JustPaste.it


সমকালীন প্রসঙ্গ

সুড়ঙ্গপথঃ পতনের ডাক
প্রিন্সিপাল এ, এফ, সাইয়েদ আহমাদ খালেদ
====================================================

 

      শাস্বত ইসলাম; ঋতুর পরিবর্তনে দুনিয়ার পরিবর্তন সাধিত হলেও ইসলাম অপরিবর্তণীয়-এর বাণী অলংঘনীয়। চির অনুপম ধর্ম ইসলামের অনুসারী মুসলমানগণ সর্বকালের ইতিহাস প্রসিদ্ধ ও কল্যাণবহ, উন্নত ও গর্বিত একটি জাতি। এ জাতির বিরুদ্ধে শত্রুতা সাধনে সদা লিপ্ত জগতের অন্যান্য বিজাতীয় সকলে ইসলামের বিলুপ্তি সাধনে দৃপ্ত শপথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এতা নেশা নয়, ভিন্ন ধর্মীয়দের পেশা। নবী জীবন থেকে এ শত্রুতা চলে আসছে, প্রতিটি মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে চলে আসছে একের পর এক ষড়যন্ত্র বিভিন্ন কায়দায়। ষড়যন্ত্রের সাফল্য অর্জন সরাসরি ঘোষিত আক্রমণে সম্ভব নয়। জেনেই শত্রু পক্ষ সবসময় বন্ধুত্বের ভান করে, বিকল্প হিসেবে ‘সুড়ঙ্গ পথ’ বেছে নিয়েছে। মুসলিম দেশ সমূহে এ পথেই ঢুকছে ধ্বংসমুখী অপতৎপরতার সকল উপাদান ও ইসলাম বিনাসী উপসর্গ। সুড়ঙ্গ পথের কারণেই বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ বিপন্নের সম্মুখীন; অপশক্তির বিষাক্ত ছোবলে মুসলিম কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও ধর্ম রক্ষা করা দায় হয়ে পড়েছে-দেশের নব্বই শতাংশ মুসলমান আজ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। অপকৃষ্টির বন্ধুরা (?) আসছে চোরা পথে, আসছে ছদ্মবেশে, এরা মুসলিম নামের ছদ্মাবরণের বেঈমান তৈরী করছে এবং এ শ্রেণীর বেঈমানদের দ্বারাই ঈমানী জিন্দেগীর মূলে কুঠারাঘাত করছে। সরকারের নির্লিপ্ততার কারণে আজ দেশময় ইসলাম অ মুসলিম বিরোধী চক্রন্ত মাথা চারা দিয়ে উঠেছে। বিভিন্ন এন,জি,ও সংগঠন এ কাতারেরই এবং এদের উদ্দেশ্যের মুখোশ ইতিমধ্যে উন্মোচিত হয়ে গেছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির শত্রুতা তো লেগেই আছে। সেদেশের বন্ধুরা ক্ষতির উপকরণ সমূহ সুড়ঙ্গ পথেই পাচার করে চলেছে, তারা বেছে নিয়েছে বেঈমানী রক্তে লালিত ইসলামের কলংক তসলিমা-কবীর-আহমদ শরীফ গংদের। ট্রেনিং প্রাপ্ত এরা আঘাত হেনে চলেছে মুসলিম অনুভূতির ওপর, মিথ্যার জাল বুনে চলেছে বিকৃত ও লেখনির ভিতর দিয়ে; এরা ভারতের মদদপুষ্ট নির্ভেজাল সেবক, চির কুখ্যাত মীর জাফর আলী খানের যোগ্য উত্তরসূরী। দেশের অগণিত মুসলিম প্রাণ দারুন ক্ষুদ্ধ, দলমত নির্বিশেষে চিহ্নিত শত্রুদের শাস্তি কামনায় সোচ্চার।
     চরম সত্য মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের অপব্যাখ্যা ধৃষ্টতা চলছে, পবিত্র বাণীর বিকৃত অর্থে প্রচার করছে চিহ্নিত কতিপয় পত্রিকা। ইসলামের নাম মুছে ফেলার অপপ্রয়াস চলছে জোরেসোরে ‘বিসমিল্লাহর’ পরিবর্তে ‘জয়হোক’ শব্দ সংযোজনের চক্রান্ত চলছে। অথচ এই বিসমিল্লাহ শব্দ ব্যবহার করেই যে সরকার মসনদ লাভ করেছে, সেই সরকার সকল দুষ্টগ্রহ ও মুরতাদ দমনে কেন নীরব-অপসংস্কৃতি ও অপশক্তির মূলোৎপাটনে কেন তৎপর নয় এতাই দেশবাসীর সংগত জিজ্ঞাসা। নাস্তিক আহমদ শরীফ, ঘৃণিত তসলিমা-নাসরিন এ ধারার কলঙ্কময় সৃষ্টি, মুসলিমের ঘরে জন্ম নেওয়াটাই হয়েছে এদের অন্যায়-তাই জাহেলী দুঃসাহস দেখায় পবিত্র কুরআনের ভুল ধরার। ধর্মদ্রোহী ও মতলববাজদের শায়েস্তা করার দায়িত্ব নিঃসন্দেহে সরকারের নির্লিপ্ততায় জাতীয় স্বত্তার বিলুপ্তি ঘটায়; পরিণতি হয় ভয়াবহ। মীর মর্দান অ মোহনলালের অনুপ্রেরনা আমরা কেন বিস্মৃত হয়ে যাই, এটা বিস্ময়কর ব্যাপার। ইসলামের গৌরবময় অতীত ইতিহাস মুছে ফেলার জন্য যারা ময়দানে নেমেছে, আল্লাহ্র কালাম অ বিধান নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে, লাগামহীন বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছে, খ্রীস্টান সংগঠন-পুষ্ট বিপথগামী যে সব মুসলমান