JustPaste.it

মুজাহিদের আযান

 

জিহাদ ত্যাগ করার পরিণাম
মাওলানা মাসউদ আযহার

 

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

 

ঈমান ভূলুন্ঠিত আজঃ

জিহাদ পরিত্যাগ করার মত বড় গুনাহ হতে আমরা শীঘ্র তাওবাহ করি। নতুবা যে কোন সময় আমাদের উপর কঠিন কোন শাস্তি আপতিত হওয়ার চরম আশংকা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সাঃ) সাবধানীমূলক সতর্কবাণী উচ্চারণ করে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি স্বশরীরে জিহাদ করল না বা কোন মুজাহিদকে জিহাদের সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে দিল না বা কোন মুজাহিদ পরিবারের তত্ত্বাবধান করল না, তার মৃত্যুর পূর্বে তার উপর আল্লাহ্ পাক কোন কঠিন শাস্তি আপতিত করবেন।" (কানযুল উম্মালঃ ২১৩পৃঃ ৪খৃঃ)
-মৃত্যুর পূর্বে সে মারাত্মক কোন রোগ বা কঠিন কোন বিপদে অবশ্যই নিপতিত হবে। তখন কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। কারণ জিহাদে যোগ না দেয়ার মাধ্যমে সে মুসলমানদের নিরাপত্তা ও ইসলামের সার্বিক বিজয় সম্পর্কে অমার্জনীয় উদাসীনতা প্রদর্শন করেছে। যার ফলে তখন আল্লাহও তার প্রতি বিরাগভাজন থাকবেন স্বাভাবিকভাবেই। কেননা, সে মজলুম মুসলমানের ব্যথায় ব্যথিত হয় নি।
এ প্রসঙ্গে প্রিয়নবী (সাঃ) বলেছেনঃ
ارحَموا مَن في الأرضِ
"তোমরা পৃথিবীবাসীর উপর দয়া কর।"
يَرحَمْكُم مَن في السَّماءِ
"তবে আকাশবাসী দয়া করবে তোমাদের উপর"
আমরা প্রতিদিন পত্রিকায় মুসলিম গণহত্যার সংবাদ পড়ছি। তবুও এতে আমাদের মনে সামান্য দুঃখবোধ জাগ্রত হয় না। অথচ নবীজির কঠোরবাণী নিত্যদিন সতর্ক করছে আমাদেরকেঃ
من لم يهتم لامور المسلمين فليس منا
"যে লোক মুসলমানদের ব্যপারে উদাসীনতা দেখাল, সে আমাদের কেউ নয়।"
রাসূলের এ কঠোরবাণী বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও বহু লোক আয়েশ করে বলছে, কোথায় কি ঘটছে, আমরা তার কি জানি! বড়ই উৎকণ্ঠা মুক্ত তারা। বহু আরামেই কাটছে তাদের দিনকাল। ওহে দুর্ভাগা! এখন কি তোমার আয়েশ করার সময়? আজ দ্বীনের উপর চলছে চতুর্মুখী হামলা। ঈমান নিয়ে চলছে বেচা-কেনা, ছিনিমিনি খেলা। কুফরী চক্র পবিত্র কাবা ও মদীনা দখল করার লক্ষ্যে প্রতিদিন সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে আসছে। বহু দেশের মানুষ ওয়াজিব কুরবানীর আমল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মুসলমানরা কোর্ট-আদালতে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারপরও তোমারা মনে করেছো, কিছুই হয়নি আমাদের, সব কিছু ঠিকঠাক আছে!
ইসলামের মর্যাদা নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই। সবাই আপন মর্যাদা চিন্তায় ব্যস্ত। অথচ আমার নবীজি (সাঃ) নিজ ইজ্জত বিকিয়ে দিয়ে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা করেছিলেন। আমরা কি একথা একবারও ভাবছি, আল্লাহর দ্বীন স্বমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত না হলে কী স্বার্থকতা রয়েছে আমাদের সম্মান ও জীবনের। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত হয়েছেঃ "আমার নামায, আমার ঘর, আমার জীবন ও মৃত্যু সেই আল্লাহর জন্য, যিনি মহাবিশ্বের প্রতিপালক।" এ কথাই হওয়া উচিৎ আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ, উদ্দেশ্য ও উপলব্ধি। 

 

