জিহাদঃ মুসলিম জীবনের গৌরবময় অধ্যায়
প্রিন্সিপাল এ,এফ,সাইয়েদ আহমেদ খালেদ
ইসলামের দৃষ্টিতে জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত ব্যক্তিগণ,এক কথায় মুসলমান নামে অভিহিত। জিহাদকে অস্বীকার করে কোন মুসলমান চলতে পারে না;তার বেঁচে থাকা নিরর্থক। প্রশ্ন হতে পারে, ধর্ম রক্ষার প্রয়োজনে শত্রুর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে যোগদান করার সুযোগ নেই, সামর্থ্য নেই;কাজেই আমি জিহাদে অংশগ্রহণ করবো কেমন করে?এরূপ চিন্তা বা ধারণা একজন মুসলিমের অজ্ঞতার পরিচয় বহন করে বললে অত্যুক্তি হবে না। আর এ সন্দেহের যূপকাষ্ঠে তাকে (মুসলমানকে) সারাজীবন দগ্ধ হতে হয়।তার জীবন ব্যর্থতায় পর্যবশিত হয়।
পনেরশ বৎসর আগের ইসলামী চেতনায় উদ্ভাসিত মুসলিমের জীবন ও আজকের এই বিংশ শতাব্দীর মুসলিমের জীবন কত পার্থক্য তা ভাবতে গেলে চিন্তা-জগতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।জিহাদ ছিল সেদিনকার মুসলমানদের 'নৃত্যপাগলছন্দ'-'মৃত্যুঞ্জয়ী সুধা', 'জান্নাত প্রাপ্তির নিশ্চিত সনদ'।আর আজকের অধিকাংশ মুসলমানের নিকট জিহাদ হলো অবহেলিত বা ভীতিপ্রদ এক বিষয় বিশেষ। পলায়ন ও পশ্চাদমান ধনী ও বৃহৎ রাষ্ট্রের করুণাকামী জীবন ব্যবস্থায় পরিচালিত জীবনই যেন আজকের মুসলমানদের অধিক কাম্য।এ কারণেই বিশ্ব মুসলিমের আজ এই দূর্গতি।
ব্যক্তিগত ও সংসার জীবন হতে রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রেই মুসলমানকে যথাসম্ভব জিহাদী-জিন্দেগী পালন করে চলতে হয়।এর কোনো বিকল্প চিন্তা বা পথ নেই।যদি থাকে সেটা হবে ভুল, ভীরুর পথ- ধ্বংসের পথ।এতটুকু ধারণা থাকতে হবে একজন মুসলিমের যে, জিহাদের রূপ কি?সমর ক্ষেত্রে যোগদান করাই জিহাদের রূপ?হ্যাঁ, দৈনন্দিন জীবনযাত্রা নির্বাহে আল্লাহ ও আখেরী নবী (সাঃ) কর্তৃক দেওয়া বিধান ও তাঁর সমর্থিত নির্দেশ মোতাবেক কপটতা বিমুখ জীবন অতিবাহিত করতে হবে এবং এটাই অতি সংক্ষিপ্তভাবে মুসলিম চরিত্রের প্রথম জিহাদ।
অন্য ধর্মের মানুষের চাকচিক্যময় ক্ষতিকর জীবনব্যবস্থা ও বিধান, খোদাদ্রোহী মতবাদ এবং শয়তানী পথ অবশ্যই পরিত্যাজ্য। নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় যেখানে ও যে কর্মে তা থেকে দূরে থাকাই জিহাদ।আর্ত ও দুঃখীর দুঃখ মোচনে, অসহায়ের সাহায্যে, অন্যায়ের প্রতিবাদে,সত্যের পক্ষে সমর্থন দান ও দ্বীন প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর ভূমিকা গ্রহণ করাও জিহাদের অংশ বিশেষ। অন্যায়ভাবে অর্জিত সম্পদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ধনীর বিরুদ্ধে, অন্যায়কারী শক্তিমান ব্যক্তির সামাজিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে দন্ডায়মান হওয়া, অত্যাচার প্রতিহত করা,প্রতিবাদ করা এবং ন্যায়ের সমর্থনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করা ইত্যাদির নাম জিহাদ,এসবই জিহাদের সমতুল্য কাজ।
হযরত ঈসা (আঃ) বলেছেনঃ"সীজারের মাল সীজারকে ফিরিয়ে দাও"।পক্ষান্তরে, নিখিল বিশ্বের চিরসুন্দর ও চিরশ্রেষ্ঠ মহান মানুষ, রহমাতে আলম হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ), ঈসা (আঃ) এর উক্তির সাথে এক হতে পারেন নি বিধায় বলেছেনঃ
"কোন সীজারের অস্তিত্ব থাকাই উচিত নয়"।
