাস করে। যদি তারা ইসলামী সমাধানকে তাদের জন্য সমাধান হিসেবে মেনে নেয়, তাহলে কেন প্রথম দিকে মেনে নিলেন এবং বিরোধটির মিমাংসার জন্য শাইখের কাছে কেন পেশ করা হয়েছিল ? আর যদি তারা এটা বিশ্বাস করে যে, একমাত্র তাদের প্রস্তাবটি গৃহীত হোক অর্থাৎ রায় তাদের পক্ষে হোক, তাহলে কেন বিষয়টি শাইখের নিকট তারা পেশ করল। কেন এই বিরোধটির মিমাংসার দায়িত্ব শাইখকে দেওয়ার উপর তারা একমত হল ? যদি রাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া ওয়াজিব হয় এবং উহা আলোচনা করার প্রয়োজন না পড়ে, যেমনটি এখন তারা দাবী করছে। তবে কেন বিষয়টি শুরু থেকে শাইখের নিকট উত্থাপন করা হল ?
ইসলামের ওয়াজিব বিষয়গুলোর জন্য আলোচনার দরকার নেই। এই জন্য ইসলামী আদালতের কাযীর কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যেটা আগে থেকে প্রসিদ্ধ ও শরীয়ত কর্তৃক বর্ণিত, যেমন নামাযের বিধান। সুতরাং ইসলামের অকাট্য বিষয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা শুধু অযৌক্তিই নয় বরং উহা শরীয়ত বিরোধী ও হারাম। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, শাইখ আয়মান জাওয়াহিরী (হাঃ)কে এই মিমাংসায় কাযী হিসেবে মেনে নেওয়াই প্রমান করে যে, শাইখ আইমান আজ জাওয়াহিরী (হাঃ) শাইখ বাগদাদীর সর্বোচ্চ আমীর। যাকে মান্য করা জামাত আদ দাউলার উপর কর্তব্য। এই দুটি কারণে শাইখের সিদ্ধান্ত তাদের মেনে নেওয়া প্রযোজ্য।
৩য় পর্ব:
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ– শাইখ জাওলানী (হাঃ)এর উপরও কি কর্তব্য নয় যে তার সরাসরি আমীরকে মান্য করা ?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ আমীরকে মান্য করা সাধারনভাবে ওয়াজিব। কিন্তু যখন আমীরের পক্ষ থেকে এমন কোন নির্দেশ আসে যাতে সন্দেহ প্রকট হয়, তখন যিনি নির্দেশ মান্য করবেন তাকে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে অথবা আমিরের পক্ষ থেকে যদি এমন কোন সিদ্ধান্ত আসে যা অকাট্যভাবে ইসলামী হুকুমে পড়ে না ও বিষয়টি ইজতিহাদীও নয়, তখন অবশ্যই বিষয়টি আহলে ইলমের নিকট সোপর্দ করতে হবে।
আমি আপনাকে একটি উদাহরণ দিচ্ছিঃ- ‘গাযওয়া বনী জুযাইমা’ হতে প্রত্যাবর্তন কালে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) মুসলিম বাহিনীকে সকল বন্দিদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) খালিদ (রাঃ)এর নির্দেশর সাথে সাথে পালন করা থেকে বিরত থাকলেন ও প্রত্যাখ্যান করলেন।
শাইখ আবু ইয়াহইয়া আল লিব্বী (রহিঃ) (আল্লাহ উনাকে শহীদ হিসেবে কবুল করে নিন।) তার এই হাদিস বিষয়ে একটি মত রয়েছে। তার সংক্ষিপ্ত মর্ম হচ্ছে- ইসলামে আনুগত্য করার অনেক প্রকার বিষয় রয়েছে, যেমন অনেক ইজতেহাদী মাসআলা রয়েছে যেগুলো শরয়ী বিষয় ইজতিহাদ করা হয়েছে, উহা মান্য করা ওয়াজিব। যদিও তা মান্য করা ব্যক্তির উপর খুব কষ্ট হয় তবুও মানতে হবে।
অপরদিকে কিছু বিষয় রয়েছে যা পরিস্কার গুনাহ, সেগুলো মান্য করা জায়েজ নেই, এর উপর ইজমা হয়েছে। সুতরাং এসকল বিষয়ের নির্দেশ আসলেও মানা হারাম।
আরও কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো সন্দেহযুক্ত ও অস্পষ্ট এসকল বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে আহলে ইলেমের নিকট সোপর্দ করা ওয়াজিব।
আমি এখানে আরেকটি কথা যোগ করতে চাই তা হচ্ছে, জামাত আদ দাওলার আনুগত্যের বিষয়টি আর আলোচনার উপযুক্ত থাকল না, কারণ তারা আনুগত্য অস্বীকার করে বের হয়ে গেছে। সুতরাং এ নিয়ে তারা আর কোন প্রশ্ন রাখতে পারে না। কারণ যখন তাদের স্বার্থের কথা আসে তখন তারা এই ধরনের বিষয় উত্থাপন করে।
