কুরবানী সম্পর্কিত সম্পূর্ণ মাসয়ালা
========================================================================
কোরবানী করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ কোরবানীর সময় আল্লাহর নিকট কোরবানীর চেয়ে অধিক প্রিয় আর কোন জিনিস নেই। কোরবানীর সময় কোরবানীই সবচেয়ে বড় ইবাদত। কোরবানী যবাহ করার সময় প্রথম যে রক্তের ফোটা পড়ে, তা মাটি পর্যন্ত পৌছার পূর্বেই কোরবানী আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং একান্ত ভক্তি ও আন্তরিক আগ্রহের সাথে খুব ভাল জানোয়ার দেখে কোরবানী করবে।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ কোরবানীর জানোয়ারের যত পশম থাকে প্রত্যেক পশমের পরিবর্তে এক একটি নেকী লেখা হয়।
সোহানাল্লাহ! একটু চিন্তা করে দেখ, এর অপেক্ষা বড় সৌভাগ্যের বিষয় আর কি হতে পারে? একটি কোরবানীর বদলায় কত হাজার নেকী পাওয়া যায়। একটি কোরবানীর বকরীর গায়ের পশম সকাল হতে সন্ধা পর্যন্ত গুনেও শেষ করা যায় না। একটি কোরবানী করলে এত নেকী। অতএব, কেউ যদি মালদার এবং ছাহেবে - নেছাব নাও হয়, তবুও সওয়াবের আশায় তার কোরবানী করা উচিত। কেননা, এই সময় চলে গেলে এত অল্প আয়াসে এত এধিক নেকী অর্জনের আর কোন সুযোগ নেই। আর যদি আল্লাহ তা'আলা ধনী বানিয়ে থাকেন, তবে নিজের কোরবানীর সঙ্গে সঙ্গে নিজের মৃত মা, বাপ, ওস্তাদ প্রভৃতির পক্ষ হতেও কোরবানী করা উচিত। যেন তাদের রূহে সওয়াব পৌছায় হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) -এর পক্ষ হতে তাঁর বিবিগনের এবং নিজ পীর প্রমুখের পক্ষ হতেও কোরবানী করতে পারলে অতি ভাল। তাঁদের রূহ এই সওয়াব পেয়ে অত্যন্ত খুশী হয়। যা হোক, অতিরিক্ত করা নফল কিন্তু নিজ ওয়াজিব রীতিমত আদায় করতে কিছুতেই ত্রুটি করবে না। কারণ আল্লাহর অগণিত নেয়ামতরাশি অহরহ ভোগ করা সত্ত্বেও তাঁর আদেশ, তাঁর উদ্দেশ্যে এতটুকু কোরবানী যে না করতে পারে তার চেয়ে হতভাগ্য আর কে আছে? গোনাহর কথা স্বতন্ত্র।
কোরবানী করার নিয়মঃ
কোরবানীর জন্তুকে কেবলা রোখ করে শুইয়ে প্রথমে এই দো'আটি পড়বেঃ
اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ - إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ - لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ - اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ -
উচ্চারণ- ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।
এই দোয়া পড়ে بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر (বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর) বলে জবাহ করবে।
পশু জবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে- اَللهُمَّ تَقَبَّلهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।
