‘উম্মাতুন ওয়াহিদাহ’পরিবারের বার্তা
“উম্মাতুন ওয়াহিদাহ”: মাধ্যম ও টার্গেট
(উম্মাতুন ওয়াহিদাহ ম্যাগাজিনের ১ম সংখ্যা থেকে অনূদিত)
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সকল জগতের প্রতিপালক। শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্যই। শাস্তি কেবল জালিমদের উপর। রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের নেতা মুহাম্মাদসাল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লামের উপর, যিনি রাসুলদের সরদার ও মুত্তাকিদের ইমাম। সেইসাথে রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর পরিবারবর্গ ও সকল সাহাবীর উপর।
‘হে আমাদের রব, আপনি যা নাযিল করেছেন, আমরা তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং এই রাসুলের অনুসরণ করেছি। তাই, আপনি আমাদের নাম সাক্ষ্যদাতাদের মাঝে লিপিবদ্ধ করুন’।
আমরা আল্লাহকে রব হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে, কাবাকে কেবলা হিসাবে, কোরআনকে আমাদের আদর্শ হিসাবে এবং আমাদের নেতা মুহাম্মাদসাল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লামকে রাসুল ও নবী হিসাবে বিশ্বাস স্থাপন করলাম।
হে মুমিন ভাই ও বোনোরা,
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
আমাদের একটি ব্যাধি রয়েছে।আর এটা আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যাধিযা আমাদের শত্রুদেরকে আমাদের প্রতি লালায়িত করেছে। এই ব্যাধির কারণে আমাদের দেশগুলোতে তাদের আগ্রাসনের মেয়াদ দীর্ঘায়িত হয়েছে।আরএইব্যাধিটাহল: তাওহিদের কালিমা থেকে আমাদের বিভক্তি, তাওহিদের পতাকা থেকে আমাদের বিচ্ছিন্নতা এবং তাওহিদের বাহিনী থেকে আমাদের বিক্ষিপ্ততা।
একারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ ছিল: তাওহিদের কালিমার উপর সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার দাওয়াত দেওয়ার, সার্বজনীন ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করা এবং মুসলিমউম্মাহর সন্তানদের মাঝে বিভেদ ঘুচিয়ে ফেলা।
আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে উম্মাহর নিকট উপদেশ ও বাণী পৌঁছাতে সামান্যতমও ত্রুটি করেননি। এটা কীভাবে হতে পারে, যখন স্বয়ং তাঁর রব তাঁর উপর নাযিল করেছেন: “নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ে যায়, তাদের সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই।’
একারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টার ভয় করতেন, তা হল: তাদের মাঝেও পূর্ববর্তী জাতিদের সেই রোগ ছড়িয়ে পড়ে কি-না, যার ফলে তারাও পূর্ববর্তীদের মত মতবিরোধে লিপ্ত হয় এবং নিজেদের দ্বীনকে টুকরো টুকরো করে ফেলে।
