আমরা যাদের উত্তরসূরী
মহান তাবেয়ী রবীয়াতুল রায় (রহঃ)
আরশাদ ইকবাল
========================================================================
সিংহ পুরুষ রবীয়া ইবনে যিয়াদ আল হারেসী (রাঃ)। খােরাসানের শাসন কর্তা, সিজিস্তানের বিজয়ী নেতা, দূর্জয় তার বাহিনী, দূর্বার যার পতি, দূর্দম তার শক্তি।
বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হিলালী ঝান্ডা তাঁর হাতে। বঞ্চিত মানবতার দুঃখ বেদনার এক সমূদ্র আকুতি তাঁর চোখে। মানুষকে মানুষের দাসত্বের নির্মম শৃঙ্খল থেকে মুক্তির করুণ কাতরতা তার কণ্ঠে, দীর্ঘ দিনের আশা, আকাংখা, হৃদয়ের মনি কোঠায় লালিত স্বপ্ন ঐতিহ্যবাহী নগরী ‘মা ওরাউন নাহরের' নিপিড়িত বঞ্চিত জনতার হাতে স্বাধীনতার সাধ এনে দিতে হবে, সৃষ্টির দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে চিরমুক্ত করতে হবে। দৃষ্টির অন্ধত্ব দূর করে রাব্বুল আলামীনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক কায়েমের পথ প্রশস্থ করতে হবে।
তাই জালিম শাসকের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে প্রস্তুতির নির্দেশ দিলেন সৈন্য শিবিরে। সাজ সাজ রব পড়ে গেল। ভারী অস্ত্রশস্ত্র, রণসামগ্রীর সমাবেশ করলেন প্রচুর। তারপর শুরু করলেন যুদ্ধ যাত্রা। মুখােমুখি হলাে উভয় বাহিনী। মুজাহিদ বাহিনী আর জালিম শাসকের দাস বাহিনী। বেজে উঠলাে রণ দামামা। শুরু হলাে যুদ্ধ, প্রচন্ড যুদ্ধ। তলােয়ারের আঘাতে আঘাতে অগ্নিস্ফুলিংগ ঝলকে উঠলাে। অশ্বের খুরের আঘাতে উঠলাে ধুলি ঝড়। আল্লাহু আকবার ধনি-প্রতিধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠলাে। মরণ পন আক্রমণ চালালাে মুজাহিদ বাহিনী। অসাধারণ সৌর্য বীর্য ও নৈপূন্যের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে লাগলাে। পরিশেষে আল্লাহর মদদে বিজয় মালা ছিনিয়ে আনলাে মুজাহিদ বাহিনী। পরাজিত হলাে জালিমের দাস বাহিনী।
ইবনে যিয়াদের (রাঃ) বিশ্বস্ত দাস ফররুখ এ যুদ্ধে মনিবের পাশে পাশে থেকে বীরত্ব ও নৈপূন্যের সাথে যুদ্ধ করেছিলাে। তিনি তার অপূর্ব সাহসিকতা, দূরদর্শিতা ও মরণ পন যুদ্ধে খুব আনন্দিত হয়েছিলেন। বিমুগ্ধ হয়েছিলেন তার শৌর্য বীর্য আর কর্তব্য নিষ্ঠায় ।
বিজয়ী পতাকা হাতে উৎফুল্ল মুজাহিদ বাহিনী সাইহুন নদী অতিক্রম করে। রবীয়া ইবনে যিয়াদ (রাঃ) স্ফটিক সচ্ছ ছলছলে পানিতে অজু করে।দু'রাকাত সালাত আদায় করলেন। সালাতুস শুকর। কৃতজ্ঞতার নামায । স্বর্গীয় আনন্দশ্রু তার অশ্রু সিক্ত করলাে।
রবীয়া ইবনে যিয়াদ (রাঃ) আজ খুব আনন্দিত। উল্লাসের বান ডেকেছে তার ধমনীতে, শিরায় শিরায়। মুক্ত আকাশের নিলীমায় যেন বিহঙ্গের ন্যায় দু’ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছিলেন কোন সুদূর আনন্দ লােকে। সহসা কৃতদাস ফররুখের কথা মনে পড়লাে। ডেকে পাঠালেন তাকে। স্নেহের হাত, মমতার হাত বুলিয়ে দিলেন তার মাথায়, পিঠে। একরাশ স্নেহ আর মুঠি মুঠি মমতায় তাকে আপ্লুত করলেন। অতঃপর তিনি তাকে আযাদ করে দিলেন এবং গণিমতের প্রাপ্য অংশ সহ নিজেও উপঢৌকন দিলেন প্রচুর।
