JustPaste.it

পাঠকের কলাম

 

একটি  শোকাবহ দিনঃ পহেলা এপ্রিল

 

আমরা নতুন প্রজন্মের অনেকেই হয়ত জানিনা, এপ্রিল ফুল কী? আমরা না জেনে অনেকেই এপ্রিল মাসের প্রথম দিনে ভূয়ো টেলিফোন, উড়োচিঠি ইত্যাদি বিভিন্ন রকম প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে রঙ-তামাশায় মেতে উঠি। অথচ, এ দিনটি দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ জাতি মুসলমানদের জন্য এক মর্মান্তিক, হৃদয় বিদারক, রক্তাক্ত ও শোকাবহ দিন। 
স্পেনে আটশতক থেকে পনের শতক পর্যন্ত প্রায় ৭০০ বৎসর যাবৎ ইসলামী শাসন চলছিল। ইউরোপিয় রেনেসার মূলেও ছিল স্পেনের মুসলিম শাসনের ঐতিহাসিক প্রভাব। সে সময়কার স্পেনের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে বর্তমান আধুনিক ইউরোপের বহু মনিষী জ্ঞান-বিজ্ঞানে দীক্ষা লাভ করেছিলেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানে শিক্ষা-দীক্ষায় তখন মুসলমানগণ ছিলেন অত্যন্ত উন্নত। সে জাতি একদিন আদর্শচ্যুত হয়ে পড়ে। অতঃপর দেখা দিল তাদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্ধ, কলহ-কোন্দল। আর এ অনৈক্যের ফলে শুরু হল স্পেনের মুসলিম পতনের যুগ, এবং সে যুগে যে জাতি মুসলমানদের কাছ থেকে জ্ঞান বিজ্ঞানের দীপ্ত আলোকশিখায় আলোকিত হয়েছিল, তারাই নানাভাবে নিরীহ মুসলমানদের উপর নির্যাতন শুরু করেছিল।
খৃষ্টানদের এ নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেক মুসলমান দেশ ছেড়ে বিভিন্ন দিকে পালাতে শুরুকরে। ১৪৯২ খৃঃ এর ১লা এপ্রিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স সহ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের খৃষ্টান শক্তিসমূহ স্পেনের গ্রানাডা দখলের উদ্দেশ্যে রানী ইসাবেলার নেতৃত্বে আক্রমণ শুরু করে ও গ্রানাডা দখল করে নেয়। তখন নির্যাতিত মুসলমানদেরকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে ঘোষণা করা হয়েছিল নিরস্ত্র হয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করার জন্য। মুসলিম সেনাপতি খৃষ্টানদের এ প্রস্তাবে সম্মত হয়ে গৃহে প্রবেশ করেন। কিন্তু খৃষ্টানরা নিরাপত্তা দানের পরিবর্তে মুসলমানদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সহজ সরল মুসলমানগণ যে সব গৃহে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন ঐ সব ঘরে আগুণ লাগিয়ে দেয়া হয়। যখন আগুনের লেলিহান অগ্নিশিখা দাউ দাউ করে জ্বলছিল, আর্তমানবতার করুণ চিৎকারে যখন পৃথিবীর আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছিল, তখনই ঐ সমস্ত বিশ্বাসঘাতক খুষ্টানেরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছিল বিপুল আনন্দে। আজও পাশ্চাত্য দেশসমূহ ও তাদের সহযোগীরা এপ্রিল মাসের প্রথমদিনকে “এপ্রিল ফুল দিবস" বা এপ্রিল মাসের বোকাদিন হিসাবে উদযাপন করে থাকে। এ হিসাবে এ দিনই তারা তাদের আপন জনদের সাথে বিভিন্ন রকম প্রতারণা করে আনন্দ উপভোগ করে থাকে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বিষয়টির আসল রহস্য না বুঝে আমাদের অনেক মুসলমান যুবক-যুবতী বোকার মত এপ্রিল ফুল পালন করে থাকে। এটা নিতান্তই দুর্ভাগ্য ও আত্মবিস্মৃতির নামান্তর। 

-মোহাঃ এনামুল হক 

 

হে আল্লাহ! বিজাতীয় ষড়যন্ত্রের হাত থেকে আমাদের নারীদের তুমি রক্ষা কর

 

