JustPaste.it

তালেবান পরিক্রমা

 

মুসলিম বিশ্বের প্রতি মোল্লা ওমর এর আহ্বান

নির্যাতিত চেচেন মুসলমানদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন

            দখলদার রুশ বাহিনীর আফগান ত্যাগের একাদশ বর্ষপুর্তিতে জনগণের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক বাণীতে আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মোহাম্মদ ওমর বলেছেন, বিপুল সংখ্যক সৈন্য নিয়ে রাশিয়া আফগানিস্তান অনুপ্রবেশ করেছিল এবং দশটি বছর আফগান জনগণের উপর নির্যাতনের স্টীমরোলার চালিয়েছিল। যার ফলে আফগানিস্তানের পনের লাখ মানুষ শহীদ হয়। আহত হয় দশলাখ নিরপরাধ আফগানী। মাতৃভূমি ত্যাগ করে অন্যত্র হিজরত করে কত মানুষ তার কোন হিসেব নেই। কিন্তু অবশেষে রাশিয়া এ দিনে, এই তারিখে অপদস্ত হয়ে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। মুজাহিদদের জবাবদিহি প্রতিরোধের মুখে রাশিয়া শুধু আফগানিস্তান ত্যাগ করতেই বাধ্য হয়নি-নিজের সাম্রাজ্যও তার ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়েছে। রাশিয়ার দখলমুক্ত হওয়ার পর আফগানিস্তানে মুজাহিদদের মধ্যে কিছুটা মতানৈক্য দেখা দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এদেশে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত। এমতাবস্থায় আমেরিকার উচিত ছিল, দশ বছরের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নতির জন্য সর্বাত্মক সাহায্য করা। কিন্তু উল্টো সে দেশটির উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে বসে আছে।

              বিবৃতিতে মোল্লা ওমর বলেন, আফগান জনগণের জানা দরকার যে, আমেরিকা কখনোও চায় না যে, আমরা আমাদের দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করি এবং আমরা ইসলামী জীবন যাপন করি। আফগান জনগণের এ-ও জানা থাকা দরকার যে, প্রথমদিকে আমেরিকা মুজাহিদদের যে সাহায্য দিয়েছিল, তার লক্ষ্য আফগান মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করা ছিল না। আমেরিকার উদ্দেশ্য ছিল নিজের স্বার্থ উদ্ধার করা।

              পরিশেষে মোল্লা ওমর বলেন, আজ চেচেন মুসলমানরাও আফগানীদের বর্বর রাশিয়ার অমানবিক নির্যাতনের শিকার। সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের প্রতি আমার আকুল আবেদন, গোপনে হোক, প্রকাশ্যে হোক, আপনারা মজলুম চেচেন মুসলমানদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন।

 

তালেবান নিজেকে শাসক নয়- দেশের সেবক মনে করে

- মৌলভী আখতার ওসমানী

              কান্দাহার কোর কমান্ডার মৌলভী আখতার ওসমানী এক জনসভায় প্রদত্ত ভাষণে বলেন, তালেবান নিজেকে দেশের শাসক নয়-সেবক মনে করে এবং সে মতেই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইমারাতে ইসলামিয়া সেই প্রথম দিন থেকেই মজলুমের উপর জালিমের জুলুম প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। মৌলভী আখতার বলেন, দেশে-বিদেশে যারা তালেবানের দুর্নাম রটাচ্ছে, তারা মিথ্যা প্রচারণা করছে। তিনি ভাষণে বহির্বিশ্বে মুসলমানদের প্রতি ইসলাম বিরোধীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান।

 

তালেবানের উন্নয়ন কার্যক্রমঃ কোনড় প্রদেশে গরীবদের জন্য

চার কক্ষ বিশিষ্ট তিনশত গৃহ নির্মাণ কাজ শুরু

             আফগানিস্তানের তালেবান সরকার দেশের গরীব-নিঃস্ব লোকদের আশ্রয়ণ কার্যক্রম শুরু করেছে। একটি বিদেশী সেবা সংস্থার সহযোগিতায় কোনড় প্রদেশে ৩০০ ঘর নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। প্রতিটি ঘর চার কক্ষ বিশিষ্ট। শহীদ ও মুহাজির মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। উল্লেখিত সেবা সংস্থাটি শহীদ ও মুহাজির পরিবারের জন্য আরো বেশ কিছু ঘর নির্মাণ কাজে সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