যখন শাইখ আবু মুহাম্মদ জাওলানী (হাঃ) বিষয়টি নিয়ে উভয়ের আমীর শাইখ আইমান আজ জওয়াহিরী (হাঃ)এর নিকট পেশ করাকে তাদের পক্ষ থেকে গোনাহ হিসেবে গণ্য করেছে একই সময়ে তারা পরিস্কারভাবে বলেছে যে, তারা উর্ধতন আমীর শাইখ আইমান জাওয়াহিরী (হাঃ)কে মানবে ও শুনবে। এই সকল সুযোগ সন্ধানী কৌশলের কারণে ‘জামাত আদ দাওলাহ’ অনেক সংখ্যক সৈন্য, অস্ত্র ও জনবল সংগ্রহ করে নিয়েছে। আর মুজাহিদগণ শুধু ‘জামাত আদ দাওলাহ’ ও শাইখ আবু বকর বাগদাদীর নিকট এই নির্ভরতায় বায়আত নিয়েছে যখন শাইখ আইমান জাওয়াহিরী (হাঃ)এর পক্ষ থেকে কোন জওয়াব আসবে তখন সকলেই তা মেনে নিবে ।
উহার একটি উদাহরণঃ- জাবাহাতুন নুসরার একজন বড় কমান্ডার ছিলেন, যখন শাইখ আবু মুহাম্মদ জাওলানী (হাঃ)এর আমীর শাইখ আবু বকর বাগদাদীর পক্ষ থেকে নির্দেশ আসল তখন সেই কমন্ডার জাবাহাতুন নুসরা ছেড়ে ‘জামাত আদ দাওলাতে’ চলে গেলেন এবং সাথে সাথে বাগদাদীর খাছ শুরার অংশ ও তার ঘনিষ্ট হয়ে গেলেন। কিন্তু যখন শাইখ আইমান জাওয়াহিরী (হাঃ)এর পক্ষ থেকে জওয়াব আসল তখন তিনি উর্ধতন আমীরের কথা মেনে আবার জাবাহাতুন নুসারায় ফিরে আসলেন। ‘জামাত আদ দাওলার’ কারণে তার এই সরে যাওয়া। কিন্তু ঐ ব্যক্তি এমন পর্যায়ের যিনি এমন পরিস্থিতি বুঝতে পেরে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেছিলেন, যা সাধারণ সৈনিক হলে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- অনেকে বলে থাকেন যে, বাগদাদী শাইখ আইমান জাওয়াহিরী (হাঃ)এর নিকট যে বায়আত নিয়েছিলেন তা পরিপূর্ণ বায়আত ছিলনা?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ এটা নির্বুদ্ধিতা, এই প্রথমবার এমন কথা শুনলাম। বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রথম দিকে শাইখ বাগদাদীর সাথে সাক্ষাৎকালীন সময়ে শুনলাম তাদের শরয়ী বোর্ডের প্রধান কাহতানী তিনি সকল মুজাহিদগণকে এমন খবর দিচ্ছেন যে, জামাত আদ দাওলা বা শাইখ বাগদাদী শাইখ আইমান আজ জাওয়াহিরী (হাঃ)এর নিকট যে বায়আত নিয়েছিলেন তা সীমিত অর্থাৎ উহা মহব্বতের ও নুসরাতের বায়আত ছিল। সেই সাক্ষাৎকালীন সময়ে কাহতানীর উপস্থিতিতে আমরা শাইখ বাগদাদীকে জিজ্ঞাসা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। শরয়ী সদস্যদের সম্মুখে স্পষ্ট হওয়ার জন্য শাইখ বাগদাদীকে জিজ্ঞাসা করলাম- আপনার বায়আত কি মহব্বত, নুসরাতের বায়আত ছিল নাকি পরিপূর্ণ বায়আত ছিল? শাইখ বাগদাদী সরাসরি জওয়াব দিলেন, “আল্লাহ্ তা’য়ালার আশ্রয়” শাইখ আইমান আজ জাওয়হিরী (হাঃ)এর নিকট আমার বায়আত প্রকৃত বায়আত ছিল।
শুনা ও মান্য করা, পছন্দ অবস্থায়, অপছন্দ অবস্থায়, সহজ অবস্থায়, কঠিন অবস্থায়, অতপর বললেন যদি তিনি আমাকে এই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে বলেন ও ইরাকে ফিরে যেতে নির্দেশ দেন তাহলে আমি তাই করব।
সংক্ষেপে বলা যায়ঃ- মিথ্যা ও প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে এমন অবস্থানে পৌছানো গোনাহে কাবিরার অর্ন্তভূক্ত।
এটা নাবীগণ (আঃ)এর পদ্ধতি নয়। আর আমরা রাফেজিও নই, আর আমরা মেকাফিলি দর্শনে বিশ্বাসী নই। ইসলামে এর কোন স্থান নেই। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এভাবে খেলাফত প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এমন মাধ্যম লক্ষ্যকে কলুষমুক্ত রাখেনা। সত্য, সততা ও ন্যায় আমাদেরকে আল্লাহর হুকুমে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতায় পৌছাবে।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- উক্ত বায়আত কি খেলাফতের বায়আত ছিল?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ না, না। ‘বায়আতে কামেলা’ দ্বারা আমি ইহা বুঝাইনি। আল কায়েদার প্রত্যেক অঞ্চলের প্রতিনিধি বায়আতের মাধ্যমে মূল তানযিমের সাথে গভীর সম্পর্ক রেখে জিহাদ বিষয়ক নির্দেশ মেনে চলবেন। ইহাই এমন বায়আত যা তাদেরকে এক অস্তিত্বে পরিণত করে, ঐক্যবদ্ধ করে। যেটা “তানযিম কায়েদাতুল জিহাদ” হিসেবে পরিচিত। গুরুত্বের সাথে জেনে নিন উহা খেলাফতের বায়আত ছিল না। আমাদের নিকট খলিফা নেই। তবে আমরা এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি এবং আল্লাহ তা’য়ালার কাছে প্রার্থনা করছি যেন তিনি আমাদেরকে সেই সক্ষমতা দান করেন ও খেলাফত বাস্তবায়নে যা প্রয়োজন সেই সাহায্যটুকু করেন। হে রব্বুল আলামীন
