পদে পদে আল্লাহর নুসরাত
জম্মু-কাশ্মির ফ্রন্টে কমান্ডার শামশীর খানের
ঈমান-দীপ্ত দস্তান
=======================================================================
সাইয়্যেদ সালাহউদ্দীনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ইসলামাবাদ পৌঁছলাম। এখানে একজনের সাথে পূর্বেই সাক্ষাত করার কথা ছিল। তিনি জম্মু যাবেন। কিন্তু আমাদের মিশন ভিন্ন। দু'ঘন্টা তার সাথে আলোচনা কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছা হয়। এরপর তিনি জন্মুর পথে যাত্রা করেন। তিনি যাবেন বাসে। আর আমি যাবো বরফাবৃত পর্বত চূড়া, জঙ্গল ও নদী নালা পেরিয়ে বন্ধুর পথ ধরে।
একান্ত ঘনিষ্ঠজনদের বিদায় জানিয়ে এক বস্তীতে পৌঁছলাম, যেখানে গাইভ আমার অপেক্ষায় ছিল। সে পূর্ণ প্রস্তুত। এমুনিশন ও খাদ্যপানীয় কাঁধে নিয়ে গন্তব্যের পথে পা বাড়ালাম। গাইডকে জিজ্ঞেস করলাম, আমরা ক'দিনে জম্মু প্রদেশে পৌঁছতে পারবো? বল্লো, ‘চারদিন তো লাগবেই!’ বল্লাম এর চেয়ে কম সময়ে পৌঁছা যায়,না? গাইড বল্লো, যাবে ঠিকই কিন্তু সেপথ বড় দুর্গম। পথে পথে উঁচু উঁচু পর্বত ও অসংখ্য গভীর খাদ। আপনি বল্লে সে পথই ধরব। তাতে একদিন পূর্বেই আমরা জম্মুর সীমান্তে পৌঁছে যাবো। বল্লাম, কোন অসুবিধে নেই। দুর্গম পথেই আমরা চলব। আর কষ্ট ক্লেশ সেতো জীবনসঙ্গী। আল্লাহ আমাদের মদদগার হলে কষ্টের ভয় কি আর।
দূর্গম পথে দু'দিন আমাদের যাত্রা চল্লো। দিন রাত সমানে শুধু পথ চলা।বরফাবৃত চূড়া, ঘন জংগল ও গভীর নদী পেরিয়ে শুধুই সামনে চলা। শীতল পানি প্রবাহ পেরিয়ে ওপারে যেতে মনে হত যেন রক্ত হীম হয়ে গেছে। আবেগের উত্তাপে তবুও পা থামে না।
অস্তগামী সূর্যের কিরণে ঝিকমিক করছে বরফ ঢাকা পাহাড়ের চূড়া। এমন সময়ে গাইড এক সুখবর দিলো, ঐ চুড়ার ওপাশেই সীমানা। একথা শুনতেই আমার অবস-ক্লান্ত-শ্রান্ত পা সতেজ হয়ে ওঠে দ্রুত অগ্রসর হতে থাকি। তিন চার ঘন্টা মধ্যে আমরা বরফ মোড়া দুর্গম পাহাড় অর্ধেক পেরিয়ে যাই। অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। আমরা যত শীঘ্র সম্ভব জম্মু সীমান্তে পৌঁছতে চেষ্টা করছিলাম।
হঠাৎ মেঘ ছেয়ে যায় আকাশে। প্রথমে বৃষ্টি এরপর তুষারপাত। গাইড আকাশে তাকিয়ে বল্লো, আবহাওয়া মোটেই সুবিধেজনক নয়। অন্ধকার ক্রমে গাঢ়তর হচ্ছে। এভাবে প্রচণ্ড বরফপাতের সাথে তীব্র হাওয়া বইলে শীতের প্রকোপে পথেই আমাদের ইহলীলা সাঙ্গ হবে। তাকে বল্লাম, থামলে চলবে না। সামনে অগ্রসর হতে হবে। প্রায় সীমান্তে পৌঁছে হিম্মত হারা হওয়া মঞ্জিলে ছুঁয়ে ফেরৎ যাওয়ার নামান্তর নয়কি? গাইড তো আর আমার মত আবেগদীপ্ত নয়। তাই বল্লো, আজ ফিরে চলুন, বাকী পথ আগামী কাল পারি দিব। এমতাবস্থায় পর্বত চুড়ায় উঠলে মৃত্যু সুনিশ্চিত। তখন মঞ্জিল হাত ছানি দিয়ে ডেকেও আমাদের পাবে না। শেষে গাইডের কথাই মানতে হলো। আরোহনের বদলে অবতরণের পালা। ক্ষণিক পরেই আমরা এক গ্রামে পৌঁছে যাই। ওগ্রামের এক বাড়ীতে উঠলাম| রাতটা ওখানেই কাটালাম।