গত ঈদের ছুটিতে মামার বাড়ি বেড়াতে গেলাম। দরজায় দাড়িয়ে কয়েকবার কলিং বেল টেপার পর মামা নিজে এসে দরজা খুললেন । মামাকে দরজা খুলতে দেখে আমি একরকম অবাক হলাম যে, দরজা খোলার জন্য মামা নিজে কেন! অন্য কেউ কি বাসায় নেই!
কুশল বিনিময়ের পর জিজ্ঞেস করলাম, মামা! বাসায় কি কেউ নেই? মামা খানিকটা কৃত্রিম হাসি হেসে বললেন, আধুনিক যুগ তো............তাছাড়া কয়েক বছর ঢাকায় বাস করে নারীর অধিকার আর স্বাধীনতা বেশ ভালোই রপ্ত করে এসেছি। বুঝলে ভাগ্নে? 
আমি কিছুই বুঝলাম না। কেবল মামার। মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম। 
এবার অনেকটা গম্ভীর হয়ে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মামা বলে উঠলেন, আল্লাহ! বিজাতীয় ষড়যন্ত্রের হাত থেকে তুমি আমাদের নারীদের রক্ষা কর! 
অতঃপর শান্ত হয়ে বললেন, তোমার মামী বাচ্চাদের নিয়ে বিকেলে ঈদের বাজার করার জন্য মার্কেটে গেছেন। জিজ্ঞেস করলাম, মামী কেন, মার্কেট করতে আপনি যেতে পারলেন না? দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মামা বললেন, এ হচ্ছে আধুনিকতা, নারী স্বাধীনতা, ভাগ্নে! আমার মার্কেট কি আর এখন ওদের পছন্দ হয়? বেপর্দায় মার্কেট করতে না পারলে নাকি এখন নারীদের অধিকার পূর্ণ হয় না। জনি (১৬) পপি (১৮) এখনও স্কুল থেকে ফিরেনি। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিদিনই ওরা বেশ রাত করে বাসায় ফেরে । মিতু একটু আগে তার এক বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাইরে গেল । 
মামাকে আমি আর কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারলমা না।। 
একজন একজন করে তাদের বাসায় ফিরতে রাত আটটা থেকে এগারটা বাজল। ইতিমধ্যে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। ঠিক রাত তিনটার সময় মিউজিকের শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সজাগ হয়ে অনুমান করলাম, মিতু-সিতুর রুমে ডিস চলছে। সকাল দশটায় বিদায়ের সময় দেখলাম, সকলেই গভীর ঘুমে অচেতন। জেগে আছেন কেবল মামা একা ।
আজ এ চিত্র শুধু আমার মামার পরিবারে নয়। শহরের নব্বই ভাগ পরিবারের ঠিক একই অবস্থা। যে দিকেই তাকাই চোখের সামনে অর্ধ উলঙ্গ নারী। সর্বত্র যেন উগ্র আধুনিকতার জয়জয়কার। মার্কেটে শুধু ক্রেতাই নয়-দোকানীও এখন নারী, যাদের বয়স ১৬ থেকে চব্বিশের মধ্যে। এ-ই যদি হয় সভ্যতা, তবে অসভ্যতা কোনটাকে বলব? এর জন্য দায়ী কে? আমার নিরিহ মামা, নাকি দেশের শাসন ব্যবস্থা?
কেউ হয়ত বলতে পারেন, এসব তো পরিবারিক ও ব্যক্তিগত বিষয়। সরকার এ সব নিয়ন্ত্রণ করবে কিভাবে? আমি বলব, সমাজের এ অধঃপতনের জন্য দেশের শাসকগোষ্ঠীই দায়ী, চরিত্রহীনতার মাল-মসলা জোগান দিয়ে দেশের সরকার-ই জাতিকে অধঃপতনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ডিশ এন্টিনা কি আমেরিকা থেকে আমার মামা আমদানী করেছেন? টেলিভিশনের বেহায়াপনা প্রচার কি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরের বিষয়? অফিস আদালতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাও কি যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার?
সবশেষে বলব, যতদিন না দেশের নেতা-নেত্রী আর শাসকগোষ্ঠীর এ ব্যাপারে শুভবুদ্ধির উদয় না হবে, যতদিন না ইসলামী জীবন ব্যবস্থা কায়েম করে সমাজ থেকে এসব বেহায়াপনা দূর করা না হবে, ততদিন পর্যন্ত ইয়াসমীন আর সীমা রানীদের শ্লীলতাহানী আর নির্মম হত্যার ঘটনা কেউ ঠেকাতে পারবে না। 

