তাযকিয়া মজলিসের শিক্ষা
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহ
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালাম আলা রাসুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাদেরকে আবার আরেকটি তাযকিয়া মজলিসে বসার তাওফিক দান করেছেন। ভাই! আপনারা সবাই কেমন আছেন?
উপস্থিত এক ভাইঃ আলহামদুলিল্লাহ সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে খুব ভালো রেখেছেন। আপনি কেমন আছেন ভাই?
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ আমিও আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো আছি।
তাযকিয়া ক্লাশ থেকে আমরা কী কী শিক্ষা পেয়েছি
ভাই! আজকের ক্লাশটি আমরা একটু ভিন্নভাবে শুরু করতে চাচ্ছি। এ পর্যন্ত আমরা তাযকিয়া বিষয়ক বেশ কয়েকটি ক্লাশে অংশগ্রহণ করেছি আলহামদুলিল্লাহ। এটি একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার মেহেরবানি ও দয়া। আলহামদুলিল্লাহ সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। আজকে ভাই আমরা প্রত্যেকেই একটু বলবো, এ ক্লাশগুলো থেকে আমরা কী কী শিক্ষা পেয়েছি যেগুলোকে আমরা আমাদের বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছি এবং আলহামদুলিল্লাহ উপকৃতও হয়েছি? পাশাপাশি এও বলবো যে, সেই শিক্ষাগুলোকে আমরা আমদের জীবনে কীভাবে প্রতিফলন ঘটিয়েছি। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আমরা যেন একে অপরের অভিজ্ঞতা ও আমল দেখে অনুপ্রাণিত হতে পারি এবং নিজের জীবনেও তা প্রতিফলন ঘটাতে পারি ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরির একমাত্র রাস্তা
উপস্থিত দ্বিতীয় ভাই : আমি এ ক্লাশগুলো থেকে যে যে শিক্ষা পেয়েছি তার কয়েকটি হল,
১। বান্দা যখন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে তখন আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন এবং তাকে তাহাজ্জুদের জন্য শেষ রাতে উঠার তাওফিক দেন এবং তার সব কাজে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন।
২. প্রতিটি মুহুর্তে স্মরণে রাখতে হবে যে, আল্লাহ আমাকে দেখছেন। তাই এমন কাজ করতে হবে যা আল্লাহ পছন্দ করেন। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরির একমাত্র রাস্তা হল, আল্লাহর পছন্দের কাজগুলো করা।
দ্বীনী ইলম অর্জন হয়েছে
উপস্থিত তৃতীয় ভাই : আমি এ ক্লাশগুলো থেকে যা লাভ করেছি তা হল, ১. দ্বীনী ইলম অর্জন হয়েছে। ২. মাঝে মাঝে নিজের মধ্যে তাৎক্ষনিক অনুতপ্ততা এসেছে।
ভাইদের সাথে নম্র আচরণ করা
চতুর্থ ভাই : আমি যা শিখেছি তা হল, ভাইদের সাথে যে কোনো বিষয় এমনভাবে ডিল করা যেন তারা নিজেদের সমস্যাগুলো আমাকে সহজে বলতে পারেন। যদিও আমি এটাতে পুরোপুরি সফল হয়নি। তবে কিছুটা সফলতা পেয়েছি।
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ আলহামদুলিল্লাহ।
সব ধরনের নিফাক থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদত করা
পঞ্চম ভাই: আমি এ ক্লাশগুলো থেকে সব ধরনের নিফাক থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদত করা এবং দ্বীনের পথে অবিচল থাকার উৎসাহ পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। পাশাপাশি সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করা ও তাঁকে ভয় করার শিক্ষাও আমি এ ক্লাস থেকে পেয়েছি। এ বিষয়টি আমার অন্তরকে বেশ নাড়িয়ে তুলেছে।
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকেও নিফাক মুক্ত ইবাদত করার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক
ষষ্ঠ ভাই: এ ক্লাশ থেকে আমি যে সব শিক্ষা লাভ করেছি তার তালিকা বেশ লম্বা। তা থেকে কয়েকটি উল্লেখ করা যেতে পারে,
১. নিজের অন্তরকে পরিশোধিত করার জন্য অনেক ইলম হাসিল হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
২. আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের উপলব্ধি বেড়েছে আলহামদুলিল্লাহ। ৩. আল্লাহর পথের সৈনিকদের জন্য আল্লাহর সাহায্য লাভ করার প্রকৃত ওয়্যারলেস কানেকশন ‘কোনটি’ এবং কীভাবে সেই কানেকশন সুদৃঢ় ও মজবুত করতে হয় সে উপলব্ধি এসেছে এবং সম্ভবত তা কিছুটা হলেও বাড়াতে সক্ষম হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
৪. নিজের ঈমানী দূর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি এবং তা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পেয়েছি। আল্লাহর তাওফিকে ধীরে ধীরে কিছুটা উন্নতিও হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ
৫. মাসুল-মা’মুর সম্পর্কের নতুন উপলব্ধি এসেছে এবং এ সম্পর্ক আরও উন্নত হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ মাশাআল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহব্বত
সপ্তম ভাই : আমি যে শিক্ষাগুলো পেয়েছি তা নিম্নরূপ,
১. তাযকিয়া মজলিসের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছি। যার কারণে আগে নিয়মিত উপস্থিত না থাকলেও এখন নিয়মিত থাকার চেষ্টা করি।
২. আলহামদুলিল্লাহ বেশ কিছু আমলের মধ্যে উন্নতি হয়েছে। যেমন, এখন আযকার নিয়মিত আদায় হচ্ছে। যা আগে হতো না।
৩. এই মজলিসে অংশগ্রহণ করে কিংবা পরে ক্লাসলগ পড়ে মনের মধ্যে কিছুটা হলেও পরিবর্তন অনুভব করেছি আলহামদুলিল্লাহ।
৪. নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে কিছুটা হলেও সচেতনতা তৈরি হয়েছে। যার ফলে কাজের মধ্যে পূর্বের তুলনায় কিছুটা হলেও বরকত অনুভব করি আলহামদুলিল্লাহ।
৫. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে শিক্ষাটি আমি এ ক্লাস থেকে পেয়েছি তা হল, মনের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার মহব্বত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহব্বত তাঁর সুন্নতের মহব্বত, দ্বীনের মহব্বত পূর্বের তুলনায় কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পেয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ আলহামদুলিল্লাহ।
আমার দ্বারা কেউ যেন কষ্ট না পান
অষ্টম ভাই : আমি যে শিক্ষাগুলো পেয়েছি তা হল, ১. এখন আলহামদুলিল্লাহ আমার অবস্থা হল যদি কখনো ভুলে বা স্বেচ্ছায় কোনো খারাপ কাজ করতে শুরু করি সঙ্গে সঙ্গে মনে আসে যে, একজন আছেন যিনি প্রতি মুহুর্তে আমাকে দেখছেন।
২. আমার দ্বারা যেন কখনো কোনো ভাই কষ্ট না পান, এ বিষয়ে নিজের মধ্যে যথেষ্ট সচেতনতা এসেছে আলহামদুলিল্লাহ।
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ আলহামদুলিল্লাহ। মাশাআল্লাহ। এটাই হচ্ছে তাকওয়া-আল্লাহভীরুতা। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করেন।
আন্তরিক দোয়ার মাধ্যমেও ঈমানের মধ্যে উন্নতি আসে
নবম ভাইঃ আমি ক্লাসে খুব বেশি উপস্থিত থাকতে পারিনি। তবে যে কয়েকটিতে ছিলাম তা থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে শিক্ষাটি আমি পেয়েছি তা হল, দুর্বল ঈমানের হালতেও সব সময় আল্লাহর কাছে মজবুত ঈমানের জন্য দোয়া করতে থাকা। আন্তরিক দোয়ার মাধ্যমেও ঈমানের মধ্যে উন্নতি আসে এবং তা মুমিনকে দ্বীনের ওপর অটল থাকতে সাহায্য করে।
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ আলহামদুলিল্লাহ।
হয় ভাল কথা বলো, না হয় চুপ থাকো
দশম ভাইঃ ভাই! আমি মাত্র দুটি মজলিসে বসেছি। এতেই আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক উপকৃত হয়েছি। মাত্র দুটি মজলিসে বসে খুবই গুরুত্ব পূর্ণ যে শিক্ষাটি আমি লাভ করেছি এবং এর দ্বারা আমি অনেক উপকৃতও হয়েছি তা হল এই কথাটি, ‘হয় ভাল কথা বলো, না হয় চুপ থাকো’। এখন আমি বন্ধুদের সাথে কথাবার্তা খুব চিন্তা ভাবনা করে বলি। এর দ্বারা আমি মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরীর মত বড় বড় কবিরা গুনাহ থেকে খুব সহজেই বেঁচে থাকতে পারছি আলহামদুলিল্লাহ।
কী কী কাজ করলে আমার রব আমার প্রতি বেশি খুশি হবেন?
