রক্তাক্ত জনপদ
হামাসের উপর ইসরাঈল ও আরাফাত সরকারের
অমানবিক নির্যাতনের করুণ দাস্তান
মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন
ইসরাঈলের দখলদার বাহিনী গত তিন বছর ধরে ফিলিস্তিনীদের উপর অবলীলায় এমন সব নিত্য নতুন নির্যাতন চালিয়ে আসছে, যা অত্যন্ত পরিকল্পিত। যেমনঃ গণহত্যা, গ্রেফতার, কয়েদীদের জীবন্ত দাফন করা, স্কুলের শিশুদেরকে হত্যা করা, মহিলা কয়েদীদের ইজ্জত নষ্ট করা এবং বন্দী ফিলিস্তিনীদের উপর নির্যাতনের নিত্যনতুন পন্থা আবিস্কার করা ইত্যাদি।
ফিলিস্তিনী মহিলাদের সম্ভ্রমহানী
ইদানিং ইসরাঈল ফিলিস্তিনীদের উপর নির্যাতনের নতুন একটি পন্থা আবিষ্কার করেছে। তা হলো গৃহ তল্লাশীর নামে মহিলাদের সম্ভ্রমহানী করা। সম্প্রতি ইসরাঈলী আনফার মিশন সেন্টার অফ হিউম্যান রাইটস হেবরনে ফিলিস্তিনীদের ঘরে ঘরে তল্লাশী করার সময় 'আইনের অজুহাতে নারী নির্যাতন' শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এ রিপোর্টে মাত্র সে সব ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যথারীতি যার তদন্ত নেওয়া হয়েছে, যার সাক্ষ্যসমূহ সম্পূর্ণ বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য। ১৯৯৬ সালের নভেম্বর- ডিসেম্বর মাসে হেবরনে এসব ঘটনা সংঘটিত হয়।
রিপোর্টে নির্যাতনের একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, ইসরাঈলী সৈন্যরা বর্ডার পুলিশের ইউনিফর্ম পরিহিত ছিল। ঘরে ঘরে তল্লাশী চালানোর সময় ২০ থেকে ৬৯ বছর বয়সের ১৫ জন ফিলিস্তিনী মহিলাকে পুলিশ জনসমক্ষে মাথা থেকে পা পর্যন্ত জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ফেলে। অপর এক ঘটনায় একজন পুরুষকেও বিবস্ত্র করা হয়।
রিপোর্টের ভাষ্যমতে, মহিলাদেরকে তাদের আত্মীয়-স্বজন, আপন ছেলে-সন্তান ও অন্যান্য শিশু-কিশোরদের চোখের সামনে বন্দুকের নলের মুখে দেহের কাপড় খুলতে বাধ্য করে। দু জায়গায় মহিলাদেরকে পুরুষ সৈন্যদের সামনে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করা হয়। রিপোর্টে বর্ণিত কয়েকটি ঘটনা নিম্নরূপ-
১৯৯৬ সালের ৯ নভেম্বর মঙ্গলবার সকাল আটটার সময় ৯ জন সৈন্য ৩২ বছর বয়স্ক আয়তাফ আলী আবু মিয়ালার এপার্টমেন্টে প্রবেশ করে এবং ডজন খানেক সৈন্য বাড়িটি ঘিরে রাখে। সৈন্যরা বেডরুমের দরজায় করাঘাত করলে আয়তাফ আলী দরজা খুলে দেন। তিনি বলেন, একজন মহিলা সৈন্য আমার মাথা থেকে টান দিয়ে রুমালটি ফেলে দেয়। মাথার চুল ধরে টানাটানি করে এবং হাত বেঁধে অন্য কামরায় নিয়ে ফেলে রাখে। কয়েক মিনিট পর সৈন্যটি আবার এসে হাত খুলে দিয়ে আমাকে আদেশ দিল, কাপড় খোল। আমি তখন তার সামনে সম্পূর্ণ নিরুপায় হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। এবার লোকটি পুনরায় আমার হাত বেঁধে দিয়ে আমাকে বসতে বলল। আমি বসে পড়লাম। আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত লাঠি দ্বারা সে বেদম প্রহার করে। আমি তাকে ঠেকানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ফল হলো বিপরীত এবং সে আমার উপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র তাক করে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ভয়ে আমি চীৎকার করছিলাম। আমি তার কাছে অনুনয়-বিনয় করে আবেদন করলাম যাতে সে আমাকে প্রহার করা বন্ধ করে। আমি তাকে এ-ও জানালাম যে, আমি গর্ভবতী। কিন্তু তার মনে এতটুকু দয়ারও উদ্রেক হলো না।
