বিশেষ নিবন্ধ
কাদিয়ানীদের ইসলামী পরিভাষা ও বৈশিষ্ট ব্যবহার বৈধ নয়ঃ পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়
মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান খান
========================================================================
পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ঃ
১৯৭৪ সনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে কাদিয়ানী (আহমদিয়া) সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করে সর্বসম্মতিক্রমে একটি বিল পাশ হয়। যার আলোকে ইসলাম সম্বন্ধে ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণ, আক্বীদায়ে খতমে নবুয়তের অস্বীকৃতি এবং মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নবী ও মুজাদ্দিদ বলে বিশ্বাস করার কারণে কাদিয়ানী তথা আহমাদিয়া জামাতকে অমুসলিম সংখ্যালঘু (বধভমরর্ধহ) সম্প্রদায় ঘোষণা করা হয়। এই বিল চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছার পূর্বে, এর পক্ষ ও বিপক্ষ উভয় পক্ষের দলিলাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও বিতর্ক হয়।
জাতীয় পরিষদের এই ঐতিহাসিক রায়ে একদিকে যেমন সমগ্র উম্মতে মুসলিমাহ স্বস্তি ও আনন্দ অনুভব করে, অপরদিকে তেমনিভাবে কাদিয়ানী সম্প্রদায় এই রায় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এই বিল পাশ হওয়ার পর কাদিয়ানীদের তৎকালীন প্রধান মির্জা তাহের স্বীয় ভক্তদের নিয়ে পাকিস্তান ছেড়ে পুরাতন মনিবের দেশ ইংল্যাণ্ড পাড়ি জমান এবং সেখানে “ইসলামাবাদ” নামে একটি কাদিয়ানী কলোনী ও কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেই আড্ডা থেকে তারা পাকিস্তান ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডা শুরু করে এবং সাথে সাথে পাকিস্তানস্থ কাদিয়ানীদের ঘর বাড়ীতে কলেমা খচিত সাইন বোর্ড লাগিয়ে এবং নিজেদের উপাসনালয়সমূহকে মসজিদের ডিজাইনে তৈরী করে তাতে মসজিদ শব্দ ব্যবহারসহ ইসলামের নিজস্ব পরিভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ মুসলমানদেরকে ধোকা দিতে থাকে যে, অন্যদের মত তারাও মুসলমান। এ প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক তাহাফ্ফুজে খতমে নবুয়ত বারবার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বলতে থাকে, “জাতীয় পরিষদে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ঘোষণা করে সর্বসম্মতিক্রমে যে বিল পাশ হয়, কাদিয়ানীরা তা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে চলছে। অন্যান্য অমুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মত তারা তাদের ধর্মীয় কার্যকলাপ নির্দিষ্ট সীমানা ও নিজস্ব পরিমণ্ডলে সীমিত না রেখে প্রকাশ্যভাবে ইসলাম বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে মুসলমানদের ঈমানী অহংকারের ওপর প্রচণ্ড আঘাত হানছে। অতএব জাতীয় পরিষদের সর্ব সম্মত রায়ের আলোকে এমন একটি নিষেধাজ্ঞা অধ্যাদেশ জারি করা হোক,যাতে কাদিয়ানীরা তাদের ধর্মীয় পরিমণ্ডল থেকে বেরিয়ে অন্যায়ভাবে অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসের সীমানায় প্রবেশ করার সুযোগ না পায়। অন্যথায় খতমে নবুয়াত পরিষদ তাদের বিরুদ্ধে মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দাবী নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আন্দোলনে অবতীর্ণ হবে।
দুর্বার আন্দোলন ও জোর দাবীর মুখে শেষ পর্যন্ত ১৯৮৪ (ঈসায়ী) সনে “ কাদিয়ানী নিষেধাজ্ঞা ” নামক একটি অধ্যাদেশ (মরঢধভটভডণ) জারি করা হয়। যার আলোকে কাদিয়ানীদেরকে এই কথায় বাধ্য করা হয়ঃ
* তারা (কাদিয়ানী তথা আহমাদিয়া জামাত) নিজেদেরকে মুসলমান বলে পরিচয় দিতে পারবে না।
* ইসলামী পরিভাষা ও ইসলামী বৈশিষ্ট সমূহ ব্যবহার করতে পারবে না!