নামের কুলাঙ্গার নানাভারে খোদায়ী বিধি-বিধানের সমাধি দানের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে, নগ্ন আক্রমণ শুরু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ও রুখে দাঁড়াবার দায়িত্ব কি একমাত্র এদেশের আলাএম সমাজের? তর্কের অবকাশ নেই, দেশকে সার্বিকভাবে রাহু মুক্ত করতে হলে, অবশ্যই সুরঙ্গ পথের আনাগোনা বন্ধের পদক্ষেপ ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে লুক্কায়িত বিজাতীয় প্রেমিকদের আশু উৎখাত প্রয়োজন। বিলম্বে পলাশীর পুনরাবৃত্তি হওয়া বিচিত্র কিছুই নয়।
    মুরতাদ অ ইসলাম বিরোধি চক্রের দমনে গণদাবীর প্রতি আমল না দেওয়া বা দীর্ঘ সূত্রিতা প্রকারন্তরে দেশের ধ্বংস ডেকে আনা নয়কি? গণতান্ত্রিক সরকারের এ ব্যাপারে বিলম্বিত নীতি সত্যিই বেদনাদায়ক! আল্লাহ্র দুশমনদের সাথে কোন মুমিনের বন্ধুত্ব হতে ও থাকতে পারে না। বিসমিল্লাহ্ ভিত্তিক কর্মের নমুনা প্রদনকল্পে, সকল অপশক্তির জোয়ার রোধে বর্তমান সরকারকে সাইমুম সম পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দ্বীনের দেশের অ জাতির শত্রুকে শায়েস্তা করতে হবে। হযরত আলী (কঃ) বলেছেনঃ “শত্রুর শেষ রক্ষা করতে নেই। সুযোগ পেলেই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।“
    সিংহকে দুর্বল করতে হলে খাঁচায় পূরে বাঁচিয়ে রাখার মত খাবার পরিবেশন করতে হয় মাত্র। কাউকে ঘায়েল বা আক্রমণ করার শক্তি যেন না থাকে, তার, এটাই উদ্দেশ্য। সিংহতেজা জাতি মুসলমানদের ময়দানী সমরে কাবু করা সম্ভব নয় বিধায় ইসলামী সংস্কৃতির বিপরীত অপসংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা দ্বারা মুসলমানের মস্তিস্ক ধোলাই করার মাধ্যমে ঈমান ধ্বংসের সুতীব্র প্রয়াস ঢলছে। এ ধরনটা হচ্ছে ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রতিক্রিয়া; আত্মবিস্মৃত হলেই পতন তরান্বিত। এহেন প্রক্তিয়ায় বিজাতীয় বিজয়ের অতীত নমুনা আছে বৈ কি! প্রত্যেক জাতির সংস্কৃতি বা কৃষ্টি হচ্ছে তার পরিচিতি-তার জীবনের খোরাক। এ চিন্তার আলোকেই বিশ্ব মুসলিম ধ্বংসে ‘সুড়ঙ্গ পথ’ ব্যবহৃত হচ্ছে; এদেশে মুসলিম চিন্তা-চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থি সকল উপাদান বন্ধু প্রতিম (?) প্রতিবেশী দেশ থেকে বাংলাদেশে আমদানী হচ্ছে। তৈরী হয়ে গেছে এদেশের বুকে বন্দে মাতরম (নাউজুবিল্লাহ) মনমানসিকতার সমর্থনপুষ্ট কিছু দালাল। এরা নাকি পণ্ডিত! ন, এরা  “আনন্দবাজারী” ভিত্তিক ট্রেনিং ও পুরষ্কার প্রাপ্ত ‘পণ্ডিত’ মূর্খ, হস্তী সম পদচারণা হলেও দেহের বিশালতা ক্ষুদ্র চোখে প্রতিভাত না হওয়ার কারণে হাতীরূপ হস্তীমুখ। পরকীয়া বৃত্তিতে অভ্যস্ত বলে মহা বিশ্বের অক্ষয় শক্তি ইসলামের বিস্ময়কর বিজয় ও কৃতিত্বের অতুলনীয় বিশালত্ব এদের হস্তীরূপ চোখে ধরা পড়ে না।
    শুধু মুসলিমের নয় মানবতার গর্ব, বিশ্ব মজলুমের পরম বন্ধু বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম; অপরাজেয় একনাম ও মহান জাতীয় ব্যক্তিত্ব নজরুল। দুঃখের বিষয়, শহরের বড় বড় অধিকাংশ বই-এর দোকানে ‘সঞ্চিতা’ চাইলে বিক্রেতা এগিয়ে ‘সঞ্চয়িতা’। এরূপ কেন প্রশ্নের জবাবে ক্রেতাকে জানানো হয়, “সঞ্চিতা/টঞ্চিতা এদেশে চলে না সাহেব।“ বিস্মিত হই এবং শান্তনা লাভ করি কবির এই বর্ণনায়, “অমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি।“ সাবাস বাংলাদেশ! সাবাস বিক্রেতা!! সাবাস বন্ধুদের ট্রেনিং!!! কি সুন্দর অ চমৎকারভাবে ঈরটধভ ষট্রদ (মস্তিষ্ক ধোলাই) চলছে। বিশ্ব মানবতার গর্বিত ও মজলুমের অহংকার কবি নজরুলের পরিচিতি বাংলাদেশে নেই-থাকলেও ক্ষীণ দীপ শিখার ন্যায়। পক্ষান্তরে পরিচিতি এখানে সাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার কবি রবি ঠাকুরের। দোকানদারের এ স্বচ্ছ (?) ধারনায় পরিপুষ্টরাই ইসলামের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। তসলিমা গংদের রথশোভা যাত্রার বাহাবা দানকারী শরিফ এরা। ইসলামী পরিমণ্ডলে এ সব হায়েনাদের বিচরণ বড় কষ্টদায়ক।
