সত্যের সন্ধানে
বিস্ময়কর এই কুরআন!
গ্যারি মিলার
(গ্যারি মিলার কানাডার টরেন্টোর অধিবাসী একজন মুসলমান। অতীতে তিনি খৃষ্টান চার্চের বিভিন্ন বিষয় এবং রেডিও-টিভির বিভিন্ন সম্প্রচার কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। এক সময় চার্চের বাইবেল সংক্রান্ত গবেষণার সাথে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত হন। সেখানে গবেষণার সময় তিনি দেখলেন যে, বাইবেল এবং খৃষ্টান চার্চ অনুসৃত খৃষ্টীয় আদর্শের মধ্যে অনেক গরমিল রয়েছে। বাইবেলে বর্ণিত খৃষ্টীয় ধর্মীয় আদর্শ চার্চ যথাযথ অনুসরণ করে না। তারা মনগড়া ধর্মীয় আদর্শের প্রচারণা চালায়। এর ফলে তার মনে ধারণা জন্মে যে, অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ এবং ধর্মীয় প্রধান ব্যক্তিদের কর্মকান্ডেও বোধ হয় এরূপ গরমিল রয়েছে। এই ধারণা নিয়ে তিনি অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থের সাথে এক সময় কুরআনও পড়া শুরু করেন। কুরআন পড়ে তিনি উপলব্ধি করেন যে, কুরআনে বর্ণিত সত্য বাইবেলে বর্ণিত মূল সত্যের সাথে বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। এরপর তিনি ইসলাম সম্পর্কে আরও বাস্তব জ্ঞান অর্জন করার জন্য টরেন্টোর ইসলামী কমু্যনিটির সাথে পরিচিত হন। এই কম্যুনিটির সাথে ঘনিষ্ট ভাবে মেলামেশা করে তিনি তার মনের সৃষ্ট ধারণার সাদৃশ্য খোঁজার চেষ্টা করেন। কিন্তু পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ইসলামের আদর্শ এবং মুসলমানদের বাস্তব জীবন ঘনিষ্টভাবে পর্যালোচনা করে উপলব্ধি করেন যে, এর মধ্যে গোজামিল নেই। এর পরই তিনি পত্র-পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে, রেডিও-টিভিতে অনুষ্ঠান করে, সভা-সেমিনার করে, বিতর্ক সভার আয়োজন করে খৃস্টধর্মের গোঁজামিল সমূহ চোখে আঙ্গুল দিয়ে খৃস্ট সমাজকে দেখিয়ে দেন এবং ইসলামের সত্যতার স্বপক্ষে জোরালো যুক্তি সমূহ পেশ করতে থাকেন। তিনি এই প্রচারণা কর্মকান্ড দেশ ছেড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্প্রসারিত করেন ১৯৭৮ সাল থেকে আজও তাঁর এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তবে তাঁর প্রচারণা কার্যক্রমের প্রক্রিয়াও বেশ আশ্চর্যজনক। তিনি আজও কোথাও স্বীকার করেননি যে, তিনি একজন মুসলমান। এর মূল উদ্দেশ্য, খৃস্ট সমাজেরে মধ্যে থেকে খৃষ্টবাদের ভুল ত্রুটি তুলে ধরা। এজন্য আজও জি, আর, মিলারের বাইবেল সংক্রান্ত বক্তৃতায় হাজার হাজার খৃষ্টান উপস্থিত হন। বক্তৃতার শুরুতে তিনি বাইবেলের আদর্শ বর্ণনা করেন এবং পরে চার্চ অনুসৃত আদর্শের স্বরূপ তুলে ধরেন। এর পর তিনি যুক্তির আলোকে ইসলামের সত্যতা বর্ণনা করে শ্রোতাদের মনে খৃষ্টবাদ সম্পর্কে প্রশ্নের জন্ম দেন। এ সংগ্রামী পুরুষ পাশ্চাত্যের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস, সেমিনার, সিস্পোজিয়াম ও পথসভা করে তার প্রচারণা কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশে দেশে ঘুরে ঘুরে এভাবে ধর্ম প্রচার করাই তার একমাত্র আরাধ্য। ইসলাম সম্পর্কিত তার একটি ঐতিহাসিক বক্তৃতা সংকলনের অনুবাদ এখানে তুলে ধরা হলো।)