* নিজেদের উপসনালয়কে মসজিদের ডিজাইনে বানাতে পারবে না। কাদিয়ানী সম্প্রদায় গতানুগতিকভাবে এবার ও এই অধ্যাদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তা বার বার অমান্য করার ধৃষ্টতা দেখায়।
১৯৮৯ সানে কাদিয়ানীরা সরকারকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে এই অধ্যাদেশকে চ্যালেঞ্জ করে। অতপর এই চ্যালেঞ্জের মুকাবিলায় মজলিসে খতমে নবুয়ত সরকারের পরিবর্তে নিজের প্রতিপক্ষ হওয়ার আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে। পরবর্তীতে কাদিয়ানীরা তাদের মূল দাবীতে (মোকাদ্দমার শিরোনামে) সংশোধনী আনার জন্য সময় চেয়ে দরখাস্ত করে এবং আদালত তা গ্রহণ করে। এভাবে কাদিয়ানীরা টালবাহানা করতে থাকলে এক পর্যায়ে মোকাদ্দামাটি মূলতবী হয়ে যায়।
অন্যদিকে কাদিয়ানীরা উক্ত অধ্যাদেশকে সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী বলে সুপ্রীম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করে রীট পিটিশন দায়ের করে। ১৯৯২ সনে উক্ত মোকাদ্দমার নিয়মিত শুনানী শুরু হয়। সরকার পক্ষের এবং মজলিসে খতমে নবুয়তের বিজ্ঞ উকিলগণ দলিলাদি ও যুক্তি দিয়ে একথা প্রমাণ করেন যে, জাতীয় পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত রায় এবং ১৯৮৪ সনে জারিকৃত “কাদিয়ানী নিষেধাজ্ঞা বিল মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী নয়! -
মোকাদ্দমা চলাকালীন বিজ্ঞ উকিলগণের পেশকৃত দলিলাদি ও যুক্তি সমূহ মহামান্য আদালতের পক্ষ হতে চুলচেরা বিশ্লেষন ও তীক্ষ্ণ প্রশ্নবান লক্ষ্য করে, কাদিয়ানীদের প্রধান মির্জা তাহের কোন দিশা না পেয়ে স্বীয় পিতামহ ভণ্ডনবী মির্জা গোলাম আহমদের ন্যায় এই বলে প্রলাপ বকতে থাকে যে, “ অচীরেই পাকিস্তানে সত্যের প্রকাশ ঘটবে। কাদিয়ানীদের বিজয় সুনিশ্চিত। অল্প দিনের মধ্যে সুখবর আসছে। আমাদের বিজয় আবশ্যম্ভাবী ” ইত্যাদি।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের মুসলমানগণ খুবই অস্বস্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল। তারা আশংকা প্রকাশ করছিল, যদি সুপ্রীম কোর্ট চাপ ও প্রোপাগাণ্ডার মুখে উক্ত অধ্যাদেশকে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী বলে রায় দেয় তাহলে পরিস্থিতি কি হবে! একদিকে আদালতের ফায়সালা, অপরদিকে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের হুকুম আক্বীদায় খতমে নবুয়ত ও লক্ষ লক্ষ মুসলমানের কোরবানী। মোট কথা সব মিলিয়ে একটি ঘোলাটে ও অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
