JustPaste.it

নবিন মুজাহিদের পাতা

=====================================================================

জ্ঞানের কথা

ওয়াক্ত মত নামায আদায় না করার পরিণাম

        কোন ব্যক্তির আপন বোনের মৃত্যু হয়। ভাই তার বোনকে কবরে দাফন করে ঘরে ফিরে আসে। ঘরে আসার পর মনে পরে যে, তার পকেটে কিছু টাকা ছিলো।  সম্ভবত বোনকে কবরে রাখার সময় তা কবরে পড়ে গেছে। টাকাগুলো অন্য কোথাও খুজে না পেয়ে অতঃপর বোনের কবর খুড়তে বাধ্য হয়। কবর খুড়ে দেখে  যে তার কবরের মধ্যে আগুন জ্বলছে। তার বোন সেই গুনে ভষ্ম হচ্ছে। আপন বোনের এই পরিণতি দেখে সে দোউড়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ী আসে এবং তার মাকে সব ঘটনা খুলে বললে সে ভীষণভাবে কাঁদতে থাকে। এক পর্যায়ে মা ছেলেকে ডেকে বলে , বেটা!আমি তো ওর এতো কঠিন শাস্তির কারণ খুজে পাই না। এমন কঠিন কোন পাপ ও করল? ওর সত্যতার ব্যপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। তবে ওর একটা দোষ আমার নজরে পরে যে, নামাযের ওয়াক্ত শেষ হলে বা শেষ ওয়াক্তে নামায পড়ার বদ অভ্যাস ছিলো। এ কারণেই কি আজ ওকে এতো কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে?

 

 

 

গল্প নয়

দুই নবীন মুজাহিদ

মোস্তফা জামান

 ----------------------------------

        আবু জাহেল। সখত গলীজ এই নামটি । শুনলেই অন্তর ঘৃনায় রি রি করে উঠে। কারণ সে ছিল প্রিয় নবীর ঘোরতর দুশমন। নিঃস্ব অসহায় নবী সহচরদের সে নির্মম ভাবে মেরেছে, করেছে শহীদ, নিষ্প্রাণ। মক্কা জীবনে রাসূলকে দেয়নি ক্ষণিকের তরেও স্বস্তি । দেয় নি বায়তুল্লাহয় গিয়ে নির্বিঘ্নে দু'রাকাত নাময পড়তে।  আকদিন রাসূল (সাঃ) বায়তুল্লাহর স্নীগ্ধ স্বগীয় চত্বরে গিয়ে নামায পড়ছিলেন। রুকুর পর সিজদায় গিয়ে আত্মহারা হয়ে যখন্ তাসবীহ পাঠকরছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে এই নরাধন দুরাত্মা আবু জাহেল গিয়ে রাসূলের মাথায় উটের এক ইয়া বড় নাড়ি ভূরি চেপে দেয়। দম্ভভরে রাসূলকে সাসিয়ে আরেক দিন বলে, শুন আবু তালেবের ভাতিজা! আবার যদি তোমাকে বাইতুল্লাহয় সিজদায় রত পাই তবে আর মোটেই সহ্য করবো না। এ ধরনের বহু নির্যাতন, নিপীড়নের কাহিনী শুনে মদীনার কিশোর, যুবক আর নারী-পুরুষরা ছিলো এ পাপিষ্ঠের উপর ক্ষিপ। তাই সবাই এই পাপিষ্ঠকে হত্যা করে বীরত্বের শীরোপা অর্জনে ছিলো খুবই আগ্রহী।

 

        বদর যুদ্ধে সেই অপূর্ব সুযোগ এসে গেল। আবু জাহলের নেতৃত্ব মক্কার কাফিররা এসে মদীনার উপকন্ঠে সমবেত হলো। হাজারের উপরে কাফের বল্লোম নেজা আর বর্মে সজ্জিত বিরাট কুফরী শক্তি।অপ্রদিকে তিনশত তের জন বীর মুজাহিদ মুসলমান। তাদের হাতে গোনা কয়েকটি তরবারী। একটি মাত্র ঘোড়া। কারো হাতে শক্ত লাঠিও শোভা পাচ্ছিলো।তবুও তাঁরা নির্ভিক। অকুতভয় প্রশান্তি আর স্ফূর্তির মউজ তরাঙ্গায়িত হচ্ছিলো তাদের চোখে-মুখে-উষ্ঠা ধরে।

 

