"আল ফিরদাউস" পরিবেশিত
জামাতুল বাগদাদির যুক্তিখন্ডন
উস্তাদ আবু আনওয়ার আল হিন্দি হাফিজাহুল্লাহ
********************
নিচে জামাতুল বাগদাদির খিলাফাহ প্রসঙ্গে ব্যবহৃত যুক্তি নিয়ে শাইখ আব্দুল্লাহ আল মুহাইসিনি হাফিযাহুল্লাহ-র বক্তব্য এবং তাঁর আলোকে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা তুলে ধরা হল। প্রথমে আমরা শাইখের বক্তব্য উপস্থাপন করবো এবং তারপর তাঁর বক্তব্য, জামাতুল বাগদাদির বক্তব্য এবং আলোচ্য বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ-র অবস্থানের আলোকে বর্তমান অবস্থার একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরবো ইনশা আল্লাহ্।
জামাতুল বাগদাদির যুক্তিখন্ডনঃ ১
আল-বাগদাদি একজন মুতাঘাল্লিব*
শাইখ আব্দুল্লাহ আল-মুহাইসিনি
[*তাঘাল্লুব, ইমাম মুতাঘাল্লীব এবং আনুগত্য বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা, শাইখের বক্তব্যের সমাপ্ত হবার পর সংযুক্ত করা হয়েছে]
যখন বলা হয়েছিল আল-বাগদাদির “খিলাফাহ” মুসলিমদের মধ্যে শূরার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় নি, জবাবে আল-আদনানি বলেছিল “তরবারির অগ্রভাগ দিয়ে জোরপূর্বক আমরা এই খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করেছি”। তাদের [জামাতুল বাগদাদির] প্রশ্ন হল, তারা কতৃত্ব অর্জন করেছে আর শারীয়াহ দ্বারা শাসন করেছে, তাহলে কেন আমরা তাদের আনুগত্য মেনে নিচ্ছি না?
এর জবাব হলঃ
১। আল-বাগদাদি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু এলাকা জয় করতে সক্ষম হয়েছে, সকল মুসলিম ভূমি না।
২। আমরা জামাতুল বাগদাদির জিজ্ঞেস করতে চাই, তোমরা কি আল-বাগদাদিকে খালিফাহ মনে করো? নাকি ইমাম মুতাঘাল্লীব [জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারী নেতা] মনে করো? যদি সে খালিফাহ হয়ে থাকে, তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মানহাজের উপর নেই। কারণ খিলাফাহ (মুসলিমদের উপর জোর খাঁটিয়ে) প্রতিষ্ঠা করা হয় না।
৩। যদি সে আসলে ইমাম মুতাঘাল্লীব হয়ে থাকে, তাহলে আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই, আহলুল ‘ইলমের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা বলেছেন মুতাঘাল্লীব ব্যক্তি ফাসেক। ইবন হাজার আল-হায়তামী, আল-সাওয়া’ইক্ব আল মুহরিক্বা [যা শি’আদের যুক্তিখন্ডনের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল] কিতাবের ষষ্ঠ পৃষ্ঠায় বলেছেন:
মুতাঘাল্লীব শাসক একজন ফাসেক ব্যক্তি যাকে শাস্তি দেয়া উচিত। সে যাদের উপর শক্তি অর্জন করেছে তাঁদেরকে নাসীহাহ করা এবং আমর বিল মারুফের কোন যোগ্যতা রাখে না। বরং তাঁকে প্রত্যাখ্যান ও কাবু করা উচিত, এবং তার অন্যায় এবং নিন্দনীয় অবস্থা সম্পর্কে মানুষকে অবশ্যই জানাতে হবে।
যদি তোমরা দাবি করো যে আল-বাগদাদি একজন ইমাম মুতাঘাল্লীব/মুতাঘাল্লীব শাসক, তাহল তোমাদের তার ফাসেকী এবং তার ফাসেক হওয়াকে স্বীকার করে নেয়া উচিত। তোমরা কি এটা স্বীকার করবে? যারাই বলছে এই খিলাফাহ তাঘাল্লুবের [বলপ্রয়োগে কতৃত্ব অর্জন] মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারা প্রকৃত পক্ষে এই দাবিই করছে যে আল-বাগদাদি হল এক ফাসেক ব্যক্তি।
৪। আহলুল ‘ইলমের বক্তব্য হল, কোন মুসলিমের উচিত না একজন মুতাঘাল্লীব শাসককে সাথে যুক্ত হওয়া কিম্বা তাকে সমর্থন করা। তাহলে কেন তোমরা আল-বাগদাদীর ভূমিতে মুসলিমদের হিজরত করার জন্য আহবান জানাচ্ছো?
বরং সমীচিন হল এটিই যে আল-বাগদাদিকে শক্তিপ্রয়োগে ঐ সব অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করতে হবে যেগুলোর উপর সে সম্পূর্ণ কতৃত্ব অর্জন করে নি। একারণে, শামের দলসমূহকে অবশ্যই বাগদাদিকে প্রতিহত ও বিতাড়িত করতে হবে, কারণ সে একজন ফাসেক ও মুতাঘাল্লীব।
[শাইখের বক্তব্য সমাপ্ত]
__________
শাইখের বক্তব্য নিয়ে বিশ্লেষণের আগে, আলোচনার প্রেক্ষাপট এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলে নেয়া প্রয়োজন। জামাতুল বাগদাদী যখন “খিলাফাহ” প্রতিষ্ঠার দাবি করা শুরু করে, এবং এই প্রতিষ্ঠিত “খিলাফাহ”র ভিত্তিতে বাইয়াহ দাবি করে, এবং তাদেরকে বাইয়াহ দেয়াকে ওয়াজিব বলা শুরু করে এবং বাইয়াহ-র ভিত্তিতে বন্ধুত্ব ও শত্রুতার নীতি গ্রহণ করে, তখন বর্তমান সময়ের আহলুল ‘ইলম এবং আহলুল জিহাদের পক্ষ থেকে জামাতুল বাগদাদীকে জিজ্ঞেস করা হয় তাদের এই “প্রতিষ্ঠিত খিলাফাহ” প্রকৃতপক্ষে কি ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? উম্মাহ-র ইতিহাস থেকে আমরা জানি তিনভাবে একজন ব্যক্তি খালিফাহ মনোনীত হতে পারেন।
১। মুসলিমদের আহলুল হাল্ল ওয়াল আক্বদের [কতৃত্ব ও শক্তি] শূরার মাধ্যমে। আবু বাকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এই পদ্ধতিতে খালিফাহ নির্ধারিত হয়েছিলেন। উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-ও আহলুল হাল্ল ওয়াল আক্বদের শুরার মাধ্যমে খালিফাহ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবং আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু একইভাবে খালিফাহ নির্বাচিত হয়েছিলেন, কারণ তাঁর ক্ষেত্রে অধিকাংশ আহলুল হাল্ল ওয়াল আক্বদ একমত হয়েছিলেন, মুআউয়ী’আ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর সমর্থকরা ব্যতীত।
২। যখন পূর্ববর্তী খালিফাহ, তাঁর উত্তরসূরি নির্ধারণ করে দেন, যেমন আবু বাকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, উমার ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লহু আনহুকে নির্বাচন করেছিলেন। বর্তমান সময়ের জন্য এই পদ্ধতি প্রযোজ্য না, কারণ এখন খিলাফাহ নেই।
৩। তাঘাল্লুবের মাধ্যমে। তাঘাল্লুব অর্থ, জোরপূর্বক কতৃত্ব অর্জন। অর্থাৎ মুসলিমদের উপর বলপ্রয়োগের মাধ্যমে, জোরপূর্বক নিজেকে শাসক বানিয়ে নেয়া। তাঘাল্লুবের মাধ্যমে কতৃত্ব অর্জনকারী শাসক বা ইমামকে বলা হয় ইমাম মুতাঘাল্লীব। উমাইয়্যা এবং আব্বাসী খালিফাহদের মধ্যে অনেকে তাঘাল্লুবের মাধ্যমে নিজেদের শাসক বানিয়ে নিয়েছিলেন।
জামাতুল বাগদাদীকে আহলুল ‘ইলম ও আহলুল জিহাদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কোন পদ্ধতিতে তারা তাদের এই “খিলাফাহ” প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং কিসের ভিত্তিতে তারা বলছে এই “খালিফাহ”-কে বাইয়াহ দেয়া ওয়াজিব, এবং বাইয়াহ দেয়া না দেয়ার ভিত্তিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং তাঁদের রক্ত ঝরাচ্ছে? কারণ, এটা পরিষ্কার যে আল-বাগদাদীকে “খালিফাহ” নির্বাচনের আগে, জামাতুল বাগদাদী আহলুল ‘ইলম ও আহলুল জিহাদের অন্তর্গত কারো সাথেই কোন শূরা করেনি, এবং একারণে আহলুল হাল্ল ওয়াল আক্বদের শূরার মাধ্যমে খালিফাহ নির্ধারণের পদ্ধতি [অর্থাৎ উপরের ১ নং] অনুসৃত হয় নি। আর ২ নং পদ্ধতি আজ প্রযোজ্য না। বাকি থাকে শুধুমাত্র ৩ নং পদ্ধতি বা তাঘাল্লুব।
এই প্রশ্নের জবাবে জামাতুল বাগদাদীর মুখপাত্র আল-আদনানী বলে “আমরা তরবারির অগ্রভাগ দিয়ে এই জোরপূর্বক এই খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করেছি”। এর মাধ্যমে আল-আদনানী স্বীকার করে নেয় যে জামাতুল বাগদাদি আহলুল হাল্ল ওয়াল আক্বদের সাথে শূরার পদ্ধতি অনুসরণ করে নি যা খুলাফায়ে রাশিদার সময় অনুসৃত হয়েছে। সে আরো স্বীকার করে যে তারা তাঘাল্লুবের পদ্ধতি অনুসরণ করেছে, কারণ সে বলেছে, “আমরা তরবারির অগ্রভাগ দিয়ে এই জোরপূর্বক এই খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করেছি”। এর মাধ্যমে এটাও সে স্বীকার করে নিলো যে তারা যদিও দাবি করে থাকে তাদের এই “খিলাফাহ” প্রতিষ্ঠা হয়েছে ‘আলা মানহাজুন নাবুওয়্যাহ” [নাবুওয়্যাতের মানহাজের উপর], কিন্তু তাদের এই দাবি প্রকৃতপক্ষে মিথ্যা, কারণ মুসলিমদের উপর বলপ্রয়োগ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মানহাজ না, বরং এটা হল আল-হাজ্জায, তাতার, আহলুল বিদ’আ শি’আ-রাফিদা এবং আহলুল গুলুহ ও খাওয়ারিজদের মানহাজ।
এখানে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষণীয়। একথা সত্য যে আহলুল ‘ইলমের অন্তর্ভুক্ত অনেক ব্যক্তিই বলেছেন যদি সে শারীয়াহ অনুযায়ী শাসন করে এবং তাকে বিতাড়িত করতে গিয়ে যদি ব্যপকভাবে মুসলিমদের রক্ত প্রবাহিত হবার সম্ভাবনা থাকে, তবে ইমাম মুতাঘাল্লীবকে মান্য করতে হবে। এবং জামাতুল বাগদাদীর সদস্য ও সমর্থকরা এই যুক্তি ব্যবহার করে। কিন্তু সকল আহলুল বিদ’আর মতোই তারা এক্ষেত্রে খন্ডিতভাবে দালীল উপস্থাপন করে, এবং নিজেদের সুবিধামতো তার ব্যাখ্যা করে।
এখানে যে বিষয়টি তারা এড়িয়ে যায়, তা হল মুতাঘাল্লীবের আনুগত্য করার কথা উলেমা তখন বলেছেন যখন সে সম্পূর্ণ ভাবে কতৃত্ব অর্জন করবে। উলেমাদের পূর্ণ বক্তব্য হলঃ যখন মুসলিমদের উপর বলপ্রয়োগের মাধ্যমে, যুদ্ধের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি মুসলিমদের উপর সম্পূর্ণভাবে কতৃত্ব অর্জন করবে, এবং তার বিরোধী সকল সশস্ত্র মুসলিম দলকে পরাজিত করবে, এবং মুসলিম ভূমির উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করবে – তখন তার আনুগত্য করা উচিত, কারণ এমন অবস্থায় তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে গেলে পুনরায় মুসলিম রক্ত প্রবাহিত হবে এবং ফিতনা বৃদ্ধি পাবে। তাই মুসলিমদের জান ও মাল সংরক্ষণ, ফিতনা কমানো এবং স্থিতিশীলতার স্বার্থে এক্ষেত্রে মুতাঘাল্লীবের আনুগত্য করতে হবে। [বিস্তারিত জানার জন্য আহকামুল সুলতানিয়্যাহ দ্রষ্টব্য]
যেমন আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, ততোক্ষণ পর্যন্ত আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ানকে বাইয়াহ দেন নি এবং খালিফাহ হিসেবে স্বীকার করেন নি, যতক্ষণ আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জীবিত ছিলেন এবং মক্কার উপর কতৃত্ব রাঃ প্রতিষ্ঠিত ছিল। আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নিহত হবার পর, এবং মক্কা ও হিজাযের উপর সম্পূর্ণ কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পরই কেবল আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ানকে বাইয়াহ দেন। কারণ এসময় ইবন মারওয়ানের প্রতি আর কোন সশস্ত্র বিরোধিতা আহলুস সুন্নাহ-র পক্ষ থেকে ছিল না, সে সম্পূর্ণভাবে কতৃত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল, এবং মুসলিমদের ভূমি নিয়ন্ত্রনে এনেছিল।
উপরের কোনটাই কি আল-বাগদাদির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?
