মুজাহিদদের প্রতি আরোপিত একটি সমালোচনার জবাব
ও কাজের ব্যাপারে নসিহাহ
উস্তাদ আবু যুবাইদা হাফিজাহুল্লাহ
আপত্তিঃ
ভাই! আমাদের অনেক ভাইকে দেখা যায় উলামাবিদ্বেষী। এর সংখ্যা কম হলেও তারা আমাদের বদনাম করে বেড়াচ্ছেন। এদের অধিকাংশ যদিও আল-কায়েদার সমর্থক কিন্তু তানজিমের অন্তর্ভুক্ত ভাইদের মাঝেও এ ধরণের রোগ রয়েছে। এটা নিয়ে কিছু করা দরকার।
সমাধানঃ
উস্তাদ আবু যুবাইদাঃ এখানে আসলে দুইটি বিষয় আছে। একটি হল ফেসবুকে কিছু ভাইদের আদব-আখলাকের বিষয়, অপরটি হল আমাদের ব্যাপারে সমালোচনা।
যদি আদব-আখলাকের বিষয়টি আসে তাহলে এখানে কথা হল এই যে, এ সমস্যাটি জিহাদ সমর্থক ভাইদের খাস না। আমভাবে অনলাইনে আমাদের দ্বীনি ভাইদের আদব-আখলাকের অবস্থা শোচনীয়। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার। উলামা-তলাবারাও বাদ যাচ্ছেন না।
অল্প কয়েকদিন আগে কিছু তালিবুল ইলম বহিস্কৃত হওয়া সম্পর্কে কিছু ফেসবুক লেখা আমাকে দেখানো হয়েছে। সেখানে দেখলাম তাওহিদ ও জিহাদের মানহাজের ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। আলোচনায় দুই পক্ষের ভাষার অবস্থা খারাপ। জাহেলদের মধ্যে যারা একটু ভদ্র তারাও এমন ভাষা কমই ব্যবহার করে। অথচ এখানে পক্ষেবিপক্ষে যারা কথা বলেছেন তাদের সবাই হয় তালিবুল ইলম অথবা মাদ্রাসা শিক্ষক। এছাড়া ইতিপূর্বে বিভিন্ন ইস্যুতে যেমন- শাহবাগী, নারীবাদী কিংবা সেকুলারদের বিরুদ্ধে লেখার ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ করেছি অনলাইনে ভাইদের ভাষার ব্যবহার বেশ উগ্র, আক্রমনাত্বক এবং যথোপযুক্ত মাত্রার শালীনতা সেখানে অনুপস্থিত। এবং দুঃখের বিষয় হল ইসলামপন্থীদের নিজেদের মধ্যকার তর্কে ভাষার ব্যবহার আরো খারাপ। তাবলীগের দুই গ্রুপের মধ্যকার তর্ক, ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সাথে কওমি অঙ্গনে তাদের বিরোধীদের তর্ক, সব জায়গাতেই এক অবস্থা।
তো এই বিষয়টি আমভাবে অনলাইনে ইসলামপন্থীদের মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর একটি কারণ হয়তো ফেসবুক নিজেই। ফেসবুকে কথা বলতে এসে অনেকের মুখের লাগাম ছুটে যায়। কিন্তু আদব আখলাকের এ অভিযোগটি খাস ভাবে তানজীমের সাথে জড়িত কিংবা মুজাহিদিনদের সমর্থক ভাইদের উপর চাপিয়ে দেয়া না ইনসাফী। এর প্রথম কারণ হল, তানজীমের সাথে যুক্ত ভাইদের বলতে গেলে কেউই ফেসবুকে নেই, আর থাকলেও তারা এসব তর্কে অংশগ্রহণ করেন না। আর বাকি সমর্থকদের ব্যাপারে কথা হল, একথা সত্য পরিমিতিবোধ ও আদবআখলাকের ঘাটতি তাদের মধ্যেও আছে। তবে এটা কেবল তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। আমভাবে অনলাইনে সক্রিয় দ্বীনি ভাইবোনদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