শহীদের ত্যাগঃ

জিহাদ পরিত্যাগ করার পরিণতিতে বিপর্যয় আসবে অনিবার্যভাবে। এ প্রসঙ্গে মাওলানা জালালুদ্দিন হক্কানী বলেন, রাশিয়া আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আক্রমণ করার স্পর্ধা দেখানোর পিছনে কারণ হলো, রাশিয়া বুখারা-সমরখন্দসহ মধ্য এশিয়া দখল করে নেয়ার সময় সেখানের মযলুম মুসলমানের হাহাকার ও আর্তচীৎকারে যখন পৃথিবীর আকাশ ভারী হয়ে উঠেছিল, তখন আমরা সতর্ক ও বিজ্ঞোচিত পদক্ষেপ না নিয়ে কিতাবের পৃষ্ঠা ঘেটে দেখতাম, বর্তমানে আমাদের উপর জিহাদ করা ফরযে আইন না ফরযে কেফায়ে।
আল্লাহ্ পাক হযরত মাওলানা ইরশাদ আহমাদ শহীদ (রাঃ), তাঁর সহগামী শহীদ ও সহযোগী মুজাহিদদের উত্তম জাযা দান করুন। দশ কোটি পাকিস্তানীর পক্ষ থেকে তাঁরাই প্রথম রুশ শক্তির অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে খুন ও জীবনের নজরানা পেশ করেছিলেন। অন্যথায় অবিলম্বে সে কালোদিন এসে উপস্থিত হতো, যেদিন রুশবাহিনী বিজয়ীর ভঙ্গীতে জিজ্ঞেস করতো, বেলুচিস্তান আর কত দূর? করাচী বন্দর পৌঁছতে আর কতক্ষণ লাগবে? তারা অনতিবিলম্বে এ দিকেই অগ্রসর হয়ে আসত। কারণ, আফগানিস্তানে পাহাড় আর পাথর ছাড়া কী আছে, যা তারা লুটে নিবে?

 