সকল সশস্ত্র মুসলিম দলকে কি সে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছে? উত্তর হল, না। শামে এখনো বিভিন্ন মুসলিম দল আছে, যার বাশার এবং আল-বাগদাদি উভয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, এবং মুসলিমদের নিরাপত্তা দিচ্ছে, এইসব দলের অধীনে ভূমি আছে এবং শারীয়াহর মাধ্যমে তাঁরা এসব জায়গায় বিচার করছে, যেমন জাবহাতুন নুসরা এবং জুন্দুল আক্বসা।
সে কি শামের বা ইরাকের সকল ভূমি নিয়ন্ত্রনে এনেছে? এর উত্তরও হল, না। বরং আলেপ্পোতে জামাতুল বাগদাদি নুসাইরিদের পাশেই সহাবস্থান করছে। তুর্কি সীমান্তে কুর্দি মুরতাদিনের কাছে পরাজিত হচ্ছে আর ইরাকে শি’আ হাসাদ মিলিশিয়ার কাছে ভূমি হারাচ্ছে এবং আহলুস সুন্নাহকে রাফিদাদের হাত থেকে বাঁচাতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাহলে কিভাবে এই ব্যক্তি সম্পূর্ণ কতৃত্ব অর্জনের দাবি করতে পারে আর তাকে বাইয়াহ দেয়া ওয়াজিব আর তার বিরোধিতা করা কুফর এই দাবি করতে পারে? তার অবস্থা তো মক্কা বিজয়ের পূর্বে আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ানের যে অবস্থা ছিল তার চাইতেও দুর্বল। যদি আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইবন মারওয়ানকে বাইয়াহ না দিয়ে থাকেন তাহলে কেন আজকে আহলুস সুন্নাহ বাগদাদিকে বাইয়াহ দিতে বাধ্য হবে? কেন আজ বাগদাদিকে বাইয়াহ দেয়া ওয়াজিব? আর তাকে বাইয়াহ না দিলে “জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু” হবে, যেমনটা তার সমর্থকরা দাবি করে? যদি আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ানকে বাইয়াহ না দেয়া অবস্থায় আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যু হত, তবে কি তিনি জাহিলিয়্যাতের উপর মৃত্যুবরণ করতেন? নাউযুবিল্লাহ! প্রকৃতপক্ষে তারা কথা বলে ‘ইলম এবং বিবেচনাবোধ ছাড়া এবং তাদের উদাহরণ হল সেই অন্ধ ব্যক্তিদের নেয়, যাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্য কিছু অন্ধ ব্যক্তি।
এছাড়া একথা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে সম্পূর্ণ কতৃত্ব অর্জনের পর ইমাম মুতাঘাল্লীবের আনুগত্যের ব্যাপারে উলেমা যে মত দিয়েছেন তা এটাকে ওয়াজিব বলে সাব্যস্ত করে না। ফিতনা দূরীকরণ, মুসলিম রক্ত সংরক্ষণ এবং স্থিতিশীলতার স্বার্থে মাসলাহা বিবেচনা করে উলেমা এই মত দিয়েছেন। এর অর্থ এই না যে সম্পূর্ণ কতৃত্ব অর্জনের পর আনুগত্য দিতেই হবে, দেয়া ওয়াজিব আর না দেয়া কুফর। আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইরের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বিরোধিতা কি কুফর ছিল? নাউযুবিল্লাহ। অর্থাৎ উলেমার এই মতের উপর ভিত্তি করে এই কাজকে ঢালাওভাবে ওয়াজিব এবং আনুগত্য না করাকে কুফর কিম্বা ফিসক বলা যাবে না। বরং সাইয়্যেদিনা হোসেইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, ইয়াযিদের আনুগত্য স্বীকার করেন নি, যদিও ইয়াযিদের সম্পূর্ণ কতৃত্ব ছিল। আব্বাসিরা উমাইয়্যাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছিল যখন উমাইয়্যাদের সম্পূর্ণ কতৃত্ব ছিল। আব্বাসিদের এই কাজকে কেউ কুফর বলে নি। মু’আউয়ীআ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, এবং আয-যুবাইর, তালহা এবং উম্মুল মু’মিনিন আইশা রাদীয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা ইজমাইন, যুদ্ধ করেছেন – কিন্তু কাউকে খালিফাহ-র বিরোধিতা করার জন্য কাফির বলা হয় নি। কেউ বলে নি আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শারীয়াহ অনুযায়ী শাসন করা খালিফাহ তাই তাঁর রাঃ বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কুফর। আহলুস সুন্নাহ-র ১৪০০ বছরের ইতিহাসে কেউ দাবি করে নি খালিফাহ-র বিরোধিতা করা কুফর।
অথচ আল-আদনানি ৫ই রামাদ্বানের [১৪৩৬ হিঃ] বক্তব্যে বলছে –“ হুশিয়ার দাউলাতুল ইসলামিয়্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারণে তুমি কুফরে পতিত হবে, তুমি তা অনুধাবন করো আর না করো”। আর কিছুদিন আগে প্রকাশিত সর্বশেষ বক্তব্যে সে আরও অগ্রসর হয়ে বলেছে বাইয়াহ দেয় নি এমন সব মুসলিম দলের বিরুদ্ধে জমাতুল বাগদাদি যুদ্ধ করবে, এবং তারা এইসব দলকে “বিচ্ছিন করবে”, তাদের একতা ধ্বংস করবে, এবং “ধারালো ছুড়ি” আর “বক্ষ বিদীর্ণকারী বুলেটের” ভাষায় তারা বাইয়াহ না দেয়া সকল মুসলিম দলের সাথে কথা বলবে।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ যথার্থই বলেছেনঃ
“আহলুল বিদ’আর বৈশিস্ট হল তারা দ্বীনের মধ্যে কোন একটি নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে এবং তারপর এই নব উদ্ভাবিত বিষয়কে দ্বীনের মধ্যে ওয়াজিব করে নেয়। তারপর এসব নব উদ্ভাবিত বিষয়কে আক্বীদার অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নেয়। আর একারণে মুসলিমদের ভেতর থেকে যারা এসব বিষয়ে তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করে তাদের উপর তাকফির করে, এবং তাঁদের রক্ত হালাল ঘোষণা করে, যেরকম খাওয়ারিজ এবং জাহমিয়্যাহরা করেছিল।“ [মাজমু’ আল ফাতাওয়া]
যদি আমরা তর্কের খাতিরে ধরেও নেই বাগদাদি “খালিফাহ”, তাহলেও তারা এই ফাতাওয়া কিসের ভিত্তিতে দিচ্ছে যে বাগদাদির বিরোধিতা করা কুফর? আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কুফর না, কিন্তু বাগদাদির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কুফর? বাগদাদি কি সাইয়্যেদিনা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর চাইতে উত্তম হয়ে গেলো? লা হাওলা ওয়ালা কু’আতা ইল্লাহ বিল্লাহ। ওয়াল্লাহী ! ১৪০০ বছরে আহলুস সুন্নাহ-র কেউ এরূপ কোন কথা দ্বীনে উদ্ভাবন করে নি। বরং ইতিহাস সাক্ষি দেয় এরকম কথা হল খাওয়ারিজ-হারুরিয়্যাহ, আর শি’আদের অন্তর্গত, রাফিদা-বাতেনিয়া-কারামাতিয়্যাদের বৈশিষ্ট্য। ওয়াল্লাহী ! ইতিহাসে খাওয়ারিজ-শি’আ-রাফিদা ছাড়া আর কেউ এরকম দাবি করে নি। নিশ্চিত ভাবেই আহলুস সুন্নাহ করে নি।
অথচ আজ জামাতুল বাগদাদি এবং তাদের সমর্থকরা বলছে তারা আহলুস সুন্নাহর প্রতিনিধিত্ব করে, এবং তারা নাবুওয়্যাতের মানহাজে আছে। ওয়াল্লাহী! এটা সুস্পষ্ট মিথ্যাচার! নাবী কারীম ﷺ , সালাফ-সালেহীন এবং আহলুস সুন্নাহ এই বিচ্যুতি এবং গোমরাহি থেকে মুক্ত – এবং সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ-ই আমাদের জন্য যথেষ্ট।
এই প্রেক্ষাপটে শাইখ মুহাইসিনি হাফিযাহুল্লাহ – বাইয়াহ দাবি করা, বাগদাদিকে বাইয়াহ দেয়া ওয়াজিব দাবি করা, এবং বাইয়াহ দেয়া না দেয়ার ভিত্তিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, তাঁদের রক্ত ঝরানো ও তা হালাল করা, জামাতুল বাগদাদির বিরোধিতা করাকে কুফর দাবি করা, বাগদাদির প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে আল ওয়ালা ওয়াল বারা’ নির্ধারণ করা – ইত্যাদি বিষয়ে জামাতুল বাগদাদির যুক্তি খন্ডন করেছেন। আর এই যুক্তিখন্ডনের প্রথম অংশ মহান আল্লাহ-র ইচ্ছায় আজ প্রকাশিত হল।
জামাতুল বাগদাদির যুক্তিখন্ডনঃ ২
“দাওলাহ হক্ব কারণ শত্রুরা তাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে!”
