JustPaste.it

নবীন মুজাহিদদের পাতা

=======================================================================

 

গল্প নয়

সম্রাটের স্বপ্ন

আরশাদ ইকবাল

--------------------------------------------

        স্বচ্ছ আকাশে পূর্ণিমার ভরা চাঁদ। নিঝুম নিস্তব্ধ রজনী। মাঝে মাঝে নিশাচর পাখির দল বিচিত্র কাকলি তুলে উড়ে যাচ্ছে এদিক সেদিক। উড়ন্ত মেঘমালার ফাঁকে ফাঁকে চাঁদের কিরণ গলে গলে পড়ছে। দিবসে কর্মক্লান্ত নগরী নিদ্রা শয্যায় সিগ্ধ কোমল ক্রোড়ে গা এলিয়ে বিভোর-অচেতন।

 

        সম্রাট শাহজাহানের কামরার বাতিটি জ্বলে উঠলো। আড়মোড়া দিয়ে বিছানায় বসলেন শাহাজাহান। মানসপটে চিন্তার শুভ্র মেঘমালা উড়ে যাচ্ছে। তাঁর মুখভাব গম্ভির। বিছানা ছেড়ে উঠে এলেন। বাতায়নের কপাট খুলে দাড়ালেন। শীতল স্নিগ্ধ এক পশলা বায়ু পরশে স্বর্গীয় সুধা অনুভব করলেন তিনি। দুরে বহু দূরে পূর্ব দিগন্তে উষার আগমন বার্তা বয়ে ক্ষীণ আলোর ছড়াছড়ি।

 

        সম্রাট শাহজাহান অজু করে সালাত আদায় করলেন। মোনাজাত করলেন, প্রভু আমার হে বিশ্বপতি, স্বপ্নে দেখা সুরম্য মসজিদটির মত একটি মসজিদ নির্মাণের তৌফিক দিন। দ্বীনের থিদমত করার সামর্থ দিন।

 

        প্রভাতে সম্রাটের আহবানে দিল্লীর প্রখ্যাত প্রকৌশলীরা এসে রাজ দরবারে উপস্থিত হলো। সম্রাট তাদের স্বপ্নে দেখা মসজিদের আকার আকৃতি খুলে খুলে বিস্তারিত বিবরণ দিলেন। অনুরোধ করলেন। প্রত্যেকে সাধ্যানুযায়ী হৃদয় মাধুরী দিয়ে নিষ্ঠার সাথে এক একটি প্রতিকৃতি এঁকে দিলেন কিন্তু কারো প্রতিকৃতি সম্রাটের স্বপ্নে দেখা মসজিদের সাথে হুবহু মিললো না।

 

        বিষম চিন্তায় সম্রাট শাহজাহান। যে করেই হোক তিনি স্বপ্নের দেখা মসজিদ বানাবেনই। কিন্তু কে তার প্রতিকৃতি এঁকে দিবেন।

 

        দিল্লীতে তখন এক দরবেশ ছিলেন। জনপ্রিয়তা ছিলো তাঁর ব্যাপক। খ্যাতি ছিলো সর্বত্র। সম্রাট দরবেশের সরণাপন্ন হলেন। সব খুলে বলে তার নিকট পরামর্শ চাইলেন।

 

        সম্রাটের কথা শুনে দরবেশ গম্ভীর হয়ে গেলেন। চোখ বুঝে যেন চিন্তার সাগরে ডুবে আছেন। কিছুক্ষণ পর মুখ তুলে বললেন, এর সমাধান আমার কাছে নেই। আমার চেয়ে কামেল তোমার প্রসাদ বাবুর্চি, তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করো।

 

        দরবেশের কথায় সম্রাটের বিস্ময়তা সীমা ছাড়িয়ে গেল। বোবা দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রাইলেন দরবেশের দিকে। তারপর ফিরে এলেন প্রাসাদে। বাবুর্চিকে ডেকে এনে বিনিত কণ্ঠে ক্ষমা প্রার্থনা করে আদ্যপান্ত ঘটনা বিবৃত করলেন এবং তার স্বপ্নে দেখা মসজিদের ছবি এঁকে দিতে তার নিকট সদয় সাহায্যের আবেদন করলেন।

 

        সম্রাটের কথায় বাবুর্চি ধ্যানমগ্ন হলেন। মুহূর্ত কাল পর বললেন, সম্রাট মহোদয়! এর সমাধান আমার সাধ্যে নেই। আমার চেয়ে কামেল ব্যক্তি আপনার প্রসাদ মেথর। তাঁকে জিজ্ঞেস করুন।

 

        বাবুর্চির কথায় বিস্ময়ের আতিশয্যে সম্রাট ‘থ’ বনে গেলেন। তাঁর আবেগাকুল হৃদয়, হু হু করে কেঁদে উঠে। চোখের তারায় অশ্রু ছলছল করছে। আল্লাহ! একী তোমার লীলা। একী সব ঘটছে। ডেকে আনলেন প্রসাদ মেথরকে। ক্ষমা ভিক্ষা চেয়ে বিনয় নম্র কণ্ঠে তাঁর স্বপ্নে দেখা মসজিদের কথা তাঁকে বললেন এরং প্রকৌশলীদের ব্যর্থতার কথা বলে তার সদয় সহায়তা কামনা করলেন।

