JustPaste.it

হাকীমুল উম্মত থানিভী (রহঃ)-এর  মনোনীত কাহিনী

=============================================================  

 

এক নামাযী বিচারপতির কান্ড-

        এক বিচারক খুব পাকা নামাযী ছিলেন। ফজরের নামায পড়ে এশরাক পর্যন্ত দীর্ঘ সময় মুসল্লায় বসে অজিফা আদায় করতেন। অজিফা আদায় কালে পীর সাহেব কথাবার্তা বলা নিষেধ করে দেয়ার কারণে এওসময় সে কারো  সাথে কথা বলতেন  না । বাদী বিবাদীরা বসুযোগ বুঝে এ সময়েই ঘুষ নিয়ে তাঁর নিকট হাজির হতো। কিন্তু অজিফা আদ্যে ব্যাঘাত ঘটার ভয়ে মুখে কিছুই বলেতেন না। আঙ্গুল উচিয়ে ইংগিত করে বলতেন, দ'শত টাকা বা পাঁচশত টাকা দাও। ঘুষদাতারা সবনয়ে হুজুর একশতটাকা রেখে যাই! তিনি স্বক্রোধে দু আঙ্গুল তুলে ইংগিতে বলতেন, না দু'শত টাকাই দিতে হবে মোটেই কম হবে না। বাধ্য হয়ে লোকেরা তাই পেশ করতো। তিনি ইংগিতে বলতেন, টাকাগুলো মুসল্লার নিচে রেখে চলে যাও।

 

       ফায়দাঃ এ ধরনের কিছু কুৎসিত স্বভাবের লোকের নিকট অর্থই সব কিছু। অর্থই তাদের প্রধান আরাধ্য। অর্থের বেলায় হারাম আর হালাল বলতে কিছুই তারা চিনে না। টাকা চাই তা যে ভাবেই হোক।

 

কবি সওদা ও তাঁর স্ত্রীর কথা-

        কবি সওদার স্ত্রী খুব নামাযী ছিলেন। একদিন সওদা তিরস্কার ভরা কন্ঠে বললেন, বারে জান্নাত পাবো! কবি এবার ব্যাঙ্গ করে বলতে লাগলেন, হতচ্ছাড়া কোথাকার! বড্ড নির্বোধ তুই দেখছি। সেখানেও তুই অসহায় গরীব মোল্লা নিসকীনদের সাথে থাকবি। আর আমি থাকবো জাহান্নামে যেখানে ফেরাউন, হামান, শাদ্দাদ ও নমরুদদের মত বাদশহরা থাকবে।

 

        ফায়দাঃ সে হয়ত বিদ্রুপ করে একথা দ্বারা বুঝাতে চেয়েছে যে, ফকীর-মিসকীন-অসহায়রা জান্নাতে গিয়েও ফকীর মিসকিনই থাকবে। বাদশাহ আমীর ওমরারা জাহান্নামে গিয়েও বাদশাহ আমীর ওমারাই থাকবে। অথচ প্রকৃত সত্য এর সম্পূর্ণ বিপরীত। মিসকিন জান্নাতে গিয়ে বাদশাহ হবে আর জাহান্নামী বাদশাহদের ঠাই হবে দোযখের লেলিহান অগ্নিকুন্ডে। তারা হবে নিকৃষ্ট পশু গাধার চেয়েও মর্যাদাহীন। অসহনীয় যন্ত্রনাদায়ক জাহান্নাম হবে তাদের চিরস্থায়ী আবাস।

 

হাশরের ময়দানে একটি পুণ্যের তালাশে

        রেওয়াতে বর্ণিত হয়েছে, হাশরের ময়দানে জৈনক ব্যক্তির পাপ ও পূন্যের পাল্লা সমান সমান হয়ে যাবে। হুকুম হবে, পরিত্রাণ পেতে হলে যে কোন উপায়েই হোক পূন্যের পাল্লা অবশ্যই ভারী করতে হবে। শুধুমাত্র একটি পূণ্য হলেই তার পূণ্যের পাল্লা ভারী হয়ে যায়। নিতান্ত অসহায় বেচারা শুধুমাত্র একটি পূণ্যের জন্য হাসরের ময়দান চষে ফেলবে। ঘনিষ্ট-পরিচিত, অতিপ্রিয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয় থেকে নিয়ে যথা সম্ভব সকলের নিকট একটি পূণ্য ভিক্ষা চাইবে। কিন্তু সবাই তাঁকে সেদিন একটি পূণ্য দান করতে অপরাগতা প্রকাশ করবে। প্রত্যকেই নিজের চিন্তায় থাকবে ব্যাকুল-দিশেহারা। সকলেই ধারণা করবে, যদি আমিও আজ একটি পূণ্যের জন্য আটকে যাই! আমার হিসাবেও যদি একটি পূণ্য কম হয়ে যায়। সেদিন কউই তাঁকে একটি পূণ্য দ্বারা সাহায্য করবে না।

 

        ঘটনাক্রমে এক ব্যক্তির আমল মানায় রাশি রাশি পাপের মাঝে শুধুমাত্র একটি পূণ্য থাকবে। সে তাকে ডেকে বলবে, ভাই! তোমার অঢেল পূণ্য থাকা সত্ত্বেও তুমি জান্নাতে যেতে পারছো না। বিচারে তুমি আটকে গেছো। আর আমার তো রাশি রাশি পাপের মাঝে শুধু একটি মাত্র পূণ্য। আমিতো নিঃসন্দেহে দোজখে যাবো। আমার একটি পূণ্য আর কতোক্ষণ আমাকে রাশি রাশি পাপের ফলাফল থেকে রক্ষা করতে পারবে। একটি পূণ্য আজ আমার কোন কাজে আসছে না। ভাই এ পূণ্যটি তুমিই নিয়ে যাও। তোমার তো মাত্র একটি পুণ্যের আজ ভীষন প্রয়োজন। তাহলেই তুমি মুক্তি পেয়ে যাবে। এই একটি পূণ্যের কারণে তার পূণ্যের পাল্লা ভারী হয়ে যাবে এবং সে নাজাত পেয়ে যাবে।

 

        এবার আল্লাহ্‌র করুনা দেখেন, পাপে জর্জরিত যে ব্যক্তি তার পূণ্যটি অন্যকে দিয়েছিল তাকে ডাকা হবে। প্রশন করা হবে, তুমি পূণ্যটি কেওন তাকে দিয়ে দিলে? অথচ এখন তোমার পাপের রাশি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট রইল না। উত্তর সে বলবে, প্রভু হে রাব্বুল আলামীন! আমি ভেবে দেখলাম, লোকটির রাশি রাশি পূণ্য থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র একটি পূণ্য কম হওয়ার কারণে সে জান্নাতে যেতে পারছে না। আর আমার সঞ্চয়ে আছে  একটি মাত্র পূণ্য। তাই আঈনের দৃষ্টিতে আমি কিছুতেই ক্ষমা পেতে পারি না। একমাত্র এ আশায় আমার পূণ্যটি দিয়ে দিলাম, অন্ততঃ সে যেন আমার  এ নগন্য পূণ্যটির কারণে চির পরিত্রাণ পেয়ে যায়।

 

        তখন আল্লাহ্‌ তার বদাআন্যতার প্রতি খুশী হয়ে ঘোষণা করবেন, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। তাকে পরিত্রান দিয়েছি বিধান অনুযায়ী আর তোমাকে অনুগ্রহপূর্বক ক্ষমা করে দিলাম। তুমি তার প্রতি দয়া করেছ, তাই আমিও তোমার প্রতি দয়া করলাম।

 

       ফায়দাঃ পূণ্যের মূল্য কত তা কিয়ামতের দিবসেই বুঝা যাবে। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে শুধুমাত্র একটি পূণ্যের জন্য বহু মানুষ হিসাবে আটকে যাবে। একটি মাত্র পূণ্যের অভাবে তারা জাহান্নামে নিক্ষপিত হবে।

 

মসনবীর এক বন্য প্রাণীর গল্প

        আল্লামা জালালুদ্দীন রুমী স্বীয় কাব্যগ্রন্থ মসনবিতে বন্য প্রাণীদের এক চমৎকার কাহিনী বর্ণনা করেছেন। এক বনে বণ্য প্রাণীরা নির্বিঘ্নে দিন কাটাচ্ছিলো। হঠাৎ একদিন সে বনে এক সিংহ এসে উপস্থিত। যখন যাকে ইচ্ছা ধরে তাকে ছিরে টুকরো টুকরা করে খায়। সিংহের অত্যাচারে বন্য প্রাণিরা সব সদা সন্ত্রস্ত, আতংকিত। কার ওপর কখন বিপদ সয়ার হয়। তাই সব পসুরা মিলে পরামর্শ করে সিংহকে গিয়ে বললো, মহারাজ মহোদয়! আপনার প্রত্যেক দিনের খাবারের ব্যাবস্থা আমরাই করব। প্রতিদিন সকালে আমরাই আপনার খাদ্য স্বরূপ একটি প্রাণী পেশ করব। অনুগ্রহ পূর্বক আজ থেকে আমাদের আর হয়রানী করবেন না। সর্বসম্মতক্রমে প্রত্যক দিন লটারীতে যার নাম উঠতো তাকেই সিংহের উদর পূর্তির জন্য প্রেরণ  করা হতো। আর অন্য সকলে নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে দিনভর বনে ঘুরে বেড়াতে। একদিন লটারীতে খরগোশের নাম উঠে আসে। মৃত্যু তার' অবধারিত, তবুও মনে মনে সে এক আজব ফন্দি আটলো।

