উইঘুরদের আর্তনাদ
উইঘুর স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ আল-হিজবুল ইসলামী আত-তুর্কিস্তানী
[তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি] এর নায়েবে আমীর
শাইখ আব্দুল্লাহ মানসুর হাফিজাহুল্লাহ’র
সাক্ষাৎকার
মাওলানা হামিদুর রহমান অনূদিত
**********
বিসমিল্লাহহির রাহমানির রাহিম
ইসলামী তুর্কিস্তান পত্রিকা টীমঃ আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্ ৷ প্রথমেই আমরা হে মহান শাইখ আপনার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি ‘ইসলামী তুর্কিস্তান’ পত্রিকার ভাইদেরকে ও সম্মানিত পাঠকবৃন্দকে এ সাক্ষাৎকারটি প্রদান করার জন্য ৷ আপনার কাছে এই পত্রিকা ও আল হিজবুল ইসলামী আত-তুর্কিস্তানীর সাথে সংশ্লিষ্ট আমাদের কিছু প্রশ্ন ছিলঃ
শাইখ আব্দুল্লাহ মানসুরঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্৷ ‘ইসলামী তুর্কিস্তান’ পত্রিকার শ্রদ্ধেয় কর্মকর্তা ভাইয়েরা ও সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আল্লাহ্ আপনাদের সকলকে দীর্ঘজীবী করুন, আমি আপনাদের সকলেরই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি ৷ আল্লাহর নিকট আমি প্রার্থণা করি যে, তিনি যেন এ সাক্ষাৎকারটি দ্বারা আমাদের আপনাদের সকলকে উপকৃত করেন৷
ইসলামী তুর্কিস্তান পত্রিকা টীমঃ আমরা শুনেছি যে, ‘ইসলামী তুর্কিস্তান’ পত্রিকাকে আরবি ভাষায় প্রকাশ করার উদ্যোগ সর্বপ্রথম নাকি আপনারাই গ্রহণ করেছেন৷ আমাদেরকে কি বলা যাবে যে, এ পরিকল্পনার সূচনা কিভাবে হল এবং আপনারা আরবি ভাষায় প্রকাশ করাকে কেন বেছে নিলেন?
শাইখ আব্দুল্লাহ মানসুরঃ আমি আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করি তিনি যেন আমাদের আমলসমূহকে আমাদের নেকীর পাল্লায় শামিল করেন৷ আমরা ১৪২৯ হিজরীর শাবান মাসে পত্রিকাটি প্রকাশ করা শুরু করি ও তার নামকরণ করি ‘সওতুল ইসলাম’ (ইসলামের ধ্বনি) নামে৷ তখন আফগানিস্তানের ইমারতে ইসলামিয়ার সময়কালে পত্রিকাটি তুর্কিস্তানি ভাষায় প্রকাশ করা হত৷ পত্রিকা প্রকাশ করা আমাদের তানজীমের সকল নেতৃবর্গের অনেক পুরোনো স্বপ্ন ছিল, প্রত্যেকেই এর আকাঙ্ক্ষা পোষণ করত৷ তখন আফগানিস্তানের আরব মুহাজির ভাইয়েরা সর্বদাই আমাদের নিকট পত্রিকার প্রবন্ধগুলোকে আরবিতে ভাষান্তর করে দেবার জন্য আবেদন জানাত৷ ফলে আমাদের প্রতি আরব ভাইদের ভালোবাসা ও আমাদের বিষয়াবলীর প্রতি তাদের গুরুত্ব দেওয়া এ দুটি বুনিয়াদের ওপর ভিত্তি করেই ‘ইসলামী তুর্কিস্তান’ পত্রিকা প্রকাশ করার চিন্তাভাবনা আমাদের মাথায় আসে৷
পাশাপাশি সর্বজনবিদিত যে, আরবি ভাষা হচ্ছে কুরআনুল কারীম ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস শরীফের ভাষা৷ এ ভাষাতেই আমরা আমাদের দ্বীন শিক্ষা করি ও রিসার্চ করি৷ এ ভাষা শিক্ষা করা প্রতিটি মুসলিমের জন্যই আবশ্যক৷ তুর্কিস্তানের সমস্যাগুলোকে প্রচার করা ও উম্মাহর স্মৃতিতে সেগুলোকে জাগ্রত করে তোলা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ ইমারতে ইসলামিয়ার সময়কাল থেকেই আমরা পত্রিকাটির প্রকল্পে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই; কিন্তু লোকবলের স্বল্পতা ও বিভিন্ন ব্যস্ততার ভীড়ে এ কাজে হাত দেয়ায় আমাদের অনেক দেরী হয়ে যায়৷
আফগানিস্তানে ইমারতে ইসলামিয়ার পতন ঘটা ও আমাদের নিরাপদ ভূখণ্ড সমূহ থেকে আমরা দূরে সরে যাওয়া সত্ত্বেও ওয়াজিরিস্তানের কতিপয় ভাইদের সহায়তা ও অনুপ্রেরণায় আমরা আলহামদুলিল্লাহ্ এ প্রকল্পে হাত দেয়ায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই৷ এখানে আমি তাদের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করছি৷ যেমনঃ শাইখ বশির আহমদ (আবু সুলাইমান আল মিসরী), শাইখ আবু উবাইদা আল ফিলিস্তিনী, শাইখ আবু ইয়াহয়া আল লিব্বী, শাইখ উবাইদুল্লাহ আল আফগানী, শাইখ আবু কুছুর আল মক্কী, শাইখ আবুল হাসান আল ওয়ায়েলী রহিমাহুমুল্লাহ৷ যারা বিস্মৃত তুর্কিস্তানের সমস্যাগুলি বিশ্বময় প্রচার করে দিয়ে আপন প্রভুর পক্ষ থেকে নিজেদের প্রাপ্য বুঝে নিয়েছেন ইনশাআল্লাহ৷
‘ইসলামী তুর্কিস্তান’ পত্রিকাটি যে সময় প্রকাশিত হয়েছিল তখন পূর্ব তুর্কিস্তানের অবস্থা উম্মাহর হৃদয় ও স্মৃতিপট থেকে মুছে গিয়েছিল এবং উইঘুর মুসলিমরা তখন দখলদার কমিউনিস্ট চীনা সরকারের পদদলনে পিষ্ট হয়ে জীবনযাপন করত ও জুলুম নিপীড়ন তাদের পুরো ভূখণ্ডকে গ্রাস করে নিয়েছিল৷ এহেন জরাকীর্ণ ও নিঃশেষিত অবস্থায় এবার আমরা সত্যভাষণে বিশ্বদরবারে কমিউনিস্ট চীনা সরকারের জালিয়াতি ও তার অপরাধ সমূহকে ফাঁস করে দেবো, যেন তারা আমাদের সমস্যা ও অধিকারগুলো বুঝতে পারে৷ আমরা চাই বিশ্ববাসী যেন জানতে পারে যে, আমরা আমাদের জনগণ ও ভূখণ্ডের স্বাধীনতা ও মুক্তি কামনা করছি এবং যেন তাতে আল্লাহ তা‘আলার শরীয়ত প্রতিষ্ঠিত হয় ও অন্যায় অত্যাচারের পর যেন পূনরায় তাতে ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা লাভ করে৷
আমরা পত্রিকা প্রকল্পটি শুরু করেছি এমন ভাইদের সাথে ঘনিষ্ঠতা ও সম্পর্ক তৈরীর জন্য, যাদের সাথে যদিওবা আমাদের পরস্পরের পরিচিতি নেই; কিন্তু তাদের সাথে আমাদেরকে সম্পর্কযুক্ত করেছে ঈমানী ভ্রাতৃত্ববোধ ও আন্তরিক হৃদ্যতা এবং যাদের সাথে আমাদের মোলাকাতের একমাত্র পথই হচ্ছে এই হৃদয় নিংড়ানো অভিব্যাক্তি ও সত্যভাষণ৷ আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখার দ্বারা এবং আমরা তাদের সামনে আমাদের ইসলামী সমস্যাগুলোর ফলপ্রদ আলোচনা সংলাপের দ্বারসমূহ উন্মোচন করার দ্বারা যা তারা অচিরেই বুঝতে পারবে ৷ আর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
المسلم للمسلم كالبنيان المرصوص يشد بعضه بعضا
অর্থাৎঃ মুসলমানগণ মুসলমানদের জন্য সুদৃঢ় স্থাপত্যের ন্যয়, যার একাংশ অপরাংশকে শক্তিশালী করে৷
অতএব আপনারা আপনাদের সহোযোগীতা ও পরামর্শ প্রদান করা এবং পত্রিকায় আপনাদের লেখা প্রেরণ করা থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না৷