কুরআনুল কারীমকে বিস্ময়কর বলে কেবল মুসলিমরাই অভিহিত করেনা বরং অমুসলিমরাও এ পবিত্র গ্রন্থকে বিস্ময়কর বলে চিহ্নিত করেছে। মুসলিমগণ এ কিতাবের সপ্রশংস গুণ ও মর্ম উপলব্ধি করার সাথে সাথে একে নিয়ে পরিতৃপ্ত। প্রকৃত পক্ষে যেসব লোক ইসলামকে খুবই ঘৃণা করে তারাও বাধ্য হয়ে এ আসমানী গ্রন্থকে বিস্ময়কর বলে অভিহিত করেছে।
যেসব অমুসলিম কুরআনে পাককে নিয়ে গভীর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছে তাদেরকে একটি ব্যাপার বিস্মিত করে, তাহল আল-কুরআন তাদের কাছে এখন সে বস্তু বলে প্রতীয়মান হয় না—যা তারা পূর্বে ধারণা করেছিল। তারা ধারণা করেছিলো, তাদের হাতে এসেছে একটি পুরাতন বই-যা নাকি চৌদ্দশত বছর পূর্বের আরব- মরুভূমি হতে এসেছিল এবং তারা এটাই প্রত্যাশা করে যে, এ গ্রন্থটি এরকম কিছু একটির মতই হবে মরুভূমির একটি পুরাতন বই মাত্র। তারপর তারা বুঝতে পারে, তারা যা ধারণা করেছিল এ গ্রন্থ মোটেই তা নয়। অধিকন্তু কিছু লোকের প্রথমেই ধরে নেয়া বিষয়গুলির ভিতরে একটি হচ্ছে—যেহেতু এটি একটি পুরাতন বই যা নাকি মরুভূমি হতে আগত কাজেই এতে মরুভূমির কথাই থাকবে। ঠিকই কুরআনে মরূভূমির কথাও আলোচিত হয়েছে। এর কিছু কিছু উপমায় মরুভূমির বর্ণনা আছে, কিন্তু সেই সংগে কুরআনে সমুদ্র সম্বন্ধেও আলোচিত হয়েছে। সমুদ্রবক্ষে ঝড় তুফানের কথাও এতে স্থান পেয়েছে।
বছর কয়েক আগে টরন্টোতে আমাদের কাছে এমন এক ব্যক্তির কাহিনী পৌঁছল, যে সমুদ্রে বসবাসকারী একজন সমুদ্র নাবিক। এক মুসলিম তাকে কুরআনে পাকের অনুবাদ পড়তে দেয়। উক্ত সমুদ্র নাবিক ইসলামের ইতিহাস সম্বন্ধে কিছুই জানত না, কিন্তু কুরআন পড়তে আগ্রহী ছিল। যখন সে তা পড়ে শেষ করে তা উক্ত মুসলিমের নিকট ফেরৎ দিলো তখন বলল, “এই মুহাম্মদ কি একজন নাবিক ছিলেন?” সে এতো গভীরভাবে প্রভাবান্বিত হয়েছিল যে, কুরআন সমুদ্র বক্ষের ঝড়েৱ কি নিখুঁত বর্ণনাই না পেশ করেছে। যখন তাকে বলা হল, প্রকৃতপক্ষে মুহাম্মদ (স) একজন মরুবাসী ব্যক্তি ছিলেন। এতটুকু কথাই ছিল তার হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট। সে তৎক্ষনাৎ ইসলাম গ্রহণ করল। সে কুরআনে পাকের বর্ণনায় দারুণ প্রভাবান্বিত হয়েছিল। কারণ সে নিজে সাগরবক্ষে ঝড়ের কবলে পড়েছিল এবং সে বুঝেছিল যে, যে এ বর্ণনা লিখেছে সেও নিশ্চয়ই এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিল। “উত্তাল তরঙ্গের পর তরঙ্গ তার উপর মেঘরাশি।” সমুদ্রঝড় কি রকমের হবে এ তার কল্পনাপ্রসূত কোন বিবরণ নয় বরং এটা লিখিত হয়েছে এমন সত্ত্বা দ্বারা যিনি জানেন-সমুদ্র ঝঞ্চার স্বরূপ কি। কুরআনুল কারীম যে একটি নির্দিষ্ট স্থান ও সময়ের সাথে বাঁধা নয় এটি হচ্ছে তার একটি উদাহরণ। নিশ্চিত ভাবেই যেসব বৈজ্ঞানিক ধ্যান ধারণা কুরআনে বিকৃত হয়েছে তাও চৌদ্দশত বছর পূর্বের মরুভূমি হতে উদ্ভূত কোন তথ্য বলে প্রতীয়মান হয়না বরং খুবই নতুন ও আধুনিক বলে প্রতীয়মান হয়।