একাদশতম ভাইঃ ভাই আমি এই ক্লাস থেকে আমার রবকে আরও বেশি জানতে পেরেছি। আমার রবের বড়ত্ব ও মহত্ত্ব নতুন করে বুঝতে শিখেছি। আমার রবের সাথে কানেক্ট হতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ। রবকে নিয়ে চিন্তা করার মজা উপলব্ধি করতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ আমার অবস্থা এখন এমন যে, সব সময় আগ্রহী থাকি এ কথা জানতে যে, আমার রব কেমন? তাঁর বড়ত্ব কত বেশি? তিনি আমাকে কেমন দেখতে চান? কী কী কাজ করলে আমার রব আমার প্রতি বেশি খুশি হবেন? তাঁর সন্তুষ্টি কিসের সাথে জড়িত? আর আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন ওই কাজগুলোই করতে চাই যেগুলো করলে আমার রব আমার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন।
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ আলহামদুলিল্লাহ। মাশাআল্লাহ ভাই। আল্লাহ আমাদেরকেও এ তাওফিক দান করেন।
যে কোন বিপদে পড়ে আল্লাহমুখী হওয়া
দ্বাদশতম ভাইঃ আমি এ ক্লাসগুলো থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে শিক্ষাগুলো পেয়েছি তা হল, ১. যে কোন বিপদে পড়ে আল্লাহমুখী হওয়া।
২. আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা।
৩. আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়া।
আপনার পাওনা আপনি পেয়ে গেছেন
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ মাশাআল্লাহ। ভাই আপনাদের একটা কথা বলি। মনে করুন আপনি কাউকে একটা উপকার করলেন। এর বিনিময়ে সে অন্তর থেকে বললো, আলহামদুলিল্লাহ, জাযাকাল্লাহু খাইরান। ভাই এতেই আপনার পাওনা আপনি পেয়ে গেছেন।
কীভাবে ভাই? কারণ, হাদিসে এসেছে,
عن أسَامة بن زيد رضي الله عنهما قَالَ: قَالَ رسُولُ الله صلى الله عليه وسلم : مَنْ صُنِعَ إِلَيْهِ مَعْرُوفٌ، فَقَالَ لِفاعِلهِ: جَزَاكَ اللهُ خَيرًا، فَقَدْ أَبْلَغَ فِي الثَّنَاءِ
হযরত উসামা বিন যায়েদ রাযি. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কারো কোনো উপকার করা হলে সে যদি উপকারকারীকে ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দেন) বলে দোয়া দেয় তাহলে সে উপকারকারীর পূর্ণাঙ্গরূপে প্রশংসা করল। (জামে তিরমিযী : ২০৩৫)
অন্য হাদিসে এসেছে,
عن أنس رضي الله عنه قال: قَالَ رسول الله صلى الله عليه وسلم : إنَّ الله لَيرْضَى عَنِ العَبْدِ يَأكُلُ الأَكْلَةَ، فَيَحْمَدُهُ عَلَيْهَا، وَيَشْرَبُ الشَّرْبَة، فَيَحْمَدُهُ عَلَيْهَا
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ ওই বান্দার প্রতি খুশি হন, যে কিছু খেলে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং কিছু পান করলেও আল্লাহর প্রশংসা করে (অর্থাৎ, আলহামদুলিল্লাহ পড়ে) (সহী মুসলিম ২৭৩৪)
