জিহাদঃ নবী জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়
মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান খান
==================================================
বিশ্ব স্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামীন ইসলামকেই মানবের জন্য একমাত্র মনােনীত ও গ্রহণযােগ্য জীবন বিধান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম বা জীবন বিধান আল্লাহ পাকের নিকট গ্রহণযােগ্য নয়। যেমন পবিত্র কুরআনে এরশাদ হছে- যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম অন্বেষণ করে, তা সে ধর্ম কখনও(আল্লাহ পাকের নিকট) গৃহিত হবে না এবং সে (ব্যক্তি) পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। অর্থাৎ মুক্তিপাবে না। (সূরা আলে ইমরান ৮৫ আয়াত)
অতএব পবিত্র ইসলামকে একমাত্র জীবন বিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সমগ্র দুনিয়াকে বাধা ও আশংকামুক্ত এবং অন্তরায়হীন ময়দান রূপে গড়ে তােলার জন্য আল্লাহ পাক জিহাদকে ফরয করেছেন। আল্লাহ পাকের নির্দেশ পালন করতে গিয়েই রাহমাতুল্লিল আলামীন মহানবী (সঃ)কে আদর্শ সমর নায়ক হিসেবে বার বার তরবারী হাতে তুলে নিয়ে জিহাদ ও কিতালের ময়দানে অবতীর্ণ হতে হয়েছে।
সিপাহ সালার-ই- আজম, স্বয়ং মহানবী (সঃ) যে সকল জিহাদে রণাঙ্গণে উপস্থিত থেকেছেন, হাদীস বেত্তা ও ঐতিহাসিকগণের পরিভাষায় সেগুলােকে গাযওয়া বলে, আর যে সকল যুদ্ধে স্বয়ং মহানবী (সঃ) রণাঙ্গণে উপস্থিত থাকতে পারেন নি, বরং কোন সাহাবীর নেতৃত্বে মুজাহিদ বাহিনী প্রেরণ করেছেন, সেগুলােকে সারিয়্যাহ বলা হয়। অধিকাংশ মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকের মতে গাযওয়া মােট ২৭-টি এবং সারিয়্যা ৭৫টি। এ সংখ্যা সম্পর্কে মত বিরােধ থাকলেও, “সীরাতে মােস্তাফা” গ্রন্থের প্রণেতা মাওলানা ইদ্রিছ কালভী (রহঃ) আল্লামা ছুহাইলীল উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, গাযওয়া ও সারিয়ার সংখ্যা সম্পর্কে এ মতানৈক্যের কারণ হলাে,
অনেকে যুদ্ধ একই সফরে সামান্য ব্যবধানে সংগঠিত হওয়ার ফলে কতক আলেম সেগুলােকে একটি যুদ্ধ গণ্য করেছেন, যার ফলে তাদের নিকট যুদ্ধের সংখ্যা কম হয়েছে। আর যে সকল ইমাম প্রতিটি জিহাদকে পৃথকভাবে গণ্য কেেছন তাদের নিকট সংখ্যা বেশী হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এটা কোন মত বিরােধই নয়।
নির্ভরযােগ্য সীরাত গ্রন্থের বর্ণিত গাযওয়া সম্পর্কিত তথ্যের আলােকে মহানবী (সঃ)-এর জিহাদী জীবনে সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলাে।
-:গাযওয়া সমূহের বিবরণ:-
-----------------------------------------------------------------