রাসুলে পাক (স)-এর নবুয়তের বহু শতাব্দী পূর্বে গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস কর্তৃক পেশকৃত সুপরিচিত পরমানুবাদ বিদ্যমান ছিল। ডেমোক্রিটাস এবং তৎপরিবর্তী ব্যক্তিগণ ধরে নিয়েছিলেন যে, বস্তু হচ্ছে অতিক্ষুদ্র, অবিনাশী ও অদৃশ্য কণার সমন্বয়ে গঠিত যার নাম পরমানু। আরবরাও একই ধারণা পোষন করত; প্রকৃত প্রস্তাবে “জাররাহ” আরবী শব্দটি দ্বারা মানুষের জ্ঞাত ক্ষুদ্রতম কণাকেই বুঝায়। আধুনিক বিজ্ঞান এটা আবিষ্কার করেছে যে, বস্তুর এই ক্ষুদ্রতম একক (অর্থাৎ পরমানু যা তার মৌলিক পদার্থের সকল বৈশিষ্ঠ্যই ধারণ করে) কে তার গঠনকারী অংশসমূহে ভাংগা যেতে পারে। এটি একটি নতুন ধারণা গত শতাব্দীর এক টানা; তথাপি যুগে যার ব্যাপার এই যে, এই তথাটি কুরআনে পূর্বে বিধৃত হয়েছে এভাবে-“তিনি (আল্লাহপাক) আকাশে এবং জমিনে একটি পরমানুর (জাররাহ) এমনকি এর চেয়েও ক্ষুদ্রতর কোন কিছুর ওজন সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল।"
(সুরা সাবা-আয়াত-৩)।
নিঃসন্দেহে চৌদ্দশতাব্দী পূর্বে এ বক্তব্যটি এমনকি একজন আরবের কাছেও অস্বাভাবিক মনে হত। কারণ, তার কাছে “জাররাহ” ছিল ক্ষুদ্রতম বস্তু। অবশ্যই এটা একটি প্রমাণ যে, কুরআনুল কারীম সেকেলে ও অচল কোন গ্রন্থ নয়।
আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে, এমন বিষয় কেউ একটি “প্রাচীন গ্রন্থ"-এর ভিতর পেতে আশাবাদী যে, এ গ্রন্থ স্বাস্থ্য অথবা চিকিৎসা শাস্ত্রের ব্যাপারে যা কিছুই আলোকপাত করেছে প্রতিকার বা নিরাময়ের বিষয়ে সেসবই অচল। বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী কারীম (সা) স্বাস্থ্য এবং পাক-পবিত্রতার ব্যাপারে কিছু উপদেশ দিয়েছেন, তথাপি এসব উপদেশের অধিকাংশটুকুই কুরআনে নেই। প্রথম দৃষ্টিতে একজন অমুসলিমের কাছে এটি একটি অমনোযোগী ত্রুটি বলে প্রতীয়মান হবে। তারা এটা বুঝতে অপারগ যে, আল্লাহ তাআলা এরূপ প্রয়োজনীয় তথ্য কেন কুরআনে অর্ন্তভুক্ত করবেন।
কোন সুপণ্ডিত মুসলিম নিম্নোক্ত যুক্তি দিয়ে এর ব্যাখ্যার করেন, “যদিও রাসুলে পাক (স) যে সময়ে জীবন অতিবাহিত করেছেন সে সময়ের বিবেচনায় তার উপদেশাবলী ছিল যুক্তগ্রাহ্য এবং প্রয়োজ্য। কিন্তু আল্লাহ পাক তাঁর অসীম প্রজ্ঞায় জানতেন যে, পরিবর্তীকালে চিকিৎসা এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি সাধিত হবে, যখন রাসুলের (স) স্বাস্থ্য বিষয়ক কথা সেকেলে বলে প্রতীয়মান হবে। পরবর্তীতে যখন নতুন আবিষ্কার উদ্ভাবন ঘটবে তখন মানুষ বলবে যে, এসব তথ্য না কারীমের (স) শিক্ষার সাথে অসংগতিপূর্ণ। যেহেতু আল্লাহ্ পাক অমুসলিমদেরকে এরূপ দাবী করার কখনও সুযোগ দিবেন না যে, আল-কুরআন তার নিজের কিংবা নবীপাকের (স) শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক। যেহেতু তিনি কুরআনে পাকে কেবলমাত্র এমন সব তথ্য ও উদাহরণ অন্তর্ভুক্ত করেছেন যা সর্বকালের পরীক্ষায় উত্তীণ হতে পারে। তা সত্ত্বেও যখন কোন ব্যক্তি এক ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশ হিসেবে কুরআনে পাকের সত্য বাস্তবতাকে খতিয়ে দেখে তখন সমগ্র ব্যাপারটিই তার যথানুপাতিকতায় এসে যায়। আর তখনই ঐরূপ যুক্তির ভ্রান্তি স্পষ্ট ও বোধগম্য হয়ে উঠে। এটা অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে, কুরআনে পাক হচ্ছে এক পবিত্র প্রত্যাদেশ এবং সে কারণে এর সকল তথ্যই স্রষ্টা হতে উদ্ভুত। আল্লাহ পাক কুরআন অবতীর্ণ করেছেন তাঁর নিকট হতে। এ হচ্ছে আল্লাহ্ পাকের কালাম যা যাবতীয় সৃষ্টির পূর্বে অস্তিত্বশীল ছিল। সুতরাং এতে কোন কিছুই সংযোজন করা, বিয়োজন করা কিংবা এর কোন পরিবর্তন করা যাবে না। যেহেতু আল কুরআন রাসুলে পাকের (স) সৃষ্টির পূর্বেই অস্তিত্বশীল ও পূর্ণাংগ ছিল। কাজেই এতে নবী কারীমের (স) নিজের কোন কথা বা উপদেশ স্থান পায়নি। অনুরূপ তথ্যের অন্তর্ভুক্তি সুস্পষ্টভাবে আল কুরআন যে উদ্দেশ্যে অস্তিত্ব বজায় রেখেছে তার সংগে পরস্পর বিরোধী হত, এর কর্তৃত্বকে আহত করত এবং এক ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশ হিসেবে একে অনির্ভরযোগ্য প্রমাণ করত।
এর ফলস্বরূপ কুরআনে এমনকোন ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবস্থা নেই যাকে কেউ সেকেলে বলে দাবী করতে পারে, এতে স্থান পায়নি কোন মানুষের মতামত যে কি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, কোন খাদ্য সর্বোত্তম কিংবা কি দ্বারা এ রোগ-সেরোগের নিরাময় হবে ইত্যাদি। প্রকৃত পক্ষে আল-কুরআনে চিকিৎসা সংক্রান্ত কেবলমাত্র একটি ব্যাপার উল্লেখিত হয়েছে এবং তা কারো দ্বারাই বিতর্কিত নয়, আর তাহল “মধুতে রয়েছে শেফা।” আমি মনে করি, নিশ্চিত ভাবেই কেউ এ ব্যাপারে তর্ক করবেন না এবং চিকিৎসা কার্যে এর ব্যবহার নিয়ে মধুর গুনাগুনের উপর আধুনিককালে প্রচুর গবেষণা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।
যদি কেউ মনে করে যে, কুরআনুল কারীম হচ্ছে এক লোকের ইচ্ছার ফসল, তাহলে সে ঐ গ্রন্থে সেসব বিষয়ের কিছুটার প্রতিফলন অবশ্যই আশা করবে যা “রচয়িতার” মনের ভিতর বিদ্যমান ছিল। কিছু সংখ্যক বিশ্বকোষ এবং বিভিন্ন পুস্তকে দাবী করা হয় যে, কুরআন হচ্ছে মুহাম্মদ (স) এর 'হ্যালুসিনেশন' (একধরনের মানসিক অসুস্থতা) এরই ফল। এসকল দাবী যদি সত্য হত আর সত্যিকার অর্থেই যদি মুহাম্মদ (স)-এর মানসিক সমস্যা হতেই কুরআনের উৎপত্তি হত, তাহলে তার মানসিক স্বাক্ষর স্পষ্টতই কুরআনে প্রতিফলিত হত। এরকম কোন চিহ্ন কি কুরআনে আছে? আছে কি নেই তা নির্ধারণ করতে হলে একজনকে মুহাম্মদ (স)-এর মনোরাজ্যে সেসময়ে কি ঘটতে ছিল তা অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে এবং তার সে সব চিন্তা-ভাবনা কুরআনে বিধৃত হয়েছে কিনা তা খুঁজতে হবে।
এ কথা সকলেই জানে যে, হযরত মুহাম্মদ (স)-এর জীবন ছিলো খুবই কষ্টকর ও কঠিন। একজন ব্যতীত তাঁর সকল কন্যাগণই তাঁর পূর্বেই মৃত্যু বরণ করেন এবং তাঁর প্রথম এবং দীর্ঘ সময়ের সহধর্মিনী যিনি ছিলেন তাঁর খুবই প্রিয় এবং তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তিনিও তাঁর মৃত্যুর পূর্বেই কেবল ইন্তেকাল করেননি বরং রাসুলে পাকের (স) জীবনের এক সংকটকালে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। সত্যিকার অর্থে তিনি অবশ্যই একজন পূর্ণাংগ নারী ছিলেন, কারণ যখন প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হল রাসুলে পাকের (স) উপর, তখন তিনি ভীত হয়ে তড়িঘড়ি করে তাঁর কাছেই ফিরে গিয়েছিলেন। এটা নিশ্চিত যে, এমনকি একালেও এরূপ একজন সরল আরবের সন্ধান পেতে খুবই বেগ পেতে হবে যে নাকি বলবে, “এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে, আমি দৌড়ে আমার স্ত্রীর