JustPaste.it


আমরা যাদের উত্তরসূরি:
হযরত উমায়ের বিন ওয়াহাব (রাদিঃ)


      হযরত উমায়ের বিন ওয়াহাব (রাঃ) এর একই জীবনের মধ্যে ছিল দুই জীবন, একটি ছিল ইসলাম গ্রহণের পূর্ব-জীবন আর অন্যটি ছিল ইসলাম গ্রহণের পরের জীবন। তার ইসলাম গ্রহণের পূর্ব-জীবন ছিল অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। বদর যুদ্ধে তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিলেন। কিন্তু তার তরবারী তাকে মোটেই সাহায্য করতে পারে নি। বরং তিনি এক পর্যায়ে নিশ্চিত মুত্যুর সম্মুখীন হয়েছিলেন। আল্লাহ তাঁকে ইসলামের জন্য কবুল করে নিয়েছিলেন বলে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে তাঁকে রক্ষা করেন। এজন্য তিনি মক্কায় ফিরে আসতে সমর্থ হন। ছেলে ওয়াহাব মুসলমানদের হাতে বন্দী অবস্থায় মদীনায়ই থেকে যায়। উমায়ের বিন ওয়াহাব আশঙ্কা করেছিলন যে, তার কৃত অপরাধের প্রতিশোধ মুসলমানরা তার ছেলেকে আটক করে আদায় করবে এবং তার উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হবে; মক্কায় মুহাম্মদের উপর যেমন নির্যাতনের ষ্টীমরোলার চালানো হয়েছিল। এই দুশ্চিন্তায় উমায়ের বিন ওয়াহাব অত্যন্ত অস্থির হয়ে পড়েন।
       কোন এক দ্বিপ্রহরে ছেলের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করার উদ্দেশ্যে তিনি দেবতাদের জন্য কিছু ভোগ সমগ্রী নিয়ে কাবাগৃহে হাজির হন। এ সময় কোরাইশ সরদার সাফওয়ান বিন উমাইয়া হাজরে আসওয়াদের কাছে উপবিষ্ট ছিলেন। তার সঙ্গে উমায়েরের সাক্ষাত ঘটে। তারা পরস্পর কুশল বিনিময় করেন। সাফওয়ান বিন উমাইয়া তখন উমায়ের বিন ওয়াহাবকে বললেন, বসো ভাই! কিছু সুখ দুঃখের কথা বলি, সময় আর কাটছে না।অতঃপর তারা একে অপরের মুখোমুখি হয়ে বসে বদর যুদ্ধের বিভিন্ন বিভীষিকাময় ঘটনার আলোচনা শুরু করেন । আলাপচারিতায় তারা কখনো মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার সঙ্গীদের হাতে যুদ্ধবন্দী কোরাইশদের সংখ্যা নির্ণয় করছিলেন, আবার কখনো মুসলমানদের তরবারীর আঘাতে তাদের নিহত নেতৃবৃন্দের কথা স্মরণ করে ভয়ে শিউরে উঠছিলেন, যাদের লাশ দিয়ে বদরের পুরানো ডোবাগুলো ভরাট করা হয়েছিল। আলোচনার এক পর্যায়ে সাফওয়ান বিন উমাইয়া অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে বললেনঃ আজ আমাদের নেতারা মুসলমানদের হাতে নিহত, যুবকেরা তাদের হাতে বন্দী। আল্লাহর কসম! আমাদের বেঁচে থাকার আর কি কোন সার্থকতা আছে? একথা শুনে উমায়ের তার কথায় সায় দিয়ে বললেনঃ 'আপনি যথার্থই বলেছেন। সত্যিই, আমাদের বেঁচে থাকার আর কোন যৌক্তিকতা নেই। এরপর কিছুক্ষণ নীরব থেকে পুনরায় তিনি বললেন, "এই কাবার মালিকের কসম, আমি যদি ঋণগ্রস্ত না হতাম অথবা আজ আমার ঋণ পরিশোধ করার মতো কোন ব্যবস্থা থাকতো অথবা আমার অনুপস্থিতিতে সন্তান-সন্ততির অনাহারে মৃত্যুবরণ করার আশঙ্কা না থাকত, তাহলে নিশ্চয়ই আমি মদীনায় গিয়ে মুহাম্মদকে এ দুনিয়া থেকে চিরতরে বিদায় করে দিতাম এবং তার মিশনকে স্তব্ধ করে দিয়ে আরববাসীকে এ অত্যাচার হতে মুক্ত করতাম।" এরপর তিনি মৃদু স্বরে বললেনঃ আমি যদি মদীনায় মুহাম্মাদকে হত্যা করতে যাই, তাহলে কেউ আমাকে সন্দেহ করবে না যে, আমি তাকে হত্যা করতে এসেছি বরং সবাই ভাববে যে, আমি আমার বন্দী ছেলের মুক্তির জন্য তদবীর করতে এসেছি।
       সাফওয়ান বিন উমাইয়া কাল বিলম্ব না করে উমাইয়েরের ভাবাবেগকে লুফে নিয়ে বললেন, “হে উমায়ের! তোমার সমস্ত ঋণের বোঝা আমার উপর ছেড়ে দাও। পাহাড়সম ঋণকেও আমি পরিশোধ করতে প্রস্তুত। আর তোমার সমস্ত পরিবার পরিজনকে আজই আমি আমার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করে নিচ্ছি। যতদিন আমি বেঁচে থাকব ততদিন আমার অর্থ ও সম্পদের প্রাচুর্য তোমার পরিবারের জন্য ব্যয়িত হবে। 
      সাফওয়ান বিন উমাইয়া এর তেজোদীপ্ত প্রতিশ্রুতি শুনে উমায়েরের মধ্যকার হিংস্র পশুশক্তি গর্জন করে উঠলো। তিনি সাফওয়ানকে বললেন, তাহলে আমাদের দু'জনের মধ্যকার এ চুক্তির কথা আর কারও কাছে প্রকাশ করো না। আমি আমার কার্য সম্পাদনের জন্য বদ্ধপরিকর।
       হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি উমায়েরের হৃদয়ে হিংসার যে আগুন জ্বলছিল সাফওয়ানের উৎসাহ উদ্দীপনা ও প্রতিশ্রুতি তা আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিল । তিনি অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কাবাঘর থেকে বাড়ি ফিরলেন এবং পরিকল্পনাকে সামনে নিয়ে কৌশল আঁটতে শুরু করলেন।
      যেহেতু কোরাইশদের প্রায় প্রতিটি ঘরের কোন না কোন লোক মুসলমানদের হাতে যুদ্ধবন্দী হিসেবে মদীনায় ছিল; সেহেতু কয়েদীদের আত্মীয়-স্বজন সব সময়ই তাদের মুক্ত করার ব্যাপারে মদীনায় আসা যাওয়া করতো। তাই উমাইয়েরের মদীনা যাওয়াকে মুসলমানেরা কেউই সন্দেহের চোখে দেখবেন না বলেই তার বিশ্বাস ছিল।
       উমায়ের বিন্ ওয়াহাব পূর্ণ মানসিক প্রস্তুতি সহকারে মদীনা রওয়ানা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং স্বীয় তরবারী আরও শানিত করে তাতে বিষ মেখে নিলেন। অবশেষে সফর সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। উট যতই মদীনার পথে অগ্রসর হচ্ছিল, উমায়েরের হিংসার আগুন ততই দাউ দাউ করে জ্বলছিল। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এক পর্যায়ে উটটি মদীনার মসজিদে নববীর কাছে এসে পৌঁছলো। উমায়ের সেখানে অবতরণ করে তার বিষাক্ত তরবারী নিয়ে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে খোঁজার জন্য মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলেন। এদিকে হযরত উমর (রাঃ) মসজিদে নববীতে বসে কিছু সংখ্যক সাহাবীর সাথে বদরের যুদ্ধবন্দী ও মৃত কোরাইশদের নেতৃত্বের পরাজয়ের ঘটনাবলী, মুসলমানদের সাহসিকতা ও বীরত্বের বর্ণনা এবং আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছিলেন। হঠাৎ মুখ ফিরাতেই হযরত উমর (রাঃ) দেখতে পেলেন যে, অস্ত্র সজ্জিত উমায়ের মসজিদে নববীতে প্রবেশ করছে।তিনি  উঠলেন এবং তার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে চিৎকার করে বলে উঠলেন, "আল্লাহর দুশমন, উমায়ের ইবনে ওয়াহাব, নিশ্চয়ই কোন খারাপ মতলব নিয়ে এই মসজিদে প্রবেশ করেছে !এই সেই ব্যক্তি, যে মক্কায় আমাদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের লেলিয়ে দিয়েছিল এবং বদর যুদ্ধে মুসলমানদর বিরুদ্ধে গুপ্তচর বৃত্তির কাজে ভীষণ ব্যস্ত ছিলো। সে কোন মহৎ উদ্দেশ্যে এখানে আসতে পারে না। এই বলে তিনি উপস্থিত সাহাবীদের তৎক্ষণাৎ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চতুর্ষ্পার্শে অবস্থান গ্রহণ করার নির্দেশ দিলেন। এবং এই ব্যক্তির নাশকতামূলক কাজ থেকে সতর্ক থাকার জন্য বললেন। অতঃপর হযরত উমর (রাঃ), রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে গিয়ে বললেন, "হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর দুশমন উমায়ের বিন ওয়াহাব অস্ত্র সজ্জিত অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করেছে। নিশ্চয়ই তার কোন কুমতলব রয়েছে"।
      একথা শুনে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে আমার কাছ নিয়ে আস। হযরত উমর (রাঃ) এ আদেশ শোনার পর উমায়েরের কাছে ফিরে গিয়ে এক হাতে উমায়েরের তরবারী এবং অন্য হাতে তার জামার কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এলেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে। হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দৃশ্য দেখে উমায়েরকে ছেড়ে দিয়ে হযরত উমর (রাঃ)কে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াতে বললেন। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমায়ের বিন ওয়াহাবকে নিকটে ডাকলেন। উমায়ের এসে জাহেলী নিয়মে হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সালাম জানালেন। হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, শুনো উমায়ের, আল্লাহ আমাকে তোমাদের সালামের চেয়ে আরও উত্তম সালাম দিয়ে সম্মানিত করেছেন। এ সালাম হলো বেহেশতের সালাম- “আসসালামু আলাইকুম।" উমায়ের বললেন- “কই, খুব বেশী পার্থক্য তো মনে হচ্ছে না, কিছুদিন আগেও তো এটাই ছিল তোমার সালাম।"     
     রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “উমায়ের! কি উদ্দেশ্যে তুমি এখানে এসেছো?