ভুয়া মুজাহিদের অপকীর্তিঃ খুব ভোরে পুনরায় সউৎসাহে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন সময় এক ব্যক্তি বল্লো, ‘এগ্রামে আলফাতাহ্ নামের একটা সংগঠন একজন ফরাসী ইঞ্জিনিয়ারকে অপহরণ করে বন্দি করে রেখেছে।’ কথাটা শুনেই চমকে উঠলাম। আমার জানা মতে কাশ্মীরে আল্ ফাতাহ নামের কোন মুজাহিদ সংগঠন নেই। এসব ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো মুজাহিদদের জন্যে একটা মাথা ব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেকারগোষ্ঠী ও ভারতীয় এজেন্টরা মুজাহিদদের ছদ্মবেশে এভাবে হীনস্বার্থ উদ্ধার করে চলছে। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের জোরে জনগণের পয়সা লুটে আর পথিকদের বিপাকে ফেলে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো, এ অপকর্ম ঐ গ্রুপেরই হবে। এরা উক্ত ইঞ্জিনিয়ার থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ নিয়ে তাকে ছেড়ে দিবে। তবে এসব অপকর্ম বরং সরকারী এজেন্টেদের হাতে বেশী ঘটে থাকে। সারা বিশ্বে কাশ্মীর জিহাদ, মুজাহিদদের দুর্ণাম রটাতে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চলছে। বিশ্ব জনমত মুজাহিদের বিপক্ষে চলে যাওয়ারও আশঙ্কা হচ্ছিলো। তাই সমস্ত মুজাহিদ সংগঠন এ ধরণের অপতৎপরতায় জড়িত সমস্ত লোকদের নির্মূল করার সীদ্ধান্ত নেয়।
গাইডকে বল্লাম, ‘জম্মু পৌঁছার পূর্বেই এ সমস্যার একটা নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। আমি দেখতে চাই ইঞ্জিনিয়ারকে যারা অপহরণ করেছে তারা কারা।’ গাইড বল্লো, 'ইঞ্জিনিয়ারকে যারা অপহরণ করেছে তারা খুবই শক্তিশালী এবং সরল তো নয়ই বরং সংখ্যায়ও অনেক। আর আপনি একা। তাই এ বিষয়ে জড়িত না হওয়াটাই উত্তম।’ বল্লাম, প্রয়োজনে এখানের মুজাহিদ সংগঠনের সাহায্য নেয়া হবে। অপহরণ করে ইঞ্জিনিয়ারকে যে গ্রামে রাখা হয়েছে সে গ্রামের দূরত্ব এখান থেকে অন্তত দশ মাইল। পায়ে হেটে চল্লাম। সে গ্রামের পথে গাড়ীর ব্যবস্থা নেই। মাইল খানেক চলার পর পিছন হতে দু'টি ছোট ট্রাক আসতে দেখা গেল। ভয় হল এরা আবার আর্মি কিনা। তাই সড়ক ছেড়ে পাশ দিয়ে চলতে থাকি। গাড়ী নিকটে এলে দেখলাম, তারা মুজাহিদ। তাদের ইঙ্গিত করতে গাড়ী থামায়।
উভয় গাড়ীতে আনুমানিক সত্তুরজন মুজাহিদ হবে। কমান্ডার আমার অতি পরিচিত। গাড়ী থামাতেই তিনি লাফ দিয়ে নেমে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাচ্ছেন বিশেষ কোনো মিশন আছে কি? বল্লেন, এটা রুটিন মাফিক টহল। আমি তাকে বল্লাম, ‘বিশেষ প্রোগ্রাম না থাকলে আমার সঙ্গে চলুন।’ তাকে ইঞ্জিনিয়ারের অপহরণের ঘটনা বল্লাম। এ সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তারও জানা মতে কাশ্মিরে আল-ফাতাহ্ নামের কোন সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। নিশ্চয়ই দু্ষ্কৃতীকারীরা সরকার থেকে পয়সা মারার জন্যে এটা করেছে। আমি ইঞ্জিনিয়ারকে উদ্ধারের সঙ্কল্প তাকে ব্যক্ত করলাম। বল্লাম, আপনি সাহায্য করলে কাজটা সহজ হত। কমান্ডার। খুব উৎফুল্ল চিত্তে আমার প্রস্তাবে সায় দিলেন। গাড়ীতে চড়ে আমরা দ্রুত গন্তব্যের পথে চল্লাম।
আলফাতার আস্তানাঃ যে গ্রামে ইঞ্জিনিয়ার বন্দি, আমরা তার থেকে এক কিলোমিটার আগেই গাড়ী ছেড়ে পায়দল গ্রামে পৌঁছলাম। গ্রামের বাইরে কিছু লোকের সাথে দেখা। তথ্য নেয়ার জন্য তাদের একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এ গ্রামেকি ক'জন মুজাহিদ এসেছিলো। তারা অজ্ঞতা প্রকাশ করে। তাদের কথার ভঙ্গিতে বুঝলাম, কিছু গোপন করছে তারা। আমি তাদের আস্তাভাজন হয়ে বল্লাম, ‘এখানে অবস্থানরত লোকগুলো মুজাহিদ নয়। তারাতো দু্ষ্কৃতিকারী। মুজাহিদদের দূর্ণাম রটানোর জন্যে তারা ঘৃণ্য তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। তারা এক নিরাপরাধ ব্যক্তিকে অপহরণ করে এ গ্রামে বন্দি করে রেখেছে। আমরা মুজাহিদ। নিরাপরাধ লোকটিকে আমরা মুক্ত করতে চাই। আপনারা আমাদের সাহায্য করুন এবং যে ঘরে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে সে ঘরটি দেখিয়ে দিন।
