সম্পাদকীয়
আলজেরিয়াঃ বিপনন মানবাধিকার লাঞ্ছিত গণরায় ॥ বিশ্ববিবেকের কবরগাহ্
সরকারী হিসাব অনুযায়ী ৩০ হাজার আর বেসরকারী মতে ৬০হাজার। মূলতঃ কি পরিমাণ ধর্মপ্রাণ আলজেরীয় মুসলমানকে যে সেদেশের প্রগতিবাদী সরকার এ পর্যন্ত নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করেছে. তার সঠিক হিসাব হয়ত কেউ দিতে পারবে না। রোজ কিয়ামতের বিচার দিবস ছাড়া নিমর্মতার এ হৃদয়বিদারক আখ্যান কখনই হয়ত তার সঠিক চেহারা নিয়ে পুথিবীবাসীর সামনে আসতে পারবে না। দুনিয়ার মানুষ কখনই উপলব্ধি করবে না, একটি দেশের স্বাধীনচেতা গণমানুষের মৌলিক-মানাবিক অধিকারকে কতটুকু অন্যায়ভাবে গলাটিপে হত্যা করা হলো আলজিরিয়ায়।
ইদানীং প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সংবাদপরগলোতে কেবলই দেখা যাচ্ছে আলজেরিয়ায় মানুষ মারার খবর॥ সরকারী সৈন্যরা যত্রতত্র, যখন তখন যে কোন ছল ছুতায় সে দেশের নিরপরাধ জনতাকে হত্যা করছে॥ আজ ২০ জন, কাল ৩০ জন। সকালে ১০০ জন, বিকেলে ৫০০ জন॥ মার্চের শেষ দুটোদিনেই ওরা হত্যা করেছে দেড় হাজার মানুষ। এসব মানুষের পরিচয়-এরা ইসলামী হুকুমতপন্থী। এরা ধর্মীয় শাসনের স্বপক্ষ শক্তি। আর বিশ্বব্যাপী সব জাতি গোষ্ঠী, দেশ ও সমাজ নীরবে কেবল এসব সংবাদ দেখে, শুনে আর পড়ে খবরের কাগজ ভাজ করে রেখে দিচ্ছে। অথচ আধুনিক বিশ্বের কোন প্রান্তে একজন দাগী কয়েদী, লম্পট বুদ্ধিজীবী, বেশ্যা, প্রগতিশীল বা নীতিহীন সাংবাদিকের জীবন হুমকিযুক্ত হলে মানবাধীকারের স্বঘোষিত রক্ষকরা ভীষণ চেচামেচি শুরু করে দেয়। কিডু আলজেরিয়ার এ নির্মমতাকে তারা মানবাধিকারের লংঘন বলে গণ্য করে না। কেননা. আলজেরীয়রা মুসলমান॥ কেবল নামে মাত্র মুসলমান নয়। উত্থানকামী, পুনরুজ্জীবনবাদী, বিপ্লবী মুসলমান॥ অতএব. এদের মরে যাওয়াই ইহুদী-খ্রিষ্টান, নাস্তিকাবাদী চক্রের কাছে পৃথিবীর জন্যে নিরাপদ।
আলজেরিয়া আফ্রিকার ভুমধাসাগরীয় একটি দেশ। আরব ও উপকুলীয় মুসলিম জনতার প্রিয় দেশ। ইসলামী ইন্দোলনের মাধামে ব্যাপক জনসমর্থন এবং সাধারণ নিবার্চনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রাপ্ত তাওহীদী জননেতৃত্বের দেশ। আলী বেলহাজ ও আববাস মাদানীর দেশ। কিন্তু গণতান্ত্রিক উপায়ে একটি দেশে দ্বীন ইসলাম কায়েম হওয়ার মতো বিপজ্জনক কোন ঘটনা পাশ্চাত্যের কাফের গোষ্ঠী কল্পনাও করতে রাজী নয়। তাছাড়া ইঙ্গ- মার্কিন মিত্র শক্তির এজেন্সী না নিয়ে, নিখাদ নিভের্জাল ইসলামী আন্দোলনের কোন সুযোগ বর্তমান পৃথিবীতে রাখার ইচ্ছাও তাদের নেই। অতএব নিবার্চনের ফলাফল বানচাল করে পাশ্চাত্য গোষ্ঠীর পা চাটা গোলাম. ইহদী-নাসারা চক্রের নিয়োজিত এজেন্ট, দেশীয় কায়েমী স্বার্থবাদ রাজনৈতিক শক্তি, সেনাবাহিনী ও খরিদা গোলাম বুদ্ধিজীবিদের মাধ্যমে আলজেরিয়ায় শুরু হয় ষড়যন্ত্রের নগ্ন মহড়া।
ক্ষমতার সিড়ি থেকে নেতৃবৃন্দকে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে! শাসনের সিংহাসন খেকে বিজয়ী শক্তি নিক্ষিপ্ত হয় নিপীড়নের যুপকাষ্ঠে। দেশপ্রেমিক ইসলামী জনতা আখ্যায়িত হন ইসলামী হুকুমতপন্থি 'মৌলবাদী অপশক্তি" রূপে; বোরকা পরার অপরাধে সৈন্যদের উদ্ধত মেশিনগানের গোলাবৃষ্টিতে প্রাণ দিতে হয় হাজার হাজার মুসলিম মা-বোন ও মেয়েকে। প্রতিদিনই সেখানে এখন মৃত্যুর ডানা ঝাপটানি। ধ্বংস. হত্যা, গুম. খুন. ধর্ষণ ও উৎপীড়নের বিচ্ছিন দ্বীপ যেন এই আলজেরিয়া॥ কেউ নেই এদের কান্না শোনার । আকাশ-বাতাস মরু বালুকা আর সাগর ছাড়া আর কোন সমব্যথীও যেনও নেই এ বিপন্ন জনতার ॥ কী এদের অপরাধ? কী পাপ তারা করেছে?
