তালেবান পরিক্রমা
আফগানিস্তানের সর্বশেষ অবস্থা
মে মাসের শেষ সপ্তাহটিতে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল আফগানিস্তানের উত্তর অঞ্চলের প্রতি। তসবির দানার মত এ সময় তালেবানের হাতে একটির পর একটি প্রদেশের পতন ঘটতে থাকে। তালেবান বিরোধী জোটের ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। জেনারেল আবদুল মালিক পক্ষ ত্যাগ করে তালেবানদের সাথে মিলে গেলে জেনারেল আবদুর রশিদ দোস্তামের প্রতিরক্ষায় ফাটল দেখা দেয়, ফলে ফারিয়াব প্রদেশের পতন ঘটে তালেবানদের হাতে। এরপর তালেবানরা জেনারেল আবদুল মালিকের অনুগত উজবেক বাহিনীকে সাথে নিয়ে মাজার-ই শরিফ অভিমুখে অভিযান চালায় যা’ রশিদ দোস্তামের সর্বশেষ শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। রশিদ দোস্তাম তালেবানদের দ্বিমুখী অভিযানের মুখে দিশেহারা হয়ে অবশেষে সাধের রাজ্য ও রাজ প্রাসাদ ত্যাগ করে তুরস্কে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী রশিদ দোস্তাম তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় এক আন্তর্জাতিক হোটেলে দিন কাটাচ্ছেন। রশিদ দোস্তামের পতনের পর আহমদ শাহ মাসুদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার ওপর তালেবানদের চাপ বৃদ্ধি পায়। এ সময় বোরহানুদ্দিন রাব্বানী অবস্থা বেগতিক দেখে ইরানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। আহমদ শাহ মাসুদের পক্ষ থেকে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব আসে। তালেবান প্রধান মোল্লা ওমর সাথে সাথে এ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে একজন উর্ধ্বতন তালেবান কমান্ডারকে আলোচনা শুরু করার নির্দেশ দেন।
কিন্তু হঠাৎ করে উত্তর আফগানিস্তানের পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তালেবানরা মাজারী শরীফে প্রবেশ করে ইসলামী আইন বলবৎ করে এবং জনগণকে সকল অস্ত্র জমা দানের নির্দেশ দেয়। দোস্তাম বিদেশে পলায়নের সময় তার সকল অস্ত্র অনুগত উজবেক জনগণের নিকট বিলি বন্টন করে দিয়ে গিয়েছিল। তালেবানরা মাজার-ই শরিফের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর আব্দুল মালিকের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে তার অনুগত উজবেক সৈন্য ও জনগণ তালেবানদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। খোলা রাস্তায় অবস্থানরত তালেবানরা এদের হামলার মুখে অসহায়ত্বের শিকার হয়। তালেবানদের প্রধান অংশ মাজার-ই শরীফ ছেড়ে আরও সম্মুখে কুন্দুজ প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে চলে গিয়েছিল। মাজার-ই শরিফে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থানরত তালেবানরা উজবেকদের অতর্কিত হামলার মুখে পিছু হটে পাহাড়ী এলাকায় অবস্থান নেয়। অপরদিকে পূর্ব দিকে অগ্রসরমান বাহিনীও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। তালেবানরা তাদের উত্থানের পর এই প্রথম এক বিপর্যয়কর অবস্থার মুখোমুখি হয়। শত শত তালেবান মাজার-ই শরিফের রাস্তায় রাস্তায় চোরাগুপ্তা হামলায় নিহত হয়। তালেবান পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী মোল্লা গাউস জেনারেল মালিকের সেনাদের কাছে গ্রেফতার হন। পর্যবেক্ষকদের মতে, জেনারেল মালিকের হঠাৎ এ পক্ষত্যাগের বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত। নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, জেনারেল আব্দুল মালিকের তালেবানদের সাথে মৈত্রি স্থাপনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল রশিদ দোস্তামকে উত্তর আফগানিস্তান থেকে