বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
'আল ফিরদাউস' পরিবেশিত
'উস্তাদ খুবাইব আহমাদ হাফিজাহুল্লাহ' এর
'রুঢ় বাস্তবতা'
****************************
(‘কওমি’ অধ্যায়)
আমাদের কওমি আলেমরা কেন জিহাদের ডাক দিচ্ছেন না বা কেন তারা জিহাদের পরিবর্তে মিটিং-মিছিল করছেন ইত্যাদি নিয়ে আসলে দুঃখিত হওয়াটা অবাস্তব।
হ্যা! তাদের এসব আচরণের পর্যালোচনা হতে পারে কিন্তু উলামায়ে কেরামের অবস্থান নিয়ে দুঃখবোধ করে নিজেকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই।
উনাদের এমন আচরণের অনেক কারণ রয়েছে তবে মূল কারণ হচ্ছেঃ
“দীর্ঘ সময় ধরে উনারা আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে ইসলামকে দেখে আসছেন। উম্মাহকেন্দ্রিক চিন্তা উনারা কখনোই করেন নি।”
এটা শুধু নিছক দাবী নয়। আমি প্রমাণ দিচ্ছি-
ক)
১৯৪৭ এর কাছাকাছি সময়ে হায়দ্রাবাদ ও মালাবারে মুসলিমদের উপর যে গণহত্যা হিন্দুরা চালিয়েছিল তা ১৮৫৭’র ইংরেজদের গণহত্যার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। অথচ আমাদের উলামায়ে কেরাম মালাবার ও হায়দ্রাবাদের মুসলিমদেরকে সাব্যস্ত করেছেন অবিবেচক ও হঠকারী হিসেবে, কিন্তু ১৮৫৭’র সিপাহী বিদ্রোহকে সাব্যস্ত করেন চুড়ান্ত নায়কোচিত আচরণ হিসেবে। কেন?
কারণ মালাবার বা হায়দ্রাবাদের মজলুমানরা যে দেওবন্দী মাসলাকের কাছাকাছি কেউ নয়। হায়দ্রাবাদ ও মালাবারের মুসলিমরা ঐতিহাসিকভাবেই অত্যন্ত দৃঢ়চেতা ছিলেন। আপোসকামিতা তাদের মাঝখানে কমই ছিল। হায়দ্রাবাদের মুসলিমরা তো সামগ্রিকভাবে ইংরেজদের অধীনে সেভাবে ছিলও না যেমন ছিল দিল্লী ও এর আশেপাশের উলামায়ে কেরাম।
অথচ তাদের দৃঢ়তাকে দেখানো হয় হঠকারিতা হিসেবে আর কাপুরুষতাকে দেখানো হয় প্রজ্ঞা হিসেব। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। যার ফলশ্রুতিতে আমরা আজকে মেরুদন্ডহীন মুসলিমদেরকে দেখি যারা নিজেদেরকে ভেড়ার মত গড়ে তুলছে। এর দায়ভার আমাদের ‘আকাবির’গণ এড়াতে পারেন না।
সে সময় কংগ্রেসপন্থী উলামারা তাদের মৌখিক সমর্থন দিলেও মালাবারের মুসলিমদের ইংরেজবিরোধী বিদ্রোহের কঠোর সমালোচনা করেন হাকিমুল উম্মাত আশরাফ আলি থানভি রহঃ।
হায়দ্রাবাদের মুসলিমদের গণহত্যার সময় কংগ্রেসপন্থী উলামায়ে কেরাম (হুসাইন আহমাদ মাদানি রহঃ ও তার অনুসারীগণ) কিছু করেন নি কারণ হিন্দুদের সাথে তাদের ঐক্য ছিল। এমন ঐক্য যে তারা গরুর বদলে খাসি কুরবানির ফতোয়াও দিয়েছিলেন।
আর মুসলিম লীগপন্থী উলামাগণ (আশরাফ আলী থানভি রহঃ, মুফতি শফি রহঃ প্রমুখ) ব্যস্ত ছিলেন পাকিস্তানের জন্ম নিয়ে।
