JustPaste.it

প্রশ্নোত্তর

==================================================

 

মোঃ আবুল কালাম,

রাজাপুর, ঝালকাঠি।

-----------------------------------------------------------------

        প্রশ্নঃ কুরআনে বর্ণিত হযরত খিজির (আঃ) ও হযতর মূসা (আ) -এর ঐতিহাসিক সফরের এক পর্যায়ে দেখা যায় যে, তারা এক রাস্তা দিয়ে চলার সময় একটি দেয়াল হেলান দেখে খুব কষ্ট করে সেটি সোজা করে দেন। কেননা ওই দেয়ালের নিচে ইয়াতিমের গুপ্ত ধন রক্ষিত ছিলো। কোন কিতাবে দেখা যায়, সেই গুপ্ত ধন ছিল স্বর্ণের একটি ফলক এবং তার ওপর নাকি মূল্যবান কয়েকটি কথা লেখা ছিলো। সেই কথাগুলো কি জানালে উপকৃত হব।

 

       উত্তরঃ হযরত ওসমান ইবনে আফফান (রাঃ) -এর সূত্রে একখানা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তাতে নিম্ন লিখিত বাক্যসমূহ লিখিত ছিলোঃ

        ১। বিস্‌মিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

 

        ২। সে ব্যক্তির ব্যাপারটি আশ্চর্যজনক, যে তকদীরে বিশ্বাস করে অথচ দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়।

 

        ৩। সে ব্যক্তির ব্যাপারটি আশ্চর্য জনক, যে আল্লাহ্ তা'আলাকে রিযিক দাতা রূপে বিশ্বাস করে; এরপর প্রয়োজনাতিরিক্ত পরিশ্রম ও অনর্থক চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করে।

 

        ৪। সে ব্যক্তির ব্যাপারটি আশ্চর্যজনক যে মৃত্যুতে বিশ্বাস রাখে, অথচ আনন্দিত ও প্রফুল্ল থাকে।

 

        ৫। সে ব্যক্তির ব্যাপারটি আশ্চর্যজনক, যে পরকালের হিসাব-নিকাশে বিশ্বাস রাখে; অথচ সৎকাজে গাফেল হয়।

 

৬। সে ব্যক্তির ব্যাপারটি আশ্চর্যজনক, যে দুনিয়ার নৈত্যনৈমিত্তিক পরিবর্তন জেনেও নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকে।

 

        ৭। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।

 

******

 

 

 

শিকদার আবুল বাশার

ইছামতি, তেরখাদা, খুলনা।

-----------------------------------------------------------------

       প্রশ্নঃ যে সকল পিতা-মাতা তাদের মেয়েদের গায়রে মুহরিম পুরুষের সাথে কথা বলা ও চলাফেরা করার সুযোগ করে দেয় তাদের কি শাস্তি হবে?

 

       উত্তরঃ তাদের শাস্তি কত কঠিন ও ভয়াবহ হবে তা কেবল আল্লাহ তাআলাই জানেন। তবে সমাজের স্থিতিশীলতা, অশান্তি, নৈরাজ্য ও নারীর ইজ্জত হরণের যে অদম্য পশুবৃত্তি চলছে তার জন্য এরাই দায়ী। নারীর প্রতি সহজাত দুর্বল পুরুষের হাতে মেয়েকে ছেড়ে দেয়া মানে তার ইজ্জত লুটে খাওয়ার সুযোগ দেয়া। বহু আহম্মক অবিভাবক এতে এক রকম পৈশাচিক স্বাদ পায়। বর্তমান সমাজ মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ এখানেই। কারন আল্লাহ তা'আলা পর্দা ফরয করেছেন নারীদের ঘর-বন্দী করার জন্য নয়। বরং পর পুরুষের নযর থেকে তাদের রূপ-লাবণ্য আড়াল করে রাখার জন্য। নারীর রূপ-লাবন্য সস্তা মুলোর মত খুলে রাখার অর্থ যে পুরুষদের যৌবনে সুরসুরি দেয়। তা যে কোন যুবকের বুঝার কথা। যৌন উজ্জ্বলতা যে ব্যক্তির নৈতিকতা থেকে সামাজিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে এবং এর পরিণামে যে গোটা জাতি আল্লাহর গজবে পতিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যায় এর প্রমাণ বহু-অসংখ্য। বর্তমান সময়ের ‘এইডস’ নামক মহামারীর প্রাদুর্ভাবই এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। অতএব সাবধান।