 

       দাঁত খিঁচে বললো, আজ আমি তার দফা ঠান্ডা করে ছাড়ব। ইচ্ছে করে বেশ বিলম্বে সে সিংহের উদরে আগুন জ্বলছে। খরগোশকে দেখেই হুঙ্কার ছেড়ে বললো, নাহ আজ থেকে আমি আবার সেই চিরাচরিত নিয়মে শিকার শুরু করব। যাকে সামনে পাব ধরে ঘাড় মটকাবো, ছিড়ে ফেড়ে খাব। তোমরাই তো তোমাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছো খরগোশ কাতর কন্ঠে বললো, আপনি বনের রাজা। সব আপনার ইচ্ছাধীন। তবে আমার একটি কথা আছে যা আমি আমার সকল প্রাণী বন্ধুদের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাতে এসেছি। কথাটি হলো, আগামীকাল থেকে আমরা আর আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবনা। কারণ, বনে আরেকটি অত্যন্ত শক্তিশালী সিংহ এসেছে। ইতিমধ্যেই সে পথিমধ্যে দাঁড়িয়ে আপনার আহার ছিনিয়ে নিয়েছে। ভোরেই আপনার আজকের আহারের জন্য এক খরগোশকে নিয়ে আসছিলাম। ওই সিংহ আমার হাত থেকে তাকে জোর পূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেল্লো। আমরা এখন অসহায়, যদি এমনি ঘটতে থাকে তবে আমরা কিভাবে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করব?

 

        একথা শুনে পশুর রাজা সিংহ মহোদয় ক্রোধান্বিত হয়ে হুঙ্কার দিয়ে বললো, কোথায় সেই হতভাগ্য। আমি তাকে আজ দেখে নিবো। খরগোশ বিনয়-ন্ম্র কন্ঠে বললো, হুজুর আমার সাথে চলুন, এক্ষুনি দেখিয়ে দিবো। খরগোশ সিংহকে একটি গভীর কুপ দেখিয়ে বললো, ঐ দেখুন ছিনিয়ে নেয়া খরগোশটি নিয়ে সিংহটি বসে আছে। সিংহ উঁকি দিয়ে কুপের সচ্ছ পানিতে নিজের ও খরগোশের প্রতিবিম্ব দেখতে পেয়ে ক্রোধানলে অধৈর্য্য হয়ে বিকট হুঙ্কার ছেড়ে তখনই কূপের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়লো। ব্যস, কিল্লা ফতে। খরগোশের আনন্দ এখন দেখে কে? লাফিয়ে লাফিয়ে সে অন্যান্য পশুদের এ সুসংবাদ পৌছিয়ে দেয়।

 

        ফায়দাঃ চিন্তা করে দেখুন সিংহ কতো মারাত্মক ভুল করেছে। সে যে তারই ছায়া প্রতিবিম্বের সাথে লড়াই করতে নেমেছে তা তার আক্কলে আসেনি। তাই তার ভাগ্যে ঘটলো এই নির্মম কুপোকাত।

 

এক শিশুর কাহিনী

        এক শিশু রুটি খাচ্ছিল। পানির ঘটিটি তার পাশেই ছিলো। ঘটনাক্রমে রুটির একটি পাশেই ছিলো। ঘটনাক্রমে রুটির একটি টুকরা ঘটির মধ্যে পড়ে যায়। শিশুটি উঁকি দিয়ে দেখে, তার মতই এক শিশু রুটি টুকরা হাতে ঘটির মধ্যে বসে আছে। অবুঝ শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে, আব্বু আব্বু! আমার রুটি নিয়ে গেছে, আমার রুটি নিয়ে গেছে। পিতা উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাস করলেন, তোমার রুটি কে নিয়েছে? শিশু বললো, এই যে ও ঘটির মধ্যে বসে আছে। ছেলের পিতা ছিলো দারুন আহাম্মক। ঘটিতে উঁকি দিয়ে সে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পেয়ে ক্রধে অগ্নিশর্মা হয়ে ঘটির মধ্যের ছবিটিকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলো, এতো বড় দাড়ি মুখে একটি শিশুর খাবার ছিনিয়ে নিতে তোমার লজ্জা করল না? লোকটিত তার নির্বুদ্ধিতা ও চরম বোকামীর কারণে বুঝতেই পারেনি যে, সে কাকে গালমন্দ করছে।