সাধারণ লোকের ধারণা এবং মুজাহিদদের অবস্থাঃ

সাধারণ লোকের ধারণা অনুধাবন করুন, তারা বলে, মুজাহিদরা তো মৌজের সাথে দিন কাটাচ্ছে। আসলে মুজাহিদরা আর্থিকভাবে কত সংকটে আছে, তা কেবল মুজাহিদিনরাই জানে। আমি এ ব্যাপারে বেশী কিছু  বলতে চাই না। এসব দুঃখজনক ধারণার অবসানকল্পে দায়িত্বশীল অনেকে এ ব্যাপারে দু'চার কথা বলার জন্য আমাকে অনুরোধ করেছেন, যেন তারা জানতে পারে, মুজাহিদের ফান্ডে কোথা থেকে টাকা-পয়সা আসে।
অনেক লোক মনে করে, আমরা খুব ভালো অবস্থায় আছি, দামি ও উন্নত গাড়ি-বাড়ীও আমাদের আছে। আর্থিক কোন সমস্যা আমাদের নেই। আমাদের মাসিক 'সদায়ে মুজাহিদ' পত্রিকাটি অত্যন্ত টানাটানির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। এই পত্রিকাটি জনমানসে জিহাদের দাওয়াত ও দর্শন প্রচারে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। পবিত্র হজ্ব ও ওমরা পালন করতে গেলে কাবার চত্বরে বসে যখন আমি দু'হাত তুলে খোদার দরবারে বহু দরখাস্ত পেশ করি, তখনও এ পত্রিকাটির কথা আমি ভুলি না। বর্তমানে এ পত্রিকাটির প্রচারসংখ্যা ও পাঠকপ্রিয়তা সত্যই এক ঈর্ষণীয় ব্যাপার।
সেই পত্রখানা এখনো আমার নিকট সংরক্ষিত আছে, যাতে উল্লেখিত ছিল, এ পত্রিকা পাঠ করে যে বোনটি তাঁর ভাইকে জিহাদে শরীক হতে উদ্বুদ্ধু করে। এক পর্যায়ে তাঁর আদরের ভাই জিহাদে অংশ নেয় এবং শাহাদাত লাভে ধন্য হয়।
অত্যন্ত কঠিন এক সময় উপস্থিত হলো। আর্থিক সংকটে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। আমরা পাঠকদের নিকট চিঠি লিখলাম, আপনারা দ্রুত গ্রাহক চাঁদা নবায়ন করুন এবং বকেয়া পরিশোধ করুন, নতুবা আর একটি সংখ্যাও বের করা সম্ভব নয়।
এক সপ্তাহ পর জ্বলন্ত অংগারের একখানা পত্র এসে আমার হাতে পৌঁছল।  পত্রখানা পড়ে আমি শিহরিত হলাম, আমার শরীরের প্রতিটি লোম দাঁড়িয়ে যায়। এই পত্রখানা সেই ব্যক্তির পিতার, যিনি দীর্ঘ ছ'মাস পর্যন্ত রণাঙ্গনে মুজাহিদদেরকে কমান্ডো ট্রেনিং দিয়েছিল এবং জিহাদের ময়দানে শত্রুর মুকাবিলায় তার বাহাদুরী ছিল প্রবাদতুল্য। আজো আমাদের কেউ সেই প্রিয় কমান্ডার সরওয়ার শহীদকে ভুলতে পারেনি। তাঁর পিতা ওই পত্রখানা আমার নিকট লিখেছিলেন।
তিনি লিখলেন, "আমার পক্ষে পত্রিকার আগামী বছরের চাঁদা বাবদ আশি টাকা পরিশোধ করা আদৌ সম্ভব নয়।" আমার আর্থিক সংকট বর্ণনাতীত। কমান্ডার সরওয়ার শহীদের ছেলে-সন্তানদের হাতে দু বেলা ডাল-রুটি তুলে দেয়ার সামর্থও আমার নেই। আমি বড়ই অভাবী যদি সম্ভব হয় আমার জন্য নিয়মিত একটি সৌজন্য সংখ্যা পাঠানোর অনুরোধ রইলো।" সে দিনই দৃঢ়সংকল্প করলাম, ইনশা আল্লাহ্ কখনো আর এই পত্রিকা বন্ধ করা যাবে না।
কমান্ডার আব্দুর রশীদ-এর সংসারের খবর আর কি বলব, পাঁচ-ছ'মাস পরে হাতে টাকা আসলে তাঁর অন্ধ পিতা ও বৃদ্ধা মাআর হাতে কিছু টাকা তুলে দিয়ে আসি। তাদের জীবন নির্বাহ এরই উপর নির্ভরশীল। এবার আন্দাজ করুন, মুজাহিদ ও শহীদদের পরিবার কত কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তবুও কিছু লোকে বলে, মুজাহিদরা খুব আয়েশে আছে। প্রকৃত খবর না জেনে এভাবে মন্তব্য করা খুবই দুঃখজনক বই কি।

 

আমাদের প্রতিজ্ঞাঃ

এ হলো মুজাহিদ ও শহীদ পরিবারের অবস্থা। আমাগী কাল বা যে কোনদিন আমাদের পরিবারও এমন কঠিন দিন যাপনের শিকার হতে পারে। কোন অনুযোগ ছাড়াই এ পরিস্থিতি আমরা বরণ করে নিতে রাজী আছি। কিন্তু আমরা কখনো এ পরিস্থিতি বরদাশত করতে রাজী নই যে, কোথাও কোন মুসলিম মেয়ের সম্ভ্রম লুন্ঠিত হবে আর সেই জালিমের মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে কেউ তরবারি হাতে দৌঁড়ে আসবে না। আমার সংসার ও জীবন যতই টানাপড়েনে থাকুক, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকুক আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা, তবুও আমরা আল্লাহর দুশমনের মুকাবেলায় রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে যাব চিরদিন।
আমার প্রিয় রাসূল (সাঃ) মুরগী-পোলাও খেয়ে যুদ্ধ করেননি। তিনি যুদ্ধ করেছেন পেটে পাথর বেঁধে। রাসূল জীবনের সে চিত্র আমাদের সামনে অনুপস্থিত নয়। আমাদের প্রতিটি যুবক সে চিত্র অনুযায়ী আমল করতে বদ্ধপরিকর। শহীদগণ আমাদের জন্য যে পথ নির্মাণ করে গেছেন-প্রিয় মুজাহিদ ভায়েরা! শহীদের রক্তে সিঞ্চিত সেই পথই আমাদের একমাত্র চলার পথ। এ পথেই আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে, যদিও এ পথ পিচ্ছিল বটে, এ পথে চলতে গেলে বিষাক্ত কাঁটা ফুটে পা বিষিয়ে তুলে। যদি হিমালয়সম বাধাও পথ রোধ করে দাঁড়ায়, যদি বড় পদ ও চাকুরীর প্রলোভন দেখান হয়, তবুও তোমরা জিহাদ পরিত্যাগ করো না। বৈধ চাকুরী নির্দোষ বটে, কিন্তু জিহাদ ত্যাগ বা বর্জন করা মহা অন্যায়। আমাদের প্রতিটি সাথীকে দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করতে হবে এবং বাস্তবে প্রমাণ দিতে হবে যে, জিহাদ আমাদের নিজস্ব কাজ।
সমগ্র পৃথিবীর সকল শক্তি আমার বিরোধিতা করতে পারে, তবুও আমার পক্ষে জিহাদী তৎপরতা বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। যদি আমাকে সর্বস্বহারা করা হয়, তবুও আমাকে লড়তে হবে খালি হাতেই। আমৃত্যু জিহাদ করব, এই আমার জীবনের একমাত্র পণ।


