দেশে দেশে ইসলাম
সাম্রাজ্যবাদী চক্রের ইসলাম বিদ্বেষণার নগ্ন বহিঃপ্রকাশঃ
আলজেরিয়ায় ১৩২ বছরের রক্তাক্ত জিহাদী দাস্তান
নাসীম আরাফাত
আলজেরিয়া, আফ্রিকা মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। সাগরের নীল জলরাশিকে শিয়রে নিয়ে শায়িত, রক্তাপুত চেতনার অহংকারে গর্বিত হাজারো মুজাহিদের দেশ। পিষ্ট নিষ্পেষিত মানবতার দেশ। দীর্ঘ দুঃস্বপ্নের ঘুম ভেঙে সদ্য জাগ্রত মুসলিম দেশ।
এদেশের পূর্বে লিবিয়া, তিউনিসিয়া; দক্ষিণে নাইজার, মালি। পশ্চিমে মরক্কো মৌরতানিয়ার সীমান্ত রেখা এসে মিশেছে। আর উত্তরে এসে আছড়ে পড়ছে ভূমধ্যসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা। এ অশান্ত সাগরের উত্তাল ঊর্মী মালার টুটি চিরেই একদিন আফ্রিকার দুর্দান্ত দামাল ছেলেরা গিয়ে দাড়িয়েছিলো ইউরোপের নিষ্পেষিত মানবতার পাশে। স্পেন বিজয়ের পর তারা ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো সুখ, শান্তি ও সাম্যের রাজ্য।
কিন্তু সময়ের গায়ে আরেকবার লাগলো উল্টো হাওয়া, সাগর দেখলো আরেকটি বেদনাদায়ক করুণ দৃশ্য। ভূমধ্য সাগরের বুক চিরে ইউরোপিয়ান রণতরীগুলো এগিয়ে আসছে আফ্রিকা মহাদেশের বন্দরে বন্দরে। নেই তারিক, নেই যিয়াদ, কে তাদের গতিরোধ করবে বজ্রহস্তে। আলজেরিয়ার্স বন্দরে এসে নোঙ্গর করলো ফরাসী রণতরী। আলজেরিয়ার নীল আকাশে পত পত করে উড়লো ফরাসীদের বিজয় পতাকা। ইতিহাসের গতি প্রবাহ ছুটলো অন্য পথে।
অতীত ইতিহাস
হযরত উমর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে চক্ষের পলকে পলকে ইসলামী খেলাফতের সীমানা ছড়িয়ে পড়ছিলো দূর থেকে সুদূর পর্যন্ত। তার খিলাফত কালে হযরত আমর ইবনে আছ (রাঃ)মিসর পদানত করেন। হযরত উমর (রাঃ)-এর শাহাদাতের পর হযরত উসমান (রাঃ) তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং তার খিলাফত আমলে ইসলামী সালতানাতের সীমারেখা আরো বিস্তৃতি লাভ করে। তার খিলাফত কালে ৭ম শতাব্দীতে আলজেরিয়ায় ইসলামের আলোকমালা পৌছে। মুজাহিদদের আগমন ঘটে। তাঁদের উদার নীতিমালা, সুভ্র চরিত্র মাধুর্যে মোহিত হয়ে আলজেরিয়ার অধিকাংশ জনগণ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। খিলাফতে বনু উমাইয়া ও আব্বাসীয়দের আমলে বর্তমান সময়ের প্রায় সব মুসলিম সালতানাত ছিলো খিলাফতের অধীনে। একই কেন্দ্রের আদেশ নিষেধে তখন গোটা সালতানাত পরিচালিত হতো।
১৩শ শতাব্দীতে হালাকু খা বাগদাদ আক্রমণ করে দারুল খিলাফত ধ্বংস করে দেয়। খিলাফতে আব্বাসীয়ার চরম বিপর্যয় ঘটে। মুসলমানদের কেন্দ্রীয় শক্তি শেষ হয়ে যায় বিশাল ইসলামী সালাতানাত ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়।
১৫৫৩ সালে বিখ্যাত তুর্কী সেনাপতি ফয়েজ উদ্দিন বারবারোছা আলজিরিয়াকে তুর্কী উসমানিয়া খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত করেন। তাদের প্রতিষ্ঠিত রাজধানী আল-জাজাই এর নামানুসারে এ অঞ্চল আলজেরিয়া নামে অভিহিত হতে থাকে।
