JustPaste.it

আমার দেশের চালচিত্র-

 

আলিম সমাজের দায়িত্ব হীনতা ও উদাসীনতার কারণে কি আমরাও বাগদাদ,স্পেন ও দিল্লি সালতানাতের পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছি?

মুহাম্মদ ফারুক হোসাইন খান

===========================================================

 

        আলিমগণ যখন দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তখন জাতি ঐক্যবদ্ধ সুশৃঙ্খল এবং ক্রমোন্নতির দিকে এগিয়ে যায়; সে জাতি শৌৰ্য, সম্মান ও শিক্ষা-দীক্ষায় সভ্যতার সর্বোচ্চ শিখরে আরােহন করে। পক্ষান্তরে দেশের আলিমগণ যখন নির্জীব হয়ে পড়ে, দায়িত্ব সম্পর্কে গাফেল হয়ে থাকে, সমাজ রাষ্ট্র সম্পর্কে অনাগ্রহীভূমিকা পালন করে সে জাতিকে অধঃপতন, বিশৃঙ্খলা, অনৈক্যের রাহু গ্রাসে আক্রান্ত করে ফেলে। নীতিহীনতা, ব্যভিচার, দুনীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচার, অশ্লীলতার সয়লাবে সে জাতি ধ্বংসের পথে অগ্রসর হয়। এক সময় হয়ত সে জাতি অন্য কোন জাতির তাবেদারে পরিণত হয়। এটাই ইতিহাস, এটাই বাস্তব সত্য এবং মুসলিম জাতি এমন পরিণতির শিকার হয়েছে বহুবার। তাই রাসূল (সাঃ) আমাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “আমার উম্মতের মধ্যে দু'টি শ্রেণী এমন হবে যে, তারা ঠিক হলে গােটা উম্মত ঠিক হয়ে যাবে, আর তারা বিপর্যস্ত হলে গােটা উম্মত বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।” জিজ্ঞাসা করা হলাে, তারা কারা, হে রাসূল! বললেন, তারা ফিকাহবিদ ও প্রশাসকবৃন্দ।

 

        ইসলামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের পাতা উল্টালে এর সত্যতা প্রত্যেক ছত্রে ছত্রে প্রমাণিত হবে! রাসুল (সাঃ)-এর ওফাতের পর তার উত্তর সূরীরা যতদিন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন ততদিন ঐতিহাসিকরা রচনা করে গেছেন ইসলামের সােনালী ইতিহাস। কিন্তু যখনই নায়েবে রাসূলগণ তাদের দায়িত্ব পালনে শৈথিল্য প্রদর্শন করলেন ঠিক তখনই মুখ থুবরে ও পড়ল ইসলামের তথা মুসলিম জাতির অগ্রগতির ধারা। বিজাতীয়রা ধ্বংসের সয়লাব বইয়ে দিল এককালের বিশ্বের অপরাজেয় মুসলিম সাম্রাজ্যের ওপর দিয়ে—বিশ্বের ইতিহাসে নারকীয় ধ্বংস তাণ্ডব মােঙ্গলদের বাগদাদ ধ্বংস দিয়েই মুসলমানদের এই অধপতনের ধারার সূচনা। মােঙ্গল অধিপতি হালাকু খান তখন অগণিত সৈন্য-সামান্ত নিয়ে আব্বাসীয় খেলাফতের অস্তিত্ব মুছে ফেলতে উদ্যত, বাগদাদের খলিফা, আমির-ওমরাহ তখন ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও সীমাহীন বিলাসিতায় মগ্ন।

 