*******

 

 

মোঃ এমদাদুর রহমান,

জামেয়া লুৎফিয়া হামিদ নগর,মৌলভী বাজার

-----------------------------------------------------------------

       প্রশ্নঃ জাগো মুজাহিদ গত জুন-৯৩-এর প্রশ্নোত্তর পাতায় একটি জবাবে লেখা হয়েছে যে, “ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায় এইরূপ কোন প্রসাধনী ব্যবহার করা পুরুষের জন্য বৈধ নয়।” এই তথ্য আপনি কোথায় পেয়েছেন দলীল সহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।

 

       উত্তরঃ গায়ের রং বা ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষে পুরুষের জন্য এমন কিছুই প্রসাধনী হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না যাতে তার ত্বকের কোন অংশের প্রকৃত রং চাপা পড়ে। যেমন মেহেদী বা হলুদ ইত্যাদি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আর তথাকথিত রূপচর্চা এক জিনিস নয়। রূপ চর্চাও নিষিদ্ধ নয়, তবে পুরুষেরা রূপচর্চার নামে এমন কিছু ব্যবহার করতে পারবে না যাতে বাহ্যত তার ত্বকে কোনরূপ পরিবর্তণ লক্ষ্য করা যায়। কেননা এইরূপ রং লাগানো কেবল মহিলাদের জন্য অনুমোদিত। পুরুষের জন্য অবৈধ। কারণ এর দ্বারা পুরুষ ও মহিলার মধ্যে রূপ ও আংগিক সাদৃশ্য চলে আসে। হাদীসে এ সম্পর্কে কঠোর সাবধান বাণী উচ্চারিত হয়েছে। এর জন্য দেখুন ফতুয়ায়ে রশিদিয়ার মেহদী বিষয়ক মাসআলাটি।

 

*******

 

 

আব্দুল্লাহ মোঃ আবেদ ও আতিকুল্লাহ জুলফিকার

লালখান বাজার, চট্টগ্রাম

-----------------------------------------------------------------

        প্রশ্নঃ দাড়ি রাখা কি এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু পরিমাণ দাড়ি রাখা উচিত?

 

       উত্তরঃ এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব। এক মুষ্টির চেয়ে বেশী কাটা ও কামান মাকরূহে তাহরিমী।

********

 

 

হাফেজ মোঃ মনিরুজ্জামান,

খুলনা দারুল উলুম মাদ্রাসা,

জামাতে মেশকাত শরীফ, খুলনা।

-----------------------------------------------------------------

        প্রশ্নঃ হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি কোথা থেকে, কিভাবে হয়েছে। এই ধর্মের প্রবর্তক কে? মূর্তি পূজার প্রচলন কখন থেকে শুরু হয়েছে? বিস্তারিত জানতে আগ্রহী।

 

