ইয়াসির আরাফাত আবারও প্রমাণ করলেন, ইসলামে নিবেদিত নেতৃত্বছাড়া মুসলিম জাতির প্রত্যাশা পূরণ হবার নয়
–আব্দুল্লাহ আল ফারূক
=================================================
১৯৯৩ সালের ১৩ ই সেপ্টেম্বর দিনটি ফিলিস্তিনের ইতিহাসে নিশ্চয় “কালো দিন” হিসেবে লেখা হবে। এই দিন ফিলিস্তিনীদের নতুন করে গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ করলেন ফিলিস্তিন জাতির স্বঘোষিত প্রতিনিধি ইয়াসির আরাফাত। ফিলিস্তিনীদের অর্ধশতাব্দী ধরে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও স্বদেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার নেপথ্যে যে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, রাশিয়া দায়ী সেই ত্রি-চক্রের হঠাৎ করে ফিলিস্তিনীদের প্রতি দরদ উথলে উঠে, তাদের দুঃখে পাশ্চাত্যের খৃষ্টানদের কলিজা জার জার হয়ে যাওয়ায় তারা শান্তির মোহময় ডালা মেলে ধরে। আর তাতেই মধ্য প্রাচ্যের এই নকল রাজা মাতৃভূমি, বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ উদ্ধার, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি সকল প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে জাতির স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে স্বাক্ষর করেন শান্তি চুক্তির নামে দাসখতে। তাই ইসলামে নিবেদিত ও সত্যিকার স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনীরা এই সেপ্টেম্বরকে আখ্যায়িত করেছে আর এক “রাক সেপ্টেম্বর” হিসেবে। ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইরাঈলের ইহুদী বাহিনী ফিলিস্তিন জাতির অস্তিত্ব নির্মূল করার অংশ হিসেবে এক প্রচণ্ড সামরিক অপারেশন চালিয়ে তিনি হাজার মুজাহিদকে হত্যা করে। এটা ছিল ফিলিস্তিনের ইতিহাসে প্রথম ‘ব্লাক সেপ্টেম্বর’।
প্রথম ব্লাক সেপ্টেম্বর অপেক্ষা দ্বিতীয় ব্লাক সেপ্টেম্বর ফিলিস্তিন জাতির প্রতি নিয়ে এসেছে। অপূরণীয় বিপর্যয়, পরাজয় আর ইহুদীদের চীর গোলাম হয়ে থাকার পাকাপাকি ব্যবস্থাপত্র। জাতির মুক্তি, দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুগ যুগ ধরে লাখো শহীদের আত্মদান, অকথ্য নির্যাতন, নিপীড়ন সহ্য করে দেশ থেকে বিতাড়িত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুর অর্ধশতাব্দীব্যাপী অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ফলাফল হিসাবে তাদের উপহার দেয়া হয়েছে ইসরাঈলকে স্বীকৃতি প্রদান করে নিজেদের ইসরাঈলের অনুগত নাগরিকে পরিণত হওয়া। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাঈল রাষ্ট্রটি টিকে আছে সম্পূর্ণ পাশ্চাত্য বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের দয়ার ওপর নির্ভর করে। যদি কোন সময় পাশ্চাত্য এ রাষ্ট্রটির ওপর থেকে তাদের সমর্থন তুলে নেয় তা হলে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাঈলের অস্তিত্ব পুরো চব্বিশ ঘন্টাও টিকে থাকার নয়। সমরাস্ত্র, কারিগরি বিদ্যা, প্রযুক্তি, অর্থ সাহায্য দিয়ে পাশ্চাত্য মধ্য প্রাচ্যে এই বন্দুকবাজ রাষ্ট্রটিকে টিকিয়ে রেখেছে একমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের মুসলানদের শায়েস্তা করা এবং পাশ্চাত্যের হৃদস্পন্দন