JustPaste.it

দেশে দেশে ইসলাম

 

তুরস্কে ইসলামী জাগরণ
একান্ত সাক্ষাৎকারে তুরস্কের মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্রফেসর হামদী আরসালান

 

সম্প্রতি তুরস্কে ‘রাবেতা আদবে ইসলামী’র একটি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভীসহ ভারতের আরো কয়েকজন বিশিষ্ট আলেম তাতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময়ে তুরস্কের প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব এবং ক্ষমতাসীন রেফাহ পার্টির নেতৃবর্গের সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ হয় এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়। মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী সাহিত্য বিভাগের প্রফেসর হামদী আরসালান তন্মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তুরস্কের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি অত্যন্ত স্বচ্ছ ধারণা রাখেন। মাওঃ আবুল হাসান আলী নদভীর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলটি তার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। আমরা তার সরল বঙ্গানুবাদ বাংলাভাষী পাঠকদের সামনে তুলে ধরলাম । [অনুবাদক]
প্রশ্নঃ তুরস্কের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা কী? এখানে ইসলামের মৌলিক শিক্ষার অনুমতি আছে কি? থাকলে তা কতটুকু? এখানে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা-কলেজ আছে কি?
উত্তরঃ ১৯২৩ সালে ওসমানী খিলাফতের পতন এবং গণতন্ত্রের উত্থানের পর তুরস্কের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ পাল্টিয়ে দেয়া হয় এবং ‘তাওহিদ ও রেসালাত আইন’ নামে মোস্তাফা কামাল আতাতুর্ক এক ফরমান জারি করে এ কালাকানুনের সহযোগিতায়। সকল দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে ক্রমান্বয়ে সিলেবাস থেকে ইসলামী শিক্ষা বাদ দেয়া হয়।  হাজার বছরের অধিক কাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসা আরবী বর্ণলিপি ১৯২৮ সালে বিলুপ্ত করা হয় এবং ইসলামী ওয়াকফ মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দেয়া হয়। নতুন আইন পাস করে ঐতিহ্যবাহী ওসমানী পোষাককে ইউরোপিয়ান পোষাকে পরিবর্তন করা হয়। আরবী আযান চালু করা হয়। জনসাধারণকে নামায প্রভৃতি ইবাদতে আরবীর পরিবর্তে তুর্কি ভাষা ব্যবহার করতে বাধ্য করা হয় এবং এর বিরুদ্ধাচারণকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। 
মোস্তাফা কামালের পর ইসমত ইন্নু তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং ইন্নু তাঁরই পদাংক অনুসরণ করে দেশকে ইসলামমুক্ত করার ব্যাপারে জোর তৎপরতা শুরু করেন। শুধু তা-ই নয় বরং কামাল আতাতুর্কের তুলনায় ইসমত ইন্নুর আমলে ইসলাম ও মুসলিম দমন-পীড়নের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ধীরে ধীরে মুসলমানদের মধ্যে বিদ্রোহ দানা বাঁধতে থাকে। এক পর্যায়ে ১৯৪৬ সালে ইসমত ইন্নুর সরকার রাজনৈতিক বিশৃংখলার শিকার হয় এবং আদনান মান্দারীস তার কয়েকজন সঙ্গী সহ ইসমত ইন্নুর দল থেকে পদত্যগ করে ‘ডেমোক্রেটিক পার্টি’ নামে নতুন দল গঠন করেন। ১৯৫০ সালের নির্বাচনে এই ডেমোক্রেটি পার্টি কল্পনাতীত সাফল্য লাভ করে। যার ফলে ইসমত ইন্নুকে বাধ্য হয়ে শাসন ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়।
আদনান মান্দারীস ১৯৫০ সালে শাসন ক্ষমতা হাতে নেন এবং দেশের প্রধানমন্ত্রীত্ব লাভ করেন। ক্ষমতায় এসে আদনান মান্দারীস আরবী আযান বহাল করেন এবং ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনঃরায় চালু করার অনুমতি প্রদান করেন। অনুমতি পেয়ে তুরস্কের মুসলমানরা বিপুল উৎসাহের সাথে দ্বীনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে দেয়। এভাবে আদনান মান্দারীসের দশ বছরের (১৯৫০-১৯৬০) শাসনামলে দেশের আনাচে কানাচে প্রতিষ্ঠিত বড় মাদ্রাসার সংখ্যা ত্রিশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