বিতাড়িত করে নিজেই দোস্তাম নিয়ন্ত্রিত এলাকার মালিক মোক্তার বনে যাওয়া। তালেবানদের সাথে মিলে দোস্তামকে বিতাড়িত করার পর আব্দুল মালিকের আসল চেহারা ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে। মাজারী শরিফে তালেবান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার শুরুতেই জেনারেল আব্দুল মালিক তাতে বাধা দিতে থাকে। ইসলামী আইন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তালেবানরা মহিলাদের পর্দা পালনের বিধি জারী করলে জেনারেল আব্দুল মালিক তা শিথিল করার দাবী জানান। তালেবানরা তাতে অস্বীকৃতি জানালে আব্দুল মালিক উজবেক সশস্ত্র জনগণ ও সৈন্যদের সংগঠিত করতে থাকে। উজবেকদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দিয়ে তাদের নিকট অস্ত্র বিতরণ করতে থাকে। তালেবানরা দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসেবে সকল জনগণকে অস্ত্র সমর্পন করতে বললে আব্দুল মালিক জনগণকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। আব্দুল মালিক তালেবানদের সমর্থন করে দোস্তামকে বিতাড়িত করার বিনিময়ে নিজ বাহিনীর ক্ষমতাকে অটুট রেখে পুরো উত্তর অঞ্চলের শাসক হওয়ার স্পপ্ন দেখেছিল। কিন্তু তালেবানরা নতুন একজন উজবেককে মাজার ই শরিফের গভর্ণর নিয়োগ করে জেনারেল আব্দুল মালিকের সৈন্য ও জনগণকে অস্ত্র জমা দেয়ার আহ্বান জানালে তার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। সে বিভ্রান্ত ও ক্ষিপ্ত জনগণকে সাথে নিয়ে তালেবানদের ওপর আক্রমণ চালায়।
শহরের ছোট এক মসজিদ থেকে শতাধিক তালেবান জুমার নামাজ আদায় করে রাজপথে বের হয়ে আসলে তারা প্রথম উজবেকদের আক্রমণের শিকার হয়। ইতিমধ্যে উজবেকরা ঘরে ঘরে প্রস্তুতি নিয়ে বসেছিল। তালেবানরা রাস্তায় বের হয়ে আসার সাথে সাথে তাদের ওপর চোরাগুপ্তা আক্রমণ শুরু হয়। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তালেবানরা এ খবর পাওয়া মাত্র আক্রান্তদের রক্ষা করতে ছুটে আসে। ক্রমান্বয়ে যুদ্ধ সমগ্র শহরে ছড়িয়ে গিয়েছিল, ফলে মাজার ই শরীফে অবস্থানরত তালেবানরা চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখী হয়। অগনিত লাশ ফেলে রেখে এই প্রথম তালেবানরা কোন রণাঙ্গন থেকে পিছু হটে যায় এবং তালেবান পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোল্লা গাউস আব্দুল মালিকের অনুগতদের হাতে বন্দী হন।
মাজারী শরিফের এ ঘটনাকে আহমদ শাহ মাসুদও কাজে লাগান। তিনি এই সুযোগে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব থেকে পিছু হটে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে সালাং গিরিপথ ও গুরুত্বপূর্ণ শহর জাবালুস সিরাজ দখল করে নেন। ফলে উত্তর অঞ্চলের কুন্দুজ নগরীতে অবস্থানরত তালেবানদের দলটি দু'দিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মাজারী শরীফে তালেবানদের বিপর্যয়ের পর এ দলটি হিন্দুকুশ পবর্তের মধ্যেকার সালাং গিরিপথের দিকে অগ্রসর হয়েছিল কাবুলে পৌঁছার জন্য। কিন্তু আহমদ শাহ মাসুদ সালাং গিরিপথ দখল করে নেয়ায় তারা হিন্দুকুশ পর্বতে আটকা পড়ে যায়। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী তালেবানরা পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে জাবালুস সিরাজ ও সালাং গিরিপথ দখল করে নিয়েছে। হিন্দুকুশ পর্বতে আটকা পড়া আমির খান মোত্তাকীর নেতৃত্বাধীন তালেবান বাহিনীর কাছে সরবরাহ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। রসদ সাহায্য পেয়ে এ বাহিনী পুনরায় কুন্দুজ দখল করে তালেবান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। কুন্দুজের আহমদ শাহ মাসুদের অনুগতবাহিনী পরাজিত হয়ে সীমান্ত পার হয়ে তাজিকিস্তানে পালিয়ে জীবন বাঁচায়। তালেবানদের মাজারী শরিফ দখলের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের খবর পেয়ে আব্দুল মালিক শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা গেছে।
