JustPaste.it

দেশে দেশে ইসলামঃ

 

ফিলিপাইনে মুসলিম জাগরণের সাহসী নকীব হাসেম সালামত ও তার ইসলামী মুক্তি ফ্রন্টের অজানা কথা

নাসীম আরাফাত

===================================================================

 

        সুবিশাল প্রশান্ত মহাসাগর আর চীন সাগরের মাঝে সমুদ্রের সুকোমল বুকচিরে জেগে উঠেছে অসংখ্য দ্বীপ। দ্বীপে দ্বীপে ভরা এই দ্বীপপুঞ্জটির নাম ফিলিপাইন। নৈসর্গের শ্যামল সুন্দর তরুরাজী, পাখির কুঞ্জন আর বারিধারার সুমধুর কলতান হৃদয়কে করে মুগ্ধ, বিমােহিত। প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে ১৪৫০-৬০ দশকে আগত মুসলিম মুবাল্লিগরা মাতৃভূমির কথা ভুলে এদেশেই গড়ে তুলে নিজস্ব আবাসভূমি। নিবিষ্ট মনে দাওয়াতের কাজ করতে থাকে। অনেকে আবার বুনি ও সুলু সূলতানদের চাকরি করতে থাকে। নবাগত এই মুসলমানদের আচার-আচরণ ও ব্যবহার মাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে সুলু, পালােয়ান ও মিন্দানাও দ্বীপের জনসাধারণের মাঝে অভুতপূর্ব জাগরণের সৃষ্টি হয় স্বেচ্ছায় দলে দলে তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়।

 

        এসব নতুন মুসলিম জনবসতিগুলােতে নতুন সমাজ, নতুন আদর্শ ও সংস্কৃতির ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। একেকটি মসজিদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে নতুন শাসন ব্যবস্থা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রশাসনে বিভক্ত স্বায়ত্ত শাসিত এই অঞ্চলে মুসলমানরা পরম নিশ্চিন্তে, সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তিতে জীবন যাপন করতে থাকে।

 

        ১৫২১ সালে পাশ্চাত্যের দুর্ধর্ষ নাবিক ম্যাগিলান ফিলিপাইন আবিস্কার করেন। এরপর ইউরােপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলাে একের পর এক বণিকের বেসে এসে হাজির হতে থাকে। এদের মধ্যে স্পেনীয়রা প্রভূত শক্তি অর্জন করে মুসলিম শাসকদের জন্য হুমকি হয়ে দাড়ায়। ম্যানিলায় তখন মুসলিম রাজা সুলাইমানের শাসন চলছিলাে। স্পেনীয় বণিক গােষ্ঠী ও সুলতান সুলাইমানের মাঝে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। ১৫৭১ সালে এ যুদ্ধে সুলাইমানের পরাজয়ের সাথে সাথে ফিলিপাইনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে এবং স্পেনীয় খৃষ্টীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

        এরপর থেকে মুসলিম মুজাহিদরা ক্রমাগত জিহাদ করে আসছে। লাখ লাখ মুজাহিদের রক্তে ফিলিপাইনের মাটি হয়েছে রঞ্জিত। ইজ্জত আবরু হারিয়েছে শত শত মা বােন। বিরামহীন জিহাদের ফলশ্রুতিতে যখন স্পেনীয়দের শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছিলাে ঠিক তখনই আরেক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এসে হাজির হয়। ১৮৯৮ সালে আমেরিকানরা স্পেনীয়দের পরাজিত করে ফিলিপাইনের বুকে চেপে বসে। সাম্রাজ্যবাদী এই নব শক্তির বিরুদ্ধে আবার মুসলিম জনতা অস্ত্র তুলে নেয়। শুরু হয় মরণপন লড়াই। অবশেষে ১৯৪৬ সালে আমেরিকানরা ফিলিপাইন ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু যাবার আগে তাদেরই দোসর দেশীয় খ্রীস্টানদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়।