    ওহুদ প্রান্তরে ইসলাম বৈরী কোরেশদের ক্ষুদ্র দল, মুসলমানদের সামান্য ভুলের কারণে অরক্ষিত ও দুর্বল অংশ দিয়ে ঢুকে পড়ে-নিশ্চিত বিজয়ী উদীয়মান বীর শক্তির পতন ঘটায় (অবশ্য জাতীয় জীবনে এটা পতন ছিল না-এতা শিক্ষা)। এই দুর্বল অংশকে ইতিহাসে ‘সুড়ঙ্গ পথ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। বিশ্বের মুসলমান জেগেছে সত্য; কিন্তু এদের দুর্বল ও ধ্বংস করতে সুড়ঙ্গ পথের গুরুত্বকে শত্রু পক্ষ বিশেষভাবে মূল্যায়ণ করে চলেছে। বন্ধু (?) ভারত এর ব্যতিক্রম নয়। বিজাতীয় ভাবধারায় উজ্জীবিত, এমনকি তাদের কৃষ্টিতে সমৃদ্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস পরিষদ ইসলামের ইতিহাসের কিরূপ সমালোচনার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। প্রতিবাদকারী সুশিক্ষিত গোষ্ঠীকে জানাই মোবারকবাদ। উল্লেখ্য, ইসলামের প্রজ্জল ইতিহাসের বাস্তবতা উপলব্ধি করেই কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈনক খ্যাত্নামা হিন্দু ভাইস চ্যাঞ্চেলর বৃটিশ আমলে, ইসলামের ইতিহাস পাঠ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করতঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক বিভাগ খোলেন। ধিক! শত ধিক সংশ্লিষ্ট ইতিহাসের বিরুদ্ধাবাদী পরিষদভুক্ত তথাকথিত বরেণ্য ব্যক্তিদের; ঘৃণা ও লজ্জায় মুখ লুকায়। মুসলিম নামধারী এ শ্রেণী ইসলামের কলংক। এই জাতীয় পরিষদের অস্তিত্ব না থাকাই বাঞ্ছনীয় এবং এই মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের সকল শিক্ষাঙ্গণ থেকে, আগামী প্রজন্মকে ভুল তথ্য পরিবেশনের হাত থেকে রক্ষা লক্ষ্যে অপসারণ দরকার। এদের চক্রান্ত মোকাবিলায় তৌহিদী জনতাকে জাগতে হবে।
    জানাটা ইসলাম নয়; জেনে আমল করাটাই ইসলাম। যারা জানেও না মানেও না-শুধু মুসলিম নামের মোড়কে পরিচিত, তারাই ক্ষতিকারক। অপ-সমালোচনা, ব্যাখ্যা ও ভিন্ন দৃষ্টি ও আদর্শের বন্যা প্রবাহে এরা উপযুক্ত। এদের মদদ দানের প্রয়োজনে প্রকাশ্য রাস্তা পরিহার করতঃ সুড়ঙ্গ পথের ব্যভার শুরু হয়েছে। সরাসরি ভারত-ভীতি যতটা না আমাদের বিহ্বল করতে সক্ষম, তার চেয়েও অধিক ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এই মদদপুষ্ট শ্রেণীর বসবাস ও আনাগোনা। এদের শায়েস্তা করা গণদাবীর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নৈতিক দায়িত্ব; সহযোগিতা থাকবে ১২ কোটি নাগরিক সমৃদ্ধ নির্ভেজাল মনের সকল মুসলমান। সাপ খেলা দেখা অনেক হয়েছে। সাপুড়িয়ার গান সাপের ছোবল মারার অভ্যাসতাকে কি ভুলাতে পারে? ইসলামের বিরুদ্ধে তসলিমাদের অবস্থাও আজ এ পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। 
     আজ বাংলাদেশ দুটি শিবিরে বিভক্তঃ একটি ইসলামপন্থী, অন্যটি পরিপন্থী। একশ্রেণীর ঘোর-প্যাচমনা ব্যক্তি ইসলাম পরিপন্থীদের নিয়ে খালা শুরু করেছে। এযেন ‘যা যা দি’ পত্রিকা। খোদায়ী বিধি-বিধানের প্রতি ইসলাম পরিপন্থী দল আঘাত হেনেই চলছে; এ স্পর্ধা কার ইঙ্গিতে এতাই দেশবাসীর জিজ্ঞাসা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে আল কুরআনের পবিত্র বাণী সংযোজন, মুসলমানের নামে পরিচিত হলের পরিচিতিতে ‘মুসলিম’ শব্দ ব্যবহার ইত্যাকার আর কত কি করা যাবে না। এরূপ প্রতিবাদ করার সাহস কি ব্রাহ্মণ্যবাদীরা ভারতের শিবসেনা নায়ক বাল থ্যকারে বাবু কাছ থেকে অর্জন করেছে? যারা সংযোজন বিরোধী হৈ চৈ শুরু করেছেন তাদের ওস্তাদী প্যাচ আমদানী হচ্ছে এদেশে থেকে নয়-অন্য কোথাও। দেশ মুক্ত করার সংজ্ঞায় কি ছিল এ সব পবিত্র ও বাঞ্ছনীয় শব্দাবলী তুলে ফেলতে হবে? আগে ছিল। তুলে ফেলতে কে বলেছিল? ব্যক্তির মালিকানায় বাংলাদেশ নয়, পরিকল্পিত নোংরামীর কঠোর জবাব দানে সিংহ তেজা মুসলিম জনতা এখন পথে নেমেছে-যতেচ্ছাচারের অবসানে চাই আমরা। ঘৃণিত নেশায় পরিচালিত আল্লাহ্র দুশমনদের সাবধান হয়ে যাওয়া উচিত।