মোল্লা ওমর যেন খিলাফতের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন
আলিমদের এক প্রতিনিধি দল পাকিস্তান থেকে কান্দাহার গিয়েছিলেন মোল্লা ওমরের সাথে সাক্ষাত করার জন্য এবং তালেবান প্রতিষ্ঠিত প্রশাসনিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে। তারা স আগেকার খিলাফতের ইতিহাস বর্ণনা করছেন।
পাকিস্তান থেকে আলিমগণের প্রতিনিধি দল সাক্ষাত করতে আসছেন শুনে মোল্লা ওমর নিজেই কান্দাহার শহরের বাইরে বেরিয়ে আসেন তাদের অভ্যর্থনা জানাতে। ঘোড়ার পিঠে চড়ে মোল্লা ওমর আগে আগে চলছেন, পেছনে গার্ড অব অনার প্রদানকারী মুজাহিদ দল। শহরের বাইরে থেকে মেহমানদের অভ্যর্থনা করে নিয়ে গেলেন মেহমানখানায়। নিজেই মেহমানদের আরাম-আয়েশের তদারকী করলেন। খানার সময় উপস্থিত। দুম্বা জবাই হয়েছে। মেহমানদের জন্য আফগান ঐতিহ্য অনুযায়ী হরেক রকম সুস্বাদু খানা হাজির করা হলো। কিন্তু মোল্লা ওমর! তিনি এক টুকরো শুকনো রুটি হাতে নিয়ে এক পেয়ালা চায়ে ভিজিয়ে খাচ্ছেন। মেহমানদের পক্ষ থেকে তাকে একসাথে মেহমানদের খানায় অংশ নিতে অনুরোধ করা হলো। উত্তর এলো, “আমার এ খানা গ্রহণের এখনও সময় হয়নি। কত আফগানী এখনও শুকনো রুটি খেয়ে জীবন কাটাচ্ছে, কতজনে যে এই এক টুকরো শুকনো রুটির জন্যও হাহাকার করছে,তাদের রেখে কি করে আমি গোশত-বিরিয়ানী মুখে দেই?”
বুভূক্ষ জনগণের জন্য মোল্লা ওমরের এ হৃদয় নিংড়ানো দরদ আমাদের যেন খিলাফতের সোনালী ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ইসলামী ইতিহাসের এক অমর পুরুষ দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর কথা।
‘আল কুরআন শাসনতন্ত্র ॥ মোল্লা মোহাম্মদ ওমর আমিরুল মুমিনীন’
“আপনাদের সরকার কবে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবে এবং কোন নতুন শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করবেন কিনা?” প্রশ্নটি পাশ্চাত্যের এক সাংবাদিকের, আর প্রশ্নটি করা হয় পাকিস্তানের তালেবান রাষ্ট্রদূত মৌলভী সাহাবুদ্দিনের নিকট।
উত্তরে মৌলভী সাহাবুদ্দিন জানান, 'আল কুরআনই আফগানিস্তানের শাসনতন্ত্র, দুনিয়ার সকল জাতির জন্য যা অপরিবর্তনীয় শাসনতন্ত্র হিসেবে প্রেরিত হয়েছে। এ শাসনতন্ত্র দুনিয়ার সকল বয়সের সকল মানুষের সর্বযুগের সব ধরনের সমস্যার সমাধান দেয়া হয়েছে। এ শাসনতন্ত্র বর্তমান থাকতে আমাদের নতুন কোন শাসনতন্ত্রের প্রয়োজন নেই।' তিনি আরো বলেন যে, মোল্লা মোহাম্মদ ওমর ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী আমিরুল মুমিনীন নির্বাচিত হয়েছেন। প্রত্যেক প্রদেশের আলেমগণের প্রতিনিধি তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। এটা হলো ইসলামী শরিয়তসম্মত নির্বাচন। এ নির্বাচনের পর আমাদের অন্য কোন নির্বাচনের প্রয়োজন নেই।
কান্দাহারে কিসাস বাস্তবায়ন
