JustPaste.it


বিশেষ নিবন্ধ

ইউরোপে মুসলিম প্রজন্মের ভবিষ্যত
মাওলানা ইসমাঈল ইউসুফ
========================================


     সৃষ্টির প্রথম হতে মানুষ পেটের ক্ষুধা নিবৃত্ত করা ও সন্তানের ভবিষ্যত অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অর্জনের উদেশ্যে নিজের বাড়ী ছেড়ে দুরদুরান্তে, দেশ বিদেশে ও বিভিন্ন শহর বন্দরে অজানা প্রান্তরের পানে ছুটে বেড়িয়েছেন। ভিন দেশের অচিন পরিবেশ থেকে সম্পদ আহরণ করেছে।
      ইউরোপ আমেরিকা তথা পশ্চিমের ধন দৌলতের হাতছানি বাংলা পাক ভারত তথা পূর্ব এশিয়ার লোকদের আজও আকুল করে এবং তারা বাড়ীঘর, আত্মীয় পরিজনের মায়া ত্যাগ করে বিদেশ বিভূয়ে পাড়ি জমায়। ইউরোপ আমেরিকা অ পাশ্চাত্যে গিয়ে একজন মানুষ ধনবান ও সম্পদশালী হয়ে পেটের আগুন নিভাতে পারে বটে কিন্তু ধর্মহীনতা, নির্লজ্জতা ও চারিত্রিক লাম্পট্যের লেলিহান শিখা তাঁর পার্থিব পবিত্রতা ভস্ম করে দেয়। কোন ভাবে সে নিজে এ থেকে অক্ষত থাকলেও তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম এ আগুন থেকে আত্মরক্ষা করতে অক্ষম থাকে। যে সন্তানদের নিরাপদ ও উন্নত ভবিষ্যতের আশায় সে স্বদেশের মায়া ত্যাগ করে প্রবাসের দুঃখ যাতনা মাথা পেতে নিয়েছিল, মানবিকতা ও ধার্মিকতার মানদণ্ডে তাদের চারিত্রিক অবক্ষয় দেখতে পেয়ে সে অনুতাপ অনুশোচনার আগুন দগ্ধ হতে থাকে।
      জনাব মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ কুরাইশী বিশ বছর যাবৎ লণ্ডনের বাসিন্দা। তিনি সেখানকার সামগ্রিক পরিস্থিতি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন বহুদিন। নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা গুলো তিনি তার স্বরচিত গ্রন্থ ‘ইউরোপকে মুসলমান কি আয়েন্দা নসলূকা মুকাদ্দার’ (ইউরোপে মুসলিম অনাগত প্রজন্মের ভাগ্যলিপি)-এ এর বিশদ আলোচনা করেছেন। এশিয়ান মুসলমানদের মধ্যে যারা ইউরোপ ও আমাএরিকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির হাতছানিতে মোহিত হয়ে সেখানে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন এ গ্রন্থটি তাদের জন্য পথের দিশা হতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, এ গ্রন্থটি পাঠ করে অনেক পাঠকই লজ্জা-শরম, চরিত্র ও ধার্মিকতা রক্ষার সদিচ্ছায় সেখানে যাওয়ার বাসনা ত্যাগ করবেন। 
    জনাব মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ কুরাইশী লণ্ডনের একটি দ্বীনী মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রধান পরিচালক ছিলেন। তিনি লণ্ডনের একটি কেন্দ্রীয় মসজিদের উর্ধ্বতন ট্রাস্টী। এছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী। বিগত দশ বছর যাবৎ তিনি শিশু কিশোরদের ধর্মীয় শিক্ষা দানে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। সম্মানিত পাঠকবর্গের নিকট উক্ত বইয়ের সার সংক্ষেপ তুলে ধরা হলোঃ