নবীর আহবানকে হেলা করো নাঃ

আমার প্রিয় নওজোয়ান, নবীন ভায়েরা! আজ প্রয়োজন সাহসী পদক্ষেপের। আমরা যদি এখনো জেগে না উঠি, তবে আপন-পর সবাই মিলে আমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে। আমরা যদি এখনো নীরব থাকি, তবে এ জনপদে পুনরাবৃত্তি ঘটবে বাগদাদের ইতিহাসের।
হে দ্বীনের রক্ষকেরা!
হে উম্মত যুবকেরা!
মনে রাখবে, আমাদের শরীরের খুন হযরত হানযালার খুনের চেয়ে দামী নয়। আমাদের রক্ত ও জীবন প্রিয় (সাঃ) এর জীবনের চেয়ে অবশ্যই মূল্যবান নয়। যদি কেউ তোমাকে বলে, জিহাদে যোগদান না করে এখানে থেকে কাজ কর, এক্ষেত্রে তোমার অনেক দরকার, তুমি সে কথা শুনবে না।
দ্বীনের সকল ক্ষেত্র সতেজ রাখা দরকার। যেখানে থাক, যেক্ষেত্রে কাজ কর সেখানে মুজাহিদের মত দিন যাপন কর। হৃদয়ের মাঝে জ্বালিয়ে রাখ জিহাদী জযবার অনির্বাণ মশাল।
একবার ফিরে তাকাও চৌদ্দশ বছর পুর্বের আদর্শ নবীর যুগের দিকে। আমার নবীজি তো কেবল মৌখিকভাবে মানুষকে জিহাদের দিকে মানুষকে ডাকেন নি। নবীজি প্রথমে দ্বীনের পথে নিজের খুন ঢেলে পরে অন্যান্যকে ডেকেছিলেন জিহাদের পথে খুনের নজরানা দিতে।
আমাদের কথা না হয় না-ই শুনলে। আলিম ওলামার কথার গুরুত্ব না-ই বা দিলে... আমি বিশ্বাস করি, মুসলমান মাত্র নবীজির কথা কেউ হেলা করতে পারে না।
নবিজি ওহুদ রণাঙ্গনে আপন শরীরের তপ্ত লহু ঝরিয়ে উম্মতের প্রতিটি সদস্যকে বাস্তব ক্ষেত্রে জানিয়ে দিলেন, আমার রক্তে ভেজা এ পথে চললে তবেই তোমরা হাউজে কাওসারের পারে আমার সাক্ষাৎ পাবে। যদি আমার রক্তে ভেজা এ পথে তোমরা বিরামহীন চলতে থাক, তবেই পৃথিবীর কোন কাপালিক অপশক্তি তোমাদের প্রতি চোখ তুলে তাকাবারও সাহস পাবে না।
বন্ধুরা! হেলা কর না আমার নবীজির দাওয়াতকে। আমার নবীজি আপন শরীরের খুন ঝরিয়েছেন। কলিজার টুকরো উৎসর্গ করেছেন দ্বীনেরই স্বার্ত্থে। প্রিয় সহচর যায়িদ ইবনে হারিছার শাহাদাতের মর্মান্তিক সংবাদও তাঁকে শুনতে হয়েছে। তাঁকে আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহার মত ক্ষণজন্মা সাহসী ব্যক্তিকে চিরদিনের জন্য হারাতে হয়েছে- চাচাত ভাই জাফর তাইয়্যারও শহীদ হলেন চোখের সামনে- তারপরও নবীজি লড়াই বন্ধ করেনি। ক্ষুধার জ্বালায় নবীজি পেটে পাথর বেঁধে জিহাদ করেছেন, তবুও একদিনের জন্যও অভিযান বিলম্বিত করেন নি। পাহাড় সমান মিথ্যা অপবাদ চাপানো হলো তাঁর উপর-তখনও তাঁর উদ্দ্যম ও উৎসাহে সামান্যতম পিছুটান পরিলক্ষিত হয়নি।
তীরের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছেন, তখনও সিপাহসালারের ভূমিকায় দৃঢ়পদ ছিলেন।
যখন লোকেরা তাঁকে ও তাঁর গোত্রের লোকদেরকে বন্দী করে রেখেছিল, তখনও তাঁর ইচ্ছা ও সাহসিকতায় সামান্য ভাটার টান দেখা যায় নি।
বন্ধুরা আমার! নবীজির সেই দৃঢ়তা থেকে শিক্ষা নাও। আর তাঁর অন্তিমকালের সে সিদ্ধান্ত ও অভিযানের কথা ভুলে যেও না। তখন তিনি ইবনে  যায়িদের নেতৃত্বে সিরিয়া অভিমুখে এক মুজাহিদ কাফেলা প্রেরণ করলেন। নবীজি তাঁর উত্তরাধিকার সম্পদস্বরূপ ইলমের পরে রেখে গেছেন তা হলো, লৌহবর্ম, তরবারী ও বর্শা। নবীর থেকে পাওয়া এই উত্তরাধিকার সম্পদ তোমার হাত থেকে যারা ছিনিয়ে নিতে চায়, তাদের হাত ভেঙ্গে গুড়িয়ে দাও। বুকে ধরে এ সম্পদ তোমরা আলগে রেখো চিরকাল।
কখনো ভুলবে না, নবীজির উত্তরাধিকার সম্পদ দু'টিঃ এক ইলম, দুই, হাতিয়ার।