তালেবানরা শরীয়া আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ বিধান কিসাস বাস্তবায়ন করেছে। আল কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী কিসাসকে বলা হয়েছে 'নব জীবনের বার্তা'। কেননা আল্লাহ তা'আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন উচ্চ মর্যাদা দিয়ে। এখানে এক মানুষ অপর মানুষের জীবন বা মৃত্যু নিয়ে তামাশা করার কোন অধিকার রাখে না। কেউ যদি সীমা অতিক্রম করে এবং কারো জীবন ধ্বংস করে তবে উক্ত ব্যক্তি ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে মারাত্মক অপরাধী সাব্যস্ত হবে। সে কিসাস আইনের আলোকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবে। আল কুরআনে এ ধরনের অনধিকার রক্তপাত সংঘটিত করার অপরাধকে মানবতা হত্যার সাথে তুলনা করা হয়েছে। গত মাসে কান্দাহারের স্পিন বুলদাক জেলার এক আফগানী আব্দুল ওয়ালী খান নামে আর এক আফগানীকে হত্যা করে ফেলে। এজন্য শরিয়া আদালত উক্ত হত্যাকারীকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে। জুময়ার নামাজে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৫০,০০০ মানুষের সামনে তার এ দন্ড কার্যকর করা হয়।
দন্ড কার্যকর করার আগে কান্দাহারের গভর্নর কিসাস সম্পর্কে কুরআন হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করে উপস্থিত জনগণকে এ ধরনের রক্তপাত সংঘটন থেকে সতর্ক করেন। মানুষের জীবন তথা সমগ্র মানব জাতির জীবনের নিরাপত্তা রক্ষায় কিসাস বাস্তবায়ন করতে পারায় তিনি আল্লাহর শোকর আদায় করেন। প্রাদেশিক তথ্যমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ হক্কানীর সূত্রে জানা যায় যে, কিসাস বাস্তাবায়নের পাঁচ মিনিট আগে থেকে ঘটনাস্থলে মুষলধারে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। অথচ কান্দাহারে এ ধরনের বৃষ্টি অকল্পনীয়। উপস্থিত জনগণ একে আল্লাহর করুণাধারা মনে করে এবং এত বৃষ্টি সত্ত্বেও স্থান ত্যাগ না করে সমবেত জনগণ কিসাস বাস্তবায়নের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে।
রবিন র্যাফেল অবশেষে বোরকা পরতে বাধ্য হলেন
রবিন র্যাফেল, আমেরিকার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারী। তিনি গতমাসে আফগানিস্তানে বেশ কয়েকবার সফরে যান। আফগান মহিলাদের তথাকথিত মানবাধিকার লংঘনের বিষয় সম্পর্কে তদন্ত করতে। তিনি সুপার পাওয়ারের দম্ভ নিয়ে কাবুলে যান এবং তালেবানদের অনুসৃত নীতি আদর্শকে বেতোয়াক্কা করারও একটা প্রবণতা তার মনে ছিল। তিনি পাশ্চাত্যের কায়দায় পোশাক পরে কাবুল বিমান বন্দরে অবতরণ করার পর আফগানিস্তানের ইসলামী আইন সম্পর্কে তাকে অবগত করানো হয় এবং পর্দা মেনে চলতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বিমান বন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। পর পর দু'বার এভাবে ফিরিয়ে দেয়ার পর তৃতীয় বার সে বোরকা পরিধান করতে রাজী হলে তাকে কাবুলে অবস্থান করার অনুমতি দেয়া হয়। কাবুলে প্রবেশ করে রবিন র্যাফেল ক্যামেরা নিয়ে যত্রতত্র ছবি উঠাতে চাইলে তালেবানদের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয় এবং পুনরায় ইসলামী আইন সম্পর্কে তাকে জ্ঞাত করানো হয়। কিন্তু রবিন র্যাফেল ঔদ্ধত্যের সাথে তালেবানদের নিয়ে গ্রাহ্য করে ছবি ওঠানো অব্যাহত রাখলে তালেবানরা বাধ্য হয়ে তার ক্যামেরা বাজেয়াপ্ত করে নেয়।
এ ঘটনায় রবিন র্যাফেল ক্ষুব্ধ হয়ে তালেবান প্রশাসনকে হুমকি প্রদান করে যে, সে ফিরে গিয়ে তার দেশেও জাতিসংঘকে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করার সুপারিশ করার প্রস্তাব পেশ করবে। জবাবে তালেবানদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ধরনের অবরোধ মোকাবিলায় আল্লাহই তালেবানদের জন্য যথেষ্ট।
তালেবান মহিলাদের জন্য আল কুরআনের ঘোষিত মর্যাদা
প্রতিষ্ঠা করবে