লক্ষ্যণীয় হলো- যদি কেউ একাকি কুরবানি দেয় এবং নিজে জবাই করে তবে বলবে مِنًى (মিন্নি), আর অন্যের কুরবানির পশু জবাই করার সময় مِن (মিন) বলে যারা কুরবানি আদায় করছে তাদের নাম বলা। আর যদি অন্যের সঙ্গে শরীক কুরবানি হয় তবে مِنًى (মিন্নি) ও বলবে এর পর مِن (মিন) শব্দ লাগিয়ে অন্যদের নাম উল্লেখ করবে।
মাসআলাঃ যার উপর ছদকা ফিতর ওয়াজিব তার উপর কোরবানী করা ওয়াজিব। (অর্থাৎ, ১০ ই যিলহজ্জের ফজর হইতে ১২ ই যিলহজ্জের সন্ধা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কোন সময় যদি মালেক নেছাব হয়, তবে তার উপর কোরবানী ওয়াজিব হবে।) যে মালদার নয় তার উপর কোরবানী করা ওয়াজিব হবে না। কিন্তু ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও যদি পারে, তবে অনেক সওয়াব পাবে।
মাসআলাঃ মুসাফিরের উপর (মুসাফিরী হালাতে) কোরবানী ওয়াজিব নয়।
মাসআলাঃ ১০ ই যিলহজ্জ হতে ১২ ই যিলহজ্জের সন্ধ্যা পর্যন্ত এই তিন দিন কোরবানী করার সময়। এই তিন দিনের যে দিন ইচ্ছা সেই দিনই কোরবানী করা যায়; কিন্তু প্রথম দিন সর্বাপেক্ষা উত্তম, তারপর দ্বিতীয় দিন, তারপর তৃতীয় দিন।
মাসআলাঃ বকূরী ঈদের নামাযের আগে কোরবানী করা দুরুস্ত নয়। ঈদের নামাযের পর কোরবানী করবে। অবশ্য যে স্থানে ঈদের নামায বা জুমআর নামায দুরুস্ত নয়, সে স্থানে ১০ ই যিলহজ্জ ফজরের পরও কোরবানী করা দুরস্ত আছে।
মাসআলাঃ কোন শহরবাসী যদি নিজের কোরবানীর জীব এমন স্থানে পাঠায় যেখানে জুম’আ ও ঈদের নামায জায়েয নেই, তবে তথায় ঈদের নামাযের পূর্বে কোরবানী করা দুরুস্ত আছে, যদিও সে নিজের শহরে থাকে। যবাহ্ করার পর তথা হতে গোশত আনিয়ে খেতে পারে।
মাসআলাঃ ১২ ই যিলহজ্জ সুর্য অস্ত যাবার পূর্ব পর্যন্ত কোরবানী করা দুরুস্ত আছে, সূর্য অস্ত গেলে আর কোরবানী দুরুস্ত নয়।
মাসআলাঃ কোরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে দুইটি রাত্র পড়ে সেই দুই রাত্রেও কোরবানী করা জায়েয আছে, কিন্তু রাত্রের বেলায় যবাহ করা ভাল নয়। কেননা, হয়ত কোন একটি রগ কাটা না যেতে পারে ফলে কোরবানী দুরুস্ত হবে না।
মাসআলাঃ কেউ ১০ এবং ১১ তারিখে সফরে ছিল বা গরীব ছিল, ১২ ই তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে বাড়ী এসেছে বা মালদার হয়েছে, বা কোথায়ও ১৫ দিন থাকার নিয়ত করেছে, এরূপ অবস্থায় তার উপর কোরবানী ওয়াজিব হবে।
মাসআলাঃ নিজের কোরবানীর জানওয়ার নিজ হাতেই যবাহ করা মুস্তাহাব। যদি নিজে যবাহ্ করতে না পারে, তবে অন্যের দ্বারা যবাহ্ করাবে, কিন্তু নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভাল। মেয়েলোক পর্দার ব্যাঘাত হয় বলে যদি সামনে উপস্থিত না থাকিতে পারে, তবে তাতে কোন ক্ষতি নেই।
মাসআলঃ কোরবানী করার সময় মুখে নিয়ত করা ও দো'আ উচ্চারণ করা জরূরী নয়। যদি শুধু দেলে নিয়ত করে মুখে শুধু ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর' বলে যবাহ্ করে, তবে কোরবানী দুরুস্ত হবে। কিন্তু স্মরণ থাকলে উক্ত দো'আ দুটি পড়া অতি উত্তম।