হাদিস থেকে বুঝা যায়, বান্দা যখন কোনো নেয়ামত লাভ করে এরপর আলহামদুলিল্লাহ বলে তখন আল্লাহ খুব খুশি হন।
তো আপনার কোনো উপকার পেয়ে কোনো ভাই যখন আলহামদুলিল্লাহ বলে তখন আল্লাহ কত খুশি হন। আল্লাহর এ খুশি হওয়ার কারণ তো আপনিই হলেন, তাই না ভাই! তার মানে আপনিই যেন আল্লাহকে খুশি করলেন।
সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস সে পেয়ে ফেলল
ভাই! আমরা ছোট ছোট আমলগুলোর প্রতি খুব একটা গুরুত্ব দেই না। অথচ ওগুলো এক একটি মহা মূল্যবান মুক্তার মতো। আমি প্রায়ই নিজেকে একটি প্রশ্ন করি যে, সাহাবায়ে কেরাম কীভাবে এমনটা পেরেছেন যে, বুকের ভিতর দিয়ে বর্শা ঢুকে গেছে আর মুখে বলছেন, কাবার রবের শপথ আমি সফল হয়ে গেছি। কিংবা উত্তপ্ত তেলের কড়াইয়ে ফেলে দেয়া হবে আর তিনি শুধু এই কারণে কাঁদছেন যে, হায়! যদি আল্লাহর জন্য এভাবে হাজার বার মরতে পারতেন!
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবার অন্তরকে এই উপলব্ধির জন্য উন্মুক্ত করে দেন।
কেউ আল্লাহকে পেল মানে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস সে পেয়ে ফেলল। যার সাথে অন্য কিছুর কোনো তুলনাই হয় না। যে আল্লাহকে পেল সে দুনিয়ার অন্য সবকিছু থেকে মুক্ত হয়ে গেল। কোনো কিছুই তখন আর তার ক্ষতি করতে পারে না, সে যখন যে অবস্থায় থাকে তখন ওই অবস্থার ওপরই সে খুশি থাকে। আল্লাহর ইচ্ছাটাই হয় তখন তার কাছে সবচেয়ে বড়।
হে আল্লাহ! আপনি সেই দেয়ালটি সরিয়ে দিন
একটি ঘটনা বলি। এক লোক রাস্তায় বসে প্রকাশ্যে মদ পান করতো। লোকজন যখন নামাজের পড়তে মসজিদে যেত তখন সে তাদেরকে লক্ষ্য করে উল্টা-পাল্টা কথাবার্তা বলতো। মাঝে মধ্যে তারাও তাকে কিছু কথা শুনিয়ে দিত। হঠাত একদিন সবাই তো অবাক! ওই মদখোরটা ফজরের জামাতে মসজিদের প্রথম কাতারে বসা। সবাই ভাবলো, হয়তো এমনি এমনি চলে এসেছে। জোহরের সময় দেখা গেল একই দৃশ্য। সে প্রথম কাতারে বসা। কী ব্যাপার! এরপর আসরে, মাগরিবে এমনকি ইশার সময়ও তাকে প্রথম কাতারে দেখা গেল। ইশার নামায শেষ হলে একজন তাকে জিজ্ঞেস করল, ঘটনাটা কি, একটু খুলে বলবেন ভাই? আপনার মাঝে হঠাত এমন পরিবর্তন কীভাবে এলো? তখন সে বললো, গতকাল মাগরিবের সময় যখন তোমরা নামাজে যাচ্ছিলে আর আমি আজে বাজে কথাবার্তা বলছিলাম, তখন হঠাত আমার কানে গেল, “আল্লাহু আকবার! আল্লাহু আকবার!!”। তখন আমার মনে হল, এ আওয়াজ যেন আমার অন্তর ভেদ করে ফেলল। আমার অন্তর তখন ভয়ে কেঁপে উঠলো। আমি বাড়িতে গিয়ে হাউ মাউ করে কাঁদতে শুরু করলাম আর আল্লাহকে বললাম, হে আল্লাহ! আমার এবং আপনার মাঝে একটি দেয়াল তৈরি হয়ে আছে। যা আমি সরাতে পারছি না। হে আল্লাহ! আপনি সেই দেয়ালটি সরিয়ে দিন। এরপর থেকেই আমি এখানে!