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- কোন বিষয়গুলো নিয়ে জাবাহাতুন নুসরা ও জামাত আদ দাওলার মধ্যে মতানৈক্য ?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ আসলে এটা শুধু উক্ত দুটি দলের সমস্যাই নয়। আরো কথা রয়েছে আর তা হলঃ- আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআ এর আকিদা বুঝার ক্ষেত্রে আমাদের ও জামাত আদ দাওলার মধ্যে অনেকগুলো পার্থক্য বিদ্যমান। উক্ত আকিদার ক্ষেত্রে তাদের অনেক বিকৃতিও রয়েছে। আমরা উল্লেখ করেছি যে, জাবাহাতুন নুসরা ও জামাত আদ দাওলার মধ্যকার যুদ্ধ ব্যক্তি কেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব নয়। অথবা ক্ষমতা কেন্দ্রিক বা আমীর নির্বাচন নিয়ে নয় বরং জামাত আদ দাওলার ভ্রান্ত শরয়ী নীতিই মূল বিষয়। যা পরে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ তা’য়ালা।
আল বাসীরা ফাউন্ডেশনঃ- অনেকে বলে থাকেন জামাত আদ দাওলার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ পূর্ব পরিকল্পিত ও বহিঃশক্তির দ্বারা পরিচালিত উম্মাহর একমাত্র আশাকে স্তব্দ করে দেওয়ার জন্য?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ শামে বসবাসরত প্রত্যেক ব্যক্তি ভালভাবে বুঝবেন যে, শামের বিভিন্ন দলের মধ্যে সমন্বয় সাধন সবচেয়ে কঠিন কাজ যার মুখোমুখি আমরা হয়েছি। যেটি সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আর জামাত আদ দাওলার বলছে যে, এসকল দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের সকল চেষ্টা ব্যয় করছে কুফরী বিশ্বের সাথে মিলিত হয়ে ‘জামাত আদ দাওলার’ বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। সম্ভাবনা হচ্ছে, এই সকল বিদ্রোহ দলগুলো ‘জামাত আদ দাওলার’ সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে ও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। যেমনটি তাদের মুখপাত্র পরিষ্কার বলেছেন- শামের এই বিদ্রোহ ইরাকের বিদ্রোহের দিকে এগিয়ে যাবে পূর্ণমাত্রায় অনুসরণ করে।
উহা সত্ত্বেও যদি এসকল দলগুলো তাদের সকল চেষ্টা শক্তিকে একত্র করে নতুন করে কাজ উদ্ভাবন করতে চেষ্টা করে যা প্রকৃত পক্ষে অসম্ভব। বরং যদি এসকল সংঘর্ষ নিয়ে গভীর দৃষ্টি দেওয়া হয় তাহলে দেখা যাবে অনেকগুলো প্রভাব বিস্তারকারী ক্রীয়া রয়েছে যা সংঘর্ষ জিইয়ে রাখছেঃ
প্রথমতঃ- ‘জামাত আদ দাওলার’ ও অন্যান্য দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব এসকল সংঘর্ষ পূর্বেও বিদ্যমান ছিল। এই সংঘর্ষ পূর্বে আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। এমনকি সেখানে সিরিয়াতে চলমান ব্যাপক অন্যায়ের সংগঠনে শক্তিশালী হাত রয়েছে যা সিরিয়ার জনগন প্রত্যক্ষ করছে, যার পিছনে রয়েছে ‘জামাত আদ দাওলার’ হাত। এবং বহিঃরাজনীতির কুটকৌশলী যারা সিরিয়ার ব্যাপারে লোভাতুর তারা এমন পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়েছে। তারা তাদের নিকৃষ্ট কুপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এই সময়টিকে সুযোগ মনে করেছে। আমরা আল্লাহ তা’য়ালার কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি কুপরিকল্পনা কারীদের সকলকে ধ্বংস করে দেন। চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী সকলে এই গোলযোগ থেকে ফায়দা হাসিল করছে, এটাতো সকলে দেখছে। কিন্তু তারা তো বিপ্লব ও যুদ্ধের শুরু থেকেই ফায়দা হাসিল করছে। এটা হটাৎ করে নয়।
পরিশেষে জামাত আদ দাওলার ভূল অবস্থান এমন অপ-রাজনীতি যা শরীয়ত বিরোধী, এটার উৎপত্তি তাদেরই। যার ফলসরূপ এসকল দলসমূহের অধিকাংশ তাদের বিরুদ্ধে শরীয়তের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
৪র্থ পর্ব:
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ– তাহলে আপনিও বিশ্বাস করেন না যে উহা পূর্ব পরিকল্পিত?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ না, না। আমি বিশ্বাস করি অনেকে এ সুযোগের সন্ধানে ছিলো যা তাদেরকে ‘জামাত আদ দাওলা’ সৃষ্টি করে দিয়েছে। হাজার বৎসর চেষ্টা করেও তারা তা অর্জন করতে পারত না, যে বলে উহা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল সূক্ষ্ম ভাবে, আসলে এধরনের কথা যারা বলে বেড়ায় তারা মূলত পশ্চিমাদের পুতুল। নিদেন পক্ষে বলা যায় এটা বেখবরী বক্তব্য।
আমি আরেকটি সংলাপ স্বরণ করিয়ে দিচ্ছি যা ‘জামাত আদ দাওলা’ এক ব্যক্তি ও অন্য আরেকটি দলের এক ভাইয়ের সাথে ঘটেছিল। ‘জামাত আদ দাওলা’ ভাই বলল- আমার কথা বিশ্বাস করুন এসকল সংঘর্ষ এজন্য ঘটেছে যে, যখন আমাদের ইসলামী রাষ্ট্রের উপর আক্রমণের এজেন্ডা নিয়ে একটি অন্যায় সম্মেলনে তারা একত্রিত হয়েছিল।
এটা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই যে, পরস্পর যুদ্ধ বা বিবাদ সংঘঠিত হয়েছে কাফেররা একটি অন্যায় সম্মেলনে আলোচনা করার পূর্বেই। সেই ভাই একথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলেন ও সংশয়ে পড়ে গেলেন। কেন আমি এই উদহারণ পেশ করলাম ? কারন, ‘জামাত আদ দাওলার’ অনেক সদস্য কঠোরভাবে এটা বিশ্বাস করে যে, মূলত তাদের নামের কারণে অর্থাৎ তারা খেলাফত প্রতিষ্ঠার পর অন্যান্যদেরকে মনে করে হয়ত বিকৃত অথবা কুফরীতে রয়েছে তাই তাদের সাথে কিতাল বা যুদ্ধ করা ওয়াজিব। অন্যান্য দলে যারা মুখলিছ ভাই রয়েছেন তারাও পরিশেষে তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হবেন। যেন তারা সকলে একটি দলে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবেন।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- অন্যান্য দলের ব্যাপারে ‘জামাত আদ দাওলার’ অবস্থান কেমন?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ- প্রকৃত অর্থে এই ব্যাপারে আমি আমার মতামত দিতে পারি। আমার মত হচ্ছে, ‘জামাত আদ দাওলা’ অন্যান্য দলের ব্যাপারে ইচ্ছাকৃতভাবে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের অনুসারীগণ তাদের স্বার্থের ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্যগুলোকে পরিত্যাক্ত রেখেছে।
উদাহরণ স্বরূপঃ- তাদের বিরোধী সকল জামাতকে কাফের বলার বিষয়টি- এটি ‘জামাত আদ দাওলা’ প্রাথমিক অবস্থান ছিল না। এতে করে তাদের অনেক নেতা ও শরয়ী সদস্যগণ এই চিন্তা-চেতনা ছড়িয়ে দিচ্ছে ও তাদের সমতুল্য অন্যান্যদের সাথে মুরতাদ হিসেবে আচরণ করছে। কাকেও এই অবস্থান থেকে বিরত রাখছে না। তাই তাদের একান্ত রুদ্ধদার সমাবেশে এবং অন্যান্যদের সাথে তাদের রুদ্ধদার সমাবেশ এবং উন্মুক্ত সমাবেশ অন্যান্যদের সাথে নিয়ে ও সাধারণ ঘোষনা সবগুলো পৃথক পৃথক হয়ে থাকে। জেনে রাখা দরকার তারা যখন অন্যদের সাথে আচরণ করে তখন তারা নিজেদেরকে উত্তম মনে করে, এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের রয়েছে। মানুষের সাথে মোয়ামালা, তাদের দাওয়াত ও জিহাদে এটা স্পষ্ট হয়ে পড়েছে।
তাদের মুখপাত্র স্পষ্টভাবে উচ্চ আওয়াজে এটা ব্যক্ত করেছেন যে, সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ট দল হয়ত বিকৃত কিংবা বিদ্রোহী। আমি মনে করি তাদের অবস্থান আজ সকলের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। আল্লাহ তা’য়ালাই ভাল জানেন।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- ‘জামাত আদ দাওলা’ মুসলিমদের ক্ষেত্রে নমনীয় যেন রক্তপাত না হয়, এমন দাবীর ব্যাপারে কি মনে করেন?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ- আমি মনে করি এটা যাচাই বিহীন কথা বরং অধিকাংশ লোকের যাচাইকৃত বিবৃতি হচ্ছে, এই বিষয়ে তাদের রয়েছে চরমপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি যা মৌলিক ও বিধানগতভাবে
