JustPaste.it

জাতিসংঘ নামক শয়তানের আড্ডাটি ভেঙ্গে দেয়ার এখনই সময়

          বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের সম্মিলিত চাঁদা ও সহযোগীতায় যে বিশ্ব পঞ্চায়েতটি দীর্ঘদিন যাবত দুনিয়ার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক(?) রূপে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সেই জাতিসংঘ, United Nations এর অবস্থা এখন একটি বিশালাকায় দানবের মরা লাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। জাতিসংঘের সদর দপ্তর আমেরিকার নিউইয়র্কে; এটি যেমন এর পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার পয়লা কারণ ঠিক তেমনি এর কয়েকটি স্থায়ী সদস্যের সীমাতিরিক্ত দাপাদাপি আর ন্যায়- ইনসাফ ও মানবতা বিরোধী ভেটো পাওয়ারও মানব জাতির ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা লজ্জাস্কর রীতি।

          সভ্য পৃথিবীর শিক্ষিত জাতিসমূহের নন্দিত সংঘ তার ইদানীংকার কিছু ভূমিকায় তথাকথিত পরাশক্তি ও তার দোসর মিনি সুপার পাওয়ার গুলোর 'গৃহপালিত পঞ্চায়েত বা রাবারষ্ট্যাম্প প্রতিষ্ঠান' হিসেবে বিশ্বের সাহসী চিন্তা ও মুক্ত চেতনার মানুষের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করেছে।জাতিসংঘের আসল চেহারা উন্মোচিত হওয়ায় এককালের আস্থাভাজন এই প্রতিষ্ঠানটি যে, সবসময়ই কাগুজে বাঘই ছিলো তা-ও আজ বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।

          ভারত বিভাগ থেকেই শুরু করা যাক।কাশ্মীরী জনতার প্রাণের দাবি "ব্রাহ্মণ্যবাদী শাসনের আওতামুক্ত হয়ে স্বতন্ত্র ইসলামী হুকুমাত কায়েম করা" তা আজ পর্যন্ত ঐ জাতিসংঘের প্রস্তাবের ফাইলেই আটকা পড়ে আছে।জাতিসংঘ যদি নিরপেক্ষ,  ন্যায়নিষ্ঠ বা প্রভাবশালী কোনো প্রতিষ্ঠান হতো তাহলে তার প্রস্তাবের অবমাননা করে হিন্দুস্তানের শাসকগোষ্ঠী নির্বিচারে কাশ্মীরী মুসলমানদের রক্তে ভূস্বর্গ রঞ্জিত করতে পারতো না। বরফ ঢাকা রূপসী উপাত্যকায় ছিন্নভিন্ন হয়ে  খসে পড়তো না মা-বোন ও মেয়েদের সম্ভ্রমের পবিত্র আঁচল।ভারতীয় বাহিনীর পাশবিকতা আর জন্তুপনার শিকার হয়ে জ্বলে পুড়ে খাক হতো না পৃথিবীর বেহেশত বলে কথিত কাশ্মীর।

          আরব ভূখণ্ড ফিলিস্তিনের পবিত্র ও বরকতপূর্ণ  মাটি থেকে উচ্ছেদ করা হলো শতসহস্র আরব আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা।মুসলমানের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস ইহুদীদের হাতে অগ্নিদগ্ধ আর অব্যাহত অবমাননার শিকার। পশ্চিম তীর ও গাজা উপাত্যকায় প্রতিদিন মুসলমানের রক্ত ঝরে। সভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্ক হয়ে আছে সাবরা-শাতিলার হত্যাকান্ড। কিন্তু জাতিসংঘ নামক শ্বেতহস্তীটি এখানে সীমাহীন অসহায়। ইহুদী-জায়নবাদ আর ইসরায়েলের ব্যাপারে জাতিসংঘের মুখে "ভেটো" নামক কুলুপ আঁটা।

