আল্লাহর সাহায্য আমি স্বচক্ষে দেখেছি
কমান্ডার আমজাদ বেলাল
==============================================================
হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর জম্মু কাশ্মীরের নায়েবে আমীর আমজাদ বেলাল সাহেব ১৯৯১ সনের নভেম্বর মাসে অধিকৃত কাশ্মীরে প্রবেশ করেন। সেখানে সুদীর্ঘ এক বছর অবস্থান করে কিছু দিন পূর্বে তিনি পাকিস্তানে ফিরে এসেছেন। কাশ্মীরে তিনি কিভাবে গেলেন, সফরে কি কি সমস্যায় পড়েছেন, সেখানকার মুসলমানদের মানসিকতা কি, সেখানে ইণ্ডিয়ার সৈন্যরা কিভাবে ক্রেক ডাইন করে, তিনি কিভাবে সৈন্যদের বেষ্টনী থেকে বেরিয়ে এসেছেন এবং আল্লাহর যে সব মদদ তিনি নিজ চোখে দেখেছেন তার ঈমানদীপ্ত বিবরণ এই লেখায় চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। তার এই ঘটনাবহুল এক বছরের ইতিহাস আমরা তার জবানীতেই হুবহু পেশ করছি। তবে নিরাপত্তার সাথে কিছু লোক ও স্থানের নাম গোপন রাখা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালার অসীম রহমতে আমি বেশ কয়েক বছর আফগান জিহাদে শরিক ছিলাম। সেখানকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে আমার অংশগ্রহণকরার সৌভাগ্য হয়েছিলো। ছাত্র অবস্থায় আমার মনে কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করার আগ্রহ জাগে । আর সেই প্রেরণায়ই আমি ঘর ছেড়ে হাজার মাইল দুরে আফগান জিহাদে অংশ নেই। সেখানে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ লাভের পর আনুষ্ঠানিক ভাবে এই সংগঠনে যোগ দেই। ১৯৯১ সালের নভেম্বরে হরকাতুল জিহাদের গ্রুপ কমাণ্ডার হিসেবে আমাকে কাশ্মীরে পাঠান হয়। এর পূর্বে এক অপারেশনে আমি আহত হই ।তা থেকে পরিপূর্ণ সুস্থ না হওয়ায় হরকাতের চীপ কমাণ্ডার আমাকে আরো কিছু দিন বিশ্রাম করার পর রওয়ানা হওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু সাথীদের জওক ও শওক দেখে আমার আর বসে থাকতে ইচ্ছ হল না। চীফ কমাণ্ডারকে বারবার অনুরোধ করে অনুমতি আদায় করে নিলাম। আমাদের গ্রুপে মোট একত্রিশজন মুজাহিদ। এর মধ্যে আল বরক’ নামক একটি সংগঠনেরও বেশ কিছু মুজাহিদ ছিল। এদের সকলের জিম্মাদারী আমার উপর ন্যাস্ত করা হয়। আমাদের গ্রুপের পূর্বে আরও চারটি গ্রুপ আজাদ কাশ্মীর থেকে অধিকৃত কাশ্মীরে রওয়ানা হয়েছিল। ইণ্ডিয়ান সৈন্যদের পাহাড়া এড়িয়ে পথ তৈরি করতে পারায় তারা ফিরে এসেছে।
আমরা ১৮ই নভেম্বর পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে মুনাজাত করে রওয়ানা হলাম। আমরা একত্রিশ জনের মধ্যে ত্রিশজনই ছিলো অধিকৃত কাশ্মীরের। একমাত্র আমি ছিলাম আজাদ কাশ্মীরের। নির্যাতিত মুসলমান ভাইদের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ ও জীবনের মায়া ত্যাগ করে সশস্ত্র অবস্থায় দুর্গম পাহাড়ী পথে রওয়ানা হলাম। অধিকৃত কাশ্মীরের সীমান্তে প্রবেশের পর আমাদের চৌদ্দ হাজার ফুট উঁচু একটি পাহাড় অতিক্রম করতে হয়। সাধারণত এই পাহাড়ে উঠতে দশ ঘন্টার মত সময় লাগে। 'আমরা দ্রুততার সাথে চলে সাত ঘন্টায় সেখানে উঠি। রাস্তায় অনেক আশ্চর্য্য ঘটনা ঘটে এবং আল্লাহর সাহায্য নিজ চোখে অবলোকন করি।
