JustPaste.it

আমার দেশের চালচিত্র:

 

বাঙালি সংস্কৃতির নামে জাহিলিয়াতের উত্থান

মোহাম্মাদ ফারুক হোসাইন খান।

=================================================

 

        দেশে ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির শায়লাব বয়ে যাচ্ছে। সরল-সহজ মুসলমানদের কৌশলে হিন্দু মার্কা মুসলমান বানানোর অপচেষ্টা চলছে। শেকর সন্ধানের নামে তাদেরকে এক আল্লাহর এবাদত এর পরিবর্তে মূর্তি পূজা, শিব পূজা পূজা, গো পূজা, বেক্ষ পূজা ও অগ্নি পূজার সংস্কৃতিতে ফিরিয়ে নেয়ার তৎপরতা চলছে পুরোদমে। জনগণের মন হাজার বছর আগেকার পূর্বপুরুষদের হিন্দুধর্ম ও ঐতিহ্যমুখী করার জন্য নামাজ, রোজা, ঈদ, শবেবরাত, শবে কদর প্রভৃতি কাননের বদলে মঙ্গল প্রদীপ জেলে আগুনের কাছে মঙ্গল কামনা, ভাস্কর্যের নামে মূর্তি তৈরি, পায়রা উড়িয়ে শান্তি কামনা, দেয়ালী ও হোলি উৎসব প্রভৃতি হিন্দুয়ানী সংস্কৃতিকে সার্বজনীন সংস্কৃতিতে পরিণত করার জন্য মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে একটা অসাধু মহল। দেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া এবং ইসলাম মুক্ত করার জন্য এ মহল তথাকথিত বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, বাঙালি সংস্কৃতি ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ এ সর্বনাশা ত্রিতত্ত্বকে মোক্ষম মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে।

 

        ইতিহাস মতে, এদেশের হাজার হাজার বছর আগেকার পূর্ব পুরুষদের অধিকাংশ ছিল অনার্য বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। তারা বৃহৎ বাংলার অধিবাসী ছিল। তারা বাংলা ভাষায় কথা বলত। এই ভৌগলিক ও ভাষাগত দিক দিয়ে তারা বাঙালি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তাদের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে বাংলা ভাষা বা বঙ্গ দেশের অধিবাসী হিসেবে নয়, বৌদ্ধ ধর্মের আদর্শ অনুসারে। এজন্য তারা জীব হত্যা করা পছন্দ করতোনা। বুদ্ধ পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা প্রভৃতি ধর্মীয় উৎসব উদযাপন ছিল তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। দ্বাদশ শতাব্দী ও তার পূর্বে বিদেশী আর্য হিন্দু শশাঙ্ক ও সেন বংশের রাজারা রাজশক্তি ব্যবহার করে জোর করে এই বুদ্ধ জনগণের উপর আর্য বর্ণহিন্দু সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়। বাংলা ভাষাকে দুর্ভেধ্য সংস্কৃতিমুখী করে এর বিকাশ রুদ্ধ করে দেয়। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইসলামের আগমনের সাথে সাথে এদেশের জনমনে সংস্কৃতিক বিপ্লব সাধিত হয়। মসজিদ, মাদ্রাসা, নামাজ, রোজা,  ঈদ, শবেবরাত ইসলামী নামকরণ হয় তাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। ইসলামের প্রভাবে মুসলমানরা পূর্বপুরুষদের যাবতীয় কুসংস্কার, মূর্তি পূজা, জড় পূজা পরিত্যাগ করে। এই মুসলিম আমলেই বাংলা ভাষাকে সহজবোধ্য রূপ দেয়া হয় এবং এর বিকাশ সাধিত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙ্গালী মুসলমানের সংস্কৃতি হয় মুসলিম সংস্কৃতি। তদ্রুপ বাদবাকী হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগণের সংস্কৃতি ছিল যথাক্রমে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম প্রভাবিত সংস্কৃতি। এসময় মুসলমান মসজিদে যেত, হিন্দু যেত মন্দিরে, বৌদ্ধ প্যাগোডায়। মুসলমানরা উৎসব হিসেবে পালন করত ঈদ, হিন্দুরা কালী পূজা, দুর্গাপূজা, বৌদ্ধরা মাঘী পূর্ণিমা। ধর্মহীন বাঙ্গালী সংস্কৃতির ন্যায় অবাস্তব কোন সংস্কৃতির চিহ্ন এ সময় ছিল না। অথচ তখন হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান একত্রে সুখে-শান্তিতে বাস করত।