২৭মে, ১৯৬০ সালে সরকারের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সেনা বিদ্রোহ ঘটে। বিদ্রোহী সামরিক সরকার আদনান মান্দারীসকে মৃত্যুদন্ড দেয় এবং তার মন্ত্রীবর্গের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উত্থাপন করে যে, তারা ইসলামী খিলাফত এবং মধ্যযুগীয় বর্বরতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। সর্বোপরি তারা কামাল আতাতুর্কের ‘দেশ গড়া’র আভিযানকে ব্যর্থ করে তুরস্ককে ইউরোপের পরিবর্তে আরব রাজ্য বানানোর পরিকল্পনায় লিপ্ত। 
১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ধীরে ধীরে ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সত্তর-এ উত্তীর্ণ হয় এবং সম্প্রতি রেফাহ পার্টির চেয়ারম্যান নাজমুদ্দীন আরবোকান ট্রুপাথ পার্টির সঙ্গে কোয়ালিশন করে সরকার গঠন করার পর ইসলামী শিক্ষার প্রতি বিশেষভাবে জোর দেন এবং অন্ততঃ ৩৫০ টি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করার পরামর্শ দেন।
১৯৫৯ সালে আদনান মান্দারীসের শাসনামলে ইস্তাম্বুলে ‘আল-মা’হাদুল ইসলামী আল-আলামী’ নামে সর্বপ্রথম ইসলামী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার সংখ্যা ১৯৭৫ সালে আরবাকানের উপ প্রধানপমন্ত্রী থাকাকালে দশ-এ উত্তীর্ণ হয় এবং ‘তাহফীজুল কুরআন’ নামক মাদ্রাসার সংখ্যা প্রথমে রেফাহ পার্টি ও গণতন্ত্রী পার্টির শাসনামলে ন’শ থেকে তিন হাজারে উন্নিত হয়। ১৯৮০ সালে জেনারেল কেনান এভরীন  এর নেতৃত্বে সামরিক অভুত্থানের পরেও আল্লাহ্ তা’আলা এ মাদ্রাসাগুলো রক্ষা করেন।
বর্তমানে তুরস্কে উচ্চতরে দ্বীনি মাদ্রাসার সংখ্যা ন’শ এবং তাতে ইসলামী শিক্ষা অর্জনেরত ছাত্রের সংখ্যা সাত লাখ। আর এ পর্যন্ত যারা শিক্ষা সমাপন করেছেন, তাঁদের সংখ্যা প্রায় পনের লাখ।
১৯৮০ সালের পরে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুল্লিয়াতুল এলাহিয়াত বা ইলাহিয়াত কলেজ নামে নামকরণ করা হয়, যার সংখ্যা ২৫। সব ক’টি কলেজই কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরিচালিত।
পাঁচ বছরের প্রাথমিক শিক্ষার পরবর্তী মেয়াদ সাত বছর। এই সাত বছরে ইসলামের মৌলিক বিদ্যা-কুরআন, হাদীস, ফেকাহ, তাফসীর, ইতিহাস ও আরবী সাহিত্য ইত্যাদি শিক্ষা দেয়া হয়। সাথে সাথে উন্নত আধুনিক শিক্ষারও ব্যবস্থা আছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্বীনি মাদ্রাসায় ছাত্রীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। সচেতন মাতা-পিতা কেবল এ জন্যই মেয়েদেরকে মাদ্রাসায় পাঠাতে শুরু করেছে, যাতে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তারা চারিত্রিক দিক থেকে পবিত্র থাকতে পারে এবং মদপান ও যুবকদের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা থেকে বিরত থাকে। ঠিক এ বিষয়টি-ই সচেতন অভিভাবকদেরকে দ্রুতগতিতে বিপুল সংখ্যক দ্বীনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহিত করেছে।
আগেরকার সরকার এবং সেকুলার প্রচার মাধ্যমগুলো বিরামহীনভাবে ঐ মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে দেয়ার কিংবা হ্রাস করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ্র আসীম কৃপায় তুরস্কের আলিমগণ তাঁদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে মাদ্রাসাগুলোর অস্তিত্ব রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন। এখানে একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, তুরস্কের আলিমগণ দ্বীনি শিক্ষার পাশাপাশি উচ্চতর জাগতিক শিক্ষার প্রতিও যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ফলে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিতদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক লোক ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী ইত্যাদি রয়েছেন। তুর্কি পার্লামেন্টের বর্তমান সদ্যদের  মধ্যে ১৩৭ জন সদস্য এমন রয়েছেন, যারা দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সাথে সাথে আধুনিক শিক্ষায়ও যথেষ্ট  পারদর্শী। উল্লেখ্য যে, তুর্কি পার্লামেন্টের মোট সদস্য সংখ্যা ৫৫০ জন।
প্রশ্নঃ বর্তমান রেফাহ পার্টির সরকার সম্পর্কে তুরস্কের জনসাধারণের ধারণা কী? দেশের জনসাধারণ এই সরকারের ব্যাপারে কতটুকু আশ্বস্ত?