অত্যাচারের এমনি নির্মম ঘটনা জাদা আওনী আবু মিয়ালার। তার বয়স ২৫ বছর। তিনি বিবাহিত এবং ৪ সন্তানের মা। তিনি বলেন, ইসরাঈলী সৈন্যরা জোর পূর্বক আমার ঘরে ঢুকে পড়ে। তারা আমার এবং আমার ভাইদের সন্তানদেরকে একত্রিত করে আমার ঘরে আসে। অতঃপর তারা ছুরি দ্বারা আমার সোফার কাপড় কাটতে শুরু করে। আমি বাধা দিয়ে বললাম, আপনারা আমার ফার্নিচার নষ্ট করছেন কেন? ঠিক এ সময়ে একজন মহিলা সৈন্য ভিতরে প্রবেশ করে আমাকে বেডরুমে যেতে বলে। তার কথামত আমি বেডরুমে প্রবেশ করি। এবার মহিলা আমাকে বিবস্ত্র হতে বলে। এমনকি ব্রা এবং আন্ডার প্যান্টও রাখা যাবেনা বলে জানায়। আমি চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে লাগলাম। আমার ছোট একটি ছেলে বেডরুমে আমার সঙ্গে ছিল। ও আমাকে বিবস্ত্র দেখে চিৎকার দিতে শুরু করে। মহিলা আমাকে এ অবস্থায় পাঁচ মিনিট পর্যন্ত চেক করতে থাকে।
আবু মিয়ালা বলেন, এ ঘটনায় সৈন্যরা আমার বিছানার গদিও তুলে ফেলে দেয়। তার মধ্যে সেই গদিটিও ছিল, যাতে আমার দু’বছরের শিশু সন্তান ঘুমাতো। তারা আমার খাদ্যদ্রব্য এবং অন্যান্য জিনিসপত্র তছনছ করে ফেলে।
কাওকাব কাসেমী বলেন, নভেম্বর মাসের ২৭ তারিখে আমি আমার ঘরের তৃতীয় তলায় শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ দরজায় প্রচন্ড করাঘাতের শব্দ শুনতে পেলাম। নীচে এসে দরজা খুলে দেখতে পেলাম, দরজার সামনে ১২ জন সৈন্য এবং কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খোলামাত্র তারা বাড়ির সব কটি তলায় ঢুকে পড়ে এবং প্রতিটি কামরায় তল্লাশী নিতে শুরু করে। বাসার গদি, চেয়ার-টেবিল, বই-পুস্তক ইত্যাদি সবকিছু তারা মেঝেয় ছুড়ে ফেলে। এক ব্যক্তি-যাকে তার সঙ্গী ক্যাপ্টেন যচি বলে ডাকছিল-দু’জন মহিলা পুলিশসহ আমাকে অন্য একটি কামরায় যেতে বলল। মহিলা পুলিশ দু'জন আমাকে পোষাক খুলে উলঙ্গ হতে বলল। আমি মাথা থেকে রুমাল সরিয়ে ফেললাম। তারা অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে চীৎকার করে বলল, ওতে হবে না সমস্ত কাপড় খুলতে হবে। আমি তাদের আদেশ পালন করলাম। এখন আমার পরনে শুধু ব্রা আর আন্ডার প্যান্ট। তারা আমাকে এগুলোও খুলতে বলল। আমি বললাম ব্রা আর আন্ডার প্যান্টের মধ্যে আমি কি লুকিয়ে রাখতে পারি বলুন? কিন্তু তারা তা মানল না। আমার ব্রা এবং আন্ডার প্যান্টও তারা খুলিয়ে ছাড়ল। এবার যখন তারা নিশ্চিত হলো যে, আমার কাছে কিছু নেই, তখন তারা আমাকে কাপড় পরার অনুমতি দিল। কাওকাব কাসেমী আরো বলেন, আমার এক বিবাহিতা ডাক্তার মেয়ে তার স্বামীসহ আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। আমার মত তাকেও সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে তল্লাশী চালানো হয়। আমার পুত্রবধু আয়মানের সঙ্গেও একই আচরণ করা হয়। ১৮ বছর বয়স্ক আয়মান সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। হতভাগিনী উলঙ্গ হতে অস্বীকার করলে দুই মহিলা সৈন্য ধরে জোরপূর্বক তাকে বিবস্ত্র করে ফেলে। আয়মানের ভাষ্য “আমাকে তারা সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করার পর আমার পেটে আঘাত করে। এক মহিলা সৈন্য পার্শ্বের জানালা খুলে দেয়, যাতে আশেপাশের মানুষ আমাকে এই লজ্জাজনক অবস্থায় দেখতে পায়। খোলা জানালার সামনে তারা আমাকে চেক করতে শুরু করে। আমি চিৎকার করে বললাম, জানালা বন্ধ করে দাও। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হলো না। পাঁচ মিনিট পর্যন্ত তারা আমাকে চেক করতে থাকে।”
ফিলিস্তীনের ইয়াতীম শিশু
একটি শিশুর সম্পর্ক যে জাতি বা যে দেশের সঙ্গেই থাকুক না কেন, আজীবন-ই তারা নিম্পাপ ও স্নেহের পাত্র হিসেবে বিবেচিত। পিতৃহারা ইয়াতীম শিশুর সঙ্গে সব ধর্মই সমবেদনা ও সহানুভূতির শিক্ষা দেয়। কিন্তু ফেরাউনের হাতে নির্যাতন ভোগকারী জাতি ইসরাঈলের বর্তমান বংশধর ইহুদীগোষ্ঠী ফেরআউন অপেক্ষাও বড় জালিমের পরিচয় দিচ্ছে। ১৯৯৬ সালের ৮ই ডিসেম্বর ইসরাঈল সরকার মানবিক সহানুভূতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ইয়াতিম শিশুদের জন্য সাহায্যে নিয়োজিত সংস্থা ‘আরফান রিলিফ সোসাইটি’ এর অফিসটি বন্ধ করে দিয়েছে। এই সংস্থাটি পশ্চিমতীর এবং গাজার মূল ভূখন্ডে হাজার হাজার ইয়াতীম শিশুর খাদ্য এবং অন্যান্য জরুরী জিনিসপত্র সরবরাহ করত। অফিসটি বন্ধ করার সময় ইসরাঈলী পুলিশ বলেছে যে, এ সংস্থা হামাসের বন্দীদের জন্য অর্থ যোগান দেয় এবং হামাসের মুজাহিদদের ইয়াতীম ও বিধবাদের সাহায্য করে থাকে, যার ফলে হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মতৎপরতায় শক্তি লাভ করে থাকে।
সংস্থার মুখপাত্র মুনীর আবুল হায়েজাহ বলেন, ইসরাঈলী পুলিশের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বন্দীদের জন্য অর্থ সরবরাহের সাথে আমাদের কোনো-ই সম্পর্ক ছিলনা। তিনি আরো বলেন, আমাদের সংস্থা ইয়াতীমদের সাহায্য দেয়ার সময় তাদের পিতা-মাতার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করতো না। কারণ, ইয়াতীমের একমাত্র পরিচয় সে ইয়াতীম। ইয়াতীমের সাহায্য করা একটি মানবিক দায়িত্ব, মুসলমান এবং মানুষ হিসেবে এটা আমাদের অন্যতম দ্বীনি কর্তব্য। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরাঈলের এই পদক্ষেপকে বর্বরোচিত আখ্যা দিয়ে ইসরাঈলী শাসকগোষ্ঠীর কাছে জানতে চেয়েছেন যে, তারা নিজেরা যেখানে ইহুদী ইয়াতীম বিধবাদেরকে সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা করছে, সেখানে মুসলমান শিশু- বিধবাদের এই সামান্য আটা-পানিতে তোমাদের এতে আপত্তি কেন?