 

 

        মুসলমানদের ত্যাগ বিপর্যয়ের পর ইংরেজ আমলে আর্য হিন্দুরা হঠাৎ সরেস বাঙ্গালী সেজে বসে। তারা ইংরেজ রাজশক্তির ছত্রছায়ায় শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে মুসলিম প্রভাব মুক্ত করে দুরুহ সংস্কৃতি ধ্বংস করে সর্বত্র হিন্দুয়ানী কায়েমের কোশেশ চালায়। গোড়া হিন্দুদের এহেন চরম মুসলিম বিদ্বেষের ফলে মুসলিম পাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশের অভুদ্যয় ঘটলে স্বভাবতই বাঙ্গালী মুসলিম সংস্কৃতি তার পূর্বের পথ ধরে। কিন্তু উক্ত মহলের তা' মনোপূত হয়নি। তারা হঠাৎ করে আর্য-বর্ণ হিন্দু সংস্কৃতির প্রেমে পড়ে। তারা আমাদের জাতিসত্তার শেকড় সন্ধানের নামে, আবহমান কালের দোহাই দিয়ে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানোর রং ছিটানো, উলূ ধ্বনি দেয়া, নগ্নপদে শোভা যাত্রা, শান্তির জন্য পায়রা উড়ানোকে আমাদের সংস্কৃতি বলে প্রচারণার ঝড় তোলে। ভারতভুক্ত হিন্দুপ্রধান বঙ্গ দেশের জনগণের শ্রদ্ধা কুড়াবার জন্য ইসলামের আদর্শ ও সংস্কৃতি বিরোধী ভৌগোলিক মানচিত্র ভাষাভিত্তিক এক উদ্ভট বাঙ্গালী সংস্কৃতির তত্ত্ব আবিষ্কৃত হয়। অথচ কে না জানে, কোন জাতির সংস্কৃতি গড়ে ওঠে মানুষের বিশ্বাসের ওপর ভর করে। তা দেশের আলো-বাতাস, পানিতে লালিত পালিত হয় মাত্র। কিন্তু কোন জাতির সংস্কৃতি তার ভাষার অবয়বে মাটি ফুঁড়ে জন্ম নেয় না।

 

        পশ্চিম বঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হিন্দু তাই তারা তেত্রিশ কোটি দেবতায় বিশ্বাস করে, মন্দিরে যায়, কোন কর্ম সম্পাদনের শুরুতে মঙ্গলকামনায় মঙ্গল প্রদীপ জ্বালায়। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান বলে তারা এক আল্লাহতে বিশ্বাস করে। সেজন্য তারা মসজিদে পাঁচবার নামাজ আদায় করে। কোনো কাজের শুরুতে আল্লাহর কাছে মঙ্গলকামনায় 'বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, বলে কাজ শুরু করে। ধর্ম বিশ্বাসের জন্যই এই পৃথক সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে। ভৌগলিক অবস্থান বা ভাষা পৃথিবীর কোথাও যেমন সংস্কৃতি জন্ম দিতে পারেনি তেমনি আমাদের দেশেও সেই আবহমান কাল থেকেই ভূগোল বা ভাষাগতভাবে সর্বজনীন কোন বাঙ্গালী সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। এজন্যই আমরা ভাষা এবং ভৌগলিক দিক দিয়ে এক বাঙালী জাতি হয়েও আমাদের সংস্কৃতি আলাদা।