উপস্থিত এক ভাইঃ আল্লাহর কসম! আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার মজা আল্লাহকে নারাজ করার মজার চেয়ে কম হবে, এটা হতেই পারে না।
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ সত্যি কথা! আপনি ভাই খুব সুন্দর কথা বলেছেন ভাই! মাশাআল্লাহ।
দ্বিতীয় ভাইঃ আমাদের এবং আল্লাহর মধ্যবর্তী দেয়াল সরানোটাই হল গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
এখনও কি সময় হয়নি?
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ কুরআনের কিছু আয়াতের আবেদন এতটাই হৃদয়স্পর্শী যে, একটু চিন্তা করলে অবাক হয়ে যাই। যেমন, সূরা হাদীদের নিচের আয়াতটি,
أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّـهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ
“যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার জন্য হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় এখনও হয়নি? তারা যেন ওই সব লোকদের মতো না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী। (সূরা হাদীদ ১৬)
দেখুন ভাই, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কীভাবে আমাদেরকে ডাকছেন! কোথায় তিনি, কী তাঁর শান ও আযমত! আর কোথায় আমরা! আল্লাহু আকবার! তিনি কত সুন্দর করে, কত মায়ার সাথে আমাদের মত বান্দাদেরকে বলছেন, এখনও কি তোমাদের ফুসরত হলো না আমাকে স্মরণ করার! এখনো কি তোমরা আমার ব্যাপারে একটু ভাববে না! সুবহানাল্লাহ!
ভাই, আমরা আমাদের মা বাবার অবাধ্য হলে তারাও তো আমাদেরকে এতো সুন্দর করে ডাকবেন না। আহ! আল্লাহ আমাকে আপনাকে কত ভালোবাসেন! কত ভালোবাসেন!
এমন আরেকটি আয়াত রয়েছে সূরা যুমারে। আল্লাহ বলেছেন,
وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّماوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
তারা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাঁর মুষ্টিতে এবং আকাশসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাদেরকে তাঁর সাথে শরিক করে তিনি তাদের থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা যুমার : ৬৭)
কত ক্ষমতা আল্লাহর! কত মহান তিনি! তারপরও তিনি আমাদেরকে কত ভালোবাসেন। আমরা তাঁর অবাধ্য হলে তিনি কত মায়ার সাথে আমাদেরকে তাঁর কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য ডাকতে থাকেন। কিন্তু হায়! কত বড় জালিম আমরা! আমরা আল্লাহকে চিনলাম না।
এখন তুমি আমার যথার্থ শুকরিয়া আদায় করলে
একবার আল্লাহ তাআলা হযরত দাউদ আ.কে বললেন, হে দাউদ! তুমি আমার যথাযথ শুকরিয়া আদায় করো। তখন হযরত দাউদ আ. বললেন,
كيف أشكرك حق الشكر، شكري لك نعمة منك عليّ، تستحق الشكر عليها
হে আল্লাহ! আমি কীভাবে আপনার যথাযথ শুকরিয়া আদায় করবো? (আপনার যথাযথ শুকরিয়া আদায় করার সামর্থ যে আমার নেই। কারণ,) আপনার শুকরিয়া আদায় করতে পারা, এটিও তো আপনার দেয়া আরেকটি নেয়ামত, এর জন্য তো শুকরিয়া আদায় করতে হবে। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন,
الآن شكرتني يا داؤد
হে দাউদ! এখন তুমি আমার যথাযথ শুকরিয়া আদায় করলে (অর্থাৎ আমার শুকরিয়া আদায় করতে যে তুমি অক্ষম এ কথা স্বীকার করার মাধ্যমেই তুমি আমার যথাযথ শুকরিয়া আদায় করলে)।
এটা আমার রবের কালাম!