ইসরাঈলী সুপ্রীম কোটের অমানবিক সিদ্ধান্ত
ইসরাঈলী সুপ্রীম কোর্ট হামাসের সামরিক নেতা হাসান সালামার সেই আবদেনটি গত ১১ ডিসেম্বর খারিজ করে দিয়েছে, যা তিনি তার গ্রেফতারীর পর ১৯৯৬ সালের মে মাসে দাখিল করেছিলেন, তাতে উচ্চ আদালতের কাছে আপীল করা হয়েছিল যে, ইসরাঈলের গোপন সংস্থা সিনবেথকে যেন দৈহিক নির্যাতন করা থেকে বিরত রাখা হয়। এই সিদ্ধান্তে ইসরাঈলী সুপ্রীম কোর্ট ইসরাঈলের এজেন্টদেরকে নির্যাতনের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেছে।
মুহাম্মদ ফার্খ এর উপর অমানবিক নির্যাতন
মুহাম্মদ ফার্খ হেবরনের নিকটবর্তী একটি গ্রামের বাসিন্দা। কয়েক মাস পর্যন্ত ইসরাঈলের এসকিলো জেলে তার উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। রিমান্ডের সময় তাকে ছাদের সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং হাত দুটো পিঠের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। প্রতিদিন দশ ঘন্টা তাকে অতি সংকীর্ণ ও অন্ধকার একটি সেলে আবদ্ধ করে রাখা হয়, যাতে হাওয়া-বাতাস চলাচলের কোনোই ব্যবস্থা নেই। মুহাম্মদ ফার্খ সেই ২৪ জন ফিলিস্তিনীর একজন, যাদেরকে ১৯৯৬ সালের ৫ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয়েছিল। ফার্খ একজন হৃদরোগী। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার উপর নির্যাতনের স্টীমরোলার চালানো হচ্ছে।
ইসরাঈলী জেলে একশ'রও বেশী ফিলিস্তিনী কয়েদী খুন
ফিলিস্তিনী কয়েদীদের ক্লাবের রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গেছে যে, ১৯৬৭ থেকে এ যাবত ইসরাঈলের বিভিন্ন জেলে একশ’রও বেশী ফিলিস্তিনী কয়েদী মারা গেছে। দৈহিক নির্যাতন, চিকিৎসাহীনতা এবং পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে এসব মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে। সর্বশেষ মৃত্যুটি ঘটেছে ইসলামিক জিহাদের বিশিষ্ট নেতা রিয়াদ ওদওয়ানের, গত জানুয়ারী মাসের ১২ তারিখে। তিনি যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করছিলেন। চিকিৎসার অভাবে তার মৃত্যু হয়।
ফিলিস্তিনী শিশুদের উপর ইসরাঈলী নির্যাতন সম্পর্কে সুইডেনের রিপোর্ট
সুইডিশ মানবাধিকার সংস্থা ফিলিস্তিনী শিশুদের উপর ইসরাঈলী নির্যাতন সম্পর্কে এক হাজার পৃষ্ঠা ব্যাপী একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ইন্তেফাদা আন্দোলনের প্রথম দু’বছরে ষোল বছরের কম বয়সী ১৫৯ টি শিশুকে শহীদ করা হয়েছে। রাইফেলের বাট, কাঁদানে গ্যাসের গুলি এবং লাঠি দ্বারা প্রহার করা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার শিশুকে। ইন্তেফাদা শুরুর প্রথম বছরই ২১টি শিশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এই রিপোর্ট সংগ্রহকারী দলটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে সাক্ষ্য প্রমাণ এবং দলীল দস্তাবেজসহ দাবি করেছেন যে, শিশুদেরকে নিজ নিজ ঘরে গুলির নিশানা বানানো হয়েছে। অলি-গলিতে খেলাধুলা করার সময়, দোকানপাটে যাওয়ার পথে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। রিপোর্ট মোতাবেক ১৫৯ টি ফিলিস্তিনী শহীদ শিশুর মধ্যে ৯৪ শতাংশকে ইসরাঈলী সৈন্যরা সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে, ৩৯ শতাংশ মারা গেছে আহত হওয়ার পর সময়মত উপযুক্ত চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে। ৫০ হাজার আহত ফিলিস্তিনী শিশুদের মধ্যে ৪৭ শতাংশকে প্রহার করে, ২১ শতাংশকে কাঁদানে গ্যাসের গুলি ছুড়ে এবং ২২ শতাংশকে রাইফেলের গুলি করে আহত করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনীদের উপর আরাফাত সরকারের নির্যাতন