এক অভিনব অরণ্যঃ
     আধুনিক ইউরোপের সুউচ্চ ভবনগুলো যেখানে মানবিক মূল্যবোধ আত্মহুতি দিয়ে চলছে। ইউরোপিয়ানরা নিজেরাই একে Concretc Jungle নামে অভিহিত করে থাকে। প্রকৃত পক্ষে ইউরোপ এমন এক অরণ্য  যেখানে মানব সমাজের জন্য আইন জারী করে রাখা হয়েছে মাত্র। পক্ষান্তরে তৃতীয় বিশ্বের এক কালের বৃটিশ উপনিবেশ গুলিতে মানুষের জন্য জংগল ও বর্বর আইন জারী করে রাখা হয়েছিলো।
     বনাঞ্চলের কতগুলো বৈশিষ্ট রয়েছে। সেখানে পদে পদে বিপদাপদ ওঁৎ পেতে থাকে। সর্বদা এক আসংকা ও রহস্যময়তা বিরাজ করে। ঘন গাছপালার মাঝে কোথাও থাকে কাঁদা মাটির গভীর ডবার ফাঁদ। গভীর জংগলে পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন এক সমস্যা, গন্তব্যের পৌওছার পথ পাওয়া দুষ্কর। ইউরোপের এই অভিনব অরণ্যে উলংগপনা ও অশ্লীলতা এমন মানবতা খেকো আনন্দ যা সর্বদা তার মুখ গহবর খুলে রেখে শিকারের তালাশে থাবা বিস্তার করে রয়েছে। সুযোগ পাওয়া মাত্র শিকারকে গিলে ফেলাই তার কাজ। অশ্লীলতা ও উলংগপ্নার বিষাক্ত দংশনে দংশিতার সর্পদংশিতের ন্যায় পানি পানি করে কাতরায় না। বরং তারা পরিধেয় বস্ত্র ছিড়ে ফেলে দিয়ে উন্মাদের ন্যায় ছুটতে থাকে রাস্তায়। একবার কেউ পা ফসকে যৌন যথেচ্ছাচারের চোরাবালিতে পড়ে গেলে তার আর উঠে আসার কোন উপায় নেই এবং ইসলামী সমাজ ব্যবস্থাহীন এই দেশে সে ক্রমান্বয়ে অতলেই তলিয়ে যাবে।
     ফলতঃ এখানকার অধিবাসীরা মদে বুঁদ হয়ে বিবস্ত্র থাকার আগ্রহ চরম উদগ্রীব। এখানকার বেনিয়া পোদ্দাররাও মুখের মধুমাখা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের শিকারকে ঘায়েল করে এবং শিকার তড়পাতে তড়পাতে নির্জীব হয়ে যায়। এখানের পথচারীরা নিত্যদিন পথ হারায়। বিশেষত শিশু-কিশোররা এমন ভাবে হারিয়ে যায় যে তাদের কোন সন্ধানই পাওয়া যায় না। আমারা জানি, পশুরা তাদের ছোট সন্তানদের কাছে কোন কিছু ঘেষতে দেয় না। সন্তানকে বিপদের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য তারা যে কোন বড় ভয়ংকর শত্রুর মুকাবেলা করতে ও নিজেদের জীবন পর্যন্ত বিনষ্ট করতে প্রস্তুত। কিন্তু পশু শাবকগুলো একটু সেয়ানা হয়ে উঠলেই তাদের জনক-জননীই তাদের দূরে তাড়িয়ে অরণ্য শিশু বয়সে সন্তানরা অপরিসীম রক্ষণা-বেক্ষণের সুযোগ পেয়ে থাকে। শিশু একটু সেয়ানা হলেই তারা অবাধ বিচরণের স্বাধীণতা পেয়ে যায় এবং তখন তাদের জন্য যা ইচ্ছা তাই ক্রা, খাওয়ার অধিকার স্বীকৃত হয়ে যায়।