আল্লাহ পাক মানুষকে গভীরভাবে চিন্তা-বিবেচনা করার ও বুদ্ধি বা হিকমত খাটানোর কথা তাঁর পাক কালামের মধ্যে ঘোষণা করেছেন।সুতরাং ক্ষুদ্র জ্ঞানের অধিকারী হিসেবে আমি আমার সামান্য জ্ঞানের আলোকে বলতে পারি, নামজাদা সম্রাট হলেও সীজার ছিলেন অত্যাচারী;তার বিপুল সম্পদ আহরণ ছিল অত্যাচার-শোষণের মাধ্যমে। তাই পেয়ারা নবী মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) এই জালিম সম্রাটদেরকে কোনরূপ প্রশ্রয় দেন নি, শোষণকারীকে যে কোনো ভাবে অত্যাচার থেকে নিবৃত্ত করার কথা তিনি বলেছেন। বর্তমান দুনিয়া ও সমাজের এরূপ বহু চিত্র চোখে পড়ে, ইতিহাস পাঠে অবগত হওয়া যায় এরূপ অনেক কিছু। দুনিয়া বা সমাজের এই শোষণপ্রিয় শ্রেণির প্রসংশায় পঞ্চমুখ এক ধরনের লোক- তাদেরকে ব্যস্তূ সালাম ঠুকায়।এই অত্যাচারী শক্তিমানদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যভাবে, বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলেও ঘৃণা সূচক মনোভাব ব্যক্ত করাও জিহাদের শামিল।
হযরত আলী (রাঃ) বলেছেনঃ
"সত্যের আলোকে নিজেকে উদ্ভাসিত করার মানসে তুমি একা চল, তোমার সমর্থনকারী কেউ না থাকুক- তুমি পুরষ্কৃত হবে অচিরেই মহা প্রবল ও মহা শক্তিমান আল্লাহর কাছ থেকে। পক্ষান্তরে, অন্যায়কারী ও তাদের পক্ষাবলম্বনকারীরা অচিরেই ধ্বংস হবে"।
সত্য পথের পথিককে নিয়ে যারা উপহাস করে তারা নির্বোধ ও উদাসীন। উদাসীনরা বাস্তব জগতের স্বাদ-গন্ধের ভিতরে থেকেও মৃতবৎ।প্রতি পদে পদে তারা লাঞ্চিত। জিহাদকে বহুমুখী বিচার বিশ্লেষণে সময় ও ধৈর্যের যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রবন্ধের কলেবর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে যা জিহাদী চেতনা বিমুখ পাঠকদের নিকট (আধুনিকতার স্পর্শে কাতর পাঠক) 'মরার উপর খাড়ার ঘা' স্বরূপ ঠেকবে। এতদসত্ত্বেও আমাকে আরো একটু অগ্রসর হতে হচ্ছে।
অনেকে বলেন, ধর্ম ও জাতি রক্ষার্থে সরাসরি যুদ্ধে বা জিহাদে যোগদান না করে কি জিহাদী জীবন পালন করা যায় না? এটা হলো ব্যক্তি কেন্দ্রীক চিন্তা ও গন্ডিবেষ্টিত ধারণা। উপরে এ সম্পর্কে যৎসামান্য আলোকপাত করা হয়েছে।একথা সত্য যে, নিজের নফস বা রিপু দমন করাও বড় জিহাদ। কিন্তু দেশ, জাতি ও ধর্ম রক্ষার প্রয়োজনে শত্রুর বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়া, ময়দানে নেমে পড়া, দাঁত ভাঙ্গা জবাব দানের মাধ্যমে এ তিনকে রক্ষা করা ও রক্ষার স্বার্থে জীবন উৎসর্গ করা সর্বোত্তম জিহাদ, বিরাট বাহাদুরীর কাজ।ইসলামের অনুসারী বিশ্বের সকল মুসলমান এক জাতি-এক উম্মাহ। বিশ্বের এ প্রান্তের মুসলমান অবশ্যই অপর প্রান্তের, অন্য দেশের মুসলমানের প্রতি দরদী হবে। "কুল্লু মুসলিমুন ইখওয়াতুন"-সকল মুসলমান ভাই ভাই। সুতরাং ভাই এর কাঁদনে ভাই ছুটে যাবে তবেই তো মুসলমান।এ-ই অর্থের ব্যতিক্রম হলে কি করে নিজেকে যথার্থ মুসলমান বলে দাবি করা যায়?শুধু এর মাধ্যমে মুসলিম নামের স্বার্থকতা ফুটে উঠে।জিহাদী জীবনের স্বাদ পাওয়া যায়। বদর, উহুদ, খন্দক এবং পরবর্তী ইসলামী যুদ্ধগুলো কি আমাদের এ শিক্ষা দেয় না যে, তরবারিই আমাদের সত্যিকার মুসলমান হিসেবে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন? কুরআনই বলে দেবে কখন, কোথায় এবং কোন অবস্থায় তরবারী বা অস্ত্র প্রয়োগ করতে হবে।অশান্তির মোকাবিলায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নাই। আজকের মুসলমান অধিক সংখ্যায় নামকা ওয়াস্তে কুরআনের অনুসারী নয় কি?তারা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে তরবারীকে।ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। সত্যিকার মুসলিমের চরিত্র তো এ হতে পারে না। বিশ্বের বিবেকবান মুসলিম পন্ডিত ও মনীষীদের নিকট আমার বিনয়ী জিজ্ঞাসাঃ