তালেবানরা মহিলাদের সে মর্যাদাই দেবে, যা আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। এটা অত্যন্ত ভুল ধারণা যে, তালেবানরা মহিলাদের অধিকার হরণ করছে এবং নারী উন্নয়নের বিষয়ে তারা অনাগ্রহী। তালেবানরা সমগ্র দেশে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম অপেক্ষা কার সাধ্য আছে অধিকতর মানবাধিকার রক্ষা ও প্রতিষ্ঠা করার গ্যারান্টি দিতে পারে? সম্প্রতি এক জুমার নামাজের খুত্বায় কাবুলের তালেবান সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব মোল্লা হাসান এ অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, প্রথমতঃ ইসলাম মহিলাদের জাহেলি যুগের অসভ্য সমাজের নারীদের মতো যত্রতত্র সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে ঘরে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছে। এ জন্য একজন মুসলিম মহিলার সত্যিকার অবস্থান হচ্ছে তার নিজ গৃহ। একমাত্র এখানেই রয়েছে তার মর্যাদা, সম্মান ও মহত্ত্ব। গৃহে অবস্থান করেই তাকে এ সম্মান ও মর্যাদাকে রক্ষা করতে হয়। কিন্তু দৈনন্দিন প্রয়োজনে শালীনতা বজায় রেখে ও আপাদমস্তক ঢেকে তার বাইরে যাওয়ারও অনুমতি রয়েছে। এখানে ক্ষতিকর কি আছে? এতো অবাঞ্চিত দৃষ্টি থেকে তার সম্মান ও মর্যাদা প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা। নারীর প্রকৃত স্বাধীনতা তো এখানেই নিহিত। একজন মহিলা যদি বাইরে যাওয়ার সময় পর্দা অবলম্বন না করে, তবে সে কামুক দৃষ্টির টার্গেট হবে, অন্য কথায় সে অসম্মান ও অপদস্ত হবে।
পর্দার বিধান শুধু মহিলাদের বেলায় নয়-পুরুষের জন্যও পর্দার বিধান রয়েছে, পুরুষদেরও চোখের দৃষ্টি সংযত রাখতে বলা হয়েছে। এর মাধ্যমেই সমাজে নারীর সর্বোচ্চ মর্যাদাকর অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। নারীর এ উচ্চ মর্যাদার জন্যই একজন পুরুষ একজন নারীর মুখোমুখি হলেই দৃষ্টি নীচু করতে বাধ্য হয়। তাই ইসলামের এ নির্দেশ নারীর সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য এবং কল্যাণ অর্জনের পবিত্রতম পথ।
তালেবানের ব্যাপারে প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে ভয় করতে হবেনা। তালেবানরা অন্য রাষ্ট্রের ব্যাপারে আগ্রাসনে বিশ্বাসী নয়
ইসলামাবাদ থেকে প্রাপ্ত খবরে বলা হয়েছে যে, তালেবানরা নিজ রাষ্ট্রের ব্যাপারে বহিরাগত আগ্রাসনকে যেমন মেনে নেয়না অনুরূপ তারা কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসন করার কখনো পক্ষপাতী নয়। সূত্র আরো জানিয়েছে যে, তালেবান ইসলামী হুকুমতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা ফজল বলেছেন, কুরআন হাদীস অনুসন্ধিৎসু তালেবান বাহিনী থেকে প্রতিবেশীর অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে কারা অধিক জ্ঞাত? তারা অবশ্যই প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ করবে। প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, তালেবান বাহিনী কোন ক্রমেই প্রতিবেশীর জন্য ভয়ের কারণ হবে না। তাদের কাছে পাওয়া যাবে ভালোবাসা ও পূর্ণ নিরাপত্তার গ্যারান্টি। এদিকে আরেক আফগান দূত মুফতি মাসুম আফগানি বলেছেন, তালেবান জনসাধারণের কাছে অধিক মাত্রায় গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, কারণ তারা সমস্ত স্বেচ্ছাচারিতাকে খতম করে আফগানিস্তানে শান্তি নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। আর এটি ছিল আফগান জনসাধারণ এবং ১৬ লাখ শহীদের আত্মার আকাঙ্ক্ষা।
আমাকে পাপ থেকে পবিত্র করুন
‘এক যুবক আমার কোর্টে এসে বলল, আমাকে শাস্তি দিন, আমাকে পাপ থোক পবিত্র করুন, আমি ব্যভিচারের অপরাধে অপরাধী। উক্ত যুবক কোর্টে এসে এভাবে আবেগ বিহবল কণ্ঠে তাকে পাপ থেকে মুক্ত করার আবেদন জানায়।’