আমাদের উলামায়ে কেরাম এবং তাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের আকাবিরগণ কখনই সুদূরপ্রসারী কোনো চিন্তা করেন নি বরং সামনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেটা কিভাবে তড়িঘড়ি করে সমাধান করা যায় সেদিকেই অধিক মনোযোগী ছিলেন ও আছেন।
শাহ আব্দুল আজিজ রহঃ, সাইয়্যিদ আহমাদ শহিদ রহঃ, হাজী ইমদাদ উল্লাহ মুহাজিরে মাক্কি কিংবা রশিদ আহমাদ গাঙ্গুহি রহঃ দের মেজাজ ও মানহাজ পরবর্তী প্রজন্মে অনুপস্থিত একেবারেই। কিছু ব্যাতিক্রম ব্যাতীত যাদেরকে মূলধারার দেওবন্দিয়্যাত থেকে বিচ্যুতই মনে করা হয় একপ্রকার।
যখন হাজী ইমদাদউল্লাহ রহঃ’র জিহাদ ও আত্মত্যাগের পুনরাবৃত্তি প্রয়োজন ছিল তখন আমরা দেখেছি উনার খানকা পদ্ধতির সংস্কার!
যখন দরকার ছিল শাহ আব্দুল আজিজ রহঃ’র দারুল হারব ফতোয়ার উপর আমলের তখন আমরা দেখেছি সেই ফতোয়া রদ্দ করে দারুল আমান ফতোয়া প্রদান করতে।
তো যেখানে আমাদের উলামায়ে কেরামের পরম শ্রদ্ধেয় আকাবিরগণ মালাবারের ১০,০০০ শহিদ ও ৫০,০০০ বন্দীকে হজম করেছেন, দুই লক্ষাধিক হায়দ্রাবাদি মুসলিমের জীবনদানকে বলেছেন হঠকারিতা সেখানে ‘মাত্র’ হাজার পাঁচেক রোহিঙ্গা নির্যাতিত হওয়ার সাথে সাথেই আমাদের উলামায়ে কেরাম ভাষণ দিচ্ছেন, ত্রাণ পাঠাচ্ছেন, মিছিল করছেন এটাই অনেক বড় কিছু।
তাই শুকরিয়া আদায় করুন। আমি নিজেও তাই করি।
খ)
এদেশের তলাবায়ে ইলম, উলামায়ে কেরাম আহমাদ শফি (দাঃ বাঃ)’র কিছু হলে রক্ত দিতে প্রস্তুত, জুনায়েদ বাবুনগরীর ডাকে হেটে হেটে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকা চলে আসতে রাজি কিন্তু উনাদের চেয়েও অনেক বড় দেওবন্দি আলেমের ডাকে প্লেনে বা ট্রেনে করে ঢাকা থেকে কান্দাহার যেতে রাজি না। এটা এমন এক বাস্তব সত্য যা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ আমাদের উলামা-তলাবাদের নেই।
গ)
আগাগোড়া সেকুলার শিক্ষাব্যবস্তার বাংলা বইয়ে ইসলামী লেখার পরিবর্তে হিন্দুয়ানি লেখা কেন তা নিয়ে আমাদের উলামার চিন্তিত হলেও (এটার বিরোধিতা আমি করছি না), দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে আল-আকসায় ইহুদিদের অবস্থান, ২৬ বছর ধরে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভূমিতে আমেরিকানদের অবস্থান, আফগানিস্তান-ইরাক-সোমালিয়া-সিরিয়া-মালিতে ৫০লক্ষাধিক মুসলিম হত্যা, আবু গারিবে-বাগারামে বোনদের ধর্ষণ- ইত্যাদি ব্যাপারে উনাদের কোনো ভূমিকা আমরা দেখিনা।
পূর্বেও এমনই ছিল। খুব একটা ব্যবধান ছিল না।
যেমন- ইটালির লিবিয়া আক্রমণের পরেও ভারতীয় মুসলিমরা তখন কংগ্রেস আর মুসলিম লীগের মারামারি নিয়ে ব্যস্ত।
দিল্লীর জামে মসজিদের সামনে কুনুতে নাজেলা পরেই উনারা দায়িত্ব সেরেছেন অথচ একই সময়ে ৬ লক্ষাধিক ‘মুসলিম’ ইংরেজদের অধীনে উসমানি খিলাফতের বিরুদ্ধে ঠিকই যুদ্ধযাত্রা করে!!!!