আর আমাদের ব্যাপারে যে সমালোচনা সেটা খাসভাবে ফেসবুকের কিছু নির্দিষ্ট ঘরানার ভাইদের দিক থেকে আসছে। আমি বেশ কয়েকমাস ধরে বলে আসছি, এ দিকটাতে খুব বেশি নজর না দিতে। এর কারণ হল অনলাইনে আমাদের মূল কাজ কী? আমাদের কাজ হল দাওয়াত পৌছানো। যারা এ সমালোচনাগুলো করছে ইতিমধ্যে তাদের কাছে আমাদের দাওয়াত পৌঁছেছে। দাওয়াত পাবার পর বিভিন্ন কারণে তারা তর্ক করছে। আর এখন নানান ভুল তারা খুঁজে বের করছে।
১ম ভাইঃ তবে ভাই আমার মনে হয়, ওদের প্রতিরক্ষামূলক জবাব না দিয়ে আক্রমণাত্মক জবাব দেওয়া যেতে পারে। যেমনটা কওমি ঘরানার অনেকেই শুরু করেছেন আলহামদুলিল্লাহ।
আবু যুবাইদা: এদের কথার জবাব দেয়ার বিষয়টা কোনদিন শেষ হবে না। আমভাবে আদবআখলাকের ব্যাপারে কাজ করতে চাইলে সেটা উত্তম প্রস্তাব এবং এ বিষয়ে কাজ করা যেতে পারে। আমভাবে জিহাদের বিষয়ে সাধারণ মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে চাইলে - সেটাও উত্তম।এই বিষয়েও কাজ করা যেতে পারে।
১ম ভাইঃ জি ভাই...
আবু যুবাইদা: কিন্তু এই সমালোচক শ্রেণীর কথা ধরে ধরে উত্তর দেওয়ার কোন অর্থ নাই। জিহাদের দাওয়াত পাবার পর, বুঝার পর বেশির ভাগ মানুষ শুরুতেই সিদ্ধান্ত নেয়। অথবা বুঝ প্রথমে যেমন ছিল পরেও সেরকমই থাকে কিন্তু সিদ্ধান্তে আসতে দেরি হয়। দিনের পর দিন তর্ক করে তারপর কাজে আসে, সমর্থক বা আনসার হয় - এমন মানুষ কম, খুবই কম। বিশেষ করে এই সময়ে, এই সম্ভাবনা আরও কম।
২য় ভাইঃ ঠিক।
উস্তাদ আবু যুবাইদাঃ এটা ফিতরাতী বুঝ যে জিহাদ করতে হবে, এটা এখন ফরজ। এই অবস্থায় যারা তর্কবাগীশ - দিনরাত শুধু তর্ক করে, খুঁজে খুঁজে খুত বের করার চেষ্টা করে - মানহাজী এই, মানহাজী সেই - এগুলো নিয়ে আলোচনা করে - তাদের পিছনে সময় দেয়া আমাদের এই মজলিসের অপমান ।
ভাই ‘AQIS’ এর অবস্থানটা আমাদের বুঝা দরকার। AQIS এর মিডিয়া রিলিজ নিয়ে পত্রিকাগুলো নিউজ করে-এই বাংলাদেশেই এমন হয়েছে। মুরতাদ বাহিনীগুলো প্রেস ব্রিফিং করে-এই বাংলাদেশেই এমন হয়েছে। বিদেশী সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞরা সেটা নিয়ে বিশ্লেষন করে - সেটাও এই বাংলাদেশের রিলিজ নিয়েই হয়েছে। আমাদের ওয়েটটা বুঝেন ভাইরা। আমাদের দায়িত্ব, কর্তব্য এবং অবস্থানটাও বুঝেন।
২য় ভাইঃ আল্লাহু আকবার ওয়াল ইজ্জাত ওয়া লিল্লাহ।
উস্তাদ আবু যুবাইদাঃ অনর্থক সমালোচনা করা এই লোকদের বেশিরভাগ হল খুচরা লোকজন। এদের কথার প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাজ করা আমাদের জন্য মুনাসিব না। আর এমনিতেও প্রতিক্রিয়াশীল কাজ ভালো না।