 

তরবারীর সাথে সখ্যঃ

তোমাদের হাতে যতদিন ঝলমলে তরবারী থাকবে, কেউ পারবে না তোমাদের পদানত ও পরাজিত করতে। তবেই তোমরা কদম কদম এগিয়ে যাবে নেতৃত্ব ও সম্মানের শীর্ষ সোপানের দিকে। যেদিন তোমাদের হাত থেকে তরবারী খসে পড়বে, মনে করবে, সেদিন এ জাতির পতন ঘটল।
জঙ্গলের পশুও যদি নিজের নিরাপত্তার কথা ভুলে বসে, তবে অপর কোন হিংস্র জানোয়ার মাংস ভোজনের খাহেশ মিটাতে তাঁর উপর আক্রমণ করে বসবেই। সাধারণ পশুও তাঁর নিরাপত্তা প্রশ্নে আদৌ উদাসীন থাকতে পারে না। সর্বক্ষণ তাকে সতর্ক থাকতে হয়। পাছে কেউ আক্রমণ চালিয়ে তার জীবন বিপন্ন করে না তুলে। পৃথিবীর যে কোন প্রাণী আপন নিরাপত্তার বিষয়ে যখন ঔদাসিন্যের শিকার হবে, তখন আর সে শান্তি ও সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার দাবী করতে পারে না। যে কোন সময় তাঁর উপর প্রতিপক্ষ শক্তির আক্রমণ হতে পারে। যা বিপন্ন করে তুলবে তাঁর ইযযাত ও জীবনকে।
বন্ধুরা! আল্লাহর নবীর চেয়ে দ্বীনি কাজে কারো বেশী ব্যস্ততা ছিল না। এ উম্মতের জন্য তাঁর চেয়ে অধিক দরদীও আর কেউ হবে না। সেই দরদী তার প্রিয় উম্মতের নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা ও আত্মিক চিকিৎসার জিহাদের পথই গ্রহণ করেছিলেন।
শত ব্যস্ততার মাঝেও সেই দরদী নবী মাথায় শিরস্ত্রাণ ও গায়ে বর্ম পরে তরবারী হাতে ঘোড়ার পিঠে চড়ে রণাঙ্গনে ছুটে গিয়েছেন।
আমার প্রিয় মুসলিম ভায়েরা! মেসওয়াকের সুন্নতের প্রতি যেমন আপনার আমল ও আন্তরিকতা রয়েছে, অনুরূপ তরবারীর সুন্নাতের প্রতিও আপনার আমল ও গুরুত্ব থাকা একান্তই জরুরী।
পাগড়ী নবীর সুন্নাত এতে সন্দেহ নেই। অনুরূপ  এ কথাও নির্দ্দ্বিধায় স্বীকার করতে হবে, শিরস্ত্রাণ পরাও নবীরই সুন্নাত।