উত্তরঃ সরকার গঠন করার ব্যাপারে রেফাহ পার্টিকে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের ২৪ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করা সত্ত্বেও সরকার গঠন করার ব্যাপারে বিভিন্ন মহল রেফাহ পার্টির জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উপর জোর চাপ সৃষ্টি করে যে, তারা যে কোনোক্রমেই সরকার গঠনে আরবাকানের সঙ্গে কোয়ালিশন না করে। অবশেষে আরবাকানের রেফাহ পার্টিকে বাদ দিয়ে তানসু সিলার ও মাসউদ ইলমাসের পার্টি মিলে কোয়ালিশন সরকার গঠন করে। কিন্তু, এ সরকার তিন মাসের বেশী টিকতে পারেনি। বাধ্য হয়ে তাঁদের আরবাকানের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করতে হয়।  গণরায় এবং জনবাদী এটাই ছিল। আরবাকান সরকারের প্রতি দেশের জনগণ আশাবাদী যে, এ সরকার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক তিক্ততা ও অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে দেশকে একটি নির্ভেজাল ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হবেন।
প্রশ্নঃ নতুন সরকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত কোনো উন্নতি সাধন করতে পেরেছে কি? আরবাকানের ক্ষমতা লাভ করার পর রাষ্ট্র  পরিচালনায় স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছি কি? আগেকার সরকারগুলোর বিরুদ্ধে তো রাষ্ট্র পরিচালনায় অযোগ্যতা, অব্যবস্থা ও শৃংখলাহীনতার বহু অভিযোগ রয়েছে।
উত্তরঃ নতুন সরকার অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ শুরু করছেন। আরবাকানের সহচর ও সহকর্মীরা অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও শিক্ষিত লোক। দেশ গড়ার কাজে তারা এতই ব্যস্ত যে, বহিরাগত সাক্ষাতকারীদের তারা সময় দিতে পারছেন খুবই কম। এ প্রসঙ্গে ডঃ আরবাকান নিজেই বলেছেনঃ “দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা অমীমাংসিত পড়ে আছে। আমরা এগুলোর সমাধানে ব্যস্ত আছি। এজন্যই
বহিরাগত সাক্ষার্থীদেরকে স্বাগত জানাতে আমরা আপাতত অপরাগ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে আমরা তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করব ইনশা আল্লাহ্।” 
নতুন সরকার ইতিমধ্যে সরকারী আমলা-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা পঞ্চাশ ভাগ বৃদ্ধি করেছেন এবং অবসরপ্রাপ্ত আমলা-কর্মচারিদের পেনশনও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া সরকার দেশের পূর্বাঞ্চলের উদ্বাস্তুদেরকে নিজ নিজ ঘরে ফিরে আসার অনুমতি দিয়েছেন। সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক হানাহানির কারণে তারা ওখানে আশ্রয় নিয়েছিল। তারা এখন আপন ভিটে মাটিতে ফিরে আসতে শুরু করেছে। ইতিপূর্বে মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে জয়লাভ করে রেফাহ পার্টি গরীব-অসহায়, বিধবা-ইয়াতিম ও বৃদ্ধদের ব্যাপক সেবা করেছে। রাষ্ট্রক্ষমতা লাভ করার পর এখন তারা জাতীয় পর্যায়ে এ ধরনের আরো ব্যাপক খেদমত আঞ্জাম দিতে সক্ষম হবে বলে আমরা মনে করি। ইস্তাম্বুল মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন তুরস্কের সবচেয়ে বড় শহর। রেফাহ পার্টির কর্মীরা এ শহর থেকে চুরি-ডাকাতি, লুট তরাজ, সুদ-ঘুষ ইত্যাদি সব অপকর্ম উৎখাত করে দিয়েছে। রেফাহ পার্টি যখন সরকার গঠন করে, তখন এ শহরের আমদানী ছিল মাত্র তিন মিলিয়ন ডলার। এখন তা দশগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ত্রিশ মিলিয়ন ডলার উত্তীর্ণ হয়েছে।
প্রশ্নঃ ইস্তাম্বুল রাস্তা-ঘাটে রে-পর্দা নারীর অবাধ বিচরণ চোখে পড়ল। এরা কি বিদেশী পর্যটক নাকি এ দেশের সমাজ ব্যবাস্থাই এত মারাত্মক আকার ধারণ করেছে? এ সমস্যা সমাধানের কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি?
