Pdf download links

https://www100.zippyshare.com/v/ykjocJqw/file.html
https://files.fm/u/6qcbetud
https://archive.org/details/GonotontroKeBorjonKorun
https://ia601503.us.archive.org/22/i...on%20korun.pdf
https://my.pcloud.com/publink/show?c...nJ3wfW9pGPxVQ7


অনলাইনে পড়ুন

গণতন্ত্রকে বর্জন করুন
শাইখ আবু আব্দুল্লাহ আল-হিন্দি (হাফি.)
মুখপাত্র, জামা‘আতুল মুজাহিদীন

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ - اما بعد

সমস্ত প্রসংশা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, সলাত ও সালাম নাবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ও তার সাহাবা আজমাঈনদের উপর।
বাংলার প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! কালপরিক্রমায় আবারো আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি জাতীয় নির্বাচন নামের আদিম প্রহসনকে সামনে রেখে, যার বদৌলতে আরো ৫ বছরের জন্য এদেশের সাধারণ মানুষের রক্ত চোষার লাইসেন্স পেয়ে যাবে কোন একটি রাজনৈতিক দল। এই রক্তচোষা হায়েনারা বারবার সাধারণ খেটে খাওয়া সহজ সরল মানুষগুলোর নিরুপায় সমর্থন নিয়ে তাদেরই মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খায়। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যারা ৯৫ ভাগ মুসলিমের আবাস ভুমিকে ইসলামের শত্রুদের হাতের খেলনা বানিয়ে দেয়, যারা দেশের মানুষের রক্ত পানি করা কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিজের সুইস একাউন্ট ভারি করে, তারা আর যাইহোক জনসাধারণের শোভাকাঙ্ক্ষী হতে পারেনা। তাদের এই চরিত্র আপনাদের অজানা নয়। নির্বাচনের নামে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে তারা নিজেদেরকে আল্লাহর আসনে বসিয়ে দিয়েছে। যে বিধান দেওয়া একমাত্র আল্লাহ তা’লার অধিকারেই থাকার কথা সে অধিকার তারা নিজেদের করে নিয়েছে। আর এই কাজটি তারা করছে আপনাদেরই ভোটে নির্বাচিত হয়ে।
আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য। এই পৃথিবীতে তার দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করে তার রাজত্বকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু কতিপয় ইসলাম বিদ্বেষী লোক আল্লাহর দ্বীনকে বিলুপ্ত করার প্রয়াসে নিজেদেরকে নিয়োগ করে রেখেছে। এজন্য তারা গণতন্ত্র নামের নতুন দ্বীন আবিষ্কার করে তা সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের ধোঁকায় পড়ে আজ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ইহুদি খ্রিস্টানদের তৈরিকৃত এই কুফরি গণতন্ত্রকে মানুষ আজ সাধরে গ্রহণ করে নিয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ তার অর্থ, শ্রম সবকিছু ব্যয় করছে, এমনকি জীবনও বিলিয়ে দিচ্ছে। গণতন্ত্রের পাতানো ফাঁদ থেকে আলেম সমাজও রক্ষা পায়নি, তারাও গণতন্ত্রের ধোঁকায় পড়ে এরই মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে।
ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে গণতন্ত্রের বিষ-বাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে। স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ, মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থান যেন গণতন্ত্রের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুকৌশলে গণতন্ত্র ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। স্কুলের কমিটি থেকে শুরু করে সর্বত্রই গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হচ্ছে। গণতন্ত্রের বিষ-বাষ্পে সমগ্র পৃথিবী আজ ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রের পাতানো ফাঁদ থেকে উদ্ধার পেতে হলে জানতে হবে গণতন্ত্র কি? কেন এই গণতন্ত্র আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে? আর আলেম সমাজ কেনইবা এই ধোঁকায় পড়ে আছে?

গণতন্ত্রের পরিচয় :
গণতন্ত্র একটি মানব রচিত ধর্মহীন রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা। তবে ‘জনগণের শাসন ব্যবস্থা’ বা জনগণের সরকার ব্যবস্থা হিসাবেই এটি প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। ইংরেজী Democracy শব্দের বাংলা অর্থ গণতন্ত্র। এই ইংরেজী Democracy শব্দটি গ্রীক শব্দ δῆμος (dēmos) ও κράτος (kratos) থেকে উৎপন্ন হয়েছে। Demos শব্দের অর্থ জনগণ আর kratos শব্দের অর্থ শাসন বা ক্ষমতা। সুতরাং উভয় শব্দের মিলিত অর্থ দাঁড়ায় জনগণের শাসন বা জনগণের ক্ষমতা।
সাধারণভাবে গণতন্ত্র বলতে বুঝায়, এমন এক মতবাদ বা ব্যবস্থাকে যেখানে সমাজ-রাষ্ট্রের আইন-বিধান প্রণয়ণের চূড়ান্ত ক্ষমতা অর্পণ করা হয় জনগণের উপর বা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উপর। মোটকথা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে শাসনকার্য পরিচালনাকে গণতন্ত্র বলে। (ডঃ এমাজউদ্দীন আহমদ, রাষ্ট্র বিজ্ঞানের কথা, পৃঃ ৩৬৫)