 

বিজয়ী নবীর আচরণঃ

আল্লাহর নবী বিজয়ীর বেশে মক্কায় প্রবেশ করলেন, যে মক্কা থেকে এক দিন তিনি নির্বাসিত হয়েছিলেন-আজ তিনি বর্ম আর শিরস্ত্রাণ পরে ঘোড়ার পিঠে চড়ে কাঁধ পর্যন্ত ঝুলন্ত ঝাকরা বাবরী দুলিয়ে এক অপূর্ব ভঙ্গিমায় মক্কায় প্রবেশ করলেন। কাবা ও মক্কাকে প্রতিমা, প্রতিমামন্ডপ ও শিরকের মলিনতা থেকে পবিত্র করে কয়েকজন দাগী অপরাধীকে হত্যার ফরমান জারি করলেন।
বহুদিন পর নিবীজি স্বাধীনচিত্তে ঘুরে ফিরে মক্কা নগরী দেখছিলেন। এমন সময় এক লোক এসে সংবাদ দিল, হে আল্লাহর রাসূল! ইবনে খতল নামক যে কাফির আপনার ব্যাপারে অশালীন মন্তব্য করত, সে এখন কাবার গিলাফ ধরে ঝুলে আছে। তখন প্রিয় নবী অত্যন্ত চমৎকার এক ভঙ্গিতে বিজয়ী ও একজন ফিল্ড মার্শালের মত সামান্য ঘাড় এলিয়ে এবং মাথা থেকে শীরস্ত্রাণ খুলতে খুলতে অত্যন্ত গম্ভীর কণ্ঠে নির্দেশ দিলেন, 'যাও, ইবনে খতলকে ওখানেই হত্যা কর।'
রাসূলের জীবনের এ ঘটনাটি পড়ে আনন্দিত ও শিহরিত হয়েছি। ভক্তির আতিশয্যে তখন বলছিলাম, নবীজির পবিত্র পদচুম্বন করে যদি নিজেকে ধন্য করে তুলবার সুযোগ পেতাম!
হে আল্লাহ্! আমাদের এমন পরিস্থিতি ও পঠভূমি দান করো, আমরাও যেন কোন অমুসলিম দেশে বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করে নবীর এই সুন্নতকে জীবন্ত করার সুযোগ পেয়ে ধন্য হই।

 

প্রিয় বন্ধুরা!

আল্লাহ্ পাক বলেছেনঃ
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ
'তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করা হলো।'
আমাদের যারা এখনো এ গুরুত্বপূর্ণ ফরয দায়িত্ব পালন থেকে বিমুখ বা বিরত রয়েছেন, তারা মহাপাপ করেছেন। তারা তাওবা করুন। নতুবা আমাদের সকলের উপর আল্লাহর গযব আপতিত হতে পারে।
হে আল্লাহ্! আমাদের সকলকে ক্ষমা করো! হে আল্লাহ্ শহীদগণ জান্নাত ও মুক্তির পথ আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু আমরা পিছনে পড়ে আছি। হে আল্লাহ্ আমাদের ক্ষমা করে দাও!
হে আল্লাহ্ তোমার মসজিদ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, আমরা মুখে শুধু এ জঘন্য অন্যায়ের প্রতিবাদ করছি, অন্যায় অপরাধে সমগ্র বিশ্ব আজ ছেয়ে গেছে, আমরা সর্বক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ করে সে সব অন্যায় অপরাধ রুখছি না, রুখতে পারছি না। আমাদের এই অপরাধ ও অপরাগতাটুকু ক্ষমা করে দাও।

 

অনুবাদঃ মনযূর আহমাদ