উপস্থিত এক ভাইঃ বর্ণিত আছে, হযরত ইকরিমা বিন আবু জাহেল রাযি. কুরআন তেলাওয়াত করতে শুরু করলেই কাঁদতে শুরু করতেন আর বলতে থাকতেন, এটা আমার রবের কালাম! এটা আমার রবের কালাম!
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ ভাই! আপনাদের খেদমতে একটি কথা আরজ করি, আপনারা যদি মনে করেন, আমি আল্লাহ তাআলার মেহেরবানি ও তাওফিকে আপনাদের সামান্য কিছু হলে দ্বীনী খেদমত করেতে পেরেছি তবে আমার জন্য খাস ভাবে দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন আমাকে মাফ করে দেন এবং শাহাদাতের মৃত্যু নসিব করেন। আমীন।
মুমিন মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ
ভাই! হযরত আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রসূলুল্লাহ বলেছেন,
المؤمن مرآة المؤمن
মুমিন মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৪৯১৮)
হাদিসের অর্থ হল, একজন মুমিন তার আরেক মুমিন ভাইকে দেখে নিজেকে ঠিক করবে। নিজের ভুলগুলো সংশোধন করে নিবে। নিজের মধ্যে কোনো গুণ না থাকলে তা অন্য ভাইকে দেখে অর্জন করার চেষ্টা করবে। এভাবে প্রত্যেক মুমিন তার আরেক ভাইয়ের দ্বারা উপকৃত হবে।
তাযকিয়া ক্লাস থেকে অর্জিত যে শিক্ষাগুলোর কথা বিভিন্ন ভাইয়েরা বললেন আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উপরোক্ত শিক্ষাগুলোর ওপর যথাযথভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আজকে আমরা আর অন্য আলোচনায় যাবো না। আপনারা কেউ উৎসাহমূলক কোনো কথা বা সুন্দর কোনো স্বপ্ন শেয়ার করতে চাইলে করতে পারেন ইনশাআল্লাহ
বান্দাদের প্রতি এটি আল্লাহর এক ধরনের দয়া
উপস্থিত এক ভাইঃ আমি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহর একটি উক্তি শেয়ার করতে চাই। তিনি বলেছেন, বান্দা প্রায়ই বিপদে পড়ে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন উত্থাপন করে, তার কাছে বিপদ থেকে মুক্তি কামনা করে। সে বিনয়ের সাথে চাইতে থাকে। মাধ্যম হিসেবে সে ইবাদাত বন্দেগি শুরু করে। প্রাথমিক অবস্থায় তার লক্ষ্য থাকে রিযিক, সাহায্য, নিরাপত্তা বা এ ধরনের কিছু পাওয়া; কিন্তু বিনয়ের সাথে চাওয়ার ফলে সে আল্লাহকে চিনতে পারে। আল্লাহর প্রতি তার ভালোবাসা জন্মায়। আল্লাহকে ডেকে ও স্মরণ করে সে তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ লাভ করে। এই স্মরণই একসময় তার কাছে ওই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রিয় হয়ে ওঠে। বান্দাদের প্রতি এটি আল্লাহর এক ধরনের দয়া। এভাবে অনেক সময় দুনিয়াবী প্রয়োজন দিয়েই তিনি তাদেরকে দ্বীনী উচ্চ স্থানে পৌঁছে দেন।
দেখুন ভাই! বিপদও আল্লাহর একটি নেয়ামত। আল্লাহ আমাদের ভালো চান, আমাদেরকে দিতে চান, আমাদেরকে সম্মানিত করতে চান। আল্লাহ চান, বান্দা যেন তার দিকে রুজূ হয়। আল্লাহ চান আমরা যেন তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তার কাছেই চাই, তাকেই বলি।
উপস্থিত আরেক ভাইঃ ঠিক বলেছেন ভাই! আল্লাহর সাথে সম্পর্কের গভীরতা আসলে অতল, সীমাহীন। শুধু মজারই না, বরং এ মজার সাথে দুনিয়ার আর কিছুরই তুলনা চলে না।
কোন মুসিবত নেয়ামত অপেক্ষা উত্তম?
