كتاب التحريض على القتال
কিতাবুত্ তাহরীদ ‘আলাল ক্বিতাল
মুস‘আব ইলদিরিম
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
بسم الله الر حمن الر حيم
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ حَرِّضِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ عَلَى ٱلۡقِتَالِ
"হে নবী! আপনি মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করুন।"
(সূরা আনফাল ০৮:৬৫)
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
“তাহরীদ ‘আলাল ক্বিতাল”: একটি ভুলে যাওয়া ফরযঃ
الحمد لله وحده والصلاة والسلام على من لا نبي بعده- أما بعد
বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি, মুসলিম উম্মাহর উপর একের পর এক অবিরাম আগ্রাসন, মুসলিম ভূমিসমূহ হতে মুসলমানদের উৎখাত ও জবরদখল, বন্দী ভাইদের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার আর মা-বোনদের বে-ইজ্জতি, মুসলিম দেশগুলোতে মুরতাদ সরকারের উপস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় উম্মাহর ‘হকপন্থী’ ফুকাহায়ে কেরাম এই মত পোষণ করেন যে- “বর্তমানে জিহাদ ও ক্বিতাল (সশস্ত্র যুদ্ধ) সারা বিশ্বের প্রতিটি সক্ষম মুসলমানের উপর ফরযে আইন, যতক্ষণ না মুসলিম ভূমিসমূহ আবারো পুনরুদ্ধার হচ্ছে, মুরতাদ সরকারগুলোকে হটানো হচ্ছে এবং সারা বিশ্বে খিলাফাহ কায়েম হওয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে। যুদ্ধ করতে সক্ষম কেউই এই হুকুমের বহির্ভূত নয়।”
‘ফরযে আইন’ বলা হয় আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘লার ঐ সকল ফরয হুকুমকে যেগুলো আদায় করা প্রতিটি মুসলমানের উপর আলাদাভাবে ব্যক্তিপর্যায়ে ফরয। যেমন: প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা, রমযান মাসে সিয়াম পালন করা, নামায শুদ্ধ হয় পরিমাণ কুরআন কারীম শুদ্ধ করা ও মুখস্থ করা ইত্যাদি।
আর যে সকল হুকুম আলাদাভাবে ব্যক্তিপর্যায়ে ফরয নয়, কিছু মুসলমান আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়, তাদেরকে ‘ফরযে কিফায়া’ বলা হয়। যেমন: জানাযার সালাত, কুরআন কারীম হিফয্ করা ইত্যাদি।
আর কিছু কিছু হুকুম অবস্থার আলোকে কখনো ফরযে কিফায়া আবার কখনো ফরযে আইন হয়ে যায়। যেমন জিহাদ করা/আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা; যা সাধারণভাবে ‘ফরযে কিফায়া’, ক্ষেত্র বিশেষে ‘ফরযে আইন’। বর্তমানে জিহাদ অবশ্যই ফরযে আইন, তথা ব্যক্তিগতভাবে সক্ষম প্রতিটি মুসলমানের উপর জিহাদ করা বর্তমানে ফরয। কেউ এই হুকুম পালন না করলে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নিকট ‘ফরয তরককারী’ (ফাসেক) হিসেবে গণ্য হবে; যদিও সে দ্বীনের অন্য কোনো শাখায় মেহনত করে থাকে।
দ্বীনের অন্য কোনো ক্ষেত্রে মেহনত করলেও যেমন সালাত আদায় করা কিংবা সিয়াম পালন করার হুকুম রহিত হয়ে যায় না, ঠিক তেমনি জিহাদ ফরযে আইন অবস্থায় অন্য কোন মেহনতের ওযরে জিহাদ পরিত্যাগ করা যাবে না। অবশ্যই প্রত্যেককে জিহাদ করতে হবে। নতুবা সে ফরয তরককারী (ফাসেক) হিসেবে গণ্য হবে, যদিও তিনি দ্বীনের অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘তারকাসম’(!) হন। এই অবস্থায় জিহাদ ত্যাগ করা ‘গুনাহে কবীরা’। আর একটি কবীরা গুনাহ্ই জাহান্নামে নেয়ার জন্য যথেষ্ট।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে জিহাদ করাটা মুসলিম উম্মাহর জন্য যতটুকু জরুরী, উম্মাহ ঠিক ততটুকুই গাফেল। উম্মাহ্ এখনো গভীর নিদ্রায় শায়িত। তাই এখন সময় উম্মাহ্কে জাগ্রত করার।
বর্তমানে জিহাদ যেমন প্রতিটি সক্ষম মুসলিমের উপর ফরযে আইন, ঠিক তেমনি জিহাদের জন্য সার্বিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে উম্মাহকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করা (তাহরীদ ‘আলাল ক্বিতাল)-ও ফরযে আইন; ঠিক যেমনটি সালাতের জন্য ওযু ফরযে আইন। কেননা জিহাদী আন্দোলনকে সফল করা তো আর একা একজন কিংবা দুয়েকজনের পক্ষে সম্ভবপর নয়। এরজন্য চাই সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সম্মিলিত প্রয়াস। সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে জাগ্রত করার লক্ষ্যেই আমাদের আজকের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস “কিতাবুত তাহরীদ্ আলাল ক্বিতাল”।
সশস্ত্র জিহাদ তথা ক্বিতাল/যুদ্ধের জন্য মুমিনদেরকে উৎসাহিত করার জন্য আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আদেশ করে ইরশাদ করেন,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ حَرِّضِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ عَلَى ٱلۡقِتَال
“হে নবী! আপনি মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করুন।”(সূরা আনফাল ০৮:৬৫)
فَقَٰتِلۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ لَا تُكَلَّفُ إِلَّا نَفۡسَكَۚ وَحَرِّضِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَۖ
“(হে নবী!) আপনি (একা হলেও) আল্লাহর পথে যুদ্ধ করুন; আপনার আপন সত্ত্বা ব্যতীত অন্য কারো দায় আপনার উপর বর্তাবে না (আপনার ডাকে অন্য কেউ যদি জিহাদ না করে তাহলে এজন্য আপনি দায়ী নন)। আর আপনি মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করতে থাকুন।” (সূরা নিসা ৪: ৮৪)
রাসূলুল্লাহ ﷺ এই ফরয দায়িত্ব আদায় করে আমাদের দেখিয়ে গেছেন কিভাবে তা করতে হয়- নিজে ময়দানে বীরত্ব প্রকাশের মাধ্যমে কিংবা কখনো জিহাদ ও শাহাদাতের ফাযায়েল বর্ণনা করে, কখনোও বা উত্তপ্ত ভাষণের মাধ্যমে, কখনো দুনিয়াবী যিন্দেগীর হাকীকত অনুধাবন করিয়ে আবার কখনোবা জান্নাতের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে। আর প্রিয় নবীর প্রিয় সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুম আযমাঈনগণও তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে উম্মাহকে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করে গিয়েছেন। কয়েকটি উদাহরণ-
*** উহুদ যুদ্ধের পরের ঘটনা। আবু সুফিয়ান (তখনও তিনি মুসলমান হননি) রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বদরের প্রান্তরে দ্বিতীয়বার যুদ্ধের আহ্বান করেন। নবীজী ﷺ তার এই আহ্বানকে সানন্দে গ্রহণ করেন। এদিকে আবু সুফিয়ান কুরাইশ নেতৃবৃন্দকে বলেন, তিনি সৈন্য পাঠানোর আগে মুসলমানদের ভীত-সন্ত্রস্ত করতে চান। তিনি এ লক্ষ্যে ইহুদীদের হাত করেন এবং দ্বিগুণ পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে তাদেরকে মদীনায় পাঠান। তাদের দায়িত্ব ছিল, মদীনায় গিয়ে এই গুজব ছড়ানো যে, কুরাইশরা বিশাল এক বাহিনী নিয়ে বদরে আসছে, যা ইতোপূর্বে মুসলমানরা দেখেনি। মদীনার মুসলমানরা এই গুজবকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। ফলে তাদের চেহারায় এক মারাত্মক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। শেষ পর্যায়ে এই গুজব এবং তাতে সাহাবায়ে কেরামের ভীতির কথা নবীজী ﷺ-এর পবিত্র দরবারে পৌঁছলে, তিনি সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
والذي نفسي بيده، لأخرجن وإن لم يخرج معي أحد
(হে সাহাবীরা! তোমরা যদি মূর্তি-পূজারী মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করতে ভয় পেয়ে থাক, তাহলে শুনে নাও!) যে সত্তার হাতে আমি মুহাম্মাদের প্রাণ, তাঁর নামে শপথ করে বলছি, কেউ না গেলেও আমি একাই তাদের মোকাবেলার জন্য বদরে যাবো।
নবীজী ﷺ-এর এক কথাতেই সাহাবায়ে কেরামের মাঝে গোজবের প্রতিক্রিয়া দূর হয়ে যায়। পরের দিনই মুসলমানরা বদরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। ঐদিকে আবু সুফিয়ানও প্রথমে তার বাহিনী নিয়ে বের হয়েছিলেন, কিন্তু অজানা ভীতির কারণে, মাঝপথ থেকে তিনি তার বাহিনী নিয়ে যুদ্ধ না করেই মক্কায় পালিয়ে যান। (আল মাগাযি লিল ওয়াকিদি, ৩৮৭/১)
*** রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবায়ে কেরামকে শাহাদাতের প্রতি উৎসাহ প্রদান করার জন্য নিজে শাহাদাতের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে ইরশাদ ফরমান,
والذي نفسي بيده لوددت أني أقتل في سبيل الله، ثم أحيا، ثم أقتل، ثم أحيا، ثم أقتل، ثم أحيا ثم أقتل
“সে সত্তার শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জান! অবশ্যই আমি আশা করি: আমি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে যাব এবং এতে শহীদ হয়ে যাব, এরপর আবার জিহাদে যাব এবং আবার শহীদ হবো, এরপর আবার জিহাদে যাব এবং আবার শহীদ হয়ে যাবো।” (বুখারী-৩১২৩ এবং মুসলিম-১৮৭৬)
*** মদীনায় রাসূলুল্লাহ্ ﷺ স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি এবং সাহাবায়ে কেরাম মসজিদে হারামে প্রবেশ করেছেন। তিনি কাবাঘরের চাবি গ্রহণ করেছেন এবং সাহাবাসহ তাওয়াফ করছেন। অতঃপর ষষ্ঠ হিজরীর পহেলা জিলকদ চৌদ্দশ, মতান্তরে পনেরশ সাহাবীসহ রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। সঙ্গে নিলেন মুসাফিরসুলভ অস্ত্র (কেবল কোষবদ্ধ তরবারি)।
মক্কার কুরাইশরা নবীজি ﷺ-এর আগমনের সংবাদ শোনামাত্রই পরামর্শ করে যে কোনো মূল্যে তাঁকে বাইতুল্লাহ্য় প্রবেশে বাধা দেয়ার সংকল্প করে।
নবীজি ﷺ সানিয়াতুল মারার নামক স্থানে উপস্থিত হলে বুদায়ল ইবনু ওয়ারাকা খুযাঈ তার খুযাআ গোত্রের কতিপয় ব্যক্তিদের নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর কাছে আসল। তারা তিহামাবাসীদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল ﷺ-এর প্রকৃত হিতাকাঙ্ক্ষী ছিল। বুদাইল বলল, আমি কা‘ব ইবনু লুওয়াই ও আমির ইবনু লুওয়াইকে দেখে এসেছি। তারা হুদাইবিয়ার প্রচুর পানির নিকট অবস্থান করছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে বাচ্চাসহ দুগ্ধবতী অনেক উষ্ট্রী। তারা আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ও বাইতুল্লাহ্ যিয়ারতে বাধা দেয়ার জন্য প্রস্তুত। তখন আল্লাহর রসূল ﷺ গর্জে উঠলেন,