    ইউরোপের এ নতুন মানব অরণ্যের মানুষেরা পশুর ন্যায় উলংগ যৌনাচারে লিপ্ত হয়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এতে আত্মীয়তার পবিত্র সম্বন্ধের কোন মূল্য দেয়া হয়না। যেন এরা সাক্ষাৎ ইতর হায়ওয়ান-জানোয়ার। আর এতে আশ্চর্যেরই বা কি যে, শুকর অবৈধ যৌনাচারে জন্য সর্বজনবিদিত। যদি সেই শুকরই তাদের মাঝে সংক্রামিত হওয়া কোন বিচিত্র কিছু নয়।
     শিশুরা এটা শিখে তাদের (Child Abusc) পিতা মাতা ও অভিবাবকদের কাছে। এ হলো পাশ্চাত্যের ঘৃণ্য বাস্তবতা। অসংখ্য কুমারী মাতা    প্রতি তিনটি নবজাতকের একটি পিতৃ পরিচয় হীন, জারজ সন্তান। সদ্য পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি দুইজন নবজাতকের একটি অবৈধ। সামরিক স্ত্রী বিনিময়, রুচি বদলের জন্য বউ বদল, (Wife Swapping) বিয়ে করা দম্পতির অবৈধ প্রেম চর্চা, সমশ্রেণীর (পুরুষে পুরুষে ও নারীতে নারীতে) বিয়ে এবং বর্তমানে তার আইনগত বৈধতা। সমশ্রেণির বিয়ের ব্যাপারটা এখন সেকেলে। আধুনিকতা হল পুরুষে সন্তান ধারণ ও প্রসবের শখ। (Child Pronogranphy) সুইজারল্যাণ্ডে ১৩ বছরের অধিক বয়স্ক কিশোরীদের যৌন সম্পর্ক স্থাপনের বৈধতা যথেষ্ট হয়নি বিধায় এক লাখ চৌরাশি হাজার অভিভাবকের স্বাক্ষরিত আবেদন পত্রের ভাষ্য ছিল ১৩ বছরের কিশোরীদের গর্ভধারণ বৈধতা প্রদান। (সৌজন্যে দৈনিক জং পাকিস্তান)
     লণ্ডনের একটি ব্যস্ততম বাণিজ্যিক কেন্দ্রে চলে ‘উলংগ সংগম’। এক সময় তা ছিল পশুর কাজ, আর এখন…… পাঠক মাফ করবেন, কলমের সংযম বাধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। অন্যথায় এ সম্পর্কে লিখবার বিষয়তো অঢেল। মানুষের স্বভাবে জন্মগতভাবেই এমন সব উপাদান রয়েছে যে, সে পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং সংসর্গ দ্বারা আচার অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়।
     উপমহাদেশের একটি বাস্তব ঘটনা দিয়ে দৃষ্টান্ত পেশ করছি। একবার এক নেকড়ে বাঘ গ্রাম থেকে একটি শিশু নিয়ে গেল এবং অজ্ঞাত ও বিস্ময়কর কোন কারণে বন্য পশু নিয়মের বিপরীতে সে শিশুটিকে না খেয়ে নিজের বাচ্চাদের সাথে লালন পালন করতে লাগলো। একদিন এক শিকারীর গুলিতে সে মানব নেকড়েটি আহত ও বন্দী হল। চিকিৎসার জন্য তাকে বোম্বাইয়ের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আঘাত মারাত্মক হওয়ার কারণে তাকে বাঁচানোর জন্য চিকিৎসকের চেষ্টা সফল হল না। হাসপাতালের লোকেরা তার নাম রেখেছিলো ‘রাম নেকড়ের ছানা’। পত্র পত্রিকায় তার ছবি ও কাহিনি ছাপা হয়েছিলো। নেকড়ের মত তার স্বভাব ছিলো কাউকে কাছে পেলে কামড়ে ধরতো। চতুষ্পদ চযন্তুর মত হাটতো। কাঁচা গোশত খেতে এবং নেকড়ে বাঘের ন্যায় আওয়াজও করতো।