এর মাত্র দু'বছর পরের ঘটনা। সাহাবী রবীয়া ইবনে যিয়াদ (রাঃ) চির বিদায় নিলেন কলহপূর্ণ দুনিয়া থেকে রওনা হলেন মাহবুবে ইলাহীর সান্নিধ্যে। পিতৃতুল্য মনিবের এ বিয়ােগ বেদনা ফররুখের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। জীবনের সকল আশা ভরসার প্রদীপ শিখা যেন নিমিষের দমকা হওয়ায় নিভে যায়। তিনি উন্মনা হয়ে পড়েন। রণাঙ্গন অসহ্য হয়ে উঠে। ক্রমে অস্থিরতা, ব্যাকুলতা তাঁকে অক্টোপাশের মত গ্রাস করতে থাকে।
হৃদয়ের প্রশান্তি-ইতমিনান, অমিয় জীবনের প্রবল বাসনায় তিনি রণাঙ্গন ছেড়ে মদিনা মােনাওয়ারায় চলে আসেন। চলে আসেন রওযা মােবারকের সাহচর্যে ।
মদিনায় আগমন কালে ফররুখের ছিলাে ভরা যৌবন। উদ্দমতা, প্রাণ চাঞ্চল্যে তার অবয়ব ছিলাে টইটম্বুর। সুশ্রী কান্তিময়, আর কমনীয় ছিলাে তার দেহ বলুৰী।
চির বসবাসের আশায় তিনি মদিনায় এক টুকরাে ভিটে ক্রয় করে বাড়ী বানালেন। তার পর বিদূষী, বুদ্ধিমতী, ধার্মিক এক রুপসীর পানি গ্রহণ করে সুখের নীড় রচনা করলেন। শুরু করলেন দাম্পত্য জীবন-যাত্রা। সুগভীর ভালবাসা, নির্মল প্রেম, প্রীতি আর মমতায় ভরে গেল ফররুখের হৃদয়, মন। খােশবু-ঢালা আমেজে তন্ময় হয়ে গেল তার চিত্ত। ফররুখের জীবন যাত্রা আপন গতিতে চলতে লাগলাে।
কিন্তু এতাে সুখ, এতাে আনন্দ, এতাে ভালবাসা মুজাহিদের ধাতে সইবার নয়, এযে মুজাহিদ-প্রকৃতি বিরুদ্ধ। রােমাঞ্চহীন জীবনের কোনই মূল্যনেই মুজাহিদের কাছে। অলংকারের রিণি ঝিনি মিষ্টি মধুর ধ্বনির চেয়ে রণাঙ্গনের ঢাল তলােয়ারের ঝন ঝনাৎকার তার নিকট অধিক প্রিয়। বার বার তার হৃদয় পটে অতীত স্মৃতি ভাসতে থাকে। যখন আল্লাহু আকবার মুহুর্মুহু ধ্বনি প্রতিধনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠতাে, প্রকম্পিত হয়ে উঠতাে রণাঙ্গন, বাজতে থাকতাে কাড়া নাকাড়া। যখন শত্রু শিবির পানে ধুলিঝড় উড়িয়ে ছুটে যেতে অশ্ববাহিনী। অগ্নি স্ফুলিংগ ঝিলিক দিয়ে উঠতো তলােয়ারের আঘাতে আঘাতে।
সেই রােমঞ্চ ঘন মূহুর্ত গুলাে, সেই শাহাদাতের অমিয় পিয়াসার ব্যগ্রতা তাঁকে তার মনকে অবিরাম আর্কষণ করতে থাকে। আবার চঞ্চল হয়ে উঠে তার মন। অধির হয় তার হৃদয় । মুজাহিদ বাহিনীর বিজয় বার্তা মদীনায় পৌছলেই উজ্জীবিত হয়ে উঠে তাঁর মন। ধমনির রুধির ধারা নৃত্যের তালে তালে উল্লাস করতে থাকে।
শুক্রবার জুমার নামায পড়তে ফররুখ মসজিদে নববীতে গেলেন। ইমাম সাহেব জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখলেন। জিহাদে উদ্বুদ্ধ করলেন জন সাধারণকে। এবার আর আত্মসংবরণ করতে পারলেন না ! মুজাহিদদের তালিকায় নিজের নাম সংযােজন করে বাড়িতে ফিরে এলেন।
