মাওয়াজে থানুভী (রাঃ) থেকে নির্বাচিত কাহিনী
--------------------------------------------------------★
✔জুতার বরকতে
==================
একবার এক ব্যক্তিকে তার বন্ধুরা দারুনভাবে চেপে ধরলাে। সকল বন্ধু তাকে দাওয়াত করে খাওয়াতে বললো ! বেচারা কোন উপায় না দেখে অবশেষে বাধ্য হয়ে তাদের দাওয়াত করলাে । কিন্তু শর্ত হলাে, দাওয়াতে আসার সময় সকলকে অবশ্যই দামী পােষাক ও দামী জুতা পরে আসতে হবে। নির্ধারিত সময়ে সকলে উপস্থিত। জুতা খুলে সবাই ঘরের মধ্যে যেয়ে বসেছে। বেচারা করলাে কি, সবার জুতা তুলে নিয়ে হালুয়া বিক্রেতার নিকট তা বন্ধক রেখে সুস্বাদু বিভিন্ন প্রকার হালুয়া আনলাে। মেহমান বন্ধুরা বিনা পয়সার এত আয়ােজনে মুগ্ধ হয়ে খুব মজা করে পেট ভরে খেলাে। খাবারের মধ্যে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে তারা বললাে, আহ! বন্ধু কতাে মজাদার খাবারের ব্যবস্থাই না তুমি করেছো। আমরণ মনে রাখব। সেও তার প্রিয় বন্ধু -মেহমানদের খুব খাতির যত্ন করে বিনীত স্বরে বললাে, ভাই এ সব কিছু আপনাদেরই “জুতার বরকত" । মেহমানরা মনে করছে, একথা সে বিনয় প্রকাশের জন্যে বলছে। সাধারণত মানুষ এরূপ বলে থাকে। খাবার শেষে যখন দেখল, তাদের জুতা একটিও নেই, তখন তাদের চোখ ছানাবড়া। অবাক হয়ে বন্ধু-মেজবানকে জিজ্ঞাসা করলাে, আমাদের জুতা কই? সে বল্লো, এখন প্রশ্ন করছাে কেন, আমি তাে আগেই বলেছি, আজকের সব আয়ােজন তোমাদের জুতার বরকতেই সম্পন্ন হয়েছে। তারা তখন তার কথার মর্মার্থ বুঝতে পারে। চেপে ধরে মেহমান হয়ে মজার মজার খাদ্যের স্বাদ দারুনভাবে উপলব্ধি করে। উল্লেখ্য, মানুষ যখন দুনিয়ার ক্ষণকালীন সুখ পরিত্যাগ করতে রাজী নয়, তখন সে পরকালের স্থায়ী চিরন্তন সূখ-উপভােগ কিভাবে ত্যাগ করতে পারে? তদুপরি পৃথিবীর সম্পদ ও আয়ােজন সীমিত । মানুষের স্বাচ্ছন্দের জন্য মানুষ কিই বা করতে পারে। কারাে নিকট বারবার চাইলে সে বিরক্ত হয়ে যায়। পৃথিবীতে মানুষের কোন তৃপ্তি নেই। পক্ষান্তরে, পরকালের একমাত্র দাতা, যার কাছে যত প্রার্থনা করবে, যতাে চাইবে তিনি তত খুশী হবেন । তার অনুদানের পরিমাণও সীমাহীন। তাই আমাদের প্রার্থনা একমাত্র আল্লাহর নিকটই হওয়া দরকার। যার নিকট শত বার প্রার্থনা করলেও তিনি বিতশ্রদ্ধ হন না।
✔অর্ধেক বিয়ে
================
এক হাস্যরসিক তালেবে ইলমকে তার বন্ধু পরিহাস করে জিজ্ঞাসা করে, ভাই এখন কোন ফিকিরে ঘুরছে। সে বললাে, ভাই শাহজাদীকে বিয়ে করার চিন্তায় আছি। বন্ধু বললাে, সুখী হও দাম্পত্য জীবনে। বহু বড় জায়গায় তাে হাত দিয়েছাে ! তবে বিয়ের কোন ব্যবস্থা হচ্ছে নাকি? সে বললাে, অর্ধেকতো হয়েছে বাকী অর্ধেকের ফিকির করছি। বন্ধু বললাে, কিভাবে? সে বললো, আমি তাে বিয়েতে সম্পূর্ণ রাজী আছি। বাকী শাহজাদী এখনাে রাজী হয়নি। তাই বিয়ের অর্ধেক সম্পন্ন হয়ে গেছে অর্ধেকের ফিকিরে ঘুরছি। উল্লেখ্য যে, এ ধরনের অর্ধেক বাকীর দ্বারা কখনাে বিয়ে সম্পন্ন হয় না। এ ধরণের রাজী দ্বারা শাহজাদীকে কখনাে বিয়ে