১-গাযওয়ায়ে আবওয়া বা ওয়াদ্দান-১২ ই সফর ২য় হিজরী-কুরাইশদের একটি বাণিজ্যিক কাফেলা তা বাণিজ্য শেষে সিরিয়া থেকে মক্কায় ফিরছিল-৬০ জন মুহাজির-একটি ব্যবসায়ী কাফেলা-কুরাইশদের অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পরিচালিত এই অভিযানের সংবাদ পেয়ে শত্রুপক্ষ পালিয়ে যায়।
২-বাওয়াত-রাবিঃ ছানীঃ ২য় হিজরী-কুরাইশদের একটি বাণিজ্যিক কাফেলা-২০০ জন মুহাজির-এক বা আড়াই হাজার-এবারো শত্রুপক্ষ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
৩-উসায়রা-জমাদিউছ ছানী ২য় হিজরী-কুরাইশদের একটি বাণিজ্যিক কাফেলা-দেড় বা দুইশত মুহাজির-একটি বণিক দল-কুরাইশ গণ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় অবশ্য বনু জামরার সাথে সন্ধি হয়।
৪-ছাফওয়ান বা বদরে উলা-জমাদিউছ ছানী ২য় হিজরী-কারজ বিন জাবের আল ফাহরীকে গ্রেফতারের জন্য-অজ্ঞাত-অজ্ঞাত-নরাধম কারজ বিন জাবের মদিনার চারণভূমিতে আক্রমন করে পশু লুন্ঠনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও একজনকে হত্যা করে কিন্তু মুজাহিদ বাহিনীর আগমনী সংবাদে পালিয়ে জান বাঁচায়।
৫-বদরে ছানী বা বদরে কুবরা, ইতিহাস বিখ্যাত বদর যুদ্ধ-১৭ ই রমজান ২য় হিজরী শুক্রবার-মক্কা থেকে যুদ্ধের জন্য আগত কাফের বাহিনীর মোকাবেলায়-৩ শত ১৩ জন মুহাজির ও আনসার-৯৫০ বা ১০০০-
১৪ জন মুসলমান শহীদ হন কাফেরদের ৭০ জন নিহত হয় অপর ৭০ জন বন্দী হয়। মুসলমানদের কেউ বন্দী হন নি।
৬-কারকাতুল কুদর বা বনি হালিম-শাওয়াল ২য় হিজরী-বনু সুলায়মান ও বনু গাতফানের প্রতি-২০০ সাহাবী-অজ্ঞাত-শত্রুপক্ষ পালিয়ে যায়। সাহাবায়ে কেরামের একটি দলকে তাদের পিছু ধাওয়া করার জন্য পাঠালেন। তারা মালে গনিমত হিসেবে ৫০০ লাভ করেন।
৭-বনু কায়নুকা-১৫ শাওয়াল ২য় হিজরী-ইহুদী গোত্র বনু কাইনুকার কেল্লা অবরোধের জন্য-অজ্ঞাত সংখ্যক আনসার-বনু কায়নুকার যোদ্ধাগণ-১৫ দিন অবরোধ থাকার পর বের হয়ে আসলে নিরস্ত্র ভাবে দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
৮-সাবীক-৫ই জিলহজ ২য় হিজরী-আবু সুফিয়ান বিন হরব ও তার অশ্বারোহী বাহিনীকে গ্রেফতারের জন্য-২০০ মুজাহিদ-২শত অশ্বারোহী মুশরিক-আবু সুফিয়ান বিন হরব ও তার অশ্বারোহী বাহিনী হঠাৎ আক্রমন করে একজন মুসলমানকে হত্যা করে। মুজাহিদগণ পৌঁছার পূর্বেই তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
৯-গাতফান-১৬ রবিউল আউয়াল ৩য় হিজরী-বনু ছালাবা ও বনু মুহারেবের প্রতি-৪৫০ জন মুজাহিদ-উক্ত গোত্রদ্বয়ের যোদ্ধাগণ-কাফেরগণ পালিয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। একজন গ্রেফতার হয় এবং পরবর্তীতে মুসলমান হয়।
১০-বনু সুখাইম-জমাদিউল উলা ৩য় হিজরী-বনু সুলাইম-৩০০ মুজাহিদ-উক্ত গোত্রের যোদ্ধাগণ-ইহুদি মুজাহিদের আগমনের সংবাদ পেয়ে পালিয়ে যায়, লড়াই হয়নি।
