বিশেষ প্রবন্ধ
বাংলাদেশে এনজিও তৎপরতাঃ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
ডঃ আব্দুর রহমান সিদ্দিকী
=====================================================================
একটি সার্বভৌম জাতি, রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অব্যবহিত পরেই নানা রাজনৈতিক, অঅর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের উৎপত্তি হয় । অল্প সময়ে ব্যাপক শোষণ ও বঞ্চনা, সম্পদের পুঞ্জীকরণ, কৃত্রিম সামাজিক সংকট, সামাজিক ভাঙ্গা-গড়া, ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি একদিকে যেমন সমাজে অস্থিতিশীলতা এবং নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়াকে গভীরতর করে তোলে অন্যদিকে তেমনি মূল্যবোধের অবক্ষয় নৈতিক স্খলনকে সর্বব্যাপী রূপ প্রদান করে । এরূপ ডামাডোল পূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যুদ্ধোত্তর সাহায্য ও পুনঃর্বাসন, অনুদান এবং উন্নয়ন সহায়তা দানের নামে নানা বৈদেশিক সংস্থা, সংগঠন একের পর এক তাদের মানবতার হাত এদেশে বাড়িয়ে দেয় । রাষ্ট্রীয় অনুমোদন ও সহযোগিতা নিয়ে এ সমস্ত সংস্থা তাদের তৎপরতা শুরু করে ।
অল্পকালের মধ্যেই অজস্র সাহায্য সংস্থা, দাতা সংগঠন, বিপন্ন মানুষের সেবাদান ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে অবদান রাখার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করতে থাকে । আশির দশকে এই ধরণের সংস্থাগুলি এনজিও নাম ধারণ করে নবরূপে আবির্ভূত হতে থাকে । সারাদেশে নানা নামে বিচিত্র সব লক্ষ্য নিয়ে রাতারাতি গজিয়ে উঠতে থাকে হাজার হাজার এনজিও । যতদূর জানা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তী এই চব্বিশ বছরে গড়ে দৈনিক দু'টি করে এনজিও আত্মপ্রকাশ করেছে । বলা যায়, বাংলাদেশে এনজিও এর মহা প্রাদুর্ভাব ঘটেছে । শহর, বন্দর, গঞ্জ, গ্রাম সর্বত্র যেন ভূঁই ফুড়ে গজিয়ে উঠেছে এনজিও, দেশময় চলছে এক এনজিও ক্রেজ । এনজিও এখন বাংলাদেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক সত্ত্বার সাথে ওতোপ্রোতভাবে মিশে গেছে । ক্রমশ এদের সংখ্যা বাড়ছে, এদের শিকড় বিস্তৃত হচ্ছে এদেশের মাটির আরও গভীরে । এনজিও নামক এইসব উদ্ভট আপদের নিরন্তর সংখ্যা বৃদ্ধি ও তৎপরতা এক মহা সংকট হিসেবে সমুপস্থিত । জাতির সামাজিক ও রাজনৈতিক দিগন্তে এক ভয়ানক অশনি সংকেত । এনজিওদের সর্বব্যাপী তৎপরতার মধ্য দিয়ে যে অকল্পনীয় সর্বনাশা দুর্যোগ এগিয়ে আসছে তা শুধু পলাশী যুদ্ধ পূর্ববর্তী বাংলার দূর্যোগময় পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করা যায় । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উদ্ধত আত্মপ্রকাশ ও পদচারণার সঙ্গে এনজিওদের স্বেচ্ছাচারী ও দৌরাত্মপূর্ণ কর্মকাণ্ডের ঘনিষ্ঠ মিল খুঁজে পাওয়া যায় ।
এনজিওদের স্বরূপ ও লক্ষ্য
বাংলাদেশে তৎপর সকল এনজিও এর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উৎসস্থল পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী দেশসমূহ । আমাদের পশ্চাৎপদ সমাজের উন্নয়ন, দুস্থ মানবতার সেবা, মানবাধিকার সংরক্ষণ, পতিত মানুষদের সমৃদ্ধি, নারী সমাজের মুক্তি, জাতীয় অগ্রগতি প্রভৃতি হচ্ছে এনজিওগুলির ঘোষিত লক্ষ্য । আর এই এনজিওগুলি তাদের অর্থ সম্পদ আহরণ করে পশ্চিমের ধনী দেশগুলো থেকে । আমাদেরক একটা নির্মম সত্য মনে রাখা দরকার, পুঁজিবাদী রাষ্ট্র কিংবা পুঁজিবাদী সমাজের মানুষ একটি কানাকড়িও বিনা মুনাফায় লগ্নী করে না, ভবিষ্যৎ লাভের সম্ভাবনা ছাড়া একটি পেনিও তারা বিনিয়োগ করে না । তাহলে তারা কেন আমাদের ক্ষুদ্র ভুখন্ডের দারিদ্র ও ক্ষুধাতাড়িত মানুষদের জন্য কোটি কোটি ডলার অকাতরে ঢালছে? বিশ্ব লুন্ঠনকারী পশ্চিমা দুনিয়ার মানুষদের হৃদয়ে আমাদের দুঃখ কষ্টে কি সহানুভূতির জোয়ার জেগেছে । মানবতাবোধের মহাপ্লাবন কি উথলে উঠেছে ওদের প্রাণে প্রাণে?তাহলে ওদেরই প্রতিবেশী ঘরের পাশের মানুষদের জন্য ওরা কিছু করে না কেন? ওদের চোখের সামনে রোমের রাস্তায় রাস্তায় হাজারো অসহায় তরুণী, যুবতী জীবিকার তাগিদে দেহ পসরা করে বেড়ায় । ওদের নাকের ডগায় লন্ডন, নিউইয়র্ক, প্যারিসের হাজার হাজার গৃহহীন মানুষ পথেই জীবন কাটায়, পথেই নিঃশেষ হয়ে যায় । নারীর মর্যাদা পশ্চিমা দেশের ক্যাসিনো আর পর্ণগ্রাফিতে সুলভ পণ্য হিসেবে কেনা বেচা হয় প্রতিদিন ।
