JustPaste.it

মাওয়াযে থানুভী (রাঃ) থেকে নির্বাচিত কাহিনী

========================================================================

 

        মাওলানা ইয়াকুব দেহলবী ও এক চোরের ঘটনা। মাওলানা ইয়াকুব দেহলবী মক্কায় হিজরত করে চলে গেলেন। শহরের অনেক গলি অতিক্রম করে বহু ভিতরে ছিলাে তার বাসা। তাঁর অভ্যাস ছিলাে, যত টাকা পয়সা তার নিকট আসত তা একটা থলের মধ্যে ভরে নিজের কাছে রাখতেন। তাতে বড় নােটও থাকতাে ভাংতি দু আনা, চার আনাও থাকতাে। মােট কথা টাকা পয়সা সব এক থলে তিনি রাখতেন। বাজারে গেলেও থলেটা সাথে থাকতাে। কারণ আল্লাহ ওয়ালাদের ধনসম্পদের প্রতি কোন মােহ থাকে না। আর দুনিয়াদারদের সম্পদের প্রতি দারুন লােভ থাকে। তারা তা লুকিয়ে রাখে, মাটিতে পুতে রাখে বা বাক্সে তালাবদ্ধ করে রাখে। কিন্তু ইয়াকুব সাহেব তার কিছুই করলেন না। কেউ তা ছিনিয়ে নিবে বা কেউ চুরি করে নিবে এসবের কোন চিন্তা তিনি করতেন না।

 

        একদিন বাজার থেকে কিছু কিনলেন। দাম দেয়ার জন্য গােটা থলে উপুর করে সব টাকা বের করে ফেললেন এবং দাম পরিশােধ করে তা আবার থলেতে রেখে দিলেন। জনৈক গ্রাম্য কৃষকের দৃষ্টি ঐ টাকার ওপর পড়ল। সে তাঁকে অনুসরণ করতে লাগলাে। তিনি যখন গলিতে পৌছলেন গ্রাম্য লােকটি তার হাত থেকে থলেটা ছিনিয়ে নিয়ে দে ছুট। কিন্তু ইয়াকুব দেহলবী। (রাঃ) তার পিছু পিছু ছুটলেন না। ডাক চিৎকারও দিলেন না, যেন মহল্লাবাসী এসে তাকে ধরে ফেলে । তাঁর এ নিরবতাই দলিল যে, মালের মুহাব্বতের কারণে থলেটি সাথে রাখতেন না। যেমন কতেক দুনিয়াদার টাকা পয়সা নিজের কোমরের সাথে বেধে রাখেন সম্পদের প্রতি মােহের কারণে।

 

        এবার আল্লাহর কুদরত দেখুন। দুনিয়াদাররা তাে সম্পদ হিফাজত করার জন্য তালা, বাক্স, চৌকিদার ইত্যাদি নানা ব্যবস্থা করে, কিন্তু এখানে তার কিছুই নেই। তবে এখানে আছে আল্লাহর প্রহরা। গ্রাম্য কৃষকতাে থলেটা নিয়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু সে গলি থেকে বের হওয়ার কোন পথ পাচ্ছিলাে না। যে দিকেই যায় সেদিকেই গলির মূখ বন্ধ দেখে। হুমায়ূনের কবরের গােলক ধাঁধার ন্যায়। যেদিকে যাবে বের হওয়ার কোন পথ পাবে না। বেচারা হয়রান-পেরেশান হয়ে বহু ঘােরা ফেরা করলাে, কিন্তু কোন পথ পেলাে না । অবশেষে বুঝতে পারলাে যে, নিঃসন্দেহে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে সে টাকার থলে নিয়ে হযরত ইয়াকুব সাহেবের ঘরে। গিয়ে ইপস্থিত হলাে। চিৎকার দিয়ে বললাে, হুযুর, আপনার টাকার থলে নিয়ে নিন! কয়েক বার ডাকা ডাকির পরও কোন সাড়া পেলাে না। তার পর উচ্চস্বরে ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগল। তবুও কোন সাড়া পেলাে না। এবার গ্রাম্য লােকটি ভাবলাে যে, তার যে দায়িত্ব ছিলাে তা সে আদায় করেছে। এখন আর তার কোন দায় ভার নেই। কোন পাপে সে এখন অভিযুক্ত নয়। কারণ সে যার টাকা নিয়ে ছিলাে তার নিকট তাে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। আর টাকাও ফিরিয়ে দিয়েছিলাে, কিন্তু সে তা গ্রহণ করেনি। কিন্তু তার এখবর ছিলােনা যে, এ টাকার হিফাজতকারী অন্য ব্যক্তি, তাই এ ক্ষেত্রে মূল মালিক ক্ষমা করলেও হিফাজত কারীরও ক্ষমা করে দেয়ার প্রয়ােজন রয়েছে। এমন কিছু আভিযােগ থাকে, যার বাদী হয় সরকার মূল মালিক মাফ করে দিলেও সরকার মাফ করে না। তাই সে থলে নিয়ে আবার গলিতে নামলাে। আশা ছিলাে হয়তাে এবার পথ পাবে, কিন্তু সে এবারও কোন পথ পেলাে না। তাই বহু পেরেশান হয়ে আরেক ফন্দি আটলাে। পথে দাড়িয়ে চিৎকার করে হাউ মাউ শুরু করলাে, ভাইয়েরা! আমার সব লুটে নিয়েছে, আমার উপর জুলুম করেছে।