ইসলামী তুর্কিস্তান পত্রিকা টীমঃ পত্রিকার মাধ্যমে আপনারা মানুষদের নিকট কোন বার্তাটি পৌছাতে চাচ্ছেন?
শাইখ আব্দুল্লাহ মানসুরঃ পত্রিকার মাধ্যমে আমরা যে বার্তাটি বিশ্বদরবারে পৌছাতে চাচ্ছি তা হল-
১. আল্লাহ তা‘আলার দিকে ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদার দিকে মানুষদেরকে দাওয়াত দেওয়া, উম্মাহর হৃদয়ে তাওহীদকে বদ্ধমূল করা এবং শিরক ও মুশরিকদের অসারতা জনসম্মুখে তুলে ধরা ও তাদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদ ঘোষণা করা৷ আল্লাহ তা‘আলা বলেন
قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ۖ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ [١٢:١٠٨]
অর্থাৎঃ বলে দিন, এই আমার পথ৷ আমি আল্লাহর দিকে বুঝে সুঝে দাওয়াত দেই—আমি ও আমার অনুসারীরা৷ আল্লাহ পবিত্র, এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই৷ (সূরা ইউসুফ: ১০৮)
আরো বলেনঃ
ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ [١٦:١٢٥]
অর্থাৎঃ আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়৷ (সূরা নাহল: ১২৫)
অন্যত্র বলেনঃ
وَمَن يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِندَ رَبِّهِ ۚ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ [٢٣:١١٧]
অর্থাৎঃ যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, তার কাছে যার সনদ নেই, তার হিসাব তার পালনকর্তার কাছে আছে ৷ নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না৷ (সূরা মুমিনুন: ১১৭)
২. উম্মাহকে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর জন্য অনুপ্রাণিত করা ৷ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
فَقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا تُكَلَّفُ إِلَّا نَفْسَكَ ۚ وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ ۖ عَسَى اللَّهُ أَن يَكُفَّ بَأْسَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ وَاللَّهُ أَشَدُّ بَأْسًا وَأَشَدُّ تَنكِيلًا [٤:٨٤]
অর্থাৎঃ আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাকুন, আপনি নিজের সত্তা ব্যতীত অন্য বিষয়ের যিম্মাদার নন! আর আপনি মুসলমানদের উৎসাহিত করতে থাকুন৷ শীঘ্রই আল্লাহ কাফেরদের শক্তি-সামর্থ খর্ব করে দিবেন৷ আর আল্লাহ শক্তি-সামর্থের দিক দিয়ে অত্যন্ত কঠোর এবং কঠিন শাস্তিদাতা৷ (সূরা নিসা: ৮৪)
আরো বলেনঃ
فَلَا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَجَاهِدْهُم بِهِ جِهَادًا كَبِيرًا [٢٥:٥٢]
অর্থাৎঃ অতএব আপনি কাফেরদের আনুগত্য করবেন না এবং এর সাহায্যে তাদের সাথে কঠোর সংগ্রাম করুন৷ (সূরা ফুরকান: ৫২)
৩. বিস্মৃত তুর্কিস্তানের সমস্যাগুলি বিশ্বময় প্রচার করে দেওয়া এবং বাহ্যিক-আভ্যন্তরীণ সর্বাত্মকভাবে দখলদার কমিউনিস্ট চীনা সরকারের বিরুদ্ধে শক্তি সঞ্চার করা ও আল্লাহর রাস্তার প্রস্তুতি গ্রহণ করা৷ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا [٤:٧٥]
অর্থাৎঃ আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষাবলম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও৷ (সূরা নিসা: ৭৫)
আরো বলেনঃ
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِن دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ [٨:٦٠]
অর্থাৎঃ আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যা কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শত্রুদের ওপর এবং তোমাদের শত্রুদের ওপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের ওপরও যাদেরকে তোমরা জানোনা; আল্লাহ তাদেরকে চিনেন বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না৷ (সূরা আনফাল: ৬০)
৪. একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার দিকে এবং বিচ্ছিন্ন হওয়া ও পরষ্পরের বিরোধ করা থেকে বিরত থাকার ও ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠা করার প্রতি আহবান জানানো৷ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ [٣:١٠٣]
অর্থাৎঃ আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না৷ আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর যা আল্লাহ তোমাদেরকে দান করেছেন৷ তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে৷ অতপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন৷ ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের পরস্পরে ভাই ভাই হয়েছ৷ তোমরা এক অগ্নিকুণ্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে অতপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন৷ এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার৷ (সূরা আল ইমরান: ১০৩)
আরো বলেনঃ
وَهُوَ اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ لَهُ الْحَمْدُ فِي الْأُولَىٰ وَالْآخِرَةِ ۖ وَلَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ [٢٨:٧٠]
অর্থাৎঃ তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই৷ ইহকালে ও পরকালে তাঁরই প্রশংসা৷ বিধান তাঁরই ক্ষমতাধীন এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে৷ (সূরা কাসাস: ৭০)
৫. ‘ইসলামী তুর্কিস্তান’ পত্রিকাটি হচ্ছে দখলদার কমিউনিস্ট চীনা সরকারের বিরুদ্ধে একটি মিডিয়া যুদ্ধের প্রকল্প৷ মিডিয়া চীনের চেহারাকে যেমন সুন্দর করে দেখায় আসলে তা তেমন নয়৷ এ মিডিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা কমিউনিস্ট চীনের অপরাধ সমূহ এবং ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি তাদের ঘৃণা ও বিদ্বেষের কথা জনসম্মুখে তুলে ধরবো৷ এটা হচ্ছে গোটা কমিউনিস্ট চীনের বিরুদ্ধে একটি মিডিয়া যুদ্ধ৷
ইসলামী তুর্কিস্তান পত্রিকা টীমঃ পত্রিকার অধীনস্ত ভাইদের উদ্দেশ্যে কি আপনাদের কোন বার্তা রয়েছে?