গত শতাব্দীর মধ্যভাগে মানুষ দেখেছে, বিভিন্ন ইসলামী দলগুলো, বেতনভুক্ত সংগঠনগুলো এবং আরব জাতিগুলো কীভাবে উম্মাহর প্রতীকগুলোকে বিভিন্ন ইসলাম-বিরোধী দলের অধীনে ও ছায়াতলে নিয়ে গেছে। আর এর ফলে অধিকাংশদলেরই প্রভাব দুর্বল হয়ে গেছে। এর কারণ হল, এ সকল সংগঠনের অনেক দায়িত্বশীলরা সংগঠনের ব্যাপারে মুখে এমন কথা বলত, যা তাদের অন্তরে নেই। দিনের শুরুতে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত আর শেষভাগে কুফর করত। মুসলিম জাতির সামনে অনেক কিছু বলত, কিন্তু যখন তাদের নেতাদের সাথে নির্জনে মিলিত হত, তখন বলত: আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি। আমরা মুসলিমরে সাথে ঠাট্টা করি মাত্র।
আমরা বিশ্বাস করি যে, দেশ, ভাষা ও বর্ণ ভিন্ন ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও আমরা মুসলিমরা এক জাতি। মহান রব বলেন,
‘নিশ্চিত জেনো, এটাই তোমাদের দ্বীন, যার দাওয়াত সমস্ত নবী-রাসুল দিত। আর আমি তোমাদের প্রতিপালক। সুতরাং তোমরা আমার ইবাদত কর’।
কোনো বিবেচকব্যক্তিএ ব্যাপারেবিন্দুমাত্রসন্দেহ করবে না যে, আমাদের এই এক জাতির মাঝে ঐক্য ও একতা শরীয়ভাবেও ফরজ এবং যৌক্তিভাবেও অত্যাবশ্যক। ধর্মীয় দিক থেকে, কোরআনের বর্ণনার আলোকে আমরা মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই এবং এক জাতি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের বর্ণনার আলোকে আমরা এক দেহ। রাজনৈতিক দিক থেকে, আমাদেরকে যে বিপদ বেষ্টন করে আছে, তা দূর করা ও আমাদের কল্যাণ সাধনের জন্য তাওহিদের কালিমার অধীনে এক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সেই সাথে এক ইমাম ও এক রাজনৈতিক ব্যবস্থার অধীনে আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া আবশ্যক।
আমাদের চিন্তা-চেতনা জুড়ে আছে মুসলিমদের ঐক্যের চিন্তা। বিগত ত্রিশ বছরে আমাদের দাওয়াতী ও সামরিক প্রচেষ্টার বড় একটি অংশ জুড়ে আছে ঐক্যের চেষ্টা। এ দীর্ঘ সময় ধরে আমরা, আমাদের দ্বীনি দায়িত্ব ও রাজনৈতিক বুঝ দ্বারা সকল বিবাদ ও বিচ্ছেদ দূর করার জন্য চেষ্টা করে আসছি। যদিও আমাদের নিজেদের অনেক গুনাহ ও ভুল-ভ্রান্তি আছে। কিন্তু আমরা অনবরত সকল প্রকার মতবিরোধের চোরাপথগুলো বন্ধ করার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছি।
একারণে আমরা মনে করি, যার প্রতি আমরা পূর্বেও আহবান করেছি এবং এখনও আহবান করি, তাতে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ঐ সকল লোকই এগিয়ে থাকবে, যারা আমাদের মত ও আমাদের ভাই।যারা দাওয়াত, জিহাদ, রাজনীতি সহ সকল ময়দানে ইসলামের জন্য কাজ করার ব্যাপারে সচেষ্ট। তাই আমরা তাদের দিকে আমাদের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি, ইসলামের পতাকা সুউচ্চ করার কাজে সাহায্য-সহযোগীতা করার জন্য। আমরা সকলে আশাবাদী যে, এই দ্বীনের বিজয়ের জন্য প্রচেষ্টাকারী সকল নিষ্ঠাবান ভাইদের থেকে আমরা আন্তরিক সাড়া ও সাহায্য পাব।