শাইখ আব্দুল্লাহ আল-মুহাইসিনি
জামাতুল বাগদাদির সদস্য এবং সমর্থকরা বলেঃ
আইসিস যদি হক্বের উপর না থাকে, তাহলে কেন আল্লাহ-স শত্রু কুফফার আইসিসের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে। ওয়ারাকা বিন নাওফাল, রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলেছিলেনঃ “ তুমি যে ধরণের বাণী পেয়েছো, এ ধরণের বাণী যখনই কেউ পেয়েছে, তার সাথে শত্রুতা করা হয়েছে”
এই বিভ্রান্তির জবাবঃ
১। প্রথমত এরকম একটি বিভ্রান্তিকে হক্বপন্থি হওয়া বা মানহাজের সঠিক কিম্বা ভুল হবার স্বপক্ষে দালীল হিসেবে উপস্থাপন করা প্রকৃতপক্ষে জামাতুল বাগদাদীর বিচ্যুতি, বিভ্রান্তি, খাহেশাতের অনুসরণ, এবং অসুস্থ হৃদয়সমূহের পরিচায়ক।আল্লাহ্ আযযা ওয়া জাল বলেছেনঃ
هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّـهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ ﴿٧﴾
তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর।[আলে ইমরান, আয়াত ৭]
আইশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেছেনঃ
“যদি তুমি সেসব লোকেদের দেখতে পাও যারা মুতাশাবীহাত [সংশয়পূর্ণ রূপক আয়াত] অনুসরণ করে, তাহলে বুঝবে এরাই সেসব লোক যাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ আমাদের সতর্ক করেছেন।“
কুর’আন-সুন্নাহ এবং সালাফদের মানহাজের ভিত্তিতে কে হক্বপন্থী আর কে বাতিলপন্থী তা বিচার করা হয়। জামাতুল বাগদাদির বাতিল হওয়া শারীয়াহ দ্বারা প্রমাণিত, তাই এধরণের হাজার “প্রমাণ” তাদের কাজে আসবে না।
২। দ্বিতীয়ত, শত্রুতা কখনো সত্য বা মিথ্যার প্রমাণ, পরিচায়ক বা মাপকাঠি হতে পারে না। যদি শত্রু সংখ্যা কারো সত্য হবার প্রমাণ হতো, তাহলে তো গাদ্দাফি বিরাট হক্বপন্থী ছিল। সারা পৃথিবী তার বিরুদ্ধে শত্রুতার ঘোষণা করেছিলম এবং তাকে উৎখাত করেছিল। এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে, এরকম আরো অনেক দল আর ব্যক্তি আছে যাদের বিরুদ্ধে অনেক শত্রু একত্রিত হয়েছিল, কিন্তু সেটা তাদের হক্বপন্থি বানিয়ে দেয় নি। সুতরাং যাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা ঘোষণা করা হয় তারা সবাই হক্বপন্থি না। তবে সকল হক্বপন্থিকে নিঃসন্দেহে শত্রুতার মুখোমুখি হতে হয়।
৩। তৃতীয়ত, ওয়ারাকা বিন নাওফালের বক্তব্যের অর্থ এই না যে, নিজেকে হক্ব প্রমাণ করার জন্য একজন ব্যক্তির উচিৎ সবার সাথে শত্রুতা শুরু করা। একমাত্র আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কথার অনুসরণের মাধ্যমে কারো সত্যের উপর থাকা প্রমাণিত হয়। পবিত্র রক্তকে সম্মান করা, এবং মুসলিমদের উপর তাকফির করা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমেই সত্যের উপর চলার প্রমাণ পাওয়া যায়। খন্দকের যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ হুযাইফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছিলেনঃ
“তাদেরকে [শত্রুদের] উসকে [provoke] দিয়ো না।“
তার মানে কি রাসূলুল্লাহ ﷺ সত্যের উপর ছিলেন না?! [জামাতুল বাগদাদির যুক্তি অনুযায়ী – অর্থাৎ হক্বের মাপকাঠি হল শত্রু সংখ্যার আধিক্য] কারণ তিনি শত্রুদের নিষ্ক্রিয় করতে চেয়েছিলেন? নাকি যখন তিনি ﷺ মাদীনার ইহুদীদের সাথে চুক্তি করেছিলেন, তখন তিনি ﷺ সত্যের উপর ছিলেন না? রাসূলুল্লাহ ﷺ কি সত্য থেকে অনেক দূরে ছিলেন?! নাউযুবিল্লাহ।
৪। বাতিল কখনো বাতিলের মোকাবেলা করতে পারে না। সমগ্র পশ্চিমা বিশ্ব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিল, এবং গোটা বিশ্ব তাদের সমর্থন দিয়েছিল। জার্মানির বিরুদ্ধে পৃথিবী কাঁপানো এই যুদ্ধে কোটি কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর অর্থ এই না যে জার্মানি হক্বের উপর ছিল, বা জার্মানির মানহাজ বিশুদ্ধ ছিল।
৫। পঞ্চমত, মুজাহিদিন শত্রুর মুখোমুখি হচ্ছেন। তাদের সবদিক থেকে আক্রমণ করা হচ্ছে, আর জামাতুল বাগদাদী মুজাহিদনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, আর মুজাহিদিন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। কিন্তু তাদের আচরণ এবং মানহাজ জামাতুল বাগদাদির আচরণ এবং মানহাজ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
৬। যদি জামাতুল বাগদাদির এই যুক্তিকে আমরা মেনে নেই, তাহলে এই যুক্তি অনুযায়ী তো অবশ্যই আল-ক্বাইদা ও তালিবান হক্বের উপর আছে। কারণ সমগ্র বিশ্ব তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। সুতরাং, জামাতুল বাগদাদীর এই যুক্তি অনুযায়ী নিঃসন্দেহে আল-ক্বাইদা এবং তালিবান হক্বের উপর আছে। কিন্তু জামাতুল বাগদাদী আর আল-ক্বাইদার আক্বিদা ও মানহাজ তো ভিন্ন। জামাতুল বাগদাদীর মতে আল-ক্বাইদার মানহাজ বাতি। তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব হয়?
৭। সপ্তমত, এরকম ভুল যুক্তির বদলে আমরা বরং এই বলি যেঃ
এই উম্মাহ এবং উলেমা কোন বিষয়ের বিবেচনা করেন, সেটাকে কুর’আন ও সুন্নাহ-র আলোকে মিথ্যা প্রমাণ করা যায় নাকি তার ভিত্তিতে। অর্থাৎ যদি কুর’আন ও সুন্নাহর আলোকে মিথ্যা না প্রমাণ করা যায় তবে সেটা হক্ব বলে পরিগণিত হবে। আর জামাতুল বাগদাদীর বাতিল হওয়া বিভিন্ন দিক থেকে, বিভিন্ন ভাবে প্রমাণিত, এবং এ বিষয়ে উম্মাহ এবং আলেমগণ একমত।
[শাইখের বক্তব্য সমাপ্ত]
___
প্রাসঙ্গিক আলোচনাঃ
শাইখের উপরোক্ত যুক্তিখন্ডনের আলোকে জামাতুল বাগদাদির এই বক্তব্যের দিকে একটু তাকানো যাক।
জামাতুল বাগদাদীর সমর্থক ও সদস্যরা যে “যুক্তি” সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে সেটা হল এটাঃ “যদি আমরা হক্বের উপর না থাকি তাহলে কেন সারা বিশ্ব আমাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে।“
অথচ না কুর’আন, না সুন্নাহতে, এটাকে কারো হক্বপন্থী হবার প্রমাণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ, শুধুমাত্র সবার শত্রুতা কাউকে হক্ব বা বাতিল প্রমাণের জন্য যথেষ্ট না। কুর’আন ও সুন্নাহ অনুযায়ী যদি কেউ হক্ব পথে থাকে, এবং তারপর শত্রুরা তার বিরুদ্ধে একত্রিত হয়, তখন এই শত্রুতা তাদের পক্ষে একটি ইঙ্গিত হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু কখনো সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে না। আর যদি কুর’আন ও সুন্নাহ অনুযায়ী কেউ বাতিল হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে সমগ্র সৃস্টিজগত এক হওয়া তাকে হক্বপন্থী বানাতে পারবে না। মূল মাপকাঠি কুর’আন এবং সুন্নাহ, মূল মাপকাঠি শত্রুতা বা শত্রু সংখ্যা না। অথচ জামাতুল বাগদাদি কুর’আন সুন্নাহ কে রেখে এটাকে হক্বের মাপকাঠি এবং দালীল বানিয়ে নিয়েছে।
-এটা প্রকৃতপক্ষে আহলুল বিদ’আর একটি চিরাচরিত বৈশিস্ট। তারা কুর’আন- সুন্নাহ বাদ দিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো দ্বীনের মধ্যে নতুন মাপকাঠি তৈরি করে নেয়।। খাওয়ারিজ, রাফিদা, বাতেনী, জাহমিয়্যাহ সহ যতো বাতিল ও বিদ’আতি ফিরকা আছে, তারা সবাই এই কাজ করেছে। তারা দ্বীনের মধ্যে নতুন মাপকাঠি উদ্ভাবন করেছে নিজেদের খেয়াল-খুশি আর সুবিধামতো। আজকেও এরকম দল আছে, যারা জনসমর্থনকে হক্ব হবার দালীল মনে করে, কিম্বা তাগুত কতৃক নিষিদ্ধ হওয়াকে হক্ব হবার দালীল মনে করে, নেতাকর্মীর জেলে থাকা বা ফাঁসি হওয়াকে হক্ব হবার দালীল মনে করে। কিন্তু এগুলোর কোনটাই কুর’আন সুন্নাহ থেকে প্রমাণিত না এবং প্রকৃতপক্ষে, তারা এগুলো নিজেরা উদ্ভাবন করেছে।
-তীব্র শত্রুতা এবং বিরোধিতা যদি হক্বের মানদন্ড হয়, তাহলে তো মানসুর আল হাল্লাজও হক্বপন্থী ছিল। খালীফাহ তার বিরুদ্ধে গেছে, তৎকালীন আলেমরা তার বিরুদ্ধে গেছে, জনগণ তার বিরুদ্ধে গেছে, কিন্তু সে তো শুধু ঘুরে ঘুরে দাওয়াহ করছিল।
““ তুমি যে ধরণের বাণী পেয়েছো, এ ধরণের বাণী যখনই কেউ পেয়েছে, তার সাথে শত্রুতা করা হয়েছে”
জামাতুল বাগদাদির মতে নাওফাল ইবন ওয়ারাকার এই উক্তি অনুযায়ী নিজেকে আল্লাহ দাবিকারী মানসুর আল হাল্লাজ ও হক্বপন্থী ছিল? সবাই তার বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিল অথচ সে শুধু মানুষকে দাওয়াহ দিচ্ছিলো? তাহলে সে হক্ব?! লা হাওলা ওয়ালা কু’আতা ইল্লাহ বিল্লাহ।
-আহলুল বিদ’আর আরেকটি বৈশিষ্ট হল, তারা দালীল বোঝে না। তারা দালীল উপস্থাপন করে কিন্তু তার তাৎপর্য ও অর্থ বোঝে না। মু’তাযিলারা ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহকে, “কুর’আন সৃষ্ট” তাদের এই কুফর বিশ্বাসের স্বপক্ষে এই আয়াত দিয়ে দালীল দিয়েছিলঃ
مَا يَأْتِيهِم مِّن ذِكْرٍ مِّن رَّبِّهِم مُّحْدَثٍ إِلَّا اسْتَمَعُوهُ وَهُمْ يَلْعَبُونَ ﴿٢﴾
“তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে যখনই কোন নতুন উপদেশ আসে, তারা তা খেলার ছলে শ্রবণ করে।“ [আল-আম্বিয়া, আয়াত ২]
তারা আয়াত সঠিক ভাবে উদ্ধৃত করেছিল কিন্তু তাদের প্রয়োগ ভুল ছিল। আহলুল বিদ’আ মিলাদের পক্ষে বিভিন্ন দালীল পেশ করে। যেমন সোমবার রাসূলুল্লাহ ﷺ সিয়াম পালন করতেন কারণ এই দিন ছিল তাঁর ﷺ জন্মদিন ! তাই আমাদেরও তাঁর জন্মদিন পালন করা উচিত। নাউযুবিল্লাহ। সোমবার যে রাসূলুল্লাহ ﷺ সিয়াম পালন করতেন, এই দালীল তারা সঠিক উথাপন করেছে কিন্তু ব্যাখ্যা করেছে ভুল।খাওরারিজ সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাকফির করার সময়য় যে দালীল উপস্থাপন করেছিল [হুকুমাত শুধু আল্লাহ-র জন্য] সেটা সঠিক, কিন্তু তাদের প্রয়োগ ছিল ভুল।
একইভাবে ওয়ারাকা বিন নাওফাল যে এ কথা বলেছেন তা সত্য, এবং জামাতুল বাগদাদি এটা সঠিক ভাবে উদ্ধৃত করেছে, কিন্তু তারা এমন ব্যাখ্যা করেছে এবং এ থেকে কিয়াস করে এমন এক নতুন বিষয় দ্বীনে এনেছে যা তাদের স্বীয় মস্তিস্কপ্রসূত।
–তর্কের খাতিরে যদি নাওফাল বিন ওয়ারাকার এইকথার আলোকে আমরা ধরেও নেই যে শত্রুতা ও শত্রু সংখ্যা কারো হক্ব হবার মাপকাঠি হতে পারে, তাও কি সেটা জামাতুল বাগদাদীর ক্ষেত্রে কিয়াস যোগ্য? দেখা যাক নাওফাল আসলে কি বলেছেন?