তখন এসব নারীর মর্যাদার প্রবক্তরা, মানবাধিকার দাক্ষিণ্যের মহাপুরুষেরা কোথায় লুকিয়ে থাকে?নিজ দেশ ভুলে পরদেশীদের প্রতি কেন এত অনুরাগ?এদেশের পতিত মানুষের দুঃখ লাঘবের অজুহাত দেখিয়ে যারা মাঠ, ময়দান চষে বেড়াচ্ছে তারা কেন বসনিয়ায় যায় না!তারা কেন ভ্যাটিকানের অদূরে রোমের রাজপথের স্খলিত তরুণীদের তুলে আনে না, কেন ওরা মানবাধিকারের ঝান্ডা হাতে মায়ানমার কিংবা কাশ্মীরি মুসলমানদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় না? এর জবাব মানবাধিকার ও উন্নয়নের ঠিকাদার এই এনজিওদের কাছে পাওয়া যাবে না । কেননা এদের আসল চেহারা একদম আলাদা । এরা আসলে ফন্দিবাজ । জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ার কোনো অংশীদারও নয়, এরা প্রকৃতপক্ষে পাশ্চাত্য খৃষ্টীয় আধিপত্যবাদীদের অর্থপুষ্ট এবং তাদেরই ধর্মীয়, রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করার অনুঘটক । এগুলি হচ্ছে চিরপুরাতন খৃষ্টীয় সেবা ধর্মের ধারণারই চাতুর্যপূর্ণ নব অভিব্যক্তি । বস্তুতঃপক্ষে এনজিও হচ্ছে খৃষ্টান মিশনারীর মানসপুত্র । তথাকথিত মানবপ্রেম, দুস্থের সেবা, সহযোগিতা প্রভৃতি আপাত রম্য লেবাস ধারণ করে মিশনারীর বিকল্প হিসাবে এদের উদ্ভব হয়েছে । এনজিও এবং মিশনারীরা মূলতঃ এক ও অভিন্ন সত্তা ।
শুধু স্থানকাল ও পরিস্থিতি ভেদে এদের নাম, চেহারা পরিবর্তন হয় যেখানে যে নামে, যে বেশে মতলব হাসিল করা সহজ সেভাবেই এরা আত্মপ্রকাশ করে । সঙ্গত কারণেই এদের অর্থাগামের উৎস সমূহ এবং পৃষ্ঠপোষকগণ অভিন্ন । তাই এদের লক্ষ্য একটি । যীশুর আরাধ্য কাজ সমাপ্ত করা, বিশ্বজুড়ে যীশুর রাজ্য স্থাপন করা । বিগত শতাব্দীতে সমগ্র ইউরোপ, আমেরিকা জুড়ে শুরু হয়েছিল "মিলারিয়ান মুভমেন্ট" । এই মৌলবাদী আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল সহস্র বর্ষব্যাপী বিশ্বজুড়ে এক শান্তির রাজ্য স্থাপনের জন্য আবার শীঘ্রই যীশু আবির্ভূত হবে । তার আগমনের অনুকূল ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য খৃষ্টান বিশ্ব জেগে উঠে ধর্মীয় উন্মাদনা । নতুন করে শুরু হয় ব্যাপক মিশনারী তৎপরতা । আর এটিই হচ্ছে পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ও জনগণের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের অন্তর্নিহিত লক্ষ্যগুলির অন্যতম চিরস্থায়ী লাভজনক বিনিয়োগ বটে । যারা এই অর্থের যোগানদাতা হিসেবে কাজ করছে তারা মৌলবাদী । (মৌলবাদী মানেই খৃষ্টান মৌলবাদী) । কেননা মৌলবাদী প্রত্যয়টির সাথে ইসলামের কোন যোগসূত্র নেই । মৌলবাদের ধারণা খৃষ্টবাদের তৈরি এবং তা তাদের স্বধর্মের জন্যই প্রযোজ্য । আর এই মৌলবাদীরা(খৃষ্টান) দুনিয়ার দেশে দেশে খৃষ্ট ধর্ম প্রসার ও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধানত পুঁজিবাদী বিশ্ব হতে অর্থ সংগ্রহ করে তা বিতরণের কাজে নিবেদিত ।
এই অর্থ সম্পদেই মিশনারী এনজিওরা পরিপুষ্ট,কর্মতৎপর । শুধু খৃষ্ট ধর্ম প্রসারই মিশনারীদের কাজ নয় । এদের আরও একটা রূপ আছে । খৃষ্টান মিশনারীরা হচ্ছে পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদীদের অগ্রবর্তী বাহিনী, উপনিবেশবাদের পতাকা বাহক । যেখানে সাম্রাজ্যবাদ সরাসরি প্রবেশ করতে পারে না সেখানে সেবা ও মানবপ্রেম, উন্নয়ন প্রভৃতির ছ্দ্মাবরণে মিশনারীরা পৌঁছে ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে । পূর্বগামী অনুচর হিসেবে উপনিবেশ স্থাপনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে । বিগত ছয়শ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে মিশনারীদের এই চাতুর্য ও কূট কৌশলের শতেক উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায় । আমেরিকা, আফ্রিকায়, আমাদের উপমহাদেশেও এর উদাহরণ রয়েছে । দেশজ মানুষের ধর্ম, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ভেঙ্গে গুড়িয়ে বিলুপ্ত করে তদস্থলে তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক আধিপত্যকে প্রতিষ্ঠা ও শোষণের পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে । এই হচ্ছে মিশনারীদের প্রকৃত রূপ । এরা সাম্রাজ্যবাদের অগ্রদূত । এখন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের চেহারা বদলে গেছে । সনাতন সাম্রাজ্যবাদের স্থলে আবির্ভূত হয়েছে নয়া সাম্রাজ্যবাদ । তাই পুরাতন অগ্র বাহিনীর বদলে ওরা গড়ে তুলেছে বিকল্প অগ্রবর্তী বাহিনী এনজিও । মিশনারীদের অনুরূপ এনজিওগুলির সুদূর প্রসারী উদ্দেশ্য হলো নয়া সাম্রাজ্যবাদীদের পথ তৈরি করে দেয়া ।
আমাদের দেশ হতে পশ্চিমারা সনাতনী সাম্রাজ্যবাদের তাবু দৃশ্যত গুটিয়ে চলে গেছে । কিন্তু তারা রেখে গেছে তাদের রহস্যময় ট্রয়ের ঘোড়া । দেশের আনাচে কানাচে অজস্র জায়গায় সগৌরবে বিরাজমান মিশনারী কেন্দ্রগুলো হচ্ছে সেই ভয়ংকর কাঠের ঘোড়া । এই কাঠের ঘোড়ার মধ্যে লুকিয়ে থাকা অন্তর্ভেদী শত্রুরা নিঃশব্দে আবার বেড়িয়ে পড়েছে,নতুন করে হামলা করছে আমাদের শিল্প, সংস্কৃতি, ধর্মের ওপর হানা দিচ্ছে সমাজের দূর্বল শ্রেণীর ঘরে ঘরে । এর পাশাপাশি সাম্রাজ্যবাদীরা লেলিয়ে দিয়েছে তাদের পোষা এনজিওগুলোকে । সনাতনী সাম্রাজ্যবাদের যুগ শেষ হলেও ভিনদেশী সমাজ ও মানুষকে পায়ের নীচে চেপে রাখার সেই সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা পশ্চিমীদের শেষ হয়ে যায় নি । ওরা এখন নয়া বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠায় উদ্যত, মনস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক উপনিবেশ স্থাপনে ব্যাপৃত । এনজিও হচ্ছে সেই প্রচেষ্টারই প্রধান বাহন । জাতি হিসেবে স্বতন্ত্রভাবে বিকশিত হয়ে উঠবার, আমাদের চিরায়ত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে লালন করে স্বকীয় মহিমায় টিকে থাকার প্রক্রিয়াকে স্তব্ধ করে দেয়াই এদের অন্তর্লীন উদ্দেশ্য । ওদের এক হাতে ক্রুশ আর এক হাতে উন্নয়নের পতাকা এসবই আইওয়াশ, লোক দেখানো ভড়ং মাত্র ।