এ কথা শুনে স্ত্রী তাে তাজ্জব। আকাশ ভেঙে পড়লাে তার মাথায়। ভন্ ভন্ করতে লাগলাে স্নায়ুর শিরা উপশিরা গুলাে। তা হলে আমার কী হবে? কোথায় কার দয়ায় ধরে রাখবাে এ জিন্দেগী? বেদনা বিধুর যন্ত্রণা ও হৃদয়ের ব্যাকুলতা ফুটে উঠলাে তার কণ্ঠে। স্বামীকে জিজ্ঞেস করলেন, আবু আব্দুর রহমান। আমাকে কার হাওয়ালা করে যাচ্ছেন । মদীনায় তাে আপনার আপনজন বলতে কেউ নেই। তদুপরি আমি অন্তঃসত্ত্বা । আপনার এ অনাগত সন্তানের লালন-পালনেরইবা কী ব্যবস্থা করলেন।
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন ফররুখ। তিনি ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি যে, এমন এক কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন, নির্বাক স্তব্ধ হয়ে রইলেন ক্ষণকাল । চিন্তার তরীতে ভেসে চললেন অকুল দরিয়ায় । তরঙ্গ মালার বুক চিরে ছুটে চললেন অজানা উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণপর আত্মস্থ হলেন। নিরবতা ভঙ্গ করে বললেন। কণ্ঠে তার আকাশ সম তাওয়াক্কুল । ভয় নেই, উদ্বিগ্ন হয়ােনা, তােমাকে আল্লাহ ও তার রাসূলের হাতে ছেড়ে যাচ্ছি, আর এই নাও ত্রিশ হাজার দিনার। এগুলাে ব্যবসায়ে লাগাবে, বৃদ্ধি করবে, উদ্ববৃত্ত দিয়ে তােমার ও ভবিষ্যৎ সন্তানের খরচ বহন করবে।
বিদায়ের কিছু দিন পর ফররুখের এক চাঁদ মুখাে সন্তান জন্ম হলাে, বরং তার চেয়েও উজ্জল, যেন সুবহে সাদিকের শুক তারা, অনুপম তার মুখশ্রী, ডাগর চক্ষু তারকা, উন্নত নাসিকা, ফোকলা মুখে তার মিষ্টি মধুর হাসি। দেখলে সবাই উন্মনা হয়। বিশ্বয়ে বিমুগ্ধ হয়। আদর করে মা তাকে রবিয়াহ নামেই ডাকতে লাগলেন।
শিশু রবিয়ার ললাটের রেখায় রেখায় প্রতিভাত হতাে বুদ্ধিমত্তার দিপ্তি। কথায় কাজে ফুটে উঠতাে অসাধারণ প্রতিভা আর দূরদর্শিতার আভা। শৈশবেই মা তাকে শিক্ষকের নিকট পাঠিয়ে দিলেন। হাতে খড়ি হয়ে গেল অল্প বয়সেই। চারিত্রিক পরিচর্যার জন্য একজন শিক্ষক নিয়ােগ করলেন। তাই ইলম হাসিলের সাথে সাথে রবিয়াহ নির্মল অপরুপ চারিত্রবান হয়ে গড়ে উঠতে লাগলাে ।
মাত্র কয়েক মাস বিগত হয়েছে। এরই মাঝে রবিয়াহ কোরআন হিফজ করে ফেললাে। তার কণ্ঠস্বর ছিলাে কোমল, মাধুর্যে ভরা। পাঠ শুনে সবাই অজানা পুলকে আপ্লুত হতাে। অভিভূত হয়ে বাহবা দিতাে। এতে রবিয়াহ বিপুল উৎসাহ - পেতাে, চলার গতি আরাে তীব্র হতাে।
জ্ঞানার্জনে তার নিমগ্নতার অন্ত ছিলাে না; কিছু দিনেই সে সহপাঠিদের ছাড়িয়ে যায়। ইলমে হাদীস, ইলমে কোরআন, আরবী ভাষা ও সাহিত্যে প্রভূত জ্ঞান হাসিল করে ।
উত্তরােত্তর রবিযাহর এ উন্নতি একনিবিষ্ঠতা ও ইলম-প্রীতি রাবিয়ার মাকে অসীম আকাশের উদারতা এনে দেয়। তিনি দু'হাতে তার শিক্ষকদের উপঢৌকন পাঠাতে থাকেন। রবিয়াহকে মনের মত করে গড়ে তােলার জন্য অসম্ভব এক মাদকতা তাকে পেয়ে বসে। পুত্রকে তার মুজাহিদ পিতার নয়ন মনি বানাতে যার পর নাই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন।
ফররুখের বিদায়ের পর বহুদিন বিগত হয়েছে। মাসের পর মাস এসেছে। বছর গড়িয়ে বছর এসেছে, কিন্তু ফররুখ ফিরে আসেনি। একটি চিঠিও পাঠায়নি রণাঙ্গন থেকে। তাই প্রিয়তম স্বামীর প্রতীক্ষায় কতবার বিচলিত হয়েছেন । বিস্বাদ বিছানায় কত বিনিদ্র রজনী যাপন করেছেন। রাব্বুল আলামীনের দরবারে - কতাে দোয়া করেছেন। কতাে ভিক্ষা মেগেছেন কিন্তু কিছুই যেন মঞ্জুর হয়নি।