““ তুমি যে ধরণের বাণী পেয়েছো, এ ধরণের বাণী যখনই কেউ পেয়েছে, তার সাথে শত্রুতা করা হয়েছে”
সিরাহ থেকে আমরা জানতে পারি, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথম ওয়াহী নাযিলের পর ওয়ারাকার কাছে যান, যিনি ইঞ্জিল ও তাওরাতের ব্যাপারে সঠিক ও গভীর জ্ঞান রাখতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ হেরা গুহায় যা ঘটেছে তা বিস্তারিত নাওফালের কাছে বর্ণনা করেন। শোনার সাথে সাথে নাওফাল হেরা গুহায় আগমনকারীকে “নামুস আল-আক্ববার” বা রূহ-উল-ক্বুদ্দুস জিব্রিল আলাইহিস সালাম বলে চিনতে সক্ষম হন। যার প্রেক্ষিতে তিনি বুঝতে সক্ষম হন, যা নাযিল হচ্ছে তা প্রকৃতপক্ষে মালিকুল মুলক আল্লাহ আযযা ওয়া জালের পক্ষ থেকে ওয়াহী। এবং তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলেন, যে তাঁর সাধ হয় যখন কুরাইশ রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বিতাড়িত করবে তখন জীবিত থাকার। উল্লেখ্য ওয়ারাকা এসময় বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ এই কথা শুনে বিস্মিত হন। কিভাবে কুরাইশ তাদের সম্ভ্রান্ত গোত্রের, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির সম্মানিত সন্তানকে বিতাড়িত করতে পারে? তখন ওয়ারাকা বিন নাওফাল আলোচ্য উক্তিটি করেন।
““ তুমি যে ধরণের বাণী পেয়েছো, এ ধরণের বাণী যখনই কেউ পেয়েছে, তার সাথে শত্রুতা করা হয়েছে”
সম্মানিত ভাইরা, লক্ষ্য করুন, “তুমি যে ধরণের বানী পেয়ছে” বলতে এখানে কি বোঝানো হচ্ছে? জিব্রিল আলাইহিস সালাম যে ওয়াহী নিয়ে এসেছিলেন – অর্থাৎ কুর’আন – সেটাকে বোঝানো হচ্ছে। ওয়ারাকা বলছেন যখনই কারো উপর ওয়াহী নাযিল হয়েছে, তখন তাঁর সাথে শত্রুতা করা হয়েছে। একথা সত্য। এবং হাদীস থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন সবচেয়ে বেশি শত্রুতা ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয় নাবী-রাসূলরা। জামাতুমাউল বাগদাদী কি দাবি করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে যে বানী হয়েছিল, তাদের কাছে এমন কিছু নাযিল হয়? নাউযুবিল্লাহ।
ওয়ারাকা কি বলেছিলেন যখনই কোন দল নিজেদের একমাত্র বৈধ জামা’আ দাবি করে, নিজেদের খিলাফাহ দাবি করে তখন তাদের শত্রুতা করা হয় – তাই তারা হক্ব?
কিয়াসের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। নিজের ইচ্ছেমত মিলিয়ে দিলে হয় না। প্রথমত দেখতে হয় যে মূল দালীল থেকে কিয়াস করা হচ্ছে, তাঁর সাথে যে বিবেচ্য বিষয়ের উপর কিয়াস প্রয়োগ করা হচ্ছে তার মিল আছে কি না। এবং দুটি ক্ষেত্রে মূল অন্তর্নিহিত বাস্তবতা এবং উদ্দেশ্য একই কি না। এক্ষেত্রে দেখুন যে ঘটনা থেকে কিয়াস করা হচ্ছে – অর্থাৎ ওয়ারাকার বক্তব্য – তা বলা হয়েছে একজন নাবী কে এবং ওয়াহীর ব্যাপারে। এই দুটি বিষয় সম্পূর্ণভাবে সন্দেহের ঊর্ধ্ব। কিন্তু নাবী ছাড়া আর কোন ব্যক্তি বা সংগঠন সন্দেহের ঊর্ধ্বে না, এবং ভুলত্রুটি মুক্ত না। একইভাবে ওয়াহী হল রাব্বুল ‘আলামীনের পক্ষ থেকে। ওয়াহীর সাথে ওয়াহী ছাড়া আর কোন কিছুর তুলনা হতে পারে না এবং ওয়ারাকাও কিন্তু এটিই বুঝিয়েছেন।
“তুমি যে ধরণের বাণী পেয়েছো, এ ধরণের বাণী যখনই কেউ পেয়েছে…”
এখানে বলা হচ্ছে ওয়াহীর কথা, কারণ এই কথা বলার আগেই ওয়ারাকা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জানিয়েছেন যে সত্ত্বা “ইক্বরা বিসমি…” নিয়ে হেরা গুহাতে এসেছিলেন তিনি আল্লাহ-র পক্ষ থেকে প্রেরিত জিব্রিল আলাইহিস সালাম। তাহলে দেখা যাচ্ছে, যাকে উদ্দেশ্য করা বলে হচ্ছে – নাবী – সে দিক দিয়ে জামাতুল বাগদাদির ক্ষেত্রে এই কথা প্রযোজ্য না। যেই বানী সম্পর্কে বলা হচ্ছে – ওয়াহী – সেটা জামাতুল বাগদাদির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। এবং যেভাবে এই বানী মূল ক্ষেত্রে এসেছিল – জিব্রিল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে – সেটাও এক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। অর্থাৎ, উদ্দেশ্য, সারমর্ম, মাধ্যম – কোন দিক দিয়েই এ ঘটনার সাথে জামাতুল বাগদাদির ঘটনা মেলে না, তাহলে এখানে কিভাবে কিয়াস হয়? জামাতুল বাগদাদী এসব কিছু বাদ দিয়ে শুধু শত্রুতার অংশটা গ্রহণ করেছে, কারণ এটা তাদের অবস্থার সাথে মেলে, আর তারপর ইচ্ছেমত এটা প্রয়োগ করেছে নিজেদের উপর।
এছাড়া আরো গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, কিয়াস হয় কুর’আন ও হাদীসে দালীলের উপর ভিত্তি করে। ওয়ারাকার বক্তব্য এ দুটোর একটাও না।
বস্তুত জামাতুল বাগদাদী প্রচ্ছন্নভাবে যা চাচ্ছে তা হলে নিজেদের রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে এক দাঁড়িপাল্লায় মাপতে। আউযুবিল্লাহ, সুম্মা আউযুবিল্লাহ। রাসূলুল্লাহ ﷺ কে তাঁর ওয়াহী পাবার প্রেক্ষিতে যে কথা, ওয়াহী পাবার ব্যাপারে বলা হয়েছে, একজন নাবী ও রাসূল হিসেবে সেটা জামাতুল বাগদাদী কিয়াস করে নিজেদের ব্যাপারে চালাতে চায়। এবং আসলে এটা নতুন কিছু না,। কারণ আমরা জানি তারা এটাও বলে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধ করলে সে কাফির হয়ে যাবে। [“…তাই সাবধান, দাওলাতুল ইসলামের (‘ইসলামিক স্টেট) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারনে তুমি কুফরে পতিত হবে, তুমি তা উপলব্ধি করো আর না করো।”]
অথচ আহলুস সুন্নাহ-র অবস্থান হল একমাত্র কোন নাবী বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছাড়া আর কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কাউকে কাফিরে পরিণত করে না। যেমন আলি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, অন্যান্য সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনাহু তা’আলা ইজমাই’নকে কাফিরে পরিণত করে নি, যদিও তিনি বৈধ খালিফাহ ছিলেন যিনি শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।ইমাম ইবন তাইমিয়্যা তার কিতাব “আস-স্ব’রিমুল মাসলুলল”-এ [২/১৫] উলেমাদের ইজমার কথা উল্লেখ করে বলেছেন – “ব্যক্তি কোন নবীকে হত্যা করে সে কাফির”।
একইভাবে যে নাবীকে হত্যার চেস্টা করবে সে তার ঐ কাজের মাধ্যমে কাফির। নাবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাও হত্যাচেস্টার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, এবং নাবীর দাওয়াহর বিরোধিতা। আর নাবীর দাওয়াহর বিরোধিতা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ-র বিরোধিতা। একারণে কেউ নাবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে সে কাফির। কিন্তু এটা শুধু আল-আম্বিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোন ব্যক্তি বা দল এটা দাবি করতে পারে না যে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারণে কেউ কাফির হয়ে যাবে, এমনকি তিনি যদি খালিফাহ হন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আপন চাচাতো ভাই হন, এবং মেয়ের জামাইও হন। অথচ এই আহলুল গুলুহ, আহলুল বিদ’আ, গোমরাহ জামাতুল বাগদাদি অবলীলায় এরকম দাবি করে যাচ্ছে আর সাথে সাথে, ইচ্ছেমতো কিয়াস করছে, নিজেদের নাবী ﷺ এর সমতুল্য ধরে। লা হাওলা ওয়ালা কু’আতা ইল্লাহ বিল্লাহ।
–এছাড়া শাইখ মুহাইসিনি #৭ পয়েন্টে যা বলেছেন তা নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। শাইখ বলেছেনঃ
“এই উম্মাহ এবং উলেমা কোন বিষয়ের বিবেচনা করেন, সেটাকে কুর’আন ও সুন্নাহ-র আলোকে মিথ্যা প্রমাণ করা যায় নাকি তার ভিত্তিতে। অর্থাৎ যদি কুর’আন ও সুন্নাহর আলোকে মিথ্যা না প্রমাণ করা যায় তবে সেটা হক্ব বলে পরিগণিত হবে।“
অনেকের কাছে খটকা লাগতে পারে, যে আগে কেন মিথ্যা প্রমাণ করার চেস্টা করতে হবে। ব্যাপারটা হল যখন আপনি কোন কিছুকে সত্য ধরে নিয়ে দালিল তালাশ শুরু করবেন, তখন আপনি অবধারিতভাবেই এমন কোন না কোন দালীল পাবেন যা আপনি তাউয়ীল করে আলোচ্য বক্তব্যকে সত্য প্রমানে ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন যদি আপনি গণতন্ত্রকে হক্ব ধরে দালীল তালাশ শুরু করেন তখন আপনি শূরারা দালীলের অপব্যবহার করতে পারবেন। আপনি যদি আর্মির কাছে নুসরা খোজাকে হক্ব মনে করে দালীল খোজা শুরু করেন তাহলে আপনি মাক্কী জীবন থেকে দালীলের তাউয়ীল করতে পারবেন। আপনি যদি বাতেনী ‘ইলমের পক্ষে দালীল চান তাহলে হিজরতের সময়য় গুহায় অবস্থানের সময়ের দালীলের অপব্যাখ্যা করতে পারেন। এভাবে আপনি যে অবস্থানই চান তার পক্ষে দালীল পেশ করা সম্ভব তাউয়ীলের মাধ্যমে।
কোন অবস্থানকে সত্য ধরে নিয়ে দালীল তালাশ করা হল, নিজের মনমতো অংকের উত্তর প্রথমে লিখে তারপর সেই উত্তরকে সঠিক প্রমাণের জন্য ব্যাক ক্যালকুলেশান করা। এজন্য আহলুস সুন্নাহ-র পদ্ধতি হল এটা দেখা যে কোন অবস্থানকে কি বাতিল প্রমাণিত করা যায় নাকি। যদি তা করা না যায় তাহলে সেটাকে সঠিক বলে ধরে নেয়া হয়।
পরিশেষে আমরা বলতে চাই, আমরা হক্বের মাপকাঠি নেই কুর’আন ও সুন্নাহ থেকে। আমরা নিজেদের ইচ্ছেমতো মাপকাঠি তৈরি করে নেই না। যদি আল-ক্বা’ইদা এবং তালিবান কুর’আন ও সুন্নাহ অনুযায়ী বাতিল বলে প্রমাণিত হয়, তবে সমগ্র সৃস্টিজগত তাদের বিরোধিতা করলেও তারা হক্ব হয়ে যাবে না। আর তারা যদি কুর’আন ও সুন্নাহ-র আলোকে হক্ব হয়, তবে কেউ শত্রুতা করুক আর না করুক – তারা হক্বই থাকবে। হক্ব শত্রু সংখ্যা বা শত্রুতার তীব্রতা দ্বারা নির্ধারিত হয় না। হক্ব নির্ধারিত হয় শারীয়াহ-র মাপকাঠি দ্বারা। আর তাই জামাতুল বাগদাদীর শত্রু সংখ্যা তাদের হক্ব প্রমাণ করে না, যখন তাদের গোমরাহি শারীয়াহ দ্বারা প্রমাণিত।
আর আমরা তো এও জানি যে ১৩ মাস ধরে আমেরিকা তাদের বিরুদ্ধে বম্বিং করলেও এই তের মাসে, আমেরিকা জামাতুল বাগদাদীর তেলবাহী ট্রাকের বহরে একবারো আগাহত করে নি। কিছুদিন আগে রাশিয়া প্রথম বারের মতো তা করেছে। আমরা জানি তুর্কি বাহিনী এবং জামাতুল বাগদাদির সেনার বেশ কিছু জায়গায় পাশাপাশি অবস্থান করেছে কিন্তু কেউ কাউকে হামলা করে নি। আমরা জানি আলেপ্পোতে নুসাইরী বাহিনি আর জামাতুল বাগদাদি পাশাপাশি অবস্থান করেছে, এবং কেউ কাউকে আক্রমন করে নি। তাই তারা শত্রুতা নিয়ে যেসব কথা বলেও সেগুলোও তাদের অনশব কথার মতোই অর্ধ-সত্য আর সম্পূর্ণ মিথ্যা মিশ্রিত।
নিজেদের হক্ব প্রমাণের এই হাস্যকর প্রচেস্টা তিনটি বিষয় প্রমাণ করেঃ
১। কুর’আন ও সুন্নাহ থেকে কোন সুস্পষ্ট দালীল তাদের কাছে নেই, যে কারণে তারা এরকম তাউয়ীল করে দালীল তৈরির চেস্টা করে।
২। তারা, তাদের সমর্থকরা, এবং আবু বারা’র [যে এই “দালীল” প্রচারে ভূমিকা রেখেছে] মতো তাদের “শাইখরা” ‘ইলমের দিক থেকে মিসকীন পর্যায়ের। এবং এক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ-র চাইতে আহলুল বিদ’আর সাথে তাদের সাদৃশ্য বেশি।
৩। তারা নিজেদের এই দালীলের অভাব সম্পর্কে জানে, এবং এজন্য যেকোন মূল্যে দালীল তৈরি করে নিতে সচেষ্ট হয়, এবং একই সাথে কুর’আন-সুন্নাহ বাদ দিয়ে আবেগ ভিত্তিক প্রচারন চালায় সমর্থকদের মন জয় করার জন্য। কুর’আন সুন্নাহ-র বদলে তাই তারা বিজয় অর্জন, শত্রু সংখ্যা, তাদের “রাষ্ট্রের” প্রসারকে হক্ব হবার দালীল বলে উপস্থাপন করে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যেন আমাদের তাউফীক দান করেন সিরাতুল মুস্তাক্বীমের উপর অটল থাকার, কুর’আন ও সুন্নাহ আকড়ে ধরে থাকার, এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আর মানহাজে অবিচল থাকার। আমরা আল্লাহ রাহমানুর রাহীমের কাছে আশ্রয় চাই, খেয়াল-খুশি ও খাহেশাতের অনুসরণ থেকে এবং আহলুল বিদ’আর ভ্রান্তিসমূহতে পতিত হওয়া থেকে।
জামাতুল বাগদাদির যুক্তিখন্ডনঃ ৩
“কিভাবে তোমরা আমাদের খাওয়ারিজ বলতে পারো?”
শাইখ আব্দুল্লাহ আল-মুহাইসিনি
জামাতুল বাগদাদী বলেঃ কিভাবে তোমরা আমাদের খাওয়ারিজ বলতে পারো, যখন খাওয়ারিজরা কবীরা গুনাহর উপর তাকফির করে আর আমরা কবীরা গুনাহর উপর তাকফির করি না?
এ বিভ্রান্তির জবাব হল নিম্নরূপঃ
১। তারা প্রকাশ্যে সবার উপর তাকফির করে না, কিন্তু তাদের কাজ থেকে প্রমাণিত হয় তারা বিভিন্ন গুনাহর কারণে অনেককেই তাকফির করে, এটা স্পষ্ট হয় যখন আমরা তাদের এসব নীতির বাস্তবিক প্রয়োগের দিকে তাকাই। তারা একজন গুনাহগারের সাথে সেরকম আচরণ করে যা একজন কাফিরের সাথে করা উচিৎ। যেমনঃ রমদ্বানে দিনের বেলায় পানাহার করার কারণে গুনাহগার ব্যক্তিদের প্রতি তাদের আচরণ।
এছাড়া আল-আদনানি কিছুদিন আগে তার বক্তব্যে বলেছে, যারাই জামাতুল বাগদাদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে তাঁরাই কাফির হয়ে যাবে, তারা উপলব্ধি করুক বা না করুক। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জামাতুল বাগদাদীর ক্ষেত্রে যুদ্ধ করবে সে বুঝুক আর না বুঝুক, সর্বক্ষেত্রে কাফির বলে গণ্য হবে। যদি আত্বরক্ষার্থে কোন ব্যক্তি জামাতুল বাগদাদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তাও সে কাফির হয়ে যাবে – আদনানীর কথা অনুযায়ী। অথচ এর আগে এই একই ব্যক্তি আল্লাহ-র কসম করে বলেছিল যারা জামাতুল বাগদাদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তাদেরকে জামাতুল বাগদাদী তাকফির করে না।
২। ফলাফলের দিক দিয়ে জামাতুল বাদাদীর তাকফির আর কবীরা গুনাহর উপর পূর্বযুগের খাওয়ারিজদের তাকফির সাদৃশ্যপূর্ণ। আর শারীয়াহর উদ্দেশ্যই থাকে ফলাফলের দিকে নজর দেয়া। যদি তাকফিরের ফলাফল হল – মুসলিমদের জান-মাল হালাল করা – তবে নিশ্চয় জামাতুল বাগদাদী এই কাজটিই করছে। তারা তুচ্ছাতিতুচ্ছ অজুহাতে মুসলিমদের রক্ত হালাল ঘোষণা করে। একইভাবে তারা মুমিনদের ভূমিকে [যেমন জাইশ আল ফাতিহর নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমি, তালিবানের নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমি, ইয়েমেনে আল-ক্বাইদার নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমি ইত্যাদি] দারুল হারব ঘোষণা করে, আর নিজেদের অঞ্চলকে দারুন আমান ঘোষণা করে।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ, মাজমু আল ফাতাওয়া (৭৩/১৯) এ ব্যাখ্যা করেছেনঃ
“খারেজিদের প্রতিটি প্রজন্ম/দল, মুসলিমদের উপর তাকফির ও তাদের রক্ত হালাল করার দিক দিয়ে একে অপরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর তারা এটা করে সন্দেহ ও ধারণার বশবর্তী হয়ে, আর এমন সব কাজের কারণে, যেগুলোকে তারা কুফর মনে করে, কিন্তু আদতে সেগুলো কুফর না।“
৩। খাওয়ারিজ হবার জন্য সকল কবীর গুনাহর উপর তাকফির করতে হবে, এমনটা আবশ্যক না। মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যেসব খাওয়ারিজ জামা’আর উত্থান ঘটেছে, তার সবগুলোই যে গুনাহর কারণে তাকফির করতো, এমন না। যেমন নাজদাত খারেজিরা (যাদের নেতা ছিল নাজদাহ ইবন আমির আল-হানাফি) কবীরা গুনাহকারীর উপর তাকফির করতো না। একারণে কবীর গুনাহর উপর যারা তাকফির করে না, তারা খারেজি হতে পারে না, এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। খারেজি হল এমন সব দল/জামা’আ যারা অবৈধ ভাবে মুসলিমদের তাকফির করে, এবং মুসলিমদের রক্তকে হালাল করে নেয়। যে ব্যক্তি এমন করে, সে কবীর গুনাহর কারণে কাউকে কাফির ঘোষণা করুক আর না করুক, সে খারেজিদের অন্তর্ভুক্ত।
৪। তাকফিরের বিভিন্ন রূপ আছে। যেমন, কবীরা গুনাহকারীর উপর তাকফির, কিংবা এমন কাজের কারণে কাউকে তাকফির করা যে কাজ গুনাহই না, কিংবা সন্দেহ বা ধারণার বশবর্তী হয়ে তাকফির করে, কিংবা এমন ব্যাপারে তাকফির করা যেগুলোর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ইজতিহাদের কারণে ইখতিলাফ আছে, কিংবা প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা বিবেচনা না করেই, উযর বিবেচনা না করেই তাকফির করা।
৫। সকল খাওয়ারিজের প্রকৃত মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলঃ শারীয়াহ সম্মত বৈধ কারণ ছাড়া এমন কাউকে তাকফির করা, যার উপর তাকফির প্রযোজ্য না। আর এর ফলাফল হল এমন কারো হত্যাকে বৈধতা দেয়া যার হত্যার বৈধতা শারীয়াহ দেয় না। খারেজিরা কিছু স্বতন্ত্র ও নির্দিষ্ট মূলনীতি বানিয়ে নেয় ও গ্রহণ করে, আর এই ব্যাপারে যারা মতবিরোধ করে তারা তাদের কাফির গণ্য করে।