       আমার পরম ভক্তিভাজন মরহুম আব্বার বৃটিশ আমলে লিখিত প্রতিবাদী লেখা পড়েছি। জানতে পারি, বৃটিশ শাসিত ভারতবর্ষে ডব্লিউ, জে, ম্যাকিন নামক এক ইংরেজ মুসলিম পুতঃচরিত্রবতী মহিলাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করেছিল। লেখনির দ্বারা তারা লেখার বিরুদ্ধে ভারতীয় মুসলমানগণ ক্ষোভে ফেটে পড়ে, আন্দোলন শুরু হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে। ইংরেজের মসনদ টলটলায়মান হওয়ার উপক্রম। কিংকর্তব্য বিমুখ বৃটিশ সরকার লেখার সকল কপি বাজেয়াপ্ত করতঃ ম্যাকিন সাহেবকে ভারত ছাড়া করে এবং সরকার মুসলিম উম্মাহর কাছে মাফ চেয়ে নিস্কৃতি লাভ করে। আর আজ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে চলছে ব্যক্তিগত নয়-কুরআনের অবমাননা, ধর্মের অপসমালোচনা। কোন বিহিত নেই। আফসোস! সদাসয় সরকার আল্লাহ্র কাছে কি জবাব দেবেন ? ম্যাকিনের সরকার ম্যাকিনকে তাড়ালো। হে বাংলাদেশের মুসলিম সরকার আপনি তসলিমা-কবীর-শরিফ গংদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? মহাকবি নজরুলের কবিতা পড়েন নাইঃ “দুনিয়াতে নত নয়, মুসলিম কারো শির।“ ন্যায়ের সংগ্রামে যারা আজ পথে নেমেছেন তারা কেবল আলেমই নন, জিন্দাদিল জিহাদী মুসলিম। জিহাদের শিক্ষা ঘরমুখী নয়-রণমুখী। বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে পবিত্র শব্দাবলীর সংযোজনকারীরা জাতির সুসন্তান, এদের প্রতি আক্রমণ চালান হয় কোন সাহসে, কাদের ইঙ্গিতে? ‘লা-ইলাহার’ পতাকাবাহী মানুষের ন্যায়সংগত দাবী ও অকৃত্রিম আকাংখার বাস্তবায়নকে কোন উস্কানিতেই নিস্তব্ধ ও প্রতিহত করা যাবে না-সময়ের ব্যাপার মাত্র।
     শোভন ও অশোভন আলাপে ব্যক্তি বা গোষ্ঠির পরিচয় ফুটে উঠবে। নারীর ন্যায় সংগত পাওনা ও অধিকারের রূপরেখা অতি সুন্দর ও সুবিন্যাস্তভাবে ইসলাম একে দিয়েছে। একে উমভডণ্রধমত করার কথা বলার অধিকার কার আছে? যদি বলে কেউ, তা বাড়াবাড়ির নামান্তর। বেপর্দায় পথে নেমে হাত উচিয়ে নিছক একটি দৃশ্যের অবতারণা করতঃ কণ্ঠের গগণবিদারী চিৎকার ধ্বনী দ্বারা কিছু আদায় করা সম্ভব না হলেও, অন্তত পক্ষে অদৃশ্য শক্তির অভিশাপের পরিণাম নিয়ে হয়তো ঘরে ফেরা যায়। বেহ্যাপনার বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন, তারা দেশ ও জাতির সম্মানিত সম্প্রদায়। ধর্মের সূক্ষ্ম এবং জটিল সম্মানিত সম্প্রদায়। ধর্মের সূক্ষ্ম এবং জটিল সমস্যাবলীর সমাধান যারা দেন তারা আলাএমকুল চুড়ামণি, মুফতি সমাজ-ফতোয়াবিদ। আদালতে যারা সওয়াল জবাব ক্রেন, আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তারা আইনবিদ। ফতোয়া দেওয়া ও আইনের ব্যাখ্যা ইত্যাদি করা নিশ্চয়ই রাখালের বা মুর্খের কাজ নয়? ফতোয়াবিদ অ আইনবিদগণ যেহেতু একটি দেশের ধর্মীয় ও সাধারন দৃষ্টিকোণ হতে সুশিক্ষিত সন্তান, সেহেতু তারা অবশ্যই ‘ফতোয়াবাজ’ ইত্যাদি ব্যাঙ্গার্থক শব্দে সম্বোধিত হতে পারেন না। তারাই মুর্খ, আস্তাকুড়ের সম্পদ যারা বিকৃত শব্দদ্বারা প্রকৃত পরিচয় পরশ্রীকাতরতার আগুন দিয়ে পোড়াতে চায়। এরা সমাজের লাঞ্ছিত সম্প্রদায়; একটু খোঁজ নিয়ে দেখলে দেখা যাবে, সম্মানীত ব্যক্তি ও সম্প্রদায়কে এই শ্রেণির নারী-পুরুষ অসম্মান দান ও অশোভন সম্বোধনের ফলে কতনা যন্ত্রণা অ দুর্ভোগের কবলে পতিত। ‘বাজ’ শব্দ প্রয়োগ দ্বারা কি ফতোয়াবিদগণকে, গলাবাজের দল দ্বীনের রাস্তার কর্ম সম্পাদন থেকে নিরস্ত্র করতে পারবে? ৩০শে জুন/৯৪তে কি আলেম সমাজের ভুমিকা অবলোকন করে নাই ধর্ম-শত্রুগণ? শুধু আলেম নয়, বিশ্বাসী মুসলমানের নিকট মৃত্যু হলো পেয়ালা পূর্ণ সরবত। আলেমদের সংগ্রাম অ তাকোয়া ভিত্তিক জিহাদের ফলেই পৃথিবীর মুসলিম দেশসমূহ তাগুতী শক্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে-মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করেছে। ইতিহাস পড়ুন, খতিয়ে দেখুন। আমার জানামতে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামেও বহু আলেম অবদান রেখেছেন। সুতরাং সংযত ও ভদ্র ভাষার প্রয়োগদ্বারা বিষোদগারীগণ আত্ম সংশোধনের পরিচয় দিয়ে সমাজে বরণীয় হন এতাই প্রত্যাশা।