কাছে চলে গিয়েছিলাম!” স্ত্রীর উপর এত গভীর আস্থার উদাহরণ নিতান্তই বিরল। মুহাম্মদ (স) তাঁর স্ত্রীর কাছে গিয়ে তখন যথেষ্ট স্বস্তি খুঁজে পেয়েছিলেন। এতেই বুঝা যায়, তিনি কি রকম প্রভাবশালী ও সুদৃঢ় মহিলা ছিলেন। যদিও এসব উদাহরণ হচ্ছে যেসব বিষয়েরই কিঞ্চিৎ নমুনা যা হযরত মুহাম্মদ (স) এর মনে বিরাট দাগ কেটে ছিলো। এসবই আমার বক্তব্য প্রমাণ করতে যথেষ্ঠ জোরদার ছিল। কেননা কুরআনুল কারীমে এসব জিনিসের কিছুই উল্লেখিত হয়নি, না তার সন্তানদের মৃত্যুর কথা, তাঁর জীবন সংগিনী ও প্রিয়জনের বিদায়ের কথা, আর না প্রাথমিক ওহী নাজিলের ভয়ের কথা যা তিনি অদ্ভুত সুন্দররূপে তাঁর অর্ধাংগিনীর সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন-এর কোন কথাই কুরআনে নেই। যদিও এসব বিষয় তাঁকে অবশ্যই দুঃখ দিয়েছে, বিচলিত করেছে এবং তার জীবনের নানাসময়ে ব্যথা ও বেদনার কারণ হয়েছে। কুরআন যদি তার মনস্তাত্ত্বিক ধ্যানধারণার ফসল হত তাহলে তাতে এসব ব্যাপার এবং অন্য ব্যাপার-স্যাপারও লক্ষনীয়ভাবে বিদ্যমান থাকত বা অন্ততঃ সংক্ষিপ্তাকারে থাকত উপরন্তু কুরআনের ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা একারণে সম্ভব যে, এ মহান গ্রন্থ এমন কিছু বিষয় পেশ করেছে যা বিশেষভাবে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থসমূহ এবং সাধারণভাবে অন্যান্য ধর্মগুলো পেশ করে না। এ যুগে বিশ্ব কিভাবে কাজ করছে এ ব্যাপারে বহুজনের নানা ধারণা ও নানা তথ্য রয়েছে। এসব লোক সর্বত্রই আছে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় কারও পেশকৃত তত্ত্ব ও তথ্যের তাদের কথা মত মাথা ঘামাতে রাজী নয় এটা এজন্য যে, বিগত শতাব্দীতে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় সত্য মিথ্যা প্রমাণ করার দাবী করেছেন। তাঁরা বলেছেন, যদি তোমার কোন তত্ত্ব থেকেই থাকে তাহলে এ দ্বারা আমাদেরকে বিব্রত করো না যতক্ষণ না তুমি ভ্রান্ত বা অভ্রান্ত তা প্রমাণ করতে তত্ত্বের সাথে আমাদের জন্য একটি পন্থা হলেও উপস্থাপন কর।
এ পরীক্ষা পদ্ধতি পেশ করার কারণেই বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় এ শতাব্দীর শুরুতে আইনষ্টাইনের কথা গ্রাহ্য করেছিলেন। তিনি এক নতুন তত্ত্ব পেশ করে বললেন, "আমি বিশ্বাস করি বিশ্ব এভাবে কাজ করে এবং আমার তত্ত্ব ভ্রান্ত কিনা তা প্রমাণে তিনটি পন্থা আছে।" সুতরাং বৈজ্ঞানিক গোষ্ঠী তাঁর তত্ত্বকে পরীক্ষার সম্মুখীন করলেন এবং ছয় বছরের মধ্যে তার তত্ত্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল। অবশ্য এতে প্রমাণ হয় না যে, তিনি মহান ছিলেন, কিন্তু এটা প্রমাণ করে যে, তার কথা শোনার যোগ্য ছিল। কারণ তিনি বলেছিলেন, এ হচ্ছে আমার ধারণা এবং যদি তুমি আমাকে ভ্রান্ত বা অভ্রান্ত প্রমাণ করতে চাও তবে এই পন্থা অবলম্বন কর।