দাম্পত্য জীবনের যে স্বাধ যে তৃপ্তি যে মাদকতা তার জীবনাকাশে ধুমকেতুর ন্যায় এসেছিলাে তার স্মৃতি চারণ করতে করতে অস্থির হয়ে পড়তেন। বিষন্নতা তার হৃদয়-মনকে ছেয়ে ফেলতাে। চোখ ফেটে অশ্রুধারা অঝাের ধারায় বর্ষিত হতাে। ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে আবার নব জীবন লাভ করতেন। নবউদ্যমে রাবিয়াহকে সুন্দররূপে গড়ে তােলার কাজে ঝাপিয়ে পড়তেন।
রবিয়াহ তখন উঠতি রয়সের নবতরুণ । সুঠাম, শক্তিশালী। কর্মঠতায় ভরপুর তার হৃদয় মন। রবিয়ার দুখিনী মাকে প্রতিবেশী মহিলারা, বান্ধবীরা এসে প্রায়ই শান্তনার সুরে বলতাে, রবিয়াহর মা! তােমার ছেলেতাে বেশ চতুর, প্রতিভাবান, অল্প বয়সেই বেশ শিখেছে, এবার তাকে একটা ব্যবসা ধরিয়ে দাও, তােমার ক্ষুদ্র সংসারটা সে-ই চালিয়ে নিতে পারবে।
এ ধরনের সহমর্মিতা দুখিনী মায়ের দুঃখের যাতনা আরাে জ্বালাময়ী করে তুলতাে। বিষাক্ত তীর ফলক যেন তার বক্ষ ভেদ করতাে। রুক্ষতার আভাস টেনে প্রতি উত্তরে তিনি বলতেন, ইহ ও পরােলােকে তার জন্য যা উত্তম আমি তারই দোয়া করছি। আর সে তাে ইলম আহরণ ও বিতরণে তার জীবন কাটিয়ে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে।
প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নে রবিয়াহ ছিলাে অত্যন্ত কঠোর। ইস্পাত কঠিন ছিলাে তার মনােবল । মসজিদে নববীতে তরঙ্গায়িত দরস মসলিস গুলােতে পিপশার্ত চাতকের ন্যায় পড়ে থাকতেন। মুষ্ঠিময় অবশিষ্ঠ সাহাবাদের শীষ্যত্ব গ্রহণ করে তাদের অমূল্য সাহচার্যে দিন রাত কাটিয়ে দিতেন।
খাদেমে রাসূল আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) ছিলেন তার অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তিত্ব। মনে প্রাণে তাঁকে ভালবাসতেন। বেশী সময় তাঁর সাহচর্য গ্রহণ করতেন। তাবেঈদের মাঝে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব, মাকহুল আসয়াছী, সালমাহ ইবনে দিনার (রাঃ) ছিলেন তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ উস্তাদ।
দিবানিশির অক্লান্ত পরিশ্রমে তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে গেল, দূর্বল শীর্ণ হয়ে পড়লেন। কেউ স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছু বললে মৃদু হাসতেন। বলতেন, বড়দের নিকট শুনেছি, তাঁরা বলতেন, “ইলম তােমাকে তার কিয়দাংশ দিবে না যাবৎ না তুমি। তাঁকে তােমার সব কিছু বিলিয়ে দিবে।”
রবিয়াহর জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু হলাে। এবার তিনি ইলম বিতরণে নিমগ্ন হলেন। প্রথমে মসজিদে নববীতে ক্ষুদ্রাকারে তার দরস মজলিস বসতাে। ধীরে ধীরে মজলিসের কলেবর আরাে বৃদ্ধি পেতে লাগলাে। অল্পদিনেই তার সুনাম সুখ্যাতি মদিনা ছাড়িয়ে দূর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লাে। বিপুল পরিমাণ ইলম পিপাসুর সমাগম ঘটতে লাগল তার মজলিসে। অপ্রতিদ্ধন্দী মজলিসের রুপ নেয় তার দরস মজলিস।