গণতান্ত্রিক পন্থায় ইসলামপন্থীদের ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়াই কি আলজেরিয়ার তাওহীদী জনতার অপরাধ? আল-কুরআনের বিধান মতো রাষ্ট্র সমাজ ও জীবন পরিচালনার দৃ্ঢ় শপথই কি এদের মস্ত বড় পাপ? নাকি মার্কিনীদের বিনানুমাতিতে সত্যিকারের ইসলামী রাই কায়েমের ইচ্ছা পোষণ? নাকি ইহুদী ইসরাঈলী চক্র, শিয়া অশুভশক্তি বা পাশ্চাত্যের দেয়া ফর্মুলায়, তাদের সাথে আঁতাত না করে. তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনের ভ্রান্ত পথ ছেড়ে নিখুঁত, নির্দোষ ও নিভের্জাল ইসলামী আন্দোলন তাদের জন্য এমন আত্মঘাতি পরিণাম ডেকে আনলো?
এসব প্রশ্নের অঙ্গে অঙ্গে লুকিয়ে রয়েছে সহস্র উত্তর। মুসলমানদের অচেতন উপস্থিতি, অগোছালো অগ্রগতি, পোশাকী স্বাধীনতা বা কাগুজে বিপ্লবকে ওরা মোটেও ভয় করে না। ওদের ভয়ই হলো খালেছ ঈমানী পুনর্জাগরনকে, বাধা-বন্ধনহীন তাওহীদী পুনরুথ্থানকে, শৃঙ্খলযুক্ত কোন দ্বীনদার রাষ্ট্রশক্তিকে।
আলজেরিয়ার তওহীদী জনতার এ দুর্দিনে দুনিয়ার কেউ তাদের পাশে না দাড়ালেও স্বজাতির গাদ্দার রাজনীতিক সেনাশক্তি, বুদ্ধিজীবী ও মাস্তানদের হাতে তারা প্রাণ দিলেও তারা মহাবিজয়ী। সাফল্যের সোনালী তোরণ উন্মুক্ত তাদের তরে। ওরা শাহাদতের সৌভাগ্যে ধন্য। গাযী হওয়ার গর্বিত মর্যাদায় তারা সৃঅধিষ্টিত। কেননা, এমন অপরাধে বেঈমান কাফের চক্রের নির্যাতনে বিপন্ন মানুষের কথাই আল্লাহ্ পাকের ভাষায় পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছেঃ “ওয়ামা নাকামু মিনহুম ইল্লা আই ইউ’মিনু বিল্লাহিল আযীযীল হামীদ।” অর্থাৎ এদের উপর এমন পৈশাচিক প্রতিশোধ কেবলই এ অপরাধে যে, এরা মহাপরাক্রমশালী সুপ্রশংসিত আল্লাহর উপর ঈমান এনেছিল। এ বাস্তবতার আলোকে আমরা বলতে পারি-হে আলজেরীয় মুজাহিদ জনতা! তোমরা দমে যেও না। অধৈর্য হয়ো না। বিজয়ের সুদিনের চেয়ে জিহাদী মৃত্যুই যদি আল্লাহ্র নিকট বেশী প্রিয় হয়, বেশী পছন্দনীয় হয় তবে তোমরা সাফল্যের পথেই রয়েছো। আল্লাহ্র সাহায্য ও বিজয়অতিনিকটে। ধৈর্যা ধর, অপেক্ষা কর! রাতের অন্ধকার যতই ঘনীভুত হয়ে উঠবে বুঝতে হবে যে. ভোরের সূর্য উদিত হওয়ার ক্ষণটিও ততই ঘনিয়ে আসছে।