তবে সকলেই এমন তা নয়। বরং এখানে ঐসকল অযোগ্য উত্তরসূরীর আলোচনা করা হলো যারা নিজেদেরকে দেওবন্দিয়্যাতের মুখপাত্র বলে দাবী করে থাকেন যদিও তাদের শ্রম ও কুরবানী পূর্বসূরিদের সিকিভাগও নয়।
আর যারা হক্কের উপরে থাকেন তাদেরকে আমরা এমনিতেই চিনতে পারি। তারা নিজেরাই নিজেদের পবিত্রতা ঘোষণা করেন না। এই উম্মাহ যেমন তাদের, তারাও এই উম্মাহ’র।
যেমন আমরা দেখি পূর্ব আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, মাকদিস ও জাজিরাতুল আরবের উলামারাও শায়খ শামজি, মাওলানা গাজি আব্দুর রাশিদ, মাওলানা কাবুলগ্রামী, শায়খ ইউনুস খালিস, মাওলানা আতিকুর রহমান রহিমাহুমুল্লাহদের নাম এখনো নেন এবং তাদের প্রশংসা করেন,
আর চিন্তা করুন, লক্ষ্য করুন- ‘মূলধারা’র উলামা-আকাবিররা আটকে গেছেন ও আছেন নিজ গুণমুগ্ধ ভক্তদের গন্ডির মাঝেই।
তাদের মাসলাকের বাইরের কেউ তাদের নাম নেয় না, তাদেরকে চেনে না, তাদের জন্য দু’আও করেন না।
এ এক কঠিন বাস্তবতা যা কেউ স্বীকার করতে চায় না। যেন এটা এমন এক কথা যা মুখে আনলে জিহ্বা আড়ষ্ট হয়ে যাবে, স্বঘোষিত বুজুর্গের বদ-দু’আয় স্ত্রী-সন্তান মিলিয়ে যাবে বাতাসে!
সমাধানের পথ
আর যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা এই সংকীর্ণ চিন্তাধারার বিপরীতে শায়খ আইমান হাফিজাহুল্লাহ বলেন,
‘’মুসলিম জাতি আজ চরম বাস্তবতার মুখোমুখি। তারা দেখতে পাচ্ছে যে, যে সকল ইসলামী দল মুক্তির আশায় সেকুলারিজম, প্রজাতন্ত্র ও স্বৈরাতন্ত্রকে আদর্শরূপে গ্রহণ করেছিল, যারা আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদের সাথে নিজেদের ভাগ্য জুড়ে দিয়েছিল তারা দ্বীন ও দুনিয়া দুটোই হারিয়েছে।
উম্মাহর কাছে আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সত্যিকার মুজাহিদ ও দাঈগণ যে সতর্ক বার্তা উচ্চারিত করেছিলেন তা যথার্থই ছিল।
তারা বলেছিলেন যে, দাওয়াত ও জিহাদের পথই হচ্ছে মুক্তির পথ। কুরআন-সুন্নাহ বর্ণিত পথ। বাস্তবতা ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বীকৃত পথ।
তাই সত্যিকার মুজাহিদ ও দাঈগণের কর্তব্য হচ্ছে, উম্মাহর সামনে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বিষয়টি যথাযথভাবে বর্ণনা করা। যাতে মানুষ পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে মুক্তির পথে পরিচালিত হতে পারে।”(ইসলামী বসন্ত — ২)
তো দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও আমি চেস্টা করেছি ইমামুল জিহাদ আইমান (তাঁর জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক) এর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বিষয়টি যথাযথভাবে বর্ণনা করার।
আশা করি চিন্তাশীলদের জন্য এতটুকু কথাই যথেষ্ট। আর যাদের অন্তর হিজবিয়্যাহ’র অন্ধকারে আবদ্ধ তাদের জন্য কেবল করুণা ও হিদায়াতের দু’আ…
এবং আল্লাহ তা’আলাই একমাত্র তাওফিক দাতা।!