 

        ছদ্মবেশী মেথর মৃদু হাসলেন। বললেন, এতো প্রকৌশলীদের কাজ নয়, এতো বেহেশতের মসজিদ। তারপর একজন দক্ষ শিল্পীর সহায়তায় মেথর ছদ্মবেশী বুযুর্গ স্বপ্নে দেখা মসজিদের প্রতিকৃতি এঁকে দিলেন এবং বললেন, মনে রাখবেন, যার কখনো আসরের চার রাকাত সুন্নত কাযা হয়নি সে ব্যক্তি এই মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবে। তারপর আর কোনদিন সে ছদ্মবেশী দরবেশকে দিল্লীর পথে ঘাটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

 

        সম্রাট শাহজাহান মসজিদের প্রতিকৃতি পেয়ে যার পর নাই আনন্দিত হলেন। সর্বাঙ্গীন সুন্দর, মনোরম এক স্থান নির্বাচন করে ভিত্তি প্রস্তরের সব আয়োজন পূর্ণ করলেন এবং দেশের প্রখ্যাত আলিম ওলামা বুজুর্গদের সমবেত করে ঘোষণা দিলেন, আপনাদের মাঝে যার কখনো আসরের চার রাকাত সুন্নত কাযা হয়নি তিনিই এ শাহী জামে মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন।

 

        ঘোষণার পর গোটা মজলিসে অখণ্ড নিরবতা নেমে এলো। পিন পতনের শব্দও নেই। দীর্ঘক্ষণ কেটে গেল এভাবে। অবশেষে সম্রাট শাহজাহান নিজেই অগ্রসর হলেন এবং ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে কেঁদে কেঁদে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি কতো রহস্যময়, আমি জানতাম না যে, তুমি আমাকে এভাবে প্রকাশকরবে৷ যখন তা করলেই তবে আমাকে মাফ করে দাও, আমার সব আমল কবুল করে নাও।

 

        কথিত আছে, জনতা ঠেলে জনৈক ব্যক্তি সম্রাটকে প্রশ্ন করেছিলেন, সম্রাট মহোদয়, এতো উঁচুতে কেন শাহী মসজিদ নির্মাণ করছেন?

 

        উত্তরে আবেগভরা কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন, আমার মৃত্যুর পর যখন ছোট বড় প্রজারা উচুঁতে মসজিদে আল্লাহর সিজদায় পরে থাকবে তখন আমি প্রজাদের পায়ের নিচে, বহুনিচে তাদের দোয়ার ভিক্ষুক হয়ে প্রতীক্ষায় থাকবো।

 

 

উসতুনে উকুদ

রুবাইয়াত আল-ইমাম

--------------------------------------------

        মহানবী (সাঃ) শুধুমাত্র এক জন ধর্ম প্রবর্তক ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন দ্বীন প্রতিষ্ঠাকারীও। তিনি একদিকে যেমন দ্বীন প্রতিষ্ঠা করেছেন, তেমনি একটি স্বতন্ত্র জাতি, একটি সাম্রাজ্যও প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।

 

        তিনি একাধারে নবী, রাসূল, জাতি স্রষ্টা, সেনাপতি, সমাজ সংস্কারক, সংগঠক এবং রাষ্ট্র নেতা।

 

        মহানবী (সাঃ)-এর নিকট ধর্ম, দ্বীন, রাষ্ট্র তথা রাজনৈতিক কারণসহ অনেক কারণে বিভিন্ন গোত্র, জাতি ও দেশের প্রতিনিধিবর্গ আসতেন। তিনি সবাইকে সাক্ষাত দিতেন। কথা বলতেন। সমাধান দিতেন। কাউকেই তিনি নিরাশ করতেন না। ঘৃণা করতেন না।

 

        যে সব গোত্র বা দেশের প্রতিনিধি তাঁর খেদমতে আসতেন, তাদেরকে মসজিদে নববীর একটি নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করতে দিতেন এবং ওখানে সাক্ষাত দিতেন। যে স্থানে এসব প্রতিনিধিরা অপেক্ষায় থাকতেন এবং মহানবী (সাঃ) সাক্ষাত দিতেন সেই স্থানে নির্মিত হয়েছে একটি স্তম্ভ। উত্তুনে উকুদ বা প্রতিনিধি বর্গের স্তম্ভ।

 

        মহাবীর (সাঃ) পররাষ্ট্র বিষয়ক কার্যক্রম এবং প্রতিনিধি বর্গের সাথে আলোচনার স্মৃতি বহন করছে এরই মুবারক স্তম্ভটি।

 

 