শাইখ আব্দুল্লাহ মানসুরঃ আমাদের ‘ইসলামী তুর্কিস্তান’ পত্রিকার সম্মানিত শক্তিশালী উদ্যোক্তা অধীনস্ত ভাইয়েরা সর্বদা তাদের কাজের রেজাল্টের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখে৷ আমরা জানতে পেরেছি যে, এ ময়দানে তথা দাওয়াত ও বয়ানের ময়দানে সারা মুসলিম বিশ্বে আমাদের এত সংখ্যক ভাই রয়েছে, যাদেরকে আমরা কখনও গুণে শেষ করতে পারবো না৷ আমাদের মনোবল সতেজ হয়ে ওঠে যখন আমরা দেখতে পাই যে, আমরা সংখ্যালঘু নই, যেমনটি মিডিয়াতে প্রচার করা হয় এবং আমরা বিস্মৃত নই, যেমনটি আমরা অভিযোগ করে থাকি৷ আলহামদুলিল্লাহ আমাদের ভাইয়েরা পৃথিবীর আনাচে-কানাচে আমাদের বিস্মৃত সমস্যাগুলোর পেছনে সময় দিয়ে থাকে এবং সেগুলো নিয়ে মিম্বার ও ইলেক্ট্রিক পর্দাসমূহে কথা বলে থাকে এবং পুস্তকাদি ও বিভিন্ন ইন্টারনেট পেজে সে সম্বন্ধে লেখালেখি করে থাকে৷ আল্লাহর শপথ! আমি এ কাজের তথা উম্মাহর হৃদয়ে সমস্যাগুলোকে জাগ্রত করার ফলাফল তখনই উপলব্ধি করেছি, যখন আমি ওলামায়ে কেরাম, দা‘ঈ ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদদের বক্তৃতা ও
প্রবন্ধসমূহ সম্পর্কে অবগত হয়েছি৷ এ ব্যাপারে আমি সকল পৃষ্ঠপোষক, অধীনস্ত ভাইদের ও মিডিয়া মালিকদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, যারা পত্রিকার প্রচারে নিজেদের অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে গেছেন৷ আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ও সকল মুসলমানদের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে উত্তম বিনিময় প্রদান করুন৷
হে আরব আজমের ভাইয়েরা! নিঃসন্দেহে আমাদের একনিষ্ঠ ইসলাম ধর্ম প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের ভূমিকা কি থাকবে তা নির্ধারণ করে রেখেছে৷ আর সৎকর্ম আল্লাহ তা‘আলার নিকট বহুগুণে উত্তীর্ণ করা হয়৷ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ كُلَّمَا رُزِقُوا مِنْهَا مِن ثَمَرَةٍ رِّزْقًا ۙ قَالُوا هَٰذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِن قَبْلُ ۖ وَأُتُوا بِهِ مُتَشَابِهًا ۖ وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ ۖ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ [٢:٢٥]
অর্থাৎঃ আর হে নবী সাঃ, যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজসমূহ করেছে, আপনি তাদেরকে এমন জান্নাতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে৷ যখনিই তারা খাবার হিসেবে কোন ফল প্রাপ্ত হবে, তখন তারা বলবে, এতো অবিকল সেই ফলই, যা আমরা ইতিপূর্বেও লাভ করেছিলাম৷ বস্তুতঃ তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হবে৷ এবং সেখানে তাদের জন্য সুদ্ধচারিনী রমনীকূল থাকবে৷ আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে৷ (সূরা বাকারা: ২৫)
হে সম্মানিত লেখক বা সংকলক! আপনি আপনার মূল্যবান সময়ের কিয়দংশ ব্যয় করুন এ পত্রিকার এক পৃষ্ঠা বা কয়েক লাইন লেখার জন্য অথবা আপনি আপনার পুস্তক বা সংকলনে তুর্কিস্তানের কথা একটু স্মরণ করুন৷ হে সম্মানিত আলেম বা দা‘ঈ! আপনি আপনার দাওয়াত বা বয়ানে তুর্কিস্তান ও তুর্কিস্তানের মুসলমানদের প্রতি চীনাদের জুলুম নিপীড়নের কথা স্মরণ করুন৷ হে প্রিয় ভাই! আপনি এ পত্রিকার প্রতিটি পৃষ্ঠা গভীরভাবে অধ্যয়ন করুন ও আপনার কিছু সময় বরাদ্দ করুন পত্রিকার প্রবন্ধসমূহকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য৷
আল্লাহ তা‘আলা ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্য করে যান, যাবৎ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে৷ আপনি আপনার তুর্কিস্তানের ভাইদের সাহায্যকারী বনে যান৷ হে মুসলিম ভাই! আপনি আপনার বোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন ও মুসলমানদের সহায়তাকারী হয়ে যান এবং মুসলমানদের অবস্থাসমূহের প্রতি যত্নবান হয়ে সৎকর্ম থেকে আপনি আপার নিজের অংশ বুঝে নিন৷ যেরুপ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
المسلم للمسلم كالبنيان المرصوص يشد بعضه بعضا
অর্থাৎঃ মুসলমানগণ মুসলমানদের জন্য সুদৃঢ় স্থাপত্যের ন্যয়, যার একাংশ অপরাংশকে শক্তিশালী করে৷
ইসলামী তুর্কিস্তান পত্রিকা টীমঃ জিহাদি বা জিহাদি না এমন সব ইসলামী দলসমূহের প্রতি আল হিজবুল ইসলামী আত তুর্কিস্তানীর অবস্থান কিরুপ?