সুন্দর একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দেশনেতা মোয়াম্মার গাদ্দাফী।আমেরিকার দাদাগিরি মানতে তিনি একটু ইতস্ততঃ করেন।স্বাধীনতা ও মুক্তির পূর্ণ অর্থটি তিনি জানেন।তিনি লিবিয়ার মানুষকে একটি গর্বিত আরব দেশের মাথা উঁচু জাতি হিসেবে পরিচিত করাতে চান।স্বাবলম্বী দেশের স্বনির্ভর মানুষ নিয়ে গড়ে তুলতে চান সুন্দর  একটি লিবিয়া। কিন্তু মার্কিনীরা তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিতে চায়।বলে, তিনি না কি সন্ত্রাসী। পরাশক্তির চোখ রাঙানীর পরোয়া না করলেই "সন্ত্রাসী" হিসেবে আখ্যা পেতে হয়।একটি বিমান দূর্ঘটনার সাথে জড়িয়ে থাকার অপ্রমাণিত অপরাধে লিবিয়ার দুইজন নাগরিককে আমেরিকার হাতে তুলে দেয়া না দেয়ার জেদাজেদি নিয়ে মার্কিনীরা লিবিয়ার উপর অবরোধ আরোপ করে বসে। জাতিসংঘ নামক  প্রতিষ্ঠানটি এখানেও ঠুটোঁ জগন্নাথ।

          উপসাগরীয় সংকটে কুয়েত দখলের অপরাধে যে পরিমাণ শাস্তি ইরাকের মানুষ পেলো এবং এখনো পাচ্ছে সে সর্বপ্রকার নিষেধাজ্ঞা আর অবরোধে ইরাকী জনতা আজ ওষ্ঠাগত প্রাণ। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের স্টিমরোলার এর চাকা ঘর্ঘর করে এগিয়েই চলছে।এক সাদ্দামের অংশের সাজা ভোগ করতে হচ্ছে কোটি কোটি মুসলমানকে।ইরাক-কুয়েত ছাড়াও আরব আমিরাত, সউদী আরব সবাইকে গুণতে হচ্ছে মোটা অংকের গুন্ডা ফিস। 'ঘাদানি' আর কারে কয়!

          অথচ বিশ্বের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা জঘন্য ও নির্মম পশুত্বের নির্লজ্জ মহড়া চলছে পূর্ণ ইউরোপে। সুসভ্য পরিশীলিত আর জ্ঞানে-বিজ্ঞানে উন্নত পাশ্চাত্যের মানুষের কী কান্ডটাই না করছে! খৃষ্টান জাতির মাথা নুয়ে গিয়ে হাঁটুতে লাগার মতো ঘটনা। আমি বলছি বসনিয়া হারজেগোভিনার কথা।যেখানে দেড় লক্ষ উম্মতে মুহাম্মাদীকে কুপিয়ে, পিটিয়ে, নদীতে ডুবিয়ে,  পানিতে চুবিয়ে, গুলির মুখে খতম করে দেয়া হয়েছে মাত্র ৭/৮ মাসের মধ্যে।৪০ সহস্রাধিক মুসলিম  মা-বোনের পবিত্র ইজ্জতের চাদর ছিন্ন ভিন্ন করেছে খৃষ্টান জানোয়ারেরা।নির্যাতনের মাধ্যমে গর্ভসঞ্চার করে বসনিয়া মায়েদের বলা হচ্ছেঃ "সার্ব অর্থডক্স খৃষ্টানদের বংশবৃদ্ধি কর"। লক্ষ লক্ষ মুসলিম এখনো সার্ব বন্দী শিবিরের নারকীয় পরিবেশে ধুকে ধুকে মরছে।কিন্তু নীরব জাতিসংঘ । বেকার এর পরিষদ সমূহ।শয়তানের আড্ডাটির যেন কোন কিছুই করার নেই।

          মুসলমানকে মারার সুযোগ পেলেই জাতিসংঘের কার্যক্রম শুরু হয়। আর মুসলমান মার খেলে জাতিসংঘ নিথর হয়ে পড়ে।এ বাস্তব সত্যটি দেখে, শুনে, বুঝেও কি পৃথিবীর মুসলিম নেতৃবৃন্দের সুমতি হবে না?এরা কি খুনীর দুয়ারে বিচার চাইতে লাইন দিয়ে বসে থাকবে চিরদিন? ওরা কি পিতৃহন্তা, ভ্রাতৃঘাতক আর মা-বোন-কন্যার শ্লীলতা নাশক পশুদের হাতেই নিজেদের অশ্রু মোছাতে আগ্রহী? এ আশা কি কোনদিন পূরণ হবে?

          না, হবে না। কোনদিনও না। অতএব, সময় থাকতে শয়তানের এ বৃহৎ আড্ডাটিকে ভেঙ্গে দিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের পৃথক একটি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগী হতে হবে। আর তা অবিলম্বে। এখনই।