স্পষ্টতঃ ওরা এই অঞ্চলের জনসংখ্যা তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন সাধনে প্রয়াসী । খৃষ্টীয় ধর্মীয় রাজনৈতিক ভাবাদর্শের অনুকূলে একটি ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে চায় । মাত্র একশ বছরে ওরা যেমনটি করেছে প্রতিবেশী একটি দেশের কয়েকটি রাজ্যে । ওরা সফলকাম হয়েছে সিঙ্গাপুর, লেবাননে । আফ্রিকা মহাদেশের দেশে দেশে ওরা বদলিয়ে দিয়েছে বিপুল মানুষের ধর্মীয় আদর্শ, জীবনাদর্শন এবং রাজনৈতিক চরিত্র । একই সুদূর প্রসারী লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে এনজিওরা । সবার অলক্ষ্যে আমাদের জনসংখ্যা তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের রদবদল ঘটছে খুব দ্রুত । এই মূহুর্তে দেশে অন্তত দুই ডজন এনজিও আছে যারা প্রকাশ্যে খৃষ্ট ধর্ম প্রচার করে চলেছে । আরো আছে বেনামে ছদ্মবেশে । এই প্রক্রিয়া যদি অব্যাহত থাকে তাহলে অনতিকাল পরেই এ দেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে এর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়বে । এই ভূখন্ডটি আর এক লেবানন কিংবা বসনিয়া হারজেগোভিনায় পর্যবসিত হলে অবাক হবার কিছুই থাকবে না ।
একথা সকলেরই জানা, ক্রুসেডের প্রেরণাই খৃষ্টান মিশনারীদের মূলমন্ত্র । ক্রুসেড ছিল মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার সশস্ত্র প্রক্রিয়া । আর মিশনারী তৎপরতা হল এক নিঃশব্দ, নিরস্ত্র এবং অবিরাম হামলা । ক্রুসেডের রক্তাক্ত স্মৃতি বুকে ধারণ করে ওরা চালিয়ে যাচ্ছে কর্মকাণ্ড । মানবতা, মুক্তি, সাম্যের মৌলিক ঘোষণার আড়ালে পশ্চিমারা হাড়ে হাড়ে যে কতখানি প্রতিহিংসাপরায়ণ তার দৃষ্টান্তের অভাব নেই । বিশেষভাবে ইসলামকে পর্যুদস্ত করার ব্যাপারে এরা যে প্রতিশ্রুতবদ্ধ তার অগণিত দৃষ্টান্ত ইতিহাসের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে । যেখানে শুধু মিশনারী দিয়ে কাজ হয় না সেখানেই তৈরি করে এনজিও । আর যারা সেবা, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের পসরা নিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশের পথে প্রান্তরে হয়রান হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা ঐ ক্রুসেডারদের উত্তম পুরুষ কিংবা তাদেরই নিয়োজিত চরানুচর । আজকে যারা এনজিও ঢংয়ে সেবা, মানবাধিকার আর উন্নয়ন ফেরী করতে এসেছে এদেশে, তাদেরই পূর্ব পুরুষদের দুশো বছর ধরে শোষণ, লুন্ঠন, নিপীড়ন আমাদের হাল দুর্দশার কারণ । দু'শো বছরে মাদের সমাজ ভেঙ্গেছে, সংস্কৃতিকে তছনছ করেছে, সমৃদ্ধিকে পৌঁছে দিয়েছে শূণ্যের কোঠায় । আর তাদের এ সমস্ত কুকীর্তির সহযোগী হিসেবে এ দেশে একটি সামাজিক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটেছে । ভিনদেশীদের সাম্রাজ্য বিস্তার ও অন্যান্য অভিলাসের দোসর এই বংশবদ শ্রেণীটি আমাদের দেশ জাতি এবং জনগণকে একে একে তুলে দিয়েছিল ওদের হাতে । আজও আবার সে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে নতুন করে । যেন সেই ইতিহাসেরই ঘটছে পুনরাবৃত্তি । লুন্ঠন আর দাসত্বের দুয়ার খুলে দিচ্ছে এনজিও ভুক্ত এদেশীয় নয়া তাবেদার শ্রেণী ।
দুর্ধর্ষ বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের তোপের মুখে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছিল হাজী, গাজী, পীর মাশায়েখ, আলেম, ওলামা । তিতুমীর, দুদু মিয়া, হাজী শরীয়তউল্লাহ, সুলতান নূর উদ্দিন, সৈয়দ আহমদ বেরলভি সেই দুঃসময়ে জাগিয়ে তুলেছিলেন জাতিকে । তারা নির্ভয়ে বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আধিপত্যবাদীদের বিরুদ্ধে । মনে হয় সেই দুঃসময় পুনরায় সমাগত । ক্রুসেডার আর সাম্রাজ্যবাদীদের সুপ্রাচীন কৃপাণ আস্তিনের নীচে লুকিয়ে সেবা, উন্নয়ন এবং মানবাধিকারের বাণী মুখে নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে এ দেশীয় অনুগৃহীতরা এনজিওভুক্ত মানুষেরা ।
দেশের বরেণ্য আলেম সমাজ এই ফন্দিবাজের সমস্ত কারসাজি উপলব্ধি করে উঠে দাঁড়িয়েছেন এদের বিরুদ্ধে । আমাদের সমাজ, সসংস্কৃতি, ধর্মকে বিকৃতি ও বিন্যাসের হাত থেকে, জাতিকে দাসত্বের বন্ধন থেকে রক্ষা করতে আগুয়ান হয়ে উঠেছেন । এই আলিমগণ নয়া সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ের অগ্রসেনানী । তারা তিতুমীর, দুদু মিয়া আর বেরলভি এর সুযোগ্য উত্তরসূরী,একই মর্যাদা আর গৌরবে অভিসিক্ত হওয়ার যোগ্য । সেই দুঃসময়ে যেমন জাতিকে দিশা দিয়ে তারা এগিয়ে এসেছেন আজও আলিমগণ সেই একই ভূমিকায় অবতীর্ণ । প্রায় অভিন্ন ঐতিহাসিক ক্রান্তিকালে তারা দাঁড়িয়ে আছেন ।
এনজিও এবং রাষ্ট্রঃ