     শিশু যে কী পরিমাণ তার পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয় এ সম্পর্কে এর চেয়ে পরিষ্কার দৃষ্টান্তের প্রয়োজন নেই। জ্ঞানীগণ ও পণ্ডীতবর্গ শিশুকে তরল পদার্থ (Liguid) এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। অর্থ্যাৎ তা যে পাত্রে রাখা হবে তারই রং ধারন করবে। শিশুদের সাদা কাগজও বলা হয়েছে অর্থ্যাৎ তাতে যা ইচ্ছা তা লিখে অ একে দেখা যায়। কেউ কেউ বলেছেন, নরম বৃক্ষ শাখার ন্যায়, যেদিকে ইচ্ছা মোড়ানো, ঘুরানো যায়। শিশু হৃদয়ে পরিবেশের প্রতিচ্ছবি পাথরে খোদাইয়ের ন্যায়। যা কখনো মুছে যায় না। বিশেষতঃ ইউরোপের জন্মগ্রহণকারী শিশুরা পরিবেশের প্রতিক্রিয়া গ্রহণের প্রবল স্বাভাবশক্তি নিয়ে জন্ম নেয়।
      মুসলমান শিশুরা ইউরোপের তথাকথিত মুক্ত পরিবেশে যে ভাবে নেশা, চুরি, অবৈধ যৌনাচার ও উচ্ছৃঙ্খলতার শিকার হয় যা অবিভাবকদের জন্য দুশ্চিন্তা ও যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। সে জন্য তাদেরকে অপরাধী সাব্যস্ত করার কোনই উপায় নেই। আমরাই তাদেরকে ওই মানব নেকড়ে ছানার মত জংগলে প্রতিপালিত হতে ছেড়ে দিয়েছি। এখন যদি তারা পশুর ন্যায় আচরণ করে, উলংগ নৃত্য করে কিংব কাউকে আঘাত করতে উদ্যত হয় তবে তাদের অপরাধ কি?
     পাশ্চাত্যের উলংগপনা, নির্লজ্জতা ও অবাধ যৌনতা তাদের অপক্কবুদ্ধি ও মেধাকে মারাত্মকভাবে বিগড়ে দিচ্ছে। অবাধ যৌন সম্ভোগের কারণে তারা ঘর ও পিতা মাতার নিয়ন্ত্রণ মুক্ত থাকতে চায়। গার্ল ফ্রেণ্ড ও বয় ফ্রেন্ড রাখা তাদের দৃষ্টিতে একটি স্বাভাবিক ও গ্রহনযোগ্য সামাজিকতা।
     আচ্ছা বলুন, আমরা আমাদের সন্তানদের মুসলমান বানাবার জন্য এবং তাদের ইসলামী শিক্ষা দেয়ার জন্য কী চেষ্টা তদবীর করেছি! আমরা তো এতো ব্যস্ত থাকি যে, তাদের সাথে আলাপ আলোচনার  করার জন্যও এতটুকু সময় বের করতে পারি না। আমাদের একমাত্র লখ্য ছিল্য অধিক হতে অধিক পাউণ্ড ডলার উপার্জন করা এবং তা সে সন্তানদের জন্যই যারা আজ আমাদের কথা এ কানে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়। আমরা আমাদের কলিজার টুকরা সন্তানদের কখনো কাছে বসিয়ে দু’টি নীতি কথা বলার সুযোগ ক্রতে পারিনি, আমরা সময় করতে পারিনি। আমরা পারিনি তাদের মানুষ হওয়ার কোন বাস্তব পাঠ দেয়ার। তাদের একমাত্র কাজ টি,ভির প্রোগ্রাম দেখা এবং ডাইনিং টেবিলে খানা খেয়ে অন্য কামরায় চলে যাওয়া। তাদের সঙ্গে আমাদের মানসিক সংযোগ ঘটেনি কোন দিন। ভুক্তভোগীরা লক্ষ্য করে থাকবেন, পরিবারে কোন