আল্লাহর প্রথম সাহায্য
------------------------------------------------------------------
সন্ধ্যার পরে আমরা সফর শুরু করি। রাত দুটার দিকে আমরা সোজা পূর্ব মুখো হয়ে সফর অব্যাহত রাখি। চলতে চলতে আমরা ভারতীয় সৈন্যের দুটি পোষ্টের মধ্যবর্তী স্থানে ঢুকে পড়ি। দুই পোষ্টের ব্যবধান বড় জোর দুশ মিটার। মাঝখানে একটি তার ঝুলানো। তাতে টিনের ঘন্টি বাধা। যাতে করে কেউ মাঝখান থেকে অতিক্রম করলে তারের টানে ঘন্টিটা বেজে উঠবে এবং দুপাশের পোষ্টের সৈন্যরা কারও উপস্থিতি বুঝতে পারবে। আমি অবস্থার ভয়াবহতা বুঝতে পেরে ইশারায় সাথীদের বসে যেতে বল্লাম এর পর তৎক্ষণাৎ সীদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে, আর পিছু হটা যাবে না সামনে পিছনে সমান বিপদ, যেভাবে হোক সামনে এগোতেই হবে। সবাইকে অবস্থা বুঝিয়ে বলে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকি। দুশমনরা অবশ্যই আমাদেরকে দেখে ছিলো। আমরা অপেক্ষায় ছিলাম কখন তারা হামলা করে। ইতিমধ্যে আমরা অপেক্ষাকৃত দূরবর্তী পোষ্টের আওয়াজ শুনতে পাই। সেখান থেকে নিকটবর্তী পোষ্টের কমাণ্ডারকে ওয়ারলেসে বলতেছে, মনে হচ্ছে আমাদের পোষ্টের মধ্যে দুশমনরা ঢুকে পরেছে। নিকটবর্তী পোষ্টের কমাণ্ডার জওয়াবে বল্লো, না তেমন তো কিছু দেখছি না। আর এর মধ্যে কার ঢুকতে সাহস হবে? দূরবর্তী পোষ্টের কমাণ্ডার বল্লো, ভাল করে দেখো আমার মনে হয় কিছু দেখতে পাচ্ছি। অপর কমাণ্ডার দৃঢ়তার সাথে তার ধারণা খণ্ডন করলো। তারা ঠিকই আমাদের উপস্থিতি টের পেয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা লড়াই করতে রাজী ছিল না।
সম্ভবতঃ তারা মনে করেছিল, এত সাহস নিয়ে যারা এ পর্যন্ত এসেছে তাদের উপর আঘাত করলে পাল্টা আক্রমণ অবশ্যই হবে। এই মধ্যরাতে তাদের এতবড় ঝুঁকি নেয়ার সাহস ছিলো না। আমরা অর্ধ ঘন্টা অবস্থানের পরও দেখলাম, তারা আমাদের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। অতঃপর একটা লাঠির সাহায্যে তার উঁচু করে ধরে নিচ দিয়ে একে একে ক্রোলিংকরে আমরা সবাই বেরিয়ে আসি। আমাদের সহযোগী গ্রুপের অন্য দলের সাথীরা দ্বীনের ব্যাপারে তেমন ধারণা রাখত না, এমন কি নামাজের ব্যাপারেও তারা গাফেল ছিল। আমি আস্তে আস্তে তাদেরকে আল্লাহর কুদরতের বর্ণনা দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি। পথিমধ্যে যখনই আমরা বিশ্রাম নিতাম বা নামাজের সময় হত সবাইকে নামাজের তালকীন দিতাম। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের কাফেলার সকল সাথী পথিমধ্যে পাকা নামাযী হয়ে যায় এবং তারা আমার সাথে ওয়াদা করে, তারা কখনও আর নামাজের ব্যাপারে গাফেল হবে না।