দুটো মূলনীতি মাথায় রাখেন-
১) জিহাদ যারা বুঝে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ জিহাদ বুঝে না। আপনার টার্গেট এই মানুষগুলোর কাছে দাওয়াত পৌছানো ।
২) আপনার মূল মেসেজটা সিম্পল রাখবেন। যেমন - জিহাদ ফরজে আইন, হিজরত করতে হবে, জামাতবদ্ধ হতে হবে, মুজাহিদিনের কাজে সাহায্য করতে হবে এবং গাজওয়া হিন্দের প্রস্তুতি নিতে হবে - ইত্যাদি। আপনার কাজকর্ম এই মেসেজকে ঘিরে সাজান।
বাকি সমালোচনা যদি মৌলিক কোন ইস্যুতে আসে যেমন আক্বিদা, অথবা ফিকহী কোন বিষয়ে আসে, তাহলে আমাদের সম্মানিত আলিম ভাইদের সাথে কথা বলে আমরা উত্তর প্রস্তুত করে প্রকাশ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ ।
আর একটা কথা মাথায় রাখবেন - আগে আমাদের বিরোধিতা একসময় বেশি করতো সালাফি ভাইয়েরা, তারপর হিযবুত তাহরির এবং জামাতের ভাইরা। আর এখন বেশি করছে কওমি ভাইয়েরা।
এটা কেন?
এটা আলহামদুলিল্লাহ আমাদের দা'ঈ ভাইদের মেহনতের ফল।এবং আল্লাহ চাইলে এখানে আমাদের কাজেরও হয়তো কিছু ফলাফল আছে।
১ম ভাইঃ আলহামদু লিল্লাহ।
উস্তাদ আবু যুবাইদাঃ এই বিরোধিতা তখন বেশি হয় যখন একটা ঘরানাতে আমাদের দাওয়াহ প্রসার পায়। এখন আলহামদুলিল্লাহ কওমি ভাইদের মধ্যে আমাদের আকিদা ও মানহাজ নিয়ে আলোচনা বেশি হচ্ছে। এই কারনেই কওমিদের অনেকে বাধ্য হয়ে বাঁধ দেয়ার জন্য সমালোচনা করছেন ।
১ম ভাইঃ জি ভাই...
উস্তাদ আবু যুবাইদাঃ তাদের কথাগুলো খেয়াল করলেই আপনারা এটা বুঝতে পারবেন। এই কারণে এগুলো নিয়ে বেশি চিন্তা করার দরকার নেই। বরং আপনারা মৌলিক বিষয় এবং সিম্পল মেসেজের ব্যাপারে যা বললাম - সেটা নিয়ে মনোযোগী হন। মিডিয়া গাইডলাইনের উপর কাজ করুন। অনেক ধরণের কাজ আছে। অনেক কিছু আছে যেটা আমরা জানি, কিন্তু আম মানুষ জানে না। যেমন কথার কথা - “অগ্রবর্তী মুজাহিদিনের জীবনী” - এই নামে সিরিজ করার কথা চিন্তা করেন। অডিও, টেক্সট, ভিডিও - যে ফরম্যাটে চিন্তা করবেন - দেখবেন কমপক্ষে ১০ টা কাজের পরিকল্পনা মাথায় চলে আসবে। এভাবে চিন্তা করেন, কাজকে সাজান।
৩য় ভাইঃ: ভাই! কাল্পনিক চরিত্র নির্ধারণ করে, কাল্পনিকভাবে কি উপন্যাস টাইপ কিছু লেখা যাবে কি?
উস্তাদ আবু যুবাইদাঃ তাত্ত্বিকভাবে উত্তর হল যাবে। যেমন ধরুন প্যারাডক্সিকাল সাজিদ আছে, এরকম ভাবে আপনি তাওহিদবাদী সাজিদ লিখতে পারেন, তবে এটা হল তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোন। বাস্তবে উপন্যাস জাতীয় লেখালেখির কাজ বেশ কঠিন।
৩য় ভাইঃ জাযাকাল্লাহু খাইরান ভাই।
উস্তাদ আবু যুবাইদাঃ ওয়া ইয়্যাক।
....................................