JustPaste.it

মুসলিম গণহত্যায় কাদিয়ানীদের কালো হাত

ফজলুল করীম যশোরী

=================================================================

 (পূর্ব প্রকাশের পর)

 

গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবী দাবি:

        ইংরেজ সরকারের পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেকে নবী হিসেবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ময়দানে অবতীর্ণ হয়। পূর্বে বলা হয়েছে যে শুরুতে নবী দাবি করা তার জন্য বিপদজনক ও বোকামির নামান্তর হবে। তাই সে অত্যন্ত সুকৌশলে ও অতি সন্তর্পনে কাজ শুরু করে। প্রথমে সে নিজেকে একজন ধর্ম প্রচারক ও ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হয়। এজন্য অরিয়েন্টালিস্ট সদস্যরা যাবতীয় উপকরণ ও পরামর্শ দানের জন্য সার্বিকভাবে নিয়োজিত থাকে। এ কাজে ইংরেজ সরকার তাকে প্রচুর অর্থ ও প্রচার মাধ্যমের সুযোগ প্রদান করে। ফলে মুসলমানদের একটি অংশ তার ভক্ত ও অনুরক্ত হয়ে পড়ে। সে নিজেকে একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পর এক সময় নিজেকে একজন তরীকতপন্থী বুজুর্গ ও পীর হিসেবে প্রচার করতে থাকে। এতে বহু সংখ্যক সরলমনা মুসলমান তার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে মুরিদ হয়।

 

        অতঃপর তার মুরীদরা যখন তার প্রতি পূর্ণভাবে আস্থাশীল ও ভক্তির চরম পর্যায়ে উপনীত হয় তখন সে নিজেকে একজন জামানার মোজাদ্দিদ ও ধর্ম সংস্কারক বলে প্রচার করতে থাকে এবং চিরাচরিত ও সর্বজন স্বীকৃত কিছু ইসলামী বিধি বিধানের বিকৃত ব্যাখ্যা প্রদান ও ইংরেজ সরকারের অনুকূলে তা প্রচার করতে থাকে। অতঃপর এসব বিকৃত ব্যাখ্যার প্রভাব ও বিশ্বাস যখন মুরিদদের অন্তরে বদ্ধমূল হয় তখন সে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে 'মাসীহে মাওউদ' বা প্রতিশ্রুত মাসীহ বলে দাবি ও প্রচার করতে থাকে। এমন এভাবে পর্যায়ক্রমে অত্যন্ত সুকৌশলে নিজেকে কখনো মাহদী, কখনো জিল্লি বা ছায়া নবী, কখনো বরুজি নবী, উম্মতী নবী, শরীয়তি নবী এবং কখনো হযরত ঈসা (আঃ) এবং কখনো নিজেকে মরিয়ম (আঃ) ইত্যাদি উদ্ভট দাবি করতে থাকে। এমনকি এক পর্যায়ে এসে সে নিজেকে স্বয়ং খোদা বলেও দাবি করে বসে। এছাড়া সে নিজেকে মুজাদ্দিদ, যামানার ইমাম, সাইয়্যেদ, বাইতুল্লাহ, হাজরে আসওয়াদ, ফেরেশতা, খোদারপুত্র, খোদার বিবি, খোদার বীর্য, খোদার খলিফা, সৃষ্টিকর্তা, মানবের মুক্তিদাতা, খোদগার প্রতিচ্ছবি, রাসূল এবং সমস্ত নবীদের প্রতিচ্ছবি ইত্যাদি বহু কিছুর দাবি করেছে যা মূলত একজন বদ্ধ পাগলের প্রলাপ বলে প্রমাণিত হয়। এমনকি সামান্যতম জ্ঞানের অধিকারী কোন ব্যক্তিও তাকে সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী বলে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারে না।

 

        কিন্তু তদসত্ত্বেও তাঁর অনুসারীর সংখ্যা একেবারেই নগণ্য নয় বরং অনেক উঁচু শিক্ষিত এবং পদস্থ ব্যক্তিও তার অনুসারীর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

 