     দাদা বাবুদের শিখানো ময়না-টিয়া, শ্লিকের বুলি কেবল জাতীয় বেঈমানদের মুখে শোভা পায় এবং তা পাগলের প্রলাপ বলেই এ মাটির সংখ্যাধিক্য মুসলিমের নিকট বিবেচিত হয়। আমার সত্তার না পরিচিতির অবলুপ্তিতে এক অবলুপ্ত স্থানে জোর পুর্বক বিজাতীয়ের স্থান দানে আমার সঙ্গত চিৎকার ও আপত্তি আছে বৈকি। এতে ‘মৌলবাদী’ হয়ে গেলাম বা হয়ে গেল একটি সম্প্রদায়। পক্ষান্তরে যারা কুরআন ও কুরআনিক পবিত্র বিধানের বৈপরিত্য ঘটানোর দুঃসাহস দেখাতে শুরু করেছে তারা নিশ্চয় ‘ইবলিসবাদী’ , ইববিস আল্লাহ্র অভিশপ্ত ও বিতাড়িত। আল্লাহ্ ও রাসূল (ﷺ)-এর নির্দেশে, “ধর্ম রক্ষা ও দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ইবলিস ও তার সমর্থকদের মোকাবেলায় অবতীর্ণ হও।“ এ বাণীর আলোকেই শয়তানের চেলা তসলিমা গংদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যৌক্তিক, তাদের শাস্তি দান ঈমানী দায়িত্ব এবং দাউদ হায়দারে ন্যায় তাদের নির্বাসন অতীব জরুরী। আমার ন্যায়সঙ্গত আবেদনে যদি মৌলবাদের আখ্যা পায়, ন্যায্য চিৎকার যদি সম্প্রদায়িকতা হয় তাহলে অন্যের অন্যায় লেখনি, গ্লানিময় উক্তি, ঘৃণিত আক্রমণ কোন সংগার রূপ পাবে? জিহাদী ভুমিকায় মুসলমান আজ পথে নেমেছে ইয়াই গাত্র দাহ শুরু হয়েছে, আবোল-তাবোল বলা আরম্ভ হয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তির অব্যবহিত পরের কর্মকাণ্ডগুলি বড়ই দুঃখজনক। সেদিনের বেদনাদায়ক ঘটনাবলীর সংশোধন করা অত্যাবশ্যক, ঈমানী দায়িত্বও বটে। কবির ভাষায় বলতে হয়, “একে একে মনে উদিল স্মরণ বালক কালের কথায়” মত ব্যথার সাগর উথলিয়ে উঠলেও, এখানে বর্ণনার তরঙ্গাঘাত সৃষ্টি করতে পারছি না। শুধু এতটুকু আদায়ে ও প্রতিষ্ঠার অবহেলায় মুসলিম স্বত্ত্বার বিলুপ্তির পরোয়ানা জারী হবে সম্মুখভাগ দিয়ে নয়, সুড়ঙ্গ পথে, যেমন হয়েছিল স্পেনের মুসলিম শাসনের পরিণতি, পালাবারও সুযোগ পায়নি। ভুলের মাশুল দেয়া থেকে নিস্কৃতি লাভের উপায় হলো অপসংস্কৃতি ও অবাঞ্ছিত আগমন রোধ, ষড়যন্ত্রকারীদের শায়েস্তা করা এবং সর্বস্তরে জাতীয়তাবোধ শিক্ষাদান। হ্যাঁ, রাষ্ট্রনীতির কারণে এদেশের কোন সম্মেলনে বা কোন অনুষ্ঠানে বিদেশী কোন মেহমানকে ডাকা হলে তাকে অবাঞ্ছিত ও অপ্রাসঙ্গিক ভাষণ দান করতে বা বিদ্রোহাত্মক কোন কথা যেন না বলতে দেওয়া হয়-বক্তব্যের সীমা যেন লংঘন না করে, সেদিকে সরকারের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। লর্ড মেঘনাদ জগদীশ চন্দ্র দেশাই বাংলাদেশে এসে গুরুদেবের ভুমিকার কথা বলে গেছেন। ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগ ভুল হয়েছিল বলে যে কৌশলগত বিদ্রোহাত্মক বক্তব্য রেখে গেছেন। সেটা ‘লর্ড’ খেতাব দানকারীদের দেশে গিয়ে বললেই বেশী মানানসই হতো; হয়তো তারা ভুলের সংশোধনের চেষ্টা পেত ও অন্যপক্ষে মেঘনাদ সাহেব শেতাঙ্গ জাতির কাছে অপূর্ব পরামর্শ দাতা হিসাবে স্বীকৃতি পেতেন। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ দুটি মুসলিম রাষ্ট্র; কেন গঠিত হল এই-ই তার গাত্র দাহ। তাঁর জানা উচিৎ তাঁর প্রয়াত মুরুব্বীদের বা কারো দয়ার এ দুটি রাষ্ট্র গঠিত হয়নি, ঈমানী জোশে ও জীবনের বিনিময়ে হিস্যা আদায় করে নেয়া হয়েছে। হিন্দুবাদ ‘দিতে’ জানে না কোন কালেই, জানলে কাশ্মিরে মুসলিম রক্তের হলী খেলা চলত না। আফসোস করে লাভ নেক; যেটুকু আছে তাই অখণ্ড রাখার চেষ্টা করুন! 