আল্লাহর দ্বিতীয় সাহায্য
------------------------------------------------------------------
তীব্র শীত শুরু হওয়ার পূর্বে আমাদের কাফেলাই ছিল সর্বশেষ কাফেলা। বরফপাতের জন্য আগামী ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় কোন কাফেলার কাশ্মীরে প্রবেশ সম্ভব হবে না। এসময় সীমান্তে ভারতীয় সৈন্যদের সংখ্যাও ছিল বেশী। তারা গুপ্তচরের মাধ্যমে সর্বদা কাফেলার আগমনের সংবাদ জানার চেষ্টা করত। আমাদের আগমনের খরব তারা পূর্বে পেয়ে যায়! একশত চল্লিশজন সৈন্যের ইণ্ডিয়ান সৈন্য গ্রুপ আমাদের পথে ওৎপেতে থাকে। তার পাহাড়ের এমন দুটি চূড়ায় অবস্থান নেয় যার মধ্য থেকে যাওয়া ছাড়া আমাদের উপায় ছিলো না। চারিদিকে সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে বুঝতে পারলাম, দুশমন আমাদের ঘিরে ফেলেছে।
এমন কঠিন অবস্থায় লড়াই করাও যুক্তি সংগত নয়। অতএব আল্লাহর উপর ভরসা করে নতুন কৌশল অবলম্বন করলাম। প্রতিটি সাথীকে বললাম, তোমরা সামনে অগ্রসর হয়ে অমুক পাহাড় পর্যন্ত যাবে এবং সেখান থেকে হামাগুড়ি দিয়ে আবার ফিরে আসবে। এভাবে একজন মুজাহিদ চার পাঁচবার করে আসা যাওয়া করবে। আল্লাহর রহমেত আমরা এই কৌশলে দুশমনকে ধোকায় ফেলতে সক্ষম হই। তারা গুপ্তচর থেকে চল্লিশ পঞ্চাশ জনের এক গ্রুপের খবর পেয়েছিল। এবার আমাদেরকে তারা মনে করলো কয়েকশ মুজাহিদের বিরাট এক কাফেলা! অতএব ভীত সন্তস্ত্র হয়ে বিনা যুদ্ধেই তারা ময়দান ত্যাগ করে। আট দিন সফরের পর আমরা কাশ্মীরের এক গ্রামে পৌঁছি। সেখান থেকে আল বরক গ্রুপের মুজাহিদরা আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে নিজ এলাকায় চলে যায়। আমরা মারকাজের নির্দেশের অপেক্ষায় এখানে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেই।
সাত দিন পর্যন্ত আমরা এই গ্রামে অবস্থান করে আমাদের আমীরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালাই। কিন্তু তার সাথে কোন যোগাযোগ কায়েম না হওয়ায় আমরা আরো দুদিন সফরের দূরত্বের এক গ্রামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। প্রোগ্রাম মোতাবেক সেই গ্রামে উপস্থিত হই। সেখান থেকে শ্রীনগর, সোপুর ও কাপুয়ারার দিকে দুইটি পথ চলে গেছে। আমার কাশ্মীরী সাথীরা অনেক দিন পাকিস্তান ছিল এবং এই অবস্থায় আমীরের সাথে যোগাযোগ না হওয়ায় তারা কিছুটা হতাশ হয়ে পড়ে। আমার কাছে বার বার ছুটির অনুমতি চাইতে থাকে। অনেক দিন ধরে পিতা মাতা ভাইবোনদের সাথে তাদের দেখা সাক্ষাৎ নেই।