        আলিম সমাজ তখন শিয়া, সুন্নী, খারেজী, হানাফী, হাম্বালী, মুতাজিলা এবং সুফীবাদ সম্পর্কিত বিতর্ক সৃষ্টি করে সমাজকে কয়েক ভাগ করে জাতিকে অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলার গর্তে নিক্ষেপ করতে লিপ্ত। তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমস্যাকে সমাধান করার নামে পূর্ব ঘােষণার মাধমে বিতর্ক সভার আয়ােজন করতাে। উভয়দলের লােকজন এ সভায় উপস্থিতি হয়ে উভয় পক্ষের আলিমগণের বিতর্ক উপভােগ করতে কোন কোন বিতর্ক মাসের পর মাস চলতাে। বিতর্কের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না হলে অবশেষে ঘটনা হাতাহাতি, জামা-কাপড় ছেড়াছড়ি, তলােয়ার-খঞ্জর ব্যবহারের মাধ্যমে রক্তাক্ত লাশের স্তুপ পর্যন্ত গিয়ে শেষ হতাে। নগরীতে আলেমগণ যতই এ আত্মঘাতি প্রবণতা ছড়াতে থাকলাে, জনগণের মধ্যে ততােই অনৈক্য ও পারস্পরিক শত্রুতার প্রসার ঘটতে লাগলাে। জাতির এমনি দুর্বলতার সুযােগে বাগদাদের ওপর আল্লাহর গজব স্বরূপ নাযিল হলাে মােঙ্গল বাহিনী। মুসলমানদের রক্তের সাগরে তারা ধুয়ে মুছে একাকার করে দিলে শত শত বছর ধরে গড়ে ওঠা মুসলিম সভ্যতার কীর্তি। অধঃপতনের এই পথ ধরে মুসলিম স্পেনের শাসকগণ যখন বিলাসিতায় মগ্ন, এক মুসলিম শাসক যখন আর এক প্রতিদ্বন্দ্বীকে দমন করতে খৃষ্টান শাসকের সাহায্য নিত এবং রাজস্বের বিশাল অংশ এ খাতে ব্যয় করত, আলিমগণ যখন সংকীর্ণতা স্বার্থপরতা ও বৈষয়িক উন্নতি লাভের আশায় মুসলমানদের মধ্যে আরব, বারবার ও স্পেনীশ মুসলমান এই জাতীয়তার বিভক্তির দোল তুলে দিয়ে এবং নিজেদের মধ্যে শদকে উস্কে দেয়ার জন্য আরও জোরালাে প্রচারণায় নামলাে। বাগদাদের ন্যায় তখন সেখানেও গজব হিসেবে নাজিল হল খৃস্টান ফার্ডিন্যান্ড। সে অত্যন্ত নির্মম ভাবে পুরাে স্পেন থেকে ৮০০ বছরের সমৃদ্ধ মুসলিম জাতিকে চিরতরে মিটিয়ে দেয়। ।

 

        আলেমগণের দায়িত্বহীনতা এবং ব্যক্তিস্বার্থ- দ্বন্দ্বের কারণে উপমহাদেশের প্রতাপশালী সম্রাট, একদা ইসলামের একনিষ্ট অনুসারী আকবর পরিণত হয় চরম ইসলাম বিদ্বেষী ব্যক্তিতে। ইসলামী আকিদা বিরােধী এবং পৌত্তলিকদের সংমিশ্রণের মাধ্যমে নতুন ধর্ম দ্বীন-ই-ইলাহীর উদ্ভাবন ও এর ব্যাপক প্রসারে রাজ শক্তি ব্যবহার ই করেন। হালালকে হারাম, হারামকে হালাল ঘােষণা, দাড়ি রাখা, খাতনা করা, মৃতকে ই দাফন করা, গরু জবেহ করা, মসজিদে ব নামায পড়া প্রভৃতি নিষিদ্ধ ঘােষণা করে র উপমহাদেশ থেকে ইসলামের অস্তিত্ব মুছে ফেলার উপক্রম করেন। এখানেই শেষ নয়। ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে এমন হ হাজারাে মর্মান্তিক কাহিনী। এর পাশাপাশি জাতির উন্নতির জন্য আলেম সমাজের করা ফরজ, তা শিক্ষা ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। শিক্ষার্থীদের ধর্মনিরপেক্ষ তথা ধর্মহীন কিসিমের নাগরিক হিসেবে গড়ে তােলার জন্য কুরআন, হাদীস, ফিকাহ সহ ইসলাম সম্পর্কিত সকল প্রকার আলােচনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চৌহদ্দির বাইরে রাখা হয়েছে। অর্থনৈতিক সেক্টরে চলছে সুদ নামক 'আজদাহা’র দাপট।