বিশেষভাবে বিগত এক দশকে বহু এনজিও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের ঘনিষ্ঠ অংশীদার অথবা পরিপূরক পর্যবসিত হয়েছে । সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব কর্তব্য সমূহের অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের অংশীদারিত্ব স্বীকার করে নিয়েছে । এমন কোন দপ্তর /খাত ইদানিং খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে এনজিও এবং সরকার পাশাপাশি কাজ করছে না । এমনকি দু'একটি ক্ষেত্রে এনজিও সার্বিক দায়িত্ব সম্পাদন করছে । এনজিও এবং এনজিওর মালিক, কর্মী ও সমর্থক এবং কতিপয় তাত্বিক ও অর্থনীতিবিদ এ ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, বাংলাদেশের জন্য এনজিও একটি উন্নয়ন স্টাটেজিস্ট এপ্রোচ । তাদের মতে রাষ্ট্রের বা সরকারের একার পক্ষে ব্যাপক অনুন্নয়নকে মোকাবিলা করা সম্ভব নয় । সম্পদ সংগঠিত করা এবং বিপুল জনশক্তিকে কাজে লাগানোও সম্ভব নয় ।
তাই সরকারের পাশাপাশি প্রয়োজন এনজিও এর উপস্থিতি । স্পষ্টত জাতীয় উন্নয়নের এই এনজিও এপ্রোচের বিষয়টি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভ করেছে । দেশের উর্ধ্বতন মহল মেনে নিয়েছে যে, দেশের অনুন্নয়নকে মোকাবিলা করতে দেশে ছোট বড় মিলিয়ে নাকি ষোল হাজার এনজিও কাজ করছে । এর মধ্যে সরাসরি বিদেশী অর্থপুষ্ট বড় এনজিও রয়েছে এক হাজারের কাছাকাছি । সরল অংকের হিসাবে প্রতি চারটি গ্রামের জন্য রয়েছে এক একটি করে এনজিও । আর প্রত্যেকটি এনজিওর যে বিপুল পরিমাণ আর্থিক বাজেট তাতে এই ক্ষুদ্রায়তন দেশটির গ্রাম, গ্রামান্তর, গঞ্জ-বাজারে ইতোমধ্যে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাওয়ার কথা । দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অপুষ্টি বহু পূর্বেই এদেশের মাটি থেকে পলায়ন করার কথা । কিন্তু বাস্তবে তা হয় নি । উপরন্তু বিগত বছরগুলোতে ভূমিহীনের সংখ্যা বেড়েছে দ্রুত । ক্ষুধা, ব্যধি ও অপুষ্টি হয়েছে তীব্রতর । নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়া রয়েছে অব্যাহত । উন্নয়নের এনজিও এপ্রোচ আমাদের জন্য কি সওগাত নিয়ে আসছে তা এসব থেকে সহজে অনুমেয় ।
একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন কর্মকান্ড তার পরিকল্পনা কোন বহিঃসংস্থা বা গোষ্ঠী দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে না । তেমনি উন্নয়ন কর্মকান্ডের নির্বাহী দায়িত্ব রাষ্ট্র বহির্ভূত ব্যক্তির হাতে ছেড়ে দেয়া যায় না । কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এনজিওরা তাদের লক্ষ্য ও সুবিধা মোতাবেক দেশের এক এক এলাকা অদৃশ্যভাবে ভাগাভাগি করে নিয়েছে । ঠিক অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে নানা বিদেশী কোম্পানী যেমন ভারত বর্ষকে ভাগাভাগি করে নিয়েছিল । এনজিওগুলি তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে ভিন্নদেশী দাতা সংস্থার মর্জি মাফিক । দাতাদের পছন্দ হলে, তাদের উদ্দেশ্যের অনুকূল হলে প্রকল্প অনুমোদন পায় । অর্থের যোগান আসে । এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় অনুমোদনের বিষয়টি প্রায়শ পোশাকী বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ।
একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ও বৈদেশিক সংস্থার অভিরুচি মাফিক উন্নয়ন কর্মকান্ড কতখানি কল্যাণকর তা চিন্তাশীল ব্যক্তি মাত্রই উপলব্ধি করতে পারেন । এনজিওদের ব্যাপক তৎপরতা ও স্বাধীন চেতা হাবভাব দেখে মনে হয়, এ হচ্ছে রাষ্ট্রের ভেতর আর একটা রাষ্ট্র সরকারের সমান্তরালে আর এক সরকার । তাদের আসল কাজ হল জনগণের দারিদ্র্য ও পশ্চাৎপদতাকে পুঁজি করে সর্বত্র কর্তৃত্ব স্থাপনের প্রয়াস চালানো । এ ধরনের উন্নয়ন তামাসা জনগণের প্রকৃত ভাগ্যোন্নয়নকে শুধু ব্যাহত করছে না বরং সে পথকে আরও কণ্টকাকীর্ণ করে তুলেছে । কারণ বিদেশীরা চায় না আমরা সত্যিকার অর্থে উন্নতি লাভ করি । আত্মনির্ভর হয়ে উঠি । বস্তুতঃ আমাদের উন্নয়নকে ঠেকাতেই তাদের যত সুক্ষ্মপ্রয়াস । তবুও দেখা যায়, হয়ত জেনে বুঝেই রাষ্ট্র এনজিওদের বহু বিষয়ে উন্নয়নের অংশীদারিত্ব প্রদান করছে । পশুপালন, মৎস চাষ,রেশম চাষ, বৃক্ষরোপণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ, উন্নয়ন অবকাঠামো তৈরি, পরিবেশ সংরক্ষণ, স্বাস্থ্য পরিচর্চা, শস্যাবীজ সংরক্ষণ প্রভৃতি সেক্টরে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্ব ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে । এনজিওই প্রবল নিয়ামক হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে । অন্যভাবে বলা যায়, সরকার এনজিওদের যারপরনাই প্রশ্রয় ও মদদ দিচ্ছে । রাষ্ট্রীয় কাজকর্মের ভার ক্রমশ তাদের হাতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে । এই এনজিও নামক সিন্দাবাদের দৈত্যকে জনগণের কাঁধের উপর চেপে বসার সুযোগ করে দিচ্ছে । একটি স্বাধীন রাষ্ট্র নিজের কাজ নিজে না করে বিদেশী পরিকল্পনা, প্রশাসক তদারককারী অর্থদাতা, আমলাদের ছড়ি ঘুরিয়ে বেড়াবার সুযোগ তৈরি করে দেবে তা ভাবতে অবাক লাগে । এই সব কর্মকান্ডে স্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র প্রভৃতি ধারণাকে কেবল উপহাসই করে । উন্নয়নকে করে সুদূর পরাহত । এই অবস্থা চলতে থাকলে এমন দিন বেশি দূরে নয় যখন রেল, বিমান, ডাক প্রভৃতি এনজিও এর হাতে চলে যাবে ।