ডঃ আল-ওয়াইস বলেছেনঃ ইবন তাইমিয়্যাহ এবং তার মতো অন্যান্য উলেমার বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায়, তারা খাওয়ারিজের অর্থকে শুধু সেসব দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন না, যার মদ খাওয়া বা যিনা করার মতো কবীরা গুনাহর কারণে তাকফির করে। বরং ইবন তাইমিয়্যা তাদের (খারেজিদের) বর্ণিত করেছেন এমন কিছু লোক হিসেবে যারা হয়তো এমন কাজকে ক্ষমা করে দিতে পারে যে কাজ আসলে হালাল, তাই এতে ক্ষমার প্রশ্ন আসে না। কিংবা তারা কোন নেক আমলকে হারাম হিসেবে অথবা কোন হারাম কাজকে কুফর হিসেবে গণ্য করে। তারা হয়তো এমন কাজকে গুনাহ মনে করে যে কাজ শারীয়াহ অনুযায়ী গুনাহর কাজ না। আর এসব ভ্রান্তির উপর ভিত্তি করে তারা তাকফির করে এমন সব মানুষকে, যারা তাদের (অর্থাৎ খারেজিদের) খাহেশাতের সাথে একমত পোষণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। অনুসন্ধানী উলেমারা এও বলেছেন যে কবিরা গুনাহর কারণে তাকফির করার এই বৈশিষ্ট্য পরের দিকের খারেজিদের মধ্যেই শুধু দেখা গিয়েছিল। কারণ এতো জানা কথা যে খারেজিদের প্রথম প্রজন্ম ‘আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর উপর তাকফির করেছিল নিরপেক্ষ শারীয়াহ আদালতের মধ্যস্থতা মেনে নেবার কারণে – আর একাজ তো জায়েজ ও হালাল ছিল, আর এও কোন কবিরা গুনাহও না। আর খারেজিদের আদি পিতা দ্বুল-খুওয়াইসিরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে পক্ষপাতদুষ্টতা ও না-ইনসাফির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল, কারণ রাসূলুল্লাহﷺ কিছু মানুষকে অন্যদের তুলনায় বেশি দিয়েছিলেন, এর দ্বারা তাদের হৃদয়সমূহকে নরম করার জন্য। আর এতো ছিল একটি বৈধ কাজ।
৬। আর এটা কোন আবশ্যকতা না কোন দল বা জামা’আকে খাওয়ারিজ হতে হলে তাদের মধ্যে প্রথম যুগের খাওয়ারিজের প্রতিটি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে – যেমনটা আমরা ইতিপূর্বে বলেছি। বরং যদি অধিকাংশ বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে থাকে তবে সেটাই যথেষ্ট। কোন দলকে তখনই খাওয়ারিজ বলা হয়, যখন তাদের অধিকাংশ বক্তব্য ও কাজ আদি খারেজিদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়, অথবা মৌলিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে তারা সাদৃশ্যপূর্ণ হয়। যেমনটা – আশ শাতিবি ব্যাখ্যা করেছেন।
-শাইখ আব্দুল্লাহ আল মুহাইসিনির বক্তব্য সমাপ্ত।
প্রাসঙ্গিক আলোচনাঃ
শাইখের এই আলোচনায় জামাতুল বাগদাদী এবং তাদের সমর্থক গোষ্ঠীর একটি অত্যন্ত প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ভ্রান্তির কথা উঠে এসেছে। এই দল ও তাদের সমর্থকরা প্রায়ই যুক্তি দেখায় – তারা যেহেতু কবিরা গুনাহর উপর তাকফির করে না তাই তারা কখনো খারেজি হতে পারে না। তারা সাথে আরও কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা বলে, যেমন খারেজিদের মাথা কামানো হবে, ইত্যাদি। অর্থাৎ তাদের যুক্তি হল এসব বৈশিষ্ট্য না থাকলে কাউকে খারেজি গণ্য করা যাবে না। অথচ আমরা জামাতুল বাগদাদী মুসলিমদের ও মুজাহিদিনের উপর এমন সব কারণে তাকফির করেছে যেগুলোর উপর তাকফির করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আ বৈধ মনে করে না, এবং এ তাকফিরের উপর ভিত্তি করে মুজাহিদিনকে হত্যা করেছে। তারা এমনটা করেছে শামে, লিবিয়াতে, ইয়েমেনে এবং আফগানিস্তানে। যদিও যখনই তাদেরকে এই তাকফিরি নীতির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয় তখনই তারা শামের ফিতনা নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু করে, যার বেশির ভাগ জুড়ে থাকে আবেগী কথাবার্তা এবং পবিত্র ক্বুর’আনের ‘আম কিছু আয়াত। এছাড়া অনেকে বার এটাও স্বীকার করতে চাননা যে জামাতুল বাগদাদী সকল মুজাহিদিনকে তাকফির করে, এবং এই তাকফির দলগত ভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবেও [তাকফির মুয়া’ইয়িন]। এর তিনটি প্রমাণ এখানে দেওয়া হল যা থেকে এই দলের তাকফিরের নীতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। এই তিনটি ছাড়া আরও অনেক প্রমাণ বিদ্যমান, তবে এই তিনটিকে প্রাধান্য দেয়া হল, কারণ এগুলো তাদের বৈশ্বিক অফিশিয়াল প্রকাশনায় স্থান পেয়েছেঃ
১। ৫ই রামাদ্বান ১৪৩৬ হিজরীতে আল-ফুরক্বান মিডিয়া থেকে প্রকাশিত জামাতুল বাগদাদীর অফিশিয়াল বিবৃতি “হে লোকেরা, তোমরা আল্লাহ-র দিকে আহবানকারীদের ডাকে সাড়া দাও!” [Oh our people, respond to the caller of Allah”] । এ বিবৃতিতে আল-আদনানীই বলেছে- “…তাই সাবধান, দাওলাতুল ইসলামের (‘ইসলামিক স্টেট) বিরুদ্ধে যুদ্ধর করার কারনে তুমি কুফরে পতিত হবে, তুমি তা উপলব্ধি করো আর না করো।” অর্থাৎ যে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে সেই কাফির। এই নীতি কোনভাবেই শারীয়াহ দ্বারা সমর্থিত নয়, এবং আহলুস সুন্নাহ এই নীতিতে বিশ্বাস করে না। যদি আহলুস সুন্নাহ এই নীতিতে বিশ্বাসী হতো, তবে খুলাফায়ে রাশিদার অন্তর্ভুক্ত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণে আল যুবাইর, তালহা, মু’আবিয়া, আইশা, আমর ইবনুল আস ইত্যাদি সাহাবা কাফির বলে গণ্য হতেন – রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া ইজমাইন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত পড়ার জন্য দেখুনঃ
http://tinyurl.com/nurvsak, এবং
http://tinyurl.com/jumrf5f
২। জামাতুল বাগদাদীর অফিশিয়াল ম্যাগাযিন দাবিকের ১০ম সংখ্যায় [পৃঃ ৪২ থেকে শুরু] “They are not lawful spouses for each other” [তারা একে অপরের জন্য স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বৈধ নয়] শীর্ষক এক আর্টিকেলে উম্ম সুমাইয়্যা আল মুহাজিরা নামে এক হতভাগ্যা নারী ফাতাওয়া দিয়েছে, শামের সকল মুজাহিদিনের স্ত্রীদের তাদের নিজ নিজ স্বামীর তালাক হয়ে গেছে, কারণ এসকল মুজাহিদিন জামাতুল বাগদাদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারণে মুরতাদ হয়ে গেছে। আর তালাক হয়ে যাবার কারণে, এই মুসলিমাহরা এখন যিনার অবস্থায় আছে। এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, জামাতুল বাগদাদীর এই তাকফির শুধু দলগত ভাবে মুজাহিদিন দলগুলোকে তাইফাতুল কুফর বা কুফরের দল হিসেবে ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ না। বরং তারা প্রতিটি দলের অন্তর্গত প্রতিটী মুজাহিদকে আলাদা, আলাদা ভাবে মুরতাদ মনে করে। অর্থাৎ এটি তাকফির আল-মুআইন। এছাড়া আবু মাইসারা আশ-শামী নামে এক উন্মাদ, আরবিতে প্রকাশিত আরেকটি অফিসিয়াল বক্তব্যে এই ধরণের কথা বলেছে।
৩। ২০১৫ এর অক্টোবরে প্রকাশিত আল আদনানীর ““কাফিরদিগকে বলে দিন, খুব শিগগীরই তোমরা পরাভূত হবে…” বক্তব্যের মাধ্যমে তারা দুনিয়ার সকল মুসলিম দল এবং মুজাহিদিন জামা’আ, যারা ইসলামের জন্য কাজ করছে; তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো। এবং বললো “ধারালো ছুরি” আর “বক্ষ বিদীর্ণকারী বুলেট” ছাড়া এই মুসলিমদের দেয়ার মতো আর কোন জবাব তাদের [জামাতুল বাগদাদীর] নেই। আদনানী এ বক্তব্য ঘোষণা করে, “আমরা দলগুলোকে বিচ্ছিন্ন করবো, সব তানজীম এবং তাঁদের ঐক্যকে নষ্ট করবো, নিশ্চয় আমরা এরূপ করবো, কারণ এই জামা’আ/দল ছাড়া আর কোন [বৈধ] জামা’আহ/দল নেই। তাই সব তানজীম ধ্বংস হোক, সব দল, ব্রিগেড আর বাহিনী ধ্বংস হোক। আমরা সব ব্রিগেড ও ব্যাটালিয়নকে ছিন্ন করবো ,আমরাই মুসলিমদের জন্য একমাত্র বৈধ জামা’আ”, এবং যে বাইয়াহ দেবে না, তার একমাত্র প্রাপ্য হল “ধারালো ছুড়ি” অথবা “বক্ষবিদীর্ণকারী বুলেট”, আর তারপর জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু। যারাই জামাতুল বাগদাদীতে যোগ দেবে না, এবং জামাতুল বাগদাদীর “খিলাফাহ”-কে স্বীকার করবে না, তাদেরকে “ধারালো ছুরি” আর “বক্ষ বিদীর্ণকারী বুলেটের” মাধ্যমে জবাব দেয়া হবে, এবং হত্যা করা হবে।
এ বক্তব্যের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ
http://tinyurl.com/zuwflt4
এ বক্তব্যগুলো থেকে প্রমাণিত হয় জামাতুল বাগদাদীর আক্বীদা হল, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কুফর, আর যে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে সে কাফির হয়ে যাবে। এবং তারাই মুসলিমদের একমাত্র বৈধ জামা’আ। আর এ হল সে একই গোমরাহি যা এর আগে আলজেরিয়ার GIA এবং জামাতুল মুসলিমিন তথা আত-তাকফির ওয়াল হিজরাহর মতো খারেজি জামা’আগুলোর মধ্যে দেখা গিয়েছিল। এবং এর আগে পূর্বযুগের খারেজিদের মধ্যেও দেখা গিয়েছিল।
খারেজিদের বৈশিষ্ট্যঃ
খাাওয়ারিজ এবং সকল বিদ’আতি জামা’আর মৌলিক বৈশিষ্ট্য জানার ক্ষেত্রে শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহর নিম্নোক্ত উক্তিদ্বয় প্রযোজ্যঃ
“এবং আহলুল হাওয়ার [যেসব লোকেরা নিজেদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করে] অনেকেই মনগড়া বিভিন্ন মত উদ্ভাবন করে, আর যারা তাদের এই বিদ’আতি মতামতের সাথে একমত পোষণ করতে অসম্মত হয়, তাঁদেরকে তাকফির করে।“