শাইখ আব্দুল্লাহ মানসুরঃ আল হিজবুল ইসলামী আত তুর্কিস্তানী দলটি হচ্ছে পূর্ব তুর্কিস্তানের ইসলামী সমাজের বাস্তবতা দ্বারা প্রযোজ্য ও উৎপন্ন মুসলমানদের একটি দল৷ যা আকীদা পোষণ করে থাকে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনদের বুঝ অনুযায়ী সালাফে সালেহীনদের আকীদা এবং অনুসরণ করে থাকে একটি ব্যাপক ইসলামী শিক্ষা কারিকুলাম ও জিহাদ করে থাকে তুর্কিস্তানকে কমিউনিস্ট চীনের কলুষতা থেকে মুক্ত করার জন্য৷ তা প্রতিটি ইসলামী দলকে সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে সাহায্য করে থাকে এবং ইসলামী অনৈসলামী এমন প্রতিটি দল থেকেই তা সাহায্য-সহযোগিতা গ্রহণ করে থাকে, যারা নিপীড়িতদের প্রতিরক্ষার জন্য কাজ করে থাকে ও যারা মানবতা বা শরীয়ত অনুযায়ী মানবাধিকারের আহবান জানিয়ে থাকে৷ তাই বিশ্বের জেনে নেয়া উচিত যে, যাবৎ উম্মতে মুসলিমাহ কুফর কর্তৃক ইসলাম ও মুসলিমদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে আপন যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, তাবৎ চীনের সাথে আমাদের এ লড়াই হচ্ছে, আকীদা সংক্রান্ত একটি লড়াই এবং ইসলাম ও কুফর দুটি আকীদার মধ্যকার লড়াই৷ সুতরাং নাস্তিক চীন সরকারের সাথে আমাদের সংগ্রাম হচ্ছে পুরো জাতিকে সঙ্গে করে নিয়ে সংগ্রাম করা৷
আমরা জানি যে, চীনের সাথে আমাদের এ দ্বন্দ্ব হচ্ছে একটি শক্তিশালী দ্বন্দ্ব৷ যেখানে প্রচণ্ড রক্তাক্ত শক্তির প্রয়োজন এবং এ দ্বন্দ্ব কয়েক দশক পর্যন্ত প্রলম্বিত হবে৷ তাই আমরা সমস্ত উম্মতে মুসলিমার কাছে সাহায্য-সহযোগিতার প্রত্যাশী৷ আমরা চাই যে, ভবিষ্যৎের এ রক্তক্ষয়ী দুঃসাধ্য রণাঙ্গনে সমস্ত উম্মতে মুসলিমাহ আমাদের সাথে এসে শরিক হবে৷
এ পর্যায়ে সকলের প্রতি আমি উদার্থ আহবান জানাবো যে, আপনারা আল্লহর কিতাব, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ ও পূর্ব তুর্কিস্তানের নিপীড়িত মুসলমানদের সহায়তা করাকে আকড়ে ধরুন ৷
ইসলামী তুর্কিস্তান পত্রিকা টীমঃ আল হিজবুল ইসলামী আত তুর্কিস্তানী কর্তৃক শামে শাখা খোলার দ্বারা কি তা তুর্কিস্তানের ভাগ্য পরিবর্তনে কোন প্রভাব ফেলতে পারবে বা তা কোন ফায়দাজনক হবে?
শাইখ আব্দুল্লাহ মানসুরঃ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা শামের জিহাদের শুরুর দিকেই আমাদের জন্য সেখানে একটি শাখা গঠন করা সহজ করে দিয়েছেন৷ আমরা সেখানে প্রথমে কিছু নেতৃস্থানীয় ভাইদের পাঠিয়েছি একটি মু‘আসকার চালু করার জন্য৷ এরপর আমরা এ মু‘আসকারে যোগ দেওয়ার জন্য যুবকদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম৷ আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর তাওফিকে সে মু‘আসকার থেকে শতশত যুবক প্রশিক্ষণলাভ করে আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে মুজাহিদীনদের কাফেলায় যুক্ত হয়েছে৷ মুজাহিদীনদের জিহাদের বদৌলতে অনেক গ্রাম ও শহর বিজিত হয়েছে এবং আমাদের ভাইয়েরা প্রমাণ করে দেখিয়েছে যে,
আমরা শুরু থেকেই মুসলিম উম্মাহর সাথে রয়েছি ও দিনদিন আল্লাহওয়ালা মাশায়েখ ও ধর্মপরায়ণ দা‘ঈদের বক্তব্যে তুর্কিস্তানী মুজাহিদীনদের আলোচনা উঠে আসছে, যদ্দরুণ তুর্কিস্তানের সমস্যাগুলো মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে ব্যাপকভাবে জাগ্রত হচ্ছে৷ এ পর্যায়ে আমরা তুর্কিস্তানের সে সকল শুহাদায়ে কেরামের বাবা-মাকে সান্ত্বনা প্রদান ও অভিনন্দন জানাচ্ছি, যারা নিজেদের সবচাইতে মূল্যবান বস্তু — নিজেদের কলিজার টুকরো সন্তানদেরকে বরকতময় শামের ভূমিতে আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য কোরবান করে দিয়েছেন৷
শামে আল হিজবুল ইসলামী আত তুর্কিস্তানীর শাখা গঠন করার কিছু ঘোষিত ও গুপ্ত লক্ষ্য রয়েছে৷ নিম্নে আমি কিছু ঘোষিত লক্ষ্য উল্লেখ করছিঃ
প্রথমতঃ বরকতময় শাম জিহাদের সওয়াব লাভ করা৷
দ্বিতীয়তঃ জিহাদের ময়দানে দলের পশ্চাদভাগের রক্ষণাবেক্ষণ করা৷
তৃতীয়তঃ শাম ভূমির আশেপাশে জড়ো হওয়া হাজার হাজার তুর্কিস্তানী মুহাজিরগণকে শামে উপস্থিত করানো ও মু‘আসকার গুলোতে তাদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা৷
চতুর্থতঃ রণাঙ্গনের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শরয়ী ও সামরিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা৷
পঞ্চমতঃ প্রায়োগিকভাবে শত্রুদের সাথে যুদ্ধের পর বিশিষ্টজনদেরকে কমান্ডার ও সেনাপতির ডিগ্রী প্রদান করা৷
ষষ্ঠতঃ অন্যদের থেকে অভিজ্ঞতা এবং কৌশল অর্জন করার মাধ্যমে যুদ্ধের সামরিক দক্ষতায় উন্নয়ন সাধন করা৷
সপ্তমতঃ উম্মাহর সকল শ্রেণী ও সকল জনগোষ্ঠীর মুজাহিদীনদের মাঝে তুর্কিস্তানের পরিস্থিতিকে জাগ্রত করা৷
আলহামদুলিল্লাহ এ সকল লক্ষ্যের কয়েকটিকে আমরা কার্যতভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি৷ আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট কামনা করি তিনি যেন তাতে বরকত দান করেন৷ ইনশাআল্লাহ আমাদের শামের ভাইয়েরা এমন যে কোন ইসলামি প্রকল্পের খেদমত আঞ্জাম দেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত থেকে তাদের দ্বীনের প্রতি অনুগত থাকে, তানজিম যেটাকে জিহাদের জন্য প্রয়োজন বলে মনে করে থাকে৷
ইসলামী তুর্কিস্তান পত্রিকা টীমঃ কেউ কেউ বলে থাকে যে, আপনারা বিশ বৎসর যাবৎ তুর্কিস্তানের জন্য কিছুই করেননি, সেখানে কোন ফ্রন্ট খুলেননি বরং আফগানিস্তান ও শাম নিয়েই আপনারা ব্যতিব্যস্ত৷ তাদের এ বক্তব্য সম্বন্ধে আপনাদের অভিমত কি?