মাসআলাঃ কোরবানী শুধু নিজের তরফ হতে ওয়াজিব হয়। এমন কি নাবালেগ সন্তান যদি মালদার হয়, তবে তাদের উপর কোরবানী ওয়াজিব নয় এবং মা - বাপের উপরও ওয়াজিব নয়। যদি কেউ সন্তানের পক্ষ থেকে কোরবানী করতে চায়, তবে তা নফল কোরবানী হবে। কিন্তু না বালেগের মাল হতে কিছুতেই কোরবানী করবে না।
মাসআলাঃ বকরী, পাঠা, খাসী, ভেড়া দুম্বা, গাভী, ষাঁড়, বলদ, মহিষ, উট, এই কয় প্রকার গৃহপালিত জন্তুর কোরবানী করা দুরুস্ত আছে। এতদ্ব্যতীত হরিণ ইত্যাদি অন্যান্য হালাল বন্য জন্তুর দ্বারা কোরবানী আদায় হবে না।
মাসআলাঃ গরু, মহিষ এবং উট এই তিন প্রকার জানোয়ারের এক একটি জানোয়ার এক হইতে সাতজন পর্যন্ত শরীক হয়ে কোরবানী করতে পারে। তবে কোরবানী দুরস্ত হবার জন্য শর্ত এই যে, কারও অংশ যেন সাত ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম না। হয় এবং কারও যেন শুধু গোশত খাওয়ার নিয়ত না হয়, সকলেরই যেন কোরবানীর নিয়ত থাকে; অবশ্য যদি কারও আক্বীকার নিয়ত হয়, তবে তাও দুরস্ত আছে। কিন্তু যদি মাত্র একজনের শুধু গোশত খাওয়ার নিয়ত হয়, কোরবানী বা আকীকার নিয়ত না হয়, তবে কারও কোরবানী দুরুস্ত হবে না। এইরূপ যদি মাত্র একজনের অংশ সাত ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম হয়, তবে সকলের কোরবানী নষ্ট হয়ে যাবে।
মাসআলাঃ যদি একটি গরুতে সাত জনের কম ৫/৬ জন শরীক হয় এবং কারও অংশ সপ্তমাংশ থেকে কম না হয়; (যেমন -৭০ টাকা দিয়ে গরু কিনল কারও অংশ যেন দশ টাকার কম না হয়) তবে সকলের কোরবানী দুরুস্ত হবে। আর যদি আট জন শরীক হয়, তবে কারও কোরবানী ছহীহ হবে না।
মাসআলাঃ যদি গরু খরিদ করার পূর্বেই সাত জন ভাগী হয়ে সকলে মিলে খরিদ করে, তবে তা অতি উত্তম, আর যদি কেউ একা একটি গরু কোরবানীর জন্য খরিদ করে এবং মনে মনে এই এরাদা রাখে যে, পরে আরও লোক শরীক করে তাদের সঙ্গে মিলে একত্র হয়ে কোরবানী করব, তবে তাও দূরুন্ত আছে। কিন্তু যদি গরু কিনার সময় অন্যকে শরীক করার এরাদা না থাকে, একা একাই কোরবানী করবার নিয়ত থাকে, পরে অন্যকে শরীক করতে চায়, (কিন্তু তা ভাল নয়) এমতাবস্থায় যদি ঐ ক্রেতা গরীব হয় এবং তার উপর কোরবানী ওয়াজিব না হয়, তবে পরে সে অন্য কাউকে শরীক করতে পারবে না, একা একাই গরুটি কোরবানী করতে হবে। আর যদি ঐ ক্রেতা মালদার হয় এবং তার উপর কোরবানী ওয়াজিব হয়, তবে ইচ্ছা করলে পরে অন্য শরীকও মিলাতে পারে। (কিন্তু নেক কাজের নিয়ত বদলান ভাল নয়।)
মাসআলাঃ যদি কোরবানীর জীব হারিয়ে যায় ও তৎপরিবর্তে অন্য একটি খরিদ করার পর প্রথম জীবটিও পাওয়া যায়, এমতাবস্থায় যদি ক্রেতা মালদার হয়, তবে একটি জীব কোরবানী করা ওয়াজিব হবে। যদি লোকটি গরীব হয়, তবে উভয় জীব কোরবানী করা তার উপর ওয়াজিব ।