        মূলত তার এসব উদ্ভট দাবি এবং তথাকথিত কিছু শিক্ষিত ব্যক্তি তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করার পেছনে কিছু লোভনীয় ও আকর্ষণীয় কারণও নিহিত রয়েছে। অর্থাৎ তাঁর শিষ্যত্ব ইহুদী, খৃস্টান চক্রের গোয়েন্দাগিরি ও তাদের স্বার্থ সংরক্ষনের শর্তে তাদের জন্য চাকুরি-নকরীসহ সর্বপ্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হতো। এমনকি ইংরেজ সরকারের চাকরির নির্ধারিত মুসলিম কোটার প্রায় সম্পূর্ণই সুকৌশলে কাদিয়ানীর অনুসারীদেরকে দেয়া হত। বিশেষ করে তখন প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য মুসলিম কোটার অধিকাংশ সদস্যই নেয়া হয়েছিল কাদিয়ানীদের মধ্য থেকে আর এসব সুযোগ সুবিধার লোভে কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী ও পূর্বাপর বিবেচনাহীন লোক ঈমান হারিয়ে কাদিয়ানী জ্বালে আটকা পড়ে। ইংরেজ সরকার এদেরকে তাদের শাসনকাল দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে ব্যবহার করতে থাকে। কিন্তু শত চেষ্টা সত্ত্বেও তারা ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার আন্দোলন ও জিহাদী তৎপরতা বন্ধ করতে সক্ষম হয়নি। ফলে তারা বিপদ বুঝে কৌশল পরিবর্তন ও নতুন পরিকল্পনা হাতে নেয়। আর উক্ত পরিবর্তিত কৌশল ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যে কাদিয়ানী গোষ্ঠীকেই নিয়োজিত রাখে। যা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আজও অব্যাহত রয়েছে।

 

কাদিয়ানী ষড়যন্ত্রের ভয়াবহ নীল নকশা:

        ইংরেজ খৃষ্টানরা প্রথমত কাদিয়ানীদের মাধ্যমে মুসলিম জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করে ভারতবর্ষে নিজেদের শাসন ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার প্রয়াস পায়। কিন্তু তাদের শত চেষ্টা সত্ত্বেও যখন তারা বুঝতে পারল যে হক্কানি ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতার জিহাদী তৎপরতার মোকাবেলা করে ভারতবর্ষে বেশিদিন টিকে থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এদেশের স্বাধীনতা দিয়ে তপ্লিতল্পা গুটিয়ে স্বসম্মানে দেশে ফিরে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। তাই ক্ষমতা হস্তান্তরের পরও যাতে তাদের ধর্মীয় সূত্র মুসলমানরা কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে এবং তাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থ সম্পন্ন অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্যে ব্যাপকভিত্তিক ষড়যন্ত্রের এক নীল নকশা প্রস্তুত করে।

 

       প্রথমত: মুসলমানদের ধ্যান-ধারণার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে বৃটিশী ধ্যান-ধারণা ও জাতীয় ঐতিহ্যকে এদেশবাসীর মন-মগজে চিরস্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখার মানসে তারা সুপরিকল্পিত ও সুদূরপ্রসারী এক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে। উইলিয়াম হান্টারের ভাষায় যার পরিণত হল, "আমরা এ দেশে এমন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করব যার ফলে বর্ণ ও ভাষায় এদেশবাসীর যদিও ভারতীয় বলে পরিচিত থাকবে কিন্তু চিন্তা-চেতনা ও দেন ধারণায় তারা হবে সম্পূর্ণ ইংরেজ"।

 