উপস্থিত আরেক ভাইঃ ওপরের উক্তিটির মতো শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.র আরও একটি উক্তি আছে। সেটিও খুব চমৎকার। তিনি বলেন, যে মুসিবত আপনাকে আল্লাহমুখী করে তা ওই নেয়ামত অপেক্ষা উত্তম যা আপনাকে আল্লাহর কথা ভুলিয়ে দেয়।
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ আমি এক ভাইকে দেখেছিলাম, তিনি বাসের সিটের পিছনে লিখে দিয়েছেন, রিড ‘সুবহানআল্লাহ’–আপনি সুবহানআল্লাহ বলুন।
আল্লাহ চাইলে এই একটি কথা দ্বারাই কাউকে জিকিরের মজা দিয়ে দিতে পারেন। কাউকে হেদায়েতও দিতে পারেন। কারণ, সব কিছু তো আল্লাহর হাতে।
‘তাম্বিহুল গাফেলিন’ নামে একটি বই আছে। আপনারা বইটি পড়তে পারেন। আমি বইটি পড়ে অনেক উপকৃত হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
আর কোনো ভাই কি কিছু বলবেন?
সে জান্নাতের পথে চলতে সক্ষম হবে না
উপস্থিত এক ভাইঃ আমার পছন্দের চমৎকার একটি উক্তি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই ভাই।
উক্তিটি হল, প্রবৃত্তির অনুসরণ হল পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পাথরের ন্যায়। জায়গা থেকে একটু নাড়িয়ে দাও; নিজে নিজেই পড়ে যাবে। কষ্ট তো হবে আপন জায়গায় পুনস্থাপন করতে। যে ব্যক্তি আরামপ্রিয় সে কখনো কষ্টের মুখোমুখি হতে চাইবে না, প্রবৃত্তির বিরোধিতাও করবে না সে জান্নাতের পথে চলতেও সক্ষম হবে না।
বৃদ্ধ বয়সেও তাহাজ্জুদ ছুটতো না
উপস্থিত আরেক ভাইঃ আমার দাদু কিছুদিন হলো বিদেশে চলে গেছেন। তিনি যখন দেশে থাকতেন প্রতিদিন ফজরের সময় আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন। তিনি ফজরের অনেক আগে উঠে তাহাজ্জুদ পড়তে থাকতেন। অথচ প্রায়ই তিনি অসুস্থ থাকতেন। তাহাজ্জুদের জন্য যেন উঠতে পারেন এ জন্য তার ঘড়িতে এলার্ম দেয়া থাকতো। কোনো কারণে তাঁর কখনো তাহাজ্জুদ ছুটে গেলে আমাদেরকে খুব ধমকাতেন, আমরা কেন তাকে জাগিয়ে দেইনি? মনে হতো যেন তাঁর ওপর পাহাড় ভেঙ্গে পড়েছে। আমার এমন দিনের কথা খুব কমই মনে পড়ে যে, তিনি ফজরের নামাজ পড়েছেন অথচ তাহাজ্জুদ পড়েননি। তাছাড়া এই বৃদ্ধ বয়সেও তিনি প্রতি রমজানে ২০ রাকাত তারাবি পড়তেন। ২০ রাকাত পড়তে না পারলে আফসোস করতেন আর আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে থাকতেন।
শীঘ্রই ব্যাপকভাবে জিহাদের ডাক এসে যাবে
উপস্থিত আরেক ভাইঃ এক ভাইয়ের দেখা ছোট একটি স্বপ্ন এবং তার তাবির আমি শেয়ার করতে চাই।
স্বপ্নটি হল, ওই ভাই দেখছেন, তিনি তাঁর শহরের সবচেয়ে বড় (প্রধান) মসজিদের সামনে উপস্থিত। মসজিদ থেকে আযান শোনা যাচ্ছে। জামাতের সময়ও প্রায় হয়ে গেছে। তখন তিনি তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ট এক বন্ধুকে দেখছেন যে, সে জামাতে শামিল হতে গাফলতি করছেন। স্বপ্নদ্রষ্টা ভাই তাকে জামাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও সে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। তখন তিনি হতাশ হয়ে একা একাই মসজিদের দিকে এগিয়ে যান।