 

        সুদীর্ঘ এই চার শত বৎসর মুজাহিদদের রক্তের বিনিময়ে ক্ষমতার মসনদে পরিবর্তন এসেছে বার বার। কিন্তু মুসলমানরা ফিরে পায়নি তাদের হৃত অধিকার। পায়নি স্বাধীনতার উষ্ণ আমেজ। উদিত হয়নি তাদের ভাগ্য তারকা। স্পেনীয় শাসনামলে রােমান ক্যাথলিকরা সরকারী প্রত্যক্ষ সাহায্য-সহায়তা ও মদদপুষ্ট হয়ে গােটা ফিলিপাইনে খ্রীষ্টীয় মতবাদ প্রচার করে বেড়ায়। স্থানে স্থানে গির্জা নির্মাণ করে। ভিন্ন ধর্মীদের সুকৌশলে খৃস্ট ধর্মে দীক্ষিত করে। প্রশাসনিক পদসহ ব্যবসা বাণিজ্যে তাদের পৃষ্টপােষকতা করে। পরবতীতে আমেরিকানরাও তাদের ব্যতিক্রম কিছুই করেনি।

 

        কিন্তু অত্যাশ্চর্য বিষয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাজার অত্যাচার, অনাচার, ষড়যন্ত্র, আঁতাত ও হত্যাযজ্ঞ সত্ত্বেও আজও ফিলিপাইনে মুসলিম জনগণ তাদের অস্থিরতার কারণ হয়ে ই টিকে আছে। আকড়ে ধরে আছে তারা নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্য। মরণজয়ী এই দুর্ধর্ষ কাফেলার হৃদয়ের নিবিড় অঙ্গণে লালিত এই স্বাধীনতার স্বপ্নকে কেউ মুছতে পারবে না।

 

        সেদিন বেশী দূরে নয় যেদিন তাদের অধরে ফুটে ওঠবে সফলতার সুমধুর হাসি। সম্প্রতি আরবী প্রসিদ্ধ পত্রিকা আল ইসলাহের পক্ষ থেকে মরাে ইসলামী মুক্তি ফ্রন্টের চেয়ারম্যান হাসেম সালামতের এক সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। উক্ত সাক্ষাৎকারে তিনি ফিলিপাইনের মুসলমানদের বর্তমান বাস্তবচিত্র তুলে ধরেন। আমরা সেই সাক্ষাৎকারটি হুবহু সুধী পাঠক মহলের সামনে ভাষান্তর করে পেশ করলাম।

 

        ইসলাহঃ আশা করি আপনি মরাে মুসলমানদের বর্তমান সমস্যা সম্পর্কে আলােকপাত করবেন এবং ক্ষমতাসীন সরকার ও মরাে মুক্তি ফ্রন্টের মাঝে চলমান শান্তি আলােচনা কতটুকু ফলপ্রসু হতে পারে আর একে কেন্দ্র করে যে অপপ্রচার চলছে, এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?

 

        হাসেমঃ এক কোটি বিশ লক্ষ মরাে মুসলিম অধ্যুষিত এক বিশাল অঞ্চল দক্ষিণ ফিলিপাইন। এ অঞ্চলের মুসলমানরা সুদীর্ঘ চারশ বৎসর যাবৎ মুক্তি আন্দোলন করে আসছে। রক্ত দিয়েছে, অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেছে, মৃত্যুবরণ করেছে তবুও তারা মুক্তি আন্দোলন থেকে পিছপা হয়নি। বেনিয়া স্পেনীয়দের বিরুদ্ধে তিন শত বৎসর জিহাদ করেছে, তার পর সম্রাজ্যবাদী আমেরিকার বিরুদ্ধে চল্লিশ বছর এবং বর্তমানে দেশীয় খৃস্টানদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে যাচ্ছে। কিন্তু কোন শক্তি তাদেরকে স্তব্ধ করতে পারেনি। পারেনি তাদেরকে নিজস্ব ঈমান আক্বিদা থেকে একচুল হটাতে, পাশ্চাত্যের ঐতিহাসিকরাও আজ একথা স্বীকার করছে। কিন্তু বড়ই দুঃখের কথা হল যখন আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন ও জিহাদ অভিষ্ট লক্ষ্যের নিকটতর হচ্ছে, যখন আমাদের মুক্তি আন্দোলন এক চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছে ঠিক তখনই আলােচনার টেবিলে এসে মরাে মুক্তিফ্রন্ট আর অবিচল থাকতে পারেনি। খৃষ্টীয় শাসকদের হাতে স্বীয় অঞ্চলগুলোকে ছেড়ে দিয়ে তারা সম্মত হয়েছে।