ক্রুসেডার জাতি-গোষ্ঠী ও ইসলামী সভ্যতা বিরোধী পশ্চিমা সভ্যতার বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করেছি, আমাদের মুসলিম উম্মাহর সন্তানদের মন- মস্তিষ্কের উপর প্রভাব বিস্তার করার একটি প্রতিযোগিতা চলছে। তাই আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করে চলমান ক্রুসেড যুদ্ধের মাঝেই আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, সে সকল পবিত্র মস্তিষ্কসমূহে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে, হিম্মত জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে এবং সে সকল পবিত্র আত্মাসমূহে আত্মমর্যাদার বীজ বপন করার মাধ্যমে এই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের মোকাবেলা করার।
এরফলে আমাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা বিশেষ অনুগ্রহ দানকরলেন।আল্লাহ তায়ালা আমাদের মহান জাতির মাঝে আমাদের উত্তম গ্রহণযোগ্যতা ও সত্যের মুখপাত্রহিসেবে স্থান করেদিলেন। আমাদের মুসলিম ভাইদের মাঝে আমাদের সত্য অবস্থান এবং মিডিয়া ও সামরিক যুদ্ধে আন্তর্জাতিক কুফরের মোকাবেলার ক্ষেত্রে বন্ধু-শত্রু সকলের নিকট একটি মর্যাদা দান করলেন।
ফলে, আমাদের অক্ষয় জাতির শত শত হাজার হাজার যুবক-বৃদ্ধ আমাদের সাথে যোগ দিলেন।আল্লাহ তায়ালা যুগের চাহিদা ও সময়ের ফরজ হিসাবে তাদের উপর যে দায়িত্ব আরোপ করেছেন, তা আদায় করলেন। তাঁদের মধ্য থেকে কেউ কেউ মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ও মিডিয়া জিহাদে অংশগ্রহণ করলেন। তখন “তালায়িউ খুরাসান”নামের পত্রিকায় তাঁদের প্রবন্ধগুলো আসত, যা আফগানিস্তানের জিহাদ ও মুজাহিদগণের মুখপাত্র হিসাবে কাজ করত।
তারপর, নব্য ক্রুসেড শুরুর ১০ বছর পর ভাগ্যের চাকা ঘুরতে ঘুরতে “তালায়িউ খুরাসান” এর সিংহভাগ সৈন্য আক্রান্ত হলেন। আল্লাহর নিকট দু’আ করি, আল্লাহ তাঁদের জিহাদকে কবুল করুন। আমাদেরকে তাঁদের সাথে কল্যাণের উপর মিলিত করুন।
অতঃপর, পুনরায় ভাগ্যের চাকা ঘুরল। আমরা, আমাদের মিডিয়া শাখার জন্য নতুন নামে নতুন করে জেগে উঠলাম।নতুন করে পথচলা শুরু করলাম। যার নাম হল: ‘উম্মাতুন ওয়াহিদাহ’। ধারাবাহিক যুদ্ধ ও উত্তপ্ত রক্তপাতের মাঝে, আমাদের পত্রিকাবয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে গন্তব্যপানে এগিয়ে যেতে পারবে কি-না, আমরা জানি না। কিন্তু আমরা আমাদের মহান জাতির সাথে নতুন করে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, আমরা তাঁদের সুখে-দুখে, সচ্ছলতা ও সংকটে তাঁদের মুখপাত্র হয়ে তাঁদের সাথে থাকবইনশাআল্লাহ।
বর্তমানে আমরা লড়াইয়ের এক নতুন ধাপে আছি।সময়েরচাহিদাহল - সমগ্র বিশ্বে ইসলামের জন্য প্রচেষ্টকারী লোকদের মাঝে ঐক্য ও একতার চেতনা সৃষ্টি করা। এই ঐক্যের চেতনা নিয়ে সমস্ত ইসলামী শক্তিগুলোকে একত্রিত করা ও নয়া যামানার ইসলামী মহাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া। যার ক্ষেত্র ও শাখা-প্রশাখা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
আমরা মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, যদি মুসলিমগণ এক জাতি হয়ে যেত, যেমনটা আমাদের রব চান, তাহলে কখনো আজ ফিলিস্তিন ও হারামাইন বরবাদ হয়ে যেত না। কখনোই ইসলামী ভূখন্ডগুলোর উপর এই ক্রমাগত আঘাত আসত না।