অত্যন্ত সাচ্ছন্দ, নির্বিগ্ন ও মনােরম ছিলাে তার জীবন যাত্রা। দিবসের একাংশে মসজিদে নববীতে ইলম বিতরণ করতেন বাকী অংশ মায়েয় সেবায় কাটাতেন।
সে দিন মদিনার আকাশ, বাতাসে নৈসর্গিক পরিবেশ ছিলাে মায়াময় স্বাপ্নীল। রক্তলাল পরাগ ছড়িয়ে একটু আগে সূর্য অস্তমিত হয়েছে। এখন আকাশে চতুর্দশীর চাঁদ। জ্যোস্না ধােয়া রজনী। আকাশে শুভ্র মেঘ মালার আনাগােনা। যাদুর কাঠিতে যেন আজ গােটা দুনিয়া স্বপ্নপুরী।
মদিনার পথঘাটে পথচারীদের গমনাগমন এখনাে কমেনি। পথচারীদের সাথে এক অশ্বারােহী ধীর গতিতে চলছে। বয়স ষাটের কোঠা পেরিয়ে গেলেও সুঠাম, সুদর্শন, পেশী বহুল তাঁর অবয়ব। ত্রিশ বৎসর পর তিনি মদিনায় ফিরে এসেছেন। পরিত্যক্ত বাড়িটি কী এখনাে সগর্বে তার স্মৃতি ঘােষণা করছে? প্রাণ প্রিয়া স্ত্রী কী এখনাে তার জীর্ণ গৃহখানি আকড়ে ধরে আছে না কাল চক্রের অমােঘ ধারায় মিশে গেছে অজানার অন্ধকারে? কিছুই তিনি জানেন না। সহসা হৃদয়াকাশে বিদ্যুৎ ঝিলিক দিয়ে গেল । স্মৃতির তরী তাকে বহুদূর ভাসিয়ে নিয়ে চললাে। দূরে বহু দূরে। সেখানে সে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পাশে বসে আছে। নিরালার কালাে মেঘ স্ত্রীর হৃদয়াকাশ ছেয়ে আছে। বিষন্নতা ঢেউ তুলছে মুখ জুড়ে। অশ্রু ছল ছল মায়াময় মুখ। কান্না বিজড়িত কণ্ঠ। বললাে, আবু আব্দুর রহমান, জেহাদে যাচ্ছ বেশ ভাল, কিন্তু তােমার এ অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ ব্যবস্থার কী করলে?
শিউরে উঠলাে তার শরীর । চিন চিন করতে লাগলাে তার হৃদয়। হাঁ সেই সন্তানটি জানি কেমন আছে । পিতা হয়ে সন্তানের কোন খবর রাখিনি। বড় অন্যায় করেছি। মাত্র ত্রিশ হাজার দিরহাম রেখে গিয়েছিলাম স্ত্রীর কাছে।
ধীর গতিতে পথ ধরে চলছে অশ্বারােহী। ইতিমধ্যে অনেক পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। মদিনা নগরীর গায়। পথঘাট চিনে নিতে বেহদ কষ্ট হচ্ছে। খুসনুমা, সুঠাম, সতেজ তার অশ্ব, কাঁধে ঝুলছে ঝক ঝকে তরবারী। কিন্তু একবারও কেউ তার দিকে মুখতুলে তাকায়নি। পরিচয় জিজ্ঞেস করেনি। কেননা এনগরীতে এদৃশ্য নতুন নয়। প্রতিদিন নবগঠিত মুজাহিদ বাহিনী রণাঙ্গনে যাচ্ছে আর পুরাতনরা ফিরে আসছে।
কিন্তু নবাগত এই অশ্বারােহী এতে দারুন ব্যাথিত হলেন। আঘাত অনুভব করলেন হৃদয়ে।
অতীতের স্মৃতি মনে করতে করতে সহসা তার বাড়ির সম্মুখে এসে দাড়ালেন। সদর দরজা খােলা। হা করে আছে। যেন তারই প্রতিক্ষায় – প্রহর গুনছে। উকি মারলেন ভিতরে। সন্ধানী দৃষ্টি তার চোখের তারায়। দেখলেন, নিজ হাতে তৈরী ঘরটি এখনাে অক্ষত দাড়িয়ে আছে। যেন তাকে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে। এক ঝাক আনন্দ ফুর্তি তাকে ঘিরে ধরলাে। টেনে নিয়ে গেল ভিতরে। সােজা উঠানে গিয়ে দাড়ালেন। বুকভরা তাঁর আশা, চোখ ভরা তার আকুতি। এদিক সেদিক তাকাতে লাগলেন।