إِنَّا لَمْ نَجِئْ لِقِتَالِ أَحَدٍ، وَلَكِنَّا جِئْنَا مُعْتَمِرِينَ، وَإِنَّ قُرَيْشًا قَدْ نَهِكَتْهُمُ الْحَرْبُ، وَأَضَرَّتْ بِهِمْ، فَإِنْ شَاءُوا مَادَدْتُهُمْ مُدَّةً، وَيُخَلُّوا بَيْنِي وَبَيْنَ النَّاسِ، فَإِنْ أَظْهَرْ فَإِنْ شَاءُوا أَنْ يَدْخُلُوا فِيمَا دَخَلَ فِيهِ النَّاسُ فَعَلُوا، وَإِلاَّ فَقَدْ جَمُّوا، وَإِنْ هُمْ أَبَوْا فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لأُقَاتِلَنَّهُمْ عَلَى أَمْرِي هَذَا حَتَّى تَنْفَرِدَ سَالِفَتِي، وَلَيُنْفِذَنَّ اللَّهُ أَمْرَهُ
‘আমি তো কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসিনি; বরং ‘উমরাহ করতে এসেছি। যুদ্ধ অবশ্যই কুরাইশদের দুর্বল করে দিয়েছে, কাজেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা চাইলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের সঙ্গে সন্ধি করতে পারি, আর তারা আমার ও কাফিরদের মধ্যকার বাধা তুলে নিবে। যদি আমি তাদের উপর বিজয় লাভ করি তাহলে অন্যান্য ব্যক্তি ইসলামে যেভাবে প্রবেশ করেছে, তারাও ইচ্ছা করলে তা করতে পারবে। আর না হয়, তারা এ সময়ে শান্তিতে থাকবে। কিন্তু তারা যদি আমার প্রস্তাব অস্বীকার করে, তাহলে সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার গর্দান আলাদা না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাব। আর অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (বুখারী-২৭৩২)
*** মুতার যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে এক ভয়াবহ অসম যুদ্ধ। এই যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ ﷺ তিনজন সেনাপতি নির্বাচন করে দিয়েছিলেন এই শর্তে যে, একজন শহীদ হলে আরেকজন পতাকা তুলে নিবেন। মুতার যুদ্ধে মাত্র তিন হাজার মুসলিম সৈন্য দুই লক্ষাধিক রোমান-আরব সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। মুসলমানরা এই বিশাল সংখ্যক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে প্রস্তুত ছিলেন না। আসলে তারা কল্পনাও করেননি, কাফেরদের বাহিনী এত বিশাল হবে। তাই সিদ্ধান্ত হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে পত্র পাঠিয়ে শত্রুর লোক লস্করের সংখ্যা জানাবেন। তিনি হয় আরো সৈন্য পাঠাবেন, নচেত যা ভালো মনে করেন নির্দেশ দিবেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রাদিয়ালাহু আনহু দাঁড়িয়ে গেলেন এবং মুসলমানদেরকে যুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করে এক জ্বালাময়ী ভাষণ দিলেন,
يَا قَوْمِ، وَاَللَّهِ إنَّ الَّتِي تَكْرَهُونَ، لَلَّتِي خَرَجْتُمْ تَطْلُبُونَ الشَّهَادَةُ، وَمَا نُقَاتِلُ النَّاسَ بِعَدَدِ وَلَا قُوَّةٍ وَلَا كَثْرَةٍ، مَا نُقَاتِلُهُمْ إلَّا بِهَذَا الدِّينِ الَّذِي أَكْرَمَنَا اللَّهُ بِهِ، فَانْطَلِقُوا فَإِنَّمَا هِيَ إحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ إمَّا ظُهُورٌ وَإِمَّا شَهَادَةٌ
“হে মুসলমানগণ! আল্লাহর কসম, আজ তোমরা যা অপছন্দ করছ সেটাই তোমরা কামনা করছিলে। আর তা হলো শাহাদাত। আমরা সংখ্যা-শক্তি বা সংখ্যাধিক্যের জোরে লড়াই করি না। যে জীবনব্যবস্থার দ্বারা আল্লাহ আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন সেটির জন্য আমরা লড়াই করি। অতএব এগিয়ে যাও, বিজয় বা শাহাদাত এ দুটো উত্তম জিনিসের যে কোন একটা অবশ্যই আমাদের জন্য নির্ধারিত আছে।” (সীরাতে ইবনে হিশাম, ৩৭৫/২)
এভাবে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করার অসংখ্য ঘটনায় সীরাত ও হাদীসের গ্রন্থসমূহ সমৃদ্ধ। সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য।
প্রিয় ভাই!
জিহাদ আল্লাহ পাকের বিধান। আর আল্লাহ পাক কারো উপর তার সাধ্যাতীত কোন কিছু চাপিয়ে দেন না। ইসলাম ফিতরাত তথা মানবের সহজাত প্রবৃত্তির ধর্ম। একজন মু’মিনের ‘ঈমান’ এমনি এক শক্তির নাম যা উপযুক্ত পরিবেশ, সঠিক দিক-নির্দেশনা এবং পথ প্রদর্শন পেলে বিস্ফোরিত হয়। তাই আমাদের এখন ফরয দায়িত্ব হলো একজন মুসলিমের সুপ্ত কিংবা গুপ্ত, অথবা বিলুপ্তপ্রায় সেই জিহাদী চেতনায় ঝড় কিংবা সাইক্লোন সৃষ্টি করা, আর এমন ঈমানী স্ফূলিঙ্গ তৈরী করে দেয়া যা জিহাদের দাবানলে পরিণত হয়ে দুনিয়ার তাবৎ বাতিলকে ভস্ম করে দিবে।
আল্লাহ পাক আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসকে কবুল করুন। আমাদের নাযাতের উসীলা বানান। আমাদেরকে মুজাহিদ ফী সাবীলিল্লাহ এবং দা‘ঈ ইলাল্লাহ হিসেবে কবুল করুন। এবং সর্বশেষে শাহাদাতের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে “রফীকে আ’লা”র সাথে মিলিত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন। ছুম্মা আমীন।
-মুস‘আব ইলদিরিম
২৩ রমযান, ১৪৪৩ হিজরি
(২৫ এপ্রিল, ২০২২ ঈসায়ী)
রাত ১২:৫৫ মি., রোজ সোমবার।
***************************************
প্রথম পর্ব:
আগ্নেয়গিরি হতে অগ্নুৎপাত
সূচিপত্র
কিছু ব্যথা: ১৬
উম্মাহ এলবাম (ফটো গ্যালারী): ২২
ফিলিস্তিন অধ্যায়: ২২
সিরিয়া ও ইরাক অধ্যায় : ২৭
‘গুয়ান্তানামো বে’ কারাগার অধ্যায়: ৩৩
উইঘুর অধ্যায়: ৩৫
কাশ্মীর, ভারত অধ্যায়: ৩৭
আরাকান (রোহিঙ্গা) অধ্যায়: ৪৩
কিছু আত্মসমালোচনা: ৪৮
ব্যথার ঔষধ: ৬৯
কিছু ব্যথা
সারা বিশ্বব্যাপী কুফ্ফারদের বিষাক্ত থাবার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত, রক্তাক্ত এক জাতির নাম ‘মুসলিম জাতি’। মাশরিক থেকে মাগরিব, শিমাল থেকে জুনুব - মুসলিম জাতি আজ ‘অসহায়’ বানে ভাসা খড়কুটার ন্যায়। যুগ যুগ ধরে যে জাতি বিশ্বকে নেতৃত্ব দিল, যে জাতি সম্মান ও ইজ্জতের স্বর্ণশিখরে আরোহন করেছিল, যে জাতি বিশ্ববাসীকে সভ্যতার আলোর সন্ধান দিয়ে আসল, আজ সে জাতিই অসভ্য, বর্বর কুফ্ফারদের আক্রমনের একমাত্র লক্ষ্য। আজ মুসলমানদের ইতিহাস মানেই রক্তক্ষরণের ইতিহাস। আজ মুসলমানদের ইতিহাস মানেই অপমান-অপদস্তি, যুলুম-নির্যাতন, ধর্ষণ-অপহরণ, গুম আর জেলবন্দির ইতিহাস। আজ মুসলমানদের ইতিহাস মানেই অধিকার হরণ আর পরাধীনতার ইতিহাস। আজ মুসলমানদের ইতিহাস মানেই ‘ঈমান বিক্রয়কারী’ মুনাফেক আর গাদ্দার কর্তৃক বিশ্বাসঘাতকতায় শিকার হওয়ার ইতিহাস। আজ মুসলিম দেশগুলোতে মুসলমানরা সংখ্যায় বেশি হওয়া সত্ত্বেও তাদের সাথে সংখ্যালঘুদের ন্যায় আচরণ করা হচ্ছে; ধর্মীয় স্বাধীনতা হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কিন্তু কেন আজ মুসলমানদের এই দুরবস্থা???
অথচ আমাদের ছিল এক সোনালী অতীত, গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য। একদিন অর্ধজাহান শাসন করেছি আমরা। পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে ঘোড়া ছুটিয়েছে আমাদের বীরেরা। আমাদের দেহ ছিল তেজোদ্দীপ্ত। শির ছিল উন্নত। সেদিন আমাদের খুনে স্ফূলিঙ্গ উঠতো, নিঃশ্বাসে লাভা ছড়াতো। সন্ধ্যাবেলা আমরা তাঁবুতে ফিরতাম ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহে, রক্তাক্ত বদনে। তথাপি গভীর রজনীতে আমাদের তাঁবুগুলো থেকে ভেসে আসতো কান্নার ধ্বনি। আমরা ছিলাম দিনের বীর, রাতের সন্ন্যাসী। কন্টকাকীর্ণ, দুর্গমগিরি আমাদের কাফেলাকে রুখতে পারেনি। তেমনি পারেনি সাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা। সমুদ্রবুকে ঘোড়া হাঁকানো সে তো আমাদের গর্ব। গভীর জঙ্গলে হিংস্র হায়েনার সাথে সহাবস্থান সে তো আমাদের ঐতিহ্য। এভাবেই ইতিহাসের পরতে পরতে আমরা জন্ম দিয়েছি অবিশ্বাস্য নানা বিশ্বাসের। পৃথিবীর কোথাও আমাদের কেউ লাঞ্ছিত হবে, এটি ছিল অসম্ভব। আমাদের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাবে, এটা ছিল অকল্পনীয়।
কিন্তু হায়! আজ সবই অতীত ইতিহাস। যেন রূপকথার গল্প। দুই চোখ মেলে পৃথিবীর চারিদিকে একটু তাকিয়ে দেখি, কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি আজ আমরা। চক্ষুদ্বয় অশ্রুসজল হয়ে যাবে। হৃদয় টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। জবান স্তব্ধ হয়ে যাবে। দেহ নিথর হয়ে আসবে। যেন হাহুতাশ আর আফসোস করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। কিন্তু কেন?
ইসলামের প্রাথমিক যুগে একবার মদীনায় আদমশুমারি হয়েছিল। তখন সাহাবায়ে কেরামের সংখ্যা ছিল মাত্র দেড় হাজারের মত। এই দেড় হাজার সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুম আযমাঈনগণকে নিয়েই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনাকেন্দ্রিক ইসলামী সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন, যার বিস্তৃতি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর যামানাতেই অর্ধপৃথিবী ছাড়িয়ে যায়।
প্রশ্ন হলো, পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন ও মুসলমানদের নিরাপত্তা কায়েমের জন্য যদি দেড় হাজার সাহাবীই যথেষ্ট হয়, তাহলে বর্তমান বিশ্বে একশ সত্তর কোটি মুসলমান গেল কোথায়?
লক্ষ লক্ষ হাফেয-আলেম-মুফতী, লেখক, গবেষক, তালিবে ইলম, সালেকীন-যাহেদীন, দাঈ-মুবাল্লিগ থাকা সত্ত্বেও কেন আজ মুসলমানদের এই হালত?
কেন আজ পশ্চিমা শক্তি মুসলিম বিশ্বের উপর অবিরত ক্রুসেড পরিচালনা করে যাচ্ছে?
কেন আজ মুসলমানদের ঘরে ঘরে কারবালার মাতম আর আহাজারি? কেন আজ মায়ের বুক খালি হচ্ছে, ভাইয়ের বুক থেকে রক্ত ঝরছে?
কেন আজ গর্ভবতী মায়ের গর্ভের শিশুকে স্নাইপার দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে?
কেন আজ দুধের অবুঝ শিশুর শাহাদাতের উপর মমতাময়ী মায়ের আহাজারি আর আর্তচিৎকার?