 

        সকল প্রকার ব্যবসায়-বাণিজ্য, আমদানী-রপ্তানী, শিল্প ঋণদান, অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি মুদ ভিত্তিক ব্যাংকের স্বার্থের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে। সমাজের নেতৃত্বে স্বার্থপর ও নীতিহীন দাম্ভিক শ্রেণীর হাতে চলে যাওয়ায় সমাজে মহা সমারােহে চলছে সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষণ মাদকসেবন, অপহরণ, যৌতুক, চাঁদাবাজী, পতিতাবৃত্তি, মাস্তানী নামক সকল প্রকার জঘন্য, সামাজিক অপরাধ। প্রশাসন যন্ত্রের এখন একমাত্র নীতিহচ্ছে ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি। এগুলাে ছাড়া প্রশাসন এখন চলে না। একটি জাতির চূড়ান্ত ধ্বংসের পথে ধাবিত হওয়ার জন্য দায়ী যে দু’টি উপসর্গ, বিলাসিতা ও যৌন উশৃঙ্খলতা ।আমাদের সমাজে তাও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশে নতুন নতুন বিলাসী সামগ্রী আমদানী হচ্ছে প্রগতি ও বিজ্ঞানের নামে। আধুনিকতার নামে নারী সমাজ সমস্ত নৈতিকতা, লাজ-লজ্জাকে বিসর্জন দিয়ে নিজেকে সুলভ যৌন সামগ্রীতে পরিণত করে যুব সমাজের চরিত্রকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অশ্লীল সিনেমা, সংগীত, নাটক সংস্কৃতির নামে অহরহ ইসলামী আদর্শের প্রতি আঘাত করা হচ্ছে। মুরতাদ ও ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক গােষ্ঠী মুক্তচিন্তার নামে ধর্ম-দর্শনকে উপহাসের খােরাকে পরিনত করে চলছে। আমাদের দেশের এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযােগ নিচ্ছে। মুসলমানের হাজার বছরের পরীক্ষীত শত্রু প্রতিবেশী উগ্র ব্রাহ্মণরা। তারা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রেই আমাদেরকে তাদের তাবেদার বানিয়ে রাখার জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের রাষ্ট্রকাঠামাের পররাষ্ট্রনীতি, শাসকের সাথে জনসাধারণের সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষাও এ মজবুত নয় যে, আমাদের বিরুদ্ধে কোন বৈদেশিক হস্তক্ষেপ হলে আমরা স্বত্ব রক্ষার জন্য জোরালাে কোন পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হব।

 

        রাসূল (সাঃ)-এর বাণীঃ “প্রশাসকবৃন্দ যদি ঠিক হয়ে যায় তবে জাতি ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু আমাদের প্রশাসকবৃন্দের কাছে জাতির উন্নতি এবং স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাড়ানাের পক্ষে, কোন পদক্ষেপ গ্রহণের আশা করা দুরাশা মাত্র। কারণ, এর জন্য চাই বুকভরা সাহস, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় না করার নির্ভীকতা, আল্লাহর প্রতি অটল ঈমান এবং তার সাহায্য লাভের প্রতি দৃঢ় আস্থা। প্রশাসকবৃন্দকে এজন্য হতে হবে খাঁটি মুসলমান এবং সকল ক্ষেত্রে তাঁর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করা, তাঁর আদেশ নিষেধ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করা। কিন্তু আমাদের প্রশাসনে যারা অধিষ্ঠিত তারা রাষ্ট্র চালাচ্ছেন ইসলাম বিরােধী বৃটিশ আইন অনুযায়ী। রাষ্ট্রের সকল আইন কানুন ধর্মনিরপেক্ষ তথা ইসলাম বহির্ভূত। ইসলাম বা মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা এবং ইসলামের আদর্শের ময়দা সমুন্নত রাখারজন্য তাদের নেই কোন মাথা ব্যথা, যদিও তারা মুসলমানের সন্তান। এ অবস্থায়, জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে, আমাদের এ পতনোন্মুখ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া এবং জাতিকে ইনসাফ ও সত্যের পথে প্রতিষ্ঠা করার একমাত্র আশা-ভরসা রাসূল (সাঃ)- এর বর্ণিত এবং তারই উত্তরসূরী ফকিহ তথা অভিজ্ঞ আলিমগণ। একমাত্র এই আলিমগণই যদি সাহসী এবং ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করেন তবেই আমরা সকল বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে পারি।