শাইখ আব্দুল্লাহ মানসুরঃ প্রথমতঃ আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, সাহায্য আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে৷ যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ
وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ اللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ [٣:١٢٦]
অর্থাৎঃ আর সাহায্য শুধুমাত্র পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী আল্লাহরই পক্ষ থেকে৷ (সূরা আল ইমরান: ১২৬)
দ্বিতীয়তঃ আমরা কি কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে কোনরকম অবহেলা করেছি, নাকি কারণ বশতঃ ও পরিস্থিতির শিকার হয়ে আমরা করতে পারিনি?
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার দয়ায় আল হিজবুল ইসলামী আত তুর্কিস্তানী চীনাদের দৃষ্টিতে এমন একটি শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা অত্যাচারী দখলদার চীনা সরকারের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে বিশবছর যাবৎ টিকে আছে ও জীবন বাজী রেখে লড়ে যাচ্ছে৷ সকলেই জানে যে, আমাদের বর্তমান সময়ে চীন সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে একটি সুপার পাওয়ার রাষ্ট্র হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ আর তা সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও অন্যান্য অপবাদে অভিযুক্ত করে পূর্ব তুর্কিস্তানের মুজাহিদীনদের সাথে যুদ্ধ করে থাকে ও তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে থাকে৷ বিশ বছরের বাঁকে বাঁকে আল হিজবুল ইসলামী আত তুর্কিস্তানী তুর্কিস্তান ও চীনের অভ্যন্তরেও বেশ কয়েকটি সামরিক অপারেশন চালিয়েছে৷ মিডিয়া যার সাক্ষী৷ চাই আমাদের মিডিয়া হোক বা শত্রুদের৷
সকলেরই জেনে নেওয়া উচিত যে, আল হিজবুল ইসলামী আত তুর্কিস্তানীর যে কোন সদস্য জীবিত থাকা মাত্রই তা প্রমাণ বহন করে যে, চীনের সাথে আমাদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে৷ আমরা এ কথা বারবার বলেছি যে, আমরা বিজয়ী হই বা শাহাদাত বরণ করি আল্লাহ তা‘আলার তাওফিক ও সাহায্যে চীনের বিরুদ্ধে এ জিহাদকে আমরা কিছুতেই পরিহার করবো না৷ আর যারা দাবী করে থাকে যে, আমরা এ বিশ বছরে কিছুই করিনি; তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ অলিক ও রটনা বৈ কিছু নয়৷ আমরা এখন যে সময়টিতে কথা বলছি এখনও সুদূর আফগানিস্তানে আমাদের ভাইদের পাওয়া যাবে যে, তারা সেখানে জিহাদ করছেন ও নিজেদের সম্মুখ থেকে কুফুরের নাপাক অস্তিত্ব মুছে দেওয়ার মাধ্যমে একেক কদম সামনে অগ্রসর হচ্ছেন৷ আল হিজবুল ইসলামী আত তুর্কিস্তানী সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে থাকে তুর্কিস্তানের ভেতর কাজ শুরু করার জন্য৷ কিন্তু সাহায্য আল্লাহ তা‘আলার হাতে৷ তিনি যাকে ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা সাহায্য করেন৷ বরং আমরা সাহায্য প্রাপ্তির সন্ধানে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি৷ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ
بِنَصْرِ اللَّهِ ۚ يَنصُرُ مَن يَشَاءُ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ [٣٠:٥]
অর্থাৎঃ আল্লাহর সাহায্যে৷ তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী পরম দয়ালু৷ (সূরা রুম: ৫)
হে ভাইয়েরা! সাত বৎসর পূর্বে কি শামে কোন মুজাহিদ বা জিহাদি দলের অস্তিত্ব ছিল? না, সে সময় সেখানে কোন জিহাদি পতাকা উত্তোলন করা হতো না৷ কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য ও তাওফিকে এবং আত্মমর্যাদাশীল মুসলমানদের বীরত্বের বদৌলতে বিক্ষোভ জিহাদে রূপ নিয়েছে৷ এদ্বারাই আমাদের নিকট সুস্পষ্টভাবে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, শেষ ফলাফল মুত্তাকীদের জন্য ও কাফেরদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ; যদিওবা তা হয় কিছুটা সময় সাপেক্ষে৷ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الْأَشْهَادُ [٤٠:٥١]
অর্থাৎঃ আমি সাহায্য করব রসূলগণকে ও মুমিনগণকে পার্থিব জীবনে ও সাক্ষীদের দন্ডায়মান হওয়ার দিবসে৷ (সূরা মুমিন: ৫১)