 

        হট্টগােল দেখে মহল্লার লােকেরা এলাে, জিজ্ঞেস করলাে, কে তােমার উপর জুলুম করেছে? ইংগিত করে বল্লো, এই ঘরে যিনি থাকেন তিনি। লােকেরা তার কথা শুনে বিস্মিত হলাে। তার কথাকে মিথ্যা মনে করা সত্ত্বেও তারা ইয়াকুব সাহেবকে ডেকে আনলেন। সে ইয়াকুব দেহলভী সাহেবের হাত ধরে বলতে লাগলাে, ইনি আমার উপর জুলুম করেছেন। লােকেরা বললাে, কি জুলুম করেছে তা বলাে। সে বললাে, আমি তার টাকার থলে নিয়ে পালিয়ে ছিলাম, কিন্তু এখন যাওয়ার কোন পথ পাচ্ছি না। আপনারা তাঁকে বলুন, তিনি যেন অনুগ্রহ পূর্বক তা ফিরিয়ে নেন। তার পর টাকার থলে সামনে রেখে দিয়ে বলেন, এই আপনার থলে, নিয়ে নিন। কিন্তু ইয়াকুব সাহেব বললেন, এটাতাে আমার না, আমি কিভাবে নিবাে। লােকেরা এবার অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে বললাে, আশ্চর্য ব্যাপার, একজন এতাে টাকা দিয়ে বলছেন, এগুলাে আপনার টাকা অপর জন বলছেন এগুলাে আমার নয়। ভারী মজার ব্যাপার তাে! মহল্লার লােকেরা থলেটি ইয়াকুব সাহেবের হাতে দেখে ছিলাে তাই তারা বিস্মিত হয়ে বললাে, এটাতাে আপনার থলে। আসল ব্যাপার কি শাহ সাহেব? এবার ইয়াকুব সাহেব বললেন, এ লােক থলেটি আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে ছিলাে, তখন আমার মনে হলাে লােকটি তাে মহা পাপ করেছে। তাকে তাে দোজখে শাস্তি পেতে হবে। তাই তখনই আমি তাকে মাফ করে দিয়েছে এবং এ টাকা তাকে দান করে দিয়েছে। তাই সে এর মালিক হয়ে গেছে। আর দান করা বস্তু। ফিরিয়ে নেয়া যায় না। তাই আমি এগুলাে কিভাবে ফিরিয়ে নিবাে।

 

        এখানে একটি মাসআলা জেনে নেয়া দরকার যে, যদিও টাকাগুলাে সে হেবা বা দান করে দিয়েছে তবুও এ অবস্থায় তা ফিরিয়ে নেয়া জায়িয আছে। কেননা দানকারী দান করলেই দান পূর্ণ হয়ে যায় না বরং গ্রহনকারীর মতামতেরও দরকার আছে। এখানে তাে গ্রহণ কারী তা গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক। তাই এ অবস্থায় দান করার পর দান ফিরিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু ইয়াকুব দেহলবী সাহেব নিজের দান করাকেই ঐ লােকের প্রাপ্য অধিকার এবং তারপর স্বেচ্ছায় ফিরিয়ে নেয়াকে নিজে ফিরিয়ে নেয়া মনে করে তা নিতে অস্বীকার করেছেন।

 

        দেখুন, হযরত ইয়াকুব দেহলভী সাহেব কতাে মহানুভব ছিলেন। তিনি ভাবলেন, লােকটি আমার কারণে দোজখে শাস্তি পাবে তাই তিনি তার ছিনিয়ে নেয়া টাকাগুলােকে দান করে দিলেন। প্রকৃত আল্লাহ ওয়ালারা সর্বদা নিজের স্বার্থের ব্যাপারে দারুণ উদাসীন হন। আর অন্যের ব্যাপারে তারা খুব দয়ালু ও মহানুভব থাকেন।

 

 

═──────────────═