১৮৩০ সালে ফরাসীরা তুর্কী গভর্নরের চুক্তি ভংগ করে আলজেরিয়া আক্রমণ করে। তুর্কীরা পরাজয় বরণ করে। কিন্তু ২২ বৎসর বয়স্ক বীর মুজাহিদ আলজেরীয় নেতা আব্দুল কাদির ফরাসীদের বিরুদ্ধ জিহাদ ঘোষণা করেন। অগ্নিকনার ন্যায় জিহাদের আহ্বান আলজেরিয়ার নগরে বন্দরে ছড়িয়ে পড়ে। জেগে উঠে কৃষক জনতা চলতে থাকে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রশিক্ষণ। খণ্ড খণ্ড যুদ্ধে মুজাহিদ আব্দুল কাদিরের বাহিনী ফরাসীদের পরাজিত করতে থাকে।
জিহাদের সূচনা
১৮৩৫ সালের ২৬শে জুলাই এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মুজাহিদদের সাথে ফরাসীরা একেবারে পর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং ১৮৩৭ সালে মুজাহিদ আব্দুল কাদিরের সাথে এক অসম্মানজনক চুক্তিতে আবদ্ধ হতে বাধ্য হয়। কিন্তু মাত্র দু'বছর যেতে যেতেই ফরাসীরা চুক্তি ভঙ করে। ফলে বীর মুজাহিদ আব্দুল কাদির আবার জিহাদের আহ্বান জানান। জনগণ ঝাপিয়ে পড়ে তার জিহাদী আহ্বানে। কিন্তু ফরাসী এবার প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে জেঁকে বসেছে আলজেরিয়ার বুকে। অক্টোপাশের মতো চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে তার শক্তিধর হাতগুলো। দীর্ঘ দশ বছর নিরবচ্ছিন্ন জিহাদ চলতে থাকে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে বাধ্য হয়ে ১৮৪৭ সালে মুজাহিদ আব্দুল কাদের আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু আলজেরিয়ায় মুসলিম জনতার হৃদয়মূলে জিহাদের যে অগ্নি শিখা জ্বলতে ছিলো তা আমীর আব্দুল কাদিরের পরও অনির্বাণ থাকে এবং বিভিন্ন স্থানে বার বার ফরাসী বাহিনী আলজেরীয় মুজাহিদদের হাতে পর্যদস্ত হতে থাকে।
১৮৭১ সালের যুদ্ধে জার্মানীর নিকট ফ্রান্স পরাজিত হলে আলজেরিয়ায় মুক্তি আন্দোলন নতুন করে দানা বেঁধে উঠে। কিন্তু ফরাসীরা অত্যন্ত নৃশংসভাবে সে আন্দোলনকে দমন করে দেয়।
ফ্রান্স তার ঔপনিবেশিক নীতিতে আরো জোরদার পদক্ষেপ নেয় এবং ১০ লক্ষ ফরাসী বাসী আলজেরীয় উপকূলীয় উর্বর অঞ্চলে বসবাস শুরু করে এবং দেশের সমস্ত সম্পদ দু'হাতে লুটে নিতে থাকে। মাত্র ৭০ জন ফরাসী পাঁচ লক্ষ একর জমি ভোগ করতে থাকে। আলজেরিয়ার জনগণের ভাগ্যে দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস নেমে আসে। নেমে আসে দারিদ্র, ব্যাধি ও অশিক্ষার অভিশাপ।
প্রথম মহাযুদ্ধের সময় অন্যান্য পরাধীন দেশগুলোর ন্যায় আলজেরিয়াতেও আবার আজাদী আন্দোলন শুরু হয়। জাতির এই করুণ দশা দেখে এগিয়ে আসেন মুজাহিদ আব্দুল কাদিরের সুযোগ্য পৌত্র খালিদ। নতুন করে শুরু হয় জাতীয় আন্দোলন। দুর্বার আন্দোলন। আলজেরিয়া অবিসংবাদিত শ্রদ্ধেয় নেতা মেছালী হাজীও এ আন্দোলনে যোগ দেন। আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারন করে। দিশেহারা হয়ে পড়ে ফ্রান্স। তাল সামলাতে না পেরে হিংস্রতার পথ বেছে নেয়। অত্যন্ত মর্মান্তিক হিংস্রতার পথ। ১৯৪৫ সালে ফ্রান্স আলজেরিয়ার গ্রামে গ্রামে বোমা বর্ষণ শুরু করে। যুদ্ধ জাহাজ ও ক্রজার থেকে উপকূলবর্তী গ্রাম গুলোতে গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে ৪৫ হাজারেরও অধিক মুজাহিদ শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন।