মুজাহিদদের নাম ও আমাদের কথা শুনে লোকটা নিশ্চিত হয়। অতপর বল্লো, এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে৷ অপহরণকারীরা নিজেদের মুজাহিদ বলে দাবী করছে। এজন্য তারা এখানে আশ্রয় পাচ্ছে। এরপর তারা সে ঘরটি দেখিয়ে দেয়। যে ঘরে ইঞ্জিনিয়ারকে বন্দী করে রাখা হয়েছে।
দশ মিনিটের মধ্যে আমরা ঘরটি ঘিরে ফেল্লাম। এখানে নিরাপত্তামূলক কোন ব্যবস্থা চোখে পড়ল না। এটা এ গ্যাংয়ের অপরিপক্কতার পরিচায়ক। আর মুজাহিদরা যে কোন পদক্ষেপ নিলে দূর দূরান্ত পর্যন্ত সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করে থাকে। ঘেরাও করার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা কয়েকটা ফাঁকা গুলি করি। এরপর ওই ঘরবাসীদের উদ্দেশ্যে গুরু গল্তীর কণ্ঠে বলি যে, তোমরা এখন অবরুদ্ধ। বাঁচতে চাইলে হাত উঁচিয়ে বেরিয়ে এসো। ক্ষণিক পরেই সবাই হাত উঁচিয়ে বেরিয়ে আসল। তারা সাতজন। ইঞ্জিনিয়ারও তাদের সঙ্গেই আছে। মুজাহিদরা এ দুষ্কৃতিকারীদের পিটুনি শুরু করে। আমি তাদের বাঁধা দিয়ে বনাম, এদের না পিটিয়ে বরং বন্দী করো। এমন শিক্ষা এদের দিতে হবে যাতে আর কারও ক্ষতি করতে না পারে। এরপর দু'জন মুজাহিদ ঘরে ঢুকে সাকটা অস্ত্র কব্জা করে নেয়। দেখলাম ইঞ্জিনিয়ার ভয়ে থর থর করে কাঁপছে। তার এ অবস্থা দেখে মনে ব্যথা পেলাম আর, দু্ষ্কৃতিকারীদের প্রতি মনটা বিষিয়ে উঠল। একজন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে তারা কেন এমন পেরেশান করল।
ইঞ্জিনিয়ারকে অত্যন্ত সন্ত্রস্ত দেখাচ্ছে, হয়ত সে ভেবেছে, এবার কোন বড় দুষ্কৃতিকারীদের কবলে সে পড়েছে। দুষ্কৃতিকারীদের হাতে পড়ে জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিল। আর আমাদের দেখে ভাবছিল, জীবনের শেষ মুহূর্ত হয়ত এসে গেছে। আমি অগ্রসর হয়ে তার সাথে কোলাকুলি করলাম। তার অশ্রু মুছে দিলাম। এতে সে আরো ঘাবড়ে যায়। তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বল্লাম, তুমি এখন নিরাপদ। আর কোন ভয় নেই। কিন্তু সে কাশ্মিরী বা ইংরেজী ভাষা মোটেই বুঝে না। জানে শুধু ফরাসী ভাষা৷ আবার আমরা তা বুঝি না। আমি ইশারা ইঙ্গিতে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম যে, তুমি এখন মুক্ত। তোমার কোন অনিষ্ট করা হবে না। কিন্তু তার ফ্যাকাশে চেহারায় আশংকার ছাপ এখনও স্পষ্ট দেখা যায়। হাড় কাঁপানো শীতে তার দাঁত ঠক্ ঠক্ করছে। এক মুজাহিদ তার ওভার কোট খুলে তাকে পরিয়ে দেয়। এবার ইঞ্জিনিয়ার কিছুটা আশ্চার্য্য ও কৃতজ্ঞতা মিশ্রিত নয়নে আমাদের দিকে তাকায়। আমরাও তার দিকে তাকিয়ে বন্ধুত্বের হাসি হাসলাম। এতে তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠে। আকারে ইঙ্গিতে এতক্ষণ চেষ্টা করেও যা বুঝাতে ব্যর্থ ছিলাম এক মুজাহিদের ছোট্ট এক আন্তরিক ব্যবহার তা বুঝিয়ে দেয়। সে বুঝে নেয়, আমরা তার দুশমন নই বরং বন্ধু।