       উত্তরঃ ‘হিন্দু’ নামে কোন স্বন্ত্র ধর্মের অস্তিত্বই ইতিহাস ও সমাজ গবেষকগণ স্বীকার করেন না। পণ্ডিত জওহর লাল নেহেরু লিখেছেন, “হিন্দু নামে কোন ধর্ম নেই। যারা হিন্দু বা ভারতে বসবাস করে তারা সকলে হিন্দের অধিবাসী বা হিন্দু। যারা দেব-দেবী, ঈশ্বর-ভগবান মান্য করে, তারাও যেমন হিন্দু, তেমনি যারা এসব মান্য করে না তারও হিন্দু। তবে প্রচলিত অর্থে এই উপমহাদেশে মুসলিম, শিখ, খৃষ্টান প্রভৃতি সুনির্দিষ্ট পরিচয়ের বাইরে যারা আছে তাদেরকেই হিন্দু বলা হয়। বস্তুতঃ উপমহাদেশে পৌত্তলিক ধর্ম নিয়ে যারা হিন্দু নামে পরিচিত হয়েছে তারা এদেশীয় নয় বহিরাগত। নির্ভরযোগ্য ইতিহাসে পাওয়া যায় যে, অন্ততঃ খৃষ্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর আগে বনী ইসরাঈলের একটি শাখা ব্যাবিলনে মূর্তি পূজার প্রচলন করে। এক পর্যায়ে ব্যবিলনে সংঘটিত এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে মূর্তি পূজারীরা পর্যুদস্ত হয়ে দুনিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িযে পড়ে। এদেরই একটি শাখা উরাল পর্বতমালা পাড়ি দিয়ে আফগানিস্তানের পথে এই উপমহাদেশে এসে বসতি স্থাপন করে। এরা আর্যজাতি নামে খ্যাত। এদের দ্বারাই এই দেশে মূর্তি পূজার প্রচলন ঘটে। তবে এর গোড়ায় কার নেতৃত্ব ছিলো, কে সে ব্যক্তি এবং নির্দিষ্টভাবে কোন তারিখ থেকে এর প্রচলন ঘটে তার সঠিক ইতিহাস বলা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে পুংখানুপুংখ আলোচনা ইতিহাস গ্রন্থে পাওয়া যায় না। তবুও এ ব্যাপারে সচেতন মানুষের একটা ধারণা থাকা উচিত বলে কিছু লেখা।

 

**********

 

 

মোঃ জাহিদুল ইসলাম,

জামাতে জালালাইন শরীফ,

দারুল্ল উলুম মাদ্রাসা, মোসলমানপাড়া, খুলনা।

মোঃ ইস্রাফিল হোসেন,

গ্রামঃ গওহর ডাঙ্গা,

পোঃ খাদেমুল ইসলাম মাদ্রাসা, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগজ্ঞ

-----------------------------------------------------------------

        প্রশ্নঃ বাবরী মসজিদ কত সনে কে নির্মাণ করেন এবং এর আয়তন কত। এই মসজিদটি বিধর্মীদের দ্বারা কতবার আক্রান্ত হয়?

 

       উত্তরঃ সম্রাট বাবরের ভারত বিজয়ের স্মৃতি হিসেবে তাঁর একান্ত ঘনিষ্ট জন ও মন্ত্রী মীর বাকীর তত্ত্বাবধানে ১৫২৬ খৃস্টাব্দে এই পবিত্র মসজিদিটি নির্মিত হয়। ফয়জাবাদ থেকে পাঁচ কিলোমিটার ও দিল্লী থেকে সাত কিলোমিটার দূরে পশ্চিম দক্ষিণ ভারতের অযোধ্যা ভূমিতে দীর্ঘ ৫১৪ বছর এই মসজিদটি অমর স্মৃতি হয়ে মুসলমানদের বিজয় ঘোষণা করছিলো। আটশত বর্গ মিটার জায়গার ওপর মসজিদটি স্থাপিত ছিলো।

 

        কুচক্রীদের প্ররোচনায় এই মসজিদটিকে কেন্দ্র করে প্রথম হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা ঘটে ১৮৫৫ খৃঃ। এতে ৭৫ জন লোক মৃত্যু বরন করেন।

 

        ১৮৫৭ খৃঃ হনুমানীয় আদর্শে উম্মত্ত এক দল পৌত্তলিক বাবরী মসজিদ চত্তরের একটা অংশকে জবর দখল করে তাকে “রাম চবুতরা” বলে ঘোষণা করে।

 

        ১৮৫৯ সালে বৃটিশ সরকার মসজিদ ও রাম চবুতরা (যেখানে হিন্দুরা রামের মূর্তিস্থাপন করে এবং পূজা শুরু করে) এর মধ্যবর্তী স্থানে এটি দেয়াল তৈরী করে।