 

        কিন্তু এই চরম সত্যকে উপেক্ষা করে ইদানিং ওই মহল থেকে নাটক, সভা, সংগীতের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যে, এদেশের মুসলমানদের শেকড় তথা পূর্ব পুরুষেরা ছিল প্রাচীন বাংলার বাঙ্গালী। তাদের সংস্কৃতি ছিল উলূ ধ্বনি, কায়সার ধ্বনি,জড়, গাছ গোমাতা, মূর্তি পূজা। তাদের উত্তর পুরুষ তথা ওপার বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙ্গালী হিন্দুদের সংস্কৃতিও তাই।

 

        শুধুমাত্র মুসলমানরা এসে জোড় করে আমাদের সংস্কৃতি পাল্টে দিয়েছে। এখন আমরা সুযোগ পেয়েছি, এক সংস্কৃতির ধারক হয়ে আমরা আর পৃথক  থাকব না। আমরা অখন্ড বাংলা কায়েম করব।

 

        অখন্ড বাংলা কায়েমের জন্য আমাদের ধর্ম, আমাদের স্বাধীনতা অখন্ড কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। আমরা মুসলমান এবং পূর্বপুরুষদের পৌত্তলিক সংস্কৃতি বর্জন করে মুসলিম সংস্কৃতি ধারক হয়েছি। এজন্য হিন্দুরা আমাদের সাথে মিলিত যাবে কিনা এটাই তাদের মূল বিবেচ্য বিষয়। তাই দাদাবাবুদের মন জয় করার জন্য তারা আমাদের শেকড় সন্ধানের নামে মুসলমানিত্ব বিসর্জন দিয়ে হিন্দু ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারণ করার এমন সর্বনাশা উৎসাহিত দিচ্ছে। প্রাচীন বাংলার এক অংশ ভারতভুক্ত এবং বাকী অংশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র। সুতারাং এ অবস্থায় অবিভক্ত বাংলা গঠনের যুক্তিযুক্ত পথ হলো ভারতভুক্ত বঙ্গকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে বাংলাদেশের সাথে জুড়ে দেয়ার জন্য সমগ্র বাঙ্গলীর সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীদের এজন্য অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। একটি স্বাধীন দেশের সাথে মিলিতে হলে প্রয়োজনে তাদেরই সংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ছাড় দিতে হবে। কিন্তু ঐ কাপুরুষ মহল সে যুক্তির পরোয়া না করে আমাদের ধর্ম ও রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতাকে বিসর্জন দিয়ে হিন্দুত্ব বরণ করে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের সাথে মিলিত হওয়ার পক্ষান্তরে ভারতভুক্তির পক্ষে নসিহত বিলাচ্ছেন; যেন ওদের সাথে মিলতে পারলেই আমরা নির্ঘাত স্বর্গে চলে যাব।

 

        আমরা জানি ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে আরবের লোকেরা মূর্তি পূজা, অগ্নি পূজা ও বিভিন্ন প্রকার কুসংস্কার ও অনাচারের লিপ্ত ছিল। কিন্তু ইসলামের আলোতে তাদের মন এসব কুসংস্কার ও অনাচার মুক্ত হয়। হাজার দেবতার বদলে এক আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হয়। আল্লাহ্, রাসূল, পরকাল, ফেরেশতা, তাকদীর, বেহেস্ত, দোযখ প্রভৃতি ইসলামী ধ্যান ধারণার ওপর ভিত্তি করে তাদের নয়া সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। একইভাবে ইসলাম ক্রমান্বয়ে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন ভাষাভাষী বর্ণ ও ধর্মালম্বী জনগোষ্ঠীর নিকট পৌঁছে গেলে এসমস্ত জনগোষ্ঠী তাদের বাপ দাদার নিকট উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সকল কুসংস্কার ধর্ম বিশ্বাস ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করে, তারা ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী সংস্কৃতি গড়ে তোলে। তি ভাষা বা ভৌগুলিক অবস্থান ভিন্নতর হওয়া সত্ত্বেও সকল মুসলমানের সংস্কৃতি এক ও অভিন্ন। প্রাচ্যের মুসলমান যেমনি বিসমিল্লাহ বলে কাজ শুরু করে, দাড়ি রাখে, টুপি পরে ও পাঁছ  ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তদ্রুপ পাশ্চাত্য, তুর্কি বা আফ্রিকার নিগ্রো মুসলমান ও বিসমিল্লাহ বলে, দাড়ি রাখে, নামাজ পড়ে, টুপি পরে।