এরপর ইঞ্জিনিয়ার ও অপহরণকারী চক্রকে সঙ্গে করে গতরাতে যে গ্রামে ছিলাম সে গ্রামের পথে চল্লাম। গ্রামে পৌঁছে দেখি, আমার সঙ্গী মুজাহিদরা পূর্বেই সেখানে পৌঁছে আমাদের অপেক্ষা করছেন। এই অপহরণকারী চক্রের দু'জন ভারতীয় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশের সদস্য। উভয়ে শিখ। তাদের দাড়ী মুণ্ডানো। তার অর্থ এরা মৌন শিখ। শিখ দু'জন বল্লো, 'তারা সোর্স সদস্য। ইদানিং দল ত্যাগ করেছে। আমি বল্লাম, এ দু'জনকে পৃথক করা হোক। প্রথমে অন্যান্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা যাক। এরপর তাদের পালা। আমি এই নামধারী ভুঁয়া মুজাহিদদের বল্লাম, সাফসাফ বলো, কে এ নিরাপরাধ প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ারকে অপহরণ করেছ? লজ্জা হয়না তোমাদের যে, হীন স্বার্থে সরকার থেকে ক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্যে আমাদের পবিত্র জিহাদকে বিশ্ববাসীর সামনে হেও প্রতিপন্ন করছো? তাদের খুব বকলাম। কিন্তু তাদের দাবী তারা ভুঁইফোড় নয়। তারা আল-ফাতাহ্ সংগঠনের সদস্য। সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তারা এ সব করছে।
আমরা ভাল করেই জানি যে, ভুঁইফোড় সংগঠন গুলোর জন্ম হয় এসব অপকর্মের জন্যই। হীনস্বার্থ হাসিলের জন্য এরা নিজেদেরকে মুজাহিদ বলে জাহির করে। সাথিরা বল্লো, এত সহজে এরা সত্য কথা প্রকাশ করবে না। অন্য পন্থা অবলম্বন করা হোক, তাতে গর্তের সাপ অল্প সময়ে বেরিয়ে আসবে। আমি বাধা দিয়ে বন্ধাম ‘না! সোজা আঙ্গুলেই ঘি তুলব আজ।’
অন্য সাথীদের বল্লাম, শিখ দু বন্দী এবং তাদের ভাববার সুযোগ দাও এবং এও বলে দাও মিথ্যা বললে, অত্যন্ত কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হবে। এরপর শিকদের দিকে ফিরে পাঞ্জাবী ভাষায় বলাম,
‘সরদার জী! ছাচ্ছি গল করোতো জান ছড়াও। (অর্থাৎ সত্য বলো তাহলে মুক্তি দিব।) তারা বল্লো, ‘আমরা ভারতভুক্ত পাঞ্জাব অধিবাসী এবং সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশের সদস্য। কাশ্মীরে ভারতীয় নিপীড়ন আমাদের বিবেককে দংশন করে। ভাবলাম, পাঞ্জাবে ভারত সরকার শিখদের দমন করছে৷ এদিকে আমরা এ জালিম শাসকের ক্রীড়ানক হয়ে কাশ্মীরী ভাইদের উপর অত্যচার করছি। তাই আমরা দু'জন দলত্যাগ করে মুজাহিদদের সাথে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস! শেষে এ ভুয়া মুজাহিদদের ফাঁদে পড়ে গেলাম।
বল্লাম, সরদার জী! আজব কথা বল্লে! স্বজাতির উপর নিপীড়ন দেখে বিবিকের দংশন অনুভব হয়নি..... পাঞ্জাবে থাকতে বিদ্রোহ করলেনা। কিন্তু কাশ্মীর পৌঁছেই তোমার বিবেক জেগে উঠলো? এটা কেমন কথা সরদার জী! সত্য কথা বল।
আমার প্রশ্নের উত্তরে কিছুই বল্লো না সে। ক্ষণিক পর বলতে লাগলো, ‘বিশ্বাস করুন আর না করুন যা বলেছি সত্যই বলেছি। শেষতক তারা কিছুই স্বীকার করছে না দেখে ওয়াকি টকিতে চীপ কমান্ডার সাহেবের সাথে যোগাযোগ করার পর এদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরামর্শ হলো।
ইঞ্জিনিয়ারের তিনটি শব্দ আমার বুঝে আসে-কাশতওয়াড়া, ফেমেলী ও ফ্রাক্স। অর্থাৎ সে ফ্রান্সের অধিবাসী। তবে তার পরিবার রয়েছে কাশতওয়াড়ায়।