আত্মীয় অতিথি এলে আমাদের সন্তানরা তাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করা এড়িয়ে যায়। অথচ তারাই সমবয়সীদের সাথে আড্ডা মেরে রাত কাবার করে দেয়। আমরা তাদের জন্য সর্বাংশে যা করেছি তা হল স্কুলের সময়ের পর মসজিদের বা (সাপ্তাহিক ছুটির দিনে) মাদরাসায় পাঠিয়েছি। কুরআন শরীফ বা মাতৃভাষায় দু এক হরফ পাঠের উদ্দেশ্যে। আমরা এই ভেবে আনন্দিত হয়েছি যে, বাচ্চারা তো বেশ মাদরাসায় মুসলমানী পাঠ পড়ছে। অথচ বাচ্চারা শুধুই মা বাপের মনোবাসনা পুরণে এসব পাঠশালায় হাজিরা দিচ্ছে। অন্যথায় সাধারণ মসজিদ মাদরাসাগুলোতে তারা শিক্ষার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত ছিলো। দিনের বেলা তারা যে স্কুলে যায়। সেখানে রয়েছে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা মণ্ডলী ও শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ। শিক্ষকরা শিশু মনুস্তত্বে অভিজ্ঞ, পারদর্শী, শিশুরা সেখানে আনন্দিত, থাকে প্রফূল্ল। সেখানে তাদের জন্য এমন আকর্ষণ রয়েছে যে, তাদের শরীর সুস্থ না থাকলেও তারা স্কুলে যাওয়ার জন্য পিড়াপিড়ি করে।
    পক্ষান্তরে মসজিদে শিক্ষকের আসন অলংকৃত করে আছেন সাধারণতঃ গম্ভীর হাবভাবের বয়স্ক মওলভী সাহেবগণ। যারা প্রায়শই ভালো ইংরেজী জানে না। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে এক একজন হুযুরের জন্য ছাত্র সংখ্যা এত অধিক হয় যে, হুযুর তার ছাত্রদের সম্পর্কে ভালভাবে অবগতি লাভের বা তাদের আপন হওয়ার সময়-সুযোগই করতে পারেন না।
মসজিদের হাল-হাকিকত
     বৃটেনের মসজিদ্গুলির অবস্থা প্রসংগে জনাব আব্দুল্লাহ কোরাইশী সাহেব লিখেছেন, বৃটেনের অনেক লোক তার সম্পূর্ণ বেতন মসজিদ-মাদ্রসার চাঁদার বাক্সে রেখে দিয়েছেন এবং মহিলারা তাদের প্রিয় স্বর্নালংকার খুলে দিয়েছেন। চাঁদা দেয়ায় শিক্ষকরাও পিছিয়ে থাকেনি। ব্যবসাজীবীরা তো মোটা অংক দান করেছেন। প্রথম দিকে যে কোন একখানা ঘর কিনে তাকে মসজিদ নাম দেয়া হতো। পরে যমীন খরিদ করে ঐতিহ্যময় গম্বুজ ও মিনার যুক্ত বিশাল মসজিদও তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু সমগ্র দেশে ৩৫ বছর সময়ের মধ্যে এখানে জন্ম গ্রহণকারী এশীয় সন্তাদের একজনও উল্লেখযোগ্য দ্বীনী আলিম হওয়ার কথা শোনা যায় নি।আমরা অন্যান্য বিদ্যা তাদের যথা নিয়মে শিখিয়েছি। ব্যতিক্রম ঘটেছে শুধু দীনী ইলমের ক্ষেত্রে।
      চরম পরিতাপের বিষয় যে, পিতামাতা, অভিভাবক ও আলিমগণ এমন একটি অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