 

        ইসলামের আবির্ভাবই হয়েছে সকল মিথ্যাকে অপসারণ করার জন্য। এজন্য ইসলাম মানুষের রান্নাঘর থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সুসম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান উপহার দিয়েছে।

 

        ইসলামের প্রভাবে সকল মিথ্যা, কুসংস্কার দূর হয়ে যাবে এটাই ইসলামের মূল বৈশিষ্ট্য। এজন্যই কোন মিশরীয় মুসলমান তাদের শেকড়  সন্ধানের নামে বলছে না যে, আমরা মুসলমান থাকব কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি হবে পিরামিড সংস্কৃতি। আমরা পুনরায় আল্লাহর পরিবর্তে ফেরাউনকে খোদা মেনে তার পূজা করব। কোন পাকিস্তানী বা ইরাকী  মুসলমানও  দাবী করছে না যে আমরা মুসলমান কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি হওয়া উচিত পৌত্তলিক ভাবধারার সিন্ধু বা বেবিলনীয় সংস্কৃতি। অথচ আমাদের দেশে বাঙ্গালী সংস্কৃতির ধূম্রজাল সৃষ্টি করে মুসলমানদের শেকড় তথা পৌত্তলিক ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতিমুখী করার দাবী জানানো হচ্ছে। আল্লাহর পরিবর্তে মঙ্গল প্রদীপের আগুনের কাছে মঙ্গল কামনা করে তাদের শির্কে লিপ্ত হওয়ার পরোচনা দেওয়া হচ্ছে।

 

        ইসলামের নবী, সত্যের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পৌত্তলিক আরবদের সত্যের পথে দাওয়াত দিলেন তখন কিছু সংখ্যক পৌত্তলিক তাদের বাপ দাদার সূত্রে পাওয়া ধর্ম ও কুসংস্কারকে ইসলামের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ মনে করে তা প্রত্যাখ্যান করে। এদের সরদার আবু জাহেল, আবু লাহাব ইসলাম গ্রহণকারীদের প্রতি দৈহিক শক্তি প্রয়োগ, হুমকি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে বাপ-দাদার মূর্তী সংস্কৃতিতে ফিরিয়ে আনার প্রাণান্ত চেষ্টা করে। সেই আবু জাহেলের এদেশীয় অনুসারীরাও এদেশের মুসলমানদের মুসলমানিত্ব খতম করে দিয়ে তাদের বাপ দাদার মূর্তি সংস্কৃতিতে ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে। ইসলাম অপেক্ষা মূর্তি পূজা, গাছ পূজার মাধ্যমে শির্কে লিপ্ত হতে পছন্দ করছে। ইসলামের উপর বাপ-দাদার কুসংস্কারকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার কোশেশ করছে। ওদের উদ্ভট মতের সমর্থনে প্রচার মাধ্যমে প্রচারণার ঝড় তোলার অপচেষ্টা চলছে। এদের প্রচার-প্রোপাগান্ডা সম্পর্কে আমাদের সতর্ক হতে হবে, সহজ সরল মুসলমানদের ওদের শয়তানি দাওয়াত থেকে সতর্ক হতে হবে। কোথায় সেই সাইরেন ওয়ালা হিজবুল্লাহর দল?

 

*****