 

        ১৮৮৫ খৃঃ হিন্দুদের পক্ষ থেকে এই দাবী করা হয় যে, এই মসজিদের স্থানে শ্রী রামকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অতএব মসজিদের সীমানার মধ্যে মন্দির নির্মাণ করার অনুমতি দিতে হবে।

 

        ১৮৮৬ খৃঃ থেকে উভয় পক্ষের দাবি পাল্টা দাবীর এক পর্যায়ে ১৯৩৪ সালে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গায় রামবাদীদের হাতে মসজিদের প্রধান দরওয়াজাসহ বেশ কয়েকটি স্থান ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

 

        ১৯৩৬ সালে মুসলিম সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয়।

 

        ১৯৪৯ সালের ২২ শে ডিসেম্বর গভীর রাতে টীকিকাটা ত্ৰীশুলবাদী গোড়া হিন্দুরা মসজিদের দরওয়াজা খুলে মেহরাবের ওপর রাম ও সিতার মূর্তি স্থাপন করে এবং মসজিদটিকে তারা জবরদস্তি দখল করে নেয়।

 

        বহু ঘটনার পর ১৯৯২ সালের ৬ ই ডিসেম্বর বর্বর পৌত্তলিক হিন্দুদের হাতে এই ঐতিহাসিক মসজিদটির শাহাদাত ঘটে।

 

********

 

 

এম, এম, এ কাদের

-----------------------------------------------------------------

        প্রশ্নঃ স্বামী যদি গান শুনে (যে গান বাদ্য বাজনা সহ পরিবেশিত হয়) তবে সে কি কাফের হয়ে যাবে? যদি কাফের বা বেঈমান হয় তবে তার স্ত্রী কি তালাক হয়ে যাবে? স্ত্রী যদি এ কারণে তালাক হয়ে যায় এবং এই অবস্থায় স্বামী স্ত্রীর মিলনের ফলে যে সন্তান জন্ম নিবে সে সন্তানকি অবৈধ সন্তান হিসেবে পরিগণিত হবে না? যদি তাই হয় তবে বাংলাদেশের রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে যা পরিবেশিত হয় এবং যার দর্শক ও শ্রোতা এই দেশের সিংহভাগ মানুষ এই সিংহ ভাগ স্ত্রী পুরুষের মিলনের ফলে যে সন্তান জন্ম নিচ্ছে তাদের অবস্থা কি দাড়াবে?

 

       উত্তরঃ আপনার বহু ‘যদি’ ও ‘এবং’ যুক্ত প্রশ্নটি পড়ে থমকে যাওয়ার মত অবস্থা। ‘যদি’র ওপর ভিত্তি করে দাড় করানো আপনার বিষয়টিকে ‘ভয়াবহ’ বল্লেও কিছুই বলা হয় না        কল্পনার সাগর পাড়ি দিয়ে কেউ ওপারে পৌঁছতে পারে না। কেননা সেটা কল্পনা। বাস্তব হলে চেষ্টা করে দেখা যেত এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্তে কত জায়গা।

 

        আপনার মনের এই কথা সন্দেহ ছাড়া কিছুই নয় — যাকে সোজা কথায় বলে ওয়াসওয়াসা। বুঝি না কোন কারণে এবং কোন যুক্তির ওপর ভিত্তি করে সমগ্র মুসলিম জাতিটাকে অপবিত্র বলে ভাবছেন? বাদ্য যন্ত্র সহ পরিবেশিত গান শুনা হারাম বটে, তাই বলে কি হারাম কাজ করলেই ঈমান হারাম হয়ে যায়? কুরআন ও হাদীসের মতে হারাম কাজ করা মহাপাপ ঠিকই কিন্তু এর সাথে স্ত্রী তালাক হওয়ার প্রশ্ন অবান্তর নয় কি? জানিনা, এই পাপগ্রস্থ লোকদের পাপ থেকে বিরত রাখার পথ আবিষ্কার ও তাদেরকে সৎ পথের সন্ধান ও পরকালের ভয়াবহ শাস্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা সত্ৰিই দুঃখজনক এবং নির্মম। বাস্তবেই যদি আপনার চিন্তা ও ধারণা উল্লেখিত রূপ হয় তবে তা নিসন্দেহে কঠিন পাপ। আপনিও তওবা করুন।

