মাওয়ায়েযে থানুভী (রহ:) থেকে
নির্বাচিত কাহিনী
নিজে কাজ করো অন্যথায় করতে দাও
কোনো এক ময়দানে অনেক মৃত দেহ পড়েছিলো। তার মাঝে এক ব্যক্তি জীবিত ছিলো। সে মৃতদের মাঝে আহত হয়ে পড়েছিলো। রাতের অন্ধকার নেমে এলে নিজেকে লাশের সারির মাঝে দেখে দারুন ভয় পেলো লোকটি। লোকটি তাদের নিকট থেকে কাউকে যেতে দেখে কাছে ডাকলে সে ভয়ে উর্দ্ধোশ্বাসে পালায়। কারণ লোকটি এক ভয়াবহ স্থানে দাঁড়ানো। কারো সাহস হয় না তার কাছে যেতে। এমন সময় এক ব্যবসায়ী এদিক দিয়ে আসছিলো। আহত ব্যক্তি তাকে ডেকে বললো, ভাই! এই যে ভাই! লাশের স্তুপের মধ্য থেকে এমন এক আওয়াজ শুনে ভূত মনে করে লোকটি দৌড়ে পালায়। তবুও লোকটি তাকে বার বার ডাকতে ছিলো, এতে ব্যবসায়ীর ভয় কিছুটা দূর হলো। দূরে গিয়ে বললো, কি হে ডাকছো কেন? আহত ব্যাক্তি বললো, ভয় নেই এদিকে এসো। আমি আহত, দারুন অসহায়, আমাকে বাঁচাও। কাছে এসো, শুন, আমার কোমরে একটি টাকার থলে আছে। ওটা খুলে নাও। লোকটি ছিলো ভীষণ লোভী। টাকার কথা শুনে ভয়ের কথা ভুলে যায়। টাকার থলে কব্জা করার জন্য আহত লোকটির কাছে যায়। নিকটে পৌছলেই আহত ব্যক্তি কোমর থেকে তলোয়ার বের করে কষে এক ঘা মারল তার পায়ে। পায়ের নলা কেটে গেলো কিন্তু লোভী আর তাতে মানে! এরপরও সে তার কোমরে টাকা তালাশ করতে লাগলো। কিন্তু কিছুই পেলো না। আশ্চর্য হয়ে এবার বললো, আরে কি ব্যাপার, টাকা কোথায়! আহত ব্যক্তি বললো, কি করবো, অসহায় অবস্থায় একা একা পড়েছিলাম। কেউ কাছে আসে না, যাকে ডাকি সেই ভয়ে পালায়; খুব ভয় লাগছিলো। তোমাকে সারা রাত পাশে পাওয়ার জন্যই এই. কৌশলের আশ্রয় নিলাম। আমি আর তুমি সারা রাত কথা বলবো।
উল্লেখ্য যে, আমাদের অবস্থাও আজকাল এমনই হয়ে দাড়িয়েছে। নিজেতো কিছুই করি না, অন্য কেউ করতে চাইলে তাকেও করতে দেই না। নানা দোষ বের করে তাকে কলংকিত করার চেষ্টা করি, এটা খুবই খারাপ কথা এবং নিচু মন মানসিকতা। মনে রাখতে হবে, কেউ কোন ভাল কাজ করতে চাইলে তাকে পূর্ণ সহায়তা করা দরকার।
দৃষ্টি সর্বদা আল্লাহর প্রতি রাখা চাই
আমীরুল মোমেনীন হযরত উমর (রাঃ) হযরত খালিদ বিন অলীদকে (রা) এমন এক মুহুর্তে প্রধান সেনাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন যখন হযরত খালিদ বিন অলীদ সিরিয়া আক্রমনের জন্য দামেস্ক অবরোধ করে রেখেছিলেন। দু'টি কারণে হযরত ওমর (রাঃ) –এ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। প্রথমতঃ হযরত খালিদ বিন অলীদ (রাঃ)-এর অনুদান প্রদানের দু'একটি ঘটনাকে তিনি সহজে মেনে নিতে পারেননি। এ সবকে তিনি অপাত্রে অনুদান মনে করলেন।