উত্তরঃ ইস্তাম্বুলের রাস্তা-ঘাটে বে-পর্দা নারীর বিচরণ একটি স্বাভাবিক বিষয়। এটা সেকুলার সমাজ ব্যবস্থার অশুভ পরিণতি। কিন্তু এ পথহারা মেয়েদের হৃদয়ে ঈমানী চেতনা প্রচ্ছন্ন রয়েছে, যার ফলে সঠিক পদ্ধতিতে তাদের সামনে ইসলামের আদর্শ উপস্থাপন করা হলে তা তারা গ্রহণ করে নেয় এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যেই পর্দা পালনের প্রতি আন্তরিক হয়ে ওঠে। এর জন্য প্রয়োজন ধৈর্যের সাথে কৌশলে কাজ করা। হঠাৎ করে কিছু একটা করে ফেলতে চাইলে লাভের চেয়ে লোকসানের আশংকাই বেশী।
প্রশ্নঃ তুরস্কের মসজিদগুলোতে বিপুল  সংখ্যক যুবকের উপস্থিতি চোখে পড়ছে।  ইসলামী জাগরণের ক্ষেত্রে এটা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইংগিতবহ। ইসলামের প্রতি এরূপ আকর্ষণ তুর্কি তরুণীদেরও আছে কি?
উত্তরঃ ইসলামের প্রতি তুর্কি তরুণীদের আকর্ষণ তরুণদের অপেক্ষা বেশী। এখানে মেয়েদের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং নিরাপদ আবাসিক হল রয়েছে। এরা প্রায় সকলেই ইসলামী আদর্শ অনুসরণ করে চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেক ছাত্রীকে আপনি পর্দানশীল পাবেন। এরা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ও ইসলামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গড়ে ওঠছে।
প্রশ্নঃ অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য আরবাকান সরকার এ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি? নতুন সরকার এ পর্যন্ত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো সাফল্য অর্জন করে থাকলে তাও জানাবেন।
উত্তরঃ রেফাহ পার্টির দৃষ্টিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো দেশকে সামরিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও কৃষিক্ষেত্রে শক্তিশালী করা। ১৯৭৪ সালে ডঃ আরবাকান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দু’শ কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। তন্মধ্যে সত্তরটি কারখানা স্থাপনের কাজ তখনই সমাপ্ত হয়। এসব কারখানায় চিনি, কাপড়, সিমেন্ট ও ইট উৎপাদনের কাজ চলছে। সম্প্রতি তিন ঘন্টার এক সাধারণ কনফারেন্সে ডঃ আরবাকান পরিকল্পনার মাধ্যমে খনিজ, বনজ ও মানব সম্পদকে কাজে লাগিয়ে তুরস্কের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের ব্যাপারে বিশদ বিবরণ প্রদান করেন। 
প্রশ্নঃ তুরস্কের সাংবাদিকতার ব্যাপারে আপনার ধারণা কী? এ দেশের জাতীয় পত্রিকাগুলো কি পাশ্চাত্য সেকুলারভাবাপন্ন লোকদেরই দখলে, নাকি এখানে ইসলামী সাংবাদিকতাও আছে?
উত্তরঃ তুরস্কে সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা আরব রাজ্যের চেয়ে অনেক বেশী রয়েছে। অন্যান্য ইসলামী পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের পাশাপাশি ‘জাতীয় গেজেট’ নামে রেফাহ পার্টির একটি দৈনিক দীর্ঘ ছাব্বিশ বছর ধরে প্রকাশ হয়ে আসছে। ইস্তাম্বুলে ইসলামী পুস্তক প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় পাঁচশ’।
এদিকে কয়েক  বছর হলো, ইসলামী টেলিভিশন চ্যানেল খোলা হয়েছে। যেমনঃ চ্যানেল-৭ রেফাহ পার্টি কর্তৃক পরিচালিত। এই টিভি চ্যানেলটি চব্বিশ ঘন্টা ইসলামী প্রোগ্রাম পরিবেশন করে থাকে, যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা, আরব রাজ্য, উউতর আমেরিকা ও মধ্য এশিয়ায় দেখা ও শোনা যায়। টিভি চ্যানেল ৭ কয়েক সপ্তাহ ধরে আরবী প্রোগ্রামও শুরু করেছে, যা ডিশ এর মাধ্যমে  বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে দেখা যায়।
আরবী ভাষায় কোনো উল্লখযোগ্য ইসলামী বই বের হওয়ার পর অবিলম্বে তা তুর্কি ভাষায় অনুবাদ হয়ে যায়। (মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী ও শায়খুল হাদীস মাওঃ জাকারিয়া (রহঃ) এর অধিকাংশ বই তুর্কি ভাষায় অনুদিত হয়েছে এবং বেশ ক’টি বইয়ের একাধিক এডিশন শেষ হয়ে গিয়েছে।)
প্রশ্নঃ ইসলামী সাংবাদিকতা ও ইসলামী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আছে যখন, তো ইসলামী লেখক, কলামিষ্ট এবং সাহিত্যিকও আছে নিশ্চয়। কয়েকজন বিখ্যাত লেখকের নাম জানাবেন কি?