আল-কুরআনে হুবহু এটাই আছে-ভ্রান্ত পরীক্ষার জন্য এরূপ কথাই বলেছেঃ "এই কিতাব যা হওয়ার দাবী করে তা যদি না হয় তাহলে একে মিথ্যা প্রমাণ করতে তোমাদের সকলের এটা কিংবা এটা বা এটা করতে হবে।" তবে চৌদ্দশত বছরে কেউই এটা বা এটা কিংবা এটা করতে সমর্থ হয়নি এবং এভাবে এ গ্রন্থ এখনও সত্য ও নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচিত। আমি আপনাদের এ পরামর্শ দিচ্ছি যে, পরবর্তীতে আপনি যখনই এমন কারো সঙ্গে ইসলামের ব্যাপারে তর্কে লিপ্ত হবেন-যে দাবী করে যে, তার কাছেই সত্য রয়েছে এবং আপনি অন্ধকারে, আপনি তখন প্রথমে সকল যুক্তি পরিত্যাগ করে এই পরামর্শ মতে কাজ করুন। তাকে জিজ্ঞাসা করুন, “তোমার ধর্মে কি ভ্রান্তি প্রমাণের কোন পরীক্ষা পদ্ধতি আছে? তোমার ধর্মে কি এমন কোন পদ্ধতি আছে যা প্রমাণ করবে যে, তুমি ভ্রান্ত বা অভ্রান্ত? আমি আমার ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে তোমার কাছে এ প্রমাণ দিতে পারব যে, এরকম পরীক্ষা পদ্ধতি আমার ধর্মগ্রন্থে বিদ্যমান রয়েছে। ঠিক তাই এ মুহূর্তে প্রতিজ্ঞা করে বলতে পারে যে, এ লোকদের কাছে কোন কিছু নেই, না আছে পরীক্ষা, না আছে প্রমাণ। এর কারণ হলো, তারা এ ধ্যান-ধারণাই বহন করে না যে, যা পরীক্ষিত সত্য নয় তা উপস্থাপন করাই উচিৎ নয়, যা তারা বিশ্বাস করে। তাদের উচিৎ অন্যদেরকেও তাদের ভ্রান্ত হওয়া প্রমাণ করার সুযোগ দেয়া। ইসলাম অবশ্য তাই করে থাকে।
ইসলাম কিভাবে তার নির্ভরযোগ্যতা যাচাই এবং একে ভ্রান্ত প্রমাণ করে এসব ব্যাপারে মানুষকে কিভাবে সুযোগ প্রদান করে তার এক পূর্ণাঙ্গ উদাহরণ রয়েছে চতুর্থ সূরায়-এবং সম্পূর্ণ সততার সাথেই বলছি, আমি যখন সর্বপ্রথম এই চ্যালেঞ্জ আবিষ্কার করি তখন আমি খুবই আশ্চর্য হয়েছিলাম। আমি যখন পড়েছিলাম- “তারা কি কুরআনের প্রতি লক্ষ্য করে না? এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো থেকে হত তাহলে তারা অবশ্যই সেখানে বহু বৈপরিত্য দেখতে পেত। (সূরা নিসাঃ আয়াত-৮২)।
এটি অমুসলিমদের প্রতি একটি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ। মৌলিকভাবে একথা তার পাঠককে কোন ভ্রান্তি খুঁজে বের করার আহবান জানায়। সত্যি বলতে কি, চ্যালেঞ্জার গুরুত্ব এবং দুঃসাধ্যতার কথা বাদ দিলেও সর্ব প্রথম এরকম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া মানুষের সীমিত শক্তির ভিত্তিতে অসম্ভব বলা যায়। কেউ স্কুলে এমনভাবে পরীক্ষা দেয় না যেখানে পরীক্ষার পর সবশেষে এইরূপ কোন মন্তব্য লিখে না এই পরীক্ষা সব দিকদিয়ে পূর্ণাঙ্গ! এতে কোন ভুল ভ্রান্তি নেই যদি পারেন তাহলে একটি ভুল বের করুন কেউ এরূপ করে না যদি কেউ করে তবে যতক্ষণ না পরীক্ষক একটি ভুল খুঁজে না পান ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি থামাবেন না। তথাপি কুরআনুল করীম মানুষের কাছে নিজেকে এভাবেই পেশ করেছে।
কুরআনে পাকে আরো একটি মজার বিষয় বিদ্যমান রয়েছে। এ গ্রন্থ এর পাঠককে পুনঃপুনঃ নসীহত করে। আল-কুরআন প্রথমে পাঠককে নানা সত্য ঘটনাবলী অবগত করে এবং তারপর উপদেশ দেয়ঃ যদি তোমরা এটা বা ওটা সম্বন্ধে আরো অধিক জানতে চাও, অথবা যা বলা হয়েছে সে ব্যাপারে তুমি সন্দিহান হও তাহলে তোমাদের উচিৎ জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করা। এটাও এক আশ্চর্যজনক বিষয়। এটা কোন স্বাভাবিক কথা নয় যে, একটি গ্রন্থ এমন কারো কাছ হতে আসবে যে ভূগোল, উদ্ভিদবিদ্যা, জীববিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে কোন আলোচনা করবে অথচ তার এসব ব্যাপারে