ভূল চিন্তাধারার প্রতিষ্ঠিত ।
উদাহরণ স্বরূপঃ- তারা বলে থাকে, যে মন্দটিকে কতল ব্যতীত নিবৃত্ত করা যায় না তা কতলের মাধ্যমে নিবৃত্ত করতে হবে। সাথে সাথে এর স্বপক্ষে ইমাম নববী (রহিঃ)এর মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ থেকে উদ্বৃতি দিয়ে থাকে। প্রকৃত অর্থে তারা এর ভূল বুঝ গ্রহণ করে বিপজ্জনক পন্থায় উহার বাস্তবায়ন করে থাকে, অর্থাৎ ভূল প্রয়োগ করে থাকে।
ইহা অধিকাংশ বিদআতীদের অবস্থা, এই উদ্বৃতিটি যা বাবুল ইমামত (রাষ্ট্র পরিচালনা) অধ্যায়ে এনেছেন। উহা ইসলামী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্থান। ইমাম নভভী (রহিঃ) ঐ ব্যক্তি প্রসঙ্গে বলেছেন যে, মুসলিমগণের শাসক কিংবা খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তার ব্যাপারে এই প্রয়োগটি। আর স্পষ্ট যে, এই কথাটি তাদের জামাতের ব্যাপারে ধর্তব্য নয় বা প্রযোজ্য নয়।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- তাদের নিকট কি খিলাফত নেই?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ- না, না, না। নিশ্চিতভাবে নেই। এমনকি তারাও এমনটি বলছে না। কিন্তু বিতর্কের খাতিরে তারা এরূপ বলছে, বাস্তবে এর কিছু নেই। তাদের কাছে যা আছে ইহাকে খিলাফত হিসেবে গণ্য করছে না বরং তারা নিজেদেরকে একটি জামাত হিসেবে গণ্য করছে যেটি খিলাফত প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরূপ অনেক জামাত উক্ত লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। যদিও তারা বলছে অধিকাংশ জামাত তাদের হয়ে উক্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে তাই অন্যান্যদের চেয়ে তারাই বেশী অনুসরণের উপযুক্ত। এ ক্ষেত্রে আমি বলব, ইহা একটি সুক্ষ্ম বিরোধপূর্ণ মাসআলা, আমাদের ও তাদের মধ্যে। ইমাম নববী (রহিঃ) ছহীহ মুসলিমের উক্ত কথার যে ব্যাখ্যা করেছেন তা হতে অনেক দূরে, এটা তাদের পক্ষে প্রযোজ্য হবে না।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- ‘জামাত আদ দাওলা’ শরয়ী আদালতের প্রতি নমনীয় হওয়াকে প্রত্যাখান করেছে মর্মে দাবী করা হয়- এই সম্পর্কে আপনি কি বলবেন ?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ আল্লাহ তা’য়ালা সূরা নূরে এরশাদ করেন-
)وَإِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ مُعْرِضُونَ وَإِنْ يَكُنْ لَهُمُ الْحَقُّ يَأْتُوا إِلَيْهِ مُذْعِنِينَ أَفِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ أَمِ ارْتَابُوا أَمْ يَخَافُونَ أَنْ يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَرَسُولُهُ ۚ بَلْ أُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ) [النور: 48-52[
“যখন তাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তার রসূলের দিকে ডাকা হয়, তখন এক পক্ষ মুখ ফিরিয়ে নেয়। যদিও অনুগত হয়ে সেদিকে আসা তাদের উপর কর্তব্য। তাদের অন্তকরনে কি রোগ আছে, নাকি তারা সন্দেহে রয়েছে, নাকি আশংকা করছে যে, আল্লাহ ও তার রসূল তাদের উপর অবিচার করবে। বরং তারাই হচ্ছে যালিম। নিশ্চয় মুমিনদের কথা এটা হওয়া চাই যখন তাদেরকে আল্লাহ তা’য়ালা ও তার রসূলের দিকে আহ্বান জানানো হয় তাদের মাঝে বিচার ফায়সালা করার জন্য তখন তারা একথা বলবে আমরা শুনলাম ও মানলাম। আর তারাই সফলকাম। আর যে আল্লাহ তা’য়ালা ও তার রসূলের আনুগত্য করে ও আল্লাহ তা’য়ালাকে ভয় করে ও তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই সফলকাম। (সূরা নূরঃ ৪৮-৫২)
প্রকৃত অর্থে যদিও ‘জামাত আদ দাওলা’ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে শরয়ী আদালত মেনে নিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের কোন পরিবর্তন হয়নি। এটা সহ আরো অনেকগুলো সমস্যা সমাধানে শরয়ী আদালত প্রত্যাখান করেছে। সিরিয়ার আভ্যন্তরিন বিবাদ ও যুদ্ধের সমস্যা সমাধানে একটি শরয়ী আদালত প্রতিষ্ঠায় আমাদের অনেক মুখলিস ভাইয়ের চেষ্টা সত্ত্বেও তারা তা প্রত্যাখান করেছে। এখন যদি তারা বলে যে, এই আদালতের ব্যাপারে তাদের আপত্তি রয়েছে। তাহলে কি আমরা একথা বলতে পারি যে, ‘জামাত আদ দাওলা’ ব্যতিত এই পৃথিবীর বুকে তাদের জন্য বিশ্বস্ত কোন ব্যক্তি নেই। এমন কোন আলেম নেই যার কথার উপর নির্ভর করে উক্ত আহ্বানে ফিরে আসবে বা সাড়া দিবে।
