JustPaste.it

প্রধান রচনা

 

জাতীয় নেতৃত্ব ও আলিম সমাজ

আবূ তাহের রহমানী

=======================================================================

 

        মানব জাতির হেদায়াত ও মানুষের ইহ পারলৌকিক মুক্তির সন্ধান দেয়াই আলেম সমাজের দায়িত্ব। শুধুমাত্র ধর্ম ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্যেই আলেমদের দায়িত্ব ও কর্মকে সীমাবদ্ধ করা এবং ধর্মকে পার্থিব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করা এটা বস্তুতঃ ইহুদী খৃষ্টানদের আদর্শ এবং কিছু লোকের সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। ইসলাম তো এমন এক সার্বজনীন ও শাশ্বত জীবন ব্যবস্থা, যাতে বৈরাগ্য ও মানুষের সহজাত প্রকৃতি বিরোধী সংকীর্ণতার কোন স্থান নেই। ইসলামই মানুষকে তাঁর সহজ জীবন ধারা এবং প্রাকৃতিক ও মানবিক চাহিদার পূর্ণাঙ্গ নিশ্চয়তা দিয়েছে।

 

        পক্ষান্তরে পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মসমূহ মানুষকে বিভিন্নমুখী ধর্মীয় গোড়ামি ও সংকীর্ণতার জালে আবদ্ধ করে রেখেছে। যেমন খৃষ্ট ধর্মে ধর্মজাযকদের জন্য বিবাহ নিষিদ্ধ। হিন্দু সাধু সন্যাসীরাও বৈবাহিক জীবন পরিহার করে চলে। উল্লেখিত ধর্মসমূহে ধর্মী আচার অনুষ্ঠান ও ক্রিয়া কর্ম শুধু মাত্র তারাই পালন-পরিচালনা করবে, পার্থিব জগতের সাথে যাদের কোন সম্পর্ক নেই। যেমন পাদ্রী ধর্ম জাযকরাই কেবল উপাসনা করাতে পারবে, অনুরূপ হিন্দু ধর্মের ব্রাহ্মণ পুরোহিতরাই এ অধিকার সংরক্ষণ করে। পক্ষান্তরে ইসলাম ধর্মে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানগুলো যে কোন যোগ্য মুসলমানই পরিচালনা করতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্পষ্ট ঘোষণা “তোমরা যে কোন মুত্তাকী ও ফাসেকের পিছনে নামাজ আদায় করতে পার।” একমাত্র ইসলাম ধর্মই বংশ, বর্ণ, গোত্র ও ধর্মীয় গোড়ামী ও কুসংস্কারে আকন্ঠ নিমজ্জিত বনী আদমকে মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের শীর্ষে উপনীত করেছে। এ জন্যই মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব প্রদান ও ইমামাতের জন্য মুসলমান হওয়াই যথেষ্ট।

 

        পার্থিব জীবন ত্যাগ করা ও তার প্রতি নিরাশক্ত হওয়ার কোন গুরুত্ব ইসলামে নেই। ইসলামের মহান লক্ষ্য হলো, মানুষের সংশোধন করা, মহৎ আদর্শ ও উন্নত চরিত্র মাধুরী দিয়ে মানুষকে প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে তেলা। তাই যখনই শাসক শ্রেণী দ্বীন বা শরীয়াত বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তখনই তাদের সাথে ইসলামের ধারক বাহক আলেম সমাজের বিরোধ ও সংঘাত অনিবার্য হয়ে দাড়ায়।

 

        ইতিহাসের পাঠক মাত্রই জানা থাকার কথা, যুগে যুগে আলিম সমাজ যে কোন ইসলাম বিরোধী ও খোদাদ্রোহী শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করতে দ্বিধা করেননি। সাধারণ জনমত সর্বদা আলেমদের পক্ষে থাকায় বিশাল শক্তিধর ও পরাক্রমশালী শাসকও তাদের সামনে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে। জালেম শাসকের সামনে সত্যকে তুলে ধরার সৎ সাহস কেবল আলিমদের বুকেই আছে, ছিলো এবং থাকবে। শাসক শ্রেণীর যে কোন অপরাধের বিরোদ্ধে তাঁরা সদা সোচ্চার থাকেন। আলিমদের এ জিহাদী ভূমিকা কেবল শাসক শ্রেণীর সাথে সীমাবদ্ধ নয়। বরং জীবন ও সমাজ থেকেও অন্যায় অনাচার অধর্ম ও পাশবিকতা নির্মূলেও তাদের রয়েছে প্রধানতম ভূমিকা।

 

        ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যখনই কোথাও জুলুম, নির্যাতন, স্বৈরাচার ও একনায়কতন্ত্র মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, হক্কানী ওলামায়ে কেরাম সূচনা লগ্নেই তা সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করেছেন। ইমাম হোসাইন (রাঃ) স্বীয় জীবন উৎসর্গ করলো তবুও স্বৈরাচারী ইয়াযিদকে খলিফাতুল মুসলেমীন' রূপে মেনে নিলেন না। ইমাম আবু হানিফা (রোঃ) খলিফা আবু জাফর মনসুরের পেশকৃত প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণ না করে হাঁসিমুখে কারাবরণ করলেন। মুতাযিলা ফিতনার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার তথাকথিত অপরাধে সমকালীন শাসক চক্রের পক্ষ থেকে সত্যাশ্রয়ী আলিমদের উপর নেমে এলো জেল জুলুম ফাঁসি ও বিভিন্নমুখী নির্যাতন । কিন্তু তাঁরা পবিত্র কোরআনকে “মাখলুক” বলে স্বীকার করলেন না। সত্যের পক্ষে নিটোল থাকার অপরাধে ঈমাম আহমদ হাম্বল (রঃ) সমকালীন শাসকদের কোপানলে পড়ে কারাবন্দী হয়ে দুঃসহ নির্যাতনের স্বীকার হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মিথ্যা নবুয়্যতের দাবীদার ভণ্ড মির্জা গোলাম কাদিয়ানীর ফিতনা মুকাবিলায় আলেম সমাজই সর্বশক্তি নিয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হন। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তারা সফলও হয়েছেন। কাদিয়ানী ফিৎনা সম্পূর্ণ নির্মূল করতে আলেম সমাজ আজও তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। মোটকথা, তাওহীদ ও ঈমান রক্ষায় এবং ইসলামের মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠায় সকল যুগে আলিম সমাজ তাদের দায়িত্ব যথার্থ পালন করেছেন।

 

        বর্তমানে দেশ শাসন ও রাষ্ট্র যন্ত্র পরিচালনায় আলিমদের সরাসরি কোন অংশীদারিত্ব না থাকলেও আলিমরাই পারে আদর্শ জননেতা ও সংস্কারকের ভূমিকা পালন করতে। মুসলিম শাসনামলে কোন প্রবল শক্তিধর শাসকেরও সাধ্য ছিল না কোন নেতৃস্থানীয় আলিমের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করার। কারণ আম্বিয়া আলাইহিমুস্‌ সালামের যথার্থ উত্তরসূরী হওয়ার সুবাদে প্রতিটি মুলিমের হৃদয় ও আত্মার ওপর রয়েছে আলিমদের অদৃশ্য প্রভাব। তাই বলা যায়, আনুষ্ঠানিক ধর্মীয় বিষয় থেকে নিয়ে মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলিমদের রয়েছে প্রত্যক্ষ প্রভাব। নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি  তাদেরই হাতে তাঁরাই হলেন জাতির নিয়ামক শক্তি।

 

        তাই পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলে মানব রচিত খোদাদ্রোহী মতবাদের ভিত্তিতে বিপ্লব সংগঠিত হলে সেখানেই বিপ্লবীদের হাতে হত্যা ও নিধনযজ্ঞের প্রথম শিকার আম্বিয়া আলাইহিস সালামের মহান উত্তরসূরী এই আলিম সমাজ। আজকের ইসলামী আফগানিস্তানের পবিত্র মাটি মাত্র কয়েক বছর আগে খোদাদ্রোহী কম্যুনিস্টদের হাতে রঞ্জিত হয়েছিল অগনিত আলেমের পবিত্র খুনে। অথচ আজ সেই নির্যাতিত আলিমরাই জালিমের বিরুদ্ধে গোটা আফগানিস্তানে প্রজ্বলিত করেন জিহাদের অনির্বাণ শিখা। সমগ্র বিশ্ববাসীকে প্রমাণ করিয়ে দেখালো, শাহাদাত পাগল মুসলমানেরা যখন গর্জে ওঠে তখন পৃথিবীর কোন পরাশক্তিই তাদের পরাজিত করতে পারে না। শুধু মাত্র মাসআলা মাসায়েল ও ফতোয়া দান করাই আলিমদের দায়িত্ব এমন ধারণা যারা পোষণ করেন, তারা প্রকৃত অর্থে অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তির শিকার। কারণ ইসলামী আদর্শের মূর্ত প্রতীক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এ মানব কাফেলা যে কোন বাতিল ও তাগুতী শক্তির বিরুদ্ধে থাকেন সদা সোচ্চার। দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রকে ইসলামের মহান আদর্শে গড়ে তোলার মহা সংগ্রামে থাকেন সদা ব্যাপৃত।

 

        তবে সকল যুগেই এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী ও সুযোগ সন্ধানী তথাকথিত আলিমের সন্ধান পাওয়া যায়। স্বার্থান্ধতা হিনমন্যতা ও কাপুরুষত্বের শিকার এই শ্রেণীটি বস্তুতঃ আলিম নামের কলঙ্ক বই কি। তাই বলে সমষ্টিগত ভাবে কোন কালেই মুসলিম উম্মাহ এমন একদল মুখলিস, সত্যনিষ্ট আলিম থেকে বঞ্চিত ছিল না, যারা সকল প্রকার অধর্ম ও পাশবিকতার বিরোদ্ধে ছিলেন বজ্রকঠিন, দ্বীন ও তাওহীদ রক্ষায় ছিলেন অতন্দ্র প্রহরী এবং অত্যাচারী শাসক ও বাতিলের মুকাবিলায় ছিলেন সাহসী সৈনিক। এ কথা প্রমাণ করে মুসলিম উম্মাহর সঠিক ও সুস্থ নেতৃত্বের যোগ্যতা একমাত্র আলিমদেরই রয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হয়না, যেন তারা দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান চর্চা করতে পারে এবং তাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে। যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসবে, যাতে তারা সতর্ক হয়।”

 

        উপরোক্ত আয়াত থকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আলিমদের দায়িত্ব হলো দ্বীন ও শরীয়তকে গভীর উপলব্ধি করা এবং অপরকে উপলব্ধি করানো এবং যারা দ্বীন থেকে বিচ্যুত হবে, দ্বীনের বিরোধীতায় মেতে উঠবে, তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনবে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করার মাধ্যমে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে।

 

        মুসলিম উন্মহার নেতৃত্ব দান এবং দ্বীন ও তাওহীদের হেফাজত ও সংরক্ষণে আলেমদের রয়েছে গৌরবোজ্জল ইতিহাস। তাতারী ফেতনার বিরুদ্ধে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) রাষ্ট্র শক্তিকে তাদের মুকাবিলায় রুখে দাড়াতে উত্তেজিত করেন। তার সময়োচিত এই পদক্ষেপেই তাতারীদের কোমর ভেংগে যায়। রণাঙ্গণে তাদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। খোদ ইমাম নিজেও এ জিহাদে শরীক হয়েছিলেন। গোটা জীবনই কেটেছে উম্মাহ এর হেদায়াত সংস্কার ও সংশোধনে এবং বাতিলের মুকাবিলায় সশস্ত্র সংগ্রাম করে সাথে সাথে তাঁকে মুকাবিলা করতে হয়েছে শাসক গোষ্ঠীর পদলেহী একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী আলিমদের। আর জীবনের শেষ দিনগুলো তার কেটেছে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে।

 

        শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী (রঃ) ভারত বর্ষের মুসলমানদের রাজনৈতিক অসহায়ত্ব ও গজিয়ে ওঠা মারাঠাদের অসামান্য শক্তির প্রতি লক্ষ্য করে এক আবেগ পূর্ণ জ্বালাময়ী চিঠির মাধ্যমে এই অসহায় অবস্থা থেকে উত্তরণর লক্ষ্যে বাদশাহ আহমদ শাহ আবদালিকে উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর এই চিঠিতেই ঈমানী বলে বলিয়ান ভারত বর্ষের মুসলমান জনতা এত প্রচণ্ডভাবে গর্জে ওঠলো যে, মারাঠাদের এমন কোন ঘর ছিল না যে ঘরের দু'চার জন মারাঠা নিহত হয়নি। শেষ পর্যন্ত আত্নরক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েও পানি পথের তৃতীয় যুদ্ধে অন্তত দু'লাখ মারাঠা নিহত হলো।

 

        শাহ ওয়ালী উল্লাহ সুচীত এ জিহাদেরই সূত্র ধরে পরবর্তীতে সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ (রঃ) ভারত বর্ষে বৃটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। চার বছরকাল তিনি পেশওয়ারে অবস্থান করে যেখানে স্বীয় নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠ করেন অবশেষে বালাকোটের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করলেন। কিন্তু তার এ বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিশিখা পেশওয়ার থেকে সুদূর বাংলা পর্যন্ত এমন দুর্বার গতিতে ছড়িয়ে পড়লো যে, বৃটিশ বেনীয়া গোষ্ঠী তল্পি গুটিয়ে ভারত ত্যাগে বাধ্য হলেন।

 

        কমিউনিজম ও নাস্তিক্যবাদের মুকাবিলায় এখওয়ানুল মুসলিম মিসরের জাগ্রত মুসলিম জনতাকে এমনভাবে সংগঠিত করলো যে, স্বৈরাচারী নাসেরের সাথে তাদেরকে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হলো। মিসরের অগণিত আলিমের রক্ত ঝরলো এ যুগের হাজ্জাজ জামাল আবুল নাসেরের হাতে। সাইয়্যেদ কুতুবের ন্যায় মহান আলিমকে ঝুলতে হলো তার ফাসি কাষ্টে। চল্লিশ হাজার মুসলিম নারী চরম নির্যাতনের স্বীকার হলো। কিন্তু ঈমানী বলে বলীয়ান, ন্যায় ও সত্যের মূর্ত প্রতীক এ অকুতোভয় বীর কাফেলা বাতিলের সামনে তবুও মাথা নত করলো না।ফলে নাস্তিক স্বৈরাচারী জামাল আব্দুল নাসেরের নির্মম পতন ঘটলো। অথচ ইসলামের মশাল হাতে এখনওয়ানের বীর কাফেলা শত বাধা প্রতিকূলতা নিপীড়ন ও নির্যাতন উপেক্ষা করে অপ্রতিহত গতিতে এগিয়ে চলেছে মনযিলে মাকসুদের দিকে।

 

        ইন্দোনেশিয়া আলজেরিয়া ও তুর্কিস্থানসহ দেশে দেশে চলছে আজ ইসলামী অন্দোলনের নেতা ও দ্বীনের পতাকাবাহী আলিমদের ওপর চরম নির্যাতন, নিপীড়ন, জেল, জুলুম নিধন ও হত্যাযজ্ঞ। বাতিল শক্তি আজ ইসলামের জ্যোতির্ময় আলোকে নিভিয়ে দেয়ার জন্য ইসলামের আওয়াজকে নিস্তব্ধ করতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। কারণ আলিমদের এ আহবান মানুষের ওপর মানুষের প্রভুত্বের বিরুদ্ধে নির্যাতিত নিপীড়িত বনী আদমের স্বপক্ষে সকল প্রকার স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, খোদাদ্রোহীতা ও নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে।

 

        পৃথিবীতে একমাত্র আলেম সমাজই পারে সাধারণ জনগণের সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করে তাদেরকে হক ও সত্যের উপর ঐক্যবদ্ধ করতে এবং প্রয়োজনে সৃষ্টি করতে পারে পৃথিবীর যে কোন পরাক্রমশালী বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে প্রচণ্ড এক বিদ্রোহী যোদ্ধা দল। কারণ সাধারণ জনগণের হৃদয় ও মনোজগতের ওপর রয়েছে আলিমদের বিরাট অধিকার।

 

        মহান আকাবির ও সালফে সালেহীনের এ যুগপৎ কর্মপন্থায় ইসলামের ইতিহাস সমুজ্জল হয়ে আছে। উভয় অঙ্গনেই রয়েছে তাদের গৌরবময় অবদান। শাসক গোষ্ঠীর সাথে তাঁদের সংঘাতের মূল ছিল তাঁরা চাইতেন সমাজের সকল স্তরে ইসলামী আদর্শ ও অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে। চাইতেন গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে কুরআন ও সুন্নাহ মুতাবিক ঢেলে সাজাতে । তবে এ বাস্তবতাকে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী সুবিধাবাদী আলিম অতীতেও ছিল, আজও আছে। পার্থিব সুবিধা ও স্বার্থ হাসিলের জন্য যারা সরলপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে বিরোধ, অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে সদা ব্যাপৃত থাকে।

 

        বস্তুতঃ গোটা দুনিয়া জুড়ে আজ মুসলিম উম্মার উপর যে ধ্বংসযজ্ঞ ও পতন নেমে এসেছে তার প্রকৃত কারণ হলো, হক্কানী উলামায়ে কেরামের অনৈক্য, উদাসীনতা ও স্বীয় দায়িত্ব থেকে দূরে সরে পড়া। নির্যাতিত নিপীড়িত ধ্বংসম্মুখ মজলুম মুসলিম জাতিকে উদ্ধারে এবং তাদের ধর্মীয় গৌরবময় অতীত পুনরুদ্ধারে আজ বড় প্রয়োজন একদল মুখলিস সত্যনিষ্ঠ আলেমের কথায় ও কর্মে যারা মহান সাহাবায়ে কেরামের বাস্তব প্রতিচ্ছবি, অন্যায় ও বাতিলের মুকাবিলায় যারা শীষা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় অটল অবিচল। সে দিনটির আর কত দেরী?

 

 

═──────────────═