এমন হতে পারে দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা,রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থাও অবশেষে এনজিওদের হাতে চলে গেছে তখন বিস্ময়ের কিছু থাকবে না । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানী লাভের মতো অবস্থা হবে । কৃষি আমাদের দেশের অর্থনীতির প্রাণ । সে কৃষি ঋণ বিতরণের দায়িত্বও সরকার এনজিওর হাতে ছেড়ে দিয়েছে । অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন, প্রশাসন পরিকল্পনার কাজ এনজিওর হাতে ছেড়ে দিয়ে সরকার নিছক তদারকির দায়িত্ব পালন করতে চায় । এরকম৷ চলতে থাকলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেই সব ধূর্ত কর্মকর্তাদের ঘোষণাই পুনঃপ্রতিধ্বনিত হবে-"নবাব নবাবী করবে, আর কোম্পানি রাজ্য চালাবে" ।
এনজিওর উপর রাষ্ট্রের/সরকারের অতিশয় নির্ভরশীলতা থেকে দু'টি বিষয় প্রতীয়মান হয় । যথাঃ
১ । রাষ্ট্রীয় কর্ম ব্যবস্থাপনায় সরকারি অপারগতা
২ । আমাদের নাকে দড়ি দিয়ে বিদেশী সংস্থা যেভাবে খুশি ঘুরাবে, তার প্রতিবাদ করার শক্তি আমাদের থাকবে না ।
এই সব প্রশ্নের সাথে নৈতিকতা, বৈধতা এবং সার্বভৌমত্বের হাজারো প্রশ্ন জড়িত আছে । পরিশেষে জাতীয় উন্নয়নে এনজিওরা কখনোই জাতিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দেবে না । জাতিকে ক্রমশ নির্ভরশীল অর্থনীতির অন্ধকার গহ্বরে ঠেলে দিবে । এ জাতিকে বিদেশী দাতা সংস্থা তথা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কৃপা প্রার্থী জনগোষ্ঠীতে পর্যবসিত করবে ।
এনজিও এবং আমাদের সংস্কৃতিঃ
আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সত্ত্বার এমন কোনো দিক নেই, যেখানে এনজিওরা হস্তক্ষেপ করে নি । আমাদের জাগতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের মধ্যেও এনজিওরা অনুপ্রবেশ করেছে । তন্মধ্যে পরিবার,নারীর মর্যাদা,সমাজ, ইসলামী আদর্শ, রাজনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয় । এই কয়েকটি বিষয়ে কিঞ্চিত আলোকপাত করা যেতে পারে ।
আমাদের এই দেশের মানুষ বহু শতাব্দী ধরে এশীয় ধাচের চিরায়ত সমাজে বসবাস করছে । আমাদের জীবনধারা সুসংবদ্ধ, শান্তিময় ও নিবিড় প্রকৃতির । পরিবার এ সমাজের কেন্দ্র বিন্দু । সহমর্মিতার জ্ঞাতিত্ব্যবোধ এদের সংস্কৃতির প্রাণসত্তা । কিন্তু এনজিওগুলোর উপস্থিতি ও তাদের সম্প্রসারণশীল কর্মকান্ড এই চিরায়ত সমাজ ও সংস্কৃতিতে ভাঙ্গন ধরিয়েছে, পরিবারের বন্ধন শিথিল করে ফেলেছে, শ্লথ করে ফেলেছে সমাজের সুপ্রাচীন গ্রন্থী ।
পাশ্চাত্যের মানুষ তাদের সমাজকে ভেঙ্গে ফেলেছে । তারা এখন সমাজহীন সমাজে বাস করে । সমাজ বিলুপ্ত করে দিয়ে মামুলি সমিতির মধ্যে বিলীন করে দিয়েছে তাদের অস্তিত্ব । বিখ্যাত জার্মান সমাজ বিজ্ঞানী কার্ল মেনহেম বলেছেন, "দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধোত্তর ইউরোপের মানুষ সমাজে বাস করে না, সমিতিতে বাস করে । "যথার্থই ওরা ওদের সমাজকে ভেঙ্গেছে, সভ্যতাকে বিকৃত করেছে, পরিবারকে করেছে গ্লানিময় ধ্রুপদি সমাজে এর পরিবার ব্যবস্থায় । আমাদের সমাজ তথা পরিবারের প্রশান্তি ও পবিত্রতাকে ওরা ক্লেদাক্ত করতে চায়,নামিয়ে আনতে চায় ওদেরই কাতারে । আমাদের ঐতিহ্য চেতনা, পরিচ্ছন্ন মূল্যবোধ ও পপরার্থপরতাকে ওদের বিদ্বেষ, পশুচার আর গ্লানির সাথে মিশিয়ে একাকার করতে চায় । পশ্চিমাদের হাতিয়ার এনজিওগুলো এই প্রক্রিয়ার একটি অন্যতম পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছে আমাদের নারী সমাজকে, তরুণীদের, গৃহবধূদের । এনজিওরা ভালো করেই জানে যে, একটি সমাজের মেয়েদের পথে নামাতে পারলে, তাদের বহির্মুখী ও দুঃশীলা করে তুলতে পারলে সে সমাজ/জাতিকে ইচ্ছা মাফিক বদলে দেওয়া যায় । আমাদের বধূ, মাতা, কন্যাগণ যুগ যুগ ব্যাপী লাজ, নম্র,কুলশীলা,তারাই পরিবারের কেন্দ্রস্থল, শান্তি আর পবিত্রতার প্রতীক । এনজিওরা তাদের নারীমুক্তি ও সমানাধিকারের নামে ঘর থেকে টেনে বের করে পথুয়া সাজাতে আগ্রহী । বিশেষভাবে নগদ ঋণদান, অর্থলগ্নি কিংবা উপার্জন সৃজনের ধুয়া তুলে যে এনজিওগুলো গ্রাম,গঞ্জে তৎপর তাদের মূল মক্কেল হচ্ছে ঘরের বধূরা । এই সব এনজিওর টার্গেট হচ্ছে প্রধানত যুবতী বধূ আর তরুণী কন্যারা । তাদের ওরা মুক্ত,স্বাধীন ও সাবলম্বী হবার প্রেরণা যোগায় ।