 

********

 

 

মোঃ হাবিবুল্লাহ

জামেয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া

মোহাম্মাদপুর, ঢাকা

-----------------------------------------------------------------

        প্রশ্নঃ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) -কে হাবীবুল্লাহ এবং হযরত ইব্রাহীম (আঃ) -কে খলীলুল্লাহ বলা হয় কেন? হাবীব ও খলীলের মধ্যে পার্থক্য কি?

 

       উত্তরঃ হাবীব মানে “মাহবুব” অর্থাৎ প্রমাস্পদ এবং খলীল মান ‘মুহিব’ অর্থাৎ প্রেমিক। তাই খলীলুল্লাহ অর্থ আল্লাহর প্রেমিক এবং হাবীবুল্লাহ অর্থ আল্লাহ যার প্রেমিক তিনি যাকে ভালোবাসেন। খলীল ও হাবীবের মধ্যে এই হলো পার্থক্য। আর আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -কে হাবীবুল্লাহ বলা ও হযরত ইব্রাহীম (আঃ) -কে খলীলুল্লাহ বলার এই হলো কারণ।

*******

 

 

শাহ আশেকুর রহমান,

মিতালী ডিপার্টমেন্টাল স্টোর,

এয়ারপোর্ট, আম্বরখানা, সিলেট।

এবং

মোঃ মিজান,

তালীমুল কুরআন একাডেমী,

কাজল কেন্দ্রীয় মসজিদ, ঢাকা।

-----------------------------------------------------------------

        প্রশ্নঃ মাসিক মদীনা জুন -৯৩ সংখ্যার প্রশ্নোত্তরে দেখলাম, পর্দার হুকুম পালন করে পুরুষের ইমামতিতে মহিলারা জামাতে নামায পড়তে পারেন। অথচ ঢাকার রাজারবাগস্থ একটি গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে প্রচারিত একখানা লিফলেটে দেখলাম, তাতে লেখা হয়েছে যে, “মহিলাদের জামাতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহে তাহরীমী।” মদীনার লেখা অনুযায়ী বিষয়টি জায়িজ প্রমাণীত হয় পক্ষান্তরে রাজার বাগের লিফলেটের ভাষায় সম্পূর্ণ হারাম প্রমাণিত হয়। অথচ একটি বিষয় কখনও একই সাথে জায়িয ও হারাম হতে পারে না। আমরা এখন কোনটি গ্রহণ করব? সঠিক উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।

 

       উত্তরঃ মদীনা ও রাজারবাগের বিরোধ নিরসনের দায়িত্ব আমাদের নয়। কোন বিষয়কে জায়িয-নাজায়িয বা হালাল-হারাম নির্ধারণ করার অধিকারও কোন উম্মতের নেই। তবে এই বিষয়ে সাহাবী পরবর্তী সময় থেকেই একটা মতানৈক্য লক্ষ্য করা যায়। যার মর্ম উপলব্ধি করতে হলে হাদীস, আছার ও ইমামদের মত-মন্তব্যের প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করতে হবে। প্রথমে আমরা দেখব, এ ব্যাপারে হাদীসে কি বলা হয়েছে। মেয়েদের মসজিদে যাওয়া সম্পর্কে তিন ধরণের হাদীস একই সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে। এক ধরণের হাদীসে মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করতে বলা হয়েছে। যেমন, “তোমরা আল্লাহর বাঁদীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে নিষেধ করো না।”-(মোসনাদে আহমদ) অন্য একটি হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে যে, “মেয়েরা মসজিদে যাওয়ার জন্যে তোমাদের অনুমতি চাইলে তোমরা তাদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিবে।”-(মোসনাদে আহমদ)