“আহলুল বিদ’আর বৈশিষ্ট্য হল তারা কোন একটি নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে এবং তারপর এই নব উদ্ভাবিত বিষয়কে দ্বীনের মধ্যে ওয়াজিব করে নেয়। এবং এসব নব উদ্ভাবিত বিষয়কে আক্বীদার অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নেয়। আর একারণে মুসলিমদের ভেতর থেকে যারা এসব বিষয়ে তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করে তাদের উপর তারা তাকফির করে, এবং তাঁদের রক্ত হালাল ঘোষণা করে, যেরকম খাওয়ারিজ এবং জাহমিয়্যাহরা করেছিল।”
কবীরা গুনাহ কিম্বা গুনাহর কারণে মুসলিমদের তাকফির করা, খারেজি হবার জন্য কোন অবশ্য পালনীয়, বাধ্যতামূলক শর্ত না। বরং খারেজি হবার শর্ত বা খারেজিদের মূল বৈশিষ্ট্য হল তারা এমন কাজের জন্য মুসলিমদের কাফির ঘোষণা করে যা কুফর না। এগুলো কবীরা গুনাহ হতে পারে, সগীরা গুনাহ হতে পারে, কোন জায়েজ কাজ হতে পারে এমনকি প্রশংসনীয় কাজও হতে পারে। এবং মূল খাওয়ারিজদের বৈশিস্ট এটাই ছিল। পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়, কিন্তু প্রতিটি ভাগ এই বৈশিস্টটি বজায় রাখে – তারা মুসলিমের এমনসব কাজের জন্য কাফির ঘোষণা করে – যে কাজগুলো কুফর না। পাশপাশি খারেজিদের একেকটি ফিরকা, নিজেদের মতো করে আরো কিছু নীতি যোগ করে নেয়।
আদি খাওয়ারিজ হারুরিয়্যাহদের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ-র অবস্থান এই ছিল যে – তারা [হারুরিয়্যাহ-খাওয়ারিজ] এমন অবস্থানের উপর ভিত্তি করে মুসলিমদের কাফির ঘোষণা করে, যেগুলো আহলুস সুন্নাহর মতে বৈধ না। এবং তাদের ভ্রান্ত অবস্থান ও ভ্রান্ত তাকফিরের উপর ভিত্তি করে তারা মুসলিমদের হত্যা করে।
একথার প্রমাণ হল আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং মু’আউয়িআ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ঘটনা। আলী রাদ্বিয়াল্লাহু যে খারেজিদের হত্যা করেছিলেন, তাদেরকে তিনি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জনে জনে জিজ্ঞেস করেন নি, তারা গুনাহ-র কারণে তাকফির করে কি না। আর না শুধুমাত্র শাসকের বিরোধিতা করার কারণে হারুরিয়্যাহদেরকে সাহাবায়ে কেরাম রাদীয়ালাহু আনহুম ওয়া ইজমা’ইন খারেজি বলে সনাক্ত করেছিলেন। বরং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়েছিল রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদের যে বর্ণনা দিয়েছিলেন, তার ভিত্তিতে।
হারুরিয়্যাহ-খাওয়ারিজ আলি রাদীয়াল্লাহু আনহুকে কোন গুনাহর ভিত্তিতে তাকফির করে নি। তারা আলি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে তাকফির করেছিলেন কারণ তিনি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দন্ধ নিরসনের জন্য একটি নিরপেক্ষ শারীয়াহ আদালত স্থাপন এবং এই নিরপেক্ষ শারীয়াহ আদালতের রায় মেনে নিতে রাজি হয়েছিলেন। এটা কবীরা বা সগীরা কোন ধরণের গুনাহই ছিল না। সুতরাং আমরা যদি ধরে নেই – শুধু যারা গুনাহ-র কারনে মুসলিমদের তাকফির করে তারাই শুধু খারেজি – তাহলে যারা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে তাকফির করেছিলে, অন্যান্য সাহবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া ইজমাই’ন সহ তৎকালীন সকল মুসলিমকে তাকফির করেছিল, তারা খারেজি ছিল না!
সুতরাং বোঝা গেল, অর্থাৎ, “যারা কবীরা গুনাহর উপর তাকফির করে”- শুধুমাত্র তারাই খারেজি এটা ভুল ধারণা। একইভাবে মাথা কামানো না হলে খারেজি বলা যাবে না, রজঃস্রাবের সময়ও সালাত নারীদের উপর ফরয এমন মনে না করলে খারেজি বলা যাবে না- এগুলোও ভ্রান্ত ধারণা। আহলুস সুন্নাহর পূর্ববর্তী যুগের উলেমাগণ যে সব দলকে খারেজি বলেছেন তাদের সবার কি মাথা কামানো ছিল? আত তাকফির ওয়াল হিজরাহর সদস্যদের কি মাথা কামানো ছিল? শুকরি মুস্তফার কি মাথা কামানো ছিল? খারেজিদের প্রতিটী দলের মধ্যে কি এমন ব্যক্তি ছিল যার একটি হাত স্ত্রী লোকের ছোট স্তনের ন্যায় ছিল?
মূলত এই ধরণের ভ্রান্তির কারণে, আক্বীদা ও ঈমানের ক্ষেত্রে যাদের মধ্যে গুলুহ, গোমরাহি ও বিচ্যুতি বিদ্যমান, তাদের ধ্যানধারণা প্রসার ও প্রচারের পথ সুগম হয়। কারণ যখনই কোন সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত আমল ও আক্বীদার ব্যাপারে তাদের জিজ্ঞেস করা হয়, তারা বলে – “আমরা তো গুনাহর কারণে তাকফির করি না, আমাদের মাথা তো কামানো না আমরা কিভাবে খারেজি হই?” কিন্তু বাস্তবতা হল এই যে, তাদের আক্বীদা হল সন্দেহ এবং অভিযোগের ভিত্তিতে তাকফির করা এমন সব বিষয়ের ব্যাপারে যেগুলো কাউকে ইমানের থেকে বের করে দেয় না। এবং তাদের মানহাজ বা পদ্ধতি হল তাকফিরের ব্যাপারে চরমপন্থী হওয়া, এবং নিয়মসমূহের অপপ্রয়োগ করা। যেমন – আল্লাহ্ ও রাসূল ﷺ যাদের কাফির বলেছেন, তাদের যে কাফির বলে না সে নিজেও কাফির। এই সঠিক নিয়মকে তাউয়ীল বা ব্যাখ্যা করে তারা দ্বীনে নতুন এক নিয়ম উদ্ভাবন করে নেয় যে- “আমি বা আমরা যাকে কাফির বলছি তাকে যারা কাফির বলে না তারাও কাফির।“ অর্থাৎ মূলত যারাই তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করে, তাঁদের সবার ইমান এই ধরণের লোকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। তাদের সাথে একমত পোষণ করাকে তারা ইমানের পূর্বশর্ত বানিয়ে নেয়।
প্রকৃতপক্ষে খারেজিদের মূল বৈশিষ্ট্য হল হল তারা মুসলিমদের রক্ত হালাল করে নেয় এবং এটাকে ইবাদাত মনে করে। এবং এরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে শরীয়াহ অননুমোদিত যেকোন কারণে মুসলিমদের হত্যা করা। এটা কবীরা গুনাহর জন্য, নাকি সগীরা গুনাহ-র জন্য, নাকি মুস্তাহাবের জন্য, নাকি মাকরুহের জন্য, এরকম কোন কিছু নির্দিষ্ট করে হাদীসে বলা হয় নি। তাই আমরা বৈশিষ্ট্য হিসেবে গ্রহণ করবো যে, “তারা মুসলিমদের হত্যা করবে। ইতিহাস থেকেও দেখে যায় যে সব খাওয়ারিজ কিন্তু কোন বিধি নিষেধ ছাড়া কবীরা গুনাহর উপর তাকফির করত না।
জামাতুল বাগদাদীর সমর্থকদের প্রতি কিছু প্রশ্নঃ
শাইখ আব্দুল্লাহ আল-মুহাইসিনির বক্তব্য এবং উপরোক্ত আলোচনার আলোকে কিছু প্রশ্ন আমরা জামাতুল বাগদাদীর সমর্থকদের জন্য উপস্থাপন করতে চাই। আমরা চাই, জামাতুল বাগদাদীর সমর্থকরা সৎভাবে, আদনানী-দাবিক এবং জামাতুল বাগদাদীর অন্য অফিশিয়াল বিবৃতিতে তাকফিরের ব্যাপারে তাঁদের যে নীতিসমূহ ও বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো মেনে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন, এবং কোন দ্বৈতনীতির অনুসরণ করবেন না। সৎ ভাবে, সাহসের সাথে, নিজেদের উমারাহ ও “খিলাফাতের” নীতির অনুসরণ করবেন, এবং সত্যকে গোপন করবেন না, এবং ভয় করবেন না এ ব্যাপারে কোন নিন্দাকারীর নিন্দা।
১। প্রথম প্রশ্ন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগান জিহাদের সময় ৭টি মুজাহিদিন দল ছিল। যার নেতৃত্বে ছিল গুলাবুদ্দীন হেকমতিয়্যার, বুরহানুদ্দীন রাওব্বানী, ইউনুস খালিস, আব্দুর রাব্বি রাসুল সাইয়্যাফ, গাইলানি, মোজাদ্দেদি আর মোহাম্মাদি। একথা সবার জানা যে হেকমতিয়্যার, রব্বানীসহ প্রায় সব নেতাই পাকিস্তানের আইএসআই-এর কাছ থেকে সাহায্য ও প্রশিক্ষন গ্রহণ করে। আর আই.এস.আই এর মাধ্যমে অ্যামেরিকা উপরোক্ত বেশ কিছু দলকে স্টীঙ্গার মিসাইল দেয়, যেটা যুদ্ধের মোড় ঘুরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদের মধ্যে বেশ কিছু কম্যান্ডার তো অ্যামেরিকাতেও গিয়েছিল। এই সাত নেটার দলের সমন্বয়ে ইসলামিক ইউনিটি অফ আফগানিস্তান মুজাহিদিন – গড়ে উঠে। অর্থাৎ এই প্রতিটী দল ছিল রাশিয়ার বিরুদ্ধে একে অন্যের মিত্র। একথাও জানা যে, আরব মুজাহিদিন এই সাততী দলের বিভিন্নটির অধীনেই জিহাদ করেছিলেন, বিশেষ করে ইউনুস খালিস এবং সাইয়্যাফের দলের অধীনে। প্রশ্ন হল, শাইখ উসামা রাহিমাহুল্লাহ যেহেতু ইউনুস খালিসের দলের অধীনে কিছু জায়গায় জিহাদ করেছিলেন। আর ইউনুস খালিস যেহেতু হেকমতিয়্যারের মিত্র ছিল, আর হেকমতিয়্যার যেহেতু মুরতাদ পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে অস্ত্র নিচ্ছিল, তাই মুরতাদ হেকমতিয়্যারের মিত্র হবার কারণে ইউনুস খালিস মুরতাদ, আর মুরতাদ ইউনুস খালিসের কিংবা অন্য কোন মুজাহিদিন নেটার অধীনে যুদ্ধ করার কারণে, উসামাকে তাকফির করা হবে না কেন?