কান্দাহার হাইকোর্টের প্রধান বিচারক স্বেচ্ছায় শাস্তি চাওয়ার এক ঈমানদীপ্ত ঘটনা সাংবাদিকদের এভাবে বর্ণনা করেন।
উক্ত যুবক আদালতে এসে স্বীকার করে যে, সে তিন বছর আগে এক ব্যাভিচার সংঘটিত করেছিল। সে এখন উক্ত পাপের গ্লানি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চায়। অতঃপর তাকে শরিয়া আইনে বিচার করে এ পাপ থেকে পবিত্র করা হলো। বিচারক বলেন যে, ঐ যুবক অবিবাহিত ছিল এবং আমি তাকে ১০০ বেত্রাঘাতের দন্ড দিলাম। দন্ড বাস্তবায়নের পর আমার কাছে এসে ঐ যুবক তার প্রতিক্রিয়া এভাবে ব্যক্ত করে, 'আল্লাহর শোকর, তিনি অনুগ্রহ করে আমাকে আবার এ দুনিয়ায় পবিত্র করেছেন।'
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিচারক বলেন, ইসলামী আইনের বাস্তবায়নে যারা মনে করেন যে, জনগণ বিগড়ে যাবে এ ঘটনা তাদের জন্য শিক্ষনীয়। সত্যিকার মুসলমানরা ইসলামী আইনের বাস্তবায়নে কখনো দুশ্চিন্তা অনুভব করতে পারে না। তিনি আরও বলেন যে, ইসলামী আইনের বাস্তবায়নে যারা উদ্বেগ বোধ করেন, তারা সত্যিকার মুসলমান বলে বিবেচ্য হতে পারে না।
জাতিসংঘে তালেবান
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে উপস্থিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমের সাংবাদিকরা হতবাক হয়ে যায়, যখন তালেবান প্রতিনিধি দলের সকল সদস্য নামাজের সময় হওয়া মাত্র নামাজ আদায়ের জন্য অধিবেশন স্থল ত্যাগ করে চলে যান।
আমিরুল মুমিনীনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম শুরার সদস্য মৌলভী ওয়াকিল আহমদ মুত্তাকীর নেতৃত্বাধীন তালেবান প্রতিনিধি দল নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে এক জরুরী সভায় অংশ গ্রহণ করার সময় এ ঘটনা ঘটে। তালেবান প্রতিনিধি দল জাতিসংঘে আফগানিস্তানের প্রতিনিধি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করতে এ সভায় যোগ দিয়েছিলেন।
উক্ত সভা চলাকালে নামাজের সময় হলে সভার কার্যক্রমের কোন তোয়াক্কা না করেই তালেবান প্রতিনিধি দলের সবাই নামাজের জন্য আসন ত্যাগ করলে উপস্থিত সকলে বিস্মিত হয়।
প্রতিনিধি দলের সকলেই ছিলেন ঐতিহ্যবাহী আফগানী পোষাক পরিহিত এবং মুখে সুন্দর দাড়ি দ্বারা সুশোভিত। তারা যখন নিবিষ্ট মনে সভাস্থলের একপার্শ্বে নামাজ আদায় করছিলেন, সে দৃশ্য এ আন্তর্জাতিক সংস্থার সকল প্রতিনিধিকে হতবিহবল করে তোলে। বিস্ময়ে অভিভূত কিছু অমুসলিম প্রতিনিধি মন্তব্য করেন, তালেবানরা আল্লাহর সাথে গোপন আলোচনা সেরে নিচ্ছে। মৌলভী ওয়াকিল আহমদ বলেন, কিছু সংখ্যক অমুসলিম প্রতিনিধি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তালেবানের এ মনোবৃত্তির প্রশংসা করেন এবং বলেন যে, আমাদের এ তৎপরতা নাকি তাদের নৈতিক মনোবল, আদর্শের প্রতি অনুগত থাকার বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে।
এ ঘটনার পর অনেক দেশের প্রতিনিধিরা তালেবানদের সাথে ছবি তোলার আগ্রহ প্রকাশ করে, কিন্তু তালেবান প্রতিনিধি দল তা’ বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যান করেন।
অধিবেশন সমাপ্তির পর তালেবানরা সাংবাদিকদের অনুরোধে এক প্রেস কনফারেন্সে অংশ নেন। মৌলভী ওয়াকিলের ভাষায়, 'আমাকে সবচেয়ে বেশী অভিভূত করেন আমেরিকা প্রবাসী ভারতের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বকারী একজন মহিলা। আমরা যখন তালেবানদের বর্তমান শান্তি প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলাম, তখন ঐ মহিলা কাঁদতে শুরু করে। এরপর ঐ মহিলা উচ্চ স্বরে হাউমাউ করে ক্রন্দন শুরু করে যখন আমরা কান্দাহারে তালেবানদের উত্থানের পটভূমি ব্যাখ্যা করছিলাম। কান্দাহার দখলের পর আমাদের খাদ্য বলতে কিছুই ছিল না। কিছু সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান আমাদের সে দুর্দিনে যে যৎসামান্য খাদ্য সাহায্য করতেন, তা দিয়ে কোন প্রকারে ক্ষুধা নিবারণ করতাম। আমাদের এ কথা শুনে সে আরও প্রভাবিত হয় এবং আমাদের অনুরোধ করে, “প্লিজ, আমাকে আপনারা সাথে করে আফগানিস্তানে নিয়ে যান, আমি আপনাদের দেশে বাকী জীবন কাটাতে চাই।” ইসলাম ও তালেবানদের জন্য তার এ ভালবাসার কান্না আমাদের অভিভূত করে, আমাদের চোখও পানিতে ভরে যায়।