‘উম্মাতুন ওয়াহিদাহ’ ম্যাগাজিনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
‘উম্মাতুন ওয়াহিদাহ’পত্রিকা হল আল-কায়েদার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও চিন্তা-চেতনাশাণিতকরার আন্দোলনের একটি অংশ। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আমাদের চূড়ান্ত আশা হল, ইসলামের জন্য প্রচেষ্টকারী সকল ভাইদেরকে নিয়ে জাতিকে জিহাদের পথে পরিচালিত করা।তাঁদের চিন্তা-চেতনার উন্নতি ঘটানোএবং তাঁদের রাজনৈতিক বুঝকে পরিপক্ক করা।
১) আমাদের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হল, সকল মানুষকে আল্লাহর সেই পথে আহবান করা, যা আল্লাহ তাঁর কিতাবে মনোনীত করেছেন। যেন সমস্ত মানবজাতি হিকমত ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে ইসলামের নূরের দিকে ও শান্তির পথেপরিচালিতহন।
২) আমরা ইসলামের মহত্ত্ব ও মৌলিকত্বের সাথে, শরীয়তের বড়ত্ব ও বাস্তবতার সাথে এবং ইসলামের মহান উদ্দেশ্য ও উন্নত আদর্শের সাথে ঈমানের প্রচার ঘটনোর চেষ্টা করি। শুধুমাত্র মুসলিমদের সমস্যাবলী সমাধানের জন্য নয়; বরং সমস্ত মানবজাতির সমস্যা সমাধানের জন্য। আর আমরা শরীয়ত ব্যতীত যত মানবরচিত কুফরী বিধান আছে, যেমন শিরকী গণতন্ত্র ও কুফরী সংবিধান- এগুলোকে ছুড়ে ফেলি।
৩) আমরা মনে করি, আমাদের উপর সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি, এ যুগের সবচেয়ে বড় চাহিদা এবং মুসলিম জাতিকে ইহুদীবাদী প্রভাব থেকে মুক্ত করার সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত মাধ্যম হল, যুগের হুবাল আমেরিকা ও তার মিত্রদের সাথে যুদ্ধের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা। আমেরিকা অব্যাহতভাবে ইসলাম ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছে, মুসলিমদের পবিত্র স্থানগুলোকে অসম্মান করছে, তাদের সম্পদসমূহ ছিনতাই করছে এবং মুসলিম দেশের মুরতাদদেরকে সাহায্য করছে। আমরা মনে করি, আমাদের বর্তমান যুগে সবচেয়ে বেশি আল্লাহর নৈকট্য দানকারী ইবাদত হল, আমেরিকা ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।
৪) আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি, আমাদের মহান জাতি, মুসলিম জাতির সাথে যুক্ত থাকতে এবং তাদের একজনকে আরেকজনের সঙ্গে যুক্ত করতে। সেই সঙ্গে আসন্ন বিপদ মোকাবেলা ও চলমান আঘাত প্রতিহত করার আদর্শ পদ্ধতি বর্ণনা করার মাধ্যমে উম্মাহর কল্যাণ কামনা করি। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের এক জাতিকে সংকীর্ণ গোত্র ও ভূখণ্ডের ভিত্তিতে বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভক্ত করার কারণেই আমাদের জাতির অন্তর থেকে আত্মমর্যাদা ও ইসলামী শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতি দুর্বল হয়ে গেছে। এমনকি, এভাবে তাদেরকে মানসিকভাবে হত্যা করে ফেলা হয়েছেবলাহলেওসেটাঅত্যুক্তিহবেনা।
৫)সাইকস-পিকট চুক্তির মাধ্যমে একক ইসলামী বিশ্বকে বিভক্ত করাকে আমরা রুটিকে টুকরো টুকরো করার মত মনে করি, যাকে চাবানোর সুবিধার জন্য এবং এক লোকমা এক লোকমা করে গ্রাস করার জন্য ভাগ করা হয়েছে।