 

এক ভাঁড়ের হাতীর কান্ড

        বাদশাহ আকবর একবার কুশী হয়ে এক ভাঁড়কে একটি হাতী উপহার দিয়েছিলেন। ভাঁড় বেচারা হবু কষ্টে কয়েকদিন হাতীর খাবারের ব্যবস্থা করলো। সম্বলহীন গরীব ভাঁড়ের পক্ষে একটি হাতীর নিয়মিত খাবারের ব্যবস্থা করা খুবই কষ্টকর। অবশেষে সে বাআধ্য হয়ে হাতীর গলায় একটি বালতি ঝুলিয়ে বাজারে ছেড়ে দিলো। মুক্তহাতী বাজারময় এক দারুন অরাজকতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সংবাদটি অবশেষে বাদশাহর কানেও গিয়ে পৌঁছলো। বাহশাহর তাঁকে ডেকে বললো,এতো বড় মন্দ কাজ! ভার বললো, মহামান্য সম্রাট! আমি নিতান্ত গরীব লোক। নিজেই চেয়ে খুঁজে খাই। আমার পক্ষে কি একটি হাতীর খাদ্যের সংস্থান করা সম্ভব? তাই বাধ্য হয়ে হাতীকে এই বলে বাজারে ছেড়ে দিয়েছি, যাও, বাজারে গিয়ে চেয়ে-মেগে খাও। বাদশাহ ভাঁড়ের কথা শুনে ভীষন লজ্জিত হলেন এবং অবশেষে রাজ কোষাগার থেকেই ভাঁড়ের হাতীর খাদ্যের ব্যবস্থা করার আদেশ দিলেন।

 

এক বাজারী ওয়ায়েজ-এর ঘটনা

         নাম মাত্র মৌলভী সাহেব ওয়াজ করতে গিয়ে "ইন্না আ' তাইনা কালকাওসার"-এর তরজমা করলেন,"আমি তোমাকে কাউসারের মত বস্তু দান করেছি"। জৈনক শ্রোতা জিজ্ঞেস করলেন, "কাউসারের মত"-এরূপ অর্থ কীরূপে করা হলো? ওয়ায়েজ বললেন, এখানে "কাফ" শব্দটি উপমার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। শ্রোতা পুনরায় বললেন, এ ধরনের স্থানে কাফ লিখে তার মধ্যে কাফের মত ছোট আকারের আরেকটি কাফ লেখা হয়। এসব কাফের অর্থ আপনি যেরূপ করেছেন, সেরূপ নয়। অবশেষে অজ্ঞ ওয়ায়েজ মূর্খ শ্রোতার কথা মেনে নেয় এবং বলে, বিষয়টা আমার জানা ছিলো না।

 

        কিন্তু অজ্ঞ ওয়ায়েজদের এটাই বাস্তব অবস্থা। শুধুই ওয়াজ করে। কি বলে তা সেও জানে না। কেউ ভুল বললে তাও সুধিয়ে দেয়ার মুরোদ রাখে না। এর  দ্বারা উভয়ের ক্ষতি হয়। যা খুবই দুঃখজনক।

 

আরেক মুর্খ ওয়ায়েজের বেদনাদায়ক কান্ড

        আমার উপস্থিতিতে আমার সামনে এক ব্যক্তি ওয়াজ করতে ছিলো এবং"যালিকুম খিরুল্লাকুম ইন কুন্তুম তালামুন" যার অর্থ" ইহা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমারা এ ব্যাপারে জ্ঞান রাখ"। অথচ সে এর তরজমা করছিলো," তোমাদের জন্য উত্তম হলো জুমার নামযের সময় দুই কানে তালা লাগিয়ে মসজিদে আসা"-এরূপ অর্থ হলো তার মতে বুঝেছে। যার অর্থ বন্ধ করা।

 

        ফায়দাঃ ওয়ায়েজদের অবস্থা হলো এই। আর সাধারণ মানুষেরা মনে করে জুব্বা টুপি পরে মসজিদের মেম্বারে দাঁড়িয়ে দু'কথা ঝেড়ে দিতে পারে যারা তারাই মাওলানা মৌলভী। আসলে কি তাই!