ইবনে কাসীর রহ. এ আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ এটি প্রাচীনকাল ও বর্তমান কালের মানুষের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার একটি চিরাচরিত সুন্নত এই যে, তিনি দুনিয়াতে তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে সাহায্য করবেন ও তাদের কষ্ট প্রদানকারীদের থেকে (প্রতিশোধ গ্রহণ করার মাধ্যমে) তাদের চক্ষুকে শীতল করবেন৷ ইমাম সুদ্দী রহ. বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা যখনই কোন রাসুলকে এমন কোন জাতির কাছে প্রেরণ করেছেন, যারা তাকে হত্যা করেছে বা যখনই তিনি হক্বের পথে আহবানকারী মুমিনদের এমন কোন জামাত প্রেরণ করেছেন, যাদেরকে তারা হত্যা করেছে তখনই আল্লাহ তা‘আলা তাদের পক্ষে এমন কাউকে প্রেরণ করেন যারা তাদেরকে সাহায্য করবে ও তাদের সাথে এহেন আচরণকারীদের থেকে দুনিয়াতে তাদের রক্তের বদলা নিবে৷ ইমাম সুদ্দী রহ. বলেনঃ ফলে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও মুমিনগণ বিজয়ী বেশে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতেন৷ অর্থাৎঃ আহলে হক্ব মুমিনরাই বিজয়ী থাকত৷ আহলে বাতিলরা যদিওবা তাদেরকে হত্যা করেছে ও বাহ্যিকভাবে তাদের ওপর বিজয়ী হয়েছে; কিন্তু সময়সাপেক্ষ হলেও শেষ ফলাফল ও বিজয় মুমিনদেরই৷ কেননা অচিরেই এমন জামাত আসবে যারা আহলে বাতিলদের শাস্তি দিবে ও তাদের হত্যা করবে আহলে হক্বদের সাথে তারা যে অসদাচরণ করেছে তার বদলা স্বরুপ৷
সহীহ হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
يقول الله سبحانه عز وجل: وعزتي وجلالي لأنصرنك ولو بعد حين
অর্থাৎঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, আমার ইজ্জত ও বড়ত্বের কসম সময়সাপেক্ষে হলেও আমি আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করব৷ (নাসায়ী)
কখনো কখনো বড় সাহায্য প্রদানের লক্ষ্যে মুমিনদের সাহায্যকে বিলম্বিত করা হয়৷ এই বিষয়টি জেনে রাখা উচিত যে, মুমিনদের সাহায্য কখনো কখনো এ কারণে বিলম্বে আসে যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদেরকে মহান, বিশাল ও মুসলমানদের বাস্তব জীবনের বিরাট প্রভাবশালী সাহায্য প্রদানের ইচ্ছা করে থাকেন-মুসলমানগণ সে মহান সাহায্যের উপযুক্ত হওয়া ও তাদের মাঝে তা গ্রহণ করার হাইকমান্ড তৈরী হওয়ার পর৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাথে থাকা মুমিনদের সাহায্য করার ধরণই হচ্ছে এর জলন্ত প্রমাণ৷ যেখানে এ সাহায্য একদিন বা এক বছরেই চলে আসেনি; বরং এ সাহায্যের দেখা মিলেছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়তের অধিকাংশ সময় পার হয়ে যাওয়ার পর৷ এ সাহায্যটি অর্জিত হয়েছিল মক্কা বিজয় ও কুরাইশদের ওপর প্রাধান্য বিস্তারের মাধ্যমে৷ আর তা ছিল হিজরতের অষ্টম বৎসরে, অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের দুই বৎসর পূর্বে৷
শামে ও খোরাসানে অবস্থিত আল হিজবুল ইসলামী আত তুর্কিস্তানীর মুজাহিদীনরাও রণাঙ্গনগুলোতে শরিক হয়ে নিজেদেরকে তৈরী করছে৷ সেখানে যুদ্ধের গভীরতার ভেতর আমরা কমান্ডার ও সৈন্যদের তৈরী করে থাকি৷ আল হিজবুল ইসলামী আত তুর্কিস্তানী প্রতিটি শরয়ী জিহাদেই অংশগ্রহণ করে ও শরীয়ত মোতাবেক প্রত্যেক ইসলামি দলকেই সহায়তা করে৷ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ [٥:٢]
অর্থাৎঃ সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর৷ পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যপারে একে অন্যের সহায়তা করো না৷ আল্লাহকে ভয় কর৷ নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কঠোর শাস্তিদাতা৷ (সূরা মায়েদা: ২)
ইসলামী তুর্কিস্তান পত্রিকা টীমঃ বিশ্ব মাশায়েখদের নিকট কি আপনারা কোন বার্তা পৌছাতে চান?
শাইখ আব্দুল্লাহ মানসুরঃ দ্বীনের রক্ষণাবেক্ষণ ও তার পবিত্রতা রক্ষা করা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের জিম্মায় আমানত এবং তাদের পর আমানত ওলামাদের জিম্মায়৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
إن العلماء ورثة الأنبياء وإن الأنبياء لم يورثوا دينارا ولا درهما ورثوا العلم
অর্থাৎঃ আলেমগণ নবীদের ওয়ারিশ৷ আর নবীগণ কোন দীনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী বানান না; বরং তারা উত্তরাধিকারী বানান ইলমের৷ (আবু দাউদ)
আলেমদের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ [١٦:٤٣]
অর্থাৎঃ অতএব জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে৷ (সূরা নাহল: ৪৩)
আর জ্ঞানীরা হচ্ছেন ওলামায়ে কেরাম৷ তেমনিভাবে তাঁকে ভয় করার ব্যপারে একমাত্র আলেমদেরকেই তিনি বিশেষভাবে বিশেষায়িত করেছেন৷ তিনি বলেছেনঃ
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ [٣٥:٢٨]
অর্থাৎঃ আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে৷ নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়৷ (সূরা ফাতির: ২৮)
অর্থাৎ ওলামায়ে রব্বানীগণ৷ আর তারাই তো হচ্ছেন তাকওয়াবান ও ক্ষমাপ্রাপ্ত৷ এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা আলেমদের থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেন যে, তারা হক্বকে আঁকড়ে ধরবে ও তাঁকে ছাড়া অন্যকাউকে ভয় করবে না৷ তিনি বলেছেনঃ
الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَدًا إِلَّا اللَّهَ ۗ [٣٣:٣٩]
অর্থাৎঃ সেই নবীগণ আল্লাহর পয়গাম প্রচার করতেন ও তাঁকে ভয় করতেন ৷ তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যকাউকে ভয় করতেন না৷ (সূরা আহযাব: ৩৯)
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আপন সত্তার আনুগত্য ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্যের পর ওলামায়ে কেরাম ও শাসকদের আনুগত্যকে আবশ্যক করেছেন৷ তিনি বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ
অর্থাৎঃ হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা দায়িত্বশীল তাদের৷ (সূরা নিসা: ৫৯)
أولي الأمر এর ব্যাখ্যায় মুফাসসিরীনগণ বলেছেন, তারা হচ্ছেনঃ ওলামায়ে কেরাম ও শাসকবর্গ৷ আর বাস্তবিকপক্ষে ওলামায়ে রব্বানীগণই হচ্ছেন দুনিয়ার নেতৃস্থানীয় ও শাসকবর্গ৷
এ সূত্রানুসারে ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতিরক্ষায় ওলামায়ে কেরামের ভূমিকা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ছাড়া আমাদের কোন উপায়ই নেই৷ ওলামা ও ফুক্বাহায়ে কেরামগণ হচ্ছেন জাতির নিয়ন্ত্রক ও পরিচালক এবং নিজেদের ভাইদের সাহায্যের জন্য মুসলমানগণ তাদের কাছে প্রত্যাশা করে থাকে৷ কেননা জনসাধারণের ওপর যখন মুসিবতের বৃষ্টি বর্ষিত হতে থাকে এবং সঙ্কট যখন তাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে, তখন সঠিক সমাধান ও দিকনির্দেশনা পাওয়ার জন্য জনগণ আল্লাহ তা‘আলার পর সে সকল ওলামায়ে কেরামেরই স্মরণাপন্ন হয়ে থাকে, যাদের গৌরবময় কীর্তিতে ইতিহাস পূর্ণ৷ তাই আলেম বা তালিবে ইলমদের জন্য তার স্বজাতি ও স্বজাতির সমস্যাবলী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কোনই অবকাশ নেই৷ দেশকে অত্যাচারীদের জবরদখল থেকে মুক্ত করতে যে মহামানবেরা উম্মাহর হৃদয়ে জিহাদের আগুনকে প্রজ্বলিত করে ও জিহাদের আত্নাকে জাগিয়ে তোলে তারা হচ্ছেন এই ওলামায়ে রব্বানীগণ৷
পূর্ব তুর্কিস্তানের পরিস্থিতি সংক্রান্ত কিছু শরয়ী তাগাদা রয়েছে, যেক্ষেত্রে ওলামায়ে কেরামের ভূমিকা রাখা দরকার৷ নিম্নে আমি সেগুলো উল্লেখ করছিঃ
১. ওলামায়ে রব্বানী, দাঈী এবং মিম্বর ও প্রকাশনা মালিকদের উচিত তুর্কিস্তানের মুসলমানদের অবস্থা ও পরিস্থিতি সম্বন্ধে অবগত থাকা এবং কমিউনিস্ট চীনা সরকারের পক্ষ থেকে মুসলিম তুর্কিস্তানে যে সকল অন্যায়, অবিচার, ধর্ষণ সংঘটিত হচ্ছে তাদের মিম্বার ও প্রকাশনাগুলোতে তার বাস্তবচিত্র তুলে ধরা৷
২. তুর্কিস্তানের নিপীড়িত ভাইদের জুলুমের ব্যপারে কোনভাবেই চুপ না থাকা; বরং মুসলমানদের ব্যাপকভাবে দাওয়াত দেওয়া ও তুর্কিস্তানে দৈনন্দিন যে সকল অন্যায় অবিচার, ধর্ষণ সংঘটিত হচ্ছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ধিক্কার মিছিল নিয়ে বেরুবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা৷
৩. মুসলমানদের এ দাওয়াত দেওয়া যে, নাস্তিক্যবাদী চীনা রাজনীতি শান্তিপূর্ণ কোন রাজনীতি নয়; বরং ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তা এক যুদ্ধংদেহী রাজনীতি৷
৪. বৈজ্ঞানিক দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত বিশেষত্ব সম্পন্ন ব্যক্তিদের দাওয়াত দেওয়া যে, তারা যেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাদের নিপীড়িত ভাইদের পাশে দাঁড়ায় ও শত্রু মোকাবেলার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে তাদের পথনির্দেশ করে৷
৫. বিশ্বের মুসলমানদেরকে চীনা পণ্য বর্জন করা ও প্রত্যেক এমন কোম্পানির সাথে লড়াই করার দাওয়াত দেওয়া, যারা তাকে সহায়তা করে থাকে৷
৬. ইসলামী সরকারদের কাছে দাবী জানানো যে, তারা যেন প্রতিটি সাধারণ পরিষদে চীনা সরকারের ওপর বলপ্রয়োগ করে এবং মুসলিমদের দুর্ভোগ লাঘব করে ও সভাসদদের নিকট সমস্যাবলী তুলে ধরে৷ পাশাপাশি এ সকল প্রতারক সরকারদের পতন ঘটানোর দাবি জানানো৷
৭. তুর্কিস্তানী মুহাজিরদের সন্তানদের দ্বীনী তা‘লীমের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা এবং তাদেরকে তাদের সমস্যাবলী বোঝানো এবং ইসলামি পরিচয়ের সাথে পরিচিত করানো ও দাওয়াতের সবধরনের পদ্ধতিকে তাদের সামনে দেওয়া৷
৮. বিত্তবান মুসলমানদের কাছ থেকে দাতব্য অনুদান সংগ্রহ করে তা অভাবী মুহাজিরদের কাছে হস্তান্তর করা৷ সত্যনিষ্ঠ মুজাহিদীনরাও তাদের মধ্যে গণ্য; শত্রুর বিরুদ্ধে তাদের দাপটকে আরো শক্তিশালী করার জন্য৷
এই হচ্ছে আপন দ্বীন ও উম্মাহর জন্য প্রতিটি আত্মমর্যাদাশীল মুসলিমের করণীয়৷
ইসলামী তুর্কিস্তান পত্রিকা টীমঃ পূর্ব তুর্কিস্তানের এ পরিস্থিতির প্রতি বিশ্বের সকল মুসলমানদের জন্য সহায়তার হস্ত সম্প্রসারণ করা কিভাবে সম্ভব, সে ব্যপারে আপনাদের কাছে কোন দিকনির্দেশনা রয়েছে কি?