মধ্য প্রাচ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্যই। তাই ইতিহাসের পাতায় তাকালে দেখা যায়, ১৯০৩ সালে আফ্রিকার কেনিয়া বা উগান্ডায় যে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব করা হয় তা বৃটেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যোগসাজসে ফিলিস্তিনে স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১৯ সাল পর্যন্ত ১০ হাজার '৪শ ২৯ বর্গমাইল বিশিষ্ট এই এলাকার অধিকাংশ লােকই ছিলেন মুসলমান। কিন্তু এরপর পাশ্চাত্য থেকে ইহুদীদের পাইকারী হারে আমদানী শুরু হয়, যার অধিকাংশই রাশিয়ান, ইংরেজ, আমেরিকান ও পূর্ব ইউরোপিয়ান।
আমরা জানি, ইহুদীদের সাথে পাশ্চাত্যের খৃষ্টানদের আজন্মকাল থেকেই ছিল শত্রুতা। ইউরোপের বুকে যিশু খৃষ্টের তথাকথিত হন্তা ইহুদীদেরকে খৃষ্টানরা মোটেই সহ্য করতে পারত না বলে বার বার বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয় ভাবে তাদের নির্মূল করে দেয়ার জন্য গণহত্যা চালানো হয়েছে। অথচ হঠাৎ করে পাশ্চাত্য খৃস্টানরা ইহুদীদের বন্ধু হয়ে তাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হয়ে ওঠে। মূলত হাজার বছর ক্রুসেড চালিয়ে পাশ্চাত্যের খৃষ্ট সমাজ তাদের শত্রু অবিশ্বাসী (?) (মুসলমান) -দের উৎখাত এবং জেরুজালেম নগরী দখল করতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার নীতি গ্রহণ করে। তাদের ছোট শত্রু ইহুদীদেরকে বড় শত্রু মুসলমানদের ঘাড়ের ওপর চাপিয়ে দিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইহুদীদেরকে ডান্ডা হিসেবে ব্যবহার করে। আর এই উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য ইহুদীদের সন্ত্রাসবাদী ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়ে ফিলিস্তিনীদের উৎখাতে লেলিয়ে দেয়। সেদিনের বৃটেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এই ত্রি-চক্রের প্রত্যক্ষ মদদে ইহুদীদের সন্ত্রাসী তান্ডব লীলায় ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত দু ' হাজার ফিলিস্তিনী প্রাণ হারায়, লক্ষ লক্ষ মুসলমান প্রাণ ভয়ে স্বদেশ ছেড়ে বিভিন্ন প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়, হাজার মা-বোন ইজ্জত হারায় নরপশুদের হাতে।
এই ত্রি-চক্রই ১৯৪৭ সালে ফিলিস্তিনের মানচিত্র মুসলান ও ইহুদীদের মধ্যে ভাগাভাগির প্রস্তাব পাসে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনে বৃটেনের ম্যান্ডেট শাসনের অবসান হওয়ার মাত্র কয়েক ঘন্টা পূর্বে ইহুদীরাষ্ট্রের জনক ডেভিট বেন গুবিয়ান ইসরাঈল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে সাথে সাথে বৃটেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে স্বীকৃতি দেয়। এভাবেই এই তিনটি রাষ্ট্রের চক্রান্তের ফলে হাজার বছরের অধিবাসী ফিলিস্তিনীদের উৎখাত করে তাদের ভূখণ্ডের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় অবৈধ ইসরাঈল রাষ্ট্র। এই চক্রান্তকারী রাষ্ট্রত্রয়ের ষড়যন্ত্র এখানেই থেমে থাকে নি। তারা যাতে মধ্যপ্রাচ্যের এই রাষ্ট্রটির ভিত্তি : দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে মুসলমানদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে পারে সে জন্য ১৯৪৮, ১৯৫৬ ও ১৯৬৭ সালে ইসরাঈলকে বিপুল পরিমাণ মারণাস্ত্র, সেনা ও অর্থ সাহায্য দিয়ে প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার উস্কানী দেয়। ইঙ্গ-মার্কিনী মদদের ফলেই ইসরাঈল ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তীনের বহু এলাকা গ্রাস করে। পবিত্র ভূমি জেরুজালেম নগরীকে দ্বিখন্ডিত করে। ১৯৫৬ সালে মিশর সুয়েজখাল জাতীয়করণ করার পর ইসরাঈল সিনাই উপত্যাকায় সামরিক হামলা চালায়। পরবর্তি বৎসর গুলােতে পাশ্চাত্যের বিপুল সহযোগিতায় ইসরাঈল সামরিক দানবে পরিণত হয়। ইসরাঈলের আগ্রাসী চরিত্র এবং পাশ্চাত্যের মদদে বিশাল সামরিক ভাণ্ডার গড়ে তোলায় ফিলিস্তিনসহ সমগ্র আরব বিশ্বে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয় যে, ইরাইল মধ্য প্রাচ্যের বিষফোঁড়া এবং একটি আগ্রাসী শক্তি।
বৃটেন, রাশিয়া, ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অবৈধ সন্তান ইসরাঈলকে স্বীকৃতি নয় বরং এটিকে মধ্য প্রাচ্য থেকে উপড়ে ফেলতেই হবে। যেহেতু এটি পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদের মদদ পুষ্ট, তাই একে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে উৎখাত করা ছাড়া মুসলিম বিশ্বের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই। এ কারণেই কোন মুসলিম রাষ্ট্র ইসরাঈলকে স্বীকৃতি প্রদান করা থেকে বিরত থাকে। এই চিন্তাধারার বাস্তব ফসল হিসেবে এবং মুসলিম বিশ্বের শুভেচ্ছা ও সমর্থন নিয়ে ১৯৫৪ সালে জন্ম নেয় এক বিপ্লবী সংস্থা, ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা (পি, এল, ও)। পি, এল, ওর সনদে ঘোষিত হয় ইহুদীদের উৎখাতের উদাত্ত আহবান মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ তাদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইসরাঈলের মোকাবিলা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকীকরণ ও সমরাস্ত্রের সংস্কার কর্মসূচী নিয়ে এই তৎপরতা এবং একই সাথে পি, এল, ওর উথানে ইসরাঈলসহ পাশ্চাত্য প্রথম বারেরমত আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পূর্বে ফ্রান্স, বৃটেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইসরাঈল প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলাের বিরুদ্ধ একই সাথে প্রচণ্ড হামলা চালিয়ে পূর্ব জেরুজালেম, মিশর, সিনাই উপত্যকা, সিরিয়ার গোলান মালভূমি, জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর ও গাজা এলাকা দখল করে নেয়। ফলে মিশরের সুয়েজ খাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মিশরের মিত্র রাশিয়ার গাদ্দারীর কারণে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মিশরের বিমান বাহিনী কিছু টের পাওয়ার পূর্বেই ইসরাঈলী বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যায়। মিশর এই ধাক্কা সামলে নিয়ে সিরিয়াকে সাথে নিয়ে ১৯৭৩ সালে হারানো ভূ-খণ্ড উদ্ধারের জন্য প্রথমবারের মত ইসরাঈলের ওপর প্রচণ্ড আঘাত হানে। আরব বাহিনী সাফল্যজনকভাবে সুয়েজের মত কঠিন বাঁধা অতিক্রম করে এক দুঃসাহসিক আক্রমণে ইসরাঈলের দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা ব্যুহ বারলেভ লাইন সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে বিদ্যুত গতিতে সামনে এগিয়ে যায়।