চীফ কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বল্লেন, ‘বন্দীদেরকে আমার ক্যাম্পে পাঠিয়ে দাও। শরীয়া বোর্ড তাদের বিচার করবে। খেয়াল রেখ, তাদের যেন কোন কষ্ট না হয়। তাদের জন্য পরিমাণ মত খাদ্য পানিয়ের বাবস্থা করবে। আর ইঞ্জিনিয়ারকে নিরাপদে কাশতওয়াড়ায় তাঁর পরিবারের নিকট পৌঁছিয়ে দিবে। ইঞ্জিনিয়ারকে ক'জন মুজাহিদের প্রহরায় কাশতওয়াড়া রওয়ানা করিয়ে দেয়ার সময় আনন্দে তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠে।সে বারবার আমাদের জড়িয়ে ধরে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে আমাদের দেখতে থাকে। এরপর ৭ জন দুষ্কৃতিকারীকে চীফ কমান্ডার সালাহউদ্দীন সাহেবের ক্যাম্পে রওয়ানা করিয়ে দিয়ে পুনরায় আমি জন্মুর পথ ধরলাম।
রহমতে খোদাওয়ান্দীঃ কয়েক ঘন্টা চলার পর আমরা এ চুড়া পার হই। বরফপাতের কারণে যেখান থেকে আমাদের ফিরে যেতে হয়েছিলো। চূড়ায় দাড়িয়ে দেখলাম এক অপরূপ দৃশ্য। একদিকে কাশ্মীর উপত্যকার দক্ষিণাঅঞ্চলীয় সারী সারী নয়নাভিরাম সুউচ্চ পর্বতমালা। অপরদিকে জন্ম উপত্যকা আর গাড় সবুজ গাছপালা। এই অপরূপ দৃশ্য দেখে হাজারো ছবি ভেসে উঠে আমার নয়ন তারায়। কাশ্মীরে চলছে নিপীড়ন-নির্যাতন ও প্রত্যয় সাহসিকতার সংঘর্ষ অপরদিকে জন্মু প্রদেশ যাকে সব সময় কাশ্মীরের তরবারী উঁচু করা বাহু বলা হয়। কিন্তু সে বাহু নিথর| কল্পনার চোখে দেখলাম, বাহু সচল হয়ে উঠছে তুলে নিচ্ছে পতিত দুধারী শামশীর খানা। দেখলাম সে তরবারী খানা একের পর একে কেটে যাচ্ছে খুনীর শাহরগ। আরো দেখলাম, জন্মুর তাওহীদি কাফেলা তরবারী হাতে জিহাদে ঝাপিয়ে পড়ছে। আর সাম্রাজ্যবাদী ভারত তার দানবীয় দেহটা নিয়ে উন্মত্ত জিঘাংসায় জ্বালিয়ে ভম্ম করে দিচ্ছে ভুসর্গ কাশ্মির উপত্যকা। দাউ দাউ করে পুরো কাশ্মির জ্বলছে।
জম্মুর পথে এটা আমার তৃতীয় সফর। আগে গ্রুপ বেধে গিয়েছিলাম। কিন্তু এবার একাকী অজানা পথে একাকী যেতে হবে। আমার সাথে অস্ত্র এবং গোলা বারুদও রয়েছে। এত কিছু নিয়ে সবার চোখকে ফাঁকি দেয়া বড়ই দুস্কর। দ্বিতীয়ত এ পথে হিন্দু অধিবাসীদের সংখ্যা বেশী। পদে পদে রয়েছে ফৌজ ও ইন্টিলিজেন্সের ফাঁদ। কিন্তু যে দায়িত্ব আমি নিয়েছি যে মিশন সামনে রেখে ঘর ছেড়েছি তা পূর্ণতা যা পৌঁছানোর দৃড় প্রত্যয়ই আমার শক্তি। যে সত্ত্বা তার পথের পথিক নিঃস্বম্বল বান্দাদের একা ছেড়ে দেননা, তারই অসীম রহমতের ছায়ায় এগিয়ে চলছি আমি। পদে পদে আল্লাহর নুসরাতের বিশ্বাস যখন আপনার মনে আনন্দের জোয়ার সৃষ্টি করবে, তখন আপনি হবেন এ ভুভাগের সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি। অজানা ভয় শত্রু ও হিংস্র প্রাণী আপনার নিকট মনে হবে নিষ্প্রাণ। শত্রুর সুবিশাল বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে আপনি ভয় পাবেন না।
পর্বতের চূড়া হতে নেমে আমরা সামনে চলতে থাকি। হালকা বরফপাত হচ্ছিল। আমাদের কাপড় ভিজে যাচ্ছে। ঠান্ডায় দাঁত ঠক্ ঠক্ করে কাঁপছে। এ সময় আমরা জঙ্গল দিয়ে হাটছি। মনে মনে মহান আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ছিলাম। ঠাণ্ডায় হাত সঞ্চালন করাও দু্ষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। গাইড বল্লো, প্রথম গ্রামটিই আমাদের মনযিল। সম্পূর্ণ গ্রামটি হিন্দু বসতী। শুধু গ্রামের মাঝখানে একটি মুসলিম ঘর। সবার অলক্ষ্যে ওই গ্রামের নিকটে পৌঁছলাম। পাহাড়ী উপত্যকার চেয়ে জন্মুর বসতী এলাকায় মুজাহিদদের বেশী ভোগান্তীর কারণ ও পরিমাণটা আন্দাজ করতে পারলাম। এবার ঘন্টা খানেক চলার পর রাখাল ও গোয়ালদের পাহাড়ী বাড়ী-ঘরের নিকট পৌঁছলাম। গাইড বল্লো, আমাদের মনযিল বেশী দূরে নয় আর। তবে অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত এখানেই অপেক্ষা করতে হবে। প্রচন্ড ঠান্ডা থেকে আত্মরক্ষার জন্যে গাইড কিছু কাঠ যোগাড় করে আগুন ধরায়। তাতে কাপড় শুকিয়ে নিলাম।