শাইখ আব্দুল্লাহ মানসুরঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ
مثل المؤمنين في توادهم وتراحمهم وتعاطفهم مثل الجسد إذا اشتكى منه عضو تداعي له سائر الجسد بالسهر والحمى
অর্থাৎঃ পারস্পরিক ভালবাসা, সহমর্মিতা ও সমবেদনার ক্ষেত্রে মুমিনদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে একটি দেহের ন্যয়, যার একটি অঙ্গ কষ্ট ব্যক্ত করলে তার জন্যে সারা দেহ বিনিদ্রতা ও জ্বরে ভেঙ্গে পড়ে৷ (সহীহ মুসলিম)
তিনি আরো এরশাদ করেছেনঃ
المسلم للمسلم كالبنيان المرصوص يشد بعضه بعضا
অর্থাৎঃ মুসলমানগণ মুসলমানদের জন্য সুদৃঢ় স্থাপত্যের ন্যয়, যার একাংশ অপরাংশকে শক্তিশালী করে৷
এই ঈমানী দৃষ্টিকোণ থেকে তুর্কিস্তানের মুসলমানদের প্রয়োজন রয়েছে বাইরের ভাইদের৷ তারা জালেম কমিউনিস্টদের পদদলনে নিপীড়িত নিষ্পেষিত৷
যে তুর্কিস্তান উম্মাহর দেহেরই একটি অঙ্গ, তা আজ কমিউনিস্ট চীনাদের জুলুম অত্যাচারের স্বীকার৷ সেখানকার মুসলমানদেরকে তাদের ঈমান ও আকীদা থেকে সরে আসার জন্য জবরদস্তি করা হয়৷ রাফেজী মুসলমানদেরকে চীনের নীতিমালা অনুযায়ী বন্দী করে রাখা হয়, যেন তাদের ইসলামিক পরিচয় থেকে তাদের পশ্চাদপসরণ ঘটে৷ প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আপনারা কি আপনাদের তুর্কিস্তানের ভাইদের মুরতাদ হয়ে যাওয়া ও তারা তাদের ঈমান ও আকীদা থেকে সরে আসাকে পছন্দ করবেন?
আল্লাহ তা‘আলা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়কালীন মক্কায় অবস্থিত নিঃস্ব নিপীড়িত মানুষদের সম্বন্ধে বলেছেনঃ
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا [٤:٧٥]
অর্থাৎঃ আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষাবলম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও৷ (সূরা নিসা: ৭৫)
হে বিশ্বের মুসলমানেরা! পূর্ব তুর্কিস্তানে সংঘটিত হওয়া গণহত্যা ও গণগ্রেফতারে চুপ থেকে বিশ্বকাফের গোষ্ঠী তৃপ্তির ঢেকুর তুলো থাকে৷ বিশ্বের এভাবে চুপ থাকার কারণে চীন পূর্ব তুর্কিস্তানে ব্যাপকহারে কারাগার তৈরী করার কথা গণমাধ্যমে ঘোষণা দেওয়া শুরু করেছে৷ এ সকল ঘটনাবলীতে রয়েছে শিক্ষা গ্রহণকারীদের জন্য শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ৷ আর তা এই যে, সমস্ত কাফের গোষ্ঠি এক জাতি৷ তাই আপনি তাদের কাউকে দেখবেন না যে, সে কোন নিরুদ্বিগ্নকে প্রণোদিত করছে বা কোন অন্যায়ের বিরোধিতা করছে বা কখনো জালেমের হাতকে আটকে ধরছে, কিংবা আপনি তাদের দেখবেন না যে, তাদের হৃদয়ে অসহায় নিপীড়িতদের প্রতি কোন করুণার উদ্রেক হয়েছে, যাবৎ প্রবাহমান সেই রক্তের ধারা মুসলিমদের হয়ে থাকবে৷
হে প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! তুর্কিস্তানে অবস্থানরত আপনাদের নিপীড়িত ভাইদের প্রতি লক্ষ্য করে আপনাদের জন্য কতিপয় ওয়াজিব হচ্ছেঃ
প্রথমতঃ যে ব্যক্তি অস্ত্রের মাধ্যমে সাহায্য করতে সক্ষম তার জন্য অস্ত্রের মাধ্যমেই সাহায্য করা ওয়াজিব৷ কেননা ফুক্বাহায়ে কেরাম রহিমাহুমুল্লাহ লেখে দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় তাকে হত্যা করা ওয়াজিব৷ তাহলে তাদের ব্যপারে কি ফতোয়া আসবে, যারা মুসলমানদের নির্মূল করে এবং তাদের পরিচয় মুছে দিতে চায়? জেনে রাখুন! পূর্ব তুর্কিস্তানবাসীরা তাদেরকে সাহায্য করার জন্য ও তাদের ঈমান, ইজ্জত-আবরু প্রতিরক্ষা করার জন্য আপনাদেরকে জিহাদে বেরিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছে৷ তাই তাদেরকে সাহায্য করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ওয়াজিব৷
দ্বিতীয়তঃ মুসলিম আলেমদের কর্তব্য হচ্ছে, নিজেদের ভাইদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে ও হক্বের আওয়াজকে বুলন্দ করার ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব আদায় করে যাওয়া এবং সে সকল তাগুত ও বিশ্বাসঘাতকদের গোমর ফাঁস করে দেওয়া, যারা বিভিন্ন প্রকার বিভিন্ন ধরণের কুফুরী কার্যকলাপকে পুঁজি করে জীবনযাপন করে থাকে৷ তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, নাস্তিক কমিউনিস্ট চীনা সরকার৷
তৃতীয়তঃ মিডিয়া ও রসদের মাধ্যমে তাদেরকে সাহায্য করা৷ আর এটা করা হবে তাদের পরিস্থিতিকে ছড়িয়ে দেওয়া, লোকদের মাঝে বর্ণনা করা ও সকল ভূখণ্ডের মুসলমানদের কাছে তা পৌছে দেওয়ার মাধ্যমে এবং মুসলমানদের কচিকাঁচা সন্তানদেরকে তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বীরত্বগাঁথা গল্পসমূহ শিক্ষা দেওয়া৷ আর অনুদান সংগ্রহ করে তা সম্ভাব্য সকল উপায়ে তাদের কাছে পৌছানো৷
চতুর্থতঃ তাদের জন্য দোয়া করা ও আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা যে, আল্লাহ তা‘আলা যেন তাদের পেরেশানিকে দূর করে দেন এবং তাদেরকে সাহায্য করেন ও তাদের শত্রুদের লাঞ্ছিত করেন৷ নিঃসন্দেহে এতে তিনি সম্মক ক্ষমতা রাখেন৷
**********
আল হিজবুল ইসলামি আত-তুরকিস্তানী এর ম্যাগাজিন
‘তুর্কিস্তান-আল-ইসলামিয়া’ মুহাররাম ১৪৪০, ২৪তম সংখ্যায়
حوار مع
الشيخ عبد الله منصور
نائب أمير الحزب الإسلامي التركستاني
শিরোনামে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের বাংলা অনুবাদ