       দ্বিতীয়ত: ধর্মীয়ভাবে সম্পূর্ণ ইসলামী ঈমান-আক্বীদা পরিপন্থী ও মুসলিম জাতির জন্য চরম ধ্বংসাত্মক একদল লোককে মজবুত ও শক্তিশালী ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যারা ক্ষমতায় প্রতিটি স্তরে আসন নিয়ে মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার অন্তরায় সৃষ্টি করবে। এজন্য তারা প্রস্তুতকৃত কাদিয়ানী সম্প্রদায় কে বেছে নিল। তাই তারা নীলনকশা অনুযায়ী শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্রান্তিলগ্নে এসে কাদিয়ানীদের জন্য সার্বিক সহযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত করে দিল। এবং রাষ্ট্রের সর্বস্তরে কাদিয়ানীদেরকে পূর্বের তুলনায় অধিক হারে নিয়োগ করতে লাগল যাতে স্বাধীনতা-উত্তরকালে কার্যত ক্ষমতার চাবিকাঠি তথাকথিত মুসলিম নামধারী কাদিয়ানীদের হাতেই থাকে। মূলত স্বাধীনতা পরবর্তী ৪০ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এর বাস্তব প্রমাণ ফুটে ওঠে। তাইতো দেখা যায় হক্কানি ওলামায়ে কেরামের সুদীর্ঘকালের সংগ্রাম ও শত ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং ২৮ হাজার আলেম ও লক্ষ লক্ষ তৌহিদী জনতার রক্তের বিনিময় ইসলাম নামে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন পাকিস্তানের শাসন তার শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের পরিকল্পিত ও প্রস্তুতকৃত ব্যক্তিদের হাতেই অর্পিত হল। এমনকি পাকিস্তানে প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হলো জাফরুল্লাহ চৌধুরী নামক জৈনক কট্টরপন্থী কাদিয়ানী। আর তারই প্রতিযোগিতায় তারই সহযোগিতায় কাদিয়ানীরা পাকিস্তানের বারওয়া নামক স্থানে তাদের নতুন আস্তানা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। ফলে কাদিয়ানীরা নিজ নিজ এলাকা থেকে দলে দলে বারওয়া তথা পাকিস্তানে গিয়ে সংঘটিত হয়। এদিকে অন্যান্য বিভাগের তুলনায় ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা বিভাগের কাদিয়ানীদের সংখ্যা অনেক বেশি। যার ফলে স্বাভাবিক কারণেই স্বাধীনতার পর পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বাহিনীতে গিয়ে তারা শামিল হয় এবং নতুন লোক নিয়োগের বেলায় কাদিয়ানী আর্মি অফিসাররা কাদিয়ানীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যাপকহারে নিয়োগ করে।

 

        অপরদিকে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত পাকিস্তানের জন্য বৈদেশিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়টির ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাদিয়ানী জাফরুল্লাহ চৌধুরী পাকিস্তানের বৈদেশিক মিশনগুলোতে কাদিয়ানীদেরকে ব্যাপকহারে নিয়োগের সুযোগ নেয়। আর কাদিয়ানী আমলারা পাকিস্তানের বৈদেশিক মিশনগুলো কাদিয়ানী ধর্মমত প্রচারের কাজে ব্যবহার করতে থাকে। এমনকি তৎকালীন শিশু রাষ্ট্র পাকিস্তান বহির রাষ্ট্রের নিকট একটি কাদিয়ানী রাষ্ট্র বলে পরিচিত ছিল। অতঃপর প্রতিরক্ষা বিভাগ সহ রাষ্ট্রীয় সকল বিভাগে যখন কাদিয়ানীরা নিজেদের অবস্থানকে মজবুত ও সুসংগঠিত বলে বুঝতে পারল এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বহিরাষ্ট্রের সাথেও যখন তাদের যোগাযোগ ও মদদ প্রাপ্তির যাবতীয় পথ সুগম হল ঠিক এমনি এক মোক্ষম পরিস্থিতিতে পরিপূর্ণ পরিস্থিতিতে পূর্বপরিকল্পিত নীলনকশা অনুযায়ী প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাদিয়ানী অফিসাররা বারওয়া কেন্দ্রের পরামর্শে কাদিয়ানি  সৈন্যেদের মাধ্যমে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে পাকিস্তানকে একটি নিরঙ্কুশ কাদিয়ানী রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করে নেয়। কিন্তু হাজার হাজার ওলামায়ে কেরাম ও লক্ষ লক্ষ তৌহিদী জনতার রক্তের বরকতে আল্লাহ পাক তাদের ষড়যন্ত্র কে পাশ করে দেন অর্থাৎ তাদের অভ্যুত্থানের এ নীলনকশা সম্বলিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল দস্তাবেজ পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বাহিনীর ইন্টেলিজেন্ট বিভাগের একজন মুসলমান অফিসারের হস্তগত হয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে উক্ত কাগজপত্র শাইখুত-তাফসীর হযরত মাওলানা আহমদ আলী লাহোরীর নিকট হস্তান্তর করেন।

 