      অতীতে সুড়ঙ্গ পথে সাফল্য লাভের দিক নির্দেশনাই (তোদের সুড়ঙ্গ সাফল্য) ছিল বিশ্ব শঠ ইংরেজ জাতের ‘এক চামড়া’ যায়গা পাওয়ার কৌশলগত সফলতার ফলে আরব এবং শেষ পর্যন্ত ভারতবর্ষ দখল। সে করুন ইতিহাস, কম-বেশী জানা আছে সবার। ইংরেজদের যোগ্য উত্তরসূরী আধুনিক ভারত ‘চামড়ার’ মাধ্যমে নয়, হয়তো সামরিক সংঘাতের দ্বারা নয়, ইসলামী জাতীয়তাবাদ উদ্বুদ্ধ বিপুল মুসলিম জনতা ক্ষেপিয়ে নয়-সুচতুর প্রক্রিয়ায় বশংবদ দালাল সম্প্রদায়ের মাধ্যমে ইসলাম বৈরী সংস্কৃতি আমদানী করে, জাতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে চায়।
     ভারতের নানা ধরনের ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে বর্তমান সরকার আত্মঘাতি দিকটি বেছে নিচ্ছে। গণমতে সরকার আত্মঘাতি দিকটি বেছে নিচ্ছে। গণমতে কান দিচ্ছে না-কারণ কি? দেশের ভিতর দিয়ে বিতর্কিত দেশ সমর বাহিনি পরিচালনার সুযোগ জামনা করেছে। এ কামনার হেতু কি, শাওকগন কি তা অবহিত নন? আবার বলি, এক চামড়া যায়গা দান ছিল ভারতের মুসলিম শাসকদের বা রাজা-বাদশাহদের অদূরদর্শিতা। তাঁর পরিণাম ইতিহাসের পাতায় বিধৃত। এতেও কি আমাদের চেতনার দুয়ার খুলবে না? আল্লাহ্, রাসূল, কুরআন ও হাদীসের মর্যাদা চির সমুন্নত ও সমুজ্জল রাখার তাগিদে মৃত্যু যদি আসে, সে মৃত্যু গৌরবের, সাফল্যের এবং স্রষ্টার কাছে আছে এ মৃত্যুর উত্তম পুরষ্কার। একটি মুসলিম সরকার, অথচ এ প্রসংগে তাঁর কোন তাপ উত্তাপ নেই। তাঁর অহেতুক বিলম্বে ধর্মে বৈরী মুরতাদদের স্পর্ধা বেড়েই চলছে। সরকার বৃহত্তম জনগণের মনে ক্ষোভ মিশ্রিত দারুন ব্যথার জন্মদান করে চলেছে। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার।
     আলেম সমাজ আমাদের গর্বতো বটেই। নাম সর্বস্ব মুসলমান যারা, তাদের সকল লৌকিক অনুষ্ঠানে আলেমদের লাগে বৈ কি? তবে মরণ যাত্রার প্রাক্কালে ‘তওবা’ পড়ানোর ব্যাপারে আলেমদের না লাগলেও, যানাযায় না লেগে পারে না। শুনিনি মুসলিম নামে কাউকে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুর পর যানাযা না করে দাফন করা হয়েছে। এই সম্প্রদায় হচ্ছে মৌলবাদ; এর সমর্থকগণও স্বাভাবত মৌলবাদী। এদের অর্থ্যাৎ মৌলবাদীদের শায়েস্তার প্রয়াসে ‘ঘাদানিক’ তৈরী করা হয়েছে। ঘাদানিকের আহবায়িকা জাহানারা ইমামেরও কাফন-দাফন হয়েছিল। শরিয়ত মোতাবেক আল্লাহ্র কালামের ধারক মৌলবাদী আলাএম কর্তৃক পবিত্র পাক কালাম দ্বারা আহবাহিয়কার নামাজে যানাযা সম্পন্ন হয়েছিল নয় কি? যদি হয়ে থাকে, তা হলে এত উম্মা কেন আলাএম কুল তথা ইসলামী চেতনার ঝাণ্ডাবাহীদের নির্মূল করার ব্যাপারে? আবরাহার মক্কা অভিযান সম্পর্কে জানা আছে? আল্লাহ্র ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল না আবরাহা নির্মূল হয়েছিল? কথা মেপে বলতে ও পা গুণে চলাই জ্ঞানীর লক্ষণ। সীমালংঘনকারীরাই যুগে যুগে জব্দ হয়েছে, আজও হচ্ছে। ভেবে দেখুন, জৈনকা মহিলা কবি উক্তি করেছেন, রবীন্দ্র সঙ্গীত ইবাদতের সামিল। এদেশে বসে ঐ সঙ্গীত দ্বারা ইবাদত করলে যতটা না পূণ্য সঞ্চয় হবে, শান্তি নিকেতনে যেয়ে করলে এ কবির পূণ্যই কেবল সঞ্চয় হবে না, ঠাকুর মহাশয়ের আত্মাও অধিক শান্তি লাভ করবে। পরপারের কৈফিয়তের  হাত হতে হয়তো মুক্তি (?) পাওয়া যাবে। সুড়ঙ্গ পথীয় ভাবধারা ও চিন্তা-চেতনা চালু করা বাংলাদেশে কি