১১-উহুদ-৭ শাওয়াল ৩য় হিজরী শনিবার-মক্কা হতে মুশরিকদের মোকাবেলার জন্য-৭০০,সকলেই পদাতিক-৩২০০ অশ্বারোহী,৩০০০ উট,১৫ জন নর্তকী-৭০ জন সাহাবী শহীদ হন এর মধ্যে ১০ জন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হেফাজত করতে গিয়ে শহীদ হন। আনুগত্যের অভাবে প্রথম মুসলমানদের জয় হলেও পরবর্তীতে পরাজয়ে রূপ নেয় এবং মুহূর্তে কাফেরগণ পালিয়ে যায়।
১২-হামরাউল আসাদ-১৬ শাওয়াল ৩য় হিজরী-উহুদ থেকে পালিয়ে যাওয়া মুশরিকদের পিছু ধাওয়া করার জন্য-উহুদের মুজাহিদ গণ-উহুদে অংশ নেয়া মুশরিক-মুশরিকগণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রণসজ্জা ও আগমনের সংবাদ পেয়ে পালিয়ে যায়।
১৩-বনু নাজীর-রবিউল আউয়াল ৪র্থ হিজরী-ইহুদী গোত্র বনু নাজীরের প্রতি-অজ্ঞাত-ইহুদী বনু নাজীর- ইহুদিদেরকে দেশান্তরিত করা হয়। মদিনা ইহুদি মুক্ত হয়।
১৪-বদরে মিয়াদ-বদরে ছুগরা-জিলক্বদ ৪র্থ হিজরী-মক্কার মুশরিকদের প্রতিরোধের জন্য-১৫০০ সাহাবা-মুশরিকিনে মক্কার একটি যোদ্ধাদল-মুশরিকগণ প্রাণ ভয়ে রাস্তা থেকে পালিয়ে যায়।
১৫-দাওমাতুল জানদাল-রবিউল আউয়াল ৫ম হিজরী-দাওমাতুল জানদালের মুশরিকদের প্রতি - ১০০০সাহাবা-মুশরিকদের একটি বিরাট বাহিনী- মুজাহিদ দের আগমনের সংবাদ পেয়ে মুশরিকরা পালিয়ে যায়। লড়াই হয়নি।
১৬-বনু মুসতালিক-শাবান ৫ম হিজরী-বনু মুস্তালিকের প্রতি-৭০০ সাহাবা ও ৩০ জন অশ্বারোহী -বল মুস্তালিকের একটি বিরাট বাহিনী- শত্রুপক্ষের ১০ জন নিহত ও শতাধিক কয়েদী হয় এবং ২০০০ উট ও ৫০০০ বকরী গণিমত হিসেবে লাভ হয়।
১৭-খন্দক বা আহযাব-শাওয়াল ৫ম হিজরী-মক্কা থেকে আগত সম্মিলিত মুশরিক বাহিনীর প্রতি-৩০০০-১০০০০ বা ১৫০০০-পরিখা খনন করে শত্রুবাহিনী মদিনার বাইরে ঠেকিয়ে রাখা সত্বেও ৬ জন মুসলমান শহীদ ও ৪ জন মুশরিক হালাক হয়।
১৮-বনু কুরাইজাহ-জিলক্বদ ৫ম হিজরী-ইহুদী গোত্র বনু কুরাইজার প্রতি-৩০০০-বনু কুরাইজার সকল যোদ্ধা-আট থেকে নয় শত যোদ্ধাকে কতল করা হয়,তাদের স্ত্রী সন্তানদেরকে বন্দি করা হয় এবং তাদের সকল মাল গনিমত হিসেবে মুজাহিদদের মাঝে বন্টন করা হয়।
১৯-বনু লিহইয়ান-রবিউল আউয়াল ৬ষ্ঠ হিজরী- ২০০ সাহাবী-উক্ত গোত্রের সকল যোদ্ধা- শত্রুপক্ষ সংবাদ পেয়ে পালিয়ে যায়। কোন যুদ্ধ হয়নি।
২০-হুদাইবিয়া-জিলহজ্ব ৬ষ্ঠ হিজরী-মুশরিকিনে মক্কা-১৫০০ সাহাবী-মুশরিকিনে মক্কা-বিখ্যাত হুদাইবিয়ার সন্ধি এসময় সম্পাদিত হয়। কোন লড়াই হয়নি।
২১-গাবাহ বা যী কারদ-জিলহজ্ব ৬ষ্ঠ হিজরী-আইয়ালাহ বিন হাসান ও তার সঙ্গীদের গ্রেফতারের জন্য-৫ বা ৭ জন-আইয়ালাহ বিন হাসান ও তার ৪০ জন যোদ্ধা-উত্তর নরাধম মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পশুপাল ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। মুসলমানগণ কয়েক জন কাফেরকে হত্যা করে পশুপাল উদ্ধার ও সামান্য গনিমত লাভ করেন।
