আমাদের দেশের চালচিত্র
সেকালের সম্রাটদের পৈশাচিক উল্লাস আর একালের বিনোদনের মধ্যে পার্থক্য কী?
ফারুক হোসাইন খান
====================================================================
প্রাচীন ও মধ্যযুগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বিলাসী রাজা-বাদশাহ-নবাব-সম্রাটদের রাজত্বকালে বিভিন্ন ধরণের লােমহর্ষক ও নারকীয় খেলার প্রচলন ছিল। এসব খেলা অনুষ্ঠান করে রাজ পরিবার তার পাত্র-মিত্র, উজির নাজির ও অন্যান্য সভাসদরা আনন্দ উপভােগ করত। যে খেলা যত নারকীয় ও রক্তাক্ত হত তার দর্শকরা তত বেশী বিকৃত উল্লাস প্রকাশ করত। রােম সম্রাজ্যের দোর্দন্ড প্রতাপশালী সম্রাটরা এমনি এক জঘন্য খেলার উদ্ভাবন করেছিল। তারা বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত কয়েদীদের নির্দিষ্ট একটি বদ্ধ ঘরের মধ্যে ছেড়ে দিত। দোতলার ব্যালকনিতে দর্শকদের আসনে উপবিষ্ট থাকত দেশের সম্রাট ও তার পাত্র-মিত্ররা। বন্ধীদের বদ্ধ ঘরে ছেড়ে দেবার পর গুপ্ত দরজা থেকে অসংখ্য সিংহ বা বাঘকে সে ঘরের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হত। বদ্ধ ঘরের মধ্যে এর পর শুরু হত হিংস্র পশুর সাথে খালি হাতে মানুষের রক্তাক্ত লড়াই।
হিংস্র জানােয়ার অসহায় মানুষগুলােকে ছিড়ে খুড়ে রক্তাক্ত করত। কলিজা টেনে ছিড়ে জানােয়ারগুলি চিবিয়ে চিবিয়ে খেত আর অসহায় মানুষগুলি মরণ চিৎকারে বদ্ধ ঘরকে প্রকম্পিত করে ফেলত। কিন্তু দর্শকের আসনে বসা দয়া মায়াহীন বিলাসী মানুষগুলির মনে এই নিষ্ঠুর যজ্ঞে কোন প্রভাব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হত না। বরং তারা অসহায় মানুষগুলির মরণ চিৎকার শুনে উল্লাসে ফেটে পরত। নীচে একদল মানুষ রক্তাক্ত পরিণতি বরণ করছে, হিংস্র জানােয়ারের সাথে লড়াই করতে করতে তার হাত হারিয়েছে, পা ক্ষত বিক্ষত, শরীরের মাংশ পেশীগুলি ধারালাে নখের আঘাতে কশাইয়ের দোকানে ঝােলানাে রক্তাক্ত মাংস খণ্ডের ন্যায় ঝুলছে। কারাে বা আস্ত খুলি উঠিয়ে খাবলা ভরে মাথার মগজ খাচ্ছে জানােয়ারগুলি আর দর্শকের আসনে, বসা মানুষরূপী পিশাচগুলাে সে দৃশ্য দেখে আনন্দ উপভােগ করছে প্রাণ ভরে। এতাে শুধু এক রােম সম্রাজ্যের নিষ্ঠুর ইতিহাস।
যুগে যুগে এমনি অসংখ্য খেয়ালী রাজা বাদশাহ অসংখ্য নিষ্ঠুর ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন। কোন কোন রাজা মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত অপরাধীদের দ্বারা, মল্লযুদ্ধ বা অসিযুদ্ধের আয়ােজন করতাে। এ যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিদের রক্তাক্ত যুদ্ধের পর হত্যা করে যে বিজয়ী হত সে বেঁচে থাকার সৌভাগ্য লাভ করত। রাজা বাদশাহরা স্বয়ং এ যুদ্ধ উপভােগ করে চিত্ত সুখ উপভােগ করত। এ সভ্য যুগও এমন নিষ্ঠুর আনন্দ উপভােগকারীদের কবল থেকে মুক্ত নয়। মধ্য প্রাচ্যের বিলাসী আমির ওমরাহদের উটের দৌড়ের প্রতিযােগিতায় যে পাশবিকতা অনুষ্ঠিত হয় তা শুনলে মানুষ মাত্রেই শিহরিত হয়ে ওঠে। শেখ ও আমিরদের এই চিত্ত বিনােদনের বলি হয় তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশসমূহের অসংখ্য অবুঝ শিশু। এসব শিশুদের আদম পাচারকারীরা চুরি করে নিয়ে সেসব দেশে বিক্রি করে দেয়। সেসব দেশের মানুষের আকৃতি সম্পন্ন পশুরা এসব শিশুদের উটের পায়ের সাথে বা পিঠে মজবুত করে বেধে দেয়। মরুভূমির উনুনের ন্যায় উত্তপ্ত বালুকা ভূমির ওপর দিয়ে উটগুলাে যখন দৌড় শুরু করে স্বভাবতই অবুঝ শিশুরা খর তাপ এবং আতঙ্কে আর্তনাদ করতে থাকে। শিশুদের এই ভয়ার্ত চিঙ্কারে উট ভীত হয়ে আরও দ্রুত ছুটতে থাকে। অন্যদিকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দর্শক গ্যালারীতে বসে এই ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা উপভােগ করতে থাকে শেখ আমির উপাধীধারী বিলাসী মরুচারী বদমাইসেরা। একদিকে মা-বাবা তার আদরের ধন নাবালক সন্তানকে হারিয়ে শােকের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে ওদিকে সেই অবুজ সন্তান আতঙ্ক আর মরুর অগ্নিতাপে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় প্রতিযােগিতা শেষ হওয়ার আগেই লাশে পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে মানবতাকে চরমভাবে পদাঘাত করে আনন্দ উপভােগ করছে একদল হায়েনার চরিত্রের মানুষ।
যুগের পরিবর্তনে, আধুনিকতার ছােয়ায় সভ্য যুগের বিভিন্ন দেশে এখনও এমন কতগুলি কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হচ্ছে যা মধ্য যুগ বা প্রাচীন যুগের সেই সব বর্বরতারই সমর্থক। চিত্ত বিনােদন, ক্রীড়া-কৌতুক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে এমন কতগুলি কর্মকাণ্ড অহরহ আয়ােজিত হচ্ছে যা যুগের চাহিদা, দেশের সম্মান, রাষ্ট্র পরিচালকদের দক্ষতা প্রদর্শন বলে অভাগা জনগণকে বােঝানাে হচ্ছে, তাদের মেনে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমরা যেমন অতীতের বিলাসী বাহাদুরদের কর্মকাণ্ডকে বর্বরতা বলে আজ আমরা নাক সিটকাই, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মও তেমনি আধুনিক এসব রাষ্ট্র নায়কদের কীর্তি-কর্ম মূল্যায়ন করতে গিয়ে শতাব্দীর সেরা গালিটি খুঁজে বের করতে ডিকশনারীর আদ্যান্ত মন্থন করতে ভুল করবে না-নিশ্চিত করে তা বলা যায়।
এই “আধুনিক বর্বরতা” বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন অনুষ্ঠিত হচ্ছে তেমনি আমাদের দেশেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এহেন এক অনুষ্ঠান । সকল ক্ষমতার উৎস জনগণের প্রতিনিধিরা জনগণের মতামত নিয়ে জনগণের প্রচুর মূল্যবান অর্থ-সম্পদ অপচয় করে যােগালেন এ অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার। দেশের মর্যাদা, দেশের সম্মানের নাম করে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানের নাম ‘সাফ গেমস’-যার পেছনে আমাদের ১০০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ একটি গরীব দেশ। শতকরা ৯০ জন লােকই গরীব। বেকার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটি। শিক্ষিত বেকার যুবকের সংখ্যা ৩ লক্ষ। এটা দৈনিক ইত্তেফাক ২৭ ফেব্রুয়ারী ৯২ এর হিসাব। এ সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়া হ্রাস পায়নি। দেশের অন্যতম সমস্যা দারিদ্র্য, বেকারত্ব, জনসংখ্যার স্ফীতি, নিরক্ষরতা। এসব সমস্যার সমাধানের জন্য চাই অর্থ সম্পদ। কিন্তু আমাদের তা একেবারেই সীমিত। তবুও এই সীমিত অর্থ সম্পদ ব্যয় করে বড় বড় অভাব মিটিয়ে, সমস্যার সমাধান করে তারপর ছােট ছােট অভাব, সমস্যার প্রতি নজর দিতে হবে। জনগণ তাদের এই কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্যই নির্বাচন করে তাদের প্রতিনিধি বা সরকার। নির্বাচিত এই সরকারের তাই একমাত্র দায়িত্ব হল জনগণের মৌলিক অভাব দূরীকরণে আত্মনিয়ােগ করা।
যে সরকার জনগনের প্রতি এ দায়িত্ব পালনে সমর্থ নয় বা তাদের দায়িত্বের বহির্ভূত জনস্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এহেন কর্মকাণ্ড চালায় তবে বলতে হবে, সে সরকার ব্যর্থ এবং দায়িত্বহীন। এহেন সরকারের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার কোনই অধিকার নেই। এদেশের সিংহভাগ মানুষ প্রতিনিয়ত দারিদ্রের সাথে কুস্তি লড়ছে, অন্নহীন ক্ষুধার জ্বালায় ভিক্ষে করে বেড়াচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। রাজপথে, অলিতে গলিতে, গ্রামে-শহরে,বন্দরে, বাসে-ট্রেনে স্টেশনে সর্বত্র এই পৌষের হাড়কাঁপানাে শীতের রাতেও উন্মুক্ত ফুটপাতে, মার্কেটে, যাত্রী ছাউনী, রেল স্টেশন যেখানে একটু স্থান পাচ্ছে সেখানেই একটুকরাে চট বিছিয়ে আর একটুকরাে কাথা হিসেবে ব্যবহার করে শীত ও মশার ব্যাটেলিয়নের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করছে এমন অভাগা মানুষও কয়েক লক্ষ হবে এদেশে। জীর্ণ কাপড়ে লজ্জা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করে শহরের ময়লার ডিপােগুলােতে অন্নসংস্থানের উপরকণ খুঁজে বেড়াচ্ছে এমন টোকাইও এদেশের শহরগুলিতে লক্ষের সীমা ছাড়িয়ে যাবে। সকলের একটাই দাবী, আমরা অন্ন চাই, আমরা বস্ত্র চাই, আমরা মানুষের মত বাঁচতে চাই। দেশের সর্বত্র চলছে এই হাহাকার। অথচ এই হতভাগা মানুষগুলাের প্রতিনিধি সেজে বসা সরকার তাদের পেটের চাহিদা-মৌলিক অধিকার পূরণ না করে তাদের ১০০ কোটি টাকা খরচ করে আয়ােজন করেছে সাফ গেমস। এই গেমস আয়ােজনের পেছনে অজুহাত দেখানাে হয়েছে দেশের মর্যাদার।
এত টাকা খরচ করে এই গেমস আয়ােজন করলেই নাকি আমাদের মান-সম্মান বিশ্ব দরবারে কয়েকশ’ মাইল বৃদ্ধি পাবে! বলি, আমরা কি সব বােকার স্বর্গে বাস করছি হে সরকার বাহাদুর? এই রাজধানীর শহরে হাজার হাজার ভুখা-নাঙ্গা বস্তিবাসী মানুষ আমাদের মর্যাদাকে কতখানি বৃদ্ধি করছে? উদোম শরীরে ফুটপাতে শুয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ টোকাইর অস্তিত্ব বিশ্বের দরবারে আমাদের কি পরিচয় দিয়েছে? যে দেশের কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় অতিষ্ঠ, বিশ্ববাসী যাদের দরিদ্রতম দেশ বলে এক নামে চেনে, সে দেশের সরকারের ১০০ কোটি টাকা (আড়াই কোটি ডলার) ব্যয় করে রঙ্গ নীলা করার সুমতী হল কিভাবে? পেটের সমস্যা সমাধান করে চিত্ত বিনােদন কি এতই জরুরী ছিল? এই বিপুল ব্যয়ে গুটিকতেক পদক আমাদের ক্ষুধা কতখানি কমিয়েছে, কতজন অভাগার অভাব মিটেছে, কতজনের বেকারত্ব ঘুচানাে গেছে? দেশের সম্মান বৃদ্ধি পায় পদক লাভে না জ্ঞানে- বিজ্ঞানে, শিক্ষায়, কারিগরি বিদ্যায় ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারলে? যদি পদক লাভই দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় তবে সবগুলি কলকারখানা বন্ধ করে, ব্যবসা-বাণিজ্য স্থগিত করে, কৃষি উৎপাদন বাদ দিয়ে শুধু পদক তৈরি করে জনগণকে বিলালে কেমন হয়? প্রতিটি লােকের হাতে এক একটা পদক তুলে দিয়ে বল্লে কেন হয় এই নেও, এটা তােমাদের সকল অভাব-অভিযােগ পূরণ করার বস্তু। গরীবদের সমস্যা সমাধান না করে তাদের অর্থে ফুর্তি- ফার্তির আয়ােজন করা, তা দেখে যদি গরীব জনগণকে হা হুতাশই করতে হয় তবে রাষ্ট্রের পরিচালকদের এহেন চিত্তবিনােদন সে যুগের রাজা বাদশাহদের নিষ্ঠুর ও রক্তাক্ত ক্রীড়া- কৌতুক অনুষ্ঠানের থেকে পার্থক্য থাকে কই?
এই গেমসের শুরুতে ও শেষে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েদের দ্বারা বিভিন্ন প্রকার কলা-কৌশল দেখানাে হয়েছে, যাকে অনুষ্ঠানের উদ্দ্যোক্তা মান্যবর মন্ত্রী সাহেব নির্দোষ আনন্দ বলে ফতােয়া দিয়েছেন। জানি না তিনি এই ফতােয়া কোথেকে আহরণ করেছেন। উনি একজন মুসলমানের সন্তান হয়েও জানেন না যে, ইসলামে মহিলাদের পরপুরুষদের সামনে চলাফেরার কতগুলি বিধি বিধান রয়েছে? তাছাড়া মহিলারা ভােগ্যপণ্যের ন্যায় রং-ঢঙ্গে রঙ্গীন হয়ে, ঝলমলে পােষাক পরে হাজার হাজার পুরুষের চক্ষু, মনােরঞ্জনে ব্যবহৃত হােক ইসলামে এমন কোন অনুমতি নেই। এছাড়া গেমসের বিভিন্ন ইভেন্টে বিশেষ করে মহিলাদের যে বিশেষ সংক্ষিপ্ত পােষাক পরিয়ে ছেড়েছেন তার কাছে ন্যাকেট ছবিও হার মানে। অন্তত শালীন পােষাক পরে খেলায় অংশ নেওয়া কি ভদ্রতার পক্ষে ক্ষতিকর, নাকি তাতে খেলাধুলার পবিত্রতা ক্ষুন্ন হয়? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাহেবা কি জানেন না যে, ইসলাম মানুষকে দৈনন্দিন কাজের প্রতিটির নিখুঁত এবং সুন্দর বিধান দিয়েছেন। এর বাইরে মানুষ যাই করতে যাবে তা হারাম। অথচ তিনি বিপুল অর্থ অপচয় করে রাজধানীর স্কুল কলেজের ক্লাসে ক্লাসে লােক পাঠিয়ে গরু খোজার ন্যায় সুন্দরী ছাত্রীদের খুঁজে জড়াে করেছেন, তাদের দিয়ে বিভিন্ন শারিরীক কসরৎ প্রদর্শন করে হাজার হাজার দেশী-বিদেশী পুরুষদের চোখের ক্ষুধা মিটিয়েছেন। কোন আইনে ক্রীড়া মন্ত্রী এটা নির্দোষ আনন্দদান বললেন তা বােধগম্য নয়।
মধ্যযুগের খেয়ালী মােঘল শাসক শাহজাহান রাজকোষের অর্থ উজাড় করে নির্মাণ করিয়েছিলেন তাজমহল। এর প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। স্পেনের শাসক আব্দুর রহমান জনগণের চাহিদার প্রতি খেয়াল না রেখে বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মাণ করিয়েছিলেন বিশ্বের বিস্ময়কর আল- হামরা প্রাসাদ। অবেশেষে তার মৃত্যুর সাথে সাথেই স্পেনে দেখা দেয় বিভিন্ন অভাব অনটন, বিশৃঙ্খলা, বিদ্রোহ। কিন্তু আমাদের দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ লেগেই আছে। তাই আমরা চাই না আমাদের রাষ্ট্রনায়কগণও আব্দুর রহমান, শাহজাহানের পদাঙ্ক অনুসরণ করুক। আমরা চাই এদেশের একটা মানুষও অভাবী, অসুখী থাকা পর্যন্ত একটা পয়সাও যেন কারাে বিলাসিতা, চিত্তবিনােদনে ব্যয় না হােক। আমরা চাই চিত্ত বিনােদন অপেক্ষা দারিদ্র্য দূরীকরণকে অগ্রাধিকার দেয়া হােক। এদেশের সিংহভাগ মানুষ যখন দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত, তখন তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থব্যয় করে গুটিকয়েক মানুষের চিত্তবিনােদন করা জঘন্যতম অপচয়। অপচয়কারী অবশ্যই শয়তানের সঙ্গী। দেশের মানুষের দুঃখ দুর্দশা সমাধান করার নাম নেই অথচ তাদের অর্থে কয়েকজন মানুষ বিলাসিতা করবে এটা দরিদ্র মানুষের প্রতি স্পষ্ট জুলুম। তাদের মৌলিক দাবীর প্রতি উদাসীনতার নামান্তর। জনগণের কল্যাণে নিয়ােজিত সরকার জনগণের সঙ্গে এহেন প্রতারণা করে অনাধিকার চর্চাই করেছেন। নাম লিখিয়েছেন জালিমদের খাতায়।
ইসলামে বিশ্বাসী কোন মুসলমান এটা মেনে নিতে পারে না। ইসলামের সাথে শয়তানিয়াতের কোন আপােষ নেই। শয়তানী শক্তি, বাতিল শক্তি মােনাফেকী শক্তির আঘাতে আঘাতে মুমিন মুসলমানের শরীরের তাজা রক্ত পাদুকায় জমা হবে, শূলি কাষ্ঠে ঝুলিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যুর দেশে পৌঁছে দেয়া হবে, তবু কোন আপােষ করবে না মুসলমানরা। দেশের সরকার জনগণের সম্পদ যথেচ্ছা অপচয় করে বিনােদনের নামে বিলাসিতাকে উস্কে দেবে যা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান নাগরিকের প্রাণের ধর্ম ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। তাদের সম্পদ এভাবে অপচয় করার, তাদের ধর্মীয় বিধানকে নগ্নভাবে উপেক্ষা করার কৈফিয়ত চাওয়ার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের রয়েছে। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাঠগড়ায় দাড়াতে সরকার বাধ্য। এই সরকার নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করে, সুযােগ পেলেই হজ্জ, ওমরা পালন করতে ছুটে যায়, জাকজমকের সাথে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঈদ উৎসব পালন করতেও তারা কম যান না। অথচ তারাই বিনােদনের নামে রাষ্ট্রীয় ভাবে জুয়ার আয়ােজন করছেন, অশ্লীলতা ও নগ্নতাকে উস্কে দিয়েছেন, অর্থ অপচয়ে নিজেদের চ্যাম্পিয়ান প্রমাণ করেছেন, যা সবই ইসলামে নিষিদ্ধ। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের এই বিকৃতি সাধন কেন? উনারা ব্যক্তি জীবনে ধর্মীয় বিধান পালন করুন বা না করুন সে আলাদা কথা। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের এই অবমাননা করার তাদের কোনই অধিকার নেই। সুতরাং এহেন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রােধে আমাদের অধিকার এখুনি প্রয়ােগ করতে হবে। সরকারকে পরিস্কার জানিয়ে দিতে হবে; আমরা অপচয়কারী ইসলামের বিকৃতি সাধনকারী সরকার দেখতে চাই না। আমরা চাই জনকল্যাণকামী, জনগণের দুঃখ-কষ্ট দূরীকরণে আন্তরিক সেবা মনােবৃত্তির সরকার। কোথায় সেই জনতার প্রাণ প্রিয় নকীব?
═──────────────═