সম্ভব? অন্তঃসার শূন্য কোন উপদেশ এখানে কার্যকর নয়। ‘বাংলা’ আমার মাতৃভাষা; বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমার মুখের বুলির ও আমার সমস্ত রকম বর্নণা ভঙ্গির প্রকাশ ঘটে বাংলা ভাষায়। মাতৃভাষা ধর্মের অঙ্গ, এটা অস্বীকার করি না। কিন্তু একজন মুসলিম, জন্মের প্রথমেই ধরা বক্ষের ধুলি যখন স্পর্শ করে তখন তাকে আল কুরআনের ভাষা দ্বারাই অভিনন্দিত করা হয় এবং তা হলো আল্লাহ্র কালাম। আমার সর্বাঙ্গে, শিরায় উপশিরায় সৃজন ভোরের প্রথম এ কালামের ধ্বনি মরণ বেলা পর্যন্ত চেতনার বহ্নি জ্বালাতে থাকে। সুতরাং এ ভাষার অমর্যাদা সহ্য করা, মুসলিম যারা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। মুসলিম আমাদের পরিচয়। পক্ষান্তরে মাতৃভাষার গর্বে আমরা বাঙ্গালী নই, আমরা বাংলাদেশী। আবু জাহেলী ব্যাখ্যা অ ধর্মের বিদ্রুপ সমালচনার জবাব দানের নিমিত্ত জিহাদি গণ-মানুষ দল, উপদল ও সংগঠন সম্পৃক্ত ইসলাম দরদীরা পথে নেমেছে। দাউদ হায়দারের ন্যায় সব ধর্মবৈরী কুখ্যাতদের বিতাড়নই উপযুক্ত শিক্ষা নয়, দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি অবশ্যই দরকার।
     এটা আঘাতের প্রত্যাঘাতদানকারী বাংলাদেশ, বীর প্রসবিনী দেশ, এখানে জন্মেছে বহু বীর-বীরাঙ্গনা। বিগত স্বাধীনতা ও সংহতি দিবসের কোন এক পর্বে জেনারেল আরোরা ও মুচকুন্দ দুবের আগমনকে রোধ করা হয়েছে। রোধকারী সকল সংগঠনকে জানাই মোবারকবাদ। সূর্য সেনের জন্মশত বার্ষিকী পালনের ভিতর দিয়ে দেশববাসীকে আমরা কি উপহার দিতে পেরেছি? এ সংগ্রামী নায়কের ধ্যান-ধারনায় ছিল ইংরেজ বিতাড়নের পর সমগ্র দেশটি হবে হিন্দুবাদের হিন্দু-ভারত, তাই নয় কি? ভারতবর্ষের মুসলমানগণও মানচিত্রের ন্যায্য অংশীদার, এ চিন্তার আলোকে তাঁর সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছিল কি? মুন্সী মেহের উল্লাহ, স্যার সলিমুল্লা, হাজী শরিয়ত উল্লাহ, সৈয়দ নিসার আলী (তিতুমীর) প্রমুখ আমাদের জাতীয় গৌরব ও ভূষণ। এঁদের সম্পর্কে ফলাও করে তেমন কিছু তো করা হয় না। প্রজন্ম ধ্বংসের সবকিছুই শিখানো ও দেখান হচ্ছে, সে দিকে দেশের বুদ্ধিমানদের লক্ষ্য নেই। এ কথা মেঘমুক্ত আকাশের ন্যায় স্বচ্ছ যে, এলেম সম্প্রদায় ইসলামী আকীদা অ ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় চেতনা সজীব রাখার প্রচেষ্টায় বিশেষ তৎপর বিধায় আমাদের ইজ্জত ও ঈমান এদেশে এখনও টিকে আছে। আমরা মুসলিম পরিচয়ে এখনও পরিচিত।
     দারুন দুঃখে বলতে হয়, ইতিহাস সৃষ্টিকারী ও জগত বরেণ্য মুসলিম জাতির পতন ঘটাতে শত্রু পক্ষকে সব সময় পিছন দরজা ব্যবহার করতে হয়েছে। বন্ধুত্বের ভান করে, মত্রৈ স্থাপনের চিহ্ন হিসেবে মুসলিম রাজা-বাদশাহগণের ঘরে অবলীলাক্রমে তুলে দিয়েছেন অমুসলিম নারী। বীর জাতির স্বীয় কৃষ্টি ও আদর্শ বিনাসের এবং বির্য-বহ্নিতে চির ধরানোর এ এক অদ্ভুত কৌশলগত দিক ছিল। আজও সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বললে অত্যুক্তি হবে না, কালক্রমে ঐসব বাদশাহ ও প্রতিকী বেগমদের ঔরশজাত বা জন্মগত সন্তানরা পরম্পরায় ইসলামের ক্ষতি সাধন করার অপপ্রয়াসে বিরামহীন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে; তাদের ধারাবাহিক উত্তর সুরীরাই আযানের ধ্বনিতে খুবই অস্বস্তি বোধ করে। নিদারুন ক্ষোভে বলতে হয়, বাদশাহ নামদারদের অদূরদর্শি স্ফূর্তির মাশুল-আজকের এই পরিণতি। এদের আর কি দোষ।