 

ফারিয়াবঃ দাঁতের বদলে এক ব্যক্তির দাঁত ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে

            আফগানিস্তানের ফারিয়াব প্রদেশে এক আসামীর উপর কিসাসের শরয়ী বিধান প্রয়োগ করা হয়েছে। খবরে প্রকাশ, গোলাম মহিউদ্দিন নামক এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির দাত ভেঙ্গে দিয়েছিল। ভিকটিম আদালতে গোলাম মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। তালেবান পুলিশ আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নিম্ন আদালত কিয়াসের বিধান অনুযায়ী আসামীর দাঁত ভেঙ্গে দেয়ার রায় প্রদান করে। অতঃপর উচ্চ আদালতের অনুমোদিত হলে হাজার হাজার মানুষের সামনে রায়টি কার্যকর করা হয়।

 

সারেপুলঃ বিরোধী কমান্ডারের অস্ত্রসমর্পণ

             সারেপুল প্রদেশের কোহেস্তান জেলায় হাজী আব্দুল হামীদ নামক এক বিদ্রোহী কমান্ডার ৩০ সহযোগী সহ ইমারাতে ইসলামিয়ার মুজাহিদদের হাতে অস্ত্র সমর্পণ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অস্ত্র সমর্পণের সময় কমান্ডার আব্দুল হামীদ অঙ্গীকার করেছেন, জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তিনি ইমারাতে ইসলামিয়ার প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকবেন।

 

জুমার খোতবায় মোল্লা মোহাম্মদ রব্বানীর দৃপ্ত ঘোষণা

ইমারাতে ইসলামিয়া কখনো জিহাদ ত্যাগ করবে না

               ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ রব্বানী বলেছেন, ইমারাতে ইসলামিয়া কখনো ইসলামের শক্রদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ত্যাগ করবে না। তিনি বলেন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’ আমরা জিহাদ ত্যাগ করে নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ ঘোষণার বিপরীতে অবস্থান নিতে পারি না। আমরা কুফর ও শিরকের বিরুদ্ধে জিহাদ করে নিজেদের ঈমানী দায়িত্ব পালন করতে চাই। কাবুলের উজীর আকবর খান জামে মসজিদে এক জুমার খোতবায় তিনি একথা বলেন।

                 তিনি বলেন, সম্পদ ও সন্তান পরীক্ষার বস্তু। কাজেই এগুলোকে আল্লাহরই পথে ব্যয় করা উচিত। বিরোধী দলগুলো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারো বৈধ অধিকার নেই। তালেবান এখন আফগানিস্তানের প্রতিষ্ঠিত সরকার। বিরোধী পক্ষগুলো শুধু ক্ষমতার মোহে লড়াই করছে। তিনি বলেন, বিরোধীরা যতক্ষণ না আমীরুল মুমিনীনের আনুগত্য মেনে নিয়ে নিজেদের অতীত অপকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করার ঘোষণা দিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কোন ক্ষমা নেই। তওবা না করলে তাদের পাহাড়ে-জঙ্গলেই ঘুরে মরতে হবে।

              আফগানিস্তানের ব্যাপারে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের সাম্প্রতিক এক মন্তব্য প্রসঙ্গে মোল্লা রব্বানী বলেন, কফি আনানকে আমাদের বিরোধী পক্ষগুলোর প্রতিনিধি বলে মনে হচ্ছে। অথচ তার উচিত নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা।

 

মোল্লা আব্দুল হাই মোতমাইন বললেন

টিভি সম্পর্কে আলোচনা করা সময় নষ্ট করা ছাড়া কিছু নয়

              সংস্কৃতি মন্ত্রী মোল্লা আব্দুল হাই মোতমাইন বলেছেন, আমাদের রাষ্ট্রনীতি আখলাক ও ইসলামী মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা কোনক্রমেই এমন পদক্ষেপ নিতে পারি না, যাতে আমাদের ইসলামী ও আখলাকী পরিকল্পনায় আঘাত লাগে। সম্প্রতি বিবিসি পশতু প্রোগ্রামে টিভি বিষয়ক এক আলোচনায় তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