কোন প্রশিক্ষণ নেই এবং তারপর পাঠককে উপদেশ দিবে, যদি কোন ব্যাপারে সন্দেহ জাগে তাহলে জ্ঞানী লোকদের নিকট জিজ্ঞাসা করো। তথাপি প্রতি যুগে মুসলিমের অস্তিত্ব ছিল। যারা কুরআনের উপদেশ অনুসরণ করেছে এবং আশ্চর্যজনক আবিষ্কার সাধন করেছে। যদি কেউ বহু শতাব্দী পূর্বের মুসলিম বিজ্ঞানীদের গ্রন্থাবলীর প্রতি নজর দেয় তাহলে সেগুলো সে কুরআনে পাকের উদ্ধৃতিতে পরিপূর্ণ দেখতে পাবে। এসব গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, তারা কোন কিছুর সন্ধানে অমুক অমুক স্থানে গবেষণা চালিয়েছিলেন এবং স্পষ্টভাবে তারা উল্লেখ করেছেন যে, কোন কারণে তারা অমুক বিষয়ে গবেষণা করেছেন। এর দ্বারা বুঝা যায়, তাহলে কুরআনুল করীম তাদেরকে সেসব স্থানের প্রতি গবেষণায় নিয়োজিত হতে অংগুলি নির্দেশ করেছিল।
উদাহরণ স্বরূপ, কুরআন মানুষের উৎপত্তির কথা উল্লেখ করেছে এবং তারপর পাঠককে বলেছে " এর উপর গবেষণা কর।" কুরআন এ কথা ও পাঠককে ইংগিত প্রদান করে কোথায় অনুসন্ধান চালাতে হবে এবং তারপর বলে যে, যা বলা হলো এর চেয়েও বেশী খুঁজে বের করতে হবে। আজকের যুগের মুসলিমরা মনে হয় প্রধানতঃ এরকম জিনিসগুলোই উপেক্ষা করে চলেছে কিন্তু সব সময় নয়। কয়েক বছর আগে সৌদি আরবের রিয়াদের কিছু লোক পবিত্র কুরআনে ভ্রুণতত্ত্বের ব্যাপারে যেসব আয়াত আছে সেসব একত্রিত করে। অতপর কুরআনের ভাষায় তারা বলল, "কুরআন যা বলে তা এখানে। এটা কি সত্য?" পরিশেষে তারা কুরআনের উপদেশ গ্রহণ করলঃ "যে জানে তাকে জিজ্ঞাসা করো।" ঘটনাক্রমে এর জন্য তারা টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রুণতত্ত্বের অমুসলিম একজন প্রফেসারকে বেছে নেন। তাঁর নাম কিথ মুর। তিনি ভ্রুণতত্ত্বের উপর একাধিক বইয়ের লেখক এবং এ বিষয়ে একজন বিশ্ব বিশ্লেষক। তারা তাকে রিয়াদে আমন্ত্রণ জানান এবং বললেন, কুরআন আপনার বিষয় সম্বন্ধে যা বলছে তা হল এই এটা কি সত্য? আপনি আমাদেরকে কি বলতে পারেন?
যতদিন তিনি রিয়াদে ছিলেন ততদিন তারা অনুবাদসহ যতরকম সাহায্য সহযোগিতা দরকার তা সবই করে এবং তিনি যা খুঁজে পান তাতে এতটাই বিস্মিত হলে যে, তিনি তাঁর লেখা পাঠ্যবইগুলি পরিবর্তন করেন। সত্যি বলতে কি, তার বইগুলির একটি "Before we are born" (আমাদের জন্মের আগে) -এর দ্বিতীয় সংস্করণে..... ভ্রুণতন্ত্রের ইতিহাস সংক্রান্ত অধ্যায়ে তিনি কিছু বিষয়ের সংযোজন করেন যা তিনি কুরআন পাকে খুঁজে পান এবং যা বইয়ের প্রথম সংস্করণের ছিল না। সত্যিকার অর্থে এ ঘটনা স্পষ্টভাবে এটাই ব্যাখ্যা করে যে, আল-কুরআন তার সময়ের চেয়ে অগ্রগামী এবং যারা কুরআনে বিশ্বাস করে তারা যা জানে অন্যরা তা জানে না।
আমার সুযোগ হয়েছিল এক টেলিভিশন উপস্থাপনার জন্য ডঃ কিথ মুরের সাক্ষাৎকার গ্রহণের এবং আমরা এ ব্যাপারে সবিস্তারে আলোচনা করেছিলাম-স্লাইড ইত্যাদি সহকারে সে সাক্ষাৎকার প্রদর্শিত হয়েছিল তিনি উল্লেখ করেন, মানুষের বৃদ্ধির কিছু কিছু ব্যাপারে (মাতৃগর্ভে) কুরআন যা বলছে মাত্র ত্রিশ বছর পূর্বেও তা জানা ছিল না। প্রকৃতপক্ষে তিনি বলেন, বিশেষ করে এ ব্যাপার কুরআন একটি স্তরে মানুষকে বর্ণনা করেছে “জোক সদৃশ জমাট বাঁধা রক্ত” হিসেবে। (সূরা আল-হাজ্ব, আয়াত ২২, সূরা আল মুমিনুন, আয়াত ২৩)