যদি কাতার মুরতাদ, আর কাতারের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার কারণে আহরার মুরতাদ, আর বাসশারের বিরুদ্ধে আহরারের সাথে মিত্রতার কারণে জাবহাত আল-নুসরা, জাবহাত আল-মুরতাদীন হয়, যেরকম দাবিকে অনেক বার দাবি করা হয়েছে, তাহলে কেন ইউনুস খালিসের অধীনে থাকার কারণে উসামা মুরতাদ হবে না?
২। দ্বিতীয় প্রশ্ন। শাইখ উসামা রাহিমাহুল্লাহ পাকিস্তানি আই.এস.আই এর তৎকালীন প্রধান হামিদ গুলের সাথে দেখা করেছিলেন, তাহলে কেন শাইখ উসামাকে রাহিমাহুল্লাহ তাগুতের এজেন্ট কিংবা মুরতাদ বলা হবে না?
৩। শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রাহিমাহুল্লাহ, পাকিস্তানের মুরতাদ শাসক জিয়াউল হকের প্রশংসা করেছেন (তাফসির সূরা তাওবাহ দ্রষ্টব্য), যা থেকে প্রমাণ হয় তিনি এই মুরতাদকে মুরতাদ বলে মনে করতেন না। তাহলে শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামকে রাহিমাহুল্লাহ মুরতাদ বলা হবে না কেন?
৪। গন্ততান্ত্রিক সংসদের সকল সদস্যকে শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রাহিমাহুল্লাহ মুরতাদ বলেন নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের প্রশংসা করেছেন – তাহলে কেন শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামকে রাহিমাহুল্লাহ মুরতাদ বলা হবে না।
৫। আজকে সিরিয়াতে ফ্রি-সিরিয়ান আর্মি FSA যেমন গণতন্ত্রের জন্য বা সর্বোচ্চ ইসলামি ফ্লেভারের গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করছে, তেমনি আফগানিস্তানের ৭ মুজাহিদিন দলের অন্তর্ভুক্ত National Islamic Front of Afghanistan – মুরতাদ জহির শাহর প্রত্যাবর্তনের পক্ষে ছিল। আর এ দলটির সাথে ঐক্য ছিল বাকি ৬টি দলের। তাহলে এ দলের সাথে মিলে কাজ করার কারণে কেন, শাইখ উসামা রাহিমাহুল্লাহ, শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামকে রাহিমাহুল্লাহ তাকফির করা হবে না?
৬। তালিবান ৯০-এর দশকে কিছু শর্ত সাপেক্ষে জাতিসঙ্ঘে যোগ দেয়ার আবেদন করেছিল, দুঃস্থ আফগানদের জন্য ত্রান পাবার জন্য। একথা শাইখ উসামার রাহিমাহুল্লাহ জানা ছিল। শুধু উসামার না সবারই এটা জানা ছিল, এটা গোপন কিছু ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি কিভাবে আমীরুল মু’মীনিন মুল্লাহ মুহাম্মাদ উমারকে রাহিমাহুল্লাহ বাই’য়াহ দিলেন? কিভাবে শাইখ আবু মুসাব আল-যারক্বাউয়ী একথা জেনেও আফগানিস্তানে থাকলেন এবং উসামাকে পরবর্তীতে বাই’য়াহ দিলেন, যে উসামা এসব জেনেশুনে মুল্লাহ উমারকে বাই’য়াহ দিয়েছিল? কেন উসামা রাহিমাহুল্লাহ তাকফির করলেন না মুল্লাহ উমারের উপর? কেন আল-যারক্বাউয়ী রাহিমাহুল্লাহ তাকফির করলেন না মুল্লাহ উমার রাহিমাহুল্লাহ ও উসামার রাহিমাহুল্লাহ উপর? কে আল-যারক্বাউয়ী এবং উসামা – দুজনকেই একারণে তাকফির করা হবে না?
৭। দেইর আয-যুর থেকে জামাতুল বাগদাদির প্রকাশিত একটি অফিশিয়াল ভিডিওতে আবু মাইসারা আশ-শামী বলেছে আমীরুল মুমীনিন মুল্লাহ আখতার মানসুর হাফিযাহুল্লাহ তাগুত, এবং তালিবান তাগুত।
http://tinyurl.com/zf2yjs2
সূরা নিসার ৭৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ আমাদের বলছেন, যারা ইমানদার তারা ক্বিতাল করে আল্লাহ-র রাস্তায়, আর যারা কাফির তারা জিহাদ করে তাগুতের রাস্তায়। যদি তালিবান ও মুল্লাহ মানসুর তাগুত হয়- যেমন জামাতুল বাগদাদীর অফিশিয়াল প্রকাশনায় বলা হয়েছে – তাহলে কেন শাইখ আইমান আল-যাওয়াহিরি হাফিযাহুল্লাহ এবং আল-ক্বাইদার সকল নেতাকে তাকফির করা হবে না? যেহেতু তিনি তাগুত মুল্লাহ মানসুরকে হাফিযাহুল্লাহ বাই’য়াহ দিয়েছেন, আর তাগুতের জন্য যুদ্ধ করছেন? কেন আল-শাবাবকে মুরতাদীন বলা হবে না? কেন আল-ক্বাইদা ফি বিলাদ আল ইসলামি-মাগরিব [AQIM] কে তাকফির করা হবে না?
৮। কেন আদনানী, শাইখ যাওয়াহিরিকে হাফিযাহুল্লাহ কাফির ঘোষণা করছে না? সর্বশেষ বক্তব্যে, কিংবা সর্বশেষ দাবিকেও কেন শাইখ যাওয়াহিরিকে হাফিযাহুল্লাহ তাকফির করা হল না? কেন খোদ আবু মাইসার আশ-শামী তালিবান ও তাঁদের নেতাকে তাগুত বললো, কিন্তু আগুতের রাস্তায় যুদ্ধ করা শাইখ আল-যাওয়াহিরিকে হাফিযাহুল্লাহ তাকফির ঘোষণা করলো না? “যে কাফিরকে কাফির বলে না সে নিজেও কাফির” – তাহলে কেন আবু মাইসারা, আর আল-আদনানীকে তাকফির করা হবে না? যখন তারা জেনে বুঝেও শাইখ আল-যাওয়াহিরিকে হাফিযাহুল্লাহ তাকফির করছে না? আল্লাহ্ কি বলেন নি ইজহার আদ-দ্বীনের কথা? আল্লাহ্ কি সত্যকে প্রকাশ করতে নির্দেশ ও সত্য গোপন করা থেকে বিরত থাকতে বলেন নি? হে জামাতুল বাগদাদির সমর্থকেরা, জবাব দিন, কেন তাগুতের রাস্তায় জিহাদ করা ব্যক্তিকে, জেনে শুনে তাকফির না করার কারনে আদনানীর উপর তাকফির করা হবে না?
৯। লিওয়া ওয়াল ইসলাম ম্যাগাযিনের ১৪০৯ হিজরি সনের ১১তম সংখ্যায় শাইখ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন – ““আল্লাহ্র পথে দাওয়াহ দেয়ার নিয়তে অথবা জাতীয় কোন উদ্দেশ্যেমানব রচিত আইনে শাসিত দেশসমূহে আইন রচনাকারী পার্লামেন্টে মুসলিমদের জন্য সদস্যপ্রার্থী হওয়া অনুমোদনযোগ্য।“ একজন মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাকীহ হিসেবে তাঁর এই ধরণের বক্তব্যের পর কেন তাঁকে মুরতাদ বলা হবে না?
১০। বিন বায রাহিমাহুল্লাহর এরকম প্রকাশ্য বক্তব্যের পরও তাকে মুরতাদ না বলার কারণে শায়খ আবদুর রাহমান রাহিমাহুল্লাহ কি কাফিরকে কাফির না বলার দোষে দোষী না? এজন্য শায়খ আবদুর রাহমান রাহিমাহুল্লাহ সব বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানী – রাহিমাহুল্লাহু ইজমাইনকে কে মুরতাদ বলা হবে না? বাগদাদী-আদনানী তথা জামাতুল বাগদাদী কেন বিন বায রাহিমাহুল্লাহকে মুরতাদ বলে ঘোষণা করছে না? কাফিরকে কাফির না বলার অপরাহদে কেন তাদেরকেও মুরতাদ বলা হবে না?
১১। জামাতুল বাগদাদী তাঁদের নিজেদের কিছু সদস্যকে তাকফিরের ক্ষেত্রে চরমপন্থার অভিযোগে হত্যা করেছিল। বিশেষ করে আল হাযিমির সমর্থকদের। এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ খোদ বাগদাদীর উপর তাকফির করেছিল, কারণ তারা বলছিল বাগদাদী সব মুরতাদদের মুরতাদ বলে ঘোষণা করছে না এবং মুরতাদদের কাছ থেকে বাই’য়াহ গ্রহণ করছে। তাই এই খারেজিদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। প্রশ্ন হল, এই খারেজিদের কি মাথা কামানো ছিল? তারা কি কবীরা গুনাহর উপর তাকফির করেছিল? তারা কি বলেছিল রজঃস্রাবের সময় সালাত আদায় ফরয? তাদের মধ্যে ঐ সমস্ত বৈষিস্ট্য ছিল, যা ছিল পূর্বের খারেজিদের মধ্যে?
হে জামাতুল বাগদাদির সমর্থকগোষ্ঠী জবাব দিন, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে এবং সত্যকে গোপন করবেন না। জবাব দিন আল্লাহ্কে সাক্ষী রেখে এবং দ্বৈত নীতির অনুসরণ করবেন না। জবাব দিন, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে এবং কাপুরুষ হবেন না। জবাব দিন আল্লাহ-কে সাক্ষী রেখে এবং কোন নিন্দাকারীর নিন্দার ভয় করবেন না।
*************************