উপস্থিত সকল প্রতিনিধিও এ মহিলার তালেবানদের প্রতিষ্ঠিত ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার প্রতি ভালবাসা ও কান্নার দৃশ্য দেখে বিস্মিত হয়।'
রক্ত ও বারুদের পরিবর্তে কাবুলে এখন ইসলাম ও শান্তির সৌরভ প্রবাহিত হচ্ছে
আগের আফগানিস্তান কিংবা বিশ্বের অন্য যে কোনো বড় উন্নত রাষ্ট্রের সঙ্গে আফগানিস্তানের তালেবান নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাসমূহে প্রতিষ্ঠিত শান্তি ও নিরাপত্তার তুলনা করলে দেখা যাবে যে, তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে শান্তি-নিরাপত্তা সর্বদিক থেকে সকলের চেয়ে বেশী ও ভিন্নতর। এক সময়কার খুনাখুনি লুটপাট ও অপরাধের নগরী কাবুল এখন ইসলামী জীবন ব্যবস্থার সৌরভে সুরভিত। আফগান তথ্যমন্ত্রী মোল্লা আমীর খান মোত্তাকী এক জনসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
মোল্লা আমির খান বলেন, আমাদের শাসনাধীন এলাকা সমূহে শহীদের রক্ত ও আলিমগণের অকাতর ত্যাগের বদৌলতে এখন জুলুম- নির্যাতনের অবসান ঘটেছে। রব্বানীর শাসনামলে জুলুম ও বর্বরতার অবস্থা এই ছিল যে, একটি সেবা সংস্থার ছিনতাইকৃত গাড়ী উদ্ধার করার শক্তি তাদের ছিল না। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, আজ আমীরুল মুমিনীন দু আঙ্গুল সমান ছোট্ট একটি পত্র কান্দাহার থেকে পাঠিয়ে দিলে তুরখম থেকে গুরবন্দ আর গুরবন্দ থেকে তুগভী পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার যথাযথ মূল্যায়ন করে।
আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ দিতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, রব্বানীর আমলের সব ধাপ্পাবাজীর অবসান ঘটিয়ে তালেবান আফগানিস্তানের অর্থনীতিকে বেশ চাঙ্গা করে তুলতে সক্ষম হয়েছে। আগে উৎপাদিত ফল- ফলাদি বাগানেই অবিক্রিতরূপে স্তুপ হয়ে পচে যেত। রপ্তানীর কোন ব্যবস্থা-ই তখন ছিলনা। কিন্তু বর্তমানে সে সমস্যার অবসান ঘটেছে। আগে যে বাগান পঞ্চাশ হাজার আফগানিতে বিক্রি হতো, এখন তা ৪ লাখে বিক্রি হচ্ছে। রব্বানীর ব্যক্তিগত কাজে যে আরিয়ান এয়ার লাইনস ব্যবহৃত হতো, এখন তা সর্ব সাধারণের সেবার নিয়োজিত।
শিক্ষা সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী বলেন, রব্বানীর আমলে আফগানিস্তানে শিক্ষার নামগন্ধও ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সাত লক্ষ্য ছাত্র যথারীতি শিক্ষা গ্রহণ করছে। রব্বানীর আমলে দেশের কোথাও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও খোলা সম্ভব হয়নি। আর এখন কাবুল, জালালাবাদ, কান্দাহর ও হেরাত প্রভৃতি শহরে বহু বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের সামনে সীমাহীন সমস্যা রয়েছে। কিন্তু এতে ঘাবড়াবার কিছু নেই। সৌদি আরবের মত দেশ যখন ঋণগ্রস্ত হতে পারে, তো একটানা প্রায় ত্রিশ বছরের যুদ্ধবিদ্ধস্ত আফগানিস্তানে নানা ধরনের সমস্যা বিরাজ করবে, এটা অস্বাবাভিক কিছু নয়।
মুক্তি লাভের পর আবারো তোমার বিরুদ্ধে লড়াই করবঃ আহমাদ শাহ মাসউদের প্রশ্নের উত্তরে এক নির্ভীক মুজাহিদের সুস্পষ্ট জবাব