যুবক ভাই বেকার, তাকে হয়ত এনজিও ডাকে না । অথচ কিশোরী বোনকে তারা কাজ দিতে চায় । সক্ষম স্বামী কর্মহীন, তাকে এনজিওরা খোঁজে না, খুঁজে বের করে তরুণী স্ত্রীকে, তাকে লোভ দেখায়, সমিতিতে ডাকে, মিটিং করে সাতপাঁচ বুঝ দেয় । পরিবারের বন্ধন ছিন্ন করে সমিতির কোলে আশ্রয় নিতে উদ্বুদ্ধ করে । স্বামী আর মুরব্বিদের আনুগত্যকে উপেক্ষা করতে শেখায়, মধুর সম্পর্ক ও কর্তব্যকে অবজ্ঞা করতে উৎসাহিত করে । স্বামী, সন্তান, সংসার কিংবা সমাজ নয় সমিতি, কমিটি, সংস্থা, বিদেশী সাহেব,দেশি অফিসার, ক্লাবঘর তাদের কাছে বেশি প্রিয়, প্রয়োজনীয় করে তোলার ইন্ধন দেয়ার কাজ করে চলেছে এনজিও । সমানাধিকারের নামে মেয়েদের পথে ঘাটে নামিয়ে একই ডরমিটরিতে ঘুমাবার মওকা দিয়ে সমাজের সামনে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায় যাতে অন্যান্য বধু কন্যারা ওদেরই আদর্শ গ্রহণ করে ঘরের মমতা কাটিয়ে, পরিবারের পূতঃ বন্ধনকে দুপায়ে মাড়িয়ে পথে এসে দাঁড়ায় । আর তখনই তাদের দিয়ে বলিয়ে নেয়া যাবে,'শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার' । এভাবে এনজিওগুলো দারিদ্র্য বিমোচনের নামে নারী মুক্তির ছলনায় উপার্জন সৃজন, স্বাবলম্বী হওয়ার উপায় দেখিয়ে আমাদেত সমাজ ও ঘর ভাঙছে । সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে বিনাশের চক্রান্ত জাল বিস্তার করছে । সর্বক্ষেত্রে নারীদের অতিমাত্রায় প্রাধান্য দেবার প্রবণতা দেখে প্রতীয়মান হয় যে, এনজিও এদেশে পশ্চিমা মডেলের স্থূলভোগবাদী সমাজ নির্মাণের প্রয়াসী । ওরা অবাধ যৌনাচারের বাতাবরণ তৈরি করতে চায় । চায় বাধা বন্ধনহীন সম্ভোগের পরিবেশ তৈরি করতে ।
এনজিওগুলি ইদানিং দেশের অধিকাংশ বিদ্যমান য সম্ভাব্য কর্মক্ষেত্রগুলো দখল করে ফেলেছে । রাষ্ট্রের শৈথিল্য ও অপারগতার ছিদ্রপথে সমাজে প্রবেশ করে কর্মসংস্থানকারী তথা নিয়োগকর্তা হয়ে বসেছে ।
হাজার হাজার মেধাবী যুবককে এরা নিযুক্ত করেছে । উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবকরা নিরুপায় হয়ে এনজিওদের কাছে ধরা দিচ্ছে, পরিণত হচ্ছে ওদের ইচ্ছার ক্রীড়ানকে । এভাবে নবীন প্রজন্মের দক্ষতা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে, তাদের সৃজনশীলতাকে ভোতা করে ফেলছে । এর ফলে জাতি নব নব সম্ভাবনা ও উন্নয়নের সুযোগ হতে বঞ্চিত হচ্ছে । এ যুবকরা ক্রমশ মেধাগতভাবে পঙ্গু ও পেশাগতভাবে পরনির্ভরশীল হয়ে উঠছে । তাদের মধ্যে দেশপ্রেমবোধ গৌন হতে বাধ্য, এনজিওপ্রীতি স্বভাবত হবে প্রগাঢ়, সৃষ্টি হবে দাসমনবৃত্তি । যারা জাতির বিকাশের জন্য অমূল্য অবদান রাখার যোগ্য তাদের মেধা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ভিনদেশী পরিকল্পক, অর্থদাতা,প্রশাসক আর দেশের ফন্দিবাজ এজেন্টদের অশুভ ইচ্ছার কাছে । জাতির কল্যাণ ও উন্নয়ন হচ্ছে সুদূর পরাহত ।
দেশে এনজিওর সর্বব্যাপী উপস্থিতি জাতির অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করেছে । আমাদের সামাজিক স্তর বিন্যাসে আকস্মিক ও অনভিপ্রেত রদ বদল ঘটেছে । এনজিওর কারণে বাজারে বিপুল পরিমাণ বাড়তি অর্থের সরবরাহ হয় । যার উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ খুব সামান্যই কার্যকরী । এনজিও এখন একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা । দেশের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষদের দেখিয়ে কিংবা উন্নয়ন প্রকল্পের নামে সমাজের একশ্রেণির লোক এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে । তারা রাতারাতি প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক হয়ে বসছে । এনজিওর সঙ্গে জড়িত অনেক কর্তাব্যক্তিও এখন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ ।
অন্যদিকে এনজিওর সাথে জড়িত কর্মকর্তা, কর্মচারীরা যে বেতন ভাতা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করে তা সরকারি, আধা সরকারি প্রভৃতি সংস্থার তুলনায় অনেক গুণ বেশি । এর ফলে সমাজের ভেতর যেমন হতাশা পুঞ্জিভূত হচ্ছে তেমনি সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে । এনজিওর বেতন ভাতাদি এমন লোভনীয় করে রাখা হচ্ছে যে,মেধাবী যুবকরা আকৃষ্ট হয়,প্রতিবাদী তরুণরা এর বিরুদ্ধে কথা বলে না বরং প্রলুব্ধ হয় । যারক সরকারি, আধা সরকারি অনুরূপ সংস্থায় কাজ করে তারাও এনজিওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছে ।
জাতির একাংশ এনজিওকে জীবিকার অন্যতম অবলম্বন বলে ভাবতে শুরু করেছে । অধিক অর্থ প্রাপ্তির উৎস ভেবে সেদিকে ঝুঁকে পড়েছে । এর ফলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধের উপর আঘাত আসছে । আরো লক্ষ্য করা যায় যে, অথর্ব সম্ভাবনাহীন বর ও ঘরের গৃহিণী সুযোগ বুঝে এনজিও খুলে হঠাৎ সমাজ সেবক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে । এনজিওর টাকায় বাড়ি,গাড়ি,বিলাস বসনে প্রমত্ত হয়ে পড়েছে, পরিণত হচ্ছে সমাজের মালিক মোক্তারে । এভাবে সহজ অর্থ প্রাপ্তি জাতির একাংশকে বিভ্রান্ত করছে, সৎ মানুষদের করে তুলেছে নিরাশ;নিবেদিত প্রাণ,রাষ্ট্রীয় কর্মী বাহিনীর নৈতিক ভিত্তিকে করছে আঘাত । সমাজে সকল পর্যায়ে এনজিওগুলোর ভাগ্যনিয়ন্তা হিসাবে ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি সামাজিক বৈষম্য ও নৈতিক অবক্ষয়কে করছে ত্বরান্বিত, প্রতিষ্ঠিত সমাজ, মনঃস্তত্বে ধরাচ্ছে গভীর ফাটল । ইতোমধ্যেই এনজিও সমূহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে । সহায়তা দানের নামে আর্থিক ভাবে দূর্বল শ্রেণীকে সংগঠিত করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনছে । দৃশ্যত এনজিওগুলি রাজনৈতিক প্রচারণা ও কার্যকলাপ চালাবে না । কিন্তু সুপার পলিটিক্স বলে যদি কিছু থাকে তবে তারা তাই করছে । এরা স্থানীয় রাজনীতির চরিত্রে রদ বদল ঘটাচ্ছে । প্রথাগত নেতৃত্বকে হটিয়ে দিচ্ছে, গড়ে তুলছে নিজেদের অনুকূলে বিকল্প নেতৃত্বের ধারা । অন্যপক্ষে, ক্রমশ জনসাধারণের একাংশকে নির্ভরশীল করে তুলে তাদের জীবিকার তুচ্ছ অবলম্বনের গোপন সূতো হাতে রেখে দিয়েছে । ফলে এসব মানুষ এনজিওদের বিরুদ্ধাচারণ করার সাহস রাখে না । নিজেদের ভালো-মন্দ, দ্বীন-দুনিয়া এনজিওদের হাতে তুলে দিয়েছে ।
ক্রমশ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দানের ক্ষমতাও তুলে দিচ্ছে এনজিওদের হাতে । বাঁধা পড়া এই মানুষদেরর আনুগত্যবোধকে খরিদ করে ফেলেছে এনজিওরা । একদিকে জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যকে বদলে দিয়ে জনগণের একাংশকে একান্ত নিজেদের লোক হিসাবে তৈরি করে নিচ্ছে । আর এক অংশকে নানা প্রলোভনে, অনুদানে নির্ভরশীল মুঠোর ভেতরের মানুষে পর্যবসিত করছে । এভাবে দেশে দূর ভবিষ্যতে একটা সুবৃহৎ ও অবিভাজ্য ভোট ব্যাংক তারা গড়ে তুলতে যাচ্ছে । যেখানে অন্য কারো হাত দেওয়ার শক্তি সাহস থাকবে না । এভাবে হয়ত তারা এমন একটা দর কষাকষির পর্যায়ে উপনিত হবে যখন সরকারের দুটি শীর্ষপদের একটি, ঠিক লেবাননের মতো, একটি বিশেষ সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে ছেড়ে দিতে হবে । হয়ত এমন দিন আর দূরে নয় যখন এমপি পদপ্রার্থী এলাকার এনজিওগুলোর কাছে সাহায্যের জন্য দ্বারস্থ হবেন । দু'হাজার সাল নাগাদ আরও অনেক কিছু অর্জনের পাশাপাশি এমন হবে যে, একজন ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এনজিওর কৃপা ব্যতীত নির্বাচনে জিয় লাভ করতে পারবেন না । এমতাবস্থায় সমাজ ও জাতির নেতৃত্ব কাদের হাতে হস্তান্তর হয়ে যাবে তা সহজে অনুমেয় । এমন সম্ভাবনা একেবারে অলীক কল্পনা বলে উড়িয়ে দেয়া যায় না যে, অদূর ভবিষ্যতে এনজিওদের পক্ষ হতে একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন । তখন তাদের কে রুখতে পারে?এনজিওদের হাতে প্রচুর অর্থ, সম্পদ,দেশীয় এজেন্ট, কর্ম বাহিনী আর লাখে লাখে অনুগৃহীত সমর্থক যেমন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অগ্রাভিযানকে সে দিন কেউ রুখতে পারে নি তেমনি আগামীতে এনজিওর অগ্রাভিযান হতে পারে দুর্দমনীয় ।
গত কয়েক বছরে দেশের নানা অঞ্চলে স্থানীয় নির্বাচনে এনজিওগুলোর সুকৌশল হস্তক্ষেপের ঘটনা বিরল নয় । এই প্রক্রিয়া ক্রমশ ব্যাপক ও গভীরতর হবে তাতে আর বিস্ময়ের কি?দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসমূহ এনজিওদের তৎপরতার আর একটি নিরপোদ্রুপ ও উর্বর ক্ষেত্র । এ ব্যাপারে এনজিওদের অবিরাম কর্মকাণ্ডের ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে অহেতুক ক্ষোভ ও অসন্তোষ ধূমায়িত হচ্ছে । এনজিওগুলো তাদের মধ্যে কৃত্রিম বঞ্চনাবোধ জাগ্রত করে সংগঠিত করার কাজে নিয়োজিত । প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সহজ সরল জীবনকে গুড়িয়ে দিচ্ছে, তাদের সামাজিক সম্প্রীতি ও রাজনৈতিক আনুগত্যকে এলোমেলো করে তুলছে । রাষ্ট্রের জ্ঞাতসারে এনজিওগুলো নানা ব্যানারে হরেক রকমে বুদ্ধিবৃত্তিক কসরতে লিপ্ত । প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকজনদের নিয়ে সেমিনার, ওয়ার্কশপের নামে নানা অবাঞ্চিত আচরণ ও অন্যায় চিন্তার দিকে তাদের ঠেলে দিচ্ছে । দেশে এমন জায়গা আছে যেখানে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা পৌঁছাতে পারে না কিংবা পৌঁছে দেওয়া হয় না । কিন্তু ভিন্নতর সংস্থার লোকেরা অবলীলায় সেখানে যাতায়াত করে মতলব হাসিল করে । এসব তৎপরতায় এনজিও এবং মিশনারীরা হাতে হাত রেখে কাজ করে চলেছে । এই কর্মকান্ডসমূহ জাতীয় সংস্কৃতি ও সম্প্রীতিকে করছে খন্ডিত । শান্তি এবং শৃঙ্খলাকে করছে বিপন্ন । এভাবে দেশের রাজনৈতিক দিগন্তে এনজিও সমূহের দুর্দান্ত আবির্ভাব নানা আশংকাকে ঘনীভূত করছে । দেশপ্রেমিক মাত্রই এতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না । আর এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় উদাসীনতাকে ক্ষমা করা যায় না ।
যেহেতু খৃষ্টীয় ভাবাদর্শের গভীর থেকে এনজিওদের অভ্যুদয়, তাদের সকল কর্মকাণ্ডের মর্মবাণী যীশুর তথাকথিত দয়া ও প্রেমভাবনা, সেহেতু ইসলাম বিদ্বেষ এদের মজ্জাগত, এদের অপরিবর্তনীয় লক্ষ্য ও উপায় উভয়ই । আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার অতন্দ্র অভিভাবক বরেণ্য আলেম সমাজ এনজিওদের ফন্দিফিকির ধরে ফেলেছেন, যথেচ্ছ তৎপরতার প্রধান অন্তরায় হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন । মানুষের ইসলামি আদর্শবোধ ও সাংস্কৃতিক চেতনাকে সুক্ষ্ম প্রক্রিয়ায় মুছে ফেলার কাজে অজস্র এনজিওর কর্মী নিরলসভাবে তৎপর । নিরক্ষর, নিরুপায় পল্লীবাসীদের প্রবঞ্চনা করে ইসলামের বিধান ও সংস্কৃতির অপব্যাখ্যা করে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস পাচ্ছে ।