দ্বিতীয়তঃ মানুষের মন থেকে. আল্লাহর প্রতি 'নির্ভরশীলতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়ে খালিদের শক্তিমত্তার প্রতি নিবন্ধ হচ্ছিলো। আর এটা খুবই খারাপ লক্ষণ। তাই তিনি সিরিয়ায় আবু ওবায়দা (রাঃ)-এর নিকট চিঠি পাঠালেন যে, আমি খালেদকে অব্যাহতি দিয়ে তোমাকে তার স্থলাভিষিক্ত করলাম; অথচ আবু ওরায়দা (রাঃ) কোন কৌশলী যোদ্ধা ছিলেন না, যুদ্ধে জেতার খ্যাতিও তার কম। তিনি ছিলেন একজন নির্মোহ বুযুর্গ ব্যক্তি। তাই লোকেরা হযরত ওমর (রাঃ)কে এ অনাকাংখিত পদক্ষেপের কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি দেখছিলাম মানুষের দৃষ্টি আল্লাহ থেকে সরে খালিদের উপর পতিত হচ্ছিলো। আমার ভয় হলো, আল্লাহর থেকে নির্ভরশীলতার দৃষ্টি সরে যাওয়ার কারণে আল্লাহর রহমত থেকে আমরা বঞ্চিত হব। আমরা তার অভিসম্পাতের পাত্র হব। তাই আমি খালিদকে পদচ্যুত করলাম।
উল্লেখ্য এটাই আমাদের পূর্ব পুরুষগণের আদর্শ। এখন তো নাস্তিকতা এমনভাবে বেড়েছে যে, কোন কাজেই আল্লাহর প্রতি মানুষের মন নির্ভরশীল হতে চায় না। এর অর্থ সর্বক্ষেত্রে এ নয় যে, আমরা জীবন-যাত্রায় উপকরণের সাহায্য গ্রহণ করব না। বরং কোন ক্ষেত্রেই আমরা উপকরণকে মূল লক্ষ্য রুপে স্থির করব না এটাই ইসলামের শিক্ষা।
আল্লাহর রহমত বাহানা চায়
সিবওয়াই আরবী ব্যাকরণ শাস্ত্রের ইমাম। একজন সুবিখ্যাত পন্ডিত। কিন্তু আকীদা বা বিশ্বাসগতভাবে তিনি ছিলেন মোতাজেলা সম্প্রদায়ের অনুসারী। আকিদাগত ক্রুটি থাকার কারণে মৃত্যুর পরে তার-কঠিন শাস্তি ভোগের সন্তাবনা ছিলো। কিন্তু মৃত্যুবরণ করার পরে জনৈক ব্যক্তি তাকে সপ্নযোগে দেখলো এবং জিজ্ঞাসা করলো আল্লাহ তায়ালা আপনার সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? সিবওয়াই বললেন, আল্লাহ আমাকে মাফ করে দিয়েছেন। লোকটি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কোন আমলের কারণে আল্লাহ আপনাকে মাফ করে দিয়েছেন! সিবওয়াই বললেন, আরবী ব্যাকরণের একটি মাসআলার কারণে আল্লাহ আমাকে মাফ করে দিয়েছেন। মাসআ'লাটি হলো ব্যাকরণবিদদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে যে,আরবী ভাষায় সবচেয়ে নির্দিষ্ট অর্থবোধক শব্দ কোনটি। কেউ বলেছেন, বক্তা নিজের জন্য যে সর্বনাম ব্যবহার করে তা হলো সবচেয়ে বেশী নির্দিষ্ট অর্থবোধক। কেউ বলেছেন, সম্বোধিত ব্যক্তির জন্য যে সর্বনাম ব্যবহার করা হয় তা-ই সবচেয়ে বেশী নির্দিষ্ট অর্থবোধক। আর আমি বলেছি, 'আল্লাহ' শব্দটি সবচেয়ে বেশী নির্দিষ্ট এবং সম্পূর্ণ। কারণ এতে এর দ্বারা আল্লাহর সত্ত্বা বুঝান বাতীত অন্য কিছু বুঝা ও বুঝানোর সামান্যতম অবকাশ নেই। উল্লেখ্য, ইমাম সিবওয়ায়ী একটি মাত্র মাসআলার কারণে চিরমুক্তি পেলেন। অথচ তিনি এ কাজটি কোন সাওয়াবের-নিয়তেও করেননি ভাষাগত পাণ্ডিত্যের ওপর ছিলো তার বক্তব্যের ভিত্তি। ভাষাবিদ হিসাবে আলোচনার প্রেক্ষিতে তিনি এ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। মহান আল্লাহ সিবওয়ারীর বিশ্বাসগত ত্রুটি থাকা সত্তেও তাকে মাফ করে দিলেন। অনন্তকালের জন্য তিনি মুক্তি পেয়ে গেলেন।
অনুবাদ: ম. আ. মাহদী