আলোচনায় মোল্লা আব্দুল হাই বলেন, ইমারাতে ইসলামিয়ার সামনে টিভি অপেক্ষা আরো বেশী গুরুতপূর্ণ অনেক কাজ পড়ে আছে। তন্মধ্যে সমাজকে সম্পূর্ণরূপে ইসলামী ভাবধারায় প্রতিষ্ঠিত করা এবং দেশের জনসাধারণের নানাবিধ সামাজিক সমস্যার সমাধান দেয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, টিভি একটি ‘নন ইস্যু’ যাকে পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমগুলো ‘ইস্যু’ বানাবার চেষ্টা করছে।

               বিবিসির প্রতিবেদকের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন ছুড়েন যে, বিশ মিলিয়ন আফগানীর মধ্যে উনিশ মিলিয়নেরও বেশী মানুষ এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ পায়নি। এমতাবস্থায় সরকার অনুমতি দিলেও তারা টিভি দেখবে কি দিয়ে? তিনি বলেন, এ ধরনের গুরুত্বহীন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।

 

কাপিসাঃ ১২ বিরোধী কমান্ডারের আত্মসমর্পণঃ বিস্তীর্ণ

এলাকা তালেবানের হাতে হস্তান্তর

             কাপিসা প্রদেশে ১২ জন বিরোধী কমান্ডার অস্ত্র সমর্পণ করে বিস্তীর্ণ এলাকা তালেবানের হাতে তুলে দিয়েছে। খবরে প্রকাশ, কমান্ডার শাকেরুল্লাহ কমান্ডার মোহাম্মদ সরওয়ার সহ এলাকার নামকরা ১২ জন কমান্ডার তালেবানের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে দোররা মাকীন ও সাইয়েদাবাদের বিস্তীর্ণ এক এলাকা তালেবানের হাতে তুলে দিয়ে শত্রুপক্ষের স্বপ্নসাধ ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে।

            অপর এক খবরে জানা গেছে, বাগলাম প্রদেশের আন্দ্রাব জেলায় বিশিষ্ট বিরোধী কমান্ডার মোহাম্মদ নাসিম ২০০ সহকর্মীসহ তালেবানের কাছে আত্মসমর্পর করেছে। মোহাম্মদ নাসিম মাসউদ বাহিনীর একজন গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডার ছিলেন। আত্মসমর্পণের পর তিনি আহমদ শাহ মাসউদদের অনেক গোপন তথ্য ফাঁস করে দেন। তিনি আমৃত্যু ইমারাতে ইসলামিয়ার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

 

সন্ত্রাস মোকাবেলায় কমিশন গঠন

                আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে সন্ত্রাস মোকাবেলা করতে একটি কমিশন গঠনের কথা ঘোষণা করেছে। তালেবান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা করে তা নির্মূল করার অঙ্গীকার করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা আন্তর্জাতিক দায়-দায়িত্বের ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে অবহিত। আমরা জেহাদকে সমর্থন করি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে নয়।” বিবৃতিতে নয়া কমিশনের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। তবে এতে শুধু বলা হয়েছে, সন্ত্রাস মোকাবেলায় প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে যৌথ কৌশল প্রণয়ন করা হবে। প্রতিবেশী পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ সর্বোচ্চ তালেবান নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরসহ তালেবান কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের জন্য আফগানিস্তান সফরের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এই সফরের তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

 

বৃষ্টির জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত কামনা

             আফগানিস্তানের জনগণ শুষ্ক আবহাওয়ার তীব্রতা থেকে রেহাই পেতে সম্প্রতি দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহারে আল্লাহর রহমত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেয়। গ্রীষ্মের খরায় আফগানিস্তানে খাদ্যশস্য বিনষ্ট হয়েছে এবং প্রচুর গবাদিপশু মারা গেছে। তালেবান কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের আহ্বানে কান্দাহারের মসজিদগুলোতে সর্বস্তরের জনগণ এ প্রার্থনায় শরীক হয়। আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াকিল আহমেদ মুতাওয়াক্কিল বলেন, আমাদের খাদ্যশস্য, ফলবাগান এবং গবাদিপশুর জন্য পানি খুবই প্রয়োজন। উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের অভাবে বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে। গত জানুয়ারীতে আফগানিস্তানের ধর্মভীরু জনগণ একইভাবে বৃষ্টির জন্য তিনদিন ধরে প্রার্থনা করে। সে প্রার্থনায় ফল হয় এবং খরার অবসান ঘটে।

সূত্রঃ জরবে মুমিন, করাচী