মাসআলাঃ কোরবানীর জানওয়ার ক্রয় করার পর যদি তার বাচ্চা পয়দা হয়, তবে ঐ বাচ্চাও কোরবানী করিয়া গরীব মিসকীনদেরকে দিয়া দিবে, নিজে খাবে না। যবাহ করে গরীবকে দান করে দেওয়াও জায়েয ।)
মাসআলাঃ সাতজনে শরীক হয়ে যদি একটি গরু কোরবানী করে, তবে গোশত আন্দাজে ভাগ করবে না। পাল্লা দ্বারা মেপে সমান সমান ভাগ করবে; অন্যথায় যদি ভাগের মধ্যে কিছু বেশকম হয়ে যায়, তবে সুদ হয়ে যাবে এবং গোনাহগার হতে হবে। অবশ্য যদি গোশূতের সঙ্গে মাথা, পায়া এবং চামড়াও ভাগ করে দেয়া হয়, তবে যে ভাগে। মাথা পায়া বা চামড়া থাকবে, সে ভাগে গোশত কম হলে দুরুস্ত হবে, যত কমই হোক। কিন্তু যে ভাগে গোশত বেশী সে ভাগে মাথা, পায়া বা চামড়া দিলে সুদ হবে এবং গোনাহ হবে।
মাসআলাঃ বকরী পূর্ণ এক বৎসরের কম হলে দূরুস্ত হবে না। এক বৎসর পুরা হলে দুরুস্ত হবে। গরু , মহিষ দুই বৎসরের কম হলে কোরবানী দুরুস্ত হবে না। পূর্ণ দুই বৎসরের হলে দুরস্ত হবে। উট পাঁচ বৎসরের কম হলে কোরবানী দুরুস্ত হবে না। দুম্বা এবং ভেড়ার হুকুম বকরীর মত; কিন্তু ছয় মাসের বেশী বয়সের দুম্বার বাচ্চা যদি এরূপ মোটা তাজা হয় যে, এক বৎসরের দুম্বার মধ্যে ছেড়ে দিলে চিনা যায় না, তবে সেরূপ দুম্বার বাচ্চার কোরবানী জায়েয আছে, অন্যথায় নয়। কিন্তু বকরীর বাচ্চা যদি এরূপ মোটা তাজাও হয়, তবুও এক বৎসর পূর্ন না হলে কোরবানী দুরুস্ত হবে না।
মাসআলাঃ যে জন্তুর দুইটি চোখ অন্ধ, অথবা একটি চোখ পূর্ণ অন্ধ বা একটি চোখের তিন ভাগের এক ভাগ বা আরও বেশী দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সে জন্তুর কোরবানী দুরুস্ত নয়। এই রূপ যে জন্তুর একটি কানের বা লেজের এক তৃতীয়াংশ বা তদপেক্ষা বেশী কেটে গেছে সে জন্তুরও কোরবানী দুরুস্ত নয়।
মাসআলাঃ যে জন্তু এমন খোঁড়া যে, মাত্র তিন পায়ের উপর ভর দিয়ে চলে, চতুর্থ পা মাটিতে লাগেই না, অথবা মাটিতে লাগে বটে, কিন্তু তার উপর ভর দিতে পারে না, এরূপ জন্তুর কোরবানী দুরস্ত নয়। আর যদি খোঁড়া পায়ের উপর ভর দিয়া খুঁড়িয়ে চলে, তবে সে জন্তুর কোরবানী জায়েয আছে।
মাসআলাঃ জীবটি যদি এমন কৃশ ও শুষ্ক হয় যে, তার হাড়ের মধ্যকার মগজও শুকিয়ে গিয়ে থাকে, তবে সে জন্তুর কোরবানী দুরুস্ত নয়; হাড়ের ভিতরের মগজ যদি না শুকিয়ে থাকে, তবে তার কোরবানী জায়েয আছে।
মাসআলাঃ যে জানওয়ারের একটি দাঁতও নেই, সে জানওয়ারের কোরবানী দুরুস্ত নয়; আর যতগুলি দাঁত পড়ে গেছে তা অপেক্ষা যদি অধিকসংখ্যক দাঁত বাকী থাকে, তরে কোরবানী দুরুস্ত আছে।
মাসআলাঃ যে জন্তুর কান জন্ম হতে নেই, তার কোরবানী দুরুন্তু নয়। কান হয়েছে। কিন্তু অতি ছোট, তবে তার কোরবানী দুরুন্ত আছে।
মাসআলাঃ যে জন্তুর শিংই উঠে নি বা শিং উঠেছিল কিন্তু ভেঙ্গে গেছে, তার কোরবানী জায়েয আছে। অবশ্য যদি একেবারে মূল থেকে ভেংগে যায়, তবে কোরবানী জায়েয নয়।
