‘নিরপেক্ষ’ শব্দের অর্থ কোন পক্ষে নয়। ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ অর্থ- ‘কোন ধর্মের পক্ষে নয়’। অর্থাৎ, সমস্ত ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক বর্জিত।
“Seculaism" এমন একটি মতবাদ, যার মূলকথা হচ্ছে- রাষ্ট্রনীতি, শিক্ষা প্রভৃতি ধর্মীয় শাসন থেকে মুক্ত থাকতে হবে। অর্থাৎ- ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ [লা-দ্বীনী][ধর্মহীনতা]র সমার্থবোধক। ধর্মনরপেক্ষতাবাদ সেই বিশ্বাসকে ধারণ করে, যাতে বলা হয়: মানুষের কর্মকাণ্ড এবং সিদ্ধান্তগুলো- বিশেষত রাজনীতিক সিদ্ধান্তগুলো- কোনো ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে না।


ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রীয় জীবনেও হতে পারে, ব্যক্তি-কেন্দ্রিকও হতে পারে।

রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মনিরপেক্ষতা
কোন রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার অর্থ- তার শাসনব্যবস্থা ধর্মের আওতামুক্ত। ধর্মের সাথে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন ও বিধি-বিধানের কোন সম্পর্ক নেই এবং এসবের সাথে ধর্মেরও কোন সম্পর্ক নেই। ধর্ম প্রত্যেক ব্যক্তির পারিবারিক জীবনের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকবে আর রাষ্ট্র পরিচালিত হবে জনগণ ও তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অভিব্যক্তির ভিত্তিতে রচিত আইন-কানুন দিয়ে। ধর্মকে রাষ্ট্রীয় জীবনে টেনে আনা যাবে না। রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। রাষ্ট্রীয় শাসন-ব্যবস্থা কিংবা তার কোন বিধান ইসলাম ধর্মের অনুযায়ী হওয়া ধর্মনিরক্ষতাবাদের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। “ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার” শ্লোগানটি দ্বারা এটিই উদ্দেশ্য।


ব্যক্তিকেন্দ্রিক ধর্মনিরপেক্ষতা
কোন ব্যক্তি ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার অর্থ- সে কোন ধর্মের অনুসারী নয়। তার জীবন ধর্মের আওতামুক্ত। সে ইসলাম ধর্মের অনুসারিও নয়, অন্য কোন ধর্মেরও নয়।


উল্লেখ্য, ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ এই নয় যে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, রাষ্ট্র ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চলবে, তবে অন্যান্য ধর্মও তাতে শান্তিতে পালন করা যাবে- যেমনটা কেউ কেউ মনে করে থাকেন। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রবর্তক ও ধারক-বাহকদের নিকট ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ ঐটিই যা পূর্বে বলা হয়েছে।


ধর্মনিরপেক্ষতা কুফর

মানব জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রে- রাষ্ট্রীয় জীবনে হোক, কি ব্যক্তি জীবনে- ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ সুস্পষ্ট কুফর। এ হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে কাফেরদের আবিস্কৃত নতুন মতবাদসমূহের একটি। দ্বীন ইসলামে এর কোন সুযোগ নেই। জীবনের সর্বক্ষেত্র: ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবন- সর্বত্র অবশ্যই আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীন ও শরীয়ত পরিচালকের আসনে থাকতে হবে। মানবজীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র গ্রহণযোগ্য আদর্শ ইসলামী শরীয়ত। জীবনের কোন ক্ষেত্রে আল্লাহর শরীয়ত গ্রহণ না করা, নিজেকে শরীয়তের আওতাবাহির্ভূত ঘোষণা করা সর্বাবস্থায় কুফর- চাই এরপর অন্য কোন আদর্শ-মতবাদ গ্রহণ করুক বা না করুক।
উল্লেখ্য, শরীয়তে কাফেরদের যতটুকু অধিকার দেয়া আছে, ততটুকু অধিকার দেয়া আমরা জরুরী মনে করি।


যারা ধর্মনিরপক্ষতাবাদের সমর্থক, প্রচারক, এর জন্য লড়াই করে তারা কাফের। কারণ তারা আল্লাহর দ্বীন প্রত্যাখ্যান করে তার বিপরীতে ভিন্ন মতবাদকে বেছে নিয়েছে।


ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত: ইয়াহুদ-নাসারা ও মক্কার মুশরেকরা
ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি, যে নিজেকে ধর্মের আওতাবহির্ভূত ঘোষণা করে- সে হয়তো মক্কার মুশরেকদের মতো, নয়তো ইয়াহুদ-নাসাররা মতো।

ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি যদি ইসলামের সত্যতায় বিশ্বাসী হয়, তাহলে সে ঐসব ইয়াহুদ-নাসারার মতো, যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্য নবী জেনেও ইসলাম গ্রহণ করেনি।

আর যদি ইসলামের সত্যতায় বিশ্বাসী না হয়, তাহলে সে মক্কার মুশরিকদের ন্যায়, যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্য নবী বলে বিশ্বাসও করতো না, তাঁর প্রতি ঈমানও রাখতো না। অতএব, ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি ইসলামের সত্যতায় বিশ্বাসী হোক বা না হোক- সর্বাবস্থায় কাফের। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাজত করুন!