 

        উপরোক্ত হাদীসের ভাষায় বুঝা যায় যে, মেয়েদের মসজিদে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। আর সে অধিকার তারা ভোগ ও ব্যবহার করতে চাইলে তা থেকে তাদের বঞ্চিত রাখার অধিকার কারো নেই।

 

        দ্বিতীয় ধরনের হাদীসে সুগন্ধি ব্যবহার করে মেয়েদের মসজিদে যেতে স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করা হয়েছে।

 

        আর তৃতীয় ধরণের হাদীসে মেয়েদের নামাযের জন্যে মসজিদ অপেক্ষা তাদের ঘরই শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

 

        এই সকল হাদীসের আলোকে ও নৈতিক অবনতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে হানাফী মাযহাবের মনীষীগণ এ ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত পেশ করেছেন। তাদের কথা হলো, মহিলাদের ঘর থেকে বের হওয়াই হচ্ছে নৈতিক বিপদের কারণ। আর তাই হচ্ছে হারাম কাজের নিমিত্ত। আর যা-ই হারাম কাজ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়, তাই হারাম।

 

        এ ব্যাখ্যার আলোকে বলা যায়, যারা এ কাজকে মাকরূহ বলেছেন, সে মাকরূহ মানে হারাম। বিশেষ করে বর্তমান যুগ সমাজে। কেননা এ সমাজে বিপদের আশংকা ও কারণ সর্বত্র ও সর্বাত্মক হয়ে দাড়িয়েছে। তবে ইমাম আবু হানীফার (রাহঃ) -এর মতে বৃদ্ধা মহিলারা ফজর, মাগরিব ও এশার নামাযে জামাআতে শরীক হতে পারবে।

 

        ইমাম আবু ইউসূফ (রাহঃ) ও মুহাম্মাদের মতে বৃদ্ধা মহিলারা সব রকম নামাযের জামাআতে শরীক হতে পারবে।

 

        পক্ষান্তরে “মহিলারা মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তোমরা তাদের অনুমতি দাও।” রাসূলে করীম (সাঃ) -এর এ বাণীর ব্যাখ্যায় আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী লিখেছেনঃ এ হাদীস প্রমাণ করে যে, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামাতে নামায আদায় করার অনুমতি দেওয়াই বাঞ্চনীয়। যে কাজে তার ফায়দা তা থেকে তাকে নিষেধ করা যায় না। তবে এ কথা তখনকার জন্য প্রযোজ্য যখন বাইরে গেলে মহিলাদের কোন বিপদ ঘটার কোনই আশংকা বা ভয়-ভীতি থাকবে না। এ কথার প্রমাণ হিসাবে পেশ করা হয়েছে হযরত আয়েশার (রাঃ) নিম্নোক্ত বাণীঃ এ মেয়েরা কি নতুন চাল-চলন গ্রহণ করেছে, এ যদি রাসূল করীম দেখতে পেতেন, তাহলে তিনি এদেরকে মসজিদে যেতে অবশ্যই নিষেধ করতেন। যেমন নিষেধ করা হয়েছিল বনী ইসরাঈলের মহিলাদের।

 

        এ প্রসঙ্গে ইবনে মুবারক বলেছেনঃ আজকের যুগে মেয়েদের ঈদের নামাযের জন্য বের হওয়া আমি পছন্দ করি না। যদি কোন স্ত্রীলোক বের হতে জিদ ধরে তবে তার স্বামীর উচিত তাকে অনুমতি দেওয়া এ শর্তে যে, সে তার পুরানো পোশাক পরে বের হবে। এবং অলংকারাদি পরে যাবে না। এভাবে বের হতে রাযী না হলে তাকে স্বামী নিষেধ করতে পারবে।

 