৬) আমরা চেষ্টা করি, আমাদের কোরআন তিলাওয়াতকারীদের মাঝে কোরআনের নূর ও সহীহ সুন্নাহর আলো প্রচার করতে, যেন তাঁদের আত্মাকে ঈমান ও ইয়াকীনের খোরাক দেওয়া যায়,তাঁদের নিয়্যতকে উঁচু হিম্মত ও আন্তরিক সংকল্পের মাধ্যমে উন্নত করা যায়।তাঁদের আমলকে উত্তম আখলাকের মাধ্যমে প্রাণবন্ত করা যায় এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে উত্তম আখলাককে পূর্ণতা দেওয়া যায়।
৭) আমরা মুমিনদেরকে উৎসাহিত করি, সীমালঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। আমরা সত্যবাদী অন্তরসমূহে ঈমানী সহানুভূতি প্রজ্জলিতকরারচেষ্টা করি। সশস্ত্র ইসলামী আন্দোলনগুলোকে পথপ্রদর্শন, জিহাদী ধারার সংশোধন, আল্লাহর পথের মুজাহিদগণের চিন্তা-চেতনার তত্ত্বাবধান এবং সময়ের চাহিদা ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাবলীর প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণও আমাদের লক্ষ্য।
৮) আমাদের একটি লক্ষ্য হল মুসলিম জাতিকে তার কর্তব্যের ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দেওয়া এবং আমাদের মহান জাতির সামনে তার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বসমূহ স্পষ্ট করা।শত্রুর প্রকৃত চেহারা উম্মোচন করা এবং তাদের মোকাবেলার পদ্ধতি পরিষ্কার করা।
৯) আমরা আমাদের মহান জাতির সামনে নিজেদেরকে ব্যাখ্যা করতে চাই। তাদের প্রতি আমাদের অন্তরে লুকায়িত ভালবাসা ও বিশ্বস্ততার কথা প্রকাশ করতে চাই।আমরা নিজেরাও তাদের একটি অংশ এবং তাদের সম্মানের জন্যই আমরা যুদ্ধ করছি। আমরাএইকাজটাএইজন্যকরতেচাই - যারা আমাদের ব্যাপারে অজ্ঞ বা যাদেরকে আমাদের ব্যাপারে পরিপূর্ণ বিভ্রান্ত করা হয়েছে, তারা আমাদের সম্পর্কে স্পষ্টধারণাপান।
১০) আমাদেরআরেকটি লক্ষ্য -আমাদের বার্তাউম্মাহরকাছে পৌঁছে দেওয়া।আমরাআমাদের ঈমানী ভ্রাতৃত্বকে মর্যাদা দিতেচাই এবং প্রত্যেক ময়দানে ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য প্রচেষ্টকারী সকল ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগের সেতুবন্ধন সৃষ্টি করতেচাই। বিশেষ করে জিহাদী, ইলমী, দাওয়াতী ও শরয়ী রাজনীতির ময়দানে কর্মরত ভাইদের সঙ্গে। যাতে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত ঐক্য ও একতা বাস্তবায়ন করতে পারি অথবা পারস্পরিক যোগাযোগ, বোঝাপড়া ও আদান-প্রদানেরমাধ্যমে ন্যুনতমএমন অবস্থায় পৌঁছতে পারি, যার মাধ্যমে আমাদের মহান জাতির ইহ-পরকালীন সামগ্রিক কল্যাণ অর্জিত হয়।
১১) আমরা মুসলিমদের প্রতি সুধারণার প্রসার ঘটাতে আগ্রহী। বিশেষ করে, যারা আমাদের মুসলিম উম্মাহর মাঝে ইলম, দাওয়াত, সততা, নিষ্ঠা ইত্যাদিতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন, তাঁদের ব্যাপারে। আর আমরা দ্বীনের যেকোন কর্মীর সমালোচনা বা তাঁর প্রতি ঘৃণার অবস্থা দূর করতে আগ্রহী। যেন ইসলামের কর্মীদের থেকে সকল নিন্দা দূর হয়ে যায়, যদিও আমরা বিভিন্ন সমস্যা নির্ণয় ও তার সমাধানের পদ্ধতির ক্ষেত্রে পরস্পর ভিন্ন মত পোষণ করি।