জনসাধারণকে ইসলামি জীবন ধারা থেকে বিচ্যুত করা,একমুঠো খাদ্য বা সাহায্য প্রদানের বিনিময়ে ধর্ম কেড়ে নেওয়ার যে গগনচুম্বী সাফল্য তারা আবিষ্কার করেছে সেই অভিজ্ঞতাকে এখানে এরা কাজে লাগাতে চায় । তাদের এই ইচ্ছা রাজ্য প্রতিষ্ঠায় বাধ সেধেছেন আলিমগণ, তারা সৃষ্টি করেছেন প্রতিরোধ । এই পটভূমিতে এনজিওগুলো আলেমদের বিরুধে আক্রোশে জ্বলে উঠেছে । ফুঁসে উঠেছে তাদের মুরব্বীরা । দেশের আলেমগণকে উন্নয়ন বিমুখ, প্রগতি বিরোধী, মধ্যযুগীয় প্রভৃতি আখ্যা দিয়ে তাদের লোকসমাজে হাস্যষ্পদ করে তুলতে ব্যাপৃত । আবার কখনও ধর্মান্ধ মৌলবাদী অথবা ফতোয়াবাজ বলে অভিহিত করে ব্যক্তিগত ও ধর্মীয়ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করছে । এভাবে তারা ইসলামের অনুশাসন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে ঘৃণার বীজ পুতে দিতে চায় । আলেম সমাজের অভিভাবকত্বকে অস্বীকার করতে উদ্বুদ্ধ করছে । পাশ্চাত্যের মৌলবাদীদের (খৃঃদের)অর্থলালিত এনজিওরা এদেশের আলেম শ্রেণীকে মৌলবাদী বলে চিহ্নিত করে নিজেদের আসল রূপ আড়াল করে রাখতে চায় ।
এনজিওদের এসব কর্মকাণ্ডের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ । সোভিয়েতের পতনের পর এই রাজনৈতিক কর্মীদের মূল খুঁটি ভেঙ্গে গেছে । ওরা এখন শিকড়হীন । ওদের গায়ে সমাজতন্ত্রের আস্তাকুড় ঘেটে বেড়ানোর দুর্গন্ধ । এরা এক সময় এনজিওদের ঘোর বিরোধী ছিল । এখন সেই এনজিওই তাদের শেষ ভরসাস্থল । কারণ ইসলামকে পর্যুদস্ত করা সমাজতন্ত্রের অঅন্যতম লক্ষ্য । আর এনজিওগুলিও ঘোর ইসলাম বিদ্বেষী । এই কূট যুক্তিতে শুধু ইসলামকে নির্মূল/শায়েস্তা করার লক্ষ্যে এই পতিত রাজনৈতিক কর্মীরা সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে গাঁটছড়া বাঁধতে দ্বিধাহীন । এনজিওদের পক্ষালম্বন করে আলেম সমাজকে ফতোয়াবাজ বলে গালমন্দ করতে এরা নিঃসংকোচ । দেশে এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী আছেন, একদল কবি, লেখক, সাংবাদিক, অধ্যাপক আছেন যারা এনজিওদের স্তাবক,তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ । এসব পরজীবিরা আসলে জ্ঞানপাপী । স্বধর্মের প্রতি তাদের প্রবল ঘৃণা, ইসলামের প্রতি তাদের প্রচন্ড আক্রোশ । তারা ক্রুশের ছায়ায় আশ্রয় নিতে নিঃসংকোচ । সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে দু'কড়িতে বিক্রি হতে তাদের বাধা নেই । তবু তারা ইসলাম বরদাস্ত করতে রাজি নয় । যে মুফতি, মুহাদ্দিস, ইমাম-খতিবগণ না থাকলে ওদের জন্ম হতো আজন্ম পাপ, আজকের সামাজিক অবস্থান ও অস্তিত্ব হতো অকল্পনীয়, তাদেরই আজ তারা ফতোয়াবাজ বলে কুৎসা রটায় । এরা আসলে বুদ্ধিজীবী নয়, এরা বুদ্ধিবৃত্তিক গণিকা ।
সহস্র এনজিও এবং তাদের দেশীয় দোসর ধিকৃত বুদ্ধিজীবী ও স্খলিত রাজনীতিবিদরা যত চক্রান্তই করুক আলেম সমাজকে খামোশ রাখতে পারবে না । অতীতেও এদেশে সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে প্রচন্ড প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এই আলেমগণ । এখনও তারাই জেগে উঠেছে । তখনও আলেম সমাজকে প্রধান টার্গেট করা হয়েছিল । আজও আলেমগণই এনজিওদের প্রধান প্রতিপক্ষ । কিন্তু ওরা জানে না যে, যুগে যুগে দেশে দেশে আলেমগণ সাম্রাজ্যবাদীদের সকল ষড়যন্ত্রকে অবশেষে নস্যাৎ করেছে । এখনও তার ব্যতিক্রম হবে না ।
ফন্দিবাজ এনজিওদের তৎপরতা স্তব্ধ করে দিতে দেশে ইসলামী চিন্তাবিদ, ধর্মীয় নেতা ওলামা এবং দেশপ্রেমিক মানুষদের সংগঠিত হতে হবে । সেই সাথে মনে রাখতে হবে, এনজিওদের খুঁটি পোতা আছে রোম,লন্ডন, প্যারিস, কোপেনহেগেন, ব্রাসেলসের মাটিতে । সুতরাং তারাও হানবে নির্মম পাল্টা আঘাত । তবে ওদেত খুঁটি যত শক্তই হোক দেশপ্রেম আর ঈমানের তেজ তার থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী । আমাদের আরো মনে রাখতে হবে,এনজিওর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশের ক্ষয়িষ্ণু ইসলামি মূল্যবোধকে পুনরায় জাগরিত করতে হবে । একজন ব্যক্তি মানুষ হিসেবে প্রত্যেক মুসলমানের যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে তা পালনের জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে । অন্যথায় এসব ফেতনা সমাজে অনায়াসে প্রবেশ লাভ করবে যে কথা সকলকে জানিয়ে দিতে হবে । জাতির এই ক্রান্তিকালে সাম্রাজ্যবাদীদের অনুচর ও তাদের চক্রান্তকে উৎখাত করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক নেতৃত্ব দানের জন্য আলেমগণকে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণে অগ্রসর হতে হবে ।
═──────────────═