মাসআলাঃ যে জন্তুকে খাসী বানিয়ে দেওয়া হয়েছে তার কোরবানী দুরুস্ত আছে। এইরূপ যে জন্তু গায়ে বা কাঁধে দাদ বা খুজলি হয়েছে তার কোরবানীও জায়েয আছে। অবশ্য খুজলির কারণে যদি জন্তু একেবারে কৃশ হয়ে থাকে, তবে তার কোরবানী দুরুস্ত নয়।
মাসআলাঃ ভাল জন্তু ক্রয় করার পর যদি এমন কোন দোষ দেখা দেয় যে কারণে কোরবানী দুরুস্ত হয় না, তবে ঐ জটি রেখে অন্য একটি জন্তু কিনে কোরবানী করতে হবে। অবশ্য যার উপর কোরবানী ওয়াজিব নয় নিজেই আগ্রহ করে কোরবানী করার জন্য কিনেছে, সে ঐটিই কোরবানী করে দিবে, অন্য একটি কেনার দরকার নেই।
মাসআলাঃ কোরবানীর গোশত নিজে খাবে, নিজের পরিবারবর্গকে খাওয়াবে। আত্মীয় - স্বজনকে হাদিয়া তোহফা দিবে এবং গরীব মিসকীনেরকে খয়রাত দিবে। মুস্তাহাব তরীকা এই যে, তিন ভাগ করে এক ভাগ গরিবদেরকে দান করবে যদি কেউ সামান্য দান করে, তবে গোনাহ হবে না।
মাসআলাঃ কোরবানীর চামড়া এমনিই খয়রাত করে দিবে। কিন্তু যদি চামড়া বিক্রয় করে, তবে ঠিক ঐ পয়সাই গরীবকে দান করতে হবে। ঐ পয়সা নিজে খরচ করে যদি অন্য পয়সা দান করে, তবে আদায় হয়ে যাবে বটে, কিন্তু অন্যায় হবে।
মাসআলঃ কোরবানীর চামড়ার দাম মসজিদ মেরামত বা অন্য কোন নেক কাজে খরচ করা দুরস্ত নয়, খয়রাত করতে হবে।
মাসআলাঃ যদি চামড়া নিজের কাজে ব্যবহার করে যেমন, চালুন, মশক, ডোল বা জায়নামায তৈয়ার করে, তবে তাও দুরুস্ত আছে।
মাসআলাঃ কোরবানীর জীব যবাহুকারী ও গোশত প্রস্তুতকারীর পারিশ্রমিক পৃথকভাবে দিবে, কোরবানীর গোশত, চামড়া, কল্লা বা পায়ার দ্বারা দিবে না।
মাসআলাঃ কোরবানীর জীবের গায়ে যদি কোন পোশাক থাকে, তবে তা এবং দড়ি ইত্যাদি গরীবদেরকে দান করে দিবে, নিজের কাজে লাগাবে না।
মাসআলাঃ গরীবের কোরবানী ওয়াজিব নয় বটে, কিন্তু যদি কোরবানীর নিয়ত করে জানওয়ার খরিদ করে, তবে তার নিয়তের কারণে সেই জানওয়ার কোরবানী করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে যাবে।
মাসআলঃ কারও কোরবানী ওয়াজিব ছিল, কিন্তু কোরবানীর তিনটি দিনই গত হল অথচ কোরবানী করল না। এমতাবস্থায় একটি বকরী বা ভেড়ার মূল্য খয়রাত করে দিবে। আর যদি বকরী খরিদ করে থাকে, তবে হুবহু ঐ বকরীটিই খয়রাত করবে।
মাসআলাঃ যদি কেউ কোরবানীর মান্নত মানে এবং যে মকছদের জন্য মেনেছিল সে মকছদ পূর্ণ হয়, তবে গরীব হোক বা ধনী হোক, তার উপর ঐ কোরবাণী করা ওয়াজিব হবে। কিন্তু মান্নতের কোরবানীতে গোশত গরীব মিসকীনের হক হবে, নিজে খেতে পারবে না। যদি নিজে খায় বা কোন মালদারকে দেয়, তবে যে পরিমাণ খেয়েছে বা মালদারকে দিয়েছে সেই পরিমাণ পুনরায় গরীবদেরকে দান করতে হবে।
মাসআলাঃ যদি নিজের খুশীতে কোন মৃতকে সওয়াব পৌছাবার উদ্দেশ্যে কোরবানী করে, তবে তা দুরন্তু আছে এবং ঐ গোশত নিজেও খেতে পারে এবং যাকে ইচ্ছা দিতেও পারবে।
মাসআলাঃ কিন্তু যদি কোন মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে কোরবানীর জন্য অছিয়ত করে গিয়ে থাকে, তবে সেই কোরবানীর গোশত সমস্তই খয়রাত করা ওয়াজিব হবে।
মাসআলাঃ কারও অনুপস্থতিতে যদি অন্য কেউ তার পক্ষ হতে তার বিনা অনুমতিতে কোরবানী করে, তবে কোরবানী ছহীহ হবে। আর যদি কোন জীবের মধ্যে অনুপস্থিত ব্যক্তির অংশ তার বিনানুমতিতে সাব্যস্ত করে, তবে অন্যান্য অংশীদারের কোরবানীও ছহীহ হবে না।
মাসআলাঃ যদি কোন গরু ছাগল কারও নিকট ভাগী বা রাখালী দেওয়া হয় এবং তার নিকট হতে ক্রয় করে কেউ কোরবানী করে, তবে তার কোরবানী দুরুস্ত হবে না; ভাগীদার জীবের মালিক হয় না। আসল মালিকই প্রকৃত মালিক। আসল মালিকের নিকট হতে ক্রয় করলে তবে দুরুস্ত হবে।
মাসআলাঃ যদি একটি গরু কয়েক জনে মিলে কোরবানী করে এবং প্রত্যেকেরই গরীব - মিসকীনদেরকে বিলিয়ে দেওয়ার বা পাকিয়ে খাওয়াবার নিয়ত হয়, তবে তাও জায়েয আছে। অবশ্য যদি ভাগ করতে হয়, তবে দাঁড়িপাল্লা দ্বারা সমান ভাগ করে দিতে হবে।
মাসআলাঃ কোরবানীর চামড়ার পয়সা পারিশ্রমিকস্বরূপ দেওয়া জায়েয নয়। কেননা, তা খয়রাত করে দেওয়া জরূরী ।
মাসআলাঃ কোরবানীর গোশত কাফেরদেরকেও দান করা জায়েয আছে। কিন্তু মজুরি স্বরূপ দেওয়া জায়েয নেই।
মাসআলাঃ গর্ভবতী জন্তু কোরবানী করা জায়েয আছে। যদি পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয় যায়, তবে সে বাচ্চাও যবাই করে দিবে।
আক্বীক্বাঃ
মাসআলাঃ ছেলে বা মেয়ে জন্মিলে উত্তম এই যে, সপ্তম দিবসে তার নাম রাখবে এবং আক্বীক্বা করবে। এতে সন্তানের বালা মুছীবত দূর হয় এবং যাবতীয় আপদ হতে নিরাপদ থাকে।
মাসআলাঃ ছেলে হলে আক্বীক্বায় দু'টি বকরী বা দু'টি ভেড়া আর মেয়ে হলে একটি বকরী বা একটি ভেড়া যকাহ করবে। কিংবা কোরবানীর গরুর মধ্যে ছেলের জন্য দুই । অংশ আর মেয়ের জন্য এক অংশ দিবে। সন্তানের মাথার চুল মুড়িয়ে ফেলবে এবং চুলের ওযনে রূপা বা সোনা খয়রাত করে দিবে। ইচ্ছা করলে ছেলের মাথায় জাফরান লাগিয়ে দিবে।
মাসআলাঃ জন্মের সপ্তম দিবসে আকীকা করা মুস্তাহাব; যদি সপ্তম দিবসে না করতে পারে, তবে যখনই করুক না কেন, যে বারে সন্তান পয়দা হয়েছে তার আগের দিন করবে। যেমন, শুক্রবার সন্তান হয়ে থাকিলে বৃহস্পতিবার সপ্তম দিবস পড়বে। বৃহস্পতিবারে জন্মিলে বুধবারে আকীকা করবে।
মাসআলাঃ জন্মনোর সপ্তম দিবসে ৪ টি কাজ নাম রাখা, মাথা কামান, চুলের ওযনে স্বর্ণ - রৌপ্য দান করা এবং আক্বীকার জীব যবাহ করা। এর যে কোনটি আগে পরে হলেও দোষ নেই। মাথা মুড়ানের জন্য খুর মাথায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে আক্বিক্বার জীব জবাহ করতে হবে, এটা বেহুদা রসম।
মাসআলাঃ যে জন্তুর কোরবানী দুরুস্ত হয় না তার দ্বারা আকীকা করাও দুরুস্ত নেই।
মাসআলাঃ আক্বীক্বার গোশত কাঁচা ভাগ করে দেওয়া, কিংবা পাকিয়ে ভাগ করে দেওয়া বা দাওয়াত করে খাওয়ান সবই জায়েয।
মাসআলাঃ তওফীক না হলে ছেলের পক্ষ হতে একটি বকরী দ্বারা আক্বীক্বা করা জায়েয আছে। আর আক্বীক্বা না করলেও কোন দোষ নেই।
═──────────────═