 

        কিন্তু জাতির ঐতিহ্য ও স্বাধীনতা রক্ষার সর্বশেষ এই মজবুত দুর্গেও স্থবিরতা দানা বৈধেছে। অনৈক্য-দ্বিধা-দ্বন্দ্ব হতাশা সন্দেহ। প্রবণতা কাল ব্যধি আকারে দেখা দিচ্ছে। মূলতঃ মানুষ যখন জাতি ও সমাজের প্রতি তার দায়িত্ব কর্তব্য ভুলে যায় বা তা’ পালনের জন্য যথার্থ অনুকুল পরিবেশ না পায় তখন হতাশ হয়ে নিজেরাই অন্তর্দ্বন্দ্ব, অনৈক্য, হিংসা-বিদ্বেষ, অযথা-অকারণে তর্ক-বিতর্ক পরিশেষে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। সমাজের উচু তবকার মানুষের মধ্যে এর প্রবণতা হয় আরও ভয়ঙ্কর। কেননা তারা তাদের শিক্ষা, জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রতিভাকে সঠিক ভাবে কাজে লাগিয়ে বিকাশ ঘটাতে পারে । ফলে অনিবার্য কারণে তারা এ সমস্ত আত্মঘাতি তৎপরতায় লিপ্ত হয়ে মেধা ও জ্ঞান-বুদ্ধির অপচয় করে। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র যতই অস্থিরতা, স্থবিরতার দিকে এগুচ্ছে ততই আমাদের সমাজে এ প্রবণতাও ভয়ঙ্কর রূপে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতির আজ একমাত্র চাহিদা, এসব বিজ্ঞ আলিমগণের নিকট একমাত্র চাওয়া, রাষ্ট্র ও প্রশাসন যন্ত্রকে ইসলামী করণ, অর্থনীতিকে সুদের অভিশাপ থেকে মুক্তি, বিচার ব্যবস্থাকে গতিশীল ও ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠা করা, সমাজ থেকে সকল দুনীতি ও অপরাধের উচ্ছেদ সাধন, বিদেশী শকুনদের লােলুপ দৃষ্টির কবল থেকে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার ব্যবস্থা করা।

 

        অস্বীকার করার কোন কারণ নেই, এর জন্য দেশে তৎপরতা চলছে, এ সমাজে এখনাে মর্দে মুজাহিদের অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু একই সাথে আশঙ্কাও প্রকাশ করতে হয় যে, বাগদাদ খেলাফত ও সুসলিম স্পেন ধ্বংসের জন্য দায়ী যে অদৃশ্য ব্যাধি তা আমাদের সমাজে ক্ষুদ্র আকারে হলেও দেখা দিয়েছে। এ এমন এক ব্যাধি যা শুরুতে সমূলে ধ্বংস না করতে পারলে মহামারির আকারে এক সময় সমাজকে গ্রাস করে ফেলে। পরিণতিতে সমাজ ও রাষ্ট্রের পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের সমাজের এ ব্যাধি হল তর্ক-বিতর্ক এবং পরিণতিতে মুসলমানদের মধ্যে শক্রতা ও পক্ষ বিপক্ষ সৃষ্টি। মিলাদ জায়িজ কি না জায়িজ, মােনাজাত সুন্নাত না বিদায়াত আর দেওবন্দী, মাদানী, থানভী ইত্যাদি নগণ্য বিষয় সংক্রান্ত ব্যাপারে বিতর্ক সৃষ্টি পরিণতিতে ঝগড়া, ফিতনা -ফাসাদ ও বিভক্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এসমস্ত কারণে দলাদলির সৃষ্টি হয়ে একদল মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ করে নিজেদের প্রভাবিত এলাকায় নয়া মসজিদ কায়েম করে নামাজ আদায় করছে এবং এই বিরােধের জের উভয়পক্ষের কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। অথচ দেখা যায়, যে বিষয়টি নিয়ে তারা দ্বন্দ্বে লিপ্ত তা’ হয়ত মুস্তাহাব অথবা ইসলাম সম্মতও নয়। কিন্তু এ নিয়ে তারা ঝগড়া-ফাসাদ সৃষ্টি করে শরিয়তের হারামের সীমাকেও লংঘন করে চলছে।