 

        এরপর সম্প্রতি যখন খৃস্টান শাসক গােষ্ঠী ও আমাদের মাঝে জিহাদ এক চুড়ান্ত পর্যায়ে উপনিত আমরা আমাদের ইস্পিত লক্ষ্যে পৌছতে যাচ্ছি ঠিক তখনই লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলিতে ক্ষমতাসীন সরকার ও নূর মিসৌয়ারীর ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের সাথে এক শান্তি আলােচনা ঘােষিত হয়। কিছুদিন শান্তি আলােচনার ফলাফল গােপন রাখা হয়। তারপর ফিলিপাইনের রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমগুলাে, কথিত এই শান্তি আলােচনার স্বপক্ষে অকল্পনীয় প্রচার প্রচারণা চালায়। শান্তি আলােচনার আগামী বৈঠকটি ফিলিপাইনেই হওয়ার কথা ছিলাে। জনাব নূর মিসৌরী শান্তি আলােচনায় বিশ্বাসী। যারা হাজার হাজার মরাে মুসলমানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, হােলি খেলেছে বােনদের ইজ্জত নিয়ে, তিনি বারবার তাদের সাথে শান্তি আলােচনায় মিলিত হচ্ছেন। ১৯৭৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ আঠারাে বছর তার শান্তি আলােচনা কোন শান্তির দিশা দিতে পারেনি। মার্কোস, মিসেস একুইনাে এবং বর্তমান সামরিক ডিক্টেটর সরকার সবার সাথে শান্তি আলােচনা করেছেন এবং ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন।

 

        কিন্তু আমরা এধরনের শান্তি আলােচনা প্রত্যাহার করেছি। আমাদের বিশ্বাস দুশমন আমাদের মাতৃভূমি জবর দখল করে আছে। তাদের সশস্ত্র বাহিনী আমাদের মাতৃভূমিতে অবস্থান করছে। শুধু আলােচনার মাধ্যমেই আমরা আমাদের হৃত অধিকার ফিরে পাবােনা। এটা সম্ভবও নয়। আমরা জানি ক্ষমতাসীন সরকারের এটা একটা দুরভিসন্ধি। এ শান্তি আলােচনার আবরণে তারা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গণে মরাে মুসলমানদের দাবীতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।

 

        ইসলাহঃ ফিলিপাইন ও ইসরাঈলের মাঝে সহযােগিতার কথাও কেউ কেউ বলছে এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?

 

        হাসেমঃ ইসরাইল-ফিলিপাইন সহযােগিতা চুক্তি বহুদিন আগে থেকে। এর সূচনা হয় ফিলিপাইনের খৃষ্টীয় সরকারের সামরিক শক্তিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সহযােগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। মুসলমানদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যেই এই সামরিক সহযােগিতার আয়ােজন। ক্ষমতাসীন সরকারের ধারণা ফিলিস্তিনী ও মুরাে মুসলমানদের জিহাদী আন্দোলনের ধারা সাদৃশ্যপূর্ণ। ফিলিস্তিনী স্বাধীনতা আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ব্যাপারে ইসরাঈল সরকারের দীর্ঘ ঘৃণ্য অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাছাড়া ফিলিপাইনের ইহুদীরাও মুসলমানদের নিঃসন্দেহে নির্মূল করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই তারা এ ব্যাপারে ইসরাঈলের সামরিক সহযােগিতা লাভ করে বেশ তৎপর হয়েছে। ইতিমধ্যে ইসরাঈল ফিলিপাইনকে অত্যন্ত দ্রুতগামী ও শক্তিশালী কিছু নৌযান সরবরাহ করেছে যা ফিলিপাইনের বিভিন্ন দ্বীপের সাথে সংযােগ বজায় রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলাে মুজাহিদদের বােটগুলােকে ধাওয়া করে ডুবিয়ে দিতে খুব কার্যকর।