শাইখ আবু মুহাম্মদ আল মাকদিসী (হাঃ) (আল্লাহ তাকে মুক্ত করুন) তিনিও স্পষ্ট ভাষায় তাদের কথিত আপত্তির জওয়াব দিয়েছেন। আমি এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত সকলকে শাইখের কথার দিকে ফিরতে নসিহাহ করছি।
৫ম ও সর্বশেষ পর্ব:
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- আভ্যন্তরিন কিতাল বা যুদ্ধকালীন সময়ে জাবহাতুন নুসরা কি ভূমিকা রেখেছিল?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ- জাবহাতুন নুসরা অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, ‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন’। তন্মধ্যে, ‘জামাত আদ দাওলা’ ও অন্যান্য দলের মধ্যে মধ্যস্ততা করা। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে জাবাহাতুন নুসরার উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ দ্বারা মধ্যস্ততা করার জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু এসকল চেষ্টা ব্যতিক্রম ব্যতিতই সব বাতাসের সাথে মিশে গিয়েছে। জামাতুদ্দৌলা আমাদের সকল মধ্যস্ততাকে প্রত্যাখান করেছে। তেমনিভাবে চেষ্টার মধ্যে এটাও ছিল যে, মুহাজিরগণকে আশ্রয় দেওয়া, আমরা তাও করেছি। শুধু এটাই না, উদাহরণ স্বরূপ এগুলো বললাম।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- কেন শুধু মুহাজিরগণ, আনসারগণ নয় কেন ?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ- অধিকাংশ সময় মুহাজিরগণকে সহযোগিতা করেছি। তার কারণ হচ্ছে আনসারদের নিজস্ব বাড়ী রয়েছে সেখানে তারা আশ্রয় নিয়ে থাকে। এরপরও জামাতুদ্দৌলার অনেক আনসারগণকেও আমরা সহযোগিতা করেছি।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- জাবহাতুন নুসরা কিভাবে তাদেরকে সহযোগিতা করেছে?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ শুরুতে আমি আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কথা ও কাজে এখলাস প্রার্থনা করছি।
আমরা যেসকল উদ্যেগ নিয়েছি তা আলোচনা এই জন্য করছি না যে, আমাদের অবদান কারো উপর কিংবা ভাল আচরণ প্রকাশ করে দেওয়া বরং এজন্য যে, বড় বড় মিডিয়াতে জাবহাতুন নুসরার বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর পরিবেশন করা হচ্ছে , তাই এর জওয়াব দেওয়ার উদ্দেশ্যে বলছি। সংকটের শুরুতে শাইখ আবু মুহাম্মদ আল জাওলানী (হাঃ) জামাতের অনেক নেতৃবৃন্দ ও শরয়ী সদস্যগণকে একত্র করে কিছু নির্দেশনা দিলেন এই বলে যে, তোমরা মুহাজিরগণের ব্যাপারে যত্ন নিবে, এটা আমাদের পক্ষ থেকে দয়া নয় বরং এটা আমাদের উপর শরয়ী দায়িত্ব। তাই আমরা ভাইদেরকে আমাদের বাসস্থানে নিরাপত্তা প্রদান করলাম। কিন্তু ভাইদেরকে বাসস্থানের বাইরে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা তাদেরকে সেখানে নিরাপত্তা দিয়েছি, যেখানে আমরা থাকি ও যেখানে আমাদের কর্তৃত্ব রয়েছে। কারণ পরিস্থিতি ছিল স্পর্শকাতর ও বড় বিপদজনক। ঐসকল লোকদের জন্য যারা ঘরের বাইরে থাকেন। আমাদের উপর শর্তারোপ করা হয়েছিল যেন আমরা আমাদের কেন্দ্র অথবা প্রধান প্রধান বাসস্থানে থাকি। কারণ তাদেরকে নিরাপত্তা দেওয়াই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু তাদের নিরাপত্তা দেওয়া তখন অসম্ভব হয়ে পড়ে যখন তারা তাদের ছাড়ানো বেল্ট কোমরে পরিধান করে রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছিল এমনকি আমাদের আবাসিক এলাকায়ও এভাবে। বিশেষ করে যখন অন্য গ্রুপের কিছু মুজাহিদ ভাই আমাদের সাক্ষাতে আসেন যাদের সাথে তাদের