نحمده و نصل على رسوله الكريم، و بعد:
করোনার আক্রমন না আসলে মনে হয় আমরা আমাদেরকে চিনতামনা। বুঝতামনা আমরা আল্লাহর কতোটা দুর্বল সৃষ্টি। আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন সময় মানবজাতিকে বুঝিয়ে দেন যে, তিনি তাদেরকে খুব দুর্বল করে সৃষ্টি করেছেন। যখন কোন কওম সীমা ছাড়িয়ে অসীমের পথে হাটতে চায় আল্লাহ তখন তা সহ্য করেননা। তিনি তাদেরকে কঠিন পাকড়াও করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন তার সীমা কতটুকু। আর কেনইবা তাকে এই দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে। তাকে এখানে এই জন্য পাঠানো হয়নি যে সে আল্লাহর নাফরমানিতে সীমা ছাড়িয়ে যাবে। তাকে এজন্যও পাঠানো হয়নি যে, পাপের সমুদ্রে ভেসে গিয়ে সে আল্লাহর নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবে। আল্লাহ তাআলা বড়ই আত্মসম্মানবোধ সম্পন্য এক মহান সত্তা। তাঁর বেধে দেওয়া সীমার বাহিরে চলে যেতে চাইলে তিনি ছেড়ে দেননা, যদিও অনেক গুনাহ তিনি ক্ষমা করে দেন। তিনি বলেনঃ
وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ
"তোমাদের উপর যত বিপদাপদ পতিত হয় তা তোমাদেরই হাতের কামাই, বরং আল্লাহ তো আরো অনেক কিছুই ক্ষমা করে দেন"
মহান আল্লাহ তাআলা যদি আমাদের সব পাপের শাস্তি দিয়ে দিতেন তাহলে দুনিয়া আরো বহু আগেই ধ্বংস হয়ে যেতো। তিনি যখন কারো উপর অত্যন্ত রুষ্ট হন তখন তাকে ধ্বংস করে দেন। ইতিপূর্বে আদ, সামুদ, আসহাবুল আইকা, ফেরাউনের সম্প্রদায় সহ আরো নাম না জানা অসংখ্য জাতীকে আল্লাহ তাবারকা ওয়া তাআলা তাদের পাপের কারনে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এমনকি কারো কারো চিহ্নটুকুও অবশিষ্ট রাখেননি। কুরআনে যে সমস্ত জাতীকে ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে তাদের পাপাচারের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বড় দুঃখ ও দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে তাদের সকলের মধ্যে যত পাপাচার ছিলো বলে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন তার সবগুলোই একক জাতী হিসাবে বর্তমান বিশ্বের মানুষের মধ্যে রয়েছে। তিনি যদি পূর্ববর্তিদেরকে কোন বিশেষ একটি পাপের কারনে ধ্বংস করে দেওয়ার ফায়সালা করে থাকেন, তাহলে সর্বপাপের আখড়া হিসাবে বর্তমান পৃথিবীকেও ধ্বংসের ফায়সালা করলে কি তা অন্যায় হবে? আল্লাহর কসম কস্মিনকালেও তা হবেনা।
আমরা জানি পাপ যত বড় তার শাস্তি ততো কঠিন। আর পৃথিবীর ইতিহাসে বর্তমান সময়ের চেয়ে বড় পাপিষ্ঠ প্রজন্ম কোনকালেই ছিলো বলে প্রমান পাওয়া যায়না। সেই হিসাবে কি বর্তমান প্রজন্মই মহাকালের সর্বনিকৃষ্ট শাস্তির উপযুক্ত হয়ে যায়নি? এমন কোন পূন্য আমাদের আছে যা দ্বারা এই অবধারিত শাস্তি থেকে আমরা নিজেদেরকে বাচাতে পারি? হিসাব করলে দেখবো, তেমন কিছুই নাই আমাদের।