১২)আমরা যখন মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে লিপ্ত হই, তখন নিজেদের ঘাড়ে কালিমার আমানত ও কলমের পবিত্রতার ভার বহন করি। আমাদের মহান জাতিকে হিকমত ও উত্তম কথার মাধ্যমে উপদেশ দেই। যেন স্বাধীন হওয়া ও স্বাধীনতা লাভের যুদ্ধে তাঁদের মহান পথচলা সফলতা লাভ করে। আমরা সকলেই আমাদের জাতিকে অকল্যাণের পথ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করি।
১৩) আমরা, আমাদের ইসলামী মর্যাদা পুনরুদ্ধারের সামগ্রিক আন্দোলনে এবংউম্মাহকে নতুন করে বিশ্বের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জাগ্রত করার পথে যেটাকে হক বলে বিশ্বাস করি, তা স্পষ্টভাবে বলে দেই। আর যেকোন কল্যাণকামী ও সংশোধনকারীর উপদেশ ও সংশোধন গ্রহণ করি।
১৪) দুই হারামাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরা ও বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়করা - আমাদের চিন্তা-চেতনার মধ্যমণি। প্রতিটি দখলকৃত দেশ, আমাদের হৃদপিণ্ডের একেকটি অংশ এবং বিশাল ইসলামী সাম্রাজ্যের একএকটি শাখা। একারণে আমরা এগুলোর ব্যাপারে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করতে চাই।
১৫) আমরা আহলুল ইলম ও মুজাহিদগণকে উপদেশ দেই, তাঁরা যেন নিজেদের মাঝে সমঝোতা ও ক্ষমার ব্যাপারে সকলের অনুকরণীয় হন। এছাড়া, উত্তম ব্যবহার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার প্রতিযত্নবান হন। নতুন প্রজন্মকে দিক-নির্দেশনা ও পথপ্রদর্শনের দায়িত্ব পালন করেন। বড়দেরকে সম্মান করার, ছোটদেরকে স্নেহ করার, উত্তম চরিত্র গঠন করার এবং ঝগড়া, অনর্থক কথা ও অশ্লীল কথা বর্জন করার শিক্ষা দেন।
১৬) আমাদের একটি লক্ষ্য হল ইসলামী দাওয়াতী, জিহাদী ও রাজনৈতিক কাজের উন্নতি করা।যেনএর মাধ্যমে বহিরাগত ইহুদীবাদী দখলদারদের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য এবং তাদের এজেন্ট স্বদেশী মুরতাদদের সীমালঙ্ঘন থেকে রক্ষা লাভের জন্য উম্মত যে বিক্ষিপ্ত চেষ্টা-প্রচেষ্টাগুলো করছে, তাকে এক করা যায়। লেখালেখি ও মতামত আদান-প্রদানের মাধ্যমে দ্বীনেরসঠিক ধারণা লাভ করা যায়।
১৭) আমাদের লক্ষ্য হল -ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি উম্মাহর সন্তানদের যে দায়িত্ব রয়েছে, তা তাঁদেরকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া। তাঁদেরকে একথা জানানো যে, ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতিপ্রত্যেকের উপর সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে। কেননা আজকের যুদ্ধ প্রত্যেকেরই নিজ দেশ, নিজ সীমান্ত ও নিজ দূর্গ রক্ষার যুদ্ধ। এজন্য আমরা উম্মাহকে আহবান করছি, নিজেদের সম্পদের মাধ্যমে জিহাদ করার। যাকাতের অর্থ নিজেদের সেসকল ভাইদেরকে দেওয়ারআহবানকরছি, যারা জিহাদ ও দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করছেন।আমরা উম্মাহর সদস্যের আরও আহবান জানাই তাঁরা যেন হিজরত ও জিহাদের কাফেলায় যুক্ত হন।