প্রথমবারের মত এই আরব ইসরাঈল যুদ্ধে ইসরাঈল কোন আরব ভূখণ্ড দখল করাতো দূরের কথা, পৃথিবীর মানুষ বিস্ময়ের সাথে দেখছিল, আরবদের আক্রমণে ইসরাঈল নামক রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব বিলিন হওয়ার দৃশ্য। কিন্তু পতনের পূর্ব মুহূর্তে সাম্রাজ্যবাদী ও ইসরাঈলের জনক যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ইসরাঈলকে রক্ষা করতে তৎপর হয়ে ওঠে। শান্তি ও যুদ্ধ বিরতি প্রভৃতির জন্য কূটনীতিকরা বিশ্বব্যাপী ছুটোছুটি শুরু করে। আর এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ জাহাজ ভর্তি সমরাস্ত্র ও সৈন্য এসে হাইফা ও তেলআবিবে খালাস হতে থাকে। মার্কিনীদের এই অজাচিত হস্তক্ষেপের জন্য ইসরাঈল মরি মরি করেও বেঁচে যায়। তখন পাশ্চাত্য উপলব্ধি করে, সমরাস্ত্র দিয়ে মুসলমানদের কবল থেকে ইসরাঈলকে আর রক্ষা করা যাবে না। তাই এবার শুরু হল দালাল খোঁজা। এক্ষেত্রেও তারা সফল হলাে। যুদ্ধ বিরতি এবং বিজিত এলাকা থেকে ইসরাঈলের সৈন্য প্রত্যাহার করে তা ফিরিয়ে দেয়ার বিনিময়ে ইসরাঈলের বড় শত্রু মিশরকে ইসরাঈলের বন্ধুতে পরিণত করতে যুক্তরাষ্ট্র বিরাট কৃতিত্ব অর্জন করল। সিনাই উপত্যকা ফিরিয়ে দেয়া এবং সুয়েজ খাল পুনরায় চালু করার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র মিশরকে দিয়ে ইসরাঈল রাষ্ট্রের বৈধতা তথা। স্বীকৃতি আদায় করে নেয় এবং প্রথম বারের মত কোন মুসলিম রাষ্ট্র ইসরাঈলকে স্বীকৃতি দেয়। দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
আরব এবং ফিলিস্তিনীদের স্বার্থে এভাবে কুঠারাঘাত করার জন্য মিশরের বিরুদ্ধে সমগ্র আরব জুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। আরব বিশ্ব থেকে মিশর একঘরে হয়ে পড়ে। এভাবে আরবদের ঐক্যকে ধ্বংস করে এবং এই বড় শত্রুকে মিত্রতে পরিণত করে পাশ্চাত্য প্রথম বারের মত ইসরাঈলের অস্তিত্বকে বিপদমুক্ত করতে সক্ষম হয়। ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীরা ইহুদীদেরকে ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে এই রক্তাক্ত ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে সেই সাম্রাজ্যবাদীদের আজ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এত তোরজোর দেখে অবাকই হতে হয়। সেদিনের সেই সন্ত্রাসবাদী ইহুদী রাষ্ট্রটির জনক বৃটেন, রাশিয়া, আমেরিকা আজ শান্তির বুলি আওড়াচ্ছে, তারা আজ পি, এল, ও-ইসরাঈল তথাকথিত শান্তি চুক্তির, উদ্যোক্তা সেজেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, কাদের জন্য এবং কোন উদ্দেশ্যে এই শান্তি চুক্তি? এটা কি ফিলিস্তিনীদের শান্তিতে বসবাস করার জন্য না ইসরাঈল রাষ্ট্রটির শান্তিতে টিকে থাকার জন্য এই চুক্তি? যে পাশ্চাত্য মুসলিম স্বার্থ বিরোধী কোন তৎপরতা চালানোর সুযোগ পেলে তা ছেড়ে দেয় না তারাই ফিলিস্তিনী মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোক্তা সেজেছেন, পি, এল, ওকে কিছু দিন পূর্বেও সন্ত্রাসী বলে গালাগাল দেয়া হয়েছে, নেতাদের কোন পশ্চিমা রাষ্ট্রে প্রবেশ বা তৎপরতা চালানোর অনুমতি দেয়া হয়নি তাদেরকেই হঠাৎ করে বন্ধু বলে বুকে জড়িয়ে ধরছে ; সন্ত্রাস বিরোধী ট্রেনিং দেয়া, পুলিশ বাহিনী গঠন করা, কূটনৈতিক মিশন খোলা এবং ব্যাপক অর্থ সাহায্য প্রদান করার লােভনীয় প্রস্তাব দিচ্ছে ; এসবে কিসের আভাস পাওয়া যায়? এই প্রশ্নের জবাব পেতে হলে আমাদের পূনরায় ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে হবে।