কিন্তু ফরাসীদের এ নৃশংসতা, এ হিংস্রতা আলজেরীয়দের মনে আরেকটি বিশ্বাস জন্ম দেয়। তারা বিশ্বাস করে নেয় যে, রক্ত পিচ্ছিল পথেই একমাত্র সার্বিক স্বাধীনতা আসতে পারে। তরুণরা জিহাদের নতুন বায়াত গ্রহণ করে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের খ্যাতিমান তরুণ সৈনিক মোহাম্মদ বিন-বিল্লাহর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট। জনমনে আবার আশার নতুন স্বপ্ন রঙিন হয়ে উঠে। গোপন আস্তানায় সামরিক প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। এবার শুধুই আক্রমণ, দুর্বার আক্রমণ। পেশীর মুকাবিলায় পেশী প্রদর্শন। অস্ত্রের জওয়াব অস্ত্রে। এবার আর নমনীয়তা নয়। সার্বিক প্রস্তুতি পূর্ণ হওয়ার পর ১৯৫৪ সালেই সারা দেশের ৭০টি স্থানে একই সঙ্গে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে আজাদী যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। মুজাহিদদের পক্ষে জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। জায়গায় জায়গায় গড়ে উঠে গেরিলা বাহিনী। ৭ বৎসর ধরে একাধারে যুদ্ধ চলতে থাকে। যুদ্ধ অত্যন্ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ৫ লক্ষ আলজেরীয় উদ্বাস্তু মরক্কো ও তিউনিসিয়ায় আশ্রয় নেয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও স্বাধীনতা
যুদ্ধের উত্তাল তরঙ্গে তখন ভেসে চলছে আলজেরিয়া। ইতিমধ্যে ১৯৫৮ সালে অন্তর্বর্তী কালীন সরকার গঠন করা হয়। জনাব ফরহাদ আব্বাসকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়। ১৯৬১ সালে জনাব ফরহাদ আব্বাসের স্থলাভিষিক্ত হন ইউসুফ বিন খেদ্দা। মুজাহিদদের স্বাধীনতার মরণ কামড়ে অসহ্য ফ্রান্স অবশেষে বাধ্য হয়ে নতি স্বীকার করে। ১৯৬২ সালের ১৯শে মার্চ যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর করে এবং গণভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা দানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। ১৯৬২ সালে ২রা জুলাই গণভাটে অনুষ্ঠিত হয়। এবং ৩রা জুলাই আলজেরিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। আলজেরিয় জনগণের মনে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়। আনন্দাশ্রু প্রবাহিত হয়। কপোল বেয়ে বুক ভরে যায় নির্মল বায়ুতে।
'স্বাধীনতা উত্তর আলজেরিয়া
একাধারে ১৩২ বছর সশস্ত্র জিহাদ ও ৭০ হাজার মুজাহিদের রক্তের বিনিময়ে আলজেরিয়া স্বাধীনতা অর্জন করলেও আলজেরিয়ার জনগণ স্বাধীনতার স্বপ্নের বাস্তাবায়ন আজো দেখেনি। স্বাধীনতা অর্জনের পর ৩৩ বছর অতিক্রান্ত হতে চললো কিন্তু স্বাধীনতার সুমিষ্ট স্বাধ তারা পায়নি। সাম্রাজ্যবাদী মুসলমান বিদ্বেষী শক্তিগুলো তাদের স্থির হতে দেয়নি। দেয়নি সংগঠিত হতে।
স্বাধীনতা অর্জনের পর প্রেসিডেন্ট বিন-বিল্লাহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মুসলিম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে ১৯৬৫ সালের ২৯শে জুন আলজিয়ার্সে আফ্রো-এশীয় জাতিপুঞ্জের এক সম্মেলন আহ্বান করেন। উদ্দেশ্য ইউরোপ- আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী দস্যুদের কবল থেকে আফ্রো-এশীয় জাতিপুঞ্জকে মুক্ত করার আন্দোলনকে আরো জোরদার করা। সম্মেলনের প্রস্তুতি দ্রুত এগিয়ে চলতে থাকে। তখনই ষড়যন্ত্রের অশনি সংকেত বেজে উঠে। আলজেরিয়ার আকাশে আবার দেখা দেয় ঝড়ো হাওয়ার ঘনঘটা। ২৯শে জুন হুয়ারী বুমেদীন আকস্মিকভাবে বিন বিল্লাহকে পদচ্যুত ও বন্দী করে এবং আলজেরিয়ায় সামরিক শাসন জারি করে। ফলে বহু প্রত্যাশিত আফ্রো-এশীয় সম্মেলন নিরাশার অন্ধকারে হারিয়ে যায়।