২২-খাইবার-মুহাররম ৭ম হিজরী-খায়বারে সমবেত ষড়যন্ত্রকারী ইহুদি বাহিনীর প্রতি-২০০ অশ্বারোহী,১৪০০ পদাতিক-খায়বারে সমবেত ইহুদী-দশদিন অবরোধের পর খাইবার ফাতাহ হয়। মুজাহিদগণ প্রচুর গনিমত লাভ করেন। আর এই অভিযানে গাজওয়ায়ে ওয়াদী আল কুরা অনুষ্ঠিত হয় এবং মুসলমানগণ জয় লাভ করেন।
২৩-জাতুর রিক্বা-রবিউল আউয়াল ৭ম হিজরী-বনু মাহারেব ও বনু ছালাবার প্রতি-৪০০/৭০০/৮০০ মুজাহিদ-বনু মাহারেব ও বনু ছালাবার যোদ্ধাগণ- শত্রুবাহিনী মুজাহিদদের ভয়ে পাহাড়ের চূড়ায় পালিয়ে যায়। লড়াই হয়নি।
২৪-ফাতহে মক্কা-রমযান ৮ম হিজরী-মক্কার খোদাদ্রোহী মুশরিকদের প্রতি-১০০০০ মুজাহিদ- মুশরিকিনে মক্কা-সামান্য বিচ্ছিন্ন লড়াইয়ের পর ফাতাহ লাভ হয় এবং এর সাথে সাথেই পবিত্র মক্কা নগরী হতে শিরক ও কুফরের চির অবসান ঘটে।
২৫-হুনাইন বা হাওয়াজিন-শাওয়াল ৮ম হিজরী- ___ - ১২০০০ মুজাহিদ-বনু হাওয়াজিনের যোদ্ধাগণ-৪ জন মুসলমান শহীদ ও ৭০ জন কাফের হালাক হয় এবং মুসলমানগণ জয়লাভ করেন।
২৬-তায়েফ-শাওয়াল ৮ম হিজরী-বনু ছাকিফের কেল্লাহ বিজয়ের জন্য-শুরাকায়ে হুনাইন-বনু ছাকিফের যোদ্ধাগণ-১২ দিন অবরোধের পর কেল্লার প্রাচীর ভাঙ্গার জন্য মিনজানিক ব্যবহার হয়। এই অভিযানে ১২ জন মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেন। পরবর্তীতে এই কেল্লার পতন ঘটে।
২৭-গাযওয়ায়ে তাবুক-রজব ৯ম হিজরী-তাবুক নামক স্থানে সমবেত রোম বাহিনীর প্রতি-৩০০০০ মুজাহিদ-১০০০০০ বা ২০০০০০,সম্রাট হিরাক্লিয়াসের ৪০০০০ সৈন্যও ছিল-দীর্ঘ ২০ দিন অবস্থানের পর মহানবী সাঃ সাহাবাদের কে নিয়ে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন। এ দীর্ঘ সময়েও শত্রুপক্ষ মোকাবেলা করতে সাহস পায়নি। মহানবী সাঃ এর জীবনের সর্বশেষ জিহাদী অভিযান।
বিশেষ জ্ঞাতব্য- মহানবী (সঃ)এর বিশেষ দূত হযরত হারেছ ইবনে উমায়েরকে যখন বসরার শাসন কর্তা নরাধম শারজিল ইবনে আমর নির্মমভাবে হত্যা করে তখন মহানবী (সঃ) এ সংবাদ পাওয়া মাত্র ৮ম হিজরীর জুমাদুল উলা মাসে, হযরত জায়েদ ইবনে হারেছার নেতৃত্বে এক মুজাহিদ বাহিনী উক্ত নরাধমকে শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রেরণ করেন। যেহেতু মুজাহিদদের বিদায় দেওয়ার সময় মহানবী (সঃ) অনেক দূর পর্যন্ত তাদের সাথে গিয়েছিলেন সেহেতু কোন কোন ঐতিহাসিক একে গাযওয়া বলেছেন। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এটি গাযওয়া নয় বরং সারিয়্যা। এ অভিযানে ২৩জন মুসলমান শহীদ হন। কাফেরদের নিহতের সংখ্যা নির্ণয় করা যায়নি। ঠিক তদ্রুপ ভাবে ৮ম হিঃ জুমাঃ উলা মাসে রােম সম্রাটের আড়াই লাখ (বর্ম পরিহিত) বাহিনীর মুকাবিলার জন্য হযরত হারেছার নেতৃত্বে ৩ হাজার মুজাহিদের একটি বাহিনী প্রেরণ করেন, যেহেতু এ যুদ্ধেও মুসলমানগণ গাযওয়ার মত উৎসাহের সাথে দলে দলে যােগদান করেন এজন্য কতিপয় ঐতিহাসিক ইহাকেও গাযওয়া বলেছেন। প্রকৃত পক্ষে গাযওয়া নয়, বরং সারিয়্যাহ। -সংকলক।