উসতুনে আয়েশা

--------------------------------------------

        “আমার মসজিদের মধ্যে এমন একটি স্থান রয়েছে, লোকেরা যদি সেখানে নামায পড়ার সওয়াবের কথা অবগত হত তাহলে লটারী দিয়ে সেখানে নামায আদায়ের ব্যবস্থা করতে হতো।”

 

        একদিন এ কথা গুলো বললেন মহা নবী (সাঃ)। কিন্তু স্থানটির কথা কাউকে বললেন না। শুধুমাত্র মুমিন জননী হযরত আয়েশা (রাঃ) জানতেন স্থানটি কোথায়।

 

        মহানবী (সাঃ) স্থানটির কথা অন্য কাউকে বলে যাননি। এ কারণে হযরত আয়েশা (রাঃ)ও আর কাউকে বলেননি। মহানবীর (সাঃ)এর ওফাতের পর হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বোন পো বা বোনের ছেলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর-এর পিড়াপিড়িতে তাঁকে তিনি স্থানটির কথা জানান।

 

        পরে সেখানে একটি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। হযরত আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক স্থানটি নির্দিষ্ট হওয়ায় এর নাম রাখা হয় উস্তুনে আয়েশা বা আয়েশা স্তম্ভ।

 

 

 

উসতুনে মুহাজিরীন

--------------------------------------------

        যারা ইসলামের জন্য নিজের ঘর-বাড়ি, সম্পদ ছেড়েছেন দেশ ত্যাগ করেছেন তারাই মুহাজির।

 

        ইসলামের সূচনা যুগ। যখন মানুষ এক দুই করে ইসলাম গ্রহণ করছে। তখন পৌত্তলিক আরবরা তাদের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন শুরু করে। তাদের এই অন্যায় অত্যাচার যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন মহান প্রভু আল্লাহর নির্দেশে মুসলমানরা পার্শ্ববর্তী দেশ ইয়াসরাবে হিযরত করেন। যারা ইসলামের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন তাঁরা হলেন মুহাজির।

 

        হিযরত মানে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়া। দেশ ত্যাগ করা। আর যাঁরা ইসলামের জন্য মক্কা ত্যাগ করেছিলেন তারা হলেন মুহাজির-এতো আগেই রলেছি।

 

        আর মুহাজিরীন হলো মুহাজির-এর বহু বচন। তাহলে উসতুনে মুহাজিরীন মানে হলো দেশত্যাগীদের স্তম্ভ। উসতুনে মুহাজিরীন আল্লাহর রাসুলের স্থাপিত মিম্বার এবং তাঁর হুজরা শরীফ থেকে গননা করলে তৃতীয় স্থানে এই স্তম্ভের অবস্থান। এখানে যেসব সাহাবী ইসলামের জন্য দেশ ত্যাগ করতেন তাঁরা অবস্থান করতেন।

 

        দ্বীনের খাতিরে যারা বিষয়-সম্পদ, আত্নীয়-স্বজন এবং দেশ, জাতি ত্যাগ করে রিক্ত-নিঃস্ব হয়েছিলেন, তারা এসে এ এখানে আশ্রয় নিতেন। তাদের সে পবিত্র স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য নির্মিত হয়েছে এখানে উসতুনে মুহাজিরীন। এই মুবারাক স্থানে নফল নামায পড়ার ফজিলত অনেক।

 

        উসতুনে মুহাজিরীন আমাদেরকে ইসলামের জন্য ঘর বাড়ি, আত্মীয়-স্বজন, স্বদেশ, স্বজাতি ছেড়ে আসার প্রয়োজন হলেও তা করতে হবে বলে শিক্ষা দেয়। দ্বীনের জন্য, রাসুলের আদর্শের জন্য, আল্লাহর নিয়ম প্রতিষ্ঠার জন্য বিষয় সম্পদ ত্যাগ করে হিষরত করার ইতিহাস ধরে রেখেছে এই উসতুনে মুহাজিরীন।

 

        আমাদের জানতে হবে আমাদের অতীত। আমাদের ঐতিহ্য আদর্শ। আমাদের ইতিহাস। শিক্ষা নিতে হবে আমাদের অতীত থেকে। ঐতিহ্য আদর্শ ইতিহাস থেকে সবক নিয়ে পথ চলতে হবে। হৃত গৌরব প্রতিষ্ঠা করতে হবে ওই পথেই। ওই নিয়মেই যে নিয়ম দিয়ে গেছেন আল্লাহর রাসুল। আমাদের চলতে হবে ওই পথে যে পথে চলেছেন নবী মুহাম্মদ (সাঃ)। চালিয়েছেন তাঁর সাহাবীদের।

 

        এ স্তম্ভ আমাদের শিক্ষা দেয় দ্বীনের জন্য, নবীর জন্য আর আল্লাহর দেয়া আদর্শের জন্য ত্যাগ স্বীকারকারীদের কদর অনেক বেশী। তাদের মর্যাদা অনেক অনেক বেশী।

 

 

═──────────────═