মুরতাদ হত্যার বিধান
উস্তাদ আহমাদ নাবিল হাফিজাহুল্লাহ
*********************
মুরতাদ হত্যার বিধান – ১ম পর্ব
মুরতাদ হত্যা কি হুদূদের অন্তর্ভুক্ত?!!!
২০১০ থেকে ২০১৩। সাইবার জগতে চলছিল কুলাঙ্গার নাস্তিকদের অশ্লীল লাফালাফি। তাদের বিষে মাখা জঘন্য তীর একের পর এক ছুটছিল আমাদের প্রাণের স্পন্দনের ইজ্জতের দিকে। আমাদের উম্মাহাতের (উম্মাহাতুল মুমিনিন) সম্মানে বিঁধতে ছিল তাদের ধারালো খঞ্জর। এত অশ্লীল ভাষায়, এত জঘন্য শব্দে আক্রমণ করছিল যা ইতিহাসকে বাকরুদ্ধ করেছিল।
জাগ্রত মুমিনদের হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছিল। চোখগুলো অশ্রু বর্ষণ করছিল। তারা ব্যথায় ছটফট করছিল। তখন আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জাত এক দল মুমিনকে নির্বাচন করলেন। যারা মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ ও আবদুল্লাহ বিন আতিক রাদিঃ এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। যাদের হাত দিয়ে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা শাতিমদেরকে শাস্তি প্রদান করেন। মুমিনদের হৃদয়গুলোকে প্রশান্তি দান করেন। তাদের বিষদাঁত অনেকটা ভেঙ্গে যায়। তারা সামনে ২টি পথ দেখতে থাকে “হয়ত দেশ ছেঁড়ে পলায়ন নয়ত চাপাতির কোপে মরণ”।
কিন্তু আফসোস! শত আফসোস! শাসকের তরবারির ভয়ে বা প্রবৃত্তের তাড়নায় অথবা দুনিয়াবি কিছু আশায়, এই বরকতময় আমালের বিরুদ্ধে এক দল আলেম অবস্থান নিতে থাকে। সংশয় ছড়াতে থাকে। নাউজুবিল্লাহ! এই মহান ইবাদাতকে সন্ত্রাস পর্যন্ত বলতে তাদের বুক একটুও কাঁপে না। মুখে একটুও বাঁধে না। কষ্টটা অনেক বেড়ে যায় যখন ঐ ব্যক্তিদের মাঝে এমন আলেমদেরকেও পাওয়া যায়, যাদেরকে উম্মত মুক্তার দানা মনে করেন।
তারা নিজেদের মতকে প্রমাণ করার জন্য কিছু খোঁড়া দলীল-যুক্তি পেশ করতে থাকে। তাদের দলীল বা যুক্তি হচ্ছে এই ---
১. মুরতাদ হত্যা হুদুদের অন্তর্ভুক্ত আর হুদুদের জন্য রয়েছে অনেক শর্ত।
২. মুরতাদ হত্যার দায়িত্ব শাসকের। শাসকের অনুমতি ওয়াজিব। অনুমতি ছাড়া হত্যা হারাম।
৩. তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে। তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে। এর আগে হত্যা করা জায়েজ হবে না।
আমরা ইনশাআল্লাহ্ ধাপে ধাপে তাদের যুক্তিগুলো খণ্ডন করব। আল্লাহ্ তায়ালা যদি তাউফিক দান করেন।
আমাদের আজকের আলোচনা - মুরতাদ হত্যা কি হুদূদের অন্তর্ভুক্ত?!!!
প্রচলিত একটা ভুল হচ্ছে, মুরতাদ হত্যাকে হুদূদের অন্তর্ভুক্ত করা। আর হুদূদের সকল হুকুম তার মাঝে প্রয়োগ করা। অথচ, এটা হুদূদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত নয়। আর এটার হুকুম আর হুদূদের হুকুমও এক নয়। বরং উভয়ের হুকুমের অনেক ক্ষেত্রে পার্থক্য বিদ্যমান।
দলীল-১
ফিকহে হানাফীর বিশিষ্ট ফকীহ আল্লাম কাসানী রহঃ হুদুদের সংখ্যার ব্যাপারে বলেনঃ
فنقول الحدود خمسة انواع حد السرقة وحد الزنا وحد
الشرب وحد السكر وحد القذف-
আমাদের মত হচ্ছেঃ- হুদূদ পাঁচ প্রকারঃ-
১। চুরির হদ।
২। জেনার হদ।
৩। মদ পানের হদ।
৪। মাতালের হদ।
৫। কযফ এর হদ।
(কযফ-কারো ব্যাপারে জেনার অভিযোগ তোলা, কিন্তু তা প্রমাণ করতে না পারা)
(বাদায়েউস সানায়ে’, অধ্যায়ঃ কিতাবুল হুদূদ)
দলীল-২
হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ ফকীহ আল্লাম ইবনে নুজাম রহঃ বলেন---
فكان حكمها الاصلي الانزجار عما يتضرر به العباد وصيانة دار الاسلام عن الفساد، ففي حد الزنا صيانة الانساب، وفي حد السرقة صيانة الاموال، وفي حد الشرب صيانة العقول، وفي حد القذف صيانة الاعراض فالحدود أربعة، وما في البدائع من أنها خمسة وجعل الخامس حد السكر
فلا حاجة إليه لان حد السكر هو حد الشرب كمية وكيفية وإن اختلف السبب
হূদুদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বান্দাদেরকে তাদের ক্ষতিকারক বিষয়গুলো থেকে বিরত রাখা। দারুল ইসলামকে ফাসাদ থেকে রক্ষা করা।
জেনার হদের মধ্যে নিহিত আছে, বংশের সংরক্ষণ। চুরির হদের মধ্যে রয়েছে মালের সংরক্ষণ। মদ পানের হদের মধ্যে আছে আকল-বিবেকের সংরক্ষণ। আর কযফের হদের মধ্যে ইজ্জতের সংরক্ষণ। সুতারাং হুদুদ চারটি। আর বাদায়েউস সানায়ে এর মধ্যে আছে যে, হুদূদ পাঁচটি, পাঁচ নাম্বারটি হচ্ছে মাতালের হদ। এর কোন প্রয়োজন নেই। কারণ (শাস্তির) পর্যায় ও অবস্থার দিক থেকে মদপানের যে হদ, মাতালের একই হদ। যদিও বা এর কারণ ভিন্ন হয়। (আল-বাহরুর রায়েক, অধ্যায়ঃ কিতাবুল হুদূদ)
দলীল-৩
হাম্বালি মাজহাবের বিশিষ্ট ফকীহ শায়েখ মানসূর আল-বাহুতি রহঃ বলেন ---
----قتل المرتد لكفره لا حدا ولايجوز أخذ فداء عنه أي عن المرتد بل يقتل بعد الاستتابة لما تقدم من قوله (ص): من بدل دينه فاقتلوه -كشاف القناع-
মুরতাদ কে হত্যা করা হবে তার কুফরের কারণে। হদ হিসাবে নয়। মুরতাদ থেকে ফিদিয়া নেয়াও জায়েজ নেই। বরং ইস্তেতাবের (তওবার সুযোগ দেয়া) পর তাকে হত্যা করা হবে যার কারণ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেন, যে তার দ্বীনকে পরিবর্তন করে তোমরা তাকে হত্যা কর। (কাশশাফুল কেনা’য়, অধ্যায়ঃ মান ইরতাদ্দা আন দীনিল ইসলাম)
দলীল-৪
সমকালীন আরব সালাফী আলেমগণও একই মত ব্যক্ত করেছেন, মুরতাদকে হত্যা হুদূদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
শায়েখ সালেহ আল-উসাইমীন রহঃ বলেন –
الحد إذا بلغ الإمام لا يستتاب صاحبه بل يقتل بكل حال . أما الكفر، فإنه يستتاب صاحبه وهذا هو الفرق بين الحد، وبين عقوبة الكفر وبهذا نعرف خطأ من أدخل حكم المرتد في الحدود وذكروا من الحدود قتل الردة فقتل المرتد ليس من الحدود- -شرح كتاب التوحيد-
হদের ব্যাপার যখন ইমাম পর্যন্ত পৌঁছবে তখন অপরাধী থেকে আর তাওবা গ্রহণ করা হবেনা বরং সর্বাবস্থায় তাকে হত্যা করা হবে। আর কুফুরের ক্ষেত্রে তাওবা চাওয়া হবে। হদ ও কুফরের শাস্তির মাঝে এটাই পার্থক্য। এর থেকে ঐ ব্যক্তিদের ভুল বুঝে আসে যারা মুরতাদের হুকুমকে হুদুদের অন্তর্ভুক্ত করে থাকে, এবং রিদ্দার কারণে হত্যাকে হুদূদের মধ্য থেকে উল্লেখ করে। অথচ মুরতাদকে হত্যা হুদুদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (শরহু কিতাবিত তাউহীদ)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমাদের সামনে স্পষ্ট হল, মুরতাদকে হত্যা হুদূদের অন্তর্ভুক্ত নয়। এটাই উম্মতের গ্রহণযোগ্য ফুকাহাদের মত। আজ এই পর্যন্ত। আমরা ইনশাআল্লাহ্ সামনে বাকি ২টি সংশয় নিয়ে আলোচনা করব।
মুরতাদ হত্যার বিধান – ২য় পর্ব
ইমামের অনুমতি, ইস্তেতাব ও তিনদিন অবকাশের বিধান
গত মজলিশে আমরা আলোচনা করে ছিলাম- মুরতাদ হত্যা হুদূদের অন্তর্ভুক্ত কি না। সঠিক মত কোনটি। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে- ইমামের অনুমতি, ইস্তেতাব বা ইসলাম পেশ করে তাওবা করতে আহ্বান করা ও তিনদিন অবকাশ দেবার বিধান”।
ইমামের অমুমতি ছাড়া হত্যা কি হারাম?
এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই, অন্যান্য বিধান বাস্তবায়ন করা যেমন মুসলিমদের খলীফা অথবা সুলতানের দায়িত্ব। একই ভাবে মুরতাদদের বিধান বাস্তবায়ন করাও তারই দায়িত্ব। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেউ যদি তাদের অনুমতি নেয়া ছাড়াই হত্যা করে তা কি নাজায়েজ বা হারাম হবে?
ফিকহে হানাফীর নির্ভরযোগ্য প্রায় সব কিতাবে এই মাসআলা উল্লেখ করা হয়েছে ---
فإن قتله قاتل قبل عرض الإسلام عليه كره ولا شيء على القاتل ومعنى الكراهية ههنا ترك المستحب وانتفاء الضمان لأن الكفر مبيح للقتل والعرض بعد بلوغ الدعوة غير واجب
মুরতাদের সামনে ইসলাম পেশ করার পূর্বেই যে কোন ব্যক্তি যদি মুরতাদকে হত্যা করে ফেলে তাহলে তা মাকরূহ বা অপছন্দনীয় হবে। হত্যাকারীর উপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না। আর এখানে মাকরূহ হবার অর্থ হচ্ছে- মুস্তাহাব ছেঁড়ে দেয়া এবং হত্যাকারীর উপর রক্তপণ আবশ্যক না হওয়া। কেননা কুফরেই হত্যার বৈধতা প্রদান করে। আর দাওয়াত পৌঁছার পর পুনরায় ইসলাম পেশ ওয়াজিব নয়। (দেখুনঃ হেদায়া, অধ্যায়ঃ আহকামুল মুরাতাদ্দীন। আল-হিন্দিয়্যা, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার, বাবু আহকামিল মুরাতাদ্দীন। ই’লাউস সুনান। ফাতহুল কাদীর।আল-বাহরুর রায়েক)
বিশিষ্ট ফকীহ আল্লামা কাজী খান বলেন –
وَرِدَّةُ الرَّجُلِ تُبْطِلُ عِصْمَةَ نَفْسِهِ حَتَّى لَوْ قَتَلَهُ الْقَاتِلُ بِغَيْرِ أَمْرِ الْقَاضِي عَمْدًا أَوْ خَطَأً أَوْ بِغَيْرِ أَمْرِ السُّلْطَانِ أَوَأَتْلَفَ عُضْوًا مِنْ أَعْضَائِهِ لَا شَيْءَ عَلَيْه
কোন ব্যক্তির রিদ্দাহ তার জানের নিরাপত্তার অবসান ঘটায়। এমনকি সুলতান বা কাজীর অনুমতি ছাড়াই কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বা ভুল করে তাকে হত্যা করে ফেলে অথবা তার কোন অঙ্গহানি করে তার উপর কোন কিছুই আবশ্যক হবে না। (তাবই-নুল হাকায়েক, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার, বাবুল মুরাতাদ্দীন)
এটাই মুফতা বি-হী মত, এই মতের উপরেই হানাফি মাযহাবের ফাতওয়া।
হাম্বলি মাযহাবের ফকীহ শায়েখ মানসূর বাহুতি রহঃ বলেনঃ-
وإن قتله أي المرتد (غيره) أي غير الامام ونائبه بلا إذنه أساء وعزر لافتياته على الامام أو نائبه ولم يضمن القاتل المرتد لانه محل غير معصوم سواء قتله قبل الاستتابة أو بعدها لانه مهدر الدم في الجملة وردته مبيحة لدمه وهي موجودة قبل الاستتابة كما هي موجودة بعدها إلا أن يلحق المرتد بدار حرب فلكل أحد قتله بلا استتابة وأخذ ما معه من مال لانه صار حربيا
ইমাম অথবা ইমামের নায়েব ছাড়া অন্য কেউ যদি অমুমতি ছাড়াই মুরতাদকে হত্যা করে তা মন্দ কাজ হবে। ইমাম বা তার নায়েবের অবাধ্যতার কারণে তাকে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু মুরতাদের হত্যাকারী থেকে রক্তপণ নেয়া হবে না। কেননা মুরতাদের রক্ত সংরক্ষিত নয়। চাই তাকে তাওবার সুযোগ দেবার আগে হত্যা করুক অথবা পরে। কেননা সর্বাবস্থায় তার রক্তের কোন মূল্য নেই। তার রিদ্দা তার রক্তের বৈধতা দিয়েছে। আর এই বৈধতা যেভাবে ইস্তেতাবের (তাওবার সুযোগ) পরে উপস্থিত আগেও উপস্থিত। আর যদি মুরতাদ দারুল হরবে প্রবেশ করে, ইস্তেতাব ছাড়াই যে কারো জন্য অনুমোদিত, তাকে হত্যা করে ফেলা এবং তার কাছে যে মাল আছে সব নিয়ে নেয়া কেননা এখন সে হারবিতে পরিণত হয়েছে।
হত্যার পূর্বে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান ও তিন দিন অবকাশের বিধানঃ
ফিকহে হানাফী অনুস্বারে, মুরতাদকে হত্যার পূর্বে দাওয়াত দেয়া ও ইসলাম গ্রহণের আহ্বান করা মুস্তাহাব। ওয়াজিব নয়। কেউ না করলে কোন গোনাহ হবে না। আর এই দাওয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সে যদি কোন সংশয়ের কারণে ইসলাম থেকে সরে যায় তা দূর করা। এর পর যদি সে ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তো ভাল কথা আর না করলে তাকে হত্যা করতে হবে।
ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ অধিকাংশ কিতাবে মাসআলাটি বর্ণীত হয়েছে ----
وَإِذَا ارْتَدَّ الْمُسْلِمُ عَنْ الْإِسْلَامِ وَالْعِيَاذُ بِاَللَّهِ عُرِضَ عَلَيْهِ الْإِسْلَامُ فَإِنْ كَانَتْ لَهُ شُبْهَةٌ كُشِفَتْ لَهُ لِأَنَّ الْعَرْضَ عَلَى مَا قَالُوا غَيْرُ وَاجِبٍ لِأَنَّ الدَّعْوَةَ قَدْ بَلَغَتْهُ كَذَا فِي الْهِدَايَةِ
যখন কোন মুসলিম মুরতাদ হয়ে যাবে (আল্লাহ্র পানাহ) তার সামনে ইসলাম পেশ করা হবে, যদি তার কোন সংশয় থাকে দূর করা হবে, আর এই ইসলাম পেশ করতে যে বলা হয়েছে, তা ওয়াজিব নয় কেননা তার কাছে দাওয়াত পৌঁছে গেছে। এমনটি হিদায়ার মধ্যেও রয়েছে। (আল-জাউহারাতুন নাইয়্যেরাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার)
একই মাসআলা ফিকহে হানাফীর অন্যান্য কিতাবে দেখুনঃ হিদায়া, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার, বাবু আহকামিল মুরতাদ্দীন। ফাতহুল কাদীর, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার, বাবু আহকামিল মুরতাদ্দীন। শরহুল বিকায়া, অধ্যায়ঃ আহকামুল মুরতাদ।
ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আবু ইয়ূসুফ রহঃ এর মতে মুরতাদকে তাওবার জন্য তিনদিন অবকাশ দেয়া মুস্তাহাব। আর ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ এর মতে যদি সে অবকাশ চায় তাহলে অবকাশ দিতে হবে অন্যথায় সাথে সাথেই তাকে হত্যা করতে হবে।
শামসুল আয়িম্মাহ ইমাম সারাখসী রহঃ বলেনঃ
عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ وَأَبِي يُوسُفَ رَحِمَهُمَا اللَّهُ تَعَالَى أَنَّهُ يُسْتَحَبُّ لِلْإِمَامِ أَنْ يُؤَجِّلَهُ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ طَلَبَ ذَلِكَ أَوْ لَمْ يَطْلُبْ
ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম আবূ ইয়ূসুফ রহঃ থেকে বর্ণীত আছে, ইমামের জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে মুরতাদকে তিনদিন অবকাশ দেয়া, সে অবকাশ চাক বা না চাক। (আল-মাবসূত, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার, বাবুল মুরতাদ্দীন)
ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ বলেন-
وإذا ارتد المسلم عن الإسلام عرض عليه الإسلام، فإن أسلم وإلا قتل مكانه، إلا أن يطلب أن يؤجله، فإن طلب ذلك أجّل ثلاثة أيام
যখন মুসলিম ইসলাম ছেঁড়ে মুরতাদ হবে তার সামনে ইসলাম পেশ করা হবে। যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তো ঠিক আছে। অন্যথায় তাকে সেখানেই হত্যা করা হবে। তবে যদি সে অবকাশ চায় তাকে তিন দিনের অবকাশ দেয়া হবে। (আস-সিয়ারুল কাবীর)
পূর্বের আলোচনার সারমর্ম
-
মুরতাদ হত্যা হুদূদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
-
সাধারণ মুরতাদকে ইমামের অনুমতি ছাড়া হত্যা করা মাকরূহ।
-
যে কেউ হত্যা করে হত্যাকারীর উপর কোন রক্তপণ আসবে না।
-
হত্যার পূর্বে ইস্তেতাব (তওবা করতে বলা) মুস্তাহাব।
-
তিনদিন অবকাশ দেয়া মুস্তাহাব।
বিঃ দ্রঃ আমাদের উপরোক্ত সকল আলোচনা হচ্ছে الردة المجردة (আর-রিদ্দাতুল মুজাররাদাহ) বা স্বাভাবিক রিদ্দার ব্যাপারে। আমরা ইনশাআল্লাহ্ সামনে الردة المغلظة (আর-রিদ্দাতুল মুগাল্লাজাহ) নিয়ে আলোচনা করব। আর-রিদ্দাতুল মুগাল্লাজাহ হচ্ছে, মুরতাদ শুধু মাত্র দ্বীন থেকে বের হবার অপরাধেই অপরাধী থাকেনা বরং সাথে আরও কোন গুরুতর অপরাধে লিপ্ত হয়। যেমনঃ আল্লাহ্ তায়ালা অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের শানে খারাপ বাক্য উচ্চারণ। দ্বীন নিয়ে ঠাট্টা। মুসলিমদেরকে হত্যা করা। দারুল হারবের কাফেরদের সাথে মিলিত হওয়া।
---------------------------------