উত্তরঃ তুরস্কের ইসলামী লেখক, কলামিস্ট ও কবিদের মধ্যে যারা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তারা হলেন, ইসমত ওজাল, মুহাম্মদ শওকত আয়কী, মোস্তফা ওজাল, সাদিক আবিরক, আয়খান সাকার, আহমাদ কাবকালী, কাদের মিসির উগূল, খাইরুদ্দীন কারহান, আহমাদ তাশ কিরণ ও মুহাম্মদ দোগান প্রমুখ।
তুরস্কে তুর্কি লেখকদের একটি ইউনিয়ন আছে, যা দেশের সকল লেখক কলামিস্টদের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক মুহাম্মদ দোগান তার চেয়ারম্যান।
প্রশ্নঃ তুরস্কে ইসলামী বই-পুস্তকের জনপ্রিয়তা কেমন? দেশে কোনো ইসলামী একাডেমী আছে কি? 
উত্তরঃ তুরস্কে ইসলামী পুস্তকের জনপ্রিয়তা যথেষ্ট। যে কোনো বইমেলায় ইসলামী প্রকাশনার বিপুল স্টল বসে এবং ইসলামী পুস্তকই অধিকতর বিক্রি হয়। একটি ইসলামী শিক্ষা একাডেমী আছে। এই একাডেমী তুর্কি ভাষায় বৃহৎ  বৃহৎ পয়ত্রিশ খন্ডের একটি ইসলামী বিশ্বকোষ প্রকাশের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ পর্যন্ত এর বারটি খন্ড প্রকাশ লাভ করেছে। এ একাডেমীতে দু’শ পঞ্চাশ জনের বেশী স্কলার কাজ করছেন। 
প্রশ্নঃ গত মিউনিসিপ্যল কর্পোরেশনের নির্বাচনে রেফাহ পার্টি কোন কোন শহরে জয়লাভ করেছে?
উত্তরঃ গত মুনিসিপ্যাল কর্পোরেশন নির্বাচনে রেফাহ পার্টি চার শ’রও বেশী আসন লাভ করেছে। তন্মধ্যে বেশীর ভাগ আসন পেয়েছে ইসতাম্বুল, আংকারা, কেনিয়া, কায়সারিয়া প্রভৃতি বড় বড় শহরে।
প্রশ্নঃ তুরস্কে রেফাহ পার্টি ছাড়া আর কোনো ইসলামী দল আছে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, রেফাহ পার্টি ছাড়া আরো কয়েকটি ইসলামী দল আছে। তন্মধ্যে ‘নুরেসি আন্দোলন’ অন্যতম।
প্রশ্নঃ তুরস্কে অমুসলিম নাগরিকের সংখ্যা কত?
উত্তরঃ তুরস্কে স্বল্প সংখ্যক ইহুদী ও খৃষ্টান বাস করে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানা নিয়েই এরা ব্যস্ত। তবে প্রাচীন তুর্কি বংশোদ্ভূত দ’জন ইহুদী তুর্কি পার্লামেন্টের সদস্য। ইউরোপের সঙ্গে এদের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে। ইসরাইলের সাথেও  এদের দহরম মরহম সুবিদিত। অর্থশালী হওয়ার সুবাদে তুর্কি নেতৃবৃন্দের ওপর এদের যথেষ্ট প্রভাবও আছে। এরা আমেরিকা-ইসরাইলের ইহুদী গোষ্ঠীর সহযোগিতায় তুরস্কে ইসলামী জাগরণ নস্যাৎ করার অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা এখন প্রমাদ গুণতে শুরু করেছে।

সৌজন্যে: পাক্ষিক তামীরে হায়াত
অনুবাদ: মুহাম্মদ মুহিউদ্দিন