গ্রীক ঐতিহাসিক ও দার্শনিক হিরোডোটাস (Herodotus) গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় বলেন, এটা এক প্রকার শাসন ব্যবস্থা যেখানে শাসন ক্ষমতা কোন শ্রেণী বা শ্রেণীসমূহের উপর ন্যস্ত থাকে না, সমাজের সদস্যগণের উপর ন্যস্ত হয় ব্যাপকভাবে’।
অধ্যাপক শেলী বলেন, Democracy is a form of government in which every one has a share in it. অর্থাৎ ‘যে সরকার ব্যবস্থায় সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকে তাকে গণতন্ত্র বলে’। (মোঃ মকসুদুর রহমান, রাষ্ট্রীয় সংগঠনের রূপরেখা, পৃঃ ৭৬)

আধুনিক গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা ‘আমেরিকান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৩ সালে গেটিসবার্গের এক জনসভায় ‘গণতন্ত্র’-এর আধুনিক সংজ্ঞা দেন এভাবে যে, Democracy is the government of the people by the people and for the people. অর্থাৎ ‘গণতন্ত্র এমন একটি সরকার ব্যবস্থা, যা জনগণের উপর জনগণের দ্বারা পরিচালিত জনগণের শাসন ব্যবস্থা বুঝায়’। (সৈয়দ মকসুদ আলী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পৃঃ ২৮৫)

মোটকথা জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী দেশ শাসনের নামই গণতন্ত্র। অন্য কথায় গণতন্ত্র হ’ল এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যা সম্পূর্ণরূপে জনসমষ্টির ইচ্ছাধীনে পরিচালিত।