আজ কোন্ সাহসে একজন মাত্র খ্রিস্টান মসজিদে ঢুকে শতাধিক মুসলমানকে “ভিডিও গেমস খেলা”র মতো হত্যা করছে?
আজ কেন বোমার আঘাতে মুসলমানের দেহ টুকরা টুকরা হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে?
আজ কেন মুসলমানদের জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে, হত্যা করে গ্রামের পর গ্রাম, শহরের পর শহর বিরান করে দেয়া হচ্ছে?
আজ কেন মুসলমানদেরকে তাদের ভূমি থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে?
আজ কেন রাসায়নিক বোমা মেরে হাজার হাজার মুসলিম শিশুকে শহীদ করা হচ্ছে?
আজ কেন মায়ের বুক থেকে কোলের শিশুকে কেড়ে নিয়ে পদদলিত করে হত্যা করা হচ্ছে?
আজ কেন আফগান থেকে কাশ্মির পর্যন্ত, ইরাক থেকে ফিলিস্তিন পর্যন্ত, চেচনিয়া থেকে উইঘুর পর্যন্ত, মায়ানমার থেকে আসাম পর্যন্ত, ইয়েমেন থেকে সিরিয়া পর্যন্ত অভিশপ্ত ইহুদী আর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান মালাউনরা পানির মত সস্তা মনে করে মুসলমানদের রক্ত প্রবাহিত করছে?
আবু গারীব কারাগারের ফাতেমা নূর থেকে নিয়ে মুসলিম নারী ড. আফিয়া সিদ্দিকীর মত অগণিত বোনেরা কেন আজ তাদের বর্বরতার শিকার হচ্ছে?
আজ কেন আমার মা-বোনকে ধর্ষণ করে তাদের স্তন কাটা হচ্ছে? তাদের লজ্জাস্থান বিকৃত করা হচ্ছে?
আজ কেন আমার মা-বোনের গর্ভে কুকুর, শূকর আর হায়েনাদের ভ্রূণ প্রস্ফূটিত হচ্ছে?
আজ কেন বোরকা পরিহিতা আমার বোনকে হত্যা করে বুকের উপর পা রেখে জারজ হারামীর বাচ্চারা কফি খাচ্ছে?
কেন আজ মুসলমানদেরকে পতঙ্গের ন্যায় আগুনে পুড়িয়ে কুফ্ফাররা আনন্দ উল্লাস করছে?
গুয়ান্তানামো বে থেকে বাগরাম জেল পর্যন্ত, কেল্লায়ে জঙ্গী থেকে শিবারগান জেল পর্যন্ত এবং সিআইএ এর গোপন কারাগার থেকে নিয়ে মোসাদ আর ‘র’ এর বন্দীশালা পর্যন্ত, রিমান্ডের নামে কেন আজ হাজারো মুসলিম নওজোয়ান আমেরিকা ও তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গদের জুলুমের চাকায় নিষ্পেষিত হচ্ছে?
আজ তাগুতের কারাগারগুলোতে আমার মুসলিম ভাই-বোনদেরকে উলঙ্গ করে পিরামিড বানানো হচ্ছে; লজ্জাস্থানগুলোতে ইলেক্ট্রিক শক দেয়া হচ্ছে; নখ উপড়ে ফেলা হচ্ছে; নখের নিচে সুঁচ ঢোকানো হচ্ছে; বাঁশ-ডলা দেয়া হচ্ছে; দিন-রাত পিটিয়ে রক্তাক্ত করে শহীদ করে দেয়া হচ্ছে; কেন?
আজ কেন মসজিদ সমূহ আগুনে ভস্ম করা হচ্ছে? কুরআন কারীমকে জ্বালিয়ে অবমাননা করা হচ্ছে?
আজ কেন, কোন্ সাহসে মাল্উন হিন্দুরা নাপাক মূর্তির পায়ের নিচে কুরআন রেখে কুরআনের অবমাননা করছে? এই অবমাননা কি কেবল কুরআনের?? এই অবমাননা আল্লাহ্ তা‘আলার, এই অবমাননা আল্লাহর রাসূলের, এই অবমাননা প্রতিটি মুসলমানের!
আজ কেন মালাউন হিন্দুরা মুসলমানদেরকে “জয় শ্রীরাম” বলতে বাধ্য করছে?
গো-মূত্র পানকারী নাপাক হিন্দু সন্ত্রাসীরা ‘গরু কুরবানী’ করার অপরাধে কেন আজ মুসলমানদের হত্যা করছে?
আজ সারা দুনিয়ায় এত মুসলমান থাকতেও নাস্তিক-মুরতাদ জারজ-হারামীরা কেন, কোন্ সাহসে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে কটুক্তি করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে? আজ কিভাবে তারা আল্লাহর রাসূলের ব্যঙ্গচিত্র অংকন করার সাহস পাচ্ছে?
কী সেই কারণ, যার জন্যে মুসলমানদের প্রথম কেবলা ‘বাইতুল মাকদিস্’ নাপাক ইহুদীরা যেদিন দখল করে, সেদিন বুক ফুলিয়ে গর্বভরে বলছিল, “মুহাম্মাদ তো চলে গেছে, কিছু রমণী রেখে গেছে!”?
ইউরোপ-আমেরিকার গৃহপালিত জানোয়ার ইসরাঈল আজ কেন, কোন্ সাহসে ট্যাংক ও স্থলবাহিনী দিয়ে ঘেরাও করে গাজাকে মুসলমানদের জন্য এক অগ্নি-কারাগারে পরিণত করেছে?
আজ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত মুসলিম এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের নিকট কুফ্ফারদের বিমান থেকে বর্ষিত বোমা ছাড়া খাবার মতো কিছুই নেই, সেখানকার মুসলমানরা একবেলা আহারের জন্য হারাম কুকুর-বিড়ালও পাচ্ছেনা, কেন?
কিসের জন্য আজ মুসলমানরা বানে ভেসে আসা খরকুটোর মতো? কী
তার কারণ? কেন এমন হচ্ছে?.........
এলবাম লিংক:
https://archive.org/details/ummah-al...musab-yildirim
============•••============
কিছু আত্মসমালোচনা
আজ কোথায় পাশ্চাত্যের পা-চাটা গোলামেরা; ৫৭টি দেশের মুসলিম শাসকরা আজ কোথায়?
কেন আজ তারা অসহায় মুসলমানদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে না? কেন তারা মুসলমানদের পক্ষে যুদ্ধের পতাকা উত্তোলন করছে না?
ইসলামের শুরু হতে আজ পর্যন্ত আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা, হাকিম বিন জাবালাহ, আশতার মালিক, মুখতার ছাকাফী, হাসান বিন সাব্বাহ, ইবনে আলকমা, নাসীরুদ্দীন তুসী, ফাতেমী শিয়া, মীর জাফর, মীর সাদিক, ইয়াহিয়া খানের মতো মুনাফিকদের উত্তরসূরীদের খাতায় মুসলিম দেশের মুসলমান নামধারী শাসকবৃন্দ কেন তাদের নাম লিখিয়েছে?
আজ পৃথিবীর কোণায় কোণায় মুসলমানদের লাশের উৎকট গন্ধ! দিকে দিকে মুসলমানদের বিভৎস লাশ আর জীবিতদের অর্ধমৃত-মানবেতর জীবন!
এসব দেখেও কেন আজ বুক ফাটা কান্না আসে না?
এক মুসলমান মেয়ের ডাকে সিন্ধু বিজেতা মুসলিমের সন্তান পরিচয়দাতারা আজ ফাতেমা নূর, ড. আফিয়া সিদ্দিকী আর অন্যান্য শহীদানের ডাকে কেন ছটফট করে না?
এক খ্রিস্টান নারীর আহ্বানে স্পেন বিজয়ী মুসলমানের অনুসারীরা আজ ক্রুসেডীয় জুলুমের শিকার হাজারো বসতহীন মুসলিম বাচ্চাদের প্রতিরক্ষার জন্য কেন ময়দানে আসে না?
আজ কোথায় একশ সত্তর কোটি মুসলমান? কোথায় তারা?...........
আজ কোথায় উম্মতের খালিদ বিন ওয়ালিদ?
কোথায় উম্মাহর মুছান্না ইবনে হারেছা?
কোথায় কা’কা’ ইবনে আমর?
কোথায় নুমান ইবনে মুকরিন?
কোথায় সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস?
কোথায় সে মানবতার বাহাদুরী?
কোথায় মুসলিম প্রজন্মের বিবেক-বুদ্ধি?
কোথায় ইজ্জত-সম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ?
কোথায় ঘুনে ধরা সমাজের সংশোধনী পদক্ষেপ?
কোথায় দ্বীনের সঠিক বুঝ? কোথায় সঠিক আকীদা?
কোথায় জান্নাতাকাঙ্ক্ষী পবিত্র জামাত?
কোথায় আল্লাহর পথের যোদ্ধারা?
কোথায় সৎ কাজের আদেশ দাতারা?
কোথায় অসৎ কাজের নিষেধকারীরা?
কোথায় তারা, যারা নিজেদের ইজ্জত-সম্মান, স্ত্রী-সন্তান, ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পত্তি রক্ষায় লড়াই করে?
উম্মতের দরদীরা আজ কোথায়?
কোথায়? কোথায় তারা??................
আজও কি প্রতিটি মুসলমানের উপর জিহাদ ‘ফরযে আইন’ হয়নি?
এখনো কি মুসলমানদের জন্য ময়দানের ইবাদত (জিহাদ) করার সময় আসেনি?
আজও যদি না হয়, তাহলে আর কবে হবে?.......................
এত কিছুর পরও কি আমরা জাগ্রত হব না?
এত কিছুর পরও কি আমাদের হুঁশ ফিরবে না?
এরপরও কি আমাদের চুপ করে বসে থাকার সুযোগ আছে?
আজ কোথায় সারা দুনিয়ার দ্বীনদার ভাইয়েরা?
***আজ কোথায় আমার দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতের সাথী ভাইয়েরা?
কেন আমরা ময়দানে আসছি না? কেন আমরা জিহাদ ও কিতালের মেহনত করছি না?
কেন আমরা আজ দাওয়াতকেই ‘সবচেয়ে বড় নবীওয়ালা কাম’ মনে করে জিহাদ ত্যাগ করেছি?
কেন আমরা আজ ময়দানে না এসে মসজিদে বসে থেকে ‘জিহাদের ফাযায়েল’ তালাশ করছি?
কেন আমরা কেউ কেউ মুসলমানদের রক্ত ঝরানোকেই ‘জিহাদ’ মনে করছি? বাতিল নয়, কেন আমাদের লাঠি আজ উম্মতেরই মাথা ফাটাচ্ছে? কেন আজ আমাদের হতভাগা তরবারিগুলো মুসলিম মায়ের বুককেই খালি করছে?
কেন আমরা আজও প্রকৃত দাওয়াতের দিকে ফিরে আসছি না?
কেন আমরা আজও প্রকৃত ‘অসৎ কাজের নিষেধ’ করছি না?
কেন আমরা আজও মসজিদে জিহাদের এলান করি না? কেন আমরা আজও মসজিদে জিহাদের বয়ান করি না?
কেন আমরা আজও তালিমের হালকায় “ফাযায়েলে জিহাদ” পড়ি না?
আজও কেন আপসে ‘ক্বিতাল ও শাহাদাতের’ মুজাকারা হয় না?
কেন আজও মাশোয়ারা মজলিসে জিহাদের পরামর্শ হয় না?
আজও কেন আমাদের মুরুব্বীরা “আজীবন চিল্লা”র (হিজরত ও জিহাদের) তাশকিল করেন না?
প্রাণপ্রিয় মুবাল্লিগ ভাইয়েরা!
আমাদের ‘খুরুজ’ কবে জিহাদের জন্যে হবে?
আমাদের ‘গাশ্ত’ কবে অভিযানের রূপ নিবে?
‘আড়াই ঘণ্টার মেহনত’ শেষ হয়ে আমাদের যিন্দেগী কবে জিহাদের জন্য ওয়াক্ফ হবে?
আমাদের ‘ঈমান গড়ার মেহনত’ কবে শেষ হবে? আমাদের ঈমান আমাদেরকে কবে জিহাদের উপযুক্ত করবে?
আমাদের ‘মারকাজের পাহারাদারি’ কবে ‘মুসলিম ভূমির সীমানার পাহারাদারি’ (রিবাত-এ) রূপ নিবে?
আমাদের হীম-শীতল রক্ত কবে কুফ্ফারদের বিরুদ্ধে বারুদে পরিণত হবে?
আমাদের হাতের লাকড়িগুলো কবে মেশিনগান হয়ে কথা বলবে?
আমাদের পিঠের গাট্টিগুলো কবে ‘মাইনে’ পরিণত হবে?
আমাদের ছামানাগুলো কবে বোমা হয়ে বিস্ফোরিত হবে?
আমাদের চুলাগুলো থেকে কবে ‘প্রতিশোধের আগুন’ উত্থিত হবে?
আর কতকাল আমার ভাইদের জন্য ময়দান অপেক্ষায় থাকবে? আর কতদিন?.............
***কোথায় আজ হক্কানী পীর সাহেবানরা? কোথায় তাদের মুরীদানরা? কোথায় আজ খানকাহ্ওয়ালা ভাইয়েরা??
প্রাণপ্রিয় ভাইয়েরা!
কেন আজ আমরা ঘরে বসে থেকে, এক ফোঁটা ঘামও না ঝরিয়ে, নিজেদেরকে ‘মুজাহিদে আকবর’ মনে করছি?
আমরা কোন্ বৈরাগ্য অবলম্বন করছি? জিহাদের চেয়ে বড় কোনো বৈরাগ্য আছে কি?
আমরা কোন্ ‘নফসের কুরবানী ও মুজাহাদা’ করছি? জিহাদের চেয়ে বড় ‘নফসের কুরবানী ও মুজাহাদা’ আছে কি?
আমরা কোন্ খাল্ওয়াত (একাকীত্ব) অবলম্বন করছি? পাহাড়ের অন্ধকার গুহার চেয়ে সুন্দর খাল্ওয়াত আর কোথাও পাব কি?
আমাদের খানকাহ্গুলো কবে দুর্গে পরিণত হবে?
আমাদের ‘মাজলিস’গুলোতে কবে জিহাদের আলোচনা হবে?
জিহাদ হতে পলায়ন কি আত্মার রোগ নয়?
অন্তরে ‘তাগুত ও বাতিলের প্রতি ভয়’ থাকা কি আত্মার ব্যাধি নয়?
‘মৃত্যুর ভয়’ দূর করার মেহনত কি ইসলাহী মেহনত নয়?
কাপুরুষতার গলায় ছুরি চালানো কি ‘তায্কিয়া’ নয়?
প্রিয় ভাই!
জিহাদ আল্লাহ পাকের হুকুম নয় কি?
জিহাদ পরিত্যাগ করা ‘গুনাহে কবীরা’ নয় কি?
আত্মার পরিশুদ্ধি করা যেই আল্লাহ তা‘আলার ফরয বিধান, জিহাদ করাটাও সেই একই আল্লাহ তা‘আলার ফরয বিধান নয় কি?
বলুন!
আমাদের নিঃশব্দ যিকিরগুলো কবে ‘গগনবিদারী রণহুঙ্কার’ হয়ে বাজবে?
আমাদের হাতের তাসবিহ্গুলো কবে শহীদের লাশ গণনা করবে?
আমাদের অশ্রুসিক্ত জায়নামাযগুলো কবে বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হবে? কবে আমরা জাগ্রত হব? আর কবে?................
***আজ কোথায় আমার ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী ভাইয়েরা?
জিহাদ মনে করে যারা রাজপথ কাঁপাচ্ছি, কেন আমরা প্রকৃত জিহাদের জন্য ময়দানে ছুটে যাচ্ছি না?
মঞ্চে যারা ‘গণতন্ত্রের জয়গান’ গাই, তারা কেন ময়দানে এসে তাকবীরে তাকবীরে আকাশ বাতাস মুখরিত করছি না?
মিছিলে যারা বাতিলের বিপক্ষে শ্লোগান দিয়ে গলা ফাটাচ্ছি, ময়দানে এসে বাতিলের বিরুদ্ধে কেন আমরা অস্ত্র ধরছি না?
ও আমার প্রাণপ্রিয় ভাইয়েরা!
আমাদের সভা-সমাবেশগুলো থেকে এখনো কেন জিহাদের আওয়াজ ভেসে আসে না?
তথাকথিত ‘ভোটযুদ্ধ’ বাদ দিয়ে কেন আমরা হক ‘সশস্ত্র জিহাদ’ করছি না?
আব্রাহাম লিঙ্কনের গান্ধা গণতন্ত্রের মাধ্যমে আজ পর্যন্ত কোথায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়েছে?
এরদোগান আর মুরসি কি পেরেছেন মদকে হারাম করতে? তারা কি পেরেছেন সুদকে উৎখাত করতে? তারা কি পেরেছেন পতিতালয়গুলোকে বন্ধ করতে? তারা ক্ষমতায় গিয়ে কতভাগ ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন?
আল্লাহর রাসূল ﷺ সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে কয়দিন মিছিল করেছিলেন? তাদের দাবীগুলোকে নিয়ে কয়দিন কুফ্ফারদের কাছে স্মারকপত্র প্রদান করেছিলেন?
আল্লাহর রাসূল ﷺ কুফুরির সাথে কয়দিন আপোষ করেছিলেন?
জিহাদই কি প্রকৃত ইসলামী রাজনীতি নয়?
আর কতদিন আমরা নিজেদেরকে ধোঁকা দিব?
আর কতদিন আমরা নিজের মনকে মিথ্যা বুঝ দিব? আর কতদিন?...............
***আজ কোথায় আমার দানশীল, দানবীর ভাইয়েরা?
যারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য অকাতরে দান করেন, তারা আজ কোথায়?
প্রিয় ভাই আমার!
আমরা যারা মসজিদ, মাদরাসায় দুই হাত উজাড় করে দান করি, আমরা কেন জিহাদের ময়দানে দান করার কথা ভাবি না? অথচ জিহাদের জন্য দান করা প্রয়োজন ও সওয়াবের দিক দিয়ে অধিক উপযোগী!
আমরা যারা গরীব মিসকিনদের দান করার জন্য সর্বদা এগিয়ে আসি, আমরা কেন গোরাবা (অপরিচিত) মুজাহিদ ভাইদের দিকে হাত বাড়াই না? অথচ জিহাদের কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য প্রয়োজন অপরিসীম অর্থকড়ি?
যেসব মুজাহিদ ভাই নিজের ঘর-সংসার ফেলে, অর্থ-সম্পদ ফেলে আল্লাহর রাস্তায় খালি হাতে বেড়িয়ে যায়, তাদেরকে কে দান করবে?
খোদার রাহে বেড়িয়ে পড়া মুজাহিদের অসহায় পরিবারের অর্থ যোগান কে দিবে?
আল্লাহর রাস্তার শহীদ ভাইদের পরিবারবর্গের অশ্রু কে মুছে দিবে? সেই সকল ক্ষুধার্ত ভাই-বোনদের মুখে কে আহার তুলে দিবে?
তাগুতের কারাগারে বন্দী ভাইদের মুক্ত করার জন্য টাকা কে যোগাড় করবে?
উপার্জনে অক্ষম যুদ্ধাহত গাজী ভাইদের পাশে কে এসে দাঁড়াবে?
আজ সারা দুনিয়ায় জিহাদের মেহনতকে জিন্দা করার জন্য, দুনিয়ার বুকে ইসলামের চিহ্ন বাকী রাখার জন্য হাজার হাজার নয়, লক্ষ লক্ষ নয়, কোটি কোটি টাকার প্রয়োজন। কে দিবে এই অর্থ, আমরা যদি এগিয়ে না আসি তো কারা এগিয়ে আসবে?
***আজ কোথায় আহলে হাদীস/সালাফী ভাইয়েরা?
সহীহাইনে কি ‘কিতাবুল জিহাদ’ নেই?
সহীহাইনে কি ‘কিতাবুল মাগাযী’ নেই?
এ সকল হাদীসের উপর কে আমল করবে?
সালাফদের যিন্দেগীতে কি জিহাদ ছিল না?
সালাফদের সীরাতে কি ই‘দাদ ছিল না?
আমাদের সালাফরা কি ‘দিগ্বিজয়ী বীর’ ছিলেন না?
আমাদের সালাফদের ভয়ে কি কুফ্ফারদের ঘুম মিটে যেত না?
আমাদের সালাফদের নাম শুনলেই কি তাদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠত না?
তাহলে কেন আমাদের এই অবস্থা? কেন আমাদের এই জিহাদবিমুখতা?
আমরা তাহলে কোন্ সালাফদের অনুসরণ করছি?
প্রিয় ভাই আমার!
একজন মুসলমান ভাই একটি মুস্তাহাবের উপর আমল করল না, তাতেই আমার মনে অনেক ব্যথা অনুভূত হয়, অথচ আজ সারা দুনিয়া থেকে ইসলাম মিটে যাচ্ছে, উম্মাহর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে, ক্রুসেডাররা একজোট হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের শেষ চিহ্নটুকু মুছে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, তারা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছে, অথচ আমরা ঘুমিয়ে আছি, আমরা ছোটখাটো বিষয়ে মতানৈক্য করে একে অন্য হতে আলাদা হয়ে যাচ্ছি, একে অন্যকে গালমন্দ করছি, শরীয়তের শাখাগত বিষয় নিয়ে মেতে রয়েছি, অথচ বর্তমান যামানার জন্য সবচেয়ে বড় ফরয আমার ও উম্মতের কাছ থেকে ছুটে যাচ্ছে- সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করছি না!
উম্মত শরীয়ত বাদ দিয়ে পশ্চিমা সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে নিজেদের উন্নতি খুঁজে বেড়াচ্ছে, দলে দলে জাহান্নামের দিকে ধাবিত হচ্ছে, অথচ সেজন্য আমার হৃদয় ব্যথিত হচ্ছে না! আমার চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত হচ্ছে না! আমার অন্তরে কোনো ভাবোদয় হচ্ছে না! কেন ভাই, কেন?
কবে আমরা জিহাদের কথা ভাবব?
কবে আমরা জিহাদের পথে হাঁটব?
কবে আমরা জিহাদের কথা বলব?
কবে ভাই, কবে?.......
***কোথায় আমার প্রাণপ্রিয় মা ও বোনেরা!
সেই মায়েরা আজ কোথায়, যারা আল্লাহর রাস্তায় সন্তান কুরবানী করার জন্য আল্লাহর কাছে সন্তান কামনা করতো?
সেই মায়েরা আজ কোথায়, যারা তাদের সন্তানদেরকে শহীদ হিসেবে দেখার জন্য ছোট্ট সময় দুগ্ধপান করাতো?
সেই মায়েরা আজ কোথায়, যাদের মাতৃদুগ্ধে এই পরিমাণ ধার ছিলো যে, তাদের সন্তানরা কিসরা-কায়সারের সাম্রাজ্যগুলোকে তছনছ করে দিয়েছিলো?
সেই মায়েরা আজ কোথায়, যারা নিজের হাতে অস্ত্র ক্রয় করে সন্তানের হাতে তুলে দিতো, এই আশায় যে, তার সন্তান আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাত লাভ করবে?
সেই মায়েরা আজ কোথায়, যারা তাদের পুত্র বধূ হিসেবে জান্নাতের হূরদের দেখতে বেশি ভালোবাসতো?
সেই মায়েরা আজ কোথায়, যারা তাদের সন্তানদের সাথে হূরের বিবাহের জন্য মোহরানা দুনিয়াতেই আদায় করে দিতো?
সেই মায়েরা আজ কোথায়, যারা তাদের সন্তানদের শাহাদাতের উপর গর্ববোধ করতো?
আজ কোথায় আমার সেই মায়েরা, যাদের সন্তান শহীদ হলে তার গৃহে বিয়ে বাড়ির আমেজ চলে আসতো? আনন্দ মিছিল বের হতো? আজ কোথায় তারা?
আজ কোথায় সেই বোনেরা, যারা জিহাদ হতে পিছুহটা ভাইদেরকে ভর্ৎসনা করত? তিরস্কার করে তাদেরকে বালা আর বোরকা এগিয়ে দিত?
কোথায় আজ ছফিয়্যাহ বিনতে আব্দুল মুত্তালিব?
কোথায় আজ উম্মে উমারা?
কোথায় আজ আসমা বিনতে আবু বকর? (রাদিয়াল্লাহু আনহুন্না আযমাঈন)
সেই মায়েরা আজ কোথায়? সেই বোনেরা আজ কোথায়?
সেই স্ত্রীরা আজ কোথায়, যারা বাসর ঘর থেকে তাদের স্বামীদেরকে হাসিমুখে জিহাদের ময়দানে পাঠিয়ে দিতো?
কোথায় আজ তারেক বিন যিয়াদ আর মুহাম্মাদ বিন কাসীমের বোনেরা?
পরম মমতাময়ী, সোহাগিনী, প্রেমময়ী কিন্তু পাহাড়ের মতো অটল-অবিচল ঈমানওয়ালী; আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মহব্বতকারিনী, প্রিয়তমের বিচ্ছেদে সবরকারিনী আমার সেই বোনেরা আজ কোথায়?
কেন তারা আবারো বুকে পাথর বেঁধে ধৈর্য্য ধারণ করছে না?
কেন তারা আজ আরো লাখো মুসলিম মা-বোনের উপর অত্যাচার-নির্যাতন আর ধর্ষণের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাদের স্বামী-সন্তান-ভাইদেরকে ময়দানে পাঠাচ্ছে না?
আল্লাহ তাআলা আমাদের হাবীব ﷺ এর উম্মতের মা-বোনদের প্রতি রহম করুন। তাদের ইযয্ত-আব্রুর সর্বোচ্চ হেফাযত করুন। আমীন।
***আজ কোথায় মিম্বারওয়ালা ভাইয়েরা?
আমাদের মিম্বারগুলোতে আজও কেন জিহাদের আযান শুনা যায় না?
আজও কেন আমাদের মিম্বারগুলোতে আমরা নবীওয়ালা ইসলামের আলোচনা করি না? সেখানে আজও কেন জিহাদের ‘মুযাকারা’ হয় না?
মিম্বারগুলো থেকে কেন আজ সাধারণ মুসল্লিদের জিহাদী জযবা জাগ্রত হয় না? কেন?.............
***কোথায় আজ উম্মতের ওয়ায়েজ-বক্তারা?
যখন আমরা মাইক কাঁপাচ্ছি, তখন কেন আমরা উম্মতকে জাগ্রত করছি না?
উম্মতকে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করা, কিতালের জন্য তাশকিল করা কি আমাদের দায়িত্ব নয়?
তাহলে কোন্ বয়ান আমাদেরকে “আন্তর্জাতিক খ্যাতি” এনে দিয়েছে?
****কোথায় আজ উম্মতের রাহ্বার- উলামা ভাইয়েরা? আমার প্রাণপ্রিয় তালিবুল ইলম ভাইয়েরা আজ কোথায়?
আজও কেন আমরা নিশ্চুপ?
আহ্! কী আর বলবো! কষ্টে যেন আজ বুক ফেটে যাচ্ছে, হৃদপিণ্ড স্তব্ধ- স্থবির হয়ে যাচ্ছে! মুখ দিয়ে যেন আর কথা বের হতে চাচ্ছে না?
আজ আমরা আলেম সমাজ কি চার দেয়ালের মাঝে বসে আছি না?
আজ উম্মতের এই অবস্থার জন্য আমাদেরকেই সবচেয়ে বেশি জবাবদিহি করতে হবে!
আমাদেরকে কি সেই জিনিস দেয়া হয়নি, যা দেয়া হয়েছিল নবী-রাসূলদেরকে?
আমাদেরকে কি সেই জিনিস দেয়া হয়নি, যা দেয়া হয়েছিল সাহাবায়ে কেরামদেরকে?
উম্মতের নেতৃত্ব কি আমাদেরই দেয়ার কথা ছিল না?
উম্মতের দুর্দিনে আমাদেরই কি প্রথম এগিয়ে আসার কথা ছিল না?
উম্মতের ব্যথায়, উম্মতের কষ্টে আমাদেরই কি প্রথম অশ্রুপাত করার কথা ছিল না?
আমাদেরই কি প্রথম ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা ছিল না?
সর্বপ্রথম আমাদেরই কি হাতে অস্ত্র তুলে নেয়ার কথা ছিল না?
আমাদেরই কি উম্মতের শ্রেষ্ঠ বীর হওয়ার কথা ছিল না?
উম্মতকে সঠিক ইসলামের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব কার?
নবীওয়ালা এবং সাহাবাওয়ালা ইসলামের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব কার?
উম্মতকে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্ব কার?
আহ্! কী হলো আজ আমাদের!..............
যে কুরআন সাহাবাদেরকে “বীরত্বের মুকুট” পরিয়েছিল, সেই কুরআনের বাহকরা আমরা আজ কেন “নারীত্বের মালা” গলায় ধারণ করেছি?
যে কুরআন সাহাবায়ে কেরামকে “আল্লাহর সিংহ”, “আল্লাহর বাঘ” আর “আল্লাহর তরবারি” বানিয়েছিল, সেই কুরআনের বাহকরা আমরা আজ কেন “অসহায়-নিরীহ” হয়ে গিয়েছি?
যে কুরআন সাহাবাদেরকে ঘরে থাকতে দিত না, ময়দানে তাড়িয়ে নিয়ে যেত, সেই কুরআনের বাহকরা আমরা আজ কেন ‘অবলা গৃহবধূ’র মত হয়ে গিয়েছি?
যে কুরআন সাহাবাদেরকে “পারমাণবিক বোমা” বানিয়েছিল, সে কুরআনের বাহকরা আমরা আজ কেন একটা “ককটেল”ও হতে পারছি না?
কেন আজ কুরআন আমাদের গলার নীচে নামছে না?
আজ আমরা যাদের বর্ণিত হাদীস অধ্যয়ন করছি, সেই সকল মহান সাহাবীদের যিন্দেগীর দিকে কেন তাকিয়ে দেখছি না?
সাহাবাদের এলেম যদি তাঁদেরকে যোদ্ধা বানায়, এ যামানায় আমাদের এলেম কেন আমাদেরকে “ভীরু-কাপুরুষ”, “জিহাদ বিরোধী” বানায়?
কেন আজ আমরা সাহাবাদের মতো গর্জে উঠছি না, কেন আজ আমরা বাকরুদ্ধ?
কেন আজ আমাদের মাঝে পৌরুষত্ব জেগে উঠছে না?
কেন আজ বাতিল আমাদেরকে ‘মশা-মাছি তুল্য’ মনে করে? কী তার কারণ? কেন এমন হচ্ছে?............
কেন আমরা আজ নিজেদের ঈমান সস্তায় বিক্রি করে দিচ্ছি?
কেন আমরা বাতিলের গোলামী করছি? আজ কিভাবে আমরা ক্ষমতাসীনদের খাবারের টেবিলে আমন্ত্রিত হচ্ছি? তাগুতদের উপঢৌকনে আমরা কিভাবে সজ্জিত হচ্ছি? বাতিলের বিষাক্ত ফল আহার করে আমরা কেন বাতিলের গুণকীর্তন করছি?
আজ কেন আমরা তাগুত সরকারের তাবেদারি করছি? কেন আজ আমরা অনেকেই জিন্দিক তাগুত শাসকবর্গের ক্রোড়ে প্রতিপালিত হচ্ছি?
আজ কেন আমাদের শিক্ষার সরকারি স্বীকৃতির প্রয়োজন হচ্ছে?
যে সকল মর্দে মুজাহিদ উম্মতের জন্য নিজের বুকের রক্ত ঢেলে দিচ্ছে, আজ কেন তাদেরকে আমরাও ‘জঙ্গী’, ‘সন্ত্রাসী’ বলে গালি দিচ্ছি?
আজ কেন আমরা ‘দারুল হারব’ কে ‘দারুল আমান’ ফতোয়া দিচ্ছি?
“জিহাদ ফরযে আইন হয়ে গিয়েছে”- কেন আমরা এই ফতোয়া দিতে ভয় পাচ্ছি?
আমরা কী উম্মতের অবস্থা দেখছি না?
অসহায় নারী-শিশু-বৃদ্ধদের আহাজারি আর আর্তনাদ কি আমাদের কানে পৌঁছে না?
আমরা কিসের অপেক্ষা করছি? আমরা কার অপেক্ষা করছি?
আমরা কোন্ দিনের অপেক্ষা করছি? আমরা কি সেদিন “জিহাদ ফরযে আইন” ফতোয়া দিব, যেদিন আমাদের চোখের সামনে আমাদের স্ত্রীদেরকে গণধর্ষণ করা হবে? নাকি, যেদিন আমাদের চোখের সামনে আমাদের কন্যাকে বে-ইজ্জতি করা হবে? যেদিন আমাদের মায়েদের স্তন কাটা হবে? যেদিন আমাদের কোলের শিশুকে পায়ের নিচে পিষ্ট করে হত্যা করা হবে? যেদিন আমাদের দুধের শিশুকে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে? যেদিন আমাদের মাদরাসাগুলোকে তালাবদ্ধ করে দেয়া হবে? যেদিন আমাদেরকে পাইকারী হারে হত্যা করা হবে? যেদিন আমাদেরকে আবারো গাছে ঝুলানো হবে? সেদিন?
মাদরাসাগুলোকে কুফ্ফার সরকারের কাছে ‘জঙ্গীমুক্ত’ হিসেবে পরিচয় দিতে কেন আজ এত ব্যস্ততা?
জিহাদের কথা বলায় তালিবুল ইলমদেরকে পিটিয়ে মাদরাসা থেকে কেন বহিস্কার করে দিচ্ছি?
আজ কেন আমরা জিহাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি? কেন আজ পৃথিবী থেকে জিহাদকে বিদায় জানানোর জন্য “জিহাদ বিরোধী” ফতোয়ায় লাখো মুফতী (?) স্বাক্ষর করছি?
কেন আজ আমরা এ.সি রুমে বসে, পোলাও-কোরমা-বিরিয়ানী খেয়ে, তপ্ত ময়দানের “না খেতে পাওয়া” ক্ষুধার্ত জানবাজ মুজাহিদ ভাইদের বিরুদ্ধে ফতোয়াবাজী করছি?
কিসে আমাদেরকে এমনটি করতে বাধ্য করছে? কেন আমরা ন্যাক্কারজনক এইসব ফতোয়া দিয়ে তৃপ্তিবোধ করছি?
এসব নষ্ট ফতোয়াবাজী করে আজ আমরা কিসের দায়মুক্ত হতে চাই? এসব করে আমরা কাকে সন্তুষ্ট করতে চাই?
আল্লাহ, তাঁর রাসূল ﷺ এবং একনিষ্ঠ মুমিনগণ আমাদের এসকল কর্মকাণ্ডকে কক্ষনো মেনে নিবেন না! আমাদের উপর কক্ষনো সন্তুষ্ট হবেন না! কস্মিনকালেও না! ময়দানে মাহ্শারে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না!!
মুজাহিদরা কেন? কেন আমাদের কলম আজ বাতিলের বিরুদ্ধে চলে না? আজ কেন আমাদের কলম সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলে না? নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কেন আমরা কথা বলি না? আমাদের পৌরুষত্ব কেন নারী নেতৃত্বের মসনদকে গুড়িয়ে দেয় না?
আজ কোন্ হেকমতের কারণে আলেমকুল শিরোমণি ‘হাজারো আলেমের রক্তে রঞ্জিত’ নারী নেত্রীর হাতে হাত মিলিয়ে মুসাফাহা করেন?
আজ কেন ‘তাগুত কন্যা’কে ‘ক্বওমী জননী’ উপাধি দেয়া হচ্ছে? এই শিক্ষা কোন্ ইসলামের? এই শিক্ষা কোন্ কুরআনের? এই শিক্ষা কোন্ হাদীসের?
আজ কেন মুশরিকদেরকেও ‘কাফের’ বলতে আমরা কেউ কেউ লজ্জা (!) পাচ্ছি? নাস্তিককে ‘নাস্তিক’ বলতে আমরা ভয় (!) পাচ্ছি? কেন আমরা সমাজে নাস্তিক-মুরতাদ খোঁজে পাচ্ছি না?
আমরা কার অনুসরণ করছি? আমরা কোন ইসলামকে আঁকড়ে ধরে আছি?
আমরা কোন্ রাসূলের ওয়ারিশ? আমরা কোন্ নবীর নায়েব?
আমাদের নবী কি তরবারির নবী (নাবীউস্ সাইফ্) ছিলেন না?
আমাদের নবী কি ‘যুদ্ধে’র নবী (নাবীউল্ মালাহিম্) ছিলেন না? কুফ্ফারদেরকে জবাই করতে কি তাঁকে প্রেরণ করা হয়নি?
নবীজির যিন্দেগীতে কি ছোট-বড় ৬৩ টি যুদ্ধাভিযান ছিল না? তাহলে আমাদের যিন্দেগীতে জিহাদ কোথায়? আমাদের সিলসিলাতে কোথায় এসে জিহাদ ‘নাই’ হয়ে গেল?
‘দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও ইসলামী রাজনীতি’র নামে আজ কেন আমরা জিহাদ বাদ দিয়ে কুফুরী ও ভ্রান্ত পন্থা অবলম্বন করছি?
কেন আমরা আব্রাহাম লিংকনের পঁচা-গান্ধা, নিরেট কুফর ‘গণতন্ত্র’কে ইসলামী রাজনীতি নাম দিয়েছি?
কেন আমরা আজ ‘ইসলামী গণতন্ত্রের’ নামে পশ্চিমা জাতির ‘নষ্ট দুধ’ গোগ্রাসে পান করছি? কেন?
আমাদের কিসের অভাব? কেন আমরা মুসলিম উম্মাহ্কে ধোকা দিচ্ছি?
‘সুদ ভিত্তিক অর্থনীতি’ই কি ইসলামী অর্থনীতি? ‘গণতন্ত্রের পতিতাবৃত্তি’ই কি ইসলামের নারী স্বাধীনতা?
‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ- কে গালি দেয়া’-ই কি গণতন্ত্রের বাক স্বাধীনতা নয়?
‘মাদকসেবন আর অবাধ যৌনাচার’-ই গণতন্ত্রের ‘ব্যক্তি-স্বাধীনতা’ নয়?
দ্বীন কায়েমের জন্য মিটিং-মিছিল করা, খালি হাতে কেবল তাসবীহ আর জায়নামায নিয়ে অবরোধ করা- এগুলো কার সুন্নাহ?
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শানে কটুক্তি কারীদের বিচারের জন্য তাগুতের কাছেই বিচার চাওয়া, তাদেরকে স্মারকলিপি প্রদান করা- এগুলো কার তরীকা?
কেন আমরা এগুলোকে ঈমানী দায়িত্ব বলে উম্মাহর সামনে পেশ করছি?
এসবের সাথে রাসূলে আরাবী মুহাম্মাদ ﷺ- এর আনীত দ্বীন ও মানহাজের কি সামঞ্জস্য রয়েছে? এগুলোর সাথে ইসলামের কী মিল রয়েছে?
কেন আমরা নিজেরা বিভ্রান্ত হচ্ছি, উম্মাহ্কেও বিভ্রান্ত করছি?
কেন আমরা এসব নিত্য নতুন ‘জাহান্নামী’ আকীদা ও বিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছি? কেন? কেন ভাই, কেন??
না, ভাই, না! আর চুপ করে থাকা যায় না!! দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে!!!
আজ আমার মুখের লাগাম খুলে গিয়েছে! আজ কেউ আমার যবান ধরে রাখতে পারবে না!
আজ আমি বিদ্রোহী! বাতিল ও তার গোলামদের জন্য আজ আমি অভিশাপ! আজ আমি সর্বত্র ‘দ্রোহের ঝাণ্ডা' উড্ডয়ন করেছি!
আজ আমি যত মনগড়া, স্ব-রচিত, নব্য ইসলামের বিরদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করছি!
আজ আমি শান্তিপূর্ণ (!), ভ্রান্ত, তথাকথিত আধুনিক ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করছি!
যে ইসলাম বাতিলের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখায় না, যে ইসলাম ‘দিগ্বিজয়ী সিপাহসালার’ তৈরি করে না, পক্ষান্তরে যে ইসলাম ঘরকুনো ‘কাপুরুষে’র জন্ম দেয়, উম্মতকে খোঁজা করে দেয়, আমার দ্রোহ আজ সে ইসলামের বিরুদ্ধে!
দিকে দিকে ‘ঈমানের কেল্লাগুলোতে’ আজ আমি সেই ইসলামের নিশান উত্তোলন করছি, যে ইসলাম সাহাবাদেরকে শিখিয়েছিলেন স্বয়ং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আজ আমি সেই ইসলামের গানই গাইব, যে ইসলামকে পরম মমতায় বুকে আগলে রেখেছিলেন সাহাবায়ে কেরামগণ!
না, আজ আমার যবান থেকে ‘গীত’ নয়, অনল বর্ষিত হবে। আজ আমার কলম ‘তরবারি’ হয়ে ‘উন্মত্ত খুনের পয়গাম রচনা করে যাবে।
আজ আমার দেহের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় 'রক্ত' নয়, আগুন বইছে।
আজ আমার অস্থিমজ্জা ‘রক্তকণিকা’ নয়, ‘অগ্নিস্ফূলিঙ্গ’ তৈরি করছে!
আজ আমি লেলিহান অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলন করেছি, যা প্রতিশোধের দাবানল হয়ে সমস্ত বাতিল, তাবেদারদের শিবির জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিবে।
আজ আমি আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করবো না, কারো শক্তি কিংবা ক্ষমতার পরোয়া করবো না, কারো রক্ত-চক্ষুকে তোয়াক্কা করবো না!
আজ আমি কোনো নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবো না! আমাকে যে যাই বলুক তাতে আমার কিছুই আসে যায় না!
আজ কেউ না আসুক, আমি একাই লড়ব! সারা দুনিয়ার ত্বগুতের বিরুদ্ধে আমি একাই জিহাদ করব!
আমি জানাজা চাই না, কাফন-দাফন চাইনা, আজ আমি শাহাদাত চাই! ইসলাম মিটে যাওয়ার আগে আমি নিজেই মিটে যেতে চাই!.....
কী হবে এ জীবন দিয়ে, কী হবে আর বেঁচে থেকে!
আজ কোনো স্বৈরাচার কিংবা যালেম, কেউই আমাকে ফিরাতে পারবে না!
আল্লাহ, তার রাসূল ﷺ এবং “উম্মতে মুহাম্মাদী”র জন্য আমার জান কুরবান!
যেদিকে তাকাই সেদিকেই উম্মতের এ হালত দেখে, যেদিকেই কর্ণপাত করি, সেদিক হতেই উম্মতের আর্তনাদ শুনে, আজ আমি প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়েছি, তাই আজ সত্যকে ‘সত্যরূপে’ প্রকাশ করতে কোনো দ্বিধা-সঙ্কোচ করবো না, দয়াকরে আমাকে কেউ বাধা দিবেন না! আজ কেউই আমার গলা টিপে ধরবেন না!.........
যারা প্রকৃত অর্থে “আহলে হক”, যাদের যিন্দেগী আমার রাসূলের ﷺ যিন্দেগীর সাথে মিলে, যাদের যিন্দেগী সাহাবাদের যিন্দেগীর মতো, উম্মতের সেই সকল গোরাবা (অপরিচিত) ভাইদের জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক!
আমি তাদের ক্রীতদাস, ইচ্ছা করলে তারা আমাকে গোলাম বানিয়ে রাখবে, নতুবা আযাদ করে দিবে। আমি তাদের জুতা বহন করে দিবো, তাদের জুতা সোজা করে দিবো। তাদের পায়ের জুতাকে আমার মাথার টুপি বানিয়ে রাখবো। তাদের জন্য আমার জীবন বিলিয়ে দিবো।.........
**************************************
ব্যথার ঔষধ
আমার প্রিয় ভাই!
একথা অস্বীকার করার কি কোন উপায় আছে, আজ জিহাদ ত্যাগ করার কারণেই উম্মত নেতৃত্বহীন, অভিভাবকহীন হয়ে সব জায়গায় কুফ্ফারদের হাতে মার খাচ্ছে, তাদের যুলুম অত্যাচারের শিকার হচ্ছে।
আজ উম্মত কেন অলসতার যিন্দেগী যাপন করছে? আজ উম্মত কেন জিহাদ পরিত্যাগ করেছে?
যে উম্মত একসময় সারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে, যে উম্মত একসময় সমস্ত বিজাতীয়দের রাহ্বারী করেছে, সে উম্মতকে পিছনে ঠেলে কেন অন্যরা তার জায়গা দখল করে নিয়েছে?
একটু চিন্তা করুন, আর কোনো কারণ নেই। যেদিন হতে উম্মত জিহাদ ত্যাগ করে দুনিয়ায় মত্ত হয়েছে, সেদিন থেকেই উম্মতের ধ্বংস শুরু হয়েছে।
عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يُوشِكُ الأُمَمُ أَنْ تَدَاعَى عَلَيْكُمْ كَمَا تَدَاعَى الأَكَلَةُ إِلَى قَصْعَتِهَا " . فَقَالَ قَائِلٌ وَمِنْ قِلَّةٍ نَحْنُ يَوْمَئِذٍ قَالَ " بَلْ أَنْتُمْ يَوْمَئِذٍ كَثِيرٌ وَلَكِنَّكُمْ غُثَاءٌ كَغُثَاءِ السَّيْلِ وَلَيَنْزِعَنَّ اللَّهُ مِنْ صُدُورِ عَدُوِّكُمُ الْمَهَابَةَ مِنْكُمْ وَلَيَقْذِفَنَّ اللَّهُ فِي قُلُوبِكُمُ الْوَهَنَ " . فَقَالَ قَائِلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا الْوَهَنُ قَالَ " حُبُّ الدُّنْيَا وَكَرَاهِيَةُ الْمَوْتِ
হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “এমন এক সময় নিকটবর্তী, বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী তোমাদের বিরুদ্ধে (যুদ্ধে তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য) একে অপরকে এভাবে আহ্বান করবে, যেভাবে আহারকারী লোকেরা খাদ্যপাত্রের দিকে একে অপরকে ডাকাডাকি করে।” (এ কথা শুনে) কেউ জিজ্ঞাসা করল, সেদিন কি সংখ্যায় কম থাকার কারণে আমাদের এ অবস্থা হবে? তিনি ﷺ উত্তর দিলেন, “না; বরং সে সময় তোমরা সংখ্যায় অনেক বেশি থাকবে, কিন্তু তোমরা বন্যায় ভেসে আসা আবর্জনার (/খড়কুটোর মতো প্রাণহীন ও ওজনহীন) হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় উঠিয়ে নিবেন, (এর বিপরীতে) তোমাদের অন্তরে ‘ওয়াহন’ ঢেলে দিবেন।” কেউ জিজ্ঞাসা করলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ ﷺ, ‘ওয়াহন’ অর্থ কি? তিনি ﷺ উত্তরে বললেন,“দুনিয়াপ্রীতি এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।”
(আবু দাউদ-৪২৯৭, বায়হাকী)
জেনে রাখুন! দুনিয়ার মহব্বত আর মৃত্যুর ভয়- এ দুটোর অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে “জিহাদ বিমুখতা”, জিহাদ পরিত্যাগ করা।
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيۡهِمُ ٱلۡقِتَالُ إِذَا فَرِيقٞ مِّنۡهُمۡ يَخۡشَوۡنَ ٱلنَّاسَ كَخَشۡيَةِ ٱللَّهِ أَوۡ أَشَدَّ خَشۡيَةٗۚ وَقَالُواْ رَبَّنَا لِمَ كَتَبۡتَ عَلَيۡنَا ٱلۡقِتَالَ لَوۡلَآ أَخَّرۡتَنَآ إِلَىٰٓ أَجَلٖ قَرِيبٖۗ قُلۡ مَتَٰعُ ٱلدُّنۡيَا قَلِيلٞ وَٱلۡأٓخِرَةُ خَيۡرٞ لِّمَنِ ٱتَّقَىٰ وَلَا تُظۡلَمُونَ فَتِيلًا ٧٧ أَيۡنَمَا تَكُونُواْ يُدۡرِككُّمُ ٱلۡمَوۡتُ وَلَوۡ كُنتُمۡ فِي بُرُوجٖ مُّشَيَّدَةٖۗ
“.....অতঃপর যখন তাদের প্রতি ক্বিতাল (যুদ্ধ)-কে ফরয করা হল, তৎক্ষণাৎ তাদের মধ্যে একদল লোক মানুষকে ভয় করতে আরম্ভ করল, যেমন করে ভয় করা হয় আল্লাহকে। এমনকি তার চেয়েও অধিক ভয়। আর বলতে লাগল, হায় আমাদের পালনকর্তা, কেন আমাদের উপর যুদ্ধকে ফরয করলে! আমাদেরকে কেন আরোও কিছুকাল অবকাশ দিলে না (দুনিয়া ভোগ করার জন্য)! (হে রাসূল!), আপনি তাদেরকে বলে দিন, পার্থিব ফায়দা সীমিত। আর আখেরাত পরহেযগারদের জন্য উত্তম। আর তোমাদের অধিকার একটি সূতা পরিমাণও খর্ব করা হবে না। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই- যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভিতরেও অবস্থান কর, তবুও।.......” (০৪ সূরা নিসা:৭৭-৭৮)
عَنْ اِبْنِ عُمَر قَالَ، سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْل، اِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِيْنَةِ وَاَخَذْتُمْ اَذْنَابَ الْبَقَرِ وَرَضِيْتُمْ بِالزَّرْعِ وَتَرَكْتُمُ الْجِهَادَ سَلَّطَ اللهُ عَلَيْكُمْ ذُلًّا لَا يَنْزِعُهٗ حَتىﱣ تَرْجِعُوْا اِلىٰ دِيْنِكُمْ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে বলতে শুনেছি যে, “যখন তোমরা ‘ঈনাহ’ পদ্ধতিতে (এক ধরনের সুদ ভিত্তিক ব্যবসা) ক্রয় বিক্রয় এবং ব্যবসা বাণিজ্যে পুরাপুরি মশগুল হয়ে যাবে এবং গরুর লেজ ধরে খেত খামারে মগ্ন হয়ে যাবে আর জিহাদ করা ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর এমন অপমান চাপিয়ে দিবেন, যা ততক্ষণ পর্যন্ত দূর হবে না যতক্ষণ না তোমরা আপন দ্বীনের (জিহাদের) দিকে ফিরে আসবে।” (আবু দাউদ ৩৪৬২, বায়হাকী ১০৪৮৪, জামেউল আহাদীস ১৬০৩, কানযুল উম্মাল ১০৫০৩, বুলুগুল মারাম ৮৪১)
عَنْ أَبِيْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقِ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْل، مَا تَرَكَ قَوْمٌ الْجِهَادَ فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ اِلَّا ضَرَبَهُمْ اللّٰهُ بِذِلٍّ وَلَا أَقَرَّ قَوْمٌ الْمُنْكَرَ بَيْنَ أَظْهُرِهِمْ اِلَّا عَمَّهُم اللّٰهُ بِعِقَابٍ
হযরত আবু বকর (রা.) বলেন যে, আমি রাসূল ﷺ-কে বলতে শুনেছি, তিনি ﷺ বলেছেন, যদি কোন জাতি জিহাদ ছেড়ে দেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের সবার উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেন। আর যদি কোন জাতি তাদের মধ্যে কোন অন্যায়কে আশ্রয় দেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলকে শাস্তি প্রদান করেন।” (জামে‘আ আহাদীস ২৭০৩৫, মুজামুল আওসাত ৩৮৩৯, কানযুল উম্মাল ৮৪৪৭)
حَدَّثَنَا عُرْوَةُ الْبَارِقِيُّ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الْخَيْلُ مَعْقُودٌ فِي نَوَاصِيهَا الْخَيْرُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ الأَجْرُ وَالْمَغْنَمُ
উরওয়াহ বারিকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত: নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঘোড়ার কপালের কেশ গুচ্ছে কল্যাণ রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত। অর্থাৎ (আখিরাতের) পুরষ্কার এবং গনীমতের মাল। (বুখারী, হাদিস নং ২৮৫২)
প্রিয় ভাই!
জিহাদ! জিহাদ!! জিহাদ!!!
একমাত্র যুদ্ধ-ই মুসলিম উম্মাহর হারানো ইজ্জত ও সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারে। তাই, বর্তমান বিশ্বব্যাপী কুফ্ফারদের আগ্রাসন হতে মুসলিম উম্মাহর বাঁচার একমাত্র রাস্তা হচ্ছে ‘জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ’ তথা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা।
“যখন তোমরা জিহাদ করা ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর এমন অপমান চাপিয়ে দিবেন, যা ততক্ষণ পর্যন্ত দূর হবে না যতক্ষণ না তোমরা আপন দ্বীনের দিকে ফিরে আসবে।”
উপর্যুক্ত হাদীসটিতে লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে-
১. আল্লাহর রাসূল ﷺ জিহাদকে দ্বীনের সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এ থেকেই জিহাদের গুরুত্ব বুঝে আসে। দ্বীনের অস্তিত্ব জিহাদের সাথে কিভাবে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত, তাও এ হাদীস থেকে বুঝা যায়।
২. বর্তমান যামানার উম্মতের উপর এই যে অপমান-অপদস্থি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই এসেছে, তিনিই চাপিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن تَنصُرُواْ ٱللَّهَ يَنصُرۡكُمۡ وَيُثَبِّتۡ أَقۡدَامَكُمۡ
“হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে (দ্বীন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে) সাহায্য কর, আল্লাহ তাআলাও তোমাদেরকে (সকল বিষয়ে) সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।” (৪৭ সূরা মুহাম্মাদ: ৭)
এটি আল্লাহ তাআলার ওয়াদা আর আল্লাহ তাআলা তাঁর ওয়াদার খেলাফ করেন না। আল্লাহ তাআলা যদি চাইতেন ফিলিস্তিন মুসলমানদের দখলে থাকুক আর ইহুদীরা চাইতো তারা দখল করে নিবে, তা কখনোই সম্ভব হতো না, আল্লাহ তাআলাই ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর ইহুদীবাদের অভিশাপ চাপিয়ে দিয়েছেন।
কেন? কারণ উম্মত জিহাদ ছেড়ে দিয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী কিংবা অন্যান্য দুনিয়াবী বা দ্বীনী খেদমতে আত্মনিয়োগ করেছে।
মায়ানমারের মুসলমানদের উপর আল্লাহ তাআলাই বৌদ্ধদের চাপিয়ে দিয়েছেন। কারণ কী? কারণ একটাই।
আল্লাহ তাআলা সিরিয়ার মুসলমানদের উপর নানা জাতির কুফ্ফারদের চাপিয়ে দিয়েছেন, কারণ কী? কারণ একটাই? জিহাদ ছেড়ে দেয়া।
৩. বর্তমান এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ কেবল দুআ কিংবা দ্বীনি অন্য কোনো মেহনত দিয়ে হবে না, জিহাদে ফিরে আসতে হবে। উম্মত যতক্ষণ পর্যন্ত না আমভাবে জিহাদের জন্য তৈয়ার হবে আল্লাহ তাআলাই একের পর এক জাতিকে মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দিতে থাকবেন।
প্রিয় ভাই! আমরা কেন জিহাদ করছি না? আমরা কেন জিহাদ করার কথা চিন্তাও করছি না? অথচ তা ফরযে আইন হয়ে গিয়েছে? আমরা কার অপেক্ষা করছি? আমরা কিসের ভয় করছি?
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱلطَّٰغُوتِ فَقَٰتِلُوٓاْ أَوۡلِيَآءَ ٱلشَّيۡطَٰنِۖ إِنَّ كَيۡدَ ٱلشَّيۡطَٰنِ كَانَ ضَعِيفا٧٦
“যারা ঈমানদার তারা জিহাদ করে আল্লাহর রাহেই। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে শয়তানের পক্ষে সুতরাং তোমরা জিহাদ করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত নিতান্তই দুর্বল।” (সূরা নিসা ৪:৭৬)
আল্লাহ তাআলা আরেক স্থানে ইরশাদ করেন,
فَلَا تَخۡشَوۡهُمۡ وَٱخۡشَوۡنِي
“সুতরাং তোমরা তাদেরকে (অর্থাৎ বাতিল, তাগুত, সারা দুনিয়ার কুফুরী শক্তিকে) ভয় করো না। ভয় কর আমাকেই।” (সূরা বাকারা ২:১৫০)
أَتَخۡشَوۡنَهُمۡۚ فَٱللَّهُ أَحَقُّ أَن تَخۡشَوۡهُ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ
“তোমরা কি তাদের ভয় কর? অথচ তোমাদের ভয়ের অধিকতর যোগ্য হলেন আল্লাহ, যদি তোমরা মুমিন হও।” (সূরা তাওবা ৯:১৩)
প্রিয় ভাই আমার! তুমিই বল-
ইসরাঈল বেশি শক্তিশালী, নাকি আল্লাহ তা‘আলা?
আমেরিকা বেশি শক্তিশালী, নাকি আল্লাহ তা‘আলা?
ইংল্যান্ড বেশি শক্তিশালী, নাকি আল্লাহ তা‘আলা?
রাশিয়া বেশি শক্তিশালী, নাকি আল্লাহ তা‘আলা?
ভারত বেশি শক্তিশালী, নাকি আল্লাহ তাআলা?
চীন বেশি শক্তিশালী, নাকি আল্লাহ তা‘আলা?
মায়ানমার বেশি শক্তিশালী, নাকি আল্লাহ তা‘আলা?
ইরান বেশি শক্তিশালী, নাকি আল্লাহ তা‘আলা?
ফ্রান্স বেশি শক্তিশালী, নাকি আল্লাহ তা‘আলা? ........................................................
এভাবে, সারা দুনিয়ার যেখানেই বাতিল ও তাগুত আছে, তাদের সম্মিলিত শক্তি, এক আল্লাহ তা‘আলার সামনে কি ক্ষমতা রাখে?
তাদের সমস্ত সৈন্য, অস্ত্র, গোলা-বারুদ, কামান-ট্যাংক, মিসাইল আর পারমানবিক বোমা, এগুলো আল্লাহ তা‘আলার এক হুকুমের সামনে কি শক্তি রাখে?
আহ্! আমাদের এই অনুভূতি আজ গেল কোথায়? এই ঈমান গেল কোথায়? কেন আজ আমরা এমন কাপুরুষতার মহা বিমারে ভুগছি?
আমাদের রব্বে কারীম, আমাদের মাওলা (বন্ধু) মহান আল্লাহ সুব্হানাহু ওয়া তা‘আলা কি সকলের উপর শক্তিশালী নন?
তিনিই কি হযরত নূহ আলাইহিস্ সালামের জাতিকে এক মহা প্রলয়ঙ্করী বন্যায় নিমজ্জিত করে ধ্বংস করেননি? আকাশ কি আল্লাহর হুকুম পালন করেনি, যমীন কি তাঁর হুকুম পালনে কোনো ত্রুটি করেছে? নূহ আলাইহিস্
সালামকে উপহাস কারীরা এখন কোথায়? দুরাত্মা কাফেররা কি নিপাত যায় নি?
হযরত হূদ আলাইহিস্ সালামের জাতি ‘আদ’ কুফুরী ও শিরকে লিপ্ত ছিল। তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক ভয়াবহ ঝঞ্ঝাবায়ু দ্বারা, যা তাদের উপর প্রবাহিত করা হয়েছিল সাত রাত্রি ও আট দিবস অবিরাম, কতিপয় অশুভ দিনে। তাদেরকে দুনিয়ার জীবনেই লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির স্বাদ উপভোগ করানো হয়েছিল, আর আখিরাতের আযাবতো আরো অপমানজনক। তারা কি বলতো না, “পৃথিবীতে আমাদের চেয়ে শক্তিধর
আর কে?” কিন্তু তাদের পরিণতি কী হয়েছিল? তুমি যদি তাদেরকে দেখতে পারতে, তাহলে দেখতে, তারা অসার খর্জুর কাণ্ডের ন্যায় ভূপাতিত হয়ে রয়েছে। তাদের কোনো অস্তিত্ব দেখতে পাও কি?
হযরত সালেহ আলাইহিস্ সালামের জাতি ‘সামুদ’ আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতা করেছিল। তারা কি এই যামানার হিন্দুদের মতো মূর্তি পূজারী ছিল না? হযরত শোয়ায়েব আলাইহিস্ সালামের জাতি মাদায়েনবাসী। তারা পরিমাপে ও ওজনে কম দিত আর পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়াত। আল্লাহ তাআলা কি তাদের উভয়কে ভয়ংকর মহানাদ দ্বারা পাকড়াও করেননি? ফলে ভোর হতে না হতেই তারা নিজ নিজ গৃহসমূহে
উপুড় হয়ে পড়ে রইল, যেন তারা কোনদিনই সেখানে ছিল না! আখিরাতের
আযাব কি আরো কঠিন নয়? তাহলে বর্তমান যামানার মালউনদেরকেও কি শায়েস্তা করা হবে না?
হযরত লূত আলাইহিস্ সালামের জাতি সমকামিতায় লিপ্ত ছিল। তাদেরকে
কি নির্মমভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়নি? তাদের জনপদকে শূন্যে উত্তোলন
করে উপরকে কি নীচে করে দেয়া হয়নি? তার উপর কি স্তরে স্তরে কাঁকর
পাথর বর্ষণ করা হয়নি? এগুলো কে করেছেন, আল্লাহ তাআলাই কি করেননি? বর্তমান যামানার সমকামি পশ্চিমাদের পরিণতি কি তাদের বাপ-দাদাদের চেয়ে বেশি সুখকর হবে?
নিজেকে “সর্বোচ্চ খোদা” দাবীদার ফিরাউন ও তার অহংকারী জাতি আজ কোথায়? সে তো ছিল দুষ্কৃতিকারীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়? বহু কীলকের অধিকারী, উঁচু উঁচু প্রাসাদের অধিকারী। সারা দুনিয়ার যুলুম অত্যাচারীদের
আদর্শ। ফিরাউন এবং তার জাতিকে আল্লাহ তাআলা কি নীলনদের পানিতে নিমজ্জিত করে ধ্বংস করে দেননি? বর্তমান যামানার নব্য ফিরাউনরা কি তাহলে আল্লাহ্ থেকে রেহাই পেয়ে যাবে?
আল্লাহ তাআলা কি বনি-ইসরাঈল জাতিকে দুর্ভিক্ষের আযাব দেননি? তাদেরকে তুফান দিয়ে শাস্তি কে দিয়েছিলেন? তাদের খেত-খামার আর শস্যগুলোকে ধ্বংস করার জন্য পঙ্গপাল কে পাঠিয়েছিলেন? তাদের মাথার চুল থেকে শুরু করে চোখের ভ্রূ পর্যন্ত খেয়ে ফেলার জন্য উকুন কে পাঠিয়েছিলেন? বিছানায়, খাবারের প্লেটে, ঘরে-বাহিরে, মাঠে-ঘাটে সর্বত্র ব্যাঙের আযাব কে দিয়েছিলেন? তাদের সকল খাদ্য ও পানীয়কে কে রক্তে পরিণত করেছিলেন? ‘প্লেগ’ নামক মহামারী দিয়ে তাদেরকে আযাব কে দিয়েছিলেন? তিনি কি আল্লাহ তা‘আলা নন? বর্তমান যামানার ইহুদীরা কি তাহলে পার পেয়ে যাবে?
আল্লাহ তা‘আলা কি নমরুদকে একটি খোঁড়া মশা দ্বারাই ধ্বংস করে দেননি?
কা’বা ঘর ধ্বংস করতে আগত আবরাহার হস্তী বাহিনীকে ছোট্ট পাখি দ্বারা কে ধ্বংস করেছিলেন? তিনি কি মহাশক্তিধর, প্রতিশোধগ্রহণকারী মহান আল্লাহ তাআলা নন?
আল্লাহ সুব্হানাহু ওয়া তা‘আলার বাহিনী কত বিশাল, তা কি কেউ কোনোদিন কল্পনা করতে পারবে?
وَمَا يَعۡلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلَّا هُوَۚ
“আপনার রবের বাহিনী (কত বিশাল সে) সম্পর্কে তিনি ছাড়া আর কেউ
জানে না।” (৭৪ সূরা মুদ্দাছ্ছির: ৩১)
ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে দেখ!
وَکَمۡ اَہۡلَکۡنَا قَبۡلَہُمۡ مِّنۡ قَرۡنٍ ؕ ہَلۡ تُحِسُّ مِنۡہُمۡ مِّنۡ اَحَدٍ اَوۡ تَسۡمَعُ لَہُمۡ رِکۡزًا
“আর তাদের আগে আমি বহু প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি! তুমি কি তাদের কারো অস্তিত্ব অনুভব কর অথবা ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাও কি ? (সূরা মারইয়াম ১৯:৭৮)
আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা যদি আমাদের সাহায্য করেন, তাহলে সারা দুনিয়ার ক্রুসেডার ও মুশরিক শক্তি কি আমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে?
إِن يَنصُرۡكُمُ ٱللَّهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمۡۖ وَإِن يَخۡذُلۡكُمۡ فَمَن ذَا ٱلَّذِي يَنصُرُكُم مِّنۢ بَعۡدِهِۦۗ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ
“যদি আল্লাহ তোমাদের সহায়তা করেন, তাহলে কেউ তোমাদের উপর পরাক্রান্ত (বিজয়ী) হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে এমন কে আছে, যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে? আর আল্লাহর উপরই মুসলমানদের ভরসা করা উচিত।”(০৩ সূরা আল-ইমরান: ১৬০)
ভাই আমার!
তাহলে আমরা কাকে ভয় করছি? দুনিয়ার সকল কুফ্ফার শক্তি একত্রিত হয়ে একটি মাছির ডানাও তো সৃষ্টি করতে সক্ষম নয়? অথচ আল্লাহ তাআলাই কি এদের সকলের সৃষ্টিকর্তা নন? আল্লাহ্ পাক চাইলে এক হুকুমের দ্বারাই তিনি দুনিয়ার সকল বাতিল শক্তিকে শেষ করে দিতে পারেন! কিন্তু তিনি পরীক্ষা নিতে চান, কে বিশ্বাসী আর কে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ ও তার রাসূলকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে, কে জিহাদ করে, আর কে সবরকারী? আর আমাদের কতককে তিনি শহীদ হিসেবে কবুল করতে চান।
ওহে মুসলমান! জেগে ওঠো!!!
তোমরা কি পার না ‘লিল্লাহি তাকবীর’- “আল্লাহু আকবার” বলে আবারো ময়দান কাঁপাতে?
তোমরা কি পার না তাকবীরে তাকবীরে বাতিলের একেক মসনদ গুড়িয়ে দিতে?
আল্লাহ তাআলার মহাপবিত্র নামের মাঝে যে অসীম শক্তি আছে, সে শক্তিতে কুফ্ফার গোষ্ঠিকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিতে?
এখনও সময় আছে। বিজয় আমাদেরই পদচুম্বন করবে, ইনশাআল্লাহ্।
“হয়তো শরীয়ত, নয়তো শাহাদত”- এই প্রতীজ্ঞা নিয়ে এখনি ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সাথেই আছেন। তিনিই আমাদের রব। তিনিই আমাদের মাওলা, তিনিই আমাদের বন্ধু ও অভিভাবক।
نِعۡمَ الۡمَوۡلٰی وَنِعۡمَ النَّصِیۡرُ
কত উত্তম মাওলা তিনি, কতই না উত্তম সাহায্যকারী! (সূরা আনফাল ৮:৪০)
মনে রেখ- যে মুমিন জিহাদের পতাকা উত্তোলন করবে, আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় সে দুনিয়ার তাবৎ কুফুরি শক্তির জন্য এক মহা আযাব এবং ভয়াবহ যমদূত হিসেবে আবির্ভূত হবে, সন্দেহ নেই।
যে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে, যে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, যে তার দাবীতে সত্যবাদী আর যে আল্লাহর পরিচয় যথার্থরূপে পেয়েছে, তার কাছে বাতিলের সমস্ত সামরিক ও আণবিক শক্তি মশা বা মাছির ডানার মতো মনে হবে।
যে মুমিন জিহাদকে বুঝবে না, যে মুমিন জিহাদের গুরুত্ব উপলব্ধি করবে না, যে মুমিন আল্লাহর মানসাকে না বুঝে নিজের খেয়াল-খুশি মত ইসলাম পালন করবে, ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত থাকবে, এমন মুসলমান দ্বারা যদি আসমান যমীন ভরেও যায়, তবুও তাগুতের মসনদ এতটুকুও নড়বে-চড়বে না, একটুও কাঁপবে না।
অন্যদিকে, পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে যদি এমন একজন মুসলমানও পাওয়া যায় যে হকের উপর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে, তার জন্য সারা দুনিয়ার তাগুতী শক্তির ঘুম হারাম হয়ে যাবে, তাকে পাওয়ার জন্য, তাকে খুঁজে বের করার জন্য বা তাকে হত্যা করার জন্য অন্য হাজারো মুমিনকে বন্দী করবে, আরো লাখো মুসলিমের রক্ত ঝরাবে।
ওহে মুসলিম উম্মাহ্!
তোমাদের চিন্তার কোনোই কারণ নেই। তোমরা জিহাদকে বুঝো, জিহাদের জন্য নিজের মেধা, অর্থ, শ্রম ও সময় ব্যয় করো আর আল্লাহর রাহে যুদ্ধের পতাকা উত্তোলন করো।
আল্লাহ তাআলার সাহায্য অতি নিকটবর্তী। আল্লাহ তাআলা আবারো আমাদের হাতে দুনিয়ার নেতৃত্ব ও খিলাফত তুলে দিবেন। অপমান ও লাঞ্ছনার যিন্দেগী হতে তিনি আমাদেরকে মুক্ত করবেন। কুফ্ফারদেরকে আমাদের কদমদাস বানাবেন। তাদের কন্যাদেরকে আমাদের হাতে দাসী-বাদীরূপে তুলে দিবেন। আমাদের হাতে সারা দুনিয়ার বাতিলকে মিটিয়ে দিবেন।
তাই দ্রুত কদম দাও। আগে বাড়।
ইমাম আল-মাহদীর বাহিনী, হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম এর বাহিনী; কালো পতাকার বাহিনীতে শরীক হয়ে যাও, যদিও বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হয়। আখেরাতের মহা বাণিজ্যে লাভের আশায় দুনিয়ার তুচ্ছ বাণিজ্যকে ত্যাগ করে সফলতার পরিচয় দিয়ো।
লক্ষ্য রেখো, মায়ের কোমল মমতা, জীবন সঙ্গিনীর সিক্ত অশ্রু, অথবা নয়নের মণির চেহারাটুকু যেন আমার এবং আমার জন্য আত্মোৎসর্গকারী সাহাবায়ে কেরামের ভালোবাসার পথে কোনরূপ বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
শহরের বড় বড় প্রাসাদ আর চাকচিক্যপূর্ণ বিলাশ বহুল ভবনগুলো তোমাদেরকে পাহাড়ের অন্ধকার গর্তে আশ্রয় গ্রহণের পথে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। ইট আর মাটি দিয়ে বানানো ঘরগুলোকে বাঁচানোর লক্ষ্যে আখেরাতের চিরস্থায়ী প্রাসাদগুলোকে নষ্ট করে দিয়ো না।
কারাগারের কালো কুঠুরিগুলোতে আবদ্ধ হওয়ার ভয়ে দাজ্জালি শক্তিগুলোর সামনে মাথা নত করো না। মনে রেখো, কবরের চেয়ে কালো কুঠুরি আর ভয়ানক কারাগার কিন্তু দ্বিতীয়টি নেই।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আকাঙ্ক্ষা, যা হওয়ার হোক কোনো কিছুকেই পরোয়া করবে না, বরং অবশ্যই ইমাম মাহদীর সেনাদলে এসে শরীক হয়ে যেয়ো। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করুন। আমীন।
************************************
কিতাবুত তাহরীদ আলাল ক্বিতাল
(প্রথম পর্ব )
************************************