নির্যাতনের বেলায় আরাফাত সরকারও ইসরাঈলীদের থেকে কোনোক্রমে পিছিয়ে নেই। হয়তোবা অনেকটা অগ্রসর-ই হবে। গাসসান দেব গাজার মূল ভূখন্ডের বাসিন্দা এবং আরাফাত সরকারের জেলের স্বাদ সম্পর্কে বেশ অভিজ্ঞ। তার বক্তব্য হলো, সাদা পোষাক পরিহিত কয়েকজন লোক আমাকে গ্রেফতার করতে আসে। আমি তখন ঘরে ছিলাম না। পরদিন আবারো আসে এবং আমাকে ধরে ফেলে। আমার হাত দুটো পিঠের সঙ্গে বেঁধে আমাকে নিয়ে যায়। একটানা ছয়দিন পর্যন্ত আমাকে এভাবে ফেলে রাখা হয়। তদন্তের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা তারা আমার হাত দুটো বেঁধে উপরে তুলে রাখত। তিন দিন তিন রাত তো লাগাতার এভাবে আমাকে দাড় করিয়ে রাখা হয়। আমাকে দিয়ে তারা এমন এমন ব্যায়াম করাতো যে, আমার কষ্টের সীমা থাকতো না, সব কয়েদীদের সাথে একই আচরণ করা হতো। রাতে এতটুকু ঘুমাতেও দিত না। গাসসান দেব আরও বলেন, মাথার উপর ভারী থলে বেঁধে হাত দুটো রশি দিয়ে বেঁধে দু’জন লোক আমাকে ধরে রাখতো যাতে আমি নড়াচড়া করতে না পারি। অতঃপর তৃতীয় আরেক ব্যক্তি আমার সমস্ত দেহে বেদম প্রহার করতো, কখনো বিদ্যুতের শক দেওয়া হতো এবং দেহের ক্ষতস্থান সমূহে লেবুর রস ঢেলে দেওয়া হতো। তদন্তের সময় জিজ্ঞাসা করা হতো যে, হামাসের সঙ্গে তোর কী সম্পর্ক বল? ইন্তেফাদায় কী কাজ করিস? মসজিদে যাস কেন? মসজিদে কি সূরা মুলুক পড়িস ইত্যাদি ইত্যাদি।
কারেন্ট ইন্টার ন্যাশনাল পত্রিকার সাম্প্রতিক একটি সংখ্যায় ৩২ বছর বয়স্ক ইউসুফ বাবারও একটি ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। ইউসুফ বাবা পশ্চিমতীরের নাবলুস শহরের একজন ব্যবসায়ী ব্যক্তি। ইয়াসির আরফাতের পুলিশ গ্রেফতার করার পর তার উপর এত অমানুষিক নির্যাতন চালায় যে, এক পর্যায়ে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। ইউসুফ বাবাকে নির্যাতনের মাধ্যমে শহীদ করার ঘটনাটি আরাফাতের আইন মন্ত্রীও স্বীকার করেছেন।
বেদার ডাইজেস্ট অবলম্বনে
স্বাস্থ্য কথা
শিশুর পরিচর্যায় ১০টি প্রয়োজনীয় উপদেশ
আপনার বাচ্চার বোতলে খাওয়ার বয়স হয়েছে? তাহলে এই ১০টি বিধি মেনে চলুন।
১। বাচ্চার খাবার বানানোর আগে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
২। একটি পরিষ্কার বড় পাত্রে খাবার পানি ভরে গরম করতে দিন।
৩। বোতল, বোতলের নিপল, ঢাকনি, রিং, ফানেল গরম সাবান দিয়ে পানিতে ভাল করে রগড়ে ধুয়ে নিন।
৪। গরম হতে থাকা পানিতে বোতল, নিপল সব কিছু ফেলে দিন, যাতে বোতলটি পানিতে ডুবে যায়, এভাবে ফোটাতে থাকুন।
৫। দশ মিনিট বেশ করে ফোটবার পর বোতল, নিপল এসব পরিষ্কার চিমটা দিয়ে ধুয়ে তুলে নিন। রাখবেনও পরিষ্কার জায়গায়।
৬। পরিষ্কার পাত্রে পানি ফুটিয়ে তা দিয়েই শিশুখাদ্য তৈরী করবেন।
৭। বোতলের মুখে ঢাকনি আটকে ভাল করে ঝাকান, যাতে পাউডার ও পানি ভালভাবে মিশে যায়, ডেলা না থাকে। নিয়মের বেশী গরম পানি দিলে শিশুর স্বাস্থ্যের পক্ষে তা ক্ষতিকর হতে পারে।
৮। বোতলের নিপলে মুখ দিয়ে শিশু খাবে। তাই সেখানটায় হাত ছোয়াবেন না।
৯। খাওয়ানো হলে বোতল খুব ভাল করে ধুয়ে রাখবেন, যাতে কিছুই না লেগে থাকে।
১০। উদ্বৃত্ত দুধ ফেলে দেবেন। কখনোই পরে তা খাওয়াবেন না।