        মাওলানা লাহোরী পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে আমীরে শরীয়ত মাওলানা আতাউল্লাহ বুখারী কে মুলতান থেকে লাহোর ডেকে পাঠান এবং উভয় পরামর্শ করে ওলামাদের একটি কনভেনশন ডাকেন। উক্ত কনভেনশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি দল পাকিস্তানে প্রথম মন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনকে বিষয়টি অবহিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন কিন্তু ইংরেজি শিক্ষিত খাজা সাহেব বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করলেননা। ফলে অপর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওলামায়ে কেরাম সারা দেশব্যাপী সফর করে জনসাধারণকে কাদিয়ানী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চালান। উলামায়ে কেরামের জ্বালাময়ী বক্তৃতা ও জোর প্রচারণার ফলে পাকিস্তানের সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা কাদিয়ানী বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। একসময় আন্দোলনের তীব্রতা চরম আকারে ধারণ করে।

       

        এমনকি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কাদিয়ানী প্রভাবিত তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং এই আন্দোলনকে দমন করার লক্ষ্যে আন্দোলনের কেন্দ্রভূমি পাঞ্জাবে সামরিক শাসন জারি করে। কিন্তু আন্দোলনরত তৌহিদী জনতা ও যুবসমাজ সামরিক আইনকে উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে পড়ে। আর খতমে নবুয়তের মর্যাদা রক্ষার জন্য ১৯৫৩ সালের এক কাল রাতে হাজার হাজার জনতা পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরে গুলির সামনে বুক ফেতে দাঁড়িয়ে যায়। ফলে সৃষ্টি হয় ইসলামের ইতিহাসের এক হৃদয় বিদারক অধ্যায়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তৌহিদী জনতার বুক লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে একই রাত্রে দশ হাজার মুসলিম জনতাকে শহীদ করে দেয়। প্রবাহিত করে রক্তের বন্যা। গর্বের বিষয় হলো, গুলির ভয়ে একজন লোকও পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। দশ হাজার শহীদের প্রত্যেকে সামনের দিক থেকে গুলি খেয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন। এমন একজন পাওয়া যায়নি যিনি পিছনের দিক থেকে গুলি লেগে শহীদ হয়েছেন।

 

        এ সময় সরকার আজানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মুসলিম যুবকরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আযান দিতে প্রবৃত্ত হয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আজ দাতার প্রতি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে তাকে শহীদ করে দেওয়া হয়। সাথে সাথে অন্যজন গিয়ে আযানের বাকি অংশ পূরণ করতে সচেষ্ট হলে তাকে শহীদ করে দেয়া হয়। এভাবে একের পর এক পাঁচজন যুবক শাহাদাত বরণ করার পরেই দিন একটি আজান সমস্ত করা সম্ভব হয়েছিল।

 

        অতঃপর ১৯৪৭ সালে মাওলানা ইউসুফ বিন্নুরীর নেতৃত্বে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে সারা পাকিস্তানব্যাপী দুর্বার গণআন্দোলন শুরু হয়। উক্ত আন্দোলনের বাস্তবতা ও সৌদি বাদশাহ শহীদ ফয়সালের হস্তক্ষেপের ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো সাম্রাজ্যবাদীদের চোখ রাঙানি সত্বেও কাদিয়ানীদেরকে সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে বাধ্য হন। ঘোষণা শুনে তৎকালীন কাদিয়ানী নেতা মির্জা নাসির পাকিস্তান থেকে পালিয়ে বৃটেনের রাজধানী লন্ডনে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং ব্রিটেনে তাদের প্রধান কেন্দ্র স্থাপন করে। কুয়েত একটি দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। ব্রিটেন সরকার কাদিয়ানীদের জন্য বিশাল এলাকা বরাদ্দ করে। উক্ত স্থানে বৃহৎ কমপ্লেক্স, হ্যলিপেড সহ বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে ব্যাপক ষড়যন্ত্র পরিচালনার জন্য ব্রিটেন আমেরিকা ও মুসলিম জাতির শত্রু ইজরায়েল কোটি কোটি ডলারের সাহায্য সরবরাহ করছে বলে জানা যায়।

 

        এছাড়া আফগানিস্তান ও সৌদি আরবসহ অপরাপর মুসলিম দেশসমূহও তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা ও তাদের সে দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে।

 

*****