১৯৬৯ সালে পি, এল, ও চেয়ারম্যান আছমত মুকারীর স্থলে ইয়াসির আরাফাত চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ইয়াসির আরাফাতের ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ, ও পাশ্চাত্যের শান্তি আলােচনার নামে প্রতারণার প্রতি দুর্বলতার কারণে জিহাদী প্রেরণায় উজ্জীবিত পি, এল, ওর কর্মীদের মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। তাঁর সোভিয়েত ঘেষা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে সংস্থার কর্মীদের জিহাদী চেতনা হ্রাস পেতে থাকে। পি, এল, ও ফিলিস্তিনী জনগণের নিকট থেকে ক্রমে ভাবমূর্তী হারিয়ে ফেলে। ধীরে সংগঠনটি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে থাকে, দলাদলি বৃদ্ধি পায় এবং কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়।
এমনি আশা-নিরাশার দোলায় ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতা আন্দোলনের দ্বীপশিখাটি যখন নিভু নিভু প্রায় ঠিক তখনই ফিলিস্তিনী জনগণের স্বাধীনতা ও মাতৃভূমি উদ্ধারের জিহাদে আলােকবর্তিকা হিসেবে আবির্ভূত হয় আফগান জিহাদের কমান্ডার ফিলিস্তিনী মর্দে মুজাহিদ শেখ আহমদ ইয়াসিনের। তাঁর সাথে রয়েছে রাশিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কিছু দুর্ধর্ষ টগবগে তরুণ মুজাহিদ। এদের আগমনে শুরু হল প্রচণ্ড “ইন্তিফাদা” আন্দোলন। ফিলিস্তিনী বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর নব চেতনায় জাগ্রত হয়ে ইহুদী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধে আগ্নেয়গিরির ন্যায় বিস্ফোরিত হলো। এক পর্যায়ে এই ইন্তিফাদা আন্দোলনের বুক চিড়ে উৎগিরণ ঘটে “হরকাতুল মুকাওমাতিল ইসলামিয়া” বা ‘হামাস’ নামক আপোষহীন জিহাদী সংগঠন। জাতীয় চেতনা নতুন গতিলাভ করে এই আন্দোলনের প্রভাবে। গাজা এলাকার ১৮ লাখ ফিলিস্তিনীদের মাঝে ফিরে আসে নতুন চাঞ্চল্য, জেহাদী জজবা। হামাসের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে দলে দলে জেহাদী প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করে গাজা পার্টির ফিলিস্তিনীরা। দেখতে দেখতে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ে হামাসের জিহাদী অগ্নিবাণী। হামাসের সদস্যরা এলাকায় এলাকায় ইসলামী অনুশাসন কায়েম করে। মেয়েরা পর্দা বিধান মেনে চলে। পতিতাবৃত্তি, মাদক দ্রব্য সেবন তথা শরিয়ত বিরোধী সকল কাজ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। অমান্যকারীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।