তখনও সংঘর্ষ বিদ্যমান। সংঘর্ষ তখনও চলছে। যেমন উদাহরণ স্বরূপ “আহরার আশ- শাম” এর কিছু ভাই আমাদের আবাসিক এলাকায় সাক্ষাতে আসতেন তখন বেল্ট পরা অন্য কিছু ভাইদের উপস্থিতি বড় সমস্যায় ফেলে দিত, বিশেষ করে এমন নাজুক পরিস্থিতিতে। যে কারণে অবস্থানের স্বার্থে নিরপেক্ষভাবে কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতাম যতটুকু সম্ভভ উত্তম পদ্ধতিতে। আমাদের কর্তব্য হয়ে দাড়াল যতদূর সম্ভব পারস্পরিক যুদ্ধকে আর দীর্ঘায়িত না করা। আল্লাহর প্রশংসা করছি, অপর দিকে প্রথম দিন থেকে যে সকল এলাকায় পারস্পরিক যুদ্ধ চলছে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিবারের সাথে অবস্থান করা সম্ভব হয়নি। আমরা যতটুকু সম্ভব করেছি। অনেক আনসার তো তাদের ঘর-বাড়ী ছেড়ে দিয়েছে যাতে মুহাজিরগণ থাকতে পারেন তাদের জায়গায়। অনেক ভাই অন্যের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন, সেখানে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। ইহা একজন মুসলিম ভাই অন্য মুসলিম ভাইয়ের প্রতি কর্তব্য। আমরা তাদেরকে খাদ্য, সম্পদ ও কাপড় যা কিছু তাদের প্রয়োজন দিয়েছি। আমি আবার বলছি, এটা আমরা তাদের প্রতি দয়া দেখাচ্ছি না, আমি আল্লাহ তা’য়ালার কাছে ইখলাস ও কবুল হওয়া কামনা করছি। আর যে সকল ভাইয়েরা আমাদের দেওয়া শর্ত প্রত্যাখান করে নিরাপত্তায় থাকেনি। আমরা তাদেরকে জোর করে আমাদের সাথে অথবা অন্য জায়গায় রাখার চেষ্টা করিনি। আর আমরা এটাও পারিনি যে, তাদের হাত ধরে রাখা, তাদের ছাড় দেওয়া অথবা তাদেরকে সহযোগিতা করা অথবা মুসলিমদের মধ্যে যুদ্ধ করতে ছেড়ে দেওয়া।
যারা অন্য গ্রুপে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করেছে, আমরা ছেড়ে দিয়েছি, কোন অসুবিধা নেই। অনেকে তুরষ্কে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করেছে সেখানে তাদের পরিবার রয়েছে ইত্যাদি । আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করেছি।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- একটি কথা শুনা যাচ্ছে যে, জাবহাতুন নুসরার কিছু সদস্যদেরকে জামাত আদ দাওলার মাঝে তুরকীর পক্ষে তথ্য প্রদানের জন্য নিযুক্ত করেছে?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ- সুবহানাল্লাহ! এই ধরনের মন্তব্য শুনে আফসোস হয় তাদের প্রতি যারা নিজেদেরকে মুজাহিদ দাবী করছে। যারা নিজেদেরকে মুহাজির বা আনসার দাবী করছে। এ সকল মানুষের উচিত অন্য মুসলিম ভাইয়ের সাথে উত্তম চরিত্রের সাথে আচরণ করা।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- রেকর্ডের প্রয়োজনে…… তুর্কির পক্ষে তথ্যদানের জন্য জাবহাতুন নুসরাকে নিযুক্ত করেছিল?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ- না, আমার নিকট থেকে রেকর্ড করো ইতিহাস, আমাদের সাথে তুর্কি কিংবা অন্যকোন তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থার সাথে সম্পর্ক নেই। আমরা কাউকে এই কাজের জন্য নিযুক্ত করিনি। আল্লাহ তা’য়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমরা যেসকল ভাইয়েরা পাশ্ববর্তী দেশ যেমন তুরস্কে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে সেখানে তাদের পরিবার রয়েছে কিংবা এরূপ কিছু, তাদের জন্য শিথিলতা করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে ঐসকল ভাইদের নসিহাহ করেছি যাদের সিরিয়ায় থাকার মত পরিবার নেই অথবা জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার অবস্থা নেই শুধু তাদেরকে। যদি এই দূরে যাওয়ার দ্বারা আভ্যন্তরিন যুদ্ধ বন্ধে কিছুটা স্বার্থক হয়, ভাইদেরকে এই নসিহাহ ও করেছি যে, খুব প্রয়োজন না হলে যেন সিরিয়া ত্যাগ না করে।
আল বাসীরাহ ফাউন্ডেশনঃ- সকলকে এক কাতারে আনতে জাবহাতুন নুসরা কি কি প্রচেষ্টা করেছে? চেষ্টা কি অব্যাহত থাকবে? এই বিরোধের কি সমাধান সম্ভব হবে বলে আপনি আশা করেন?