আজকে যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়েছে তখন আমরা ভাবছি কেনো এমন হলো! আমরা এর বিভিন্ন জাগতিক কারন খোজার মধ্যেই ব্যাস্ত। ক্ষনে একে দোষ দিচ্ছি তো পরক্ষনে ওকে দোষারোপ করছি। চীনের ঐ বাদুর আর ইদুরের উপর আমাদের দৃষ্টি পড়ছে। কিন্তু ঐ বাদুর আর ইদুরের মাধ্যমে বা অন্য কোন সৃষ্টির মাধ্যমে কে এই অতিক্ষুদ্র জীবাণুকে বিরাট বড় দুর্যোগ বানিয়ে দুনিয়ার মানুষের নিকট পাঠালেন? কেনই বা পাঠালেন? সেই দিকে আদৌ কি আমাদের দৃষ্টি পড়ছে? আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَلَنُذِيقَنَّهُمْ مِنَ الْعَذَابِ الْأَدْنَىٰ دُونَ الْعَذَابِ الْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
"আমি তাদেরকে বড় শাস্তি দেওয়ার পূর্বে ছোট শাস্তি ভোগ করাই, যাতে তারা ফিরে আসে"
এমন রহমদীল রব আর কে হতে পারেন? তাঁর নিজের সৃষ্টি নিজে ধ্বংস করে দিলে কে আছে তাঁকে জবাবদিহি করার মতো? তবুও তিনি তার বান্দার প্রতি দরদী। তিনি তাকে সাবধান করতে চান। কিন্তু যখন সে অবাধ্যতার চরম সীমায় পৌছে যায় তখন তিনি পৃথিবীতে ব্যলেন্স করার জন্য একদল নাফরমানকে ধ্বংস করে দেন। যদি তিনি এই ব্যবস্থা না রাখতেন তাহলে পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়ে যেতো।
আসমান ও জমিনের কোন সৃষ্টিই আল্লাহর অবাধ্যতাকে পছন্দ করেনা। মাটির নিচের ক্ষুদ্র পিপড়ার দল থেকে শুরু করে আকাশের ফেরেশতাগন পর্যন্ত পাপাচারির ধংস কামনা করে। পিপিলিকা তার ছোট মুখটি দিয়েও পারলে তার ঘাড় মটকে দেয়! কিন্তু মানুষ ও জ্বীনের দল আল্লাহকে মানতে নারাজ। এইজন্যই পাপাচারির উপর আল্লাহর শাস্তি বর্ষিত হলে আকাশ জমিন কাঁদেনা। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَاءُ وَالْأَرْضُ وَمَا كَانُوا مُنْظَرِينَ
"তাদের এই ধ্বংসাবস্থা দেখে আকাশ ও জমিন দুঃখভরে কাঁদেনি, আর তাদেরকে অবকাশও দেওয়া হয়নি"।
বরং তাদের কর্মকান্ডে অতিষ্ট ও অসহ্য হয়ে আকাশ জমিন ক্ষোভে ফেটে পড়ে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেনঃ
تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنْشَقُّ الْأَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدًّا
"তাদের এহেন কর্মকান্ডের কারনে আকাশসমূহ চরম ক্ষোভে ফেটে পড়ার উপক্রম করে, জমিন বিদীর্ন হয়ে পড়তে চায় ও পাহাড়-পর্বত প্রকম্পিত হয়ে উঠে"
হে মানুষ! কিসের এতো অহংকার তোমার! আকাশ যদি তোমার উপর ভেঙে পড়ে, জমিন যদি তোমাকে গিলে নেয় আর পাহাড় যদি তোমার উপর আছড়ে পড়ে, তাহলে কে আছে এমন যে তোমাকে রক্ষা করবে? কোথায় যাবে তোমার অহংকার? এই ছোট জীবানু করোনার আক্রমনে যদি তোমার এই মরনদশা হয় তাহলে আল্লাহর বড় বড় বাহিনির বিরুদ্ধে কিভাবে তুমি টিকে থাকবে? নিজেকে নিয়ে ভাবো। নিজের ক্ষুদ্রতাকে অনুধাবন করো। আজকে তুমি মঙ্গলে গিয়ে ভাবছো তুমি দুনিয়ার বাহিরে চলে গেছো, অথচ মঙ্গলের ধুলিকনার চেয়ে ছোট এক জীবানু তোমার জীবনকে নাজেহাল করে ছেড়েছে। দুনিয়াটাকে একটি ক্ষুদ্র হাশরের মাঠ বানিয়ে দিয়েছে। যেখানে বাবা মারা গেলে ছেলে তার লাশটা পর্যন্ত ধরতে চাইছেনা। চোখের সামনে প্রানপ্রিয় ছেলের জীবন