        অপরপক্ষে আল্লামা শওকানী বলেন, যারা এ কাজকে মাকরূহ বা হারাম বলেন, তাদের কথা মেনে নিলে সহীহ হাদীসকে অযৌক্তিক মত দ্বারা বাতিল করে দেয়া হয়। কেননা সহীহ হাদীসে মেয়েদের ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। এজন্য অনুমতি চাইলে স্বামী বা গার্জিয়ান অনুমতি দিতে বাধ্য এবং সে জন্য রাসূলে করীম (সাঃ) -এর নির্দেশ রয়েছে। যথা রাসুলে করীমকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “মেয়েরা কি ঈদের জামাআতে শরীক হওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হবে?” তিনি বল্লেন, “হ্যাঁ”। প্রশ্ন করা হলোঃ “যুবতী মেয়েরাও কি?” বললেন “হ্যাঁ, অবশ্যই। তার নিজের কাপড় না থাকলে তার কোনও সখীর কাপড় পড়ে বের হবে।” এসব হাদীস, মনিষীদের অভিমত ও ব্যাখ্যা দ্বারা এ কথাই বুঝা যায় যে, রাসূল (সাঃ) এ ব্যাপারে নারীদেরকে উৎসাহিত করলেও বর্তীকালে সামাজিক পরিস্থিতির অবণতি ঘটার কারণে তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবুও মহিলাদের মসজিদে যাওয়া হারাম বা মকরূহে তাহরিমী হতে পারে না। মকরূহে তাহরিমা হুকুম দ্বারা কাজটা সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যায়। তা কিভাবে হতে পারে। যেখানে মহিলাদের মসজিদে যেতে রাসুলে করীম (সাঃ) -এর নির্দেশ রয়েছে? অতএব মহিলাদের জন্য মসজিদে জামাআতে নামায আদায় করতে যাওয়া জায়িয। তবে বর্তমান নৈতিক অবনতিশীল পরিস্থিতিতে না যাওয়াই ভালো। কেননা মহিলাদের জন্য জামাআত ওয়াজিব নয়। এটাই আমাদের বিজ্ঞ মুফতীগণের অভিমত।

*******

 

 

হাফেজ মোঃ জামিল (তোহা),

ভাঙ্গা দারুঙ্গ উলুম মাদ্রাসা, ফরিদপুর।

-----------------------------------------------------------------

        প্রশ্নঃ কোন একজন আলিমের নিকট শুনেছি, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নাকি ভারতবর্ষে এসেছিলেন। আমি জানতে আগ্রহী যে, তিনি যদি ভারতবর্ষে এসে থাকেন তবে কখন, কিভাবে এবং কোথায় অবস্থান করেছিলেন?

 

       উত্তরঃ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বাবেল অঞ্চলের ‘কূছা’ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। অন্য এক বর্ণনামতে তিনি বারদানিয়া শহরের ‘উর’ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। আল্লাহর অপর কুদরতে নমরূদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি ‘দ্বীনে হানীফ’ প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রথমে কালদানী গোত্র পরে মিসর হয়ে সব শেষে ফিলিস্তীনের উপকণ্ঠে উপনীত হন। ১৭৫ বছর বয়সে সেখানেই তাঁর ইন্তেকাল হয়। ইন্তেকালের পর ওই স্থানের হাবরূন-এর ‘মাক্কালী’ নামক এক গুহায় তাঁকে দাফন করা হয়। উক্ত স্থানটি বর্তমানে “আল-খলীল” নামে পরিচিত। যা মসজিদে বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে ১৩/১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। 

 

        ইতিহাসের কোথাও একথার উল্লেখ পাওয়া যায় না যে, তিনি ভারতবর্ষে এসেছিলেন কি না। ইব্রাহীম (আঃ) -এর জীবনী সম্পন্ধে পবিত্র কুরআনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থে আলোচনা করা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য ইতিহাসেও তার সম্বন্ধে ব্যাপক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এই উপমহাদেশে এসেছিলেন কিনা সে কথা কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। মাওলানা সাহেব কোন সূত্রে এই কথাটি বল্লেন তা তাঁর কাছ থেকেই জেনে নিন।