      এখানে প্রথম পীর মুরীদীর ব্যবস্থা জমজমাট। পীর মুরীদীতে নযর-নেয়ায হাদীয়া তোহফা দেয়ার প্রচলিত নিয়ম তো রয়েছেই। পীর সাহেবের উদ্দেশ্যে ভক্তি শ্রদ্ধা প্রকাশ এবং জনসেবার নামে পীরের দরবারে লংগর খানা চালাবার ব্যবস্থা তো আছেই। এতে অর্থকড়ির উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা হয়ে যায়। বিষয়টি অনেকের জন্য বড় ধরনের আকর্ষণ ও দুর্বলতার কারণ হয়েছে। যার ফলে অনেক সময় এমন দেখা গিয়েছে যে, জনগণের হিদায়াত ও পথ প্রদর্শনের জন্য উপমহাদেশ হতে কোন একজন খাটি পীর বুযুর্গের আগমণ ঘটলে তার সঙ্গে সমতা রক্ষা করে দুজন বহুরূপী ভন্ডও এসে উপস্থিত হয়। যারা হিথরো বিমান বন্দরে নেমেই ‘পীর’ এর ব্যাজ লাগিয়ে নগরীতে ঢোকে এবং সরল প্রকৃতির মুসলমানদের জান,মাল ও ইযযত আবরু দু’হাতে লুটতে থাকে। এধরণের হহুরূপীরা মুসলমানদের জন্য অনেক বদনাম কুড়িয়েছে। এরা অনেক হাসির খোরাক যুগিয়ে বিশ্বে নিন্দিত হয়েছে।
 স্কুল-বিদ্যালয়ের খবরাখবর
     লেখক বৃটেনের স্কুলগুলোর আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন, যিক্ত রাজ্যের (U.K) শিক্ষা ব্যবস্থায় এ লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে যে, শিশুরা তাদের শিক্ষা সমাপ্তির পর যেন বৃটেনের সুনাগরিক রূপে গড়ে উঠে। তারা যেন নিজেদের বৃটিশ (ইংরেজ) হওয়াতে গর্ববোধ করে এবং বিশ্বাসে খৃষ্টান হয়। আমাদের সরলমনা পিতা মাতাকে মনে রাখতে হবে যে, আমাদের সন্তানরা কালো বা গেরুয়া চামড়ার বৃটিশ। এ কারণের অধিকাং শিশু নিজেদের স্বদেশের পরিচয় দেয়া পছন্দ করে না। তারা মা বাপকে বলে, তোমরা এশীয়, আমরা বৃটিশ। স্কুলগুলিতে প্রতি দিনের প্রাতঃকালীন ঘন্টায় খ্রীস্ট ধর্ম মতে এসেম্বলীতে অংশ করতে হয়। (অবশ্য এসব এসেম্বলীতে কখনো কখনো সাধারণ জ্ঞানের পরিচয়ে অন্যান্য ধর্মের আলোচনাও হয়ে থাকে।) কেননা রাষ্ট্রের ধর্ম খৃস্টবাদ।
     পরবর্তী ঘন্টা অবশ্যাম্ভিরূপে ধর্ম শিক্ষার ঘন্টা। এতে রীতিমাফিক খৃস্টবাদের শিক্ষা দেয়া হয়। তবে এ ঘন্তা হতে শিশুদের পৃথক রাখার অধিকার যে কোন পিতামাতার রয়েছে। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে একটি পত্র পাঠাতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ পিতামাতা তাদের সন্তানদের কি পড়ানো হচ্ছে তা লক্ষ্য করার প্রয়োজনই বোধ করে না। মুসলিম শিশুর সংখ্যা এক’শরও অধিক এমন একটি স্কুলে সন্ধান নিয়ে জানা গিয়েছে যে, মাত্র দু’জন অবিভাবক তাদের সন্তানদের খৃস্টবাদ শেখানোর ঘন্টা হতে পৃথক রাখার আবেদন করেছেন।