— — — — —
পরিশেষে-
যদি কেউ এব্যাপারে আমাকে ভুল প্রমাণ করতে পারেন আমি আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া জানাব।
যে কেউই গালিগালাজ বা অন্যায় আক্রমণ না করে ইতিহাসের পাঠ ও শরিয়াহ’র দলীল দিয়ে আমাকে ভুল ধরিয়ে দিতে পারেন।
আমি এখন পর্যন্ত এপ্রসঙ্গে হাতের কাছে পাওয়া সকল বই পাঠের পাশাপাশি উচু-নিচু-মাঝারি দেওবন্দি উলামাদের সাথে এবিষয়গুলো নিয়ে মোটামুটি লম্বা সময় কথা বলেছি।
এই লেখাটি লেখার আগে দীর্ঘসময় পড়ালেখা, আলোচনা ও চিন্তাভাবনার প্রয়োজন হয়েছে আমার।
তাই শক্তিশালী দলীলের পরিবর্তে আবেগী বা কৌশলী কথাবার্তা বলে তেমন কোনো ফায়দা নেই।
তথ্যসূত্রঃ
১) আল-ইফাদাতুল আশরাফিয়া দর মাসায়িলে সিয়ামিয়াহ
২) কামালাতে আশরাফিয়া
৩) Deoband Ulema’s Movement for the Freedom of India (মানাক প্রকাশনী)
৪) বাংলার বরেণ্য আলেম (মাকতাবাতুল আজহার)
৫) মাওলানা থানভির রাজনৈতিক চিন্তাধারা (বাড কম্প্রিট প্রকাশনী)
৬) হায়দ্রাবাদ গণহত্যাঃ ভারতে মুসলিম নিধনের চেপে রাখা অধ্যায়
http://www.muldharabd.com/?p=164
৭) আযাদী আন্দোলনে আলেম সমাজের ভূমিকা, জুলফিকার আহমাদ কিসমতি
৮) While Memory serves, Francis Tucker
৯) The Muslims who fought for Britain in the first world war (এখানে উল্লেখিত ৪ লাখ যদিও প্রকৃত সংখ্যা ৬ লাখের কম নয়)
(‘অনুগত সালাফি’ অধ্যায়)
মুজাহিদিন ও মুওয়াহিদিনদের সমালোচনায় আহলে হাদীস/’সহিহ আকিদা’/মাদখালি ঘরানার ইরজাগ্রস্ত খাওয়ালিফদের দাবী — “তারা তো বড় বড় আলেমদের মানে না।” (আন্তরিক মানসিকতা না থাকলে কথাগুলো মেনে নেয়া কষ্টকর হতে পারে বৈ কি)। এটি এমন এক দাবী যা দিয়ে ‘সহিহ সালাফি’ দাবীদার ভাইয়েরা পৃথিবী ভরে ফেলেছেন।
যারা বিস্তারিত জানেন না তারাও হয়তো পড়ে থাকবেন - ভাই শরিফ আবু হায়াত অপু স্বীয় বই ‘তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে’তে আক্ষেপ করেছিলেন যে, শায়খ ইবনে বাজের মত ব্যক্তির কথা না শুনে জিহাদ করার ফলে অসংখ্য মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়াও আহলে হাদিস মাদানী আলেমরা, দা’ঈ ইঞ্জিঃ এনামুল হক ও সমগোত্রীয় ব্যক্তিরাও একই ধরণের কথা প্রায়শই বলে থাকেন। প্রতিটি নব্য সালাফিই সৌদি তাগুতের বেতনভোগী স্থায়ী ফতোয়া কমিটিকে নিয়ে (যাদেরকে কিবার আল উলামাও বলা হয়), আবার কেউ কেউ ফ্রিতে সেবাদানকারী মাদখালি-হাল্লাবিদের নিয়ে বেশ বাড়াবাড়ি রকমের আচরণ করে। যেন এরা ছাড়া দুনিয়াতে আর কোনো আলেমই নেই।
অথচ ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব রহঃ’র সময়ে মসজিদে হারামসহ মক্কা-মদীনার কিবার আল উলামারা শায়খ রহঃ ও তার অনুসারীদের তাকফিরি-খারেজি সাব্যস্ত করেছিলেন। যেমন- তৎকালীন সময়ের মক্কার সবচেয়ে বড় আলেমদের একজন শায়খ আহমাদ বিন জায়নি দায়লান বলেন, “ওয়াহাবিরা যখন কাউকে নিজেদের ধর্মে প্রবেশ করাতে চাইতো তখন তাদেরকে বলতে বাধ্য করতো যে তারা পূর্বে কাফির ছিল, তাদের বাবা-মাও কাফির ছিল। মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব ও তার সাথীরা দরুদ পরাকে মন্দ কাজ মনে করতো। দরুদ শুনলে তারা কষ্ট অনুভব করে। তারা বলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেয়ে তাদের হাতের লাঠিও অধিক উত্তম। এই লোকটির মনে নবুওয়াতের দাবী তোলার হওয়ার ইচ্ছা প্রবল ছিল”। (খুলাসাতুল কালাম, ২/২২৯-২৩০)
তো মক্কা-মদীনাকে অকাট্য দলীল মানলে দাওয়াহ সালাফিয়্যাহ আজ এপর্যন্ত আর আসতো না। কোনো মানুষ বা স্থান হক্কের দলীল নয়- দলীল হচ্ছে কুর’আন-সুন্নাহ ও সালাফদের বুঝ এবং তা আরোপিত হবে সত্য যাচাইয়ের পর; অনুমানের উপর ভিত্তি করে না। কিন্তু হাল জমানার এসকল ‘সালাফি’ কিবার আল উলামা ও দা’ঈদের অবস্থাও তৎকালীন আহলুল বিদ’আদের মতই। তারা “মদীনায় জনৈক আলেম ফাতহুলমাজিদ/তাদমুরিয়্যাহ’র দরস দেয়” শীর্ষক বক্তব্য উল্লেখ করে তাদের অন্যায় অপবাদকেও সহিহ প্রমাণের চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। ফিতনার এই সময় কত যুবক যে এসকল দা’ঈদের প্রতারণার শিকার একমাত্র আল্লাহ রাবুল্ল ‘আলামিনই জানেন। আল্লাহু আপনি হেফাজত করুন।
তারা আমাদের বলে তাকফিরি খারেজি। কিন্তু আমাদের আকিদার আলোচনা করতে গিয়ে হারুরিয়া খারেজি ফিরকা শুকুরি মুস্তাফার জামাতুল মুসলিমিনের আলোচনা করে। যা একটি নিকৃষ্ট অপবাদ। শায়খ খন্দকার রহঃ , ইঞ্জিঃ এনামুল হক উভয়েই একই কাজ করেছেন। একই কাজ করেছে বিল্লাল ফিলিপস ও মুহাম্মাদ আমিন আল জামে। অথচ ইলমের পাহাড় বা মসজিদে নববীতে দরস দেন এসবের উপরেও প্রাধাণ্য পাওয়া উচিৎ ছিল হাক্ক এবং দলিলা-আদিল্লার!
এছাড়াও একবার দেখেছিলাম, শায়খ মাকদিসি হাফিজাহুল্লাহ একবার ডক্টর ফাওজানের আকিদাগত বিচ্যুতির পর্যালোচনা করে একটি বই লেখায় এক ফেসবুক সেলেব্রিটি ভাই লিখেছিলেন,“মাকদিসি কি করে শায়খ আল আল্লামা সালিহ বিন ফাওজান হাফিজাহুল্লাহ’র ভুল ধরে!!?”এগুলো সবই আসলে শরিয়তের পরিবর্তে কিছু নামের অনুসরণ। আবেগ এখানে নসের উপরে প্রাধান্য পায়!
ফরিদ উদ্দিন মাসুদ বা মাওলানা নোমানি বা আরশাদ মাদানিও অনেক অনেক বড় আলেম। কিন্তু তারা সেকুলার-হিন্দুদের আনুগত্যের আহবান জানাবেন আর মানুষ তা মেনে নিতে বাধ্য থাকবে এগুলো একেবারেই জবরদস্তিমূলক দাবী ছাড়া কিছুই না।
বাস্তবতা হচ্ছে শায়খ ফাওজান বা শায়খ সালিহ আল লুহাইদানরা তাগুতের আঙ্গুলির নড়ন-চড়ন ছাড়া ফতোয়া দিতেও অক্ষম। পড়ুন - http://tinyurl.com/y9y5249h
শায়খ ইবনে বাজ রহঃও জীবনের শেষ দিকে (যখন ভাতাপ্রাপ্ত মুফতি হয়েছেন) এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। জাজিরাতুল আরবে আমেরিকানদের প্রবেশের ফতোয়াদানের পাশাপাশি ইহুদিদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে শায়খ রহঃ’র প্রচেষ্টা ছিল। শায়খ আলবানি অত্যন্ত তীব্র ভাষায় এই ফতোয়াকে রদ্দ করেছেন। এ আলোচনা পরে কখনো করা যাবে ইনশা’আল্লাহ।
আর শায়খ ইবনে বাজ রহঃ ও শায়খ উসাইমিন রহঃরা নিয়মিত শাসকের দরবারে হাজিরা দিতেন যা কি না আমাদের নেককার সালাফরা ঘৃণা করতেন যদিও উনাদের সময়ের শাসকেরা ছিলে মুসলিমদের খলিফা। অথচ পরবর্তী আলেমদের অন্ধানুসরণে ব্যস্ত ভাইয়েরা যারাই বেতনভোগী উলামায়ে কেরামের নিমকহালালির বিষয়ে কথা বলে তাদেরকেই এরা “ইলমবিহীন খারেজি/তাকফিরি” আখ্যায়িত করে থাকে। অথচ আমরা না এসকল আলেমদের তাকফির করি আর না এসকল আলেমদের উপকারী ইলম থেকে বিমুখ হই।
আমরা শুধু এটাই বলি, “হাক্ক হাক্কের জায়গায়। সম্মান সম্মানের জায়গায়।” দুনিয়ার কারোরই এটা অজানা নয় তারা তাদের বেতন-ভাতা, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা এরা লাভ করে মুরতাদ রাজার পদলেহনের মাধ্যমে। এব্যাপারে ডেরিল চ্যম্পিয়নের “The Paradoxical Kingdom” এ বিস্তারিত উল্লেখ আছে। এছাড়াও, বিভিন্ন সময়ে হক্কপন্থী উলামাদের বন্দীকরণ ও হত্যার বৈধতাদানে নিয়মিত ফতোয়া প্রদান করে থাকে।
যাই হোক! সৌদি তাগুতের অপকর্মের সাফাই গাইতে সদাপ্রস্তুত ‘তাগুতের ভাড়’ হিসেবে খ্যাত এই কমিটির ক্ষমতা আসলে কতটুকু এর একটি সামান্য উদাহারণ দেয়াই বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলবে। কিং আবদুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীপুরুষ সহশিক্ষা চালু হওয়ার পর একে নাজায়েজ বলা স্থায়ী কমিটির সদস্য সাদ বিন নাসির আশ-শিতরিকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। আমাদের এই সকল ‘’সালাফি’’ ভাইয়েরা আমাদের দেশের আলেম সমাজকে কথায় কথায় হেয় করে সঠিক কথা সবসময় না বলায়। অথচ- উনাদের সবচেয়ে বড় আলেমদের জামাত স্বঘোষিত “হাইয়্যাতু কিবার আল উলামা”র সদস্যরা হক্ক প্রকাশের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের আলেমদের সিকিভাগ পরিমাণ সাহস বা যোগ্যতাও রাখেন না।
তো আপনারা কি করে আশা করেন আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন মুসলিমগণ যারা আল্লাহ’র নৈকট্যলাভের আশা করেন, তারা তাগুতের সামনে রুজুকারী এসকল আলেমদের অন্ধানুসরণের মাধ্যমে শরিয়াহ’র দলীল দেয়ালে ছুড়ে ফেলে “বড় বড় আলেমরা না করেছেন” শীর্ষক অজুহাত দিয়ে নারী-শিশুদের সাথে সহাবস্থান করবে!?
মূলতঃ টেলিভিশনে বা মাহফিলে আসেন না দেখে মুজাহিদিন উলামাদের ইলম নেই বিষয়টা এমন নয়। আলহামদুলিল্লাহ বাস্তব পরিস্থিতি আল্লাহ’র অনুগ্রহে অতি উত্তম। এব্যাপারে শায়খুনা আবু কাতাদা আল ফিলিস্তিনি হাফিজাহুল্লাহ’র কথা দিয়ে শেষ করছিঃ
“আমরা যা বলি এটি যে এসব (গৃহপালিত) আলেমদের বিপরীত হয় সেটি আমাদের জন্য অভিনন্দনের বস্তু। আমরা নিন্দিত হব তখন, যদি আমাদের বক্তব্য আমাদের নির্ভরযোগ্য আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীনের বিপরীত হয়, যদি আমরা বিপরীত বলি কিতাবুল্লাহ যা বলেছ হাদিসে যা এসেছে, সাহাবায়ে কিরাম যা করেছে্ বিশ্বস্ত তাবেয়ীগন যা বলেছেন যেমন- সায়ীদ ইবনু মুসায়্যিব , সায়ীদ ইবনু জুবায়ির মুজাহিদ ইবনু জাবর। আমরা যদি এদের বিপরীত কিছু বলি তাহলে অবশ্যই নিন্দিত হবো। তবে যদি আমরা এসব আদর্শহীন আলেমদের বক্তব্যের বিপরীত কিছু বলি তাহলে আল্লাহর কসম এটা আমাদের জন্য প্রশংসার বিষয়। মুখ্য বিষয়াবলিতে এবং মূলনীতিতে আমরা সালাফের খেলাফ বলেছি, প্রতিপক্ষ এমন কিছু নিয়ে আসুন দেখি!
হাঁ আমরা এসব আলেমদের বিপরীতে কথা বলছি কারন আমাদের এদের প্রতি কোন আস্থা নেই, কারণ তারা সে পক্ষই অবলম্বন করে এবং সেই সিদ্ধান্তই প্রকাশ করে যা আল্লাহর দুশমন কাফের তাগুত শাসকের অনুকূলে হয়। প্রতিটি রাষ্ট্রই এবং এদের থেকে প্রত্যেক শাসকই মন্ত্রি নির্বাচনের মত করে কিছু গৃহপালিত সেবক ধর্মগুরু ও ভবিষ্যত বক্তা নিজের আশেপাশে জড়ো করে নিয়েছে”।
(সূত্র: شبهة؛ مخالفة أهل التوحيد والجهاد لمشايخ الحكومات المرتدة )
*****************