পাঠকের কলাম
মুজাহিদদের আদালতেই বিচার হবে
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। আজ থেকে আট শত বৎসর পূর্বে তুর্কি বীর সিপাহাসালার ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির হাতে এদেশে ইসলামের ঝান্ডা উড্ডিন হয়, অপসাংস্কৃতির ধারক হিন্দু রাজা লক্ষণ সেন মুজাহিদদের আল্লাহু আকবার ধ্বনী শুনে পেছনের জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ইসলাম এদেশে স্বীয় মহিমায় শ্রেষ্ঠ আসনে সমাসীন। যখনি ইসলামের কোন শত্রু অথবা বিজাতির দালাল ইসলামের উপর আচড় লাগাতে চেয়েছে ঠিক তখনি বখতিয়ার খিলজীর উত্তরসূরীরা তার দাত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছে, ইতিহাস তার জলন্ত প্রমাণ । আজও যদি ইহুদী নাসারাদের উচ্ছিষ্টভোগী কোন দালাল এদেশ থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার কোন ঘৃণ্য চক্রান্ত করে, তবে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা জনমের মতো শিক্ষা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। যদি কোন ক্ষমতাসীন ক্ষমতার গরমে দেশ ও স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে চক্রান্ত করে, কুখ্যাত নজিবুল্লাহর মতো দেশকে বিক্রি করতে চায়, তবে জেনে রাখা উচিত; তিতুমীর ও বখতিয়ার খিলজীর অগণিত উত্তরসূরী মর্দে মুজাহিদ চিরতরে তাদের ক্ষমতার স্বাদ মিটিয়ে দেবে, তিতুমীরের কেল্লা আবার সরগরম হয়ে উঠবে, গর্জে উঠবে শাহজালালের তলোয়ার, এযুগের মীরজাফরদের কুখ্যাত নজিবুল্লার মতো পরিণতি হবে। মুজাহিদদের আদালতেই বিশ্বাস ঘাতকদের বিচার হবে।
এম এন আহমদ হামিদী
সুশিক্ষার নামে কুশিক্ষা
স্কুল কলেজগুলোতে আজ শিক্ষার জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষার নামে বিদেশ পাড়ি জমানো হচ্ছে। আধুনিক সমাজের অনেক বিষয় পড়া লেখার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যেমন কম্পিউটার সাইন্স, মর্ডান (সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ইত্যাদি। আধুনিক থেকে আরো আধুনিক করা হচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নির্মিত হচ্ছে নতুন নতুন স্কুল কলেজ। স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থাই পরবর্তীতে আমাদের ব্যক্তি জীবনে শতকরা নব্বই ভাগ প্রভাব ফেলে: যা কলেজ প্রাঙ্গনে প্রবেশ করলে সহজে কোন ছেলে মেয়ে গ্রহণ করতে চায় না। পরিবেশের প্রতিকূল প্রভাব তার মাঝে পুরোপুরি বিস্তার লাভ করতে সক্ষম হয। তাই যে ছেলে বা মেয়ে স্কুলে যতটা জড়তা বা লাজুক স্বভাবের থাকে, কলেজ প্রাঙ্গণে রীতিমত তার বিপরীত আচরণ পরিলক্ষিত হয়।
প্রায়ই শোনা যায় বখাটে ছেলেদের উৎপাত, কিশোরী ধর্ষণ, কিশোর অপরাধ ইত্যাদি খবর। এই কিশোর-কিশোরীদের মাঝে আবেগ অতিমাত্রায় ক্রিয়া করে থাকে। আমাদের সংস্কৃতি এবং সমাজের উলঙ্গ ব্যবস্থাপনার ফলে কিশোর-কিশোরীরা ফিল্মী কায়দায় অনেক কিছু করতে চায়। এর মাঝে প্রেমের ফসল হিসাবে যিনার পথে পা বাড়ায়। আর তাই অভিভাবকদের থাকতে হয় তাদের কিশোরী সন্তানকে নিয়ে টেনশনে। স্কুলের আশেপাশে কিশোরদের গ্রুপিং, ঘোরফেরা, ইশারা, গিফট লেনদেন, টেলিফোন। আর কিশোরীরাও স্কুলে যায় টাইট-ফিট পোষাক পরে, চলাফেরা হিরোইনী কায়দায়। সবশেষে যা ঘটার তা ঘটে থাকে। এ কিশোর-কিশোরীরা তাদের এ সকল কার্যকলাপ আমাদের ন্যাংটো কুৎসিত বিজাতীয় সংস্কৃতির অবাধ চর্চার ফলে শিক্ষালাভ করে থাকে যার ফলে দেখা যায় কিশোর বয়সেই স্কিন টাইট জিনস্ প্যান্ট, মার্কারী সানগ্লাস, ওয়েষ্টার্ন কায়দার জুতো, আর বোম্বের নর্তক-নর্তকী, হিরো-হিরোইনদের একশভাগ অনুসরণ করে থাকে। ছোট খুকীও আজ এটিএন, জিটিভি, ষ্টার টিভির মত চ্যানেলগুলো দেখে দেখে অভ্যস্থ। বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে কবর দিয়ে আজ কিশোর-কিশোরীরা কারিশমা,শাহরুখ হতে চায়। কিশোরীদের যদিও ঘরের বাইরে বা স্কুলের গন্ডির বাইরে যাওয়া হালকাভাবে নিষেধ আছে তথাপিও এরা শপিং সেন্টারে, ভিডিও দোকানে, পার্কে, নিজ বাড়ীর ছাদে, এমন স্টাইলে চলাফেরা করে যাতে কিশোর যুবকরা আরো উচ্ছশৃংখল হয়ে পড়ে! তাদের এহেন কার্যকলাপের জন্য আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষা বোর্ড দায়ী। শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের মূল অনুশাসনগুলো তাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়নি। যেমন, স্নাতক শ্রেণীতে ইসলামীক স্টাডিজ বিষয়ে সূর' আন নূর অর্তভুক্ত করা হয়েছে। এতে "সামাজিক বিধি-বিধান তথা কিশোর-কিশোরী থেকে বয়োবৃদ্ধদের পর্যন্ত পোষাক-আসাক, চলাফেরা, কথাবার্তা যাবতীয় ব্যাপারে কুরআনের কড়া শর্ত বিধান জারী আছে, যা শুধুমাত্র স্নাতক শ্রেণীর যারা ইসলামীক স্টাডিজ পড়বে তারা জানবে আর বাকীরা এ সকল বিধান জানবেনা। জ্ঞানের অভাবে এ অজ্ঞ শ্রেণী অবাধে ব্যাভিচার, যিনা, অপবাদ ছড়ানো, কুৎসিত পরিধান, পতিতাদের ন্যায় ঘোরাফেরা করবে। অথচ কিশোর-কিশোরী বিশেষ করে স্কুল কলেজের উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের জন্য এ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা দরকার। তাহলে ওরা জানবে এবং কড়া বাবস্থাপনার ফলে ছোট থেকেই এগুলো আয়ত্ত করতে সমর্থ হবে। আর তা না হলে পিতামাতা ও শিক্ষকদের অবাধ্যতা,বড়দের অশ্রদ্ধা প্রদর্শন, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, পথে-ঘাটে উশৃঙ্খলতা প্রদর্শন, বিনা টিকেটে ভ্রমন, রাস্তাঘাটে মারপিট, ছিনতাই, হয়রানি, পরীক্ষায় নকল, অবৈধ যৌন সম্পর্ক, বোমাবাজি, এসিড নিক্ষেপ, ডিশ চ্যানেলসহ ভিডিওতে নীল ছবি দেখা, মাদকদ্রব্য গ্রহণ কিছুই বন্ধ হবে না।তাই আসুন কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে ভাবি, তাদের কাছে ইসলামের শিক্ষাকে তুলে ধরি। কিশোর-কিশোরীদের এক প্লাটফর্মে এনে ইসলামী বিপ্লবের ধারায় তাদের কাছে ইসলামী অনুশাসনগুলোকে তুলে ধরে তাদের মাধ্যমেই বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলি। তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া পাশ্চাত্য নোংরা মস্তিষ্ক প্রসূত গাদ্দার, মোনাফেক ও উলঙ্গ সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকদের তৈরী করা শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করার চেষ্টা করি। আজ হোক কাল হোক হবেই ইনশা আল্লাহ, আমীন।
সাইফুল্লাহ
দ্বীপ্ত শপথে অগ্রসর হতে হবে
দুনিয়ার শুরু লগ্ন থেকে চলে আসছে হক বাতিলের সংঘাত। সংখ্যায় কম-বেশী হক বাতিল নির্ণয়ের মাপকাঠি নয়! যদিও আবহমান কাল থেকে হকের সংখ্যা ছিল নগন্য, তবুও নিজের অবস্থানে চিরকাল টিকে ছিল ও থাকবে।
সম্প্রতি নাস্তিক মুরতাদদের দালাল,ইয়াহুদীবাদীদের পা চাটা গোলামের বংশধরেরা পাশ্চাত্য থেকে নব প্রতিষ্ঠিত ইসলাম বিদ্বেষী গোটা কয়েক পত্রিকার আশ্রয় গ্রহণ করে আদাজল খেয়ে নেমেছে মুসলিম জাগরণ ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর মুসলিম রেনেসার অগ্রদূত “জাগো মুজাহিদ" পত্রিকাটির বিরুদ্ধে।
এসব দেশদ্রোহী স্বাধীনতা বিরোধী চিহ্নিত মহলের কঠোর জবাব দেওয়ার জন্যে দেশের সচেতন নাগরিকই যথেষ্ঠ। মুসলিম অধ্যুসিত বাংলাদেশের বুকে বসে নিরিহ মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে, তা কোন দিন হতে পারে না। যারা মুসলমানদের হুমকি ধমকি দিয়ে হয়রানী করে চলেছে, তাদের পরিণাম হবে ভয়াবহ। ওরা ভেবেছে এদেশের আলেম ওলামাদের “তালেবান” নামে আখ্যায়িত করে দেশের অবাঞ্চিত নাগরিক হিসাবে ভূষিত করবে। আসলে ওদের জানা নেই যে বাংলাদেশের প্রতিটি মুসলমান তালেবানদের প্রাণের চেয়েও ভালবাসে।
কোটি কোটি দেশ প্রেমিক মুসলমানের সফল উত্থানে তাবত কুফুরী মতবাদের কবর রচনা হবে এবং বাংলাদেশের মানচিত্রে কুরআন সুন্নাহর শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
কামালুদ্দিন
আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা
“জাগো মুজাহিদ" এপ্রিল সংখ্যায় “ভূগোলময় পৃথিবী” কলামের লেখক জনাব মনযূর আহমাদ সাহেবের প্রতিবেদনখানি পড়ে আমার জীবনে একটি রাশিয়ান জাহাজে “চুরি” করে কুরআন সাপ্লাই করার বাস্তব ঘটনা মনে পড়ে গেল! চুরি করে কোন কাজ করলে হৃদয় ও মন যে কতখানি আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে, তা আমি সেদিন উপলব্দি করতে সক্ষম হই। অনেকে কথা প্রসঙ্গে বলে থাকেন “চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা, যদি সারতে পারে'। পরবর্তি বাক্যটি আর বল্লামনা যেহেতু মহান আল্লাহ আমার এই চুরিতে পূর্ণ সহযোগীতা করেছেন নইলে শুধু অবশ্য উত্তম মধ্যম নয় চাকুরীখানি হারিয়ে হয়ত জেলের ভাত খাওয়া লাগতো। ঘটনাটি সমাজতন্ত্র নামক যন্ত্র দানবটি আউট অফ্ অর্ডার হওয়ার পূর্বের ঘটনা অর্থাৎ সমাজ যুগের শেষ ভাগের (১৯৭৭-৭৮)।
“আকতুবনিষ্ট” নামে একটি রাশিয়ানতেলবাহী জাহাজ কয়েক হাজার টন চর্বি নিয়ে এসেছিল চট্রগ্রামের অয়েল জেটিতে। চর্বি প্রাপ্তির হিসেব নিকাশ সংক্রান্ত ডিউটির কারণে এজেন্টসহ অন্যান্য ব্যক্তি বর্গের সাথে আমিও জাহাজে উঠলাম: কথা প্রসঙ্গে বলতে হয়, একটি রাশিয়ান জাহাজে যে কোন ব্যক্তির উঠা-নামা করা বড়ই কষ্টসাধ্য। সাম্পান হতে সিড়ি যোগে উঠে জাহাজের কেন্টিন পর্যন্ত যেতে ৩/৪ ষ্টেশনে সিকিউরিটি চেক করে ক্লিয়ারেন্স পেতে হয়? অন্যান্য দেশের জাহাজে এত কঠোর ক্লিয়ারেন্স পদ্ধতি নেই। যথারীতি ক্যাপ্টেনের সাথে দেখা করে আমার গন্তব্য স্থান দোতালায় অয়েল অফিসারের রুমে গিয়ে বসলাম এবং অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে যৌথ কার্য সম্পাদন করে রুমের বাইরে নীচ তলার দিকে রওনা দিলাম, পেছন হত ইংরেজীতে দাড়াবার জন্য বার বার অনুরোধ শোনা যাচ্ছিল। তবে এ ডাকে সাড়া দিতে দিতে ১ম তালায় পৌঁছে গেলাম। জাহাজের সেকেন্ড অয়েল অফিসার সবিনয়ে পরিচয় দিলেন, তিনি একজন মুসলমান। তিনি বল্লেন “তোমরা আমাকে হাফপ্যান্ট পরা অবস্থায় রাশিয়ান অ-মুসলিম মনে করছ”। এই বলে তিনি পবিত্র কুরআনের আয়াত ও কিছু সুরা এবং নামাজ সম্পর্কিত বহু কিছু বলেন, যাতে আমাদের বিশ্বাস যোগ্যতা লাভ করা যায়। রমজানের মাস, আমার সাথে ক্যাপ্টেন মোজাম্মেল হোসেন ছিলেন (এখন মৃত)। সেকেন্ড অফিসারের হৃদয়ের দূঃখ জনিত নিম্মলিখিত কথাগুলি এবং তার হৃদয় নিংড়ানো ভাষায় এক কপি কুরআন পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে যে অভিনয় করলেন তা দেখে আমাদের দুই চোখ দিয়ে পানি গড়াতে লাগলো। আমরা তার সাথে ওয়াদা করলাম, যে ভাবেই হোক আগামী দিন বন্দর ত্যাগ করার পূর্বে এক কপি কুরআন শরীফ পৌঁছে দেব, এবার তার কথাগুলি তুলে ধরছি, “আমার পূর্ব পুরুষ মদিনা হতে তাজাকিস্তানে এসে বসবাস করছে। আমাদের মাতৃভাষা আরবী, বাড়ীতে সকলে রোজা নামাজ পড়ি! এ জাহাজে আমি একা মুসলমান। রোজা রেখেছি, তবে ধর্মীয় কাজ করতে পারছিনা। আমার দেশে কুরআন নেই, পাওয়া কষ্ঠসাধ্য ব্যাপার। দাম নাগালের বাইরে। লাইসেন্স, পারমিট এবং সরকারী সুনজর লাগে এক কপি কুরআন পেতে হলে। (মূল্য হিসেব করে দেখলাম বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৩০/৩২ হাজার টাকা প্রতি কপি) তোমরা দয়া করে আমাকে-এক কপি কুরআন দাও। আজীবন তোমাদের এই মেহেরবানী মনে থাকবে, দোয়া করব” ইত্যাদি বহু কথা।
ক্যাপ্টেন মোজাম্মেল হোসেন আমাকে তার বাসায় নিয়ে গেলেন চট্রগ্রামের দেয়ানজী পুকুর লেনে। কলিকাতা ছাপার বড় এক জিলদ কুরআন আমাকে পুটলি বেধে দিলেন। পথে আন্দরকিল্লা পৌঁছে আমার মনে হিংসার উদ্রেক হলো। একা হোসেন সাহেব এত বড় ছওয়াব নেবেন? আমি কি কিছু করবনা? আন্দরকিল্লা হতে ৩৫ টাকা দিয়ে আমিও এক কপি কুরআন শরীফ ক্রয় করলাম। বাসায় ফিরে রাত্রে ভাল ঘুম হলোনা । সকাল ৯টায় জাহাজ ছেড়ে যাবে। জাহাজ ছাড়ার পূর্বে আমাকে মালামাল খালাশ জনিত ইনস্পেকশন করতে হবে, তা-ছাড়া দুই কপি কুরআন শরীফের বড় নান্ডেল নিয়ে কিভাবে সাম্পান হতে সিড়ি দিয়ে উঠব? ধরা পড়লে কি হবে? ওয়াদা ভঙ্গ হলে গুনাহ হবে। মনে শান্তি নেই।
সকাল ৭টায় আই-টি-টি উত্তর পতেঙ্গা গিয়ে পৌঁছলাম, অন্য কেউ আসেনি, অপেক্ষা করছি। হঠাৎ ৮টার সময় চট্টগ্রাম আটলান্টিক সার্ভের মালিক আফছার উদ্দীন সাহেব এসে গেলেন। তাকে সালাম দিয়ে অনুরোধ করলাম, আমার একটা! মহা উপকার করতে হবে, ঘটনা পরে বলব প্রথমে আপনার আমার সাথে জাহাজে উঠতে হবে। খোদা না খাস্তা আমি যদি ধরা পড়ে যাই আপনি আমাকে ভাল লোক বলে সার্টিফাই করলে হয়ত জেলে যেতে হবেনা, তবে চাকুরী গেলে যাক। তিনি রাজী হলেন। যথারীতি কঠোর নিরাপত্তা এক এক করে পার হয়ে দোতালায় পৌঁছে গেলাম। পথে সকলে হাতের বোঝা দেখতে ছিল। গা কাঁপছে, সেকেন্ড অফিসারের রুমে ঢোকার পর সোফা সেটের এক কোনে কুরআন শরীফ এর বান্ডেল খানি কিছুটা আড়াল করে বসে গেলাম (আল্লাহ এ বেয়াদবী মাপ করুন)। হঠাৎ ঐ সেকেন্ড অফিসার ক্যাপ্টেনের রুম হতে নেমে আমাদের রুমের দরজায় দাড়িয়ে আমাকে চোখ মারলেন, আমিও চোখ মারলাম (আছে)। পুনরায় তিনি চোখ মেরে দেখিয়ে দিলেন ঐ একই রুমের এক কোনে কতগুলি অপবিত্র খাচরা টুকরা কাপড় ও সুতা রয়েছে উহার নীচে লুকিয়ে রাখার জন্য। ইতিপূর্বে আমার ক্লিন সার্টিফিকেট নিয়েছিলাম, এবার ভাগার পালা। গা কাঁপছে, নীচ তলা পর্যন্ত গিয়ে সিড়ি বেয়ে সাম্পানের দিকে নদীতে অবতরণ করছি। রুম হতে বের হওয়ার পর ঐ অফিসার আমার পেছনে পেছনে ছিল আর শুধু ধন্যবাদ কথাগুলি বার বার বলছিল, তার দিকে একটি বারও ফিরে তাকাইনি। আফছার সাহেবসহ নৌকা হতে নেমে যখন পতেঙ্গা রাস্তার পার্শ্বে রেল লাইনে পৌঁছলাম, গা কাঁপা কমতে শুরু হলো। আল্লাহর কাছে শুকর করলাম, তিনি আমার এ কর্মে সাহায্য করেছেন। আল্লাহর দুইটি কুরআন নিরাপদে শ্বেত ভল্লুকের দেশে পাঠাতে সমর্থ হলাম, আল্লাহ বড় মহান ও মেহেরবান।
মোসলেহ উদ্দীন (অবঃ সার্ভেয়ার)