কিন্তু তখন একটি ব্যাপার পরিষ্কার ছিল, আর তা হলো ইসলাম তথা শরিয়ত বিরোধী কোন হুকুম মুসলমানগণ কোন অবস্থাতেই মেনে নিবে না, এজন্য যতবড় কোরবানীরই প্রয়োজন হোক না কেন। এদিকে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের উলামায়ে কিরাম এই মর্মে ঐক্যবদ্ধ হন যে, যদি কোন প্রকারে সুপ্রীম কোর্টের ওপরে চাপ সৃষ্টি করে মোকাদ্দমার রায় নিজেদের (কাদিয়ানীদের) অনুকুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সর্বশক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।
অপরদিকে কাদিয়ানীর জোর প্রচারণা, প্রেস বিজ্ঞপ্তি, বক্তৃতা, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও মানবাধিকার সংস্থার মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্টের রায়ের ওপর প্রভাব ফেলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট দীর্ঘ কয়েক মাস পর্যন্ত এই মামলার রায় স্থগিত রাখার পর গত কিছু দিন পূর্বে এই যুগের ঐতিহাসিক রায়টি ঘোষণা করা হয়। ন্যায় ও ইনসাফের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।
পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট নিম্নোক্ত ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে ও পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট কাদিয়ানী নিষেধাজ্ঞা অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন পাঁচজন নাগরিকের রীট পিটিশন প্রত্যাখ্যান করে ঘোষণা দেয় যে, “কাদিয়ানী নিষেধাজ্ঞা অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী নয়।
পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের ফুল বেঞ্চ (এলফফ ঠণভডদ) মিঃ জাস্টিজ শফিউর রহমান, মিঃ জাস্টিজ আব্দুল কাদির চৌধুরী, মিঃ জাস্টিজ মুহাম্মদ আফজালুন, মিঃ জাস্টিজ সলিম আখতার এবং মিঃ জাস্টিজ আলী মুহাম্মদের সমন্বয়ে গঠিত ছিল।
সুপ্রীম কোর্টের উপ বিচারপতি মিঃ জাস্টিজ শফিউর রহমান স্বতন্ত্র রায় প্রদান করে বলেন যে, কদিয়ানী নিষেধাজ্ঞা অধ্যাদেশের কিছু অংশ মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। পক্ষান্তরে, সুপ্রীম কোর্ট ফুল বেঞ্জের অন্য চারজন বিচারপতি, মিঃ জাস্টিজ আব্দুল কাদির চৌধুরী, মিঃ জাস্টিজ মুহাম্মদ আফজালুন, মিঃ জাস্টিজ সেলিম আখতার, মঃ জাস্টিজ আলী মুহাম্মদ প্রমুখ ঐকমত্যভাবে এই রায় ঘোষণা করেন যে, “কাদিয়ানী নিষেধাজ্ঞ অধ্যাদেশ সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী নয়।”
এই ঐতিহাসিক মামলায় পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন জনাব রিয়াজুল হাসান গীলানী। কাদিয়ানীদের প্রতিনিধিত্ব করেন জনাব ফখরুদ্দীন জি - ইব্রাহীম।