স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ীর প্রতি তাদের টান সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মানসিক অবস্থার কথা ভেবে সকলকে নির্দিষ্ট শর্তে ছুটি দিলাম। শুধু মাত্র একজন মুজাহিদ আমার সাথে থেকে গেল। যাওয়ার সময় বার বার তারা আমাকে সঙ্গে যাবার জন্য অনুরোধ জানায়। আমি মারকাজের গাইড লাইনের উপর চলার ইচ্ছা প্রকাশ করে তাদের অনুরোধ রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে অনুরোধ জানাই। আমার সাথীরা শ্রীনগর সোপুরের পথ ধরে চলে গেল। একজন গাইড সাথে নিয়ে আমরা আমীর সাহেবের নিকটবর্তী এক গ্রামে পৌছি। এখানে একমুজাহিদের ঘরে আমি অবস্থান নেই। সেই মুজাহিদ অন্য গায়ে অবস্থান করতো। পাঁচ দিন অবস্থানের পরও আমীর সাহেবের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হলাম না। এদিকে সর্বত্র প্রচার হয়েছে যে, এই গ্রামে একজন আফগান মুজাহিদ এসেছে। ইণ্ডিয়ান সৈন্যরা তাকে ধরার জন্য পঞ্চম রাতে সমগ্র গ্রাম ঘেরাও করে। রাতের পর সকালে গ্রামেব্যাপী ক্রেক ডাইন হবে।
ক্রেক ডাইনের সময় সমগ্র গ্রাম ঘেরাউ করে কার্ফিউ জারী করা হয়। এর পর প্রতিটি ঘর থেকে পুরুষ, মহিলা, শিশু বৃদ্ধদের বের করে এক মাঠে জমা করা হয়। তার পর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুর ছেড়ে দেয়া হয়। যাতে করে কেই লুকিয়ে থাকতে না পারে। মাঠের মধ্যে একে একে সবার পরিচয় যাচাই করে দেখে—কোন মুজাহিদ বা সন্দেহভাজন ব্যক্তি আছে কিনা। এই সব ক্রেক ডাউনের সময় যেসব অমানবিক নির্যাতন চালানো হয় তার বর্ণনা ভাষাতীত। গ্রামের লোকেরা সবাই আমাকে জানতো, তারা এসে বল্লো, ভাইসাব! ইণ্ডিয়ান সৈন্যরা গ্রাম ঘিরে ফেলেছে। ভোরেই ক্রেক ডাউন হবে, আপনি যেভাবেই হোক আত্মরক্ষা করুন। আমি যে ঘরে ছিলাম সেই ঘরে আমার দুজন মুসলমান বোন ছিল। যারা আমাকে ভাই বলে ডাকতো। তারা এসে বল্লো, ভাইজান আপনি অপেক্ষা করুন আমরা রাতের আধারে অবস্থা পর্যবেক্ষন করে আসি। দেখি বের হওয়ার কোন রাস্তা বের করা যায় কিনা? তারা ঘন্টাখানে পর এসে বললো, সৈন্যরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ভাবে বেষ্টনী তৈরী করেছে, প্রতি পাঁচ মিটার অন্তর একজন সাস্ত্রী পাহাড়া দিচ্ছে। তবে এক যায়গায় পানির নালা আছে তার দুপাশের পাহারাদার দ্বয়ের মাঝখানে একটু বেশী ফাঁক দেখা যায়। যদি এর মধ্য দিয়ে বের হতে পারেন। তাছাড়া বের হবার বিকল্প কোন পথ নেই।
দুই সৈন্যের মধ্য দিয়ে বের হওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার। আমি ক্লাসিনকোভ লোড করে শরীরের উপর কোট চাপিয়ে টুপি খুলে সেই দিকে রওয়ানা হলাম। পথে পথে অনেক দোয়া পড়ে আল্লাহর কাছে গায়েবী সাহায্য তলব করলাম। আমার ক্লাসিন কোভ লোড করা ছিল। যদি ধরা পরার সম্ভাবনা দেখা দেয় তবে ওদের ওপর সোজা গুলি করব। শাহাদাতের পূর্বে যে কজন নিয়ে যেতে পারি তাই লাভ। আমি পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে আস্তে আস্তে সৈন্যদের মধ্য দিয়ে চলতে লাগলাম। অন্ধকারে আমার কোর্টের চমক দেখে সৈন্যরা ধোকায় পড়ে যায়। তারা আমাকে তাদের অফিসার মনে করে জিজ্ঞাসা করে, কোথায় যাচ্ছেন স্যার! আমি বুঝতে পারলাম ধোকায় পড়েছে। দৃঢ় কণ্ঠে বললাম, “আমি পেসাব করে আসছি এদিকে খেয়াল রেখ।” কারও পক্ষে ধারণা করাও সম্ভব নয় যে মুজাহিদ এত সাহসী হতে পারে এবং ক্লাসিন কোভ হাতে নিয়ে সৈন্যদের মধ্য দিয়ে এভাবে অতিক্রম করতে পারে। আমি গ্রাম থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে উঠি। সেখানে এক ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থাকি। সকাল হতেই ভারতীয় সৈন্যরা গুপ্তচরের সাথে গ্রামে ঢুকে পড়ে। আমি একটা ঝোপের আড়াল হতে গ্রামের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
সৈন্যরা ঘরে ঘরে যেয়ে সকল জোয়ান, বৃদ্ধ ও শিশুদেরকে টেনে টেনে এক মাঠে জমা করে। মহিলাদের উপর পাশবিক নির্যাতন তাদের আনন্দের উপকরণ। যে ভাবে তাদেরকে একত্র করলো ও যে ভাবে তাদের সাথে হিংস্র পশুর মতন ব্যবহার করলে তা দেখে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে হয়। যার যার ঘরে আমি থাকতে পারি বলে সন্দেহ হল সবার ঘরে আগুন লাগিয়ে দিল। সবার কাছেই তাদের এক পশ্ন, কোথায় সেই আফগান মুজাহিদ? আমার জীবন এই সকল সম্মানী গ্রামবাসীর জন্য নিবেদিত যাদের উপর এত জুলুম নির্যাতন সত্ত্বেও তারা আমার সম্পর্কে কোন তথ্য প্রকাশ করেনি। ইতিপূর্বে এরা অনেক বার আমাকে বলেছে, পুরো গ্রাম শেষ হতে পারে। আমরা সব কিছু কোরবানী দিতে পারি। কিন্তু আপনার কোন ক্ষতি হোক তা আমরা বরদাস্ত করবো না। যে কোন ভাবেই হোক আপনাকে হেফাজত করবই।
আপনি আমাদের মেহমান। আপনি আমাদের মুক্তির মহান দূত। ভাতরীয় সৈন্যরা দুপুর নাগাদ ঘেরাও তুলে গ্রাম থেকে বের হয়ে যায়। যাওয়ার সময় চারজন নওজোয়ানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। সৈন্যরা চলে যেতেই গ্রামের লোকেরা আমার তালাশে বের হয়, সারা গ্রাম তন্ন তন্ন করে আমাকে খুঁজতে থাকে। বেলা দুটোর দিকে আমি পাহাড় থেকে নিচে নেমে আসি! আমাকে জেন্দা দেখা মাত্র সারা গ্রামের লোক একত্র হয়ে আমাকে মোবারকবাদ জানাতে থাকে। কেউ চুমা খেতে থাকে, কেউ বুকে বুকে জড়িয়ে ধরে। যেন তাদের সকল দুঃখ সকল নির্যাতনের বিষাদ আমাকে জেন্দা পাওয়ার আনন্দে ভুলে গেছে। যে চারজন গ্রামবাসীকে সৈন্যরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল তারা যদিও মুজাহিদ ছিল না কিন্তু তারা আমার সম্বন্ধে ভালভাবে জানতো। আমার ভয় হচ্ছিলো, যদি নির্যাতনের মুখে তারা আমার খবর এবং যে ঘরে আমি থাকি তা তাদের বলে দেয় তবে অবস্থা খুবই কঠিন হবে। [চলবে]
সৌজন্যেঃ আল ইরশাদ
অনুবাদঃ ফারূক হাসান