আগুনের তাপে সতেজ হয়ে উঠলাম। সাথে আনা রুটি ও মরীচ দিয়ে নাস্তা সারলাম। রাত আটটায় অন্ধকার গাঢ় হয়ে এলে গ্রামের পথ ধরলাম| গ্রামে তখন পিন পতন নীরবতা। বেঘোরে ঘুমিয়ে থাকা লোকগুলোর বুক কাঁপার শব্দও শোনা যাচ্ছিল। খুব সতর্ক পদে মুসলিম ঘরের দ্বারে পৌঁছি। কুফরের সমুদ্রে ইসলামের দ্বীপ দেখে আনন্দে মন ভরে ওঠল। ভাবলাম, আল্লাহ পাক সবখানেই মুজাহিদের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। গাইড মেজবানের দরোজায় মৃদু করাঘাত করে। ক্ষণিক পর এক লোক দরজা খুলে আমরা চুপে চুপে নিজেদের পরিচয় দিলাম। সে তৎক্ষণাত আমাদের ঘরের ভিতর নিয়ে যায়। অজানা অতিথির আগমনে মেজবানের আনন্দ উথলে পড়তে চায়। তিনি বারবার বলতে লাগলেন, “আমি কতইনা সৌভাগ্যবান, এক মুজাহিদ আমার ঘরে পদধুলী দিয়েছেন।”তিনি আমাদের আগুনের ব্যবস্থা করে খানা আনলেন| খেয়ে দেয়ে গভীর ঘুমে ঢলে পড়লাম।
ছদ্মবেশেঃ দুপুরের বেশ পূর্বে আমরা জেগে উঠি। কেউ মুজাহিদ বলে সন্দেহ না করে তাই ছন্মবেশ ধারণ করলাম। পরনের পোষাক খুলে একটা ছিন্ন চাদর গায়ে জড়িয়ে পুরাতন একটা পুটি মাথায় পরলাম, যা এ অঞ্চলের গরীব রাখালদের পোষাক। তবে পুরাতন জুতা পেলাম না। আমারটাই পরলাম। তবুও এখন কেউ আমাকে মুজাহিদ বলে সন্দেহ করবে না। চেহারা সুরতে আমি এখন পুরাপুরি একজন গরীব রাখাল। যে পোষাক বলে তারা মেষ পাল ছাড়া আর কিছুই বুঝে না। অতপর নামাজ আদায় করলাম। মেজবানকে তার আত্তরিক মেহমানদারীর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আবার শুরু হল যাত্রা।
এতক্ষণে সূর্য বেশ তেতে উঠেছে। আমরা একটা পুলের কিনট পৌঁছলাম। সি, আর, পি সৈণ্যরা ওখানে পাহাড়া দিচ্ছে। গাইড পরামর্শ দিল, পুল না পেরিয়ে অন্য পথে চলতে হবে। সৈন্যদের মুখোমুখি হওয়া কখনও বিপদমুক্ত নয়। সে আরও বল্লো, সামনে এক মুসলিম ঘর আছে। সে ঘর থেকে এখানকার নিরাপদ রাস্তা জেনে নিতে হবে। তার কথামত লোক চলাচলের পথ ছেড়ে ভিন্ন পথে চল্লাম। আধঘন্টা পর ওই মুসলিম ঘরে পৌঁছি। সেখানে তিনজন যুবকের সাথে সাক্ষাত হয়। সবাই শিক্ষিত। কথাবার্তার ফাঁকে তাদের বল্লাম, ‘জম্মু মুসলিমদেরও এখন জিহাদে ঝাপিয়ে পড়া চাই। আমার মুখে উপত্যকায় ভারতীয় ফৌজের জুলুম নিপীড়নের বিবরণ শুনে তারা উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে।
ক্ষণিকের সাক্ষাতে ফল দাঁড়ালো এই, তারা বেকারার হয়ে বল্লো, এখুনি আমরা মুজাহিদ বাহিনীতে যোগ দিতে চাই। আপনি ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়ে আমাদের নেতৃত্ব দিন। এরপর দেখবেন জন্মুর জনপদ কিভাবে ভারতীয় ফৌজের জন্যে মৃত্যুপুরী হয়ে দাঁড়ায়।
তাদের বল্লাম, 'ইনশাআল্লাহ-সব ব্যবস্থা হবে। আপাতত আমাদের নিরাপদ রাস্তা দেখান, যাতে সি আর, পী ও অন্যান্য বাহিনীর চোখ এড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারি!
ইসলামের বাঁধন কত গভীর এই অচেনা ভাইদের সাক্ষাতে তার অনুমান হল। ক’ মুহূর্তে পরস্পরে এত আন্তরিক হয়ে গেলাম যেন সবাই বহুদিনের চেনা। তারা বল্লো, এই বেশে আপনাকে কেউ সন্দেহ করবে না। কিন্তু আপনার সাথের অস্ত্রটা একটা সমস্যা। তারা আরও বল্লো, সব পথেই আপনি সামরিক বা আধা সামরিক বাহিনী দেখতে পাবেন। তারা শরীর তল্লাশীর পরই আপনাকে অগ্রসর হওয়ার অনুমতি দিবে। ফলে অস্ত্র রেখে যাওয়া ছাড়া উপায়ত্তর না দেখে যুবক ভাইদের হাতে অন্ত্র ও গোলা বারুদ তুলে দিয়ে বল্লাম, ‘ক’দিন পর আমাদের লোক এখানে আসবে। তার কোড এই। তারা বল্লে তাদেরকে অস্ত্র দিয়ে দিবে। এ কথা বলে আমরা সামনে চল্লাম।
অল্পদূর যেতেই এক বকরীর রাখাল আমাদের পাশ কেটে যাচ্ছিলো। তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি হিন্দু না মুসলমান? বল্লো, ‘আমি মুসলমান।’ আমার নতুন জুতা জোড়া তাকে দিয়ে বল্লাম, এ নতুন জুতা জোড়া তুমি নিয়ে তোমার ছেড়া জুতাটা আমাকে দাও। সে আশ্চর্য হল, এ কেমন লোক! দামী জুতার বদলে প্লাষ্টিকের ছেড়া জুতা নিচ্ছে। সে অবাক হলেও তার জুতা আমাকে দিয়ে আমার জুতা পরে নিল। রাখালের জুতা জোড়া ছিলো, তবুও চাপাচাপি করে পরে নিয়ে অগ্রসর হলাম। এখন আমার মাথার চুল এলোমেলো।
এখন অমার মাথার চুল এলোমেলো। দাড়ি ধুলি-মলিন। শেলোয়ারের একপা হাটু পর্যন্ত উঠানো। আর অন্যটা মাটি ছুয়ে আছে। গায়ের কাপড় মেটে রঙের ভীষণ ময়লাযুক্ত। হাতে লম্বা এক লাঠি, তাতে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছি। আমার এ বেশ দেখে গাইডও হাসতে থাকে। সে বল্লো, এখন পরিচিত কেউও আপনাকে চিনতে পারবে না।
ছোট নদীটা পুলের ওপর দিয়ে পার হলাম। এ পথে লোকজন কম চলাতে কোন সেনা গার্ড দেখা গেল না। পুল পেরিয়ে আবার সড়কে উঠলাম। পনের মিনিট চলার পর পিছন হতে একটা গাড়ী আসতে দেখলাম। ওয়াগন জাতীয় গাড়ী। একে মিটাডোর বলে। গাড়ীটা থামিয়ে তাতে উঠে পড়লাম। ঘন্টা খানিক চলার পর এক পুলের পাশে এসে গাড়ী থেমে যায়। বাইরে তাকিয়ে দেখি, সি আর পির স্বশস্ত্র জওয়ানারা দাড়িয়ে আছে।
আবার বেঁচে গেলামঃ সেনা গার্ড সবাইকে নীচে নামার নির্দেশ দিল। একে একে সবাই নীচে নেমে যায়, কিন্তু আমি গাড়ীতেই বসে থাকি। আমার পরিকল্পনা ছিল, সবার পরে নামবো। সবাইকে জেরা করতে করতে সেনারা যখন বিরক্ত হয়ে পড়বে তখন আমি আর বেশী প্রশ্নের সম্মুখীন হবনা।