-জাহাঙ্গীর আলম জিম 

 

তরুণদেরকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে

 

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যুগে যুগে ইসলামের যত উত্থান সংঘটিত হয়েছে, তার সবগুলোর পেছনে রয়েছে। মুসলমান তরুণ-যুবকদের দুঃসাহসিক ভূমিকা রয়েছে। সে গুলোর নেপথ্যে তাদের রক্তঝরা সংগ্রাম। তরুণরা যখন তাদের অদম্য অভিযান চালিয়েছে তখনই শত্রুপক্ষের বেঈমান মুনাফিকরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে কোন মতে জান বাঁচিয়েছে। 
ইসলামের ইতিহাসের স্বর্ণপাতায় এখনও এমন বহু তরুণ যুবকের নাম ঝলমল করছে, যারা বিভিন্ন সময় তাদের সংগ্রাম চালিয়ে ইসলামের উত্থান সংঘটিত করেছিলেন, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ইসলামের সুবাতাস সারা পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছিল। তেমনি একজন তরুণ বীর হলেন মুহাম্মদ বিন কাসিম (রহঃ)। তিনি সিন্ধু প্রদেশের রাজা দাহিরকে পরাজিত করে এই ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের বিজয় সূচনা করেন। অথচ তখন তার বয়স ছিল মাত্র সতেরো বছর।
তেমনি আরেকজন তরুণ বীর হলেন ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী এই সাহসী বীর ১২০১ খৃঃ বা ১২০৪ খৃঃ হিন্দুরাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে নদীয়া ও লক্ষাবতী জয় করে এই বাংলার জমীনে সর্বপ্রথম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। মুতার যুদ্ধের বীর সেনানী জাফর বিন তায়্যারও ছিলেন একজন যুবক। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ছিল মাত্র ৩৩ বছর। স্পেন বিজয়ী তারেক বিন যিয়াদ, মধ্য এশিয়ায় ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করে চীনে ইসলামের প্রবেশ দ্বার উন্মুক্তকারী কুতায়রা বিন মুসলিম, মরক্কো ও তিউনিস বিজয়ী বীর ওকবা বিন নাফে ফিহরী (রহঃ)। সবাই ছিলেন তরুণ। তাদের বীরত্ব গাঁথা আমাদের বুক গর্বে ফুলিয়ে দেয়। আমরা তাদেরই উত্তরসূরী। কিন্তু আমরা শুধু তাদের বীরত্ব গাঁথা স্মরণ করে আর গর্ব করেই কি তাদের স্বার্থক উত্তরসূরী হতে পারব? সত্যি আজ যদি আমরা তাদের স্বার্থক উত্তরসূরী হতে পারতাম, তাদের সুযোগ্য সন্তান হতে পারতাম, তাহলে ঐ কাপুরুষ বেঈমান কাফিররা আমাদেরকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলত না। আমাদেরকে ঐ অভিশপ্ত বিধর্মীদের ষ্টীম রোলারে নিষ্পেষিত হতে হতনা। কিন্তু বাস্তব কথা হচ্ছে, আমরা তাদের সুযোগ্য উত্তরসূরী নই। এ জন্যই আজ আমরা এত অবহেলিত, এত ধিকৃত, এত অত্যাচারিত। কিন্তু আমরা তো পরাজিত জাতি ছিলাম না। আমরা তো ছিলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ট জাতি। আমাদেরকে তো আল্লাহ তাআলা একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলাম দিয়ে সর্বোচ্চ সম্মানিত করেছেন। আমাদেরকে আল্লাহ তাআলা নিজেই শ্রেষ্ট জাতি ঘোষণা দিয়েছেন। তবে কেন আমরা এত পেছনে, এত পশ্চাৎপদ? কিন্তু না, আমাদের সেই হারিয়ে যাওয়া গৌরব, সেই শ্রেষ্ঠত্ব ফিরিয়ে আনতেই হবে। আর এই সংগ্রামে আমাদের মত তরুণ যুবকদেরকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। 

-মোঃ  মাহবুবুর রহমান,