     সেক্স এডুকেশনের ঘন্টা আবশ্যিক। প্রথম এ আইন বড়দের জন্য ছিল। এখন পাঁচ বছর হতে শুরু করার চিন্তা ভাবনা চলছে। যাতে আরো দ্রুত তাদের চরিত্রের বারোটা বাজতে পারে। কেননা ইংরেজ শিশুরা ৫/৭ বছর বয়স হতেই বয় ফ্রেন্ড ও গার্ল ফ্রেন্ড এর চর্চা করতে শুরু করে এবং কোন শিশু তা না করলে তাকে স্বাভাবিক মনে করা হয় না। একটি জরীপ মতে বৃটেনের ১৪ বছর বয়সের কিশোরীদের শতকতা ৪০ ভাগ গর্ভবতী হয়ে থাকে (যদিও গর্ভপাত ঘতানো সহজ হওয়ার কারণে তারা সহজেই এ অপবাদ হয়ে মুক্তি পেয়ে যায়)।
    এত অল্প বয়স থেকেই যৌন বিষয়ে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য অবাঞ্চিত গর্ভধারন (un wanted pregnancies) প্রতিরোধ এবং এইডস এর ন্যায় দুরারোগ্য ও যন্ত্রণাদায়ক ব্যাধির প্রতিরোধ। মাদক দ্রব্যের বিস্তার ও সমকাম অভ্যস্ততার অভিশাপের কারণে এখানে এ ব্যাধিটি ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। তাছাড়া ব্যাধিটি সংক্রামক (Contagious)-ও বটে।
     নৃত্য ও সংগীতের ক্লাসও রয়েছে। এছাড়া রয়েছে অর্ধ উলংগ হয়ে সাতারের (Swimming) প্রাকটিস। সাতার ও অন্যান্য ব্যায়ামের পর উলংগ ঝর্ণা-স্নান-এর ব্যবস্থাও রয়েছে। (কোন পিতা মাতার অবিশ্বাস হলে নিজেদের সন্তানদের কাছে জেনে নিতে অথবা নিজেরা সুইমিং পুলে গিয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন) কি মজার দৃশ্য। একই গোসলখানাইয় সব ন্যাংটা! (বানরের উত্তরসূরী বটে!)
     শুরু থেকেই শিশুদের শিখিয়ে দেয়া হয়, কখনো মা বাপ মারলে যেন সাথে সাথে পুলিশকে জানানো হয়। এখন তো শিশুদের জন্য “টেলিফোনে চাইল্ড লাইন যুক্ত করা হয়েছে। ইংরেজ শিশুদের অবাধ যৌন সম্ভোগ ও জন সমক্ষে ছায়াছবি প্রদর্শনী আমাদের সন্তানদের জন্য জীবন সংহারী বিষতুল্য”।
      যে সব শহরে আমাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সেখানে বহু মুসলিম কিশোর অমুসলিমদের সঙ্গে মিশে নেশা ও মাদকে অভ্যস্ত হয়ে Juinkies হয়ে গিয়েছে এবং নেশার পয়সা যোগাড়ের জন্য চুরি ছিনতাই করে থাকে।
     বখাটে বলা এখন ছেলেদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ব্রেড ফোর্ট, বার্মিং হাম, ইস্ট লণ্ডন, সাউথ হল প্রভৃতি অঞ্চলে দুই সন্ত্রাসী যুদ্ধমান দল Gang Warfare এ লিপ্ত হয়ে ভাংচুর ও খুনাখুনি করে থাকে। পিতা মাতার সঙ্গে চিন্তার মিল না থাকার কারণে অধিকাংশ তরুন বিদ্রোহী ও অবাধ্য হচ্ছে। পরিবার ও বংশের কেন্দ্রীয়তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এরা যেন পরিবারের সংঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। মসজিদ ও সমাজেও তারা ফিট হতে পারছে না। 