গণতন্ত্র কুফরী এবং শিরক।
এর মূল কারণ ৩ টি। যথা-
(১) গণতন্ত্রের মূল কথা ‘সকল ক্ষমতার মালিক/উৎস জনগণ’ বা ‘জনগণের সার্বভৌমত্ব’। আর এগুলো সুস্পষ্ট কুফরি কথা এবং নিঃসন্দেহ শিরক।
মহান আল্লাহ বলেন-
أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللّهَ لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ يُعَذِّبُ مَن يَشَاء وَيَغْفِرُ لِمَن يَشَاء وَاللّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
“তুমি কি জানো না যে নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডলের সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন, যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান”। [সূরা মায়িদাহ্ ৫ : ৪০]
الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُن لَّهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيرًا
“যিনি (আল্লাহ)* নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সার্বভৌমত্বের অধিকারী;** তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি; সার্বভৌমত্বে তাঁর কোন অংশীদার নেই।* তিনি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে….”। [সূরা আল ফুরকান ২৫ : ২]
গণতন্ত্রকে যারা লঘুভাবে দেখার পক্ষপাতী তারা যুক্তি দেখাতে চান, যে ‘জনগণের সার্বভৌমত্ব’ এর অর্থ এটা নয় যে ‘জনগণ আল্লাহর উপরেও ক্ষমতাবান/ কর্তৃত্বশীল’।
এ ব্যপারে বলতে গেলে-
a) আসলে সার্বভৌমত্ব শব্দটার মানেই হচ্ছে চরম চূড়ান্ত ক্ষমতা (The Ultimate Power), কাজেই একই সাথে একাধিক সার্বভৌমত্ব থাকতে পারে না,* (যেমন আল্লাহর সার্বভোমত্ব এবং জণগনের সার্বভৌমত্ব)।
b) রাষ্ট্রের যেকোন বিষয়ে যখন আল্লাহর কিতাবের উপরে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের খেয়াল খুশিকে প্রাধান্য দেওয়া হয় তখন কিভাবে এটা দাবী করা যায় যে ‘জনগণের সার্বভৌমত্ব’ এর অর্থ এটা নয় যে জনগণ আল্লাহর উপরেও ক্ষমতাবান/ কর্তৃত্বশীল??
c) “আনা রব্বুকুমুল আ’লা” অর্থাৎ “আমি তোমাদের সবচেয়ে বড় রব” (সূরা নাযিয়াত : ২৪) একথা বলে ফিরাউন তাগুত ও কাফিরে পরিণত হয়েছিল। অথচ সে নিজেকে আসমান জমীনের রব বলে দাবী করেনি, কেননা সে নিজেই অন্য ইলাহর উপাসনা করতো। (আলোচনা পরে আসছে)
d) যখন সংবিধানের ‘জনগণের সার্বভৌমত্বের’ অজুহাত দেখিয়ে ‘আল্লাহর সার্বভৌমত্ব’ বিশিষ্ট একটা দলের নিবন্ধন বাতিল করা হল তখন এ ধরনের যুক্তি কতটুকু Valid??
[এরই সাথে আরো একটা প্রশ্ন করে রাখি যারা সংবিধানের জনগণের সার্বভৌমত্বের অজুহাত দেখিয়ে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে বাতিল করার দুঃসাহস দেখিয়েছে তাদেরকে এখন তাকফির করতে বাধা কোথায়??]
(২) গণতন্ত্রে আইন-বিধান তৈরির চূড়ান্ত ক্ষমতা অর্পন করা হয় জনগনের ভোটে নির্বাচিত MP দের উপর। সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপিরা যেটা বলবে সেটাই হবে দেশের সর্বোচ্চ আইন যার বিরোধিতা করা গণতান্ত্রিক সংবিধান অনুসারে আইনগত অপরাধ। গণতন্ত্রে MP দের সংখ্যাগরিষ্টতাকে কুরআন সুন্নাহর উপরেও স্থান দেয়া হয়। সংখ্যাগরিষ্টতার জোরে তারা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন তৈরি করতে পারে এমনকি আল্লাহর আইনকে বাতিলও করতে পারে।
[উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৮ বছরের পূর্বে বিয়ে নিষিদ্ধ করা, ১৬ বছরের পর পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যভিচার করলে তার বৈধতা দেওয়া, স্বামীর অনুমতিতে স্ত্রী অন্য পুরুষের সাথে ব্যভিচার করলে তার বৈধতা দেয়া, পতিতাবৃত্তির লাইসেন্স দেয়া এবং এই কাজে কেউ বাধা দিলে তাকে উল্টো আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো,** মাদক উৎপাদনের লাইসেন্স দেয়া, সমকামিতার বৈধতা দেয়া, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করা, যাত্রা-সিনেমা হলে প্রকাশ্যে অশ্লীলতার চর্চাকে আইন দিয়ে প্রমোট করা, সুদের বৈধতা দেয়া, নাস্তিকতার চর্চাকে আইনী প্রোটেকশন দেয়া, আল্লাহর হুদুদসমূহকে অকার্যকর করে নিজেরা নিজেরা আইন তৈরি করা]
এ ধরণের মূলনীতি নিঃসন্দেহে * আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের (ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের) ক্ষেত্রে শিরক এবং একটি স্পষ্ট কুফর (কুফরুন বাওয়াহ)। * নিচের আয়াতগুলো লক্ষ্য করলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ-
أَلاَ لَهُ الْخَلْقُ وَالأَمْرُ
“শুনে রাখ, সৃষ্টি যার, আইন চলবে তাঁরই।”* [সূরা আ’রাফ ৭ : ৫৪]
( অন্যদিকে গণতন্ত্র বলে আইন চলবে নগন্য কিছু মানুষের)
إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلّهِ أَمَرَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ
“বিধান দেয়ার অধিকার কেবলমাত্র আল্লাহরই।* আর তিনি আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতিত আর কারও ইবাদাত না করতে। এটাই সুদৃঢ় সঠিক দ্বীন। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না”।* [সূরা ইউসুফ ১২ : ৪০]
وَاللّهُ يَحْكُمُ لاَ مُعَقِّبَ لِحُكْمِهِ وَهُوَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
“আল্লাহ নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশকে পশ্চাতে নিক্ষেপকারী কেউ নেই। তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণ করেন।”।* [সূরা রা’দ ১৩ : ৪১]
(অন্যদিকে গণতন্ত্র বলে মেম্বার অব দি পার্লামেন্ট আল্লাহর হুকুম যাচাই বাছাই করে বাদ দিতে পারে।)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاء شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
“তাদের কি এমন কতগুলো শরীক বা দেবতা আছে যারা ওদের জন্যে বিধান দিয়েছে এমন দ্বীনের যার অনুমতি আল্লাহ ওদেরকে দেননি”?* [সূরা শূরা ৪২ : ২১]
(এই আয়াতে যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারও কাছ থেকে আইন-বিধান গ্রহণ করে তাদেরকে আল্লাহ মুশরিক বলে সাব্যস্ত করেছেন।)
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
“যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিধান দেয় না তারাই কাফের”।* [সূরা মায়িদা ৫ : ৪৪]
أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ
“তবে কি তারা জাহেলিয়্যাতের বিধি-বিধান কামনা করে? নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্যে বিধান দানে আল্লাহ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতর”?? [সূরা মায়িদা ৫ : ৫০]

(৩) গনতন্ত্রে যেকোন বাদানুবাদ/ বিতর্কের চূড়ান্ত মীমাংসাকারী বানানো হয় সংবিধান ও এর ধারাসমূহ এবং পার্লামেন্টের সংখ্যাধিক্যকে। এটা চূড়ান্ত পর্যায়ের একটি কুফর।
মহান আল্লাহ বলেন-
فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً
“যদি তোমাদের মাঝে কোন বিষয়ে মতভেদ হয়, তাহলে তোমরা বিষয়টিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হও। এটাই তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক এবং পরিণতির দিক থেকে উত্তম”। [সূরা নিসা ৪ : ৫৯]
* অন্যদিকে পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র বলে –
যদি তোমাদের মাঝে কোন বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয় তাহলে তোমরা বিষয়টা মীমাংসার জন্যে মানব রচিত সংবিধান, তার ধারাসমূহ এবং সংসদের সংখ্যাধিক্যের কাছে সমর্পণ কর।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরো বলেন-
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا
“কোন বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে সে বিষয়ে কোন মুমিন পুরষ বা মুমিন নারীর ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করবে সে স্পষ্টরূপে পথভ্রষ্ট হবে”। [সূরা আহযাব ৩৩ : ৩৬]
فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّىَ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُواْ فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسْلِيمًا
“না, তোমার প্রতিপালকের শপথ, তারা মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তারা তাদের পারস্পরিক বিবাদ বিসম্বাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর তোমার দেওয়া ফায়সালা সম্পর্কে তাদের মনে কোন সংশয় না থাকে এবং সর্বান্তকরনে তারা তা মেনে নেয়”। [সূরা নিসা ৪ : ৬৫]
*** আরবাবাম মিন দুনিল্লাহ- আল্লাহর পরিবর্তে (কাউকে) রব বানিয়ে নেওয়া
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন-
اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ
“আর তারা তাদের পন্ডিত (আলেম) ও সংসার বিরাগী (দরবেশ) লোকদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে রব বানিয়ে নিয়েছে”।* [সূরা তাওবাহ ৯ : ৩১]
এই আয়াতটি একটি দলীল যে মাঝে মাঝে মানুষ আল্লাহকে বাদ দিয়ে মানুষকেই তাদের রব বানিয়ে ফেলে। এটাকেই কুরআনের ভাষায় বলা হয়েছে আরবাবাম মিন দুনিল্লাহ। কিন্তু কিভাবে আল্লাহর পরিবর্তে মানুষকেই মানুষের রব বানানো হয়, নিচে আমরা কিছু উদাহরণ পেশ করবো-
ক) আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে মান্য করা হল এক ধরনের ইবাদত উপরের আয়াতটি [সূরা তাওবা ৩১] তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসীর (রহঃ) ইমাম আহমদ, তিরমিযী ও ইবনে জারীরের সূত্রে বর্ণনা করেন, আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তাঁর কাছে ইসলামের দাওয়াত আসার পরে প্রথমে তিনি সিরিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিলেন, পরে যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে তিনি এলেন, তখন তার গলায় ক্রুশ ঝুলানো ছিলো। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখিত আয়াতটি (তারা তাদের আলেম ও দরবেশদেরকে* আল্লাহর পরিবর্তে রব বানিয়ে* নিয়েছে) পড়ছিলেন।* তখন আদী (রাঃ) বলেন, আহলে কিতাবরা (ইহুদী ও খৃষ্টানরা) তো আলেম/দরবেশদের ইবাদত/উপাসনা করতো না! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তা সত্য। তবে তারা (আলেম/দরবেশরা) মন মতো কোনো কিছুকে বৈধ কিংবা অবৈধ ঘোষনা করলে জনগণ তা নির্বিচারে মেনে নিতো। এটাই হল তাদের পূজা-উপাসনা করা, এটাই হলো তাদের ইবাদত করা।
খ) আল্লাহর কিতাব ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে যারা নিজেদের খেয়াল-খুশি মত আইন/বিধান প্রণয়ন করে তারা তাদের কামনা-বাসনাকে ইলাহ বানিয়ে নেয়, আর সাধারণ মানুষেরা যখন এসব মনগড়া আইন/বিধানকে কবুল করে নেয়, তখন কিছু সংখ্যক লোকের কামনা-বাসনাকে গোটা জাতির রব বানানো হয়। মহান আল্লাহ বলেন-
أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا-أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ إِنْ هُمْ إِلَّا كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلًا
“তুমি কি দেখো না তাকে যে তার কামনা বাসনাকে ইলাহরূপে গ্রহণ করেছে? তবুও কি তুমি তার কর্মবিধায়ক হবে? তুমি কি মনে কর ওদের অধিকাংশ শুনে ও বুঝে? তারা তো পশুর মত, বরং তারা অধিক পথভ্রষ্ট”।* [সূরা ফুরকান ২৫ : ৪৩-৪৪]
গ) আল্লাহর আইন ব্যতিত অন্য কোন আইন বাস্তবায়নের চেষ্টা করা কিংবা আল্লাহর আইন ব্যতিত অন্য কারও আইনের অনুসরণ করা হল শিরক যা একজন মানুষকে মুশরিকে পরিণত করে। প্রমাণ স্বরূপ সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায় যখন একটি মৃত ছাগলকে নিয়ে আর রাহমানের বান্দাদের সাথে শয়তানের বান্দাদের বিতর্ক হয়েছিল। মুশরিকরা যুক্তি দ্বারা মুসলিমদেরকে বুঝাতে চেয়েছিল, যে ছাগলকে জবাই করা হয় আর যে ছাগল (প্রাকৃতিকভাবে) মারা যায় এ দুইয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। তারা দাবী করেছিল যে মৃত ছাগলটিকে আল্লাহই যবেহ করেছেন। আর তাই তাদের মতে উভয়টাই জায়েয। আর এ প্রেক্ষিতেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মুমিনদের সতর্ক করে বলেন-
وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ
“আর তোমরা যদি তাদের আনুগত্য/অনুসরণ কর তাহলে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হয়ে যাবে”। *
[সূরা আনআম ৬ : ১২১]
(বিস্তারিত তাফসীর ইবনে কাছির দ্রষ্টব্য)
ঘ) সর্বশেষ আমরা উল্লেখ করবো ফিরআউনের কথা কেননা সে হল সেই ব্যক্তি যে নিজেকে রব বলে দাবি করেছিল-
فَحَشَرَ فَنَادَى-فَقَالَ أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَى
সে লোকজনকেক জড় করলো আর উচ্চস্বরে ঘোষণা করলো, “আমিই তোমাদের সবচেয়ে বড় রব”। [সূরা আন-নাযিয়াত ৭৯ : ২৩, ২৪]
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ফিরআউন এখানে ‘রব’ বলে নিজের জন্যে কি দাবী করেছিল? সে কি এটা বলতে চেয়েছিল যে আমি আসমান যমীন সৃষ্টি করেছি, মানুষ সৃষ্টি করেছি, কিংবা আমি বিশ্বজগত পরিচালনা করছি??
না, সে এমনটা দাবী করে নি। কেননা সে নিজেই অনেক ইলাহ/রব বা উপাস্যর ইবাদত করতো। আর তার প্রমাণ মিলে-
وَقَالَ الْمَلأُ مِن قَوْمِ فِرْعَونَ أَتَذَرُ مُوسَى وَقَوْمَهُ لِيُفْسِدُواْ فِي الأَرْضِ وَيَذَرَكَ وَآلِهَتَكَ
ফিরআউনের জাতির নেতারা বললো, “আপনি কি মূসা ও তার দলবলকে রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টির সুযোগ দিবেন আর তারা আপনাকে ও আপনার ইলাহদেরকে এভাবে বর্জন করে চলবে??” [সূরা আ’রাফ ৭ : ১২৭]
মূলত ফিরআউন নিজেকে আসমান- যমীনের রব দাবী করে নি, সে যেটা দাবী করেছিল তা মিশরের সার্বভৌমত্ব বা চূড়ান্ত কর্তৃত্ব। সে চেয়েছিল মিশরের জনগণ সকল প্রকার আইন বিধান ও কর্তৃত্বের চূড়ান্ত ক্ষমতা তার উপর অর্পণ করুক, তার খেয়াল খুশি মত চলুক-
وَنَادَى فِرْعَوْنُ فِي قَوْمِهِ قَالَ يَا قَوْمِ أَلَيْسَ لِي مُلْكُ مِصْرَ وَهَذِهِ الْأَنْهَارُ تَجْرِي مِن تَحْتِي
“ফিরআউন তার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলো। সে বললো, মিশরের সার্বভৌমত্ব কি আমার নয়? তোমরা কি দেখছো না যে, এই নদীগুলো আমার (রাজত্বের) অধীনেই বয়ে চলছে——–??”*
[সূরা যুখরুফ ৪৩ : ৫১]
অতঃপর যারা তার এই অবৈধ কর্তৃত্ব মেনে নিল এবং মূসা আলাইহিস সালাম আনীত আল্লাহর সার্বভৌমত্বের দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করলো, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন-
فَاسْتَخَفَّ قَوْمَهُ فَأَطَاعُوهُ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمًا فَاسِقِينَ
“এসব বলে সে তার জাতিকে হতবুদ্ধি করে তুললো, (এক পর্যায়ে) তারা তার কথা মেনেও নিলো। নিঃসন্দেহে তারাতো ছিলো এক পাপীষ্ঠ জাতি”।* [সূরা যুখরুফ ৪৩ : ৫৪]

প্রেক্ষিত বাংলাদেশঃ
বাংলাদেশ সংবিধানের ৭(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-
“ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীনে ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে”।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-
“জনগণের অভিপ্রায়ে পরম অভিব্যক্তিকরূপে* এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহা হইলে ঐ আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল বলে গণ্য হবে।”
[কুরআন- সুন্নাহর আইন যদি এই সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে সেই আইনও সংবিধানের দাবি মোতাবেক বাতিল বলে গণ্য হবে এবং অলরেডি অনেক ক্ষেত্রে হয়েছেও]
আবার বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চম ভাগের শিরোনাম হলো ‘আইন সভা’। সংবিধানের ৬৫(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-
‘জাতীয় সংসদ’ নামে বাংলাদেশের একটি সংসদ থাকিবে এবং সংবিধানের বিধানবালীর-সাপেক্ষে প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা সংসদের উপর ন্যস্ত হইবে।
**** উপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা গেল যে* আইনসভা বা* Parliament হল আইন-বিধান তৈরির স্থান, আর* Member of the Parliament হল* আইন-বিধান প্রণয়নকারী।* তাদের উপর এই ক্ষমতা অর্পণ করা হল* আরবাবাম মিন দুনিল্লাহ (আল্লাহর পরিবর্তে রব বানিয়ে নেওয়া)* যেটা স্পষ্টত শির্ক এবং কুফর। সহজ কথায় গণতন্ত্র হল একটি বহু ঈশ্বরবাদী ধর্ম যেখানে বিভিন্ন ঈশ্বর নিজেদের খেয়াল খুশিমত বিভিন্ন মত দেয়, অতঃপর সংখাধিক্যের মতামতকে আইন/বিধান হিসাবে জনগণের উপর নাযিল করা হয়।
ইসলাম ও গণতন্ত্রের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য:
ক্রমিক নং

০১
ইসলাম:
সকল ক্ষমতার উৎস আল্লাহ তা‘আলা।

গণতন্ত্র:
সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ।

০২
ইসলাম:
ইসলাম আল্লাহর দেয়া পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা।

গণতন্ত্র:
গণতন্ত্র ইহুদী-খৃস্টানদের তৈরি অসম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।

০৩
ইসলাম:
সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ তা‘আলা।

গণতন্ত্র:
সার্বভৌমত্বের মালিক জনগণ।

০৪
ইসলাম:
ইসলামে আল্লাহর অস্তিত্ব অনস্বীকার্য।

গণতন্ত্র:
ইসলামে আল্লাহর অস্তিত্ব উপেক্ষিত।

০৫
ইসলাম:
ইসলামের লক্ষ্য আত্মিক ও পার্থিব উন্নতি।

গণতন্ত্র:
গণতন্ত্রের লক্ষ্য শুধু ক্ষমতার রাজনীতি।


০৬
ইসলাম:
ইসলামে মানুষ শুধুমাত্র আল্লাহর গোলাম।

গণতন্ত্র:
গণতন্ত্রে মানুষ মানুষের গোলাম।


০৭
ইসলাম:
ইসলামে আইনের উৎস কুরআন ও সুন্নাহ।

গণতন্ত্র:
গণতন্ত্রে আইনের উৎস মানুষের খেয়াল খুশি।


০৮
ইসলাম:
ইসলামে মৌলিক আইন অপরিবর্তনীয়।

গণতন্ত্র:
গণতন্ত্রে যে কোন আইন পরিবর্তনযোগ্য।


০৯
ইসলাম:
ইসলামের শিক্ষা মানুষে মানুষে ভ্রতৃত্ব।

গণতন্ত্র:
গণতন্ত্রের শিক্ষা মানুষে মানুষে অনৈক্য।


১০
ইসলাম:
ইসলামে নেতৃত্বের ভিত্তি জ্ঞান ও আল্লাহ ভীতি।

গণতন্ত্র:
গণতন্ত্রে নেতৃত্বের ভিত্তি সস্তা জনসমর্থন।


১১
ইসলাম:
ইসলামের লক্ষ্য জুলুম-শোষণের অবসান।

গণতন্ত্র:
গণতন্ত্রের লক্ষ্য পূঁজিবাদী শোষণ প্রতিপালন।


১২
ইসলাম:
ইসলামে ন্যায়-অন্যায় চিরতরে নির্ধারিত।

গণতন্ত্র:
গণতন্ত্রে ন্যায়-নীতি সর্বদা উপেক্ষিত।

১৩
ইসলাম:
ইসলামে সকল পাপের পথ চিরতরে বন্ধ।

গণতন্ত্র:
গণতন্ত্রে সবরকম পাপের পথ উন্মুক্ত।

১৪
ইসলাম:
ইসলামে নৈতিক চরিত্র অনস্বীকার্য।

গণতন্ত্র:
গণতন্ত্রে নৈতিক ইচ্ছাগুলো অনিবার্য।

১৫
ইসলাম:
ইসলামের শিক্ষা নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ।

গণতন্ত্র:
গণতন্ত্রের শিক্ষা ব্যক্তিস্বার্থ ভোগবাদ।

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আল্লাহর আইন ও আপনাদের স্বার্থকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বারবার যারা কাফের মুশরিকদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি হয়ে যায়, তাদেরকেই ভোট দিয়ে আবার ক্ষমতার মসনদে বসানোর মত বোকামি করা কি আদৌ ঠিক হবে? মনে রাখবেন আপনাদের সমর্থনে নির্বাচিত হয়ে যদি তারা ইসলাম ও মানবতা বিরোধী কোন কাজ করে, তার দায়ভার আপনাদের উপরও বর্তাবে। একবারও কি আপনারা ভেবে দেখেছেন এই বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা কি? এই প্রচলিত নির্বাচনী পদ্ধতি ইসলাম সমর্থন করে কিনা? যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার অধিনে এই নির্বাচন সংঘটিত হয় তা সম্পূর্ণ কুফরী ও অনৈসলামিক একটি পদ্ধতি, যা মেনে নিলে ইসলামকে অস্বিকার করা হবে। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার মূল কথাই হচ্ছে “সকল ক্ষমতার মালিক জনগন”, অথচ আল্লাহ তাআলার ঘোষনা হচ্ছে :
إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلّهِ
অর্থাৎ, সকল ক্ষমতার মালিক আল্লাহ। (সূরা ইউসুফ : ৪০)
আর এটাই হচ্ছে ইসলামের মূল ভিত্তি। দেখতেই পাচ্ছেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ও আল্লাহর নির্দেশনার মধ্যে মৌলিকভাবেই পার্থক্য বিদ্যমান যা চক্ষুষ্মান সকলের নিকটই পরিষ্কার। এরপরও যদি কেউ গণতন্ত্রকে মেনে নেয় তাহলে সে ইসলামকে বাদ দিয়ে কাফের মুশরিক কর্তৃক রচিত নতুন দ্বীন গ্রহণ করলো, যা তার কাছ থেকে কবুল করা হবে না। আল্লাহ তাআলা সূরা আলে ইমরানের ৮৫ নং আয়াতে বলেনঃ
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
“যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন তালাশ করবে, তার থেকে উহা গ্রহণ করা হবেনা। এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”
আর গণতন্ত্র হচ্ছে একটি দ্বীন যার রচয়ীতা সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা কাফের গোষ্ঠী । তারা একে সারা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের শয়তানী চিন্তাভাবনার প্রসার ঘটাতে চায়। সুতরাং, যদি আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হতে না চান তাহলে এই মুহুর্ত থেকে গণতন্ত্র নামক দ্বীন এবং এর অধীন সকল ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করুন।

একটি কথা সবার মনে রাখা দরকার, অনৈসলামিক পন্থায় যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে, তারা কখনো দেশে ইসলাম কায়েম করবে না। আর আপনাদের সমর্থন ছাড়া তারা কখনো রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে পারবে না। তাই আপনারা ভোট কেন্দ্রগুলো বর্জন করুন, শয়তানের ধোঁকায় পড়ে কাফেরদেরকে শাসনক্ষমতা প্রদান থেকে বিরত থাকুন। তারা আপনাদেরকে ভোটাধিকার প্রয়োগের মত রসালো কথায় বোকা বানাতে চায়। একটি বার ভাবুনতো, যদি তারা বলতো যে, আমরা তোমাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে কুরআন বিরোধী আইন তৈরি করবো, দেশের স্বার্থ সম্মান কাফেরদের নিকট বিকিয়ে দেবো, মাদ্রাসার ইসলামী শিক্ষাকে বিকৃত করে বস্তুবাদী শিক্ষায় পরিণত করবো, তাহলে কি আপনারা তাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতেন? কখনই করতেন না। কিন্তু বাস্তবে তারা তাই করছে, তবে সাধারণ জনগণ তা বুঝতে পারেনা। আর বুঝবেইবা কেমন করে, রাজনৈতিক নেতারা তো এইগুলোকে তাদের রাজনৈতিক বক্তব্যের মার-প্যাচে ভালো কাজ বলে চালিয়ে দেয়।

তাই আপনাদের আজ সময় এসেছে তাদের ভন্ডামীপূর্ণ বক্তব্যের সমুচিত জবাব দেওয়ার, তদেরকে টেনে হিঁচড়ে আল্লাহ তাআলার আসন থেকে নামিয়ে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করার। তাদেরকে বুঝিয়ে দিন প্রায় শতভাগ মুসলিমের দেশে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বিধান চলতে পারেনা। আজ দেশের হক্বপন্থী উলামায়ে কিরামের উপর নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পড়েছে জনসাধারণের কাছে এই নির্বাচনী পদ্ধতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরা। العلماء ورثة الأنبياء এই হাদিসের মূলতত্ত্ব আপনাদেরকে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। যে কাজটি নবী (সাঃ) সারা জীবন করে গেছেন, আল্লাহর দরবারে কঠিন জবাবদিহি থেকে বাঁচার জন্য সে কাজটি আপনাদেরকেও করতে হবে। নাবী-রসূল (আ.) গণকে আল্লাহ তাআলা পাঠিয়েছিলেন মানুষকে ত্বগুত বর্জনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য, তাই আপনারা যদি নাবীদের উত্তরসূরী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে চান তাহলে জনগণকে ত্বগুতী ব্যবস্থাপনার কবল থেকে মুক্ত করার সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এটা আপনাদের করুণা নয়, বরং আপনাদের প্রতি সাধারণ জনগণের অধিকার।
স্বল্পসংখ্যক মুজাহিদের হাড় ক্ষয় করা পরিশ্রম দ্বীন কায়েমের জন্য যথেষ্ট নয়, এই পথে ইলমের যোগান আপনাদেরকেই দিতে হবে। আপনারাই হচ্ছেন উম্মার সেই এলিট শ্রেণী, যাদের অনুপস্থিতি কিয়ামাতের লক্ষণ। কারন আল্লাহ তাআলা কিয়ামাতের আগে উলামাগণকে উঠিয়ে নিবেন। তাই আপনাদের প্রতি উদাত্ত আহবান, আসুন দ্বীন কায়েমের এই কাফেলায় শিশা ঢালা প্রাচিরের ন্যায় একত্রে এগিয়ে যাই। জনগণকে ইসলামের সঠিক দাওয়াহ দিয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজকে সহজ করে তুলি।
ওহে আলেম সমাজ!
হে সম্মানিত আলেমগণ! আল্লাহ তা‘আলা আপনাদেরকে তার দ্বীনের জ্ঞান দান করেছেন। আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী আপনারা দ্বীনকে মুসলিম জাতির সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরুন। আল্লাহকে ভয় করুন। সত্য গোপন করা থেকে বিরত থাকুন, নচেত আল্লাহ তা‘আলা শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর।
গণতন্ত্রের ধোকা, নোংরামি উম্মার কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরুন। এর ক্ষতি ও ভয়াবহতা সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করুন।

পরিশেষে গনতন্ত্রের ধ্বজাদারী রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহর শিখানো ভাষায় বলছি,
وَإِنْ أَدْرِي لَعَلَّهُ فِتْنَةٌ لَّكُمْ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ حِينٍ
অর্থাৎ, “এই ক্ষমতা তোমাদের জন্য পরীক্ষাসরূপ এবং কিছু সময়ের জন্য ভোগের বস্তু”(সূরা আম্বিয়া : ১১১)
তোমাদের দিন শেষ হয়ে আসছে, অনৈসলামিক পন্থায় আর কিছুকাল ক্ষমতা ভোগ করে নাও। যেদিন মুসলিমরা তাদের ভুলে যাওয়া ইতিহাস পুনরায় মনে করবে, তাদের অন্তরে আবু বকরের নিষ্ঠা, উমরের ন্যায়বিচার, উসমানের মহানূভবতা ও আলীর বদান্যতার স্মৃতি ভেসে উঠবে সেদিন তোমাদের মত দুর্নীতিবাজ, রক্তচোষা হায়েনারা আল্লাহর যমিনে পালিয়ে বাঁচার জায়গা পাবেনা ইনশাআল্লাহ। সেই কঠিন পরিণতি থেকে বাঁচতে চাইলে এখনি ইসলামের মূল ধারায় ফিরে আসো, তাহলে উমর (রাঃ)’র মত আরো বেশি সম্মানের অধিকারী হবে, অন্যথায় আবু জাহেলের মত লাঞ্চনাকর মৃত্যু আস্বাদন করবে।


ওহে মুসলিম উম্মাহ!
আজ মুসলিম সমাজকে ধ্বংসা করার জন্য গণতন্ত্র নামের শিরক কুফরের যে ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের সকলের উচিত এই উম্মাহকে শিরক ও কুফর থেকে মুক্ত করা। সত্যিকার অর্থে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয় করার প্রচেষ্টায় নিজেরদেরকে নিয়োজিত করা।
و صلى الله على خير خلقه محمد و على آله و صحبه وسلم تسليما كثيرا