হামাস মুজাহিদরা বিশ্বাস করে, জিহাদই মুসলিম জাতির গৌরব ও মর্যাদার চাবিকাঠি। জিহাদে অবতীর্ণ না হলে ইসলামের গৌরব ও মর্যাদা প্রতিষ্টিত করা যায় না। ১৯৭৩ সালের মত পুনরায় ইসরাঈলে বিপদ সংকেত বেজে ওঠে। হামাসের এই বিস্ময়কর উত্থানে ইহুদীরা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তাই হামাসের এই উথানকে ইয়াহুদী পত্র পত্রিকাগুলো গাজী সালাহউদ্দিনের উত্থানের সাথে মূল্যায়ন করে। ইয়াহুদী সরকারের প্রতি বারবার হুসিয়ারী। উচ্চারণ করতে থাকে। নাজাহ বিশ্ব বিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের প্রফেসর আব্দুল সাত্তার কাসেমী বল্লেন, “পিএলওর দীর্ঘ দিনের একঘেয়ে আন্দোলন ও ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণেই ফিলিস্তিনীরা এখন হামাসের দিকে ঝুকে পড়েছে। শুরু হয়ে গেছে ইসরাঈলের সাথে হামাসের জীবন মরণ দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী জিহাদ”। হামাসের এই উত্থানকে স্তব্ধ করতে ইসরাঈল সরকার মিথ্যা অভিযোগ তুলে হামাস প্রধান শেখ আহাদ ইয়াসিনকে যাবজ্জীন কারাদণ্ড প্রদান করে। এতে হামাসের কর্মীরা এতে দমে যায় নি, বরং তাদের কর্ম তৎপরতা শতগুণে বৃদ্ধি পায়। গত বছর ডিসেম্বর মাসে হামাসের এক আক্রমণে ৫ জন ইসরাঈলী সৈন্য নিহত হয়। ধ্বংস হয় একটি ট্যাঙ্ক ও সাজোয়া যান। অপর এক আক্রমণে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের সৈন্য নিহত হয়, এতে সমগ্র ইসরাঈলে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৮২ সালের পর এত বড় ঘটনা আর ঘটেনি, ইসরাঈলী সরকার এর প্রতিশোধ কল্পে হামাসকর্মী ও সমর্থকদের ৪১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে নোম্যান্স ল্যাণ্ডে বহিষ্কার করে দেয়। এদের মধ্যে ১৮ জন হলেন ইঞ্জিনিয়ার, ১৮ জন পি, এইচ, ডি, ২৫ জন প্রফেসর, ১০৮ জন মসজিদের বিশিষ্ট ইমাম ও বাকী ২৫০ জন উচ্চ শিক্ষায় ডিগ্রী ধারী। ইসরাঈলী প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিনের মুখপাত্র আদি বিন আমিরের সাথে এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন যে, “হামাস ও অধিকৃত এলাকায় জিহাদী আন্দোলনকে ধ্বংস করা ছাড়া আমাদের কোন গত্যন্তর নেই। তাই ফিলিস্তিনীদের বহিষ্কার করা হয়েছে।” কিন্তু হামাসের মুজাহিদরা এতে আরো মারমুখী হয়ে উঠে। তারা যত্রতত্র আক্রমণ করে ইসরাঈলী সৈন্যদের আতঙ্কিত করে তুলতে থাকে। তারা এখন আর আগের মত পাথর, বোতল, দেশীয় গ্রেনেড আর হাত বোমা ছুড়ে মারে না। চোরাচালানীদের মাধ্যমে তারা সংগ্রহ করছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র এবং এর নিশানা বানাচ্ছে ইয়াহুদী সৈন্যদের। তাই ইসরাঈল মনে করছে, 'হামাস' তার মরণ ফাঁদ। একে ধ্বংস ছাড়া ইসরাঈলের নিরাপত্তা অনিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে রবিনের লেবার পার্টির দুই তৃতীয়াংশেরও বেশী সদস্য ও ৪ জন কেবিনেট মন্ত্রী রবিনকে পরামর্শ দেয়, “অবিলম্বে পিএলওর প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করা হোক এবং তাদের সাথে শান্তি আলােচনা চালিয়ে যাওয়া হোক। এ পথেই কেবল হামাসের উত্থান ঠেকানো সম্ভব হতে পারে।”