যাত্রীদের সবাইকে পালাক্রমে জেরা করা হচ্ছে। তোমার নাম কি-? কোথা থেকে এসেছ? কোথায় যাবে? কেন যাবে? ইত্যাদি। তল্লাশীর নিয়মটা এ ধরণের। গাড়ী পুল ঘেঁষে দাড়ায়। এরপর, তল্লাশী চলে। নির্দোষ সাব্যস্ত ব্যক্তিকে পায়ে হেটে পুলের ওপারে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। পালা ক্রমে সকলের তল্লাশীর পর পুল পার হলে ফাঁকা গাড়ী নিয়ে পুল পার হওয়ার ছাড় দেয়া হয়। পুলের ওপারে গিয়ে সবাইকে গাড়ীতে উঠতে হবে। ক’জন লোক তল্লাশীর পর নিয়ম মত পুল না পেরিয়ে এপারেই দাঁড়িয়ে থাকে। একজন সিআরপি অফিসার তাদের দেখে অশ্রাব্য গাল দিয়ে বল্লো, ‘ভাগো এখান থেকে।’ একে মহা সুযোগ মনে করে তৎক্ষণাত গাড়ী থেকে নেমে পড়ি এবং তল্লাশী ছাড়াই ধমক প্রাপ্ত দলটির সাথে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পুলের ওপারে চলে যাই। আমার এ চালাকী কারো চোখে পড়ল না। চোখে পড়লে তার উত্তরটাও ভেবে রাখি যে, তোমরাই তো বল্লে, ‘সবাই ওপারে চলে যাও’-| যদিও বেআইনী কোন কিছু আমার নিকট নেই। তবুও শত্রু সেনাকে বোকা বানিয়ে দারুন একটা আনন্দবোধ করলাম। ওপার গিয়ে দেখলাম সিআরপি গ্রুপ আমাদের গাড়ীর ক’জন সন্দেহজনক যুবককে আটকে রেখেছে। যুবকগুলো শিক্ষিত। তাদের ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের গাড়ী চলবে না। মিনিট কয়েক বসে আশংকার মধ্যে কাটাই| ভাবলাম, এরপর গাড়ী কখন ছাড়ে তার কোন ঠিক নেই। পায়খানা পেশাবের প্রয়োজন এখানেই সেরে নেই।
পুলের অল্প-দূরে রাস্তার ধারেই একটা বড় পাথর দেখলাম। পাথরের আড়ালটা খুব জুৎসই| তাই বসে পড়লাম। বসতেই এক সৈন্য আমাকে দেখে ফেলে। একটা অশ্রাব্য গাল দিয়ে আমাকে তার কাছে ডেকে নেয়। গেইডের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। আমিও চিন্তায় পড়ে গেলাম, কোন চর গোমর ফাঁস করে দেয়নি তো? তারা কি জেনে ফেল্লো, আমি বিনা তল্লাশীতে এপারে চলে এসেছি? আমি রোগীর ন্যায় ধীর পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সৈন্যটির নিকট গেলাম। বল্লো, তুমি এখানে পেশাব করলে কেন? উত্তরে বল্লাম, ‘সার আড়াল দেখে তাই বসেছিলাম-রোগী মানুষ বেশী দূর যেতে পারি না। সৈন্যটি গালি দিয়ে বল্লো, আরে আড়ালের বাচ্চা ওটা ভগবানের মূর্তি। এখানে আমরা প্রার্থনা করি। ভালোভাবে লক্ষ্য করার পর বুঝলাম, সত্যিই এটা একটা মূর্তি। আপন ভগবানের সাথে এমন আচরণ দেখে সে আমাকে গুলী করেও মারতে পারত। কিন্তু হিন্দু সৈনিকটি হয়ত কোমল হৃদয় মানুষ; আমার অসুস্থ চাল-চলন দেখে তার ভেতরের সুবোধ মানুষটি জেগে উঠে ছিলো হয়ত। তাই কয়েকটা গালি দিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। স্পষ্টই বুঝা যায়, এগালি খেয়ে আমি তেমন ক্ষুব্ধ হইনি। কারণ মরণ ফাঁদ থেকে বেঁচে যাওয়া কোন ছোট নেয়ামত কি? [ক্রমশ]
অনুবাদঃ আবুল বারাকাত হানাফী
═──────────────═