JustPaste.it

নবীন মুজাহিদদের পাতা

 

গল্পনয়

সৈনিকের নামাজ

নােমান আহমাদ হামিদী

========================================================================

 

        হিন্দুস্তানের মােগল বাদশাহদের মধ্যে আওরঙ্গজেব আলমগীর একজন শক্তিশালী বাদশাহ ছিলেন। তিনি পঞ্চাশ বছর রাজ্য শাসন করেছিলেন। তিনি একাধারে একজন বড় আলেম, সাহসী যােদ্ধা, কুশলী সেনাপতি ও বিচক্ষণ শাসক ছিলেন। বাদশাহ আকবর তার রাজত্ব কালে হিন্দুস্তানে যে বেদ্বিনী ছড়িয়ে ছিলেন বাদশাহ আওরঙ্গজেব তার বহুলাংশ মূলােৎপাটন করেন। আকবরের তথাকথিত “দ্বীনে এলাহী’ ইসলাম ও মুসলমানদের উপর যে বিরাট আঘাত হেনেছিল আওরঙ্গজেবের পঞ্চাশ বছরের সে শাসন মুসলিম সমাজকে সে আঘাত ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি অত্যন্ত বিজ্ঞ ও কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিজে স্বশরীরে সৈন্য পরিচালনা করতেন। আলেম সমাজকে অত্যন্ত সম্মান করতেন। জীবনে কখনাে নামাজ কাজা করেননি।

 

        তার যৌবন কালের একটি চমকপ্রদ ঘটনা বর্ণনা করছি। ঘটনাটি হলাে তার বাদশাহী জীবনের পূর্বের। তখনাে তিনি বাদশাহ হননি। পিতা বাদশাহ শাহজাহান তাকে কাবুলে একটি যুদ্ধে সেনাপতি হিসাবে পাঠালেন। যখন ভীষণ যুদ্ধ শুরু হয় তখন নামাযের সময় উপস্থিত হলাে। সাথে সাথে কমাণ্ডার আওরঙ্গজেব হাতীর পিঠ থেকে নেমে পড়লেন। যুদ্ধের ময়দানেই। নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। অস্ত্র সজ্জিত অবস্থায় কমান্ডার নামাজ শুরু করে দিলেন। চতুর্দিক থেকে তীর নিক্ষিপ্ত হচ্ছিল তার উপর। তলােয়ার ও বর্শার ঝন ঝনাৎ শব্দে মুখরিত ময়দান। এরই মধ্যে নামাজ পড়তে লাগলেন মুসলিম বীর পুরুষ আওরঙ্গজেব। নামাজের মধ্যে যেন তার জীবনের মূল্য তুচ্ছ হয়ে গেল। নামাযের চেয়ে যুদ্ধে জয় পরাজয়কে তিনি কোন গুরুত্বই দিলেন না। কি অবাক কাণ্ড! মনে পড়ে কবি নজরুল এর একটি পংক্তিঃ “ দ্রিম দ্রিম বাজে ঘন দুন্দুভি দামামা-হাঁকে বীর শির দেগা নেহি দেগা আমামা"। শত্রুপক্ষ বাদশাহ আওরঙ্গজেব এর এই কাণ্ড দেখে ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গেল। তারা ভাবলাে যে, এত বড় খােদাভীরু মুর্শে মুজাহিদকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। তাই তারা আর যুদ্ধ না করে বাদশাহ আওরঙ্গজেব এর কাছে আত্মসমর্পণ করলো। আজ বিশ্বের দিকে দিকে এমন মর্দে মুজাহিদেরই প্রয়ােজন।

 

═──────────────═

 

 

 

পর্দা ফরয কেন

মােসাম্মাৎ নুরুন-নাহার

-----------------------------------------------------------------

        বর্তমান যুগ আধুনিক যুগ, কিন্তু এই আধুনিক যুগটা বেহায়াপনার তিমির অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। মানুষের নৈতিক চরিত্রের চরম অধঃপতন ঘটেছে। জেনা-ব্যাভিচার ও হত্যা ধর্ষণ একেবারে নিত্যকার কর্ম হয়ে গেছে। মনুষ্যত্ব হারিয়ে মানুষ হয়েছে পশু। এমতাবস্থায় নারীর সৌন্দর্যের কেন্দ্র মুখমণ্ডল দেখে মানুষের মনে কাম ভাব জাগ্রত হবে না বা মনে কোন প্রকার কু-চিন্তা আসবে না কিংবা মনে কোন প্রকার আকর্ষণ সৃষ্টি হবে না, একথা সাধারণ ভাবে বলা অযৌক্তিক, হয়তাে বা কোন ব্যক্তি। বিশেষে কোন সময় এমনটা নাও হতে পারে, সে কথা স্বতন্ত্র । আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে যত প্রকার জীব সৃষ্টি করেছেন সবই জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের মধ্যে বিপরীত লিংগের প্রতি আকর্ষিত হওয়ার শক্তি দিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে আবহমান কাল থেকে প্রত্যেক জীব স্বভাবের তাড়নায় স্বীয় জাতির বিপরীত লিংগের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তাকে কাছে পেয়ে প্রশান্তি লাভ করে। মহান আল্লাহর এ শাশ্বত বিধান এজন্যে যে, তিনি এর মাধ্যমে প্রজনন ব্যবস্থা অব্যাহত রেখে পৃথিবীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ও পৃথিবীকে আবাদ রাখতে চান। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের ক্ষেত্রেও এ নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। তাই প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই তার বিপরীত। লিংগের প্রতি অর্থাৎ পুরুষের প্রতি নারীর এবং নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ বিদ্যমান। তারা পরস্পর পরস্পরকে কাছে পেতে চায় এবং পারস্পরিক মিলনের মাধ্যমে মনের প্রশান্তি লাভ করে। নারী পুরুষের এ মিলন যেন আপত্তিকর না হয়। সে জন্যে ইসলাম নারী পুরুষের মাঝে একটা সীমা রেখা টেনে দিয়েছেন। তাহল বিবাহ বন্ধন। বিবাহের মাধ্যমে কোন পুরুষ তারপছন্দ মতাে কোন নারীকে এবং কোন নারী তার পছন্দ মত কোন পুরুষের সাথে তার যৌন চাহিদা পুরণ করতে পারে। সকল জাতির মধ্যেই বিবাহ বন্ধন সামাজিক ভাবে স্বীকৃত। বিবাহ বন্ধন ব্যতিত অন্য কোনভাবে এই চাহিদা পুরণকে ইসলাম কখনাে স্বীকৃতি দেয়না। সকল জাতির নিকটই তা অশালীন ও পাপের কাজ বলে গণ্য।

 

        বিশেষ করে ইসলাম বিবাহ বন্ধন ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে নারী পুরুষের জৈবিক চাহিদা পূরণ করাকে হারাম করে দিয়েছে। কারণ, নারী পুরুষের অবাধ ও লাগামহীন আচরণ পারিবারিক ব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেয়। প্রেম-প্রীতি, ভালবাসা, সহানুভূতি, সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ববােধ বিনষ্ট করে। নৈতিক অবক্ষয় ও নীতিহীনতার বিষবাষ্পে গােটা সমাজ দেহ জর্জরিত করে তােলে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন ব্যক্তিই নয়। বহু দেশ ও বহুজাতি উচ্ছলতার জন্য ধ্বংস হয়েছে। আল্লাহ তার এই পথিবীর শান্তি শৃঙ্খলা ধ্বংস ও বিপর্যস্ত হােক তা চান না। যেহেতু বিপরীত লিংগের প্রতি আকর্ষণ মানুষের স্বভাবগত চাহিদা। তাই অভ্যন্তরীণ তাকিদে মানুষ যেন অবৈধ যৌনাচারে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য আল্লাহ তায়ালা নারীর নারীত্বকে পুরুষের সামনে ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। পর পুরুষের সামনে নারীর সৌন্দর্য ঢেকে রাখাকে পর্দা বলা হয়। পর পুরুষ থেকে নারীর সৌন্দর্য ঢেকে রাখা ফরজ এবং তা প্রকাশ করা হারাম। পর্দা বিধানে নারীর মুখমণ্ডলের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। নারীর মুখমণ্ডল তার সৌন্দর্যের প্রাণকেন্দ্র। তাই, কেউ কোন দিন নারীকে দেখতে চাইলে প্রধানত তার মুখমণ্ডল দেখে থাকে, মুখমণ্ডলের সৌন্দর্যের উপর ভিত্তি করেই কোন নারীকে সুন্দর বা অসুন্দর বলা হয়। নারীর মুখমণ্ডল নারী দেহের সর্বাধিক সুন্দর অঙ্গ। এর সৌন্দর্য, কমনীয়তা ও লাবণ্য পুরুষের মনকে আকৃষ্ট ও আলােড়িত করে। পুরুষের মনে সুন্দর বাসনা সৃষ্টি করে।

 

        পায়ের আওয়াজ ও অলংকারের ঝনঝনানীতে মেয়েদের প্রতি পুরুষের মন আকৃষ্ট হতে পারে। এ আশংকায় মেয়েদেরকে জমিনে পা মেরে চলাফেরা করা নিষিদ্ধ হয়েছে। গােটা দেহ আবৃত মহিলার অলংকারের আওয়াজ থেকে মহিলাটি সুন্দর কি অসুন্দর, সুশ্রী কি কুশ্রী, যুবতী কি বৃদ্ধা তা কিছুই বুঝা যায় না। তবুও পােষাক দ্বারা আবৃত নিষ্প্রাণ, নির্জীব ও জড় অলংকারের আওয়াজ মানব মনে আবেদন সৃষ্টি করতে পারে বিপর্যয়ের আশংকায় তাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মেয়েরা তাদের সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখবে। প্রয়ােজনীয় কাজ কর্ম ও চলা ফেরার সময় শরীরের কোন অঙ্গ বা মুখমণ্ডল প্রকাশ হয়ে পড়লে কিংবা শরীর আবৃত রাখা সত্ত্বেও শরীরের কোন অঙ্গ পরিদশ্য হলে পুরুষ তা দেখবে না, তা দেখা থেকে চোখ নিয়ন্ত্রণে রেখে চলবে। আর এ কথাও অনস্বীকার্য যে, হঠাৎ করে কোন কিছু সামনে পড়ে। গেলে তা থেকে চোখ বাঁচানাে যায়, কিন্তু যা সব সময় সামনে প্রদর্শিত হতে থাকে তা থেকে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ রাখা অসম্ভব নয়। ইসলাম মানুষের প্রতি কোনরূপ কঠোরতা আরােপ করার পক্ষপাতী নয়।

 

        কারাে এ কথা মনে করার সুযােগ নেই যে, সব সময় মুখমণ্ডল ঢেকে রাখাও তাে মেয়েদের জন্য কঠিন। কারণ ইসলামের দৃষ্টি ভঙ্গি হলাে, ঘর মেয়েদের কর্মস্থল হলেও। প্রয়ােজনে তারা বাড়ীর বাইরে যেতে পারবে। প্রয়ােজন শেষ হলে তারা ঘরে ফিরে আসবে। পুরুষের মত যেখানে সেখানে ঘােরার অনুমতি তাদের নেই। বাড়ির বাইরে কিংবা পর পুরুষের সামনে তার খুব কম সময় থাকবে। সুতরাং অল্প সময়ের জন্যে শরীর ঢেকে চলা তাদের পক্ষে কঠিন নয়। অনেক মুসলমান মেয়ে রয়েছে যারা নামায আদায় করে কিন্তু পর্দায় থাকে না বা পর্দাকে গুরুত্ব দেয়না। সূরা আন নুর এর ৩১ আয়াতে বলা হয়েছে, অর্থাৎ-তারা (নারী) যেন নিজেদের সাজসজ্জা না দেখায়, কেবল সেই সব জিনিস ছাড়া যা আপনা আপনি প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং নিজেদের বক্ষদেশের উর ওড়নার আঁচল ফেলে রাখে। আর নিজেদের সাজসজ্জা প্রকাশ করবে না কিন্তু কেবল সে সবলােকদের সামনে স্বামী, পিতা, স্বামীর পিতা, নিজেদের পুত্র, নিজেদের ভাই, ভাইদের পুত্র, বােনের পুত্র, স্ত্রী লােক, নিজেদের দাসী, যৌন কামনামুক্ত পুরুষ যাদের অন্য কোন গরয নেই, সেই সব বালক যারা স্ত্রী লােকদের গােপন বিষয়াদি সম্পর্কে এখনাে ওয়াকিফহাল নয়, তারা নিজেদের পা জমিনের উপর মেরে চলবে না। (এই ভাবে যে নিজের সৌন্দর্য গােপন করে রেখেছে সে সফলকাম হয়েছে।) “হে মুমিনগণ, তােমরা সবাই মিলে আল্লাহর নিকট তওবা কর। আশা করা যায়, তােমরা কল্যাণ লাভ করবে।" আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে শরিয়তের পর্দা অনুযায়ী চলার তৌফিক দান করুন। আমীন।

 

═──────────────═