যেতে দেখেও মা কাছে ঘেসছেনা! অত্যন্ত ছোট হওয়ার কারনে চোখে দেখা যায়না আল্লাহর এমন এক ক্ষুদ্র সৈনিকের আক্রমনে এই যদি হয় তোমার অবস্থা, তাহলে ৬০০ পাখাবিশিষ্ট অতিকায় ফেরেশতার আঘাতে তোমার কি হাল হবে তা কি একবার ভেবে দেখেছো? না এটা তুমি হিসাব করে বের করতে পারবেনা। কারন তোমার জ্ঞান তোমাকে সেই পর্যন্ত যাওয়ার সামর্থ যোগাতে পারবেনা! এর ক্ষুদ্রতম একটা উদাহরন তুমি পাবে যদি বিশ্ব ত্বগুত মোড়ল আমেরিকার দিকে দৃষ্টিপাত করো। পৃথিবীর কোন শক্তি যাদেরকে কাবু করার স্বপ্ন দেখেনা, আল্লাহর এই ক্ষুদ্র সৈনিক করোনা তাদেরকে এমন কাবু করেছে যে তারা এখন স্বপ্নেও করোনার ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে। তাদের অপ্রতিরোধ্য নৌসেনারা এই ক্ষুদ্র সৈনিকের থাবা থেকে বাঁচতে আকুতি করছে। তাদের অতুলনীয় চিকিৎসাবিজ্ঞান এই ছোট্র সেনার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের অর্থনীতি এই ক্ষুদ্র সৈনিকের কাছে হার মেনেছে। তুমি কি ভাবছো এটা নিছক একটা দুর্ঘটনা? কক্ষনইনা। এটাই হচ্ছে আল্লাহর সেই ফায়সালা যা তিনি অবাধ্যদের জন্য করে থাকেন।
وَاللَّهُ غَالِبٌ عَلَىٰ أَمْرِهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
"আল্লাহ নিজ সিদ্ধান্তে প্রবল থাকেন, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না"। মহান আল্লাহ যদি ফেরাউনকে ধ্বংসের জন্য মুসাকে তার ঘরেই লালনপালন করাতে পারেন, তাহলে তিনি কুফফারদেরকে ধ্বংসের জন্য প্রানঘাতি ভাইরাসকেও তাদের ল্যাবগুলোতে বানাতে পারেন। এতে আল্লাহর ক্ষমতার কমতি প্রকাশ পায়না বরং কুফফারদের দুর্বলতাই প্রকাশ পায়।
সুতরাং হে মানবজাতি! আল্লাহর দিকে ফিরে এসো। সমাধানের জায়গায় এসে সমাধান খুজো। আল্লাহ তাআলা তার কাছে ফিরে আসা বান্দাদেরকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। তিনি আমাদেরকে দরদভরে বলছেন-
مَا يَفْعَلُ اللَّهُ بِعَذَابِكُمْ إِنْ شَكَرْتُمْ وَآمَنْتُمْ ۚ وَكَانَ اللَّهُ شَاكِرًا عَلِيمًا
"যদি তোমরা ইমান আনো ও শুকরগুজার হও তাহলে তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কি লাভ! আল্লাহ তো হচ্ছেন উপযুক্ত মূল্যদানকারী সর্বজ্ঞ"
পরিশেষে মহান রবের দরবারে আকুল মিনতি করছি,হে আমাদের রব! আমাদেরকে পাপাচারিদের অন্যায়ের কারনে ধ্বংস করে দিবেন না। আমরা আপনাকে রব হিসাবে মেনে নিয়েছি,ইসলামকে দ্বীন হিসাবে গ্রহন করে নিয়েছি এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) কে আপনার নাবী হিসাবে কবুল করে নিয়েছি। হে আমাদের রব! আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। কাফেরদেরকে যা দিয়ে শাস্তি দিবেন তা দিয়ে আমাদেরকে পরিক্ষা করবেননা। আমাদের বংশধরদের মধ্য হতে আপনার পথের পথিক বানিয়ে দিন। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আপনার পথে অটল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
و صلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وصحبه وسلم تسليما كثيرا