শাইখ আবু সোলাইমান আল মুহাজিরঃ– আমরা প্রথম দিন থেকেই বহু চেষ্টা করে যাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন। তন্মধ্যে আমাদের অনেক ভাইয়ের মাধ্যমে মধ্যস্ততা করা, বাস্তবে আমি স্বয়ং সর্বপ্রথম জাবহাতুন নুসরা ও জামাত আদ দাওলার মাঝে মধ্যস্ততাকারী ছিলাম। আমি, শাইখ জাওলানী (হাঃ) ও শাইখ বাগদাদীকে নিয়ে এই সংকটের সমাধান কল্পে অনেক চেষ্টা চালিয়েছি। আমার সাথে প্রথম দিকে ইরাকী এক ভাই ছিলেন যার নাম উল্লেখ করছি না নিরাপত্তার কারণে।
বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে উহার সমাধান কল্পে তন্মধ্যে শাইখ জাওলানী (হাঃ) একটি প্রস্তাব রাখেন যে, জাবহাতুন নুসরা তাদের নাম প্রত্যাহার করে নিবে এবং জামাত আদ দাওলা তাদের ইসলামী রাষ্ট্রের ঘোষণা প্রত্যাহার করে নিবে ও উভয়ে এক সাথে সিরিয়াতে আল কায়েদার অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এই প্রস্তাবটি প্রত্যাখান করা হয়েছে। অতঃপর আরেকটি প্রস্তাব পেশ করা হয় যে, শাইখ আবু বকর বাগদাদীর সাথে বিশেষ সাক্ষাতে মিলিত হয়ে যে সিদ্ধান্ত স্থির হয় সেটা উভয়ে মেনে চলবে। এই মর্মে শাইখ জওলানী (হাঃ) একটি চিঠি শাইখ আব্দুল আযীয কাতারী (রহিঃ) (আল্লাহ তা’য়ালা তাকে শহীদ হিসাবে কবুল করে নিন) এর মাধ্যমে প্রেরণ করেন। কিন্তু ফলাফল সেটাই হল অর্থাৎ পূর্ণ প্রত্যাখান।
শাইখ আইমান আজ জাওয়াহিরী (হাঃ)এর সিদ্ধান্ত ও নির্দেশও প্রত্যাখান করা হল। উলামাদের নাসিহাও প্রত্যাখান করা হল। দীর্ঘ ফিরিস্তি হবে যদি সব লিখা হয়। কিন্তু আমাদের যা কর্তব্য ছিল মান্য করা, তা মেনে নিয়েছি। হে ভাইগণ, আমরা সংঘর্ষ আর বাড়াবো না যতদূর সম্ভব। বিষয়টি সকলের জানা হয়ে যাক, এ জন্যে আমরা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত থেকেছি। এজন্য আমরা খুব চেষ্টা করেছি, যেন বিষয়টি ঘরোয়া হিসেবে থাকে। কিন্তু জামাত আদ দাওলা কোন এখতিয়ার ব্যতিত আমাদের উভয়ের মধ্যকার দ্বন্দ্বগুলো সাধারন মিডিয়াগুলোতে প্রচার করে দিল। তাই শরয়ী আলোকে আমরা আমাদের অবস্থানকে মুসলমানদের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে। জেনে রাখা দরকার-আমি যা দেখেছি তার সব বর্ণনা করিনি। যা ঘটেছে তা অনেক দীর্ঘ হবে। তাদের প্রতি আমাদের শরয়ী অবস্থান নিয়ে শাইখ আবু আব্দুল্লাহ শামী (হাঃ)এর অডিও বক্তব্যও রয়েছে। যা জাবহাতুন নুসরার শরয়ী কমিটির পক্ষ থেকে পাঠ করা হয়েছে। এছাড়াও জাবহাতুন নুসরার পক্ষ থেকে জামাত আদ দাওলা নিয়ে কয়েকটি ‘প্রত্যয়নপত্র’ প্রকাশিত হয়েছে। এসকল (শাহাদাহ) প্রত্যয়ন পত্রের সাথে আমার ব্যক্তিগত প্রত্যয়নও যুক্ত রয়েছে।
আমরা এখানে যা উল্লেখ করেছি তার চেয়ে প্রত্যায়নে বেশি পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করেছে।
আমি একথা বিশ্বাস রাখি যে, জামাত আদ দাওলার মধ্যেও অনেক মুখলিস ভাই রয়েছেন। আল্লাহ্ তা’য়ালার নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন আমাদেরকে ও তাদেরকে ঐ পথের দিশা দেন যাতে তাঁর সন্তুষ্টি রয়েছে। আর আমি তাদের জন্য উহা ভালবাসি যা আমি নিজের জন্য ভালবাসি। তিনি যেন আমাদের সকলের শেষ মূহুর্তে শাহাদাত নসীব করেন। তিনিই উহার মালিক ও ক্ষমতাবান। ওয়াল হামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন।