JustPaste.it

কমান্ডার নাসরুল্লাহ মনসূরঃ

গজনীর দেশ থেকে সোমনাথের পথে

========================================================================

 

        হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী আল-আলমীর পাকিস্তানের মুজাহিদদের দ্বিতীয় টার্গেট শ্রীনগরে বুধরগীর (কাউডারাহ) ব্যাংকারের উপর আক্রমণ করা। এই ব্যাংকার জাতীয় সড়কের উপর দু’টি গ্রামের মধ্যবর্তী এলাকার খোরা ময়দানে অবস্থিত। আমাদের নিয়ম অনুযায়ী  এমন টার্গেট নির্ধারন করা হয়েছে যাতে সাধারণ লোকদের কোন ক্ষয়ক্ষতি না হয়। হামলার জন্য এগারোজন মুজাহিদ নির্বাচন করা হয়। মুজাহিদ মুহাম্মাদ আমেরকে কমান্ডারের দায়িত্ব অর্পন করা হয়।

        ব্যাংকারের কাছাকাছি পৌঁছে মুজাহিদরা একটি টিলার  আড়ালে অবস্থান নিয়ে ব্যাংকারের সৈন্য গতিবিধির উপর করা নজর রাখতে থাকে।। প্রচন্ড রোদে সৈন্যরা ব্যাংকারের মধ্যে বসে ছিল। এক মাত্র পাহারাদার রাস্তার অপর  পাশে রোদে বিছিয়ে দেয়া কম্বলগুলো উল্টিয়ে দিচ্ছিলো। নয়জন মুজাহিদকে টিলার উপর রক্ষণভাগে অবস্থানের জন্য দাড় করিয়ে রেখে মাত্র দু’জন মুজাহিদ  একটি মটর সাইকেলে করে চড়ে আক্রমণ করার জন্য ব্যাংকারের দিকে রওয়ানা হয়। রক্ষী তখন কম্বলগুলো তুলে  রাস্তা পার হচ্ছিল। সাইকেল চালক দ্রুত চালিয়ে সাইকেলটা তার গায়ের উপর উঠিয়ে দিল।

 

        রক্ষী তাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। সাইকেল চালক সাইকেল  রাস্তার পাশে দাড় করিয়ে  তাকে হাত ধরে তুলে  মাফ চাইতে থেকে। অপর মুজাহিদ এর মধ্যে ব্যাংকারে প্রবেশ করে গুলি চালিয়ে  ব্যাংকারে অবস্থানরত পাঁচজন সৈন্যকে গুলিবিদ্ধ করে। ব্যাংকার থেকে বের হয়ে তার মধ্যে গেনেড  নিক্ষেপ করে। এতে গুলি বিদ্ধ  সৈন্যরা মারা যায় ও ব্যাংকারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। এদিকে সাইকেলের নিচে চাপা খাওয়া আহত পাহাড়াদার মুকাবিলা করার জন্য দাড়ালে তাকেও গুলি করে চিরতরে রাস্তার উপর শুইয়ে দেয়া  হয়।  ছয়জন সৈন্য কে হত্যা করার পর  আবার মোটর সাইকেলে চড়ে মুজাহিদ দু’জন পিছনের সাথীদের সাথে মিলিত হয় এবং কোন বাধা বিপত্তি ছাড়াই তারা মারকাজে ফিরে আসে।

  

        এই আক্রমণ মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে  এমন সুশৃংখলার সাথে  সুসম্পন্ন হয়েছে যে, দুশমনরা একটি গুলি ছোড়ারও অবকাশ পায় নি। এই আক্রমণের ফলে স্থানীয় জন সাধারণকে কোন ক্ষয়ক্ষতিরও স্বীকার হতে হয় নি ।  মারকাজে ফিরে মুজাহিদরা আল্লাহ্র দরবারে শুকুর আদায় করে।  তাদের এই আক্রমণে শুধু মাত্র দুশমনরাই পরাজিত হয়নি, স্থানীয় জনসাধারণও অবাক হয়েছে। প্রথমবারের মত সাধারণ মানুষ দেখলো যে  মুজাহিদরা এমন একটি সাফল্য জনক হামলা পরিচালনা করল যাতে তাদের নিজেদেরও কোন ক্ষতি হয় নি  এবং স্থানীয় কোন লোকদেরও কোন বিপদের সম্মুখিন হতে হলো না।

 

        একদিন কমান্ডার  সাহেব আমাকে কোন এক গ্রামে  পাঠালেন। সেখানের জনসাধারণ মাদের অত্যবত মহাব্বত করতো এবং নানা ভাবে আমাদের সহযোগিতায় হাত প্রসারিত রাখতো। কমান্ডার সাহেব বললেন, ওখানে যেয়ে জিহাদের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করো, যাতে লোকদের মধ্যে জিহাদের উদ্দীপনা আরও বৃদ্ধি পায়। আমি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তান থেকে একদল মুজাহিদ কাশ্মিরে প্রবেশ করে। পথে এরা দুই  ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এক গ্রুপ আগে পৌঁছে যার অন্য গ্রুপ পিছনে থেকে যায়। পিছনের গ্রুপকে ইন্ডিয়ান সৈন্যরা ঘিরে ফেলে। তাদের নির্মূল করার জন্য সৈন্যরা সর্ব শক্তি নিয়োগ করে । গ্রেনড, ক্লাসিনকভ, রকেট লাঞ্চারের বেশুমার গোলা নিক্কেপ করে তাদের ওপর। কিন্তু এরা বীরত্বের সাথে লড়তে থাকে। ইন্ডিয়ান সৈন্যদের মর্টার তোপের হাজারো গলা বর্ষণের মুখেও এরা যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত হলো না। অবশেষে হেলিকপ্টার নিয়ে এসে তাদের ওপর মেশিন গান দ্বারা বৃষ্টির মত গুলী বর্ষণ করা হয়। এই মুজাহিদরা দুই দিন  দুই রাত অবিরাম লড়াই করে সকলে শাহাদাত বরণ করে। তাদের কেউ-ই জীবন বাঁচাবার জন্য আত্মসমর্পণ করলো না। একজন মুজাহিদ পাথরের নিচে লুকিয়ে ছিল।  ইন্ডিয়ান সৈন্যরা পাথরের উপর উঠে তার উপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। আশ্চর্যের ব্যপার হল যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সেখানে ঐ মুজাহিদের ফটো পাওয়া গেছে  কিন্তু তার লাশ পাওয়া গেলো না।

 

        যদিও এরা সকলে নিহত হয়েছে কিন্তু দুই দিন পর্যন্ত এদের বীরত্বপূর্ণ লড়াই দেখে ভারতীয় সৈন্যরা অবাক হয়েছে । ভারতীয় সৈন্যরা পুলিশকে ওদের লাশ উঠিয়ে নেয়ার জন্য খবর পাঠায়। ভারতীয় সৈন্যরা কোন মুজাহিদকে শহীদ করাতে পারলে তার লাশ পুলিশের মারফত নিজ এলাকায় পৌঁছিয়ে দেয়, যাতে করে স্থানীয় জনসাধারণ লাশ দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে  নিজ নিজ সন্তানদের জিহাদে যাওয়া থেকে বিরত রাখে।

 

        মুজাহিদদের এই গ্রুপের বাহাদুরীর সাথে লড়াইয়ের খবর সৈন্যবাহিনী ও পুলিশদের মধ্যে ব্যাপক আশঙ্কা ও ভীতির সঞ্চার করে। সর্বত্রই মুজাহিদের সাহস ও হিম্মতের কথা আলোচিত হতে থাকে। সফরের অবস্থায় ইতিপূর্বে কখনও কোন গ্রুপের এত সফল আক্রমণের ইতিহাস কাশ্মীরে এটাই মনে হয় প্রথম। সব চেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো , তারা সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় সেনাদের বেস্টনির মধ্যে থেকেও কেউ আত্মসমর্পণ করল না। পুলিশ তখন তাদের লাশ নিয়ে উপত্যকায় আসে যখন সৈন্য ও পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য তাদের লাশ দেখার জন্য একত্রিত হয়। আমিও খবর পেয়ে লাশ দেখার জন্য ওখানে যাই। কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও তাদের লাশগুলি তরতাজা ছিল। একজন নওজোয়ান যার মাথায় লম্বা লম্বা চুল ছিল। দেখতে অনেকটা আফগানী বলে মনে হচ্ছিলো।

 

        তার মাথায় দুটি গুলি লেগেছিলো। তার লাশ থেকে বের হওয়া রক্তের খুশবু সমগ্র এলাকায় সুঘ্রাণ ছড়িয়ে দিয়েছিল। এখান লোকজন নানাভাবে তাদের সাহস ও বাহাদুরীর প্রশংসায় মেতে ওঠেছিল। পাশে দাঁড়িয়ে লাশ দেখার পর আমার মধ্যে বিরাট এক পরিবর্তন লক্ষ্য করি। আমি তখনই বিশ্বাস করে নেই, একে যুদ্ধ বলা যায় না।  বরং একেই বলে আল্লাহ্‌র রাস্তায় পরিচালিত "জিহাদ"। এতো কেবল কাশ্মীরের আযাদীর আন্দোলন নয় এতো ইসলামের বিজয়ের আন্দোলন। অতএব আমি স্থির করেছি, যারা এ গ্রুপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পূর্বেইঁ যথাস্থানে পৌঁছে গেছে তাদের তালাশ করে বের করবই এবং তাদের সাথে মিলিত হয়ে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদে শরীক হব। আপনি আফগান মুজাহদি, যদি আপনি এদের কোন সন্ধান আমাকে দিতে পারেন তবে আপনার মঙ্গলের জন্য চিরদিন দুয়া করব।

 

        এই সময় পুলিশ অফিসার তার পূর্ণ পরিচয় আমাকে দিল। তার বাড়ীর ঠিকানা আমাকে জানলো। যে এলাকায় তার বাড়ী ঐ এলাকা সম্পর্কে আমার পরিপূর্ণ ধারণা দিল। সে কোন কথা গোপন না রেখে সব কিছুই আমাকে বল্লো। সত্যিই সে ওই মুজাহিদদের তালাশ করছিলো। আমি তকে বললাম আমি সেই গ্রুপেরই এক সাধারণ মুজাহিদ। আমার কথা শুনতেই সে বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকায় এবং সাড়িয়ে আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করে। এর পর আমার প্রতিটি কথায়ই সে অবাক হয়ে শুনতে থাকে। আমি তাকে বললাম, সবাই শহীদ হয় নি, সাতজন শহীদ হয়েছে ও বাকী আটজন বেষ্টনি থেকে জীবিত বের হয়ে এসেছে। সে বললো, " লাশ তো আটটা পাওয়া গেছে। এবার বুঝতে পারলাম, আমাদের যে গাইডকে ওরা ধোকা দিয়ে গ্রেফতার করেছিলো, তাকেও ওরা শহীদ করে দিয়েছে। আমি বললাম আপনি যে লম্বা চুল ওয়ালা মুজাহিদের কথা বলেছেন, তার নাম 'মাঝারুল ইসলাম'।

 

         সে বললো, ভারতীয় সৈন্যদের পরিপূর্ণ বিশ্বাস, সেখান থেকে কেউ জীবিত ফিরে যেতে পারেনি। তারা আদেরকে তিন লাইনে বেষ্টন করে রেখেছিল। তিন লাইন অতিক্রম করে বের কারো পক্ষে বের হয়ে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। তবে তাদেরকে অবাক হতে হয়েছে এই দেখে যে, মুজাহিদরা সবার পূর্বে তাদের লাশের হেফাযতের জন্য পাশে মাইন বিছিয়ে রেখেছিলো। যার বিস্ফোরণে দুইজন সৈন্য নিহত হয়েছে। তারা আরও আশ্চার্যান্বিত হয়েছে, এক সৈন্য পাথরের নিচে এক মুজাহিদকে গ্রেনেড মেরে হত্যা করেছে। কিন্তু পরে সেখানে তার ফটো সহ কার্ড পাওয়া গেছে কিন্তু তার লাশ ও অস্ত্র পাওয়া যায়নি। তার ফটো নিয়ে ইন্ডীয়ার সৈন্যরা শিকারি কুকুর দিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে কিন্তু কোথাও তার লাশ পাওয়া গেলো না। জানি না তাকে জমীনে খেয়ে ফেলেছে না আসমানে তুলে নেয়া হয়েছে। আমি হাসতে হাসতে বললাম, না তাকে জমীনে খেয়ে ফেলেনি এবং আকাশেও তুলে নেওয়া হয়নি।  সে এখন আপনার সামনেই বসে আছে। আমি তাকে যখম ও পা জ্বলে যাওয়ার দাগ দেখালাম। যার ওপর তখনও পট্টি বাধা ছিল। সে আবার আমাকে বেকে চেপে ধরে বার বার চুমু খেতে থাকে এবং শিশুদের মত জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করে। সে বললো, ার আমি পুলিশের ডিউটিতে যাব না। আপনাদেরই তালাশে ছিলাম। আপনাদের পেয়ে গেছি। এখন আপনাদের সাথে মিলে জিহাদ করব।

 

        আমি তাকে বললাম, "আপনি চাকুরী ছাড়বেন না, চাকুরীতে থেকেও আপনি অনেক সহযোগিতা করতে পারেন।" আমার কথা তার বুঝে আসলো। সে ঠিক করলো, পুলিশের মধ্যে থেকে শত ঝুকির মধ্যেও সে মুজাহিদদের সহযোগীতা করবে। ঐ পুলিশ অফিসার বললেন, ঐ যুদ্ধে ঘটনাস্থলে ২৬জন সৈন্য নিহত হয়েছে এবং ১০ জন মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছে।

 

        তার সাথে ওয়াদা করলাম, শীঘ্রই এমন কজন আজীম কমান্ডারের সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দিব যিনি বাকী সাথীদের ভারতীয় সৈন্যদের পরাজিত করেছে। এই কথা শুনেই সে কমান্ডারের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। (সমাপ্ত)

 

*****