 

********

 

 

এইচ, এম, কাওসার

গ্রামঃ দৌলতপুর, পোঃ ধরমণ্ডল,

থানাঃ নাসিরনগর, বি বাড়িয়া

-----------------------------------------------------------------

        প্রশ্নঃ কমাণ্ডার শহীদ আব্দুর রহমান ফারুকী (রাহঃ) কত সনে শহীদ হন এবং কিভাবে শহীদ হন। তার শহীদ হওয়ার ঘটনার সময় আর কোন মুজাহিদ শহীদ হয়েছেন কি। আফগানিস্তানের কোন শহরে তাকে দাফন করা হয়েছে তা আমরা জানতে আগ্রহী।

 

       উত্তরঃ কমাণ্ডার শহীদ আব্দুর রহমান ফারুকী (রাহঃ) ১৯৮৯ সালের ১০ ই মে শাহাদাৎ লাভে ধন্য হন। তিনি ওই দিন খোস্ত রণাঙ্গণে এক যুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে শত্রু শিবিরের প্রবেশ পথের মাইন তুলতে গিয়ে ইণ্ডিয়ার তৈরী ভয়ঙ্কর পার্সোনাল মাইন বিস্ফোরণে মারাত্মক ভাবে আহত হন এবং ঐ দিনই শাহাদাৎ লাভ করেন। তাঁর শহীদ হওয়ার ঘটনায় তাঁর অন্যতম সাথী বাংলাদেশী আর এক মুজাহিদ মাওলানা নুরুল করিম (রাহঃ) শহীদ হন।

        আফগানিস্তানের অন্যতম সামরিক গ্যারিসন শহর খোস্তের লিজা নামক স্থানে কমাণ্ডার আব্দুর রহমান ফারুকী (রাহঃ) -কে দাফন করা হয়।

 

******

 

 

মোঃ শামসুল হক (শামীম)

চরমোনাই কওমিয়া মাদ্রাসা, বরিশাল।

-----------------------------------------------------------------

        প্রশ্নঃ (১) বার্মা কি কোন দিন মুসলমানদের শাসনে ছিলো। থাকলে কখন তা মুসলমানদের হাত ছাড়া হয়?

 

        (২) মসজিদে আকসায় এখন কি নামাজ হয়? এটি এখন কাদের দখলে, জানতে চাই।

 

       উত্তরঃ (১) হ্যা, বার্মা প্রায় একশত বছর যাবৎ মুসলমানদের বিশেষ করে বাংলার মুসলমানদের শাসনাধীন ছিল। ১৪৩০ খৃষ্টাব্দে বাংলা থেকে গৌড়ীয় সৈন্যরা গিয়ে আরাকানের দখলদার বর্মী সৈন্যদের তাড়িয়ে দেয় এবং স্বাধীন ম্রাউক-উ রাজ বংশের পত্তন ঘটান। ১৫৩১ খৃস্টাব্দে এই বংশের দ্বাদশ পুরুষ জেবুক শাহ আরাকানের পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং এই সময়েই তিনি পুরো বার্মাকে আরাকানের অন্তর্ভুক্ত করেন যা একশ বছর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। উল্লেখ্য এই রাজবংশের সকল আমাত্য ছিল গৌড় তথা বাংলার অধিবাসী। গৌড়ের সেনারা গিয়েই আরাকানের সেনাবাহিনী গঠন করেছিল।

 

        (২) মসজিদে আকসা এখন ইহুদীদের কর্তৃক তালাবদ্ধ এবং এর চতুর্দিকে উঁচু দেয়াল ও কাঁটা তারের ঘেরা থাকায় সেখানে কোন নামাজ অনুষ্ঠিত হয় না। তবে মাঝে মাঝে মসজিদটি চত্ত্বরে জুমআর নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এই মসজিদ এখন জায়ানবাদী ইহুদীদের দখলে রয়েছে।

 

*****