" পারে কি মুসলমান এ দুয়ের সমন্বয় না ঘটিয়ে বেঁচে থাকতে? আমি বলবো, যারা কথার ফুলঝুরি দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান, হয় তারা মুনাফিক না হয় তারা কাপুরষ। আমাদের এ ভীরুতার সুযোগ নিয়েই বিশ্বের মুসলিম বিধ্বংসী শত্রুর কামান চার দিক থেকে গর্জে উঠেছে।উহুদ রণাঙ্গনে কাফের কোরাইশদের আস্ফালনের বিরুদ্ধে উচিত জবাব দানের জন্য মুসলমানগণ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন।রাসূলে কারীম (সাঃ) মুসলমানদের মনে দুর্জয় সাহসের সঞ্চার করেছিলেন একখানি তরবারীর গাত্রে পবিত্র দুটি লাইন খচিত করেঃ
"পলায়ন সে যে ঘৃণ্য ভীরুতা, অগ্রসরেই মান,
পালাবে কোথায়? তকদীর হতে নাহিক পরিত্রাণ।"
ফলে নিমিষেই সবার হৃদয়ে সাহসের সঞ্চার হয়।তলোয়ার ধারণের সৌভাগ্য অর্জন করেন সাহাবা আবু দুজানা (রাঃ)।এই তরবারী দ্বারা সেদিন ইসলাম ও মুসলমান রক্ষার জিহাদী যুদ্ধে আবু দুজানার অস্বাভাবিক শত্রুসংহারী অমিত বিক্রম দেখে নবীজি কিছুটা বিহ্বল হয়ে পড়েন।যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়, সার্বিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় একটি জাতি।অস্ত্র ছাড়া আপোষে কি সেদিন কাজ হতো? মেনে নিতো কি কোনো ন্যায় কথা সেদিনের যুদ্ধাংদেহী মনোভাবের কাফির মুশরিকরা? আজও সেই বহুত্ববাদীদের উত্তরসূরীরা এ জগতে বিরাজমান। পারছে কি তারা এক আল্লাহয় বিশ্বাসীদের সহ্য করতে?
আজকের দুনিয়ায় ইহুদী নাসারা ও তাদের তাবেদার কর্তৃক মুসলিম ধ্বংসের যে বিভৎস তান্ডব নৃত্য চলছে, অপেক্ষাকৃত সবল মুসলিম দেশ ও জাতির তা প্রতিহত করার কি কিছু নেই? রাসূলে খোদার উম্মতের সে বলবীর্য কি ফুরিয়ে গেছে? জিহাদী জোশ কি ঠান্ডা হয়ে গেছে?দুনিয়ার ১৩০ কোটি মুসলমান কি সংঘবদ্ধ হতে পারে না জাতীয় শত্রুর মরণ ছোবলের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিয়ে তাদের চিরস্তব্ধ করে দিতে? চির গর্বিত জাতির মাঝে আর কি জন্ম নেবে না খালেদ, তারেক, মুসা, গাজী সালাহ উদ্দীনের মতো কোন মুক্তিকামী বীর? নিশ্চয়ই জন্ম নিবে, জন্মেছে অনেক।আত্মবলে বলিয়ান জাতি শুধু ধার করা ইতিহাস লেখে নি;ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।জয়ের মালা ছিনিয়ে আনা ও দুর্বলের প্রতি করুণা প্রদর্শন - এতো মুসলিম জাতির ইতিহাস ও শিক্ষা। এই সেদিনের রাশিয়া, যার আদর্শ(?) দুনিয়ার এক শ্রেণীর লোকের পূজার ফুল ছিলো, একতাবদ্ধ আফগান মুজাহিদদের কাছে তার কি পরিণতি হলো? ১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের গতি কি ধারণা দিয়েছিল? বিজয় বয়ে আনে শুধুমাত্র মানব তৈরি অস্ত্রই নয়, ঈমানী তেজ সবচেয়ে বড় অস্ত্র। আর এ তেজ বিক্রমই আজকের আফগানিস্তান ও সেদিনের পাকিস্তানকে রক্ষা করেছিল।অতীত স্মৃতি মুছে ফেলার বা ঢেকে রাখার নয়।অবশ্যই রোমন্থনের বিষয়।অতীতের গৌরবময় গাঁথা স্মরণে এনে আমাদের ঝিমিয়ে পড়া খুনকে জিহাদী জযবায় উজ্জীবিত করতে হবে এবং মুসলিমের স্বরূপ তুলে ধরতে হবে, চিত্রিত করতে হবে নিপুণ শিল্পীর হাতে।
আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইসরাইল এমনি সব বিজাতীয় রাষ্ট্র আমাদের দোস্ত নয়।এরা মুসলিম তথা মানবতার শত্রু।তারা অন্যায়কারী, অন্যায়ের সমর্থনকারী (অন্ততপক্ষে মুসলিম স্বার্থে)। আজকের মুসলিম বিশ্ব কোন খেয়ালে তাদের দিকে চেয়ে আছে? তাদের তৎপরতা হলো এক মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপর মুসলিম রাষ্ট্রকে ক্ষেপিয়ে দেওয়া, এভাবেই মুসলিম জাতির ধ্বংস সাধন করা এবং পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করা।আর কত কাল মুসলমান চুপ করে সইবে -দেখবে এ রক্ত- খেলা?নীরবতার পুরষ্কার আজ বার্মা, কাশ্মীর, বসনিয়া, ফিলিস্তিন তথা বিশ্বের অন্য ধর্মাবলম্বন কারীদের দেশে বসবাসকারী মুসলমানদের করুণ ও ভয়াবহ অবস্থা।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সমাধানের চেষ্টা চললেও প্রতিটি মুসলিমকে সকল রকম ভেদাভেদ ভুলে আজ এসব নির্যাতিত নিরীহ মুসলমানদের হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সঠিক ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জিহাদই জিন্দেগীর গৌরবময় সময়। বিলম্ব করলে জাতির অবলুপ্তি ছাড়া কিছুই আশা করা যায় না।এখন ঘরে বসে তাসবীহ, তেলাওয়াতের বিশেষ অবকাশ নেই।তেলাওয়াতের মহড়া এখন মুসলিম ভাই-বোনের জীবন, সম্ভ্রম-দেশ রক্ষার্থে রণাঙ্গনে চালাতে হবে।মর্দে মুমিনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে বিশ্বের মুসলিমকে।এখন বিবেকের দংশনে দংশিত হতে হবে। এটা সুপরিকল্পিত ক্রুসেড।প্রত্যেক মুসলমানকে অবিলম্বে গাজী সালাহউদ্দীনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।নইলে সমুহ বিপদ। প্রাচ্যের মুসলিম আজ বিপন্ন; রক্ত সাগরে ভাসমান।পাশ্চাত্য বিশেষ করে বাংলাদেশের মুসলমানরা কি রেহাই পাবে?নজীর পার্শ্বেই বিদ্যমান।
প্রত্যেক মুসলমানের জীবন পর্যায়ক্রমে এক একটি অধ্যায় এবং এর একটি অন্যতম প্রধান অধ্যায় হলো জিহাদ।কোন ভিন্ন জাতির সাহায্যের অপেক্ষায় আর বসে থাকলে চলবে না।এদেশের বহু তরুণ আফগান ভাইদের ডাকে সাড়া দিয়ে আফগান রণাঙ্গনে উপস্থিত হয়েছিল।সে সব মুজাহিদদের জীবন ধন্য, চির অম্লান তাদের অবদান। আজ আফগানিস্তান মুক্ত।এ মুক্তির পেছনে ছিল কোন শক্তি? ছিল প্রায় মুসলিম রাষ্ট্রের ঐক্যবদ্ধ প্রক্রিয়া। যে প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন ছিল আল্লাহর নির্দেশ জিহাদ।জিহাদী আন্দোলন পরিহার করে কেবল বিচারের ময়দানে জড়ো হলে তা' যেমন হতো প্রহসন, তেমনি হতো আফগান মুসলিমের অস্তিত্ব চির বিলোপ। যদিও শাস্ত্র উত্তম তথাপি অস্ত্রের প্রয়োজনটাকে ক্ষেত্র বিশেষে অবশ্যই সর্বাপেক্ষা বেশী গুরুত্ব দিতে হয়।মুসলিম বীর মুজাহিদদের গৌরবময় বীরত্বের কাছে রাশিয়ার মোড়লীপনা সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ, একটি অশুভ শক্তির বিরাট পরাজয়।
আজকের বসনিয়া, বার্মা, কাশ্মীর ও ফিলিস্তিনী মুসলমানদের অপরাধ কী? অপরাধ একটাই সেটা হলো, তারা মুসলমান। কই মুসলিম রাষ্ট্রের সংখ্যালঘুদের উপর তো কোন অত্যাচার, অবিচার নেই! ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উপর তো আক্রমণ নেই!