জিহাদ ব্যতীত ইসলাম পূর্ণতা পায় না একথা রাসূল (সঃ) তার জীবনে প্রমাণ করে গেছেন। নবুয়তের পর তার মক্কী জীবনের তেরােটি বছর দ্বীনের দাওয়াত অর্থাৎ তাবলীগের মাধ্যমে অতিবাহিত হয়েছে। এসময় তিনি সর্ব প্রথম নিজের নিকটাত্মীয়দের নিকট আল্লাহর বানী পৌছান। তারপর তিনি প্রতিবেশী, আরও পরে সমগ্র আবরবাসী এবং অবশেষে বিশ্বের মানব সমাজকে লক্ষ্য করে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন এবং মানুষের মনে আল্লাহর ভীতি সৃষ্টির প্রয়াস পান। এ সময় তিনি কারাে বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেননি এবং কারাে কাছে জিজিয়াও দাবী করেন নি। হিজরতের পরও যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বিরুদ্ধে কাফেররা আরও উগ্র আচরণ করলাে এবং যুদ্ধের মাধ্যমে ইসলামকে ও ইসলামের ধ্বংস করতে চাইলাে তখন তাকে কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আদেশ দিলেন। পরবর্তীতে আল্লাহর দ্বীন পরিপূর্ণতা লাভ হওয়া পর্যন্ত মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়া হয়। সূরা তওবা নাযিল হওয়ার পর রাসূল (সঃ) কাফেরদের তিন শ্রেণীতে ভাগ করেন। প্রথম যুদ্ধরত কাফেরদল। দ্বিতীয়, চুক্তিবদ্ধ দল, তৃতীয় জিম্মিদল। তিনি প্রথম দলের সাথে অস্ত্র ধারণ করে যুদ্ধে বিজয় লাভ করেন। দ্বিতীয় দলের সাথে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেন। তৃতীয় দল যেহেতু আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে কোন শত্রুতামূলক আচরণ করেনি তাই তাদেরকে তিনি- যাদের সাথে অনির্দিষ্ট কালের জন্য শান্তি চুক্তি করা হয়েছিল তাদের দলভুক্ত করে নেন। যারা চুক্তি ভঙ্গ করে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল তিনি তাদের হত্যা করেন। যারা অনির্দিষ্ট কালের জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিল তাদের চার মাস সময় দান করেন এবং ঐ সময়ান্তে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করেন এবং চুক্তি পালনকারীদের সাথে নির্দিষ্ট সময় পার না হওয়া পর্যন্ত চুক্তি মােতাবিক ব্যবহার করেন। ফলে সকল লােকই ইসলাম গ্রহণ করে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তারা কুফরী পরিত্যাগ করে।
অমুসলিম বাসিন্দারা জিজিয়া প্রদান করে রাষ্ট্রের অনুগত হয়ে যায়। এভাবে জিহাদের মাধ্যমে রাসূল (সঃ) আল্লাহর দ্বীনকে পরিপূর্ণতা দান করেন।
জিহাদ যেমনি নবী জীবনের অবিচ্ছেদ্য অধ্যায় ছিল তেমনি ইসলামের পরিপূর্ণতা সাধনেও জিহাদ অপরিহার্য অংগ।
******