 

        তাছাড়া মুজাহিদদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য তারা বহু অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ও দিয়েছে। ফিলিপাইনে এখন ইহুদী মিশনারীগুলাে খুব তৎপর। প্রতিমা পূজারী গােত্রগুলােতে এখন তারা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করছে। মিশনারী দলগুলাে সেখানে পুরােদমে তাদের প্রচারণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নিঃস্ব, অসহায় মূর্তিপূজকদের বিপুল আর্থিক সহায়তা করছে। ইসরাঈলের সাহায্যপুষ্ট স্থানীয় ইহুদীরাও বিপুল উদ্যমের সাথে, ইহুদীবাদ প্রচারে প্রতিমাপূজারীদের আবাসভূমিতে কয়েকটি ইহুদী বস্তী গড়ে উঠেছে। এই তাে সেদিন মরাে ইসলামী মুক্তিফ্রন্টের সদস্যরা একটি মুসলিম অঞ্চলের ঠিক মাঝে এক ইহুদী কলােনীর সন্ধান পায়। ইহুদীদের বক্তব্য এটা এমন এক অঞ্চল হবে যেখানে সব অঞ্চলের সব ধর্মের লােকেরা নির্বিঘ্নে সৌহার্দের সাথে বসবাস করবে। কিন্তু বাস্তবে তা এক শক্তিশালী ইহুদী বস্তিতে রূপান্তরিত হবে।

 

       ইসলাহঃ ইসলামী মুক্তি ফ্রন্ট ও জনাব নূর মিসৌরীর ন্যাশনাল ফ্রন্টের মাঝে সম্পর্ক কেমন?

হাসেমঃ মরাে ইসলামী মুক্তি ফ্রন্ট একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা ও শাসন ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। ইসলামী অনুশাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই আমরা জিহাদ করে আসছি। ইনসাআল্লাহ আমাদের বিজয় অবধারিত। আমরা খিলাফতে রাশেদার আলােকে ইসলামী অনুশাসন কায়েম করবাে। পক্ষান্তরে, জনাব মিসৌরী সাহেব সেকুলার শাসন ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। তবে শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ করার ব্যাপারে আমরা এক ও অভিন্ন। এখনাে আমরা একে অপরের বিরােধীতা করছি না। তবে দু'দলের চিন্তা-চেতনা, মন-মানসিকতায় দুস্তর ব্যবধান।

 

        আমাদের বিশ্বাস, আমাদের স্বাধীনতা ও হৃত অধিকার পুনরুদ্ধার এবং ইসলামী অনুশাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আল্লাহর পথে সর্বাত্মক জিহাদ, দাওয়াত ও তরবিয়্যতের কর্মসূচী ছাড়া অন্য কোন পন্থায় হাসিল হওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা চুড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এরা শুধু আমাদের মাতৃভূমিই ছিনিয়ে নেয়নি, এরা দেশবাসীর পবিত্র ধর্মের ও পর অন্যায়-অত্যাচার চালিয়েছে। আর জনাব নূর মিসৌরীর মুক্তি ফ্রন্ট রাজনৈতিক ভাবে এর সমাধানে বিশ্বাসী। তিনি শান্তি আলােচনাকেই লক্ষ্যে পৌছার মাধ্যম মনে করে। ক্ষমতার উচ্চাসনে পৌছা তার চূড়ান্ত লক্ষ্য। ইদানিং হােয়াইট হাউজে ফিলিস্তিন-ইসরাঈল শান্তি চুক্তি জনাব মিসৌরীর মনােবল আরাে বৃদ্ধি করেছে। ইসলাহঃ রাজনৈতিক পরিমন্ডলে আন্তর্জাতিকভাবে যে পরিবর্তন এসেছে তাতে কি আপনি মনে করেন যে, আন্তর্জাতিকভাবে এ সমস্যাটি তুলে ধরলে এর কোন সমাধান হবে?