১৮) জিহাদ, দাওয়াত ও শরয়ী রাজনীতির ময়দানে নামার ব্যাপারে যারা প্রকাশ্য অলসতা করে, আমরা তাদের উপর আপত্তি করি। আমরা মনে করি, আমরা যাদের উপর আপত্তি করি, তাদেরকে যে বিষয়টিতে সবচেয়ে কঠিনভাবে ধরা হবে, তা হল, ইসলামের সৈন্য হওয়া থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করা। অথচ এটা হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীদের বৈশিষ্ট্য।
তারা কি জানে না যে, খুলাফায়ে রাশেদীন ও তাঁদের পরবর্তী পুণ্যবান শাসকগণকোনো আলেম বা তালিবুল ইলমকে জিহাদ বা বিজয় অভিযানে প্রেরণ করা থেকে অব্যাহতি দেননি? সে সময় কোনো আলেম তো দূরের কথা, কোনো মুসলিমও অব্যাহতি চাইত না বা এর জন্য ওযর পেশ করত না। এমনকি কারো নিকট এই প্রস্তাব পেশ করা হলেও রাজি হত না। বরং তাঁরা স্বভাবতই জিহাদী রণাঙ্গনগুলোতে যাওয়ার জন্য প্রতিযোগীতা করতেন। আহলে ইলমগণ সর্বদা সেনাবাহিনীর অগ্রভাগে থাকতেন। পেছনে থাকতেন না। তাঁরা জিহাদে বের হওয়া থেকে কোনো ওযর পেশ করাকে মুনাফিকীর আলামত হিসাবে বিবেচনা করতেন।
১৯) আমরা ভালবাসা, দয়া ও স্নেহের সাথে – নিজেদেরকে, সমস্ত মুসলিম জাতিকে, বিশেষ করে আলেম ও চিন্তাশীলদেরকে উপদেশ দিচ্ছি - তাঁরা যেন আমাদের উম্মাহর এই মহা দুর্যোগকে ছোট মন-মানসিকতা ও তুচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখেন।ইসলামকে ভাগ ভাগ আকারে না দেখেন। ইসলামের সামগ্রিক বিষয়কে তাঁদের ব্যক্তিগত মতামত ও পছন্দের অধীন না করে ফেলেন।
২০) ইসলামের বিজয়ের জন্য জেগে উঠা সকল ভাইদেরকে বলতে চাই- আমরা বুঝি যে, আমাদের জাতির সমস্যাগুলো কোনো একটি দল, একটি ইসলামী দেশ বা একজন আলেম ও ফকীহের একক প্রচেষ্টা ও গবেষণার মাধ্যমে সমাধান হবে না।
উম্মাহ যে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমরা তা অনুভব করি।আমরা বিশ্বাস করি এবং তা আল্লাহরদ্বীনের অংশ মনে করিযে - আমাদের উম্মাহর সংকট ও সমকালীন দুর্যোগের ব্যাপারে চিন্তা-গবেষণার জন্য অবশ্যই আলেম, ফকীহ, সঠিক চিন্তাশীল ও জ্ঞানী লোকদের একটি ঐক্য গড়তে হবে। দ্বীন, জীবন ও ভূমি রক্ষার জন্য সকলকে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে, যেন সত্যিকরার্থেই একটি একক জিহাদী জাতি গড়ে উঠতে পারে, যারা তাওহিদের কালিমার অধীনে জিহাদ করবে। বিগত বিশ বছর যাবত “ঐক্যের প্রেরক ও বিবাদের উৎসের মাঝে ইসলামী কার্যক্রম” (العمل الإسلامي بين دواعي الاجتماع ودعاة النزاع) নামক বার্তায় এর প্রতিই আমরা সকল মুসলিমকে আহবান করছি এবং মুজাহিদ নেতৃবৃন্দ তাঁদের ভাষণ ও বিবৃতিগুলোতে প্রতিবার এইবার্তানতুনভাবেদিচ্ছেন। যার ধারবাহিকতায় সর্বশেষ বিবৃতিটির শিরোনাম হল: “ইসলামেরসমর্থনেএকটিপ্রামাণ্যপত্র” (وثيقة نصرة الإسلام)।
আমরা আল্লাহর নিকট দু’আ করি, তিনি আমাদেরকে ঐ সকল লোকদের অন্তর্ভূক্ত করুন, যাদের কথা ও কাজ সুন্দর। ইয়া আল্লাহ, আপনিআমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। (আমীন)
**************