প্রবেশদ্বারে প্রবেশ কালে কড় কড় আওয়াজ হয়েছিলাে । আওয়াজ শুনে গৃহকর্তা সন্ধিগ্ধ হলেন। ছুটে এলেন রেলিংয়ের পাশে। দেখলেন। জ্যোস্না স্নাত উঠান । চাঁদের আলােতে ঝলমল করছে চারদিক। উঠানের আলাে আধারের মাঝে দাড়িয়ে আছে এক অশ্বারােহী হাতে বর্শা কাঁধে ঝক ঝকে তলােয়ার। অদূরেই তার যুবতী স্ত্রী কিংকর্তব্যবিমূঢ়া। জড়াে সড়াে হয়ে দাড়িয়ে আছে।
এ দৃশ্য গৃহকর্তার গায়ে আগুন ধরিয়ে ছিলাে। অগ্নিশর্মা হয়ে খালী গায়ে জুতা ফেলে সিড়ি ভেঙ্গে তেড়ে এলেন দ্বিতল থেকে। চিৎকার করে বললেন, হে আল্লাহর দুশমন! পেশী বলে কী করতে চাস, অন্তঃপুরে কী আক্রমণ করবি। বলতে বলতে উন্মত্ত সিংহের ন্যায় ঝাপিয়ে পড়লাে অশ্বারেহীর উপর । অশ্বারােহী তাে হতভম্ব। বিপুল বিমূঢ়তা যেন তার জিবকে ঠেসে ধরেছে। শােরগােল শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এলাে। ঘিরে ফেললে অশ্বারােহীকে। গৃহকর্তা এবার অজ্ঞাত অশ্বারােহীকে মজবুত করে ধরে বলতে লাগলাে, দুরাচার, চল এবার কাজীর দরবারে। বিচার নাহলে তােকে ছাড়ছি না।
অশ্বারােহী এবার সর্বশক্তি ব্যায় করলেন। সরবে চিৎকার করে বললাে। সাবধান, সামলে। কথা বলবি। আমি দুরাচার নই। তুই দুরাচার। এটা আমার বাড়ি। এ ঘর আমি নিজে তৈরী করেছি। তুই কে? পলকে চার দিকে দৃষ্টি বুলালেন। বললেন, আপনারা কেউ কী ফররুখকে চিনতেন? আমিই সেই ফররুখ, জিহাদে গিয়েছিলাম ত্রিশ বৎসর আগে।
গৃহকর্তার মা দ্বিতলের এক কক্ষে নিদ্রিত ছিলেন। শােরগােলে তার নিদ্রার ঘাের ভেঙে গেল। একটি উচ্চকণ্ঠ ভেসে এলাে উঠান থেকে । অতি পরিচিত কণ্ঠ। “আমিই সেই ফররুখ, জিহাদে গিয়েছিলাম...........”ধড়ফড় করে বিছানা ছেড়ে উঠলেন। কর্ণকে বিশ্বাস করতে পারলেন না। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন রের্লিংয়ে। তাকিয়ে দেখেন, উঠানে প্রতিবেশীদের জটলা। মাঝে দাড়িয়ে আছে এক অশ্বারােহী। তার স্বামী ফররুখ। পরিবেশ উত্তপ্ত ।
হতবুদ্ধিতায় বাকরুদ্ধ হয়েগেল। উত্তেজনায় শিউরে উঠলাে তার শরীর। বুক চিরে বেরিয়ে এলাে কাঁপা কাঁপা কন্ঠস্বর । বসন্তের হাওয়ায় দোল খাওয়া কুসুম কলির মত। ছেড়ে দাও তা-কে। বরিয়াহ তােমার আব্বাকে ভিতরে নিয়ে এসাে।
মুহূর্তকাল মাত্র। একটি পরিচয় মাত্র । উষ্ণতা পরম হৃদ্যতায় পরিণত হলাে। রবিয়াহ তার পিতাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। পিতা পুত্রের কপালে গভীর স্নেহের চুমু এঁকে দিলেন। সে এক মােহনীয় দৃশ্য। এক স্বর্গীয় পরিবেশ। দ্বিতল থেকে নেমে এলেন রবিবাহর মা। অশ্রু ছল ছল নয়নে তিনযুগ পর আজ স্বামীকে বরণ করলেন। এ যেন এক দুঃস্বপ্ন। কিন্তু আজ তাই বাস্তবায়িত হলাে।
দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর নিরালায় চাঁদের জ্যোস্নায় বসে স্বামী স্ত্রী কথা বলছিলেন। ববিয়াহর পিতা ও মাতা। রণাঙ্গনের কথা। নিরুদ্দেশের কথা, আরাে কতাে কী। কিন্তু স্ত্রী ছিলাে অন্য চিন্তায়। অন্য জগতে। স্বামীর গচ্ছিত ত্রিশ হাজার দিনার সে সন্তান লালনে শেষ করে ফেলেছে। এখন স্বামী কে কী দিয়ে বুঝ দিবে। কী ভাবে বুঝাবে যে, রবিয়াহকে মানুষ করতে ত্রিশ হাজার দিনার শেষ করে ফেলেছে। স্বামীই বা কি ভাবে তা গ্রহণ করবেন।