এক ভাই স্বপ্নটির তাবির এভাবে দিয়েছেন যে, খুব শীঘ্রই ব্যাপকভাবে জিহাদের ডাক এসে যাবে (তাঁর উদ্দেশ্য হল, গাযওয়াতুল হিন্দ এবং ইমাম মাহদীর আবির্ভাব) আর আপনার সবচেয়ে ঘনিষ্ট ব্যক্তিটিও ওটাকে সমর্থন করবে না। তবুও আপনাকে আল্লাহর পথে বের হয়ে যেতে হবে এবং এ পথে অবিচল থাকতে হবে।
মুজাহিদদের সবগুলো গ্রুপ একত্রিত হয়ে গেছে
উপস্থিত আরেক ভাইঃ আমি যেই ভাইয়ের মাধ্যমে জিহাদের বুঝ লাভ করেছি এবং সঠিক মানহাজের ব্যাপারে ক্লিয়ার হয়েছি, ওই ভাইয়ের সাথে দীর্ঘ কয়েকবছর যাবত আমার কোনো দেখা সাক্ষাত নেই। একবার স্বপ্নে দেখি, আমি ও আরেকজন ভাই একটি রাস্তার পাশে বসে আছি। তখন দেখি, ওই ভাই আমাদের দুজনকে মুজাহিদদের সবগুলো গ্রুপ একত্রিত হয়ে গেছে, বলে সুসংবাদ শুনাচ্ছেন।
দুনিয়ার পুরুষরা পাগল হয়ে যেত
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ সুবহানাল্লাহ! আমার নিজের একটি ঘটনা বলি। আমি একদিন রাস্তা দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলাম। হঠাত মনে পড়লো, হাদিসে এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুনিয়ার পুরুষরা যদি জান্নাতের হুরদেরকে এক ঝলক দেখতে পেত তাহলে তারা সবাই পাগল হয়ে যেত। আমি তখন মনে মনে ভাবলাম, আচ্ছা এখন যদি আসমান থেকে একজন হুর উঁকি দেয় তাহলে অবস্থাটা কি হবে? নিশ্চয়ই দুনিয়ার সব পুরুষরা অস্থির হয়ে হা করে আসমানের দিকে তাকিয়ে থাকবে। তাই না? মনে মনে কল্পনা করলাম, অন্য দিক থেকে আরেকজন উঁকি দিলো। এবার সবাই ওই দিকে তাকাবে। স্বাভাবিক ভাবেই দুজন হুর এক রকম হবে না। এতে সবাই অস্থির হয়ে যাবে, কোনোটা রেখে কোনটার দিকে তাকাবে? এমতাবস্থায় মনে করুন, আরও পাঁচজন হুর উঁকি দিল। কী অবস্থা হবে তখন? এরপর আরও ১০জন। এরপর আরও ২০জন। কী অবস্থা হবে তখন? সবাই পাগলের মতো হয়ে যাবে। আমি চিন্তা করলাম, আচ্ছা যদি ৭২ জন হুর উঁকি দেয়, তাহলে? এ কথা চিন্তা করে আমি আসমানের দিকে তাকালাম, তখন আমার হাসি চল এল। আমি ভাবলাম, এই ওয়াদা শতভাগ সত্য। বিন্দু পরিমাণ কোনো সন্দেহও এতে নেই। আল্লাহ আমাদের জন্য এমন ৭২ জন হুরের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহু আকবার। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমিন
আজকে তাহলে এখানেই শেষ করি ভাই। আমার কথায় যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে তা আমার পক্ষ থেকে আর তাতে কল্যাণকর কিছু থাকলে তা একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টির পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমীন
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله واصحابه اجمعين
وآخر دعوانا ان الحمد لله رب العالمين