 

বলগ্রামের এক বুযুর্গের কাহিনী

        বলগ্রামের এক বুযুর্গের আর্থিক অনটন চলছিলো। তার চেহারার দিকে তাকিয়ে তার এক মুরীদ বুঝতে পারেন যে, তার শাইখ আজ উপবাস করছেন। ততক্ষণাৎ সে মজলিস থেকে চলে গেলেন এবং খাজাঞ্জী ভরে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে শাইখের খিদমতে উপস্থিত হলেন। শাইখ  তার গ্রহণ করতে অস্বীকার করলে মুরীদ বললেন, হুজুর এগুলো গ্রহণে তো কোন বাধা না থাকার কথা। শাইখ ছিলেন অন্তঃদৃষ্টি সম্পন্ন। তিনিও স্পষ্ট ভাষায় তাঁকে বললেন, নিঃসন্দেহে এগুলো হাদীয়া। অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথেই তুমি এগুলো এনেছো। কিন্তু এই অবস্থায় এই খাদ্য গ্রহণ করা আমার জন্য সুন্নতের খেলাফ হবে। কেননা- অর্থ "ইশরাফে নফস বা প্রবৃত্তির প্রতীক্ষা ছাড়া যা আসে তা গ্রহণ কওর"।

 

       আর তোমার এ হাদিয়া প্রবৃত্তির প্রতীক্ষার পর এসেছে। কারণ, যখন তুমি মজলিস থেকে উঠে যাচ্ছিলে তখনই আমি বুঝতে পেরেছি যে, তুমি খাদ্য আনার জন্য যাচ্ছো। আর তখন থেকে আমার প্রবৃত্তিতে এর জন্য আগ্রহ ও প্রতীক্ষার একটা ভাব উপলব্ধি করছি। একেই বলে "ইশরাফে নফস" বা "প্রবৃত্তির প্রতিক্ষা"। মুরীদ ছিলেম দারুন বুদ্ধিমান ও মুখলিস। সে আর পীড়াপীড়ি না করে খাজাঞ্জী তুলে নিয়ে সোজা চলে গেলেন। পির সাহেবের দৃষ্টির অন্তরালে যাওয়ার পর আবার খাজাঞ্জী নিয়ে ফিরে এলেন এবং পীর সাহেবের সম্মুখে রেখে বললেন, আশা করি এখন হুজুরের কোন আপত্তি থাকবে না। কেননা ইতিমধ্যেই "ইশরাফে নফস" দূরিভুত হয়েছে। শাইখ এবার, মুরীদের বুদ্ধিমত্তা, সতর্কতা, আন্তরিকতা ও ইখলাস দেখে আনন্দের অতিসয্যে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং তার হাদীয়া গ্রহণ করেন।

 

       ফায়দাঃ  একটু চিন্তা করে দেখুন, সঠিক ও যোগ্য পীরের সংস্পর্সে কিভাবে আকল ও বুদ্ধিমত্তা শুচি শুদ্ধ হয়।

 

এক মাদ্রাসার ছাত্র ও এক স্কুলের ছাত্রের প্রশ্ন উত্তর

        স্কুলের বিজ্ঞানের এক ছাত্র মাদ্রাসার এক তালেবে ইলমকে জিজ্ঞেস করে, বলতে পার, আকাশে সর্বমোট কতগুলো নক্ষত্র রয়েছে? মাদ্রসার ছাত্রটি তাকে পাল্টা প্রশন করে বললো, তুমি বলতো সমুদ্রে কতগুলো মাছ আছে? স্কুলের ছাত্রটি বললো, তাতো জানি না। তখন মাদ্রাসার ছাত্রটি দুঃখ ভরাক্রান্ত স্বরে আফসোস করে বললো, ভাই, যে পৃথিবীতে বাস করো সেই পৃথিবীর খবরই রাখ না। অথচ আমাকে আকশের নক্ষত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করছো! যা অন্য লোকে এবং আমাদের থেকে লক্ষ লক্ষ মেইল দূরে। তার এ কথায় স্কুলের ছাত্রটি হতবুদ্ধি ও স্তব্ধ হয়ে যায়। স্কুলের ছাত্রটি লজ্জিত হয়। এর কোন জবাবই তার কাছে নেই। বলুন, এদের মাঝে কে বেশি জ্ঞানী?

 

        ফায়দাঃ আকল-বুদ্ধিমত্তা এবং অভিজ্ঞতা এক নয় আলাদা বিষয়। এসবকে এক মনে করা মারাত্মক ভুল।

 

*****