হুয়ারী বুমেদীন দীর্ঘ ১৪ বছর আলজেরিয়া শাসন করে। তার শাসনামলে আলজেরিয়ায় ছিলো এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা। তাঁর ১৪ বছরের শাসনামলে বিন বিল্লাহ ছিলো গৃহবন্দী। দেশবাসী ছিলো অসহায়। নেতা শূন্য। হুয়ারী বুমেদীনের পর জাদলী বিন জাদীদ ক্ষমতায় এসে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন। তখন প্রথমে কয়েকটি ছোট বড় রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব ঘটে এবং পরে কয়েকটি দল মিলে ইসলামী স্যালভেশন ফ্রন্ট গঠিত হয়।
মসজিদ ভিত্তিক গণ আন্দোলন
ইসলামী স্যালভেশন ফ্রন্টের নেতা আব্বাস মাদানী সহ অন্যান্য নেতাগণ মসজিদ ভিত্তিক গণআন্দোলন শুরু করেন। সারা দেশের ইমামদের মাধ্যমে ঘরে ঘরে ইসলামী আন্দোলনের ডাক পৌছে দেন। পরস্পরে দান, সদকা, সেবা ও শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যমে এক বিরাট গণ সংযোগ সৃষ্টি হয়। দল গঠনের মাত্র এক বছর পর ১৯৯০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের ও শহর পরিষদ নির্বাচন হয়। নির্বাচনে ১৫২৯ আসনের মধ্যে ৮৩৫ টি আসনে ইসলামী স্যালভেশন ফ্রন্ট বিজয় লাভ করে। ৭৮% ভোটের ম্যান্ডেট পায় । দেশবাসীর মনে নতুন করে আশার আলো পুঞ্জিভূত হতে থাকে।
এবার দাবী উঠে পার্লামেন্ট নির্বাচনের। ফলে সরকার ১৯৯১ সালের ২০শে জুন নির্বাচনে তারিখ ঘোষণা করে। কিন্তু ফ্রন্ট দাবী তোলে, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে হবেএবং নির্বাচন বিধি সংশোধন ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেরও দাবী উঠে। অন্যথায় লাগাতার হরতালের হুমকি দেয়। পরিবেশ ক্রমেই উত্তপ্ত হতে থাকে। মিছিল মিটিং চলতে থাকে। এক পর্যায়ে ফ্রন্ট প্রধান আব্বাস মাদানী ও উপ-প্রধান আলী বেনজাই সহ সরকার হাজার হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করে।
অবশেষে ২৬শে ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলতার সাথে ২৬শে ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক নির্বাচনের ফলাফলে সর্বমোট ২৩১টি আসনের ১৮৮টি আসনে স্যালভেশন ফ্রন্ট বিজয় লাভ করে এবং একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিকে এগিয়ে যায়। ১৬ই জানুয়ারী ছিলো দ্বিতীয় দফা নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচনের পরই হয়তো দীর্ঘ তমসার অবসান ঘটিয়ে আলজেরিয়ায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো ।