 

       হাসেমঃ সারা বিশ্বে আজ অন্যায় অবিচার ও জালিমদের জয় জয়কার। দুর্বল শক্তিধরদের সামনে শীর নত করছে। আর এই শক্তিধররাতাে শুধু তাদেরই সহায়তা ও পৃষ্ঠপােষকতা করছে যারা ভূপৃষ্ঠ থেকে আল্লাহর দ্বীনকে মিটিয়ে দিতে বদ্ধ পরিকর। আমাদের বিশ্বাস এ অবস্থায় কেউ আমাদের প্রতি ন্যায় বিচার করবে না, আমাদের পক্ষে কেউ এগিয়ে আসবে না। আলজেরিয়া, বসনিয়া হার্জেগােভিনাই এর প্রকৃত প্রমাণ। আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের নীতিহীনতার কারণে আমরা মনে করি যদি সমস্যাটি আন্তর্জাতিকভাবে উত্থাপন করা হয় তবে তাতে শুধু ব্যর্থতার গ্লানিই নিহিত রয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে আমরা আশার ক্ষীণ আলােক রশ্মিও দেখতে পাচ্ছি না।

 

        তবে আমরা নিরাশ নই, আমরা একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করছি। আমাদের ঈমান ও বিশ্বাস যে, আল্লাহই সর্বশক্তিমান। তাঁর ইচ্ছা তার হিকমতে যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে আল্লাহ অবশ্যই তাদের সহায়তা করেন। তিনি অবস্থার এমন পরিবর্তন করে দিতে পারেন যে, আমরা আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে নির্বিঘ্নে পৌছতে পারবো।

 

       ইসলাহঃ জিহাদী এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আপনারা কোথা থেকে আর্থিক সাহায্য সহযােগিতা পেয়ে থাকেন? আর আপনাদের ব্যাপারে ইসলামী বিশ্বের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কি আপনারা সন্তুষ্ট?

 

       হাসেমঃ জিহাদী কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে যদি কেউ অন্য কাউকে সহযােগিতা করে তবে তা বলে বেড়াতে নেই। তবে ইসলামী বিশ্বের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে আমরা একথাই বলতে পারি যে, হয়ত মরাে মুসলমানদের দুর্দশা ও অবস্থার ভয়াবহতা সম্পর্কে ইসলামী বিশ্বের প্রকৃত ধারণা নেই। তারা হয়তাে জানেই না যে, মরাে মুসলমানরা এক অসহায় মুসলিম কওম, খৃস্টান শাসকরা যাদের মাতৃভূমিকে অন্যায় অত্যাচার করে ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা সুপরিকল্পিতভাবে তাদের নিঃশেষ করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। একের পর এক তাদের জীবন ধারণের উপকরণকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। দিন দুপুরে অর্থনিশি খৃস্টান সশস্ত্র বাহিনী তাদের বস্তিগুলােতে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। মা বােনদের ইজ্জত আবরু করছে রক্ত রঞ্জিত। তাদের হাহাকার, অসহায় আর্তনাদে পাথরেরও যেন চোখ ছেপে অশ্রু ঝরছে।

 