মিঃ জাস্টিজ শফিউর রহমান তার স্বতন্ত্র রায়ে বলেন, “ কাদিয়ানী নিষেধাজ্ঞা অধ্যাদেশ সংবিধানের ২০ নং অনুচ্ছোদের (টর্রধডফণ) সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কেননা সংবিধানের ২০ নং অনুচ্ছোদে কাদিয়ানীদেরকেও পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। অপর দিকে মিঃ জাঃ আব্দুল কাদির চৌধুরী কাদিয়ানীদের দাবীর অসারতা প্রমাণ করে বলেন, কাদিয়ানী সম্প্রদায় ইসলামী পরিভাষা ও ইসলামী বৈশিষ্ট ব্যাবহার মুসলমানদেরকে প্রতারিত করে চলছে। যদি মুসলমানদেরকে ধোকা দেয়া তাদের উদ্দেশ্য হতো, তাহলে তারা নিজেদের ধর্মের পৃথক পরিভাষা তৈরী করে নিতে। কাদিয়ানীদের জোর পূর্বক বেআইনীভাবে ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার একথাই প্রমাণ করে যে, কাদিয়ানী ধর্মমতের নিজস্ব কোন ভিত্তি নেই। এ ধর্মের নিজস্ব পরিচয়ে টিকে থাকার ক্ষমতাও নেই।”
তিনি তার দীর্ঘ ৫৯ পৃষ্ঠাব্যাপী রায়ে বিস্তারিত ভাবে কাদিয়ানী আকীদার পর্যালোচনা করে বলেন, পৃথিবীতে অসংখ্য ধর্ম রয়েছে, কিন্তু কোন ধর্মাবলম্বীরা অন্য ধর্মের পরিভাষা ব্যবহার করে না এবং অন্য ধর্মের নির্ধারিত বৈশিষ্টাবলী নিয়েও টানাটানি করে না।
ইসলামী রাষ্ট্রের এ অধিকার অবশ্যই আছে যে, অমুসলিম সম্প্রদায়কে ‘শায়ায়েরে ইসলাম’ তথা ইসলামী পরিভাষা ও বৈশিষ্ট্য সমূহের আবরণে, তাদের ইসলাম বিরোধী কুফরী মতাদর্শের প্রচারনা ও প্রসার থেকে, বিরত রাখার জন্য অধ্যাদেশ জারি কিংবা আইন প্রণয়ন করে ছহীহ ইসলামকে হিফাজত করবে।
তিনি তার রায়ে আশা প্রকাশ করেন যে, কাদিয়ানীরা নিজ ধর্মের আচার অনুষ্ঠান, উপাসনালয় ও কলেমাসহ অন্যান্য ধর্মীয় কার্যকলাপের ন্যায় ভিন্ন নাম রাখবে। কেননা হিন্দু , শিখ , খৃস্টানসহ সকল অমুসলিম সম্প্রদায়ই নিজ ধর্ম - কর্ম ও উপাসনার ভিন্ন ভিন্ন নাম ও পন্থা নির্ধারণ করে নিয়েছে। তারা তাদের সকল ধর্মীয় কার্যকলাপই নিজস্ব নিয়মে পালন করে থাকে।
তিনি আরো বলেন, কোন অমুসলিমকে -কোন অবস্থায়ই পবিত্র কুরআনের বিশেষ পরিভাষা (যা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট) ব্যবহারের অনুমতি দেয়া যায় না। কেননা পাকিস্তান প্যানেল কোর্ডের (যণভটফ ডমঢণ দণ্ড সংহিতার) ২৯৮/সি অনুচ্ছোদে যে সকল ইসলামী পরিভাষার উল্লেখ করা হয়েছে, তা বিগত চৌদ্দশত বছর যাবত মুসলমানগণ বিশেষ অর্থে ব্যবহার করে আসছেন। এজন্য তা মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়ের অবিচ্ছোদ্য অংশ। কাজেই এ সকল পরিভাষা কেবলমাত্র এরূপ প্রসিদ্ধ ও নির্দিষ্ট অর্থে একমাত্র মুসলমানগণই ব্যবহার করার অধিকার রাখে।
কিন্তু যেহেতু অমুসলিম সম্প্রদায় এ সকল শব্দ, পরিভাষা ও বৈশিষ্ট সমূহ ব্যবহার করে মুসলমান পরিচয় দিয়ে মুসলমানদিগকে প্রতারিত করতে পারে, তাই অমুসলিম সম্প্রদায়কে এসকল পরিভাষা ও বৈশিষ্টসমূহ ব্যবহারের অনুমতি, কোন অবস্থাতেই দেয়া যায় না।
তিনি আরো বলেন, এই আইন শুধু পাকিস্তানেই নয় বরং সমগ্র পৃথিবীতে প্রচলিত আছে। যে সকল বিশেষ শব্দ, পরিভাষা ও বৈশিষ্ট্যের নির্ধারিত অর্থ, উদ্দেশ্য ও ব্যাখ্যা রয়েছে, সেগুলো ব্যবহারের আইনগত বিধান রয়েছে এবং তা কেবলমাত্র নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীই ব্যবহার করতে পারে। সকলের তা ব্যবহারের অনুমতি নেই। কেননা যদি সকল সম্প্রদায়ের লোককে স্বাধীনভাবে তা ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয় তাহলে তারা এ সুযোগে সংশ্লিষ্ট ধর্মের লোকদের পথভ্রষ্ট করার ও ধোকা দেয়ার সুযোগ পাবে। যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