করা সম্ভব হবে না। এমন কিছু লােক আছে যারা দাবী করে, সে তাে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, সে আল্লাহকে ভীষণ ভালবাসে। কিন্তু মূলত আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট নন । আবার বহু পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বাতেনী অর্থাৎ সর্বদা আল্লাহর কথা স্মরণে রাখাকেই মূখ্য এবাদাত বলে মনে করে। অথচ তা মুখে হতে পারে আবার অন্তরেও হতে পারে। এমন করাই যথেষ্ট। তারা অন্য সব আমলকে মাকসূদ মনে করে না। ফরয এবাদাত পালনকেও জরুরী মনে করে না। একেই বলে গরীবের ছেলের শাহজাদীকে বিয়ে করার মিথ্যে আশা ।
✔একেই বলে প্রেম
==================
মজনু একবার উটনীতে চড়ে লাইলীর বাড়ির দিকে রওনা হলাে। উটনীটির একটি বাচ্চা ছিলাে। তাই বার বার সে পিছনে ফিরে তাকাতে থাকে। একটু সুযােগ পেলেই উটনীটি পিছনের দিকে ছুটে যাচ্ছে । তা মজনু টের পেলে আবার ঘুরিয়ে সম্মুখের পানে চালাতে থাকে । উটনীটি এভাবে সামনে পিছনে চলার কারণে মােটেও পথ এগুচ্ছিলাে না । যেখান থেকে রওয়ানা করেছিলাে সেখানেই রয়ে গেলাে। সে বুঝলাে যে, বাচ্চার মহাব্বতে উটনীটি সন্মুখে অগ্রসর হতে পারছে না। তাই সে একটি পংক্তি আওড়াতে লাগলঃ “আমার উটনীর মাহবুব পিছনে পরে রয়েছে আর আমার মাহবুব রয়েছে সন্মুখে । আমি তার মিলনে সন্মুখে অগ্রসর হতে চাই, কিন্তু আমার উটনী তার মাহবুবের সকাশে যেতে পিছনের দিকে ছুটে যায় । আমার আর তার লক্ষ্যের মাঝে রয়েছে বিরাট পার্থক্য।” ফলে তাকে নিয়ে চলা সম্ভব হলাে না। তাকে ছেড়ে একা পথ চলা ছাড়া উপায় নেই । এবার তার উটের পিঠ থেকে নেমে পথ চলার পালা। কিন্তু প্রেমে পাগল উন্মাদ হৃদয় এতাে কিছু ভাবতে পারে না। মজনু উটনীর পিঠ থেকে লাফিয়ে নামতে যেয়ে হাত পা ভেঙ্গে ফেললাে। মাথায় আঘাত পেয়ে রক্ত বের হলাে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমীর সৃষ্টি হলাে। তাড়াতাড়ী লাইলা সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে সে উটনীর পিঠ থেকে লাফিয়ে পড়েছিলাে, দাঁড়িয়ে চলতে পারছিলাে না। মনে মনে বললাে, আচ্ছা যখন পায়ে চলতে পারছিনা তখন হামাগুড়ি দিয়েও তাে যেতে পারি। তাই সে হামাগুড়ি দিয়ে চলতে লাগলাে । মনের এই অবিচল ভাবকেই মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী কবিতার ভাষায় এভাবে বলেছেনঃ “আল্লাহর প্রেম কখনাে লাইলীর প্রেম থেকে কম নয়, আল্লাহর প্রেমে 'বল' -এর মত হয়ে যাওয়াও অনেক ভালাে। মানুষ পদাঘাত করতে করতে তাকে মনজিলে মাকসুদে পৌঁছে দিবে।” উল্লেখ্য যে, মজনু লাইলীকে পাওয়ার জন্য এতাে কষ্ট, এতাে যাতনা সহ্য করেছে। দুনিয়ায় কোন প্রেমাস্পদকে যদি কষ্ট ভােগ ছাড়া পাওয়া অসম্ভব হয় তবে আল্লাহকে কিভাবে মেহনত ছাড়া পাওয়া যাবে? কোন আমলই করবে না অথচ মনে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে বসে থাকবে, আমি তাে আল্লাহকে ভালবাসি! এ ধরণের ভাবনা প্রবঞ্চণা ও মিথ্যা শান্তনা বই কি। এর কোন বাস্তবতা নেই৷