পানশিরের জেলে সাত মাস অবস্থান করার পর কমান্ডার বিসমিল্লাহর বিনিময়ে মুক্তি লাভ করে মৌলভি আবদুল ওয়ারিস সাংবাদিকদের বলেন,আহমাদ শাহ মাসউদ এক বন্দী তালেবান মুজাহিদকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমাদের সঙ্গে তোমরা কেন লড়াই করছ, আমরাও তো মুসলমান? জবাবে মুজাহিদ বলল, চৌদ্দ বছরের জিহাদে রক্তস্নাত জাতির সঙ্গে গাদ্দারীর ফলে তোমাদের সঙ্গে আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে। আলিমদের সিদ্ধান্ত অনুসারেই আমরা তোমাদের সাথে জিহাদ করছি। তোমাকে মুক্তি দেওয়া হলে তুমি কী করবে, জানতে চাইলে তালেবান মুজাহিদ অত্যন্ত দীপ্ত ও নির্ভীক কন্ঠে জবাব দেয় যে আমাকে মুক্তি দেওয়া হলে আবারো আমি তোমাদের সঙ্গে লড়াই করব। এ জবাব শুনে আহমাদ শাহ মাসউদ নিরুত্তর হয়ে যান।
নারী শিক্ষা বাস্তবায়ন ও তার স্বরূপ নির্ণয় আলিমদের ঐকমত্যে গৃহিত হবে
আফগানিস্তান ইসলামী সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মৌলবী গিয়াস উদ্দীন এক সমাবেশে বলেছেন যে, আমরা নারী শিক্ষার কখনো বিরোধীতা করিনি। পশ্চিমা ধাঁচের তথাকথিত নারী শিক্ষার বিরোধীতা করি মাত্র। আমরা ঐ শিক্ষার বিরোধীতা করছি, যে শিক্ষায় শিক্ষার্থীকে ধর্মত্যাগী, পশ্চাৎগামী, আদর্শচ্যুত, অসৎ চরিত্র এবং হীনমন্যতা শিক্ষা দেয়, সে শিক্ষা মুসলমানদের জন্য আদৌ প্রযোজ্য নয়। আমরা নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে সুস্থ-সুন্দর নীতিমালা গ্রহণ করছি। তিনি বলেন, আলিমরা এ বিষয়ে ইসলামী নীতির ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, সে অনুসারে নারী শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মিথ্যা অপবাদের শাস্তি বাস্তবায়ন
সিরাজী আহমদ নামের গজনীর এক ব্যক্তিকে কযফের শাস্তি স্বরূপ ৮০ বেত্রাঘাত প্রদান করা হয়েছে। উক্ত ব্যক্তি এক নির্দোষ মহিলার বিরুদ্ধে ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছিল। ইসলামী আদালতের তদন্তে মহিলা নির্দোষ প্রমাণিত হন। ফলে ইসলামী আদালত মিথ্যা অপবাদ আরোপ করার জন্য উক্ত ব্যক্তিকে ৮০ টি বেত্রাঘাতের দন্ড প্রদান করে। উপরন্তু উক্ত ব্যক্তিকে একজন মিথ্যাবাদী বলে আদালত কালো তালিকাভুক্ত করে। এবং ভবিষ্যতে সে কোন আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য অযোগ্য ঘোষিত হয়।
দন্ড বাস্তবায়নের পর ইসলামী আদালতের বিচারক সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, যারা নিজেদের মানবাধিকারের মহান সেবক ভাবেন এবং ইসলামী আইনকে বর্বর আইন বলে বিবেচনা করেন, তাদের সে ধারণা ত্যাগ করে উক্ত ঘটনার শিকার মহিলার অবস্থা বিবেচনা করা উচিত। এ ঘটনায় একজন নিস্পাপ ও নির্দোষ মহিলা এক গুরুতর অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছেন, যার ফলে তিনি সমাজে সারা জীবন নিন্দার পাত্র হয়ে থাকতেন। তার কি কোন অধিকার নেই? তার মান সম্মান অভিযুক্ত ব্যক্তি অপেক্ষা কি কোন অংশে কম?
বাস্তবতা হলো, ইসলাম সকলের অধিকারের প্রতি সমান দৃষ্টি দেয় এবং কেউ যাতে অন্য কারো জীবন, মান-সম্মান নিয়ে তামাশা করতে না পারে, তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। ইসলাম জনগণকে অপরাধ সংঘটনে নিরুৎসাহিত করে এবং হুদুদ বিধানের মাধ্যমে ঘটনার শিকার ব্যক্তির অধিকার রক্ষায় অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করে। অতএব কোন মুসলিম দেশ যদি আমেরিকা বা অন্য কোন দেশের চাপের কারণে ইসলামী আইন বাস্তবায়নে অস্বীকার করে, তবে সে দেশ সত্যিকার মুসলিম দেশ বলে বিবেচ্য হতে পারে না।
সূত্রঃ যরবে মুমিন
গ্রন্থনা ও অনুবাদঃ ফারূক হুসাইন