ইসরাঈলের এই নাযুক পরিস্থিতিতে এবং তার অস্তিত্বের ওপর পুনরায় হুমকি সৃষ্টি হওয়ায় আবার সোচ্চার হয়ে উঠে রুশ, মার্কিন ও বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের জারজ সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং মুজাহিদদের এই উথানকে নির্মূল করতে তারা শুরু করে গভীর ষড়যন্ত্র। ধর্ম নিরপেক্ষ ও পাশ্চাত্যের খয়ের খা এই আরাফাত চক্রকে এবার ওরা দালাল হিসেবে বেছে নেয়। আরাফাত চক্রও তাদের হৃত নেতৃত্বের ধারা অব্যাহত রাখতে, ব্যক্তি সুখ ভোগের মোহ এবং কিছু একটা করে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়ার ঘৃণ্য খাহেশে ৪৭ বৎসরের স্বাধীনতা আন্দোলনকে জলাঞ্জলী দিয়ে এবং হামাসের উথানকে ঠেকানোর জন্য এই কুখ্যাত দলিলে স্বাক্ষর করে।
ইতিহাস সাক্ষী, কাশ্মীরের স্বাধীনতার আন্দোলন দমন করার জন্য ভারত এমনি কিসিমের এক সায়ত্ব শাসন ও বিশেষ অধিকারের প্রলােভন দেখিয়ে কাশ্মীরের সিংহ নামে পরিচিত শেখ আব্দুল্লাহকে বশ করেছিল। শেখ আব্দুল্লাহকে পরবর্তিতে কাশ্মীরের গভর্ণর নিযুক্ত করে। স্বাধীনতাকামীদের আন্দোলন দমনে লেলিয়ে দেয়া হয়েছিলাে। ইতিহাসের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে ফিলিস্তিনে। হামাসের উত্তানের সাথে সাথে আল-জিহাদ ও ইখওয়ানুল মুসলিমীন প্রভৃতি মুজাহিদ আন্দোলনও নয়া উদ্দম লাভ করে। এসব আন্দোলনের শাখা-প্রশাখা মিশর, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মরোক্কো, জর্ডানসহ সমগ্র মধ্য প্রাচ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। ইন্তিফাদা ও হামাসের উত্থানের ফলে ইসরাঈলের আতঙ্ক এসব দেশের নেতাদের মধ্যেও সংক্রামিত হয়েছে।
তারা ক্রমশ মৌলবাদী আতঙ্কে দিন কাটায় এই ভেবে যে, এক্ষুনি বুঝি মৌলবাদীরা গদিখানা কেড়ে নিল। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এসব ইসলামী চেতনা শূন্য নেতাদের ব্যবহার করে। ‘পি, এল, ও’কে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরে উৎসাহ যোগায়। তাছাড়া ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন পি, এল, ও পূর্ব থেকেই এই কেসেমের ভাগ বাটোয়ারায় রাজী ছিল। এভাবে পাশ্চাত্য মৌলবাদ তথা ইসলামী আন্দোলনের ভয়ে ভীত নেতাদের মাধ্যমে পি, এল, ওকে ব্যবহার করে হামাস ও অন্যান্য ইসলামপন্থী আন্দোলনকারীদের দমন করতে নিযুক্ত করে ইসরাঈল ও পাশ্চাত্য এই চুক্তির মাধ্যমে যে সমস্ত উদ্দেশ্য অর্জন করতে চাচ্ছে তা হলঃ
(১) পি, এল, ও এবং হামাসের মধ্যে বৈরিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বীতা সৃষ্টি করে ফিলিস্তিন জাতিকে গৃহবিবাদে লিপ্ত করার মাধ্যমে স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমন করা।
(২) পি, এল, ওকে অর্থনৈতিক সহায়তা ও সন্ত্রাস বিরোধী ট্রেনিং দেয়ার মাধ্যমে হামাস ও অন্যান্য ইসরাঈল বিরোধী আন্দোলন দমনে ইসরাঈলের ব্যর্থতা ও ঝুঁকিকে লাঘব করা। যে কোন আন্দোলনকে পি, এল, ওর মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন আখ্যা দিয়ে তা দমনে পি, এল, ও এবং ইসরাঈলের সমন্বিত শক্তি নিয়োগ করা।
(৩) অধিকৃত এলাকাকে বৈধভাবে ইসরাঈলের অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে ফিলিস্তিনীদের পক্ষ থেকে আবশ্যকীয় স্বীকৃতি আদায়।
(৪) যে মুসলমানরা দীর্ঘদিন যাবত ইসরাঈলকে অবৈধ মনে করেছে এবং তাকে উৎখাত করার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে সেই মুসলমানদের শাসন করার জন্য বৈধতার স্বীকৃতি এবং বৈধ রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাঈলের স্বীকৃতি আদায়ের মাধ্যমে নৈতিক বিজয় অর্জন।