কিন্তু ইতিমধ্যে শয়তানের দোসরদের হৃদকম্পন শুরু হয়ে গেছে। কাপন লেগেছে তাদের আস্তানায়। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আমেরিকা রাশিয়া ফ্রান্স ও অন্যান্যদের চক্ষু হলো বিস্ময়ে বিস্ফোরিত। এ গণজাগরণকে নস্যাৎ করার জন্য আবার তাদের লোমশ হাত বাড়িয়ে দিলো আলজেরিয়ার দিকে, যে করেই হোক এই পূণর্জাগরণকে নিস্তব্ধ করতেই হবে। তাই আতাত করলো সামরিক জান্তাদের সাথে এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ছত্রছায়ায় ১১ই জানুয়ারী সামরিক জান্তার হাতে ক্ষমতা চলে যায়। নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। শুরু হয় ইসলামী আন্দোলনকে দমন করার সকল কার্যক্রম। ঐতিহাসিক সুন্নাহ মসজিদের ইমাম ছিলেন ফ্রন্টের এক নিবেদিত প্রাণ কর্মী। সরকার তাই এই মসজিদটি সরকারী নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং সরকারী ইমাম নিয়োগ করে। রাজধানীসহ অন্যান্য শহরের প্রায় দশ হাজার ইমাম অপসারণের নীল নকসা তৈরী করে। সরকারের পোষ্যদের সাথে রাস্তায় রাস্তায় ফ্রন্ট কর্মীদের যুদ্ধ। শুরু হয়, রাতের অন্ধকারে পরস্পরে গোলাগুলী হতে থাকে। আস্তে আস্তে তা গৃহযুদ্ধের রূপ ধারণ করে। উপায়ান্তর না দেখে ফ্রন্ট কর্মীরাও অস্ত্র তুলে নেয়। এদিকে সামরিক সরকারও হিংস্রতা শুরু করে। ফ্রন্ট নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে হত্যা ও গ্রেফতার শুরু করে। সামরিক আদালতে ফ্রন্ট নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, জেল, হত্যা, ফাঁসি ইত্যাদি হুকুমের মাধ্যমে শহীদ করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে যে, বিগত তিন বৎসরে তের হাজার মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেছেন। আলজেরিয়ার মানবাধিকার লীগের প্রধান নূর আল ইয়াহইয়া দাবী করেছেন যে, এ তিন বছরে আলজেরিয়ায় মোট ৪০ হাজার মানুষ মৃত্যু বরণ করেছে এবং ১৯৯৪ সালে ১লা নভেম্বর থেকে ৬৩৯ জন মুজাহিদ কে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও বহু মানুষ, বহু মুজাহিদ পরিবার হয়ে পড়েছে নিঃস্ব, বিত্তহীন, স্বজন হারা।
কিন্তু তবুও আলজেরিয়ার মানুষ ইসলাম চায়। চায় আল্লাহ প্রদত্ত আইন। যা মানুষকে চির শান্তির পথে পরিচালিত করবে। যে বিধান আরবের মানুষদের জান্নাতী মানুষে রুপান্তরিত করেছিলো। অভূতপূর্ব শান্তি ধারা বইয়ে ছিলো মরু আরবের বুকে। তাই আলজেরিয়ার মানুষ জীবন দিতে রাজি। স্বজন হারাতে রাজী। কিন্তু ইসলামী হুকুমত তাদের চাই।
আলজেরিয়ার গণমানুষের এই কঠোর মনোভাবকে দমন করতে না পেরে সরকার ইতিমধ্যে বেসামাল হয়ে পড়েছে। তারা নিষিদ্ধ মুক্তি ফ্রন্ট সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে পুনঃ নির্বাচন প্রশ্নে বৈঠকে আহবান করছে। নানা কুটনৈতিক জাল বিস্তার করছে। কিন্তু হাজারো শহীদের পিচ্ছিল রক্তের উপর যে জিহাদী কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তা যেন আবার বর্ণচোরা মুনাফিকদের কারণে নিস্তেজ না হয়ে পড়ে সে দিকেই ফ্রন্ট নেতাদের আজ সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। দুর্বার দুর্দমনীয় গতিতে সম্মুখ সমরে এগিয়ে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ বিজয় মুজাহিদদেরই বিজয় আল্লাহ পন্থীদেরই। আল্লাহর সেই বাণীকে আজ আবার নতুন করে হৃদয়াঙ্গম করতে হবে।
“ভ্রান্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাও” (আনফাল-৪০)।