এটা তার কাছে ছিল অভিনব, কিন্তু যখন তিনি তা পরোখ করলেন তখন দেখলেন, তা সঠিক; অতপর তিনি এ তথ্য তার বইয়ে সংযোজন করে নিলেন তিনি বলেন, “আমি এ ব্যাপারে কখনই চিন্তা করিনি” এবং তিনি প্রাণীবিদ্যা বিভাগে চলে যান এবং একটি জোকের ছবি চান। যখন তিনি দেখেন যে, এটা দেখতে ঠিক মানব ভ্রূণের (প্রাথমিকস্তর) মতই তখন তিনি উভয় ছবিই তার লিখিত একটি পাঠ্য বইয়ে সংযোজন করেন।
ডঃ মুর ক্লিনিক্যাল ভ্রুণতত্ত্বের উপরও একটি বই লিখেছেন এবং তিনি যখন টরেন্টোতে এই তথ্য হাজির করেন, সমগ্র কানাডা জুড়ে বিরাট আলোড়নের সৃষ্টি হয়। এ খবর সারা কানাডার পত্র পত্রিকায় লেখা হয় এবং কোন কোন পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় স্থান পায়। তবে কিছু কিছু শিরোনাম ছিল সম্পূর্ণ কৌতুকপূর্ণ। যেমন একটি শিরোনাম ছিল এরকমঃ “পুরনো প্রার্থনার বইয়ে বিস্ময়কর বস্তুর সন্ধান!” এ উদাহরণ হতে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, ও লোকেরা ব্যাপারটি পুরোপুরি বুঝে নি। একটি পত্রিকার রিপোর্টার প্রফেসর মুরকে প্রশ্ন করে, "আপনি কি এটা মনে করেন না যে, আরবরা পূর্ব থেকেই এসব ব্যাপারে অবশ্যই জেনে থাকবে, ভ্রুণের বর্ণনা, এর আকৃতি এবং কিভাবে এটা পরিবর্তিত হয় এবং বৃদ্ধি লাভ করে? তারা বৈজ্ঞানিক না হতে পারে, কিন্তু হতে পারে তারা পূর্বে নিজেদের উপর কোন অমার্জিত স্থূল পন্থায় কাটা ছেড়ার কাজ চালিয়েছিল, লোকদের কেটেকুটে এসব জিনিস দেখেছিল?" প্রফেসর মুর তৎক্ষণাৎ তাকে বুঝিয়ে দেন যে, সে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে গেছে-ভ্রুণের সকল স্নাইড যা দেখানো হয়েছে এবং পর্দায় প্রদর্শিত হয়েছে, তার সবই অনুবীক্ষণ যন্ত্রের ভিতর হতে তোলা ছবি। তিনি তাকে আরো বললেন “চৌদ্দশত বছর পূর্বে যদি কেউ ভ্ৰুণতত্ত্ব আবিষ্কারের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে তাতে কিছু আসে যায় না। তারা এটাকে দেখতে পারেনি।
ভ্রুণের আকৃতির ব্যাপারে আল-কুরআনের বর্ণনা হচ্ছে, যখন তা থাকে খুবই ক্ষুদ্র যাকে খালি চোখে দেখা যায় না; সুতরাং তা দেখতে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। যেহেতু এরকম যন্ত্রপাতির অভিজ্ঞতা মাত্র দু'শ’বছরের কিঞ্চিৎ পূর্বের, তাই ডঃ মুর বিদ্রুপ করে তাকে বলেন, “সম্ভবত চৌদ্দশত বছর পূর্বে গোপনে কারো অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছিল, সে এ ব্যাপারেই গবেষণা চালিয়েছিল এবং কোথাও সে কোন ভুলভ্রান্তি করেনি। তারপর সে কোনভাবে মুহাম্মদ (সঃ)-কে তা শেখায় এবং তাকে এ তথ্যটি তার বইয়ে জুড়ে দেয়ার ব্যাপারে রাজী করায়। তারপর সে তার যন্ত্রটি ধ্বংস করে ফেলে এবং চিরকালের জন্য এটা গোপন করে রাখে। এটা কি তুমি বিশ্বাস করবে? আসলেই এমন কোন কথা তোমার বিশ্বাস করা উচিত নয়। যতক্ষন না তুমি কোন প্রমাণ পেশ করো। কারণ তোমার কথা খুবই হাস্যকর এবং একেবারেই অদ্ভুত। অতপর তাকে প্রশ্ন করা হল, কুরআনের এই তত্ত্ব কিভাবে আপনি ব্যাখ্যা করবেন? ডঃ মুরের জবাব ছিল, এ তত্ত্ব একমাত্র ঐশ্বরিকভাবেই নাজিল হতে পারে। এসব মানুষের জানার সাধ্যের বাইরে।
(চলবে)
অনুবাদঃ ডাঃ আব্দুস সালাম সিদ্দীক