 

        অথচ আল্লাহ বলেছেন, “তােমরা সকলে মিলিত হয়ে আল্লার রজ্জুকে শক্ত করে আকড়ে ধর এবং তােমরা পরস্পর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হবে না1” [আয়াতাংশ ১০৩,আলে ইমরান] আব্বাসীয় খেলাফতের পতনযুগেও শাসকবর্গের আত্মরক্ষার জন্য তিনলক্ষ সেনা বাগদাদে মােতায়েন থাকত যা ছিল ইসলামের উন্নতি যুগের চেয়েও বৃহত্তর এবং সর্বোচ্চ সামরিক শক্তি। কিন্তু এ শক্তিকে ইসলাম প্রচারের কাজে লাগিয়ে শাসকবৃন্দ, আমির ওমরাহ, প্রভাবশালী আমলাগণ নিজেরা স্বতন্ত্রভাবে সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণাগার, কাব্য-কবিতা, সংগীত চর্চা, বৃহৎ বৃহৎ অট্টালিকা নির্মাণে মগ্ন হয়ে পড়ে। এই অসমন্বিত ও বিচ্ছিন্ন তৎপরতার ফলে কোন সংগঠন দ্বীনি এলেম চর্চার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও হাজার হাজার সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পরস্পরে একটা অঘােষিত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সৃষ্টি হয়। কোন সংগঠন বা দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনপ্রিয় বা উন্নতি লাভ করলে ঈর্ষান্বিত হয়ে অন্য কোন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান জাতির বৃহৎ স্বার্থ চিন্তা করে তাকে সহযােগিতা করার পরিবর্তে তার বিরুদ্ধে প্রচারণায় মেতে ওঠে। এর অনিবার্য পরিণতিতে উভয় সংগঠন ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিবর্তে শত্রুতা ও ঈর্ষাপরায়ন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এভাবে বাগদাদবাসী নিজেরাই শতদলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের ঐক্যকে বিনষ্ট করে। আমাদের দেশেও দ্বীনি খেদমতের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত কিছু কিছু সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান • নিজেদের মধ্যে প্রতিযােগিতাপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিবর্তে তিক্ত ও শত্রু ভাবাপন্ন সম্পর্কের সৃষ্টি করছে। কোন কোন সংগঠনের সমর্থক বিপুল বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মুসলমান দেশের অন্যান্য মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সমাজের মানুষ নানা মত, নানা পথ ও আদর্শের সমর্থক হওয়ায় প্রতিযােগিতা ও শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্কও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতির ঐক্যের সম্ভাবনাও নস্যাত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জাতির অধঃপতন রােধ ও উন্নতি সাধন করতে হলে ঐক্য প্রতিষ্ঠা অপরিহায্য শর্ত : এ শর্ত পূরণ না করে জাতির উন্নতি বিধান অসম্ভব। তাই জাতির ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথে যে সমস্ত অন্তরায় এবং কাল-ব্যাধি সমাজকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছে তা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার পূর্বে এক্ষুণি একে ধ্বংস করতে হবে। এ দায়িত্ব জাতির হিতাকাঙ্খী ও উন্নতিকামী স্বদেশ প্রেমিক সকল সচেতন নাগরিকের। এদেশে কি এমন সাহসী ও সচেতন নাগিরকের অভাব আছে?

 

*****