      সমাজ অধিপতি ও শিশুর অভিভাবকদের দায়িত্বহীনতার ফলেই এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, কামার ও রোজিনা লণ্ডনে উলংগ নৃত্য করার সময়ও আল্লাহু আকবার খচিত লকেট তাদের গলায় ঝুলছিল। আর নৃত্যের নামে যে আরও কতকি করা হয় তা শয়তানই ভালো জানে। আমাদের প্রবাসী সন্তানেরা ভারতীয় চিত্র জগতের যে কোন তারকা অভিনেতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিফহাল, কিন্তু ইসলামের ইতিহাসের সামান্যও তারা জানে না।
খ্রীস্টান মিশনারী সমূহের তৎপরতা 
      খ্রীস্টান মিশনারী প্রসঙ্গে লেখক বলেছেন, খ্রীস্টান মিশনারীগুলো আমাদের, বিশেষত আমাদের সন্তানদের প্রতি অত্যন্ত মনযোগের সঙ্গে লক্ষ্য রাখছে। এ বিষয়ে সুপরিকল্পিত তৎপরতা চলছে। বাইবেলের কপি উর্দু, বাংলা ও গুজরাটী ভাষায় ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া হচ্ছে। এদের তাবলিগ জমাত দুয়ারে এসে টোকা লাগায়, বেল বাজায়। Eastern Eyc নামের চলমান একটি কর্মসূচীর অধীনে প্রত্যন্ত অঞ্চলের (হিরো অঞ্চল) একটি ক্ষুদে খৃস্টান মিশনারীর দাবী, চার বছর মেয়াদে তারা ৫০ জন এশীয়কে খৃস্টান বানিয়েছে। এ সংখ্যার অধিকাংশ হিন্দু এবং কতক শিখ ও মুসলমান। যাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে একজন মুসলমানও ছিলো।সে বর্তমানে একজন খ্রীস্টান মুবাল্লিগ (প্রচারক)। অথচ সে ভারতের একটি মুসলিম ধার্মীক পরিবারের সন্তান। কর্মসূচীতে অবশ্য একথা উল্লেখিত হয়েছে যে, অন্যান্য ধর্মালম্বীদের তুলনায় মুসলমানদের খ্রীস্টান বানানো একটু কঠিন। তবুও কাজ অব্যাহত রয়েছে।
     একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, সমগ্র বিশ্বে প্রতিদিন ৭০ হাজার মানুষ খৃস্ট ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। এ সংখ্যায় অতিশয়োক্তির কথা বাদ দিলেও একথা সন্দেহাতীত যে, খ্রীস্টবাদ প্রসারের মেহনত অব্যাহত রয়েছে। কোথাও দুর্ভিক্ষ বা বন্যা জলোচ্ছ্বাস দেখা দিলে সেখানে খ্রীস্টান মিশোনারীর বিভিন্ন সাহায্যকারী দল পৌছে যায় এবং মানুষের অভাব ও অপরাগতার সুযোগ সদ্ব্যবহার করে তাদের খ্রীস্টান বানানোর পায়তারা চালানো হয়।
     এখনও পর্যন্ত মিশোনারী লোকদেরকে অর্থ ব্যয় করে কষ্ট সয়ে ভিন দেশে প্রবাস জীবন যাপন করতে হয়। আমাদের অসতর্কতা এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে বসে যে, আমরা তাদের কাজ সহজ করে দিলাম। নিজেদের ঘরের কাছেই কাজের ক্ষেত্রে ও সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমরা মুসলিম সন্তানের রূপে বহু কাঁচা মাল (Raw Matcnial) তাদের হাতের কাছে এনে দিলাম। এখনো শামলাবার সময় আছে, এখনো শুভ বুদ্ধির উদয় হলে মুক্তি আছে। নতুবা সামনে সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে।

 

****************