কাদিয়ানীদের আশ্রয়স্থল খোদ বৃটেনের কোম্পানী আইনেও কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এমন নাম রাখা নিষিদ্ধ, যা রাজা, রাণী, সরকার, মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বা অন্য কোন সরকারী প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে আংশিক বা সম্পূর্ণ মিলে যায়। যেন এতে করে জনগণ ধোকার শিকার না হয়। তিনি আরো বলেন,
সমগ্র দুনিয়ায়ই একে অপরের পরিভাষা, প্রতিষ্ঠানের নাম ও ট্রেড মার্কের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাম ব্যবহার করা আইনতঃ অপরাধ। পাকিস্তানেও এ ধরণের আইন রয়েছে যে, “ কায়েদে আজম নামক বিশেষনটি অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। অথচ এই আইনকে আজ পর্যন্ত কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি।
মিঃ জাস্টিজ আব্দুল কাদির চৌধুরী আরো বলেন, মুসলমানদের নিকট সবচেয়ে মূল্যবান। সম্পদ হলো ঈমান। কাজেই তারা এমন কোন সরকারকে বরদাস্ত করবে না যে, তাদের ঈমান ও ইসলামের নিরাপত্তা দানে অক্ষম থাকে এবং তাদের ধর্মীয় পরিভাষা ও বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করা থেকে অমুসলিম সম্প্রদায়কে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়।
কাদিয়ানীদের পক্ষ হতে নিজস্ব ইসলামী বৈশিষ্ট্য ও পরিভাষা সমূহ ব্যবহারের অধিকার চেয়ে বার বার দাবী জানানো, মুসলমানদেরকে একথা ভালমত উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে যে, কাদিয়ানীরা এভাবে মুসলমানদেরকে ধোকা দিয়ে তাদের কুফরী মতবাদের শিকার বানাতে চায় ।
মিঃ জাঃ সেলিম আকতার কাদিয়ানীদের দাবী প্রত্যাখ্যান করে তিন পৃষ্ঠাব্যাপী ভিন্ন একটি ফয়সালা দেন।
মিঃ জাঃ আলী মুহাম্মাদ এবং মিঃ জাঃ মুহাম্মাদ আফজাল লুন, মিঃ জাঃ আব্দুর কাদির চৌধুরীর রায়ের সাথে ঐক্যমত ঘোষণা করেন। এই রায়ের সাথে সাথে পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট ইসলামী পরিভাষা ব্যবহারের অপরাধে দণ্ড প্রাপ্ত ৫ জন কাদিয়ানীর শাস্তি মওকুফের আবেদনপত্র ও প্রত্যাখ্যান করেন।
উল্লেখ্যযে, কাদিয়ানীরা যেন মুসলমান পরিচয় দিয়ে ইসলামের পবিত্রতম স্থান। মক্কা - মদীনায় প্রবেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে চাকুরীর সুযোগ নিতে না পারে, এজন্য ১৯৯২ সনে পাকিস্তানে জাতীয় পরিচয় পত্র বাহকের নিজস্ব ধর্মমত উল্লেখ করার জন্য আইন জারী ও কার্যকরী করা হয়েছে।
[অবলম্বনেঃ দৈনিক জঙ্গ, করাচী]
═──────────────═