        যদি ইসলামী বিশ্ব মরাে মুসলমানদের প্রকৃত অবস্থার কিয়দাংশও জানতাে তবে নিঃসন্দেহে তারা এসে আমাদের পাশে দাড়াতাে, জালিমের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সাহায্য করতাে। ইসলামী বিশ্বের নিরব-নিস্পৃহ অবস্থা সম্পর্কে এ ছাড়া আমার আর কোন কারণ জানা নেই। তবে আমি আশা করবাে সত্যের সৈনিক সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাদের এ করুন দশা মুসলমানদের সামনে তুলে ধরবেন। এতে মুসলিম বিশ্বে মরাে মুসলমানদের সম্পর্কে জনমত তৈরী হবে। আর আমাদের প্রতি হবে আপনাদের আন্তরিকতার বহিপ্রকাশ।

 

        সরকার প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মিথ্যা বানােয়াট কাহিনী প্রচার করায় মুসলিম বিশ্বসহ অন্যান্যরা আজও জানে না যে, মরাে মুসলমানরা ফিলিপাইনের অধিবাসী; ফিলিপাইনই তাদের জন্ম ভূমি। তারাও ফিলিপাইনে এক আলাদা জাতিসত্তার অধিকারী।

 

       ইসলাহঃ কোন শক্তিগুলাে মরে মুসলমানদের ধ্বংস করতে ফিলিপাইনের পৃষ্ঠপােষকতা করছে। ফিলিপাইনের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলাে কি তবে মুসলমানদের নিঃশেষ করতে ঐক্যবদ্ধ?

 

       হাসেমঃ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলাে ফিলিপাইন সরকারের পৃষ্ঠপােষকতা করছে। বিশেষত ইহুদী ও খৃস্টান সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলাে খুবই তৎপর। ফিলিপাইনের রাজনৈতিক অঙ্গণে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তির কথা অস্বীকার করা যায়না। আর ফিলিপাইনের সবগুলাে রাজনৈতিক দলই মরাে মুসলমানদের বিরােধী। আজ এ তিক্ত বাস্তবতাকে অবশ্যই মুসলিম বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে হচ্ছে যে, পাশ্চাত্যের ক্রুসেডারদের সহায়তায়ই ফিলিপাইনের খৃস্টান শাসকরা মুসলিম শাসিত এলাকাগুলাে দখল করে নিয়েছে। অতীত ও বর্তমানের সকল শাসকরাই ক্রসেডারদেরই ইঙ্গিতে উঠা বসা করে। ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংসের ব্যাপারে তারা যে কোন পদক্ষেপ নিতে বিন্দুমাত্রও চিন্তা করে না। তাদের লক্ষ্য অদূর ভবিষ্যতে ফিলিপাইনকে প্রাচ্যের এক শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে হবে আর এ অভিষ্ট লক্ষ্যে একমাত্র বাধা হলাে মরাে মুসলমানরা।

 

        তারা সুবিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করছে। তাদের সমৃদ্ধ ও স্বতন্ত্র জ্ঞান বিজ্ঞান ও শিক্ষা সংস্কৃতির অবস্থান খৃস্টান নেতাদের দৃষ্টিতে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।

 

        আমাদের এই ক্রসেডার দুশমনদের মনে। ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে যদি জন্মগত বিদ্বেষ, হিংসা না থাকতাে তবে তারা মুসলমানদের নিঃশেষ করার পরিবর্তে এর একটা সুন্দর সমাধান খোঁজার চেষ্টা করতাে। তারা মরাে মুসলমানদের ভবিষ্যত তাদের হাতেই ছেড়ে দিতাে।

 

        আমরা বিশ্ব মুসলমানের দোয়া প্রার্থী। জিহাদই আমাদের মর্যাদা ও প্রতিষ্ঠার একমাত্র অবলম্বন। ইনশা আল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে আমরা ফিলিপাইনের বুকে ইসলামী সাম্যের পতাকা উড্ডিন করে ছাড়বাে, প্রতিষ্ঠিত করবাে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা।

 

 

 ═──────────────═