এক ঝাক দুঃশ্চিন্তা তার মাথায় পােনা মাছের মত কিল বিল করছিলাে । স্বামীকে ফিরে পাবার আনন্দ ফুর্তি দুঃশ্চিন্তার আবর্তে খেই হারিয়ে ফেলছিলাে। ইতিমধ্যে ফররুখ স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, রবিয়ার মা! চার হাজার দিনার সাথে এনেছি। তােমার নিকট গচ্ছিত দিনারগুলাে বের করাে। একসাথে রেখে দেই। সুযােগ মতাে একটি বাগান বা বড়ােবাড়ি কিনে তার আয়ের দ্বারা বাকী জীবন কাটিয়ে দিবাে।
স্ত্রী নিরব। অন্যমনষ্ক । কোন কথার উত্তর দিলেন না। পুনরায় স্বামী বললেন, কোথায় দিনার গুলাে রেখেছ বরিযার মা, নিয়ে এসে এক সাথে রেখে দেই ।
স্ত্রীর কণ্ঠে গাম্ভির্য স্বর । বললেন, যেখানে হিফাজত করার ঠিক সেখানেই হিফাজত করেছি। দু এক দিনের মধ্যেই তা এনে দিবাে, ইনশা আল্লাহ।
মিনার থেকে আজান ধ্বনি ভেসে এলাে। মধুময় সুললিত কণ্ঠসর। সালাতের আহবান। ফালাহের আহবান। আজান ধ্বনিতে ফররুখের হৃদয় বিগলিত হলাে। অজু করলেন, মসজিদে রওনা হওয়ার প্রাক্কালে স্ত্রীকে বললেন,রবিয়াহ কোথায়?
রবিয়ার মা বললেন। সে তাে আগেই চলে। গেছে। আপনি বড্ড দেরী করে ফেলেছেন। দ্রুত না গেলে জামাত পাবেন না।
মসজিদে গিয়ে দেখেন, সবেমাত্র জামাত শেষ হয়েছে। তাই এক পাশে দাড়িয়ে সালাত আদায় করলেন। তার পর রওজা মােবারকের সম্মুখে হাজির হলেন। চক্ষু অস্ত্র ছল ছল । মুদিত ওষ্ঠাধর খেজুর পাতার মত তির তির করে কাঁপছে। রাসুলের ইশক তাঁকে তন্ময় করে তুললাে। দীর্ঘক্ষণ দোয়া দুরুদ পাঠ করলেন।
ফিরতি পথে দেখলেন, মসজিদে নববীর প্রাঙ্গন জুড়ে এক নজির বিহীন দরস মজলিস বসেছে। অত্যন্ত আশ্চর্য হলেন মুহাদ্দিস সাহেবের চারপাশে চক্রাকারে সারিবেধে ইলম পিপাসুরা বসে আছেন। তিল ধারণের ঠাই নেই।
চারদিকে দৃষ্টি ফেললেন। দেখলেন উষ্ণীবাবৃত, বয়ােবৃদ্ধ লােকেরা বসে আছে। - মদিনার, সম্মানিত ব্যক্তি বর্গেরও অভাব নেইমজলিসে। যুবকরা হাটু গেড়ে কলম হাতে বসে - শিক্ষকের কথা গুলাে কাগজের পাতায় আবদ্ধ করছে। মূল্যবান হিরা মানিক্যের মতই তা সংরক্ষণ করছে। সকলের দৃষ্টি শিক্ষকের প্রতি নিবদ্ধ। নিরব, নিঃশব্দ। শুধু কলমের খস্ খস্ কোমল এক আওয়াজ। সবাই এক মনে এক ধ্যানে শুনছে আর লিখছে।
মুহাদ্দিস সাহেবকে চিনতে চেষ্টা করলেন। - কিন্তু দূরবর্তীতার কারণে চিনতে পালেন না। তবে তার উজ্জল স্পষ্ট বর্ণনাভঙ্গী, অনর্গল পঠন রীতি, অভূতপূর্ব স্বরণ শক্তি ও জ্ঞানের গভীরতা তাকে বিস্মিত করলাে। ইতিমধ্যে মজলিস ভেঙ্গে গেল। চারদিক থেকে ছাত্ররা তাকে ঘিরে ফেললাে এবং - পিছু পিছু মসজিদে নববী থেকে বের হয়ে গেলেন।
অনুসন্ধিৎসু মনকে ফররুখ আর ধরে রাখতে পারলেন না। জনৈক ব্যক্তিকে ইশারায় ডেকে জিজ্ঞেস করলেন। ভাই, মােহাদ্দেস সাহেবের নাম কী?
লােকটিঃ (বিস্ময়ে বিমুঢ় কন্ঠে) মদিনার কে আছে তাকে চিনে না।
ফররুখ বল্লেনঃ ভাই বহুদিন যাবৎ আমি মদিনায় অনুপস্থিত ছিলাম। গতকাল ফিরেছি মাত্র।
লােকটিঃ উহু! তবে শুনুন। তিনি একজন শ্রেষ্ঠ তাবেঈ। মস্ত বড় আলেম। মদিনার সেরা মুহাদ্দিস। ফকিহ ও ইমাম।
ফররুখঃ বেস, কিন্তু বয়সতাে তেমন মনে হলাে না।
লােকটিঃ (অনর্গল বলে যাচ্ছে) মালেক বনে আনাস, আবু হানিফা, ইয়াহইয়া ইবনে সহিদ আল আনসারী, সুফিয়ান সাওরী, আব্দুর রহমান ইবনে আমর আল আওযায়ী, লাইস ইবনে সায়াদ প্রমূখ জ্ঞানী গুনী ব্যক্তিবর্গও তার মজলিসে যােগদান করেন।
ফররুখঃ কিন্তু আপনি তাে।
লােকটিঃ (কথার সুযােগ নাদিয়ে বলতে লাগলাে) তিনি অত্যন্ত সৎচরিত্র বান, বিনয়ী, দানশীল, মদিনার লােকেরা তার চেয়ে বেশী দানশীল কাউকে চিনে না। দুনিয়ার ধন সম্পদে এতাে বিমুখ আর আল্লাহর প্রতিশ্রুত বিষয়ে এতাে আস্থাবান আর কাউকে জানে না।
ফররুখঃ কিন্তু আপনিতাে এখনাে তার নাম বলেন নি।
লােকটিঃ হাঁ, তার নাম রবিয়াতুর রায়।
ফররুখঃ (বিস্মিত কণ্ঠে স্বগতােক্তি করলেন) রবিয়াতুর রায়!
লােকটিঃ হাঁ, তার নাম রবিয়াহ, কিন্তু মদিনার জনসাধারণ সকলেই তাঁকে রবিয়াতুর রায় বলে ডাকে। কেননা নতুন কোন সমস্যা (কোরআন ও হাদীসে যার স্পষ্ট সমাধান নেই) এলে সকলেই তার সরণাপন্ন হয়। তিনি ইজতেহাদ করে এমন রায় পেশ করেন যা মনের সব সন্দেহ দূর করে দেয়।
ফররুখঃ (অধৈর্য হয়ে) কিন্তু তুমিতাে তার পিতার নাম বললে না ।
লােকটিঃ হাঁ, তাঁর পিতার নাম ফররুখ । উপনাম আবু আব্দুর রহমান। পিতা জিহাদে যাবার পর রবিয়াহ জন্ম গ্রহণ করেন। মা তাকে লালন পালন করেন। মনের মতাে গড়ে তােলেন। নামাজের পূর্বে লােকদের বলাবলি করতে শুনেছি, তার পিতা নাকি রাতে ফিরে এসেছে।
ফররুখের চক্ষুর কোণ বেয়ে ফোটা ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লাে। আনন্দাশ্রু। দ্রুত তিনি বাড়িতে চলে এলেন। রবিয়াহর মা তাকে অশ্রু-সজল দেখে বিস্মিত হয়ে বললেন, কী হলাে আবু রবিয়াহ, অশ্রু কেন?
এবার ফররুখের মুখ জুড়ে মধুর হাসি। শিউলি ফুলের পাপড়ির পবিত্র হাসি। বললেন, যা হবার ভালই হয়েছে। পুত্র রবিয়াকে মসজিদে নববীতে দেখলাম । মান সম্মান আর ইলমে শীর্ষে পৌছেছে।
রবিয়ার মা এবার সূবর্ণ সুযােগটি লুফে নিলেন। বললেন, একটি প্রশ্ন করবাে, ভেবে চিন্তে উত্তর দিবে তাে। আচ্ছা বলােতাে, কোনটি তােমার প্রিয় । ত্রিশ হাজার দিনার না এমন সুযােগ্য পুত্র ।
প্রশ্ন শুনে ফররুখ আবার হাসলেন। বললেন, রবিয়াহর মা। সারা দুনিয়ার চেয়ে এমন সন্তানই আমার নিকট অধিক প্রিয়। এবার রবিয়াহর মা হেসে হেসে বললেন। আপনার গচ্ছিত দিনার গুলাের পরিবর্তে এ সন্তানটি আপনাকে উপহার দিলাম। আপনি সন্তুষ্ট।
ফররুখ বললেনঃ আল্লাহ তােমাকে ইহ-পরলােকে এর উত্তম বিনিময় দান করুন।
═──────────────═