     মুসলমান ও মুসলিম দেশগুলি জেগেছে সত্য; কিন্তু মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। এর কারণ ধর্মীয় উপদেশ। অনুশীলন, স্বকীয় আদর্শ ও উন্নত সংস্কৃতির পূর্ণ প্রতিফলনে Cconcession (কাট-ছাট) নিতি গ্রহণের কারণে মুসলমানগণ বর্তমান দুনিয়ায় নাস্তানাবুদী ও দুর্বিসহ পরিবেশে অত্যন্ত বিহবল চিত্তে জীবন অতিবাহিত করছে। এর থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো চলমান জীবন ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সর্বক্ষেত্রে ইসলামী বিধি বিধান পরিপূর্ণরুপে মেনে চলা; দ্বীনের শত্রুর মোকাবেলা করা। জাতি বিনাসের মারাত্বক অস্ত্র হলো সংশ্লিষ্ট জাতির আদর্শের বিলোপ সাধন, ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটান। বাংলাদেশে আজ তাই শুরু হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যায়, স্কুল/কলেজের পাঠ্য পুস্তকে গোশতের পরিবর্তে মাংস, সুরুয়া বা ছালুনের স্থলে ঝোল, হালাল পশু জবেহর পরিবর্তে মারা বা কাটা, অনেক যায়গায় পানির স্থলে জল ইত্যাদি বিজাতীয় সংস্কৃতিক শব্দের ছড়াছড়ি। শিক্ষাঙ্গণ ত্যাগের পর মুসলিম ছেলেরা এই সব শব্দ ব্যবহার ও প্রয়োগ দ্বারা খাটি বাঙ্গালীর পরিচয় দান করছে। সমাজ আর কি আশা করে? ত্রুটি কাদের? ইংরেজী বইতে তো ‘আল্লাহ্র’ পরিবর্তে ‘গড’ (Dod) শব্দের ছড়াছড়ি। আল্লাহ্ ও গড কি এক অর্থবোধক? এরূপ আরো কতকি! বিবাহের কার্ডে (মুসলমানদের) ‘বিসমিল্লাহর’ উপরে থাকে প্রজাপতি, ছেলে-মেয়ে ইত্যাদি অশ্লিল ছবি। সুড়ঙ্গ পথের প্রক্রিয়ায় নতুন প্রজন্মের মন-মজ্জায় ইসলামী ধ্যান-ধারণা ও চিন্তার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা হচ্ছে। বহু উচ্চ ডিগ্রীধারী ব্যক্তি সভা-সমিতিতে বক্তৃতার মাঝে মধ্যে ‘গড’ শব্দ ব্যবহার করে মুসলিমানিত্ব রক্ষা করতে চাহেন। আমরা অবুঝ (?) তাই হাসি পায় এদের Concession নীতি দেখে।  সমাজের উচ্চ স্তরের ধর্মীয় বা শরীয়তের দৃষ্টিতে এরা নিম্ন স্তরের। কোমলমতি ছেলেরা মাথায় এক ধরনের হ্যাট পরিধান করে। কিন্তু টুপি পরে না। এই টুপির গায়ে ‘আল্লাহ্’ বা অন্য ইসলামী কৃষ্টিমূলক শব্দ লেখা থাকে না, থাকে ম্যারাডোনার ছবি। অভিভাবকগণ গভীর তত্ত্বের দিকে একটুও খেয়াল করেন না। আফসোস! ‘সুড়ঙ্গ পথ’ কি চমৎকার বাজার তৈরী করে চলেছে!! এ ছেলেরাই বড় হয়ে কবীর চৌধুরী গং হবে নয় কি? আযান না রবীন্দ্র সঙ্গিত-কোনটি ভাল লাগার আশা করেন এ ছেলেদের কাছ থেকে পরবর্তী অধ্যায়ে। আজকের ম্যারাডোনা মুখীরাই আগামি দিনের শরীফ গং হবে। সুতরাং তসলিমা গংদের অশুভ আক্রমণের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলন যেন স্তমিত না হয়ে যায় সফলতা লাভের পূর্বে। ইসলামী চিন্তা-ভাবনার ও আদর্শের ব্যক্তিক্রম ধারণাই পতনের উৎস।
     উপসংহারঃ সুড়ঙ্গ পথের সকল অপতৎপরতা বন্ধ করা একান্ত জরুরী; এ পথের গুরুত্ব এত তুচ্ছ ভাববার কারণে দেশময় ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, যোশী বাহিনী (ভারতীয় সেনা প্রধান জেনারেল বি, পি, যোশী) এটাই চাচ্ছে। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের মুসলিম সরকারের রাহুমুক্তি ঘটুক এই-ই প্রত্যাশা।

 

 ****************