(৫) মধ্যপ্রাচ্যে হামাসকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পরা ইসলামী আন্দোলনের অস্তিত্বকে নস্যাত করার মাধ্যমে পাশ্চাত্যের বংশবদ শাসকদের গদিতে টিকে থাকার অনিশ্চয়তাকে দূর করা।
(৬) সায়ত্তশাসন চুক্তির বেড়াজালে মুসলমানদের পবিত্র ভূমি জেরুজালেম নগরীতে ইসরাঈলের একতরফা দখল দারিত্বের বৈধতা লাভ এবং বায়তুল আকসা মসজিদের স্থানে ইসরাঈল রাষ্ট্রের স্থপতিদের আকাংখা অনুযায়ী সুলাইমান মন্দির স্থাপনের পরিকল্পনা দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আধুনিক ইসরাঈলের স্থপতি ডেবিট বেনগুরিয়ান প্রায়ই বলতেন, “জেরুজালেম ছাড়া ইসরাঈলের যেমন অর্থ হয়না তেমনি সুলাইমান মন্দির ছাড়াও জেরুজালেমের কোন অর্থ হয় না।”
ইহুদী বৃটিশ মন্ত্রী লর্ড মিচেলও তার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলেছিলেন, “সুলাইমান মন্দির পূনঃপ্রতিষ্টিত হওয়ার সেই শুভ দিনটি খুবই নিকটে এবং আমরা বাকী জীবন উক্ত মন্দির সেই স্থানে নির্মাণে উৎসর্গ করব যে স্থানে আজ মসজিদ আকসা দাড়িয়ে আছে।” ইহুদীদের এই ঘৃণ্য ইচ্ছা বাস্তবায়িত করার জন্য ১৯৬৭ সালেই মসজিদ সংলগ্ন প্রাচীন বিল্ডিং গুলাে ভাঙ্গা শুরু হয় এবং হিব্রু ধ্বংসাবশেষ-সন্ধানের নামে মসজিদের দেয়াল সমুহের অভ্যন্তরে গর্ত খুঁড়তে থকে। ঐ বৎসরই মসজিদে অগ্নি সংযোগ করা হলে মসজিদের প্রাচীন মিম্বারসহ দক্ষিণ পূর্ব অংশ বিধ্বস্ত হয়। উল্লেখ্য যে, আলােচ্য চুক্তিতে জ্বলন্ত সমস্যা বাইতুল মুকাদ্দাস সম্পর্কে কোন কথা উল্লেখ নেই। মুসলমানদের মসজিদ সম্পর্কে এই আগ্রহহীনতার সুযোগ নিয়ে সুলাইমান মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু হলে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকবে না। এভাবে জাতির, একজন গাদ্দারের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের দরুন আজ ফিলিস্তিনী জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের পরিবর্তে বিরক্তপাতে ইহুদীদের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করা হলাে। তাদের স্বাধীনতা অর্জনের কঠিন সংগ্রামের পথকে আরও দুর্গম করে দেয়া হলাে। কেননা ফিলিস্তিনীদের।
পি, এল, ও-ইসরাঈল স্বাধীনতা প্রসঙ্গে ইহুদী প্রধান মন্ত্রী রবিন স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, স্বায়ত্তশানের মানে এই নয় যে, গাজা ও জেরিকো শহরের স্বায়ত্তশাসনের ফলে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে ওঠবে। ইসরাঈল ও জর্ডানের মধ্যে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে ওঠার আমি বিরোধী। তাহলে এত হৈ চৈ করে দীর্ঘ ত্রিশ বছর আন্দোলন চালানোর পর ইয়াসির আরাফাতের পি, এল, ও ফিলিস্তিনীদের জন্য কি সওদা করে ফিরলেন? অবশ্য আনোয়ার সাদাত যে টেবিলে বসে ক্যাম্পাডেভিড চুক্তিতে সই দিয়ে মিশরকে ইসরাঈলের বন্ধু বানিয়ে নিজেকে পাশ্চাত্যের দালালে পরিণত করেছিলেন, সেই একই টেবিলে আরাফাত দাসখতে স্বাক্ষর করে নিজেকেও যে গাদ্দারেই পরিণত করেছেন তাতে আর আশ্চর্যের কি আছে? ইসরাঈলের কাছে নতি স্বীকার করে তিনি আবারও প্রমাণ করলেন যে, ইসলামে নিবেদিত নেতৃত্ব ছাড়া মুসলিম জাতির প্রত্যাশা পূরণ হবার নয়।
*****