হ্যাঁ, এরাও করতে জানে, এরা দূর্বল নয়; কিন্তু করে না।কারণ আল-কুরআন তথা ইসলাম আমাদের এ শিক্ষা দেয় নি। ইসলামের প্রাণ শক্তি মহানবী (সাঃ) দূর্বল ও আশ্রিতের প্রতি অত্যাচার করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।অন্যপক্ষে জালিম কর্তৃক নীরবে মার খাওয়ার কথাও রাসূলে কারীম (সাঃ) সমর্থন করেন নাই।আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য জালিমের জুলুমের সঠিক উত্তর দানের জন্য অগ্রসর হতে বলেছেন।এই পদক্ষেপ গ্রহণকেই জিহাদ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এবং স্থান-কাল পাত্র ভেদে জিহাদ ফরজে আইনের মর্যাদায় উন্নীত হয়।
ওগো বিশ্ব মুসলিম! একবার ভেবে দেখ, সার্বিয় হানাদার বাহিনী কর্তৃক কী অত্যাচার চলছে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনিয়ার নিরস্ত্র মুসলমানদের উপর।সভ্য বলে(?) যারা চিৎকার দেয়,পরিচয় দান করে তারা আজ কোথায়? যদি কোন খ্রিস্টান বা অন্য জাতি আজ সামান্যতম অত্যাচারের শিকার হতো, দুনিয়ার এ প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বিরাটতম দরদী আওয়াজ শোনা যেত, লয় হয়ে যেতো সবকিছু। কিন্তু এ যে মুসলিম নিধন প্রক্রিয়া। হবেই তো "কত রবি জ্বলেরে" নীতির প্রতিফলন। ওগো মুসলিম! ভেবে দেখ, বার্মা, কাশ্মীরে মুসলিম নর-নারীর কি দুরবস্থা ভারত কর্তৃক পুশ ব্যাংকের মাধ্যমে বিতাড়িত মুসলমানদের। ঘরের ইবাদাত সংক্ষেপ কর;যা সামর্থ্য আছে, তাই নিয়ে রওয়ানা হও ভাই ও বোনের জীবন ও স্বাধীকার রক্ষার্থে। জিহাদের ডাক এসেছে।এ জিন্দেগী গৌরবোজ্জ্বল করে তোল জিহাদী রঙ্গে।মনে রেখ, মুসলিমের আর্তনাদে সাড়া না দিয়ে শুধু বসে উপাসনা নিরর্থক যা কেবলই দয়াহীন প্রার্থনা।
সারা বিশ্বের তাগুতের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ইসলাম ও বিপন্ন মুসলমানদের বিবেকহীন নরপশুদের হাত থেকে রক্ষার দায়িত্ব সকল মুসলিমের। মনে রাখতে হবে,
"আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে অতিবাহিত একটি সকাল বা সন্ধ্যা সারা দুনিয়া ও দুনিয়ার যাবতীয় সম্পদ অপেক্ষা উত্তম"।
অন্যপক্ষে, " বেহেশতের দরজাগুলো তলোয়ারের ছায়াতলে "।
কুরআন ও তরবারী অঙ্গাঙ্গী ভাগে জড়িত।সুতরাং সামগ্রিক বিবেচনায় এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যে, জিহাদ মুসলিম জীবনের গৌরবময় অধ্যায়; তুচ্ছ বিষয় নয়।আর এর বাস্তবায়ন দ্বারা যৌবন দীপ্ত জীবনকে সার্থক করে তোলার সময় দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত। ওগো মুসলিম! কান পেতে শুনো ভারত, কাশ্মীর, বসনিয়া, বার্মার রক্ত সাগরে ভাসমান উৎপীড়িত মুসলিম ভাই-বোনের হৃদয় বিদারক আহাজারি! অমর কবির অগ্নিঝরা বাণী স্মরণ করে বলতে চাই,
" অগ্র পথিক জিহাদী দল
জোর কদমে এগিয়ে চল"।