উমায়েরঃ যুদ্ধবন্দীদের মুক্ত করার জন্য এসেছি। আশা করি, এ ব্যাপারে আপনি আমাকে সার্বিক সহযোগিতা দান করবেন।
      রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বন্দী মুক্তির উদ্দেশ্যেই যদি এসে থাক, তাহলে অস্ত্রসজ্জিত অবস্থায় এসেছ কেন'?
      উমায়েরঃ আল্লাহ এ তলোয়ারকে ধ্বংস করুন। বদরে এ তলোয়ার কি আমাদের কোন কাজে এসেছে? রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ উমায়ের, সত্যি করে বলো, কি উদ্দেশ্যে তুমি এসেছো?
উমায়েরঃ বিশ্বাস করুন, দ্বিতীয় কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আমি এখনে আসি নি। তখন রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, "উমায়ের, তুমি এবং সাফওয়ান বিন উমাইয়া খানায়ে কাবার হাজরে আসওয়াদের পাশে বসে বদর যুদ্ধের পরাজয় সম্পর্কে আলোচনা করছিলে। তুমি বলেছিলে, “আমি যদি ঋণগ্রস্ত না হতাম, অথবা সন্তান-সন্ততি আমার উপর নির্ভরশীল না হতো, তাহলে আমি মুহাম্মদকে হত্যার উদ্দেশ্যে অবশ্যই মদীনায় রওয়ানা হতাম !" তোমার এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া আমার হত্যার বিনিময়ে তোমার ঋণ এবং সন্তান-সন্ততির সব দায়-দায়িত্ব কি গ্রহণ করে নি? তোমরা দু'জন হয়তো মনে করেছিলে যে, তোমরা ব্যতীত এ কথাগুলো আর কেউ শুনেনি। অথচ তোমাদের উভয়ের মাঝে আল্লাহ বিদ্যমান ছিলেন।
     রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ কথা শুনে উমায়ের হতভম্ব হয়ে গেলো এবং সত্যিই তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল,- "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সত্যিই আপনি আল্লাহর রাসূল।" হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আল্লাহর পক্ষ হতে যে পয়গাম নিয়ে এসেছেন, আমরা তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতাম। কিন্তু আমার এবং সাফওয়ানের মাঝে যে কথোপকথন হয়েছিল, তা আমরা দু'জন ব্যতীত আর কেউই জানতো না। আমার বিশ্বাস, নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে এ সম্পর্কে অবহিত করেছেন। আল্লাহর প্রশংসা করছি, যিনি কোন না কোন ভাবে আমাকে আপনার কাছে এনে ইসলামের আলো দিয়ে আলোকিত করেছেন। আমি এখন আর আপনার দুশমন উমায়ের বিন ওয়াহাব নই। বরং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি-“আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল"-এ ঘোষণার মাধ্যমেই উমায়ের ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিলেন। তৎক্ষণাৎ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের এই বলে নির্দেশ দিলেনঃ
     “তোমাদের এই ভাইকে দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান দাও, তাকে কুরআন শিক্ষা দাও এবং তার বন্দীদের মুক্ত করে দাও।”
      উমায়েরের ইসলাম গ্রহণের সংবাদে মদীনার মুসলমানদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। এমনকি হযরত উমর (রাঃ) বলেই ফেললেন,
       "ইসলাম গ্রহণের পূর্বে উমায়ের আমার নিকট একটি শূকরের চেয়েও ঘৃণিত ছিল। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর সে আমার নিকট নিজ সন্তান-সন্ততির চেয়েও অধিকতর প্রিয়।”
      হযরত উমায়েরের মধ্যে এই বিপ্লবী পরিবর্তনের পর থেকে তিনি ইসলামী শিক্ষায় নিজেকে পরিশুদ্ধ করার সর্বাত্মক চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করেন। কুরআন পাকের আলোকে তার জীবনকে আলোকিত করতে থাকেন। আল্লাহ ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালবাসায় তিনি এতোই নিমগ্ন হয়ে গেলেন যে, মক্কায় রেখে আসা তার প্রিয় সন্তান-সন্ততির মায়াও ভুলে গেলেন।
        এদিকে সাফওয়ান বিন উমাইয়া কুরাইশদের বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াতে লাগলো এবং বলতে শুরু করলো, 'হে কুরাইশরা, অপেক্ষা কর, সেদিন বেশী দূরে নয়, যেদিন আমি তোমাদের এমন একটি শুভ সংবাদ শুনাবো, যা তোমাদের বদরের পরাজয়ের গ্লানি ভুলিয়ে দিবে।'
        সাফওয়ান বিন উমাইয়া, উমায়েরের হাতে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হত্যার খবর জানার জন্য অধীর আগ্রহে মদীনার পানে চাতক পাখীর মত তাকিয়ে রইলো। যতই দিন যাচ্ছিল, এ সংবাদ জানার জন্য সাফওয়ান ততই অস্থির হয়ে উঠেছিল। তার উদ্বেগ ছিল সীমাহীন। কবে শুনবে সে সংবাদ, যা শোনার জন্য সে পাঠিয়েছে উমায়েরকে মদীনায়। মদীনা হতে আগন্তুকদের কাছে উমায়ের বিন ওয়াহাব সম্পর্কে জানার জন্য সাফওয়ান উদগ্রীব হয়ে উঠতো। কিন্তু কেউই তাকে উমায়ের সম্পর্কে কোন খবর দিতে পারেনি। পরিশেষে কোন এক আগন্তুক সাফওয়ান বিন উমাইয়াকে সংবাদ পৌঁছালো যে, তুমি যার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছ, সেই উমায়ের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। এ সংবাদ সাফওয়ানের মাথায় বজ্রপাতের মত মনে হলো। তার ধারণা ছিল, পৃথিবীর সকল মানুষ ইসলাম গ্রহণ করলেও উমায়ের ইবনে ওয়াহাব তা গ্রহণ করতে পারে না।
      হযরত উমায়ের (রাঃ) এদিকে দ্বীনের জ্ঞান ও পবিত্র কালামে পাকের হিফজ করার কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। তিনি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এসে বললেন, "হে আল্লাহর রাসূল! আমি জীবনের দীর্ঘ সময় আলাহর নূরকে নির্বাপিত করতে এবং ইসলাম গ্রহণকারীদের উপর কঠিন নির্যাতন ও অত্যাচারের কাজে ব্যয় করেছি। আপনি আমাকে অনুমতি দিলে আমি মক্কায় গিয়ে কুরাইশদের আল্লাহ ও তার রাসূলের পথে আহবান জানাব। তারা যদি আমার দাওয়াত কবুল করে তাহলে তাদেরই কল্যাণ হবে। আর যদি তারা তা প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে আমি তাদের দ্বীন সম্পর্কে এমন উচিৎ শিক্ষা দিব যেভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের তারা দিয়েছিলো। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে মক্কায় গিয়ে ইসলামের দাওয়াত প্রচারের অনুমতি দিলেন। হযরত উমায়ের (রাঃ) মক্কায় গিয়ে সাফওয়ান বিন উমাইয়ার ঘরে প্রবেশ করে বললেন, "হে সাফওয়ান, তুমি মক্কার নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে অন্যতম নেতা এবং কুরাইশদের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অন্যতম বুদ্ধিজীবী। তোমরা পাথর পূজা ও পাথরের মূর্তির জন্য যা করে থাক, সবই ধোঁকা। কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি কি এটাকে দ্বীন বলে বিশ্বাস করতে পারে?
     “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই আর মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল"।
     উমায়ের মক্কায় এসে আল্লাহর পথে মক্কাবাসীকে দাওয়াত দিতে আরম্ভ করলেন। তার হাতে অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেন। আল্লাহ হযরত উমায়ের (রঃ)-কে উত্তম পুরস্কার দান করুন এবং তার কবর নূর দ্বারা আলোকিত করুন-আমীন ।
অনুবাদঃ অধ্যাপক আবুল কালাম পাটোয়ারী
হযরত ওয়াহাব (রাঃ) সম্পর্কে বিস্তারিত জানার

সহায়ক গ্রন্থসমূহঃ
১. হায়াতুস সাহাবা-৪র্থ খণ্ড
২. সিরাতে ইবনে হিশাম
৩. আল ইছাবা-আত তরজমা ৬০৬০
৪. তাবাকাত ইবনে সা'দ, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৪৬।