        সত্য মিথ্যার লড়াই শুরু হবে। সত্যর সৈনিক আর প্রতিমার পূজারী মুশরিক বাহিনী মুখোমুখি। ঠিক এমনি মুহূর্তে আনসারী দুই কিশোর সহদর এসে সাহাবী আব্দুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) দু'পার্শ্বে ছাড়ালো- একজন ডানে, অপরজন বামে। হাতে শানিত তরবারী। উজ্জ্বল দীপ্ত ললাট। সাহসিকতা আর বীরত্বের দ্যুতি তাঁদের চোখের তারায়। ক্ষীণ কন্ঠে একজন সাহাবী আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) কে বললেন। চাচা, আবু জেহেলকে কী আপনি চিনেন? আমি শপথ করেছি, ওকে ধরাশায়ী না করে ফিরবো না। কিন্তু তাকে তো আমি চিনি না। আমাকে একটু চিনিয়ে দিবেন? অপর জনও তাঁকে ঠিক একই কথা বলে আবু জাহেলকে দেখিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানালো।

 

        যুদ্ধ শুরু হলো। আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) আবু জাহেলকে দেখতে পেয়ে তাদেরকে ইঙ্গিতে দেখিয়ে দিলো যে এয়াবু জাহেল। অমনি তাঁরা বজ্রের ন্যায় তার উপর ঝাপিয়ে পড়লো। উপর্যুপরি আক্রমনের তোড়ে পাপিষ্ঠ আর স্থির থাকতে পারলো না। ছিটকে পড়লো ঘোড়ার পিঠ থেকে। মারাত্মক জখম হয়ে মৃয় যাতনায় ছটফট করছিলো।

 

        আবু জাহেলর এই পরিণতি তাঁদের হৃদয়ে আনন্দের ফল্গুধারা বাইয়ে দিলো। বিজয় গর্বে দিশেহারা হয়ে ছুটলো রাসূলের অভিমুখে। তাঁদের পৌঁছার আগেই রাসূল (সাঃ) উপস্থিত সাহাবাদের বললেন, কে যাবে, আবু জাহেলের নির্মম পরিণতি দেখে এসো।

 

        শাণিত তরবারী নিয়ে ফিরছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ(রাঃ)। দেখলেন, আবু জাহেল অসংখ্য লাশের মাঝে ছটফট করছে। এগিয়ে গেলেন। বললেন, তুমি আবু জাহেল? এই কি তোমার পরিণতি! আবি জাহেলের মিথ্যা অহংকার আর গর্ববোধ ক্ষেপে উঠলো। শ্যেন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বললো, স্বগোত্রীয় লোকেরা কাউকে হত্যা করলে অন্যের তাতে গর্বের কি!

 

        জাহান্নামী, অহংকারী এই মরনোম্মুখ কোরাইশ সর্দারের কথা শুনে ইবনে মাসউদ অত্যন্ত বিস্মিত হলেন। মনের আরশীতে ভেসে উঠল তাঁর অত্যাচারী আবু জাহেলের একটি স্মৃতিচিত্র। বাইতুল্লাহ চত্বরে বসে নির্জনে কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন তিনি। হঠাৎ এসে উপস্থিত হয় আবুজাহেল। একা, কেউ নেই তাঁর সাথে। তেলাওয়াতের আওয়াজ শুনে কর্কশ ভাষায় অশ্রাব্যসব গালি গালাজ করতে থাকে তাঁকে।

 

        ইবনে মাসউদের (রাঃ) ধৈর্যের বাঁধ ছিন্ন হয়ে যায়। নির্জনতার সুযোগে প্রচন্ড এক চর বসিয়ে দেয় আবু জাহেলের গালে। তারপর কোরাইশদের অত্যাচারের ভয়ে হিজরত করেন আবিসিনিয়ায়। পর পর আরো কয়েকটি নির্মম অত্যাচার আর জুলুমের চিত্র ভেসে উঠে তাঁর মানসপটে। সেসব স্মৃতির তাড়না আর সহ্য করত না পের এক আঘাতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন তাকে।

 

        খুশিতে ডগমগ দুই সহোদর মায়াজ অ মুয়াজ রক্তাক্ত তলোয়ার নিয়ে পৌছালো রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর  নিকট। তাদের বীরত্ব আর সাহসিকতায় তিনি অত্যন্ত মুগ্ধ হলেন। জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের কে তাকে হত্যা করেছো? সমস্বরে উভয়ে বললো, আমি করেছি। আমি করছি। রাসুল (সাঃ) বললেন, তোমাদের তলোয়ার নিয়ে এস। তারপর তিনি রক্তাক্ত তলোয়ারে দৃষ্টি বুলালেন। ধীরে ধীরে এক ঝলক আনন্দদ্যুতি ফুটে উঠলো তাঁর দু'চোখের তারায়। আনন্দ ভরা কন